প্রেমতরী পর্ব-০৬

0
272

#প্রেমতরী
পর্ব :- ৬
.
একদিন মজা করেই মিষ্টি নিজেকে পরিক্ষা করে,
এবং সে বুঝতে পারে যে সে প্রেগন্যান্ট
রাতে মামুন বাসায় ফিরলে মিষ্টি বাবাকে ফাকি দিয়ে মামুনের রুমে চলে যায়।
মামুন সবে মাত্র কাজ শেষ করে বাসায় ফিরেছে।
মিষ্টি গিয়ে পেছন থেকে মামুনকে জড়িয়ে ধরে।
–ইসসস, ছাড়। আমার গায়ে ঘামের গন্ধ।
–তো?
–ছাড়, আমি ফ্রেস হয়ে আসি।
–লাগবে না।
–কি হয়েছে?
–একটা কথা বলতে আসছি?
–আচ্ছা? তা না হলে আসতি না?
–আমার কলিজার কাছে আসতে কি আমার কোনো কারন লাগবে নাকি?
–তা একটু শুনিতো আমার কথাটা।
–না, বলবো না।
–ওমা, আবার কি হলো?
–আমার লজ্জা করে।
–অ্যাহ😮!! কি এমন কথা যে আমার বউটা লজ্জা পাচ্ছে।
–আছে।
–আচ্ছা ছাড়না, তোকে একটু দেখি।
–(মিষ্টি হালকা একটু ছাড়লে মামুন মিষ্টির দিকে ঘুরে দাড়ায়, ওমনি মিষ্টি আবার মামুনের বুকে মুখ লুকায়)
–বাপরে, আজ এমন কি হলো যে আমার বউ এত লজ্জা পাচ্ছে।
–আমার কেমন যেনো লাগছে বলতে।
–দেখি, আমার দিকে তাকা, এবার বল।
–(মিষ্টির দুচোখ পানিতে ভরে ওঠে)
–এই পাগলি, কি হয়েছে?
–আজ আমি মজা করেই প্রেগন্যান্সি কিট ব্যবহার করছি। জানিস রেজাল্ট কি এসেছে?
–কি?
–আমি প্রেগন্যান্ট।
–হ্যাহ,
–হুম। আমার খুব ভয় লাগছে।
–এতো খুশির খবর, আর তোর ভয় লাগছে? কেনো?
–বাবা এখনো জানে না আমাদের বিয়ে হয়েছে। যদি উনি বুঝতে পারে যে আমি প্রেগন্যান্ট। তাহলে কি হবে?
–ধুর পাগলি, আর তো কিছু দিন। এই কয়দিন চাচাকে না জানালেই তো হয়।
–হুম।
–দাড়া, আম্মুকে ডেকে আনি।
–কেনো কেনো?
–কেনো আবার? খুশির খবরটা দিতে হবে না?
–এই না, আমার লজ্জা করবে।
–ধুর পাগলি, তুই বস, আমি এক্ষুনি আসছি।
মিষ্টিকে বসিয়ে রেখে মামুন গিয়ে মাকে ডেকে আনে।
–কি হয়েছে? জলদি বল। তোর বাবা খাবারের জন্য বসে আছে।(মামুনের মা)
–আরে বলছি তো, শুনো না।(মামুন)
–মিষ্টি তুই এখানে? তোর বাবা একটু আগে ঘরে এসেছে, জলদি ঘরে যা।
মিষ্টি নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।
–তোমাকে কি জন্য ডেকেছি শুনবে না?
–হ্যা বল।
–এই নাও,(প্রেগন্যান্সি কিট টা হাতে দিয়ে)
–এটা কার? মিষ্টির?
–হুম।
মামুনের মা কিট টা হাতে নিয়ে মিষ্টির দিকে এগিয়ে যায়।
মিষ্টি এদিকওদিক তাকিয়ে কাছুমাছু করছে।
–মামুন, তোর বাবার কাছে গিয়ে বস, আমি আসছি।
মামুন বাধ্য ছেলের মতো চলে যায়।
–মিষ্টি, লজ্জা পাচ্ছিস?
মিষ্টি মুচকি মুচকি হাসতে শুরু করে।
–বাব্বাহ, আমার মেয়েটা দেখি লজ্জাও পায়।
–জেঠিমা, তুমি খুশি হও নি?
–কি বলে মেয়েটা, খুশি হবো না কেনো? কেমন পাগলের মতো কথা বলছিস?
–আমিতো ভয় পাচ্ছিলাম, তুমি কি না কি মনে করো।
–পাগলি একটা।
–জানো, আমিই বলেছিলাম, আমার একটা বাবু লাগবে। খুব তাড়াতাড়ি।
–কেনো কেনো?
–যদি তোমরা কেউ আমাদের মেনে না নিতে, তাহলে আমার বাবুটাই তোমাদের মানিয়ে দিতো। তোমরা কি পারতে আমার বাবুটাকে কোলে না নিয়ে থাকতে?
–বাব্বাহ, কত বুদ্ধি আমার মেয়েটার মাথায়।
–দেখতে হবে না আমি কার বউ।
বউ শাশুড়ী দুজনই হেসে ওঠে।
–আয়, আজ আমাদের সাথে খাবি।
–না না, আব্বু ঘরে আছে। দেখলে রাগ করবে।
–আরে করবে না, আমি বলে দেবো।
–আচ্ছা।
.
সেই রাতে মামুনের মা মিষ্টির মাকে আড়ালে ডেকে খুশির খবরটা জানায়।
মিষ্টি মা খবরটা শুনে খুব খুশি হয়। কিন্তু আবার কি যেনো ভেবে মনটা খারাপ হয়ে যায়।
–কিরে? কি হলো? মুখটা ওমন করলি কেনো?(মামুনের মা)
–ভাবি, ওর বাবা এখনো এটাই জানে না যে ওদের বিয়ে হয়েছে। যদি ভুলেও এটা জানতে পারে যে মিষ্টি মা হতে চলেছে, বুঝতে পারছো কি হবে?
–সেটা আমিও ভেবেছি। তুই একটু মিষ্টিকে দেখে রাখিস, আর তো অল্প কিছু দিন। এরপরই সব ঠিক হয়ে যাবে।
–সব যেনো ভালোয় ভালোয় শেষ হয়। আমার যে কি ভয় হচ্ছে। এই ছেলে মেয়ে দুইটা এই বয়সে এসে এতটা জ্বালাবে আগে জানতাম না।
–যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। এখন শুধু মিষ্টিকে একটু সামলে রাখিস। ওর বাবা রাতে ফিরলে ওকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিস, সাবধান থাকা ভালো।
–আচ্ছা। মাগো, আমার হাত পা কাঁপছে।
মামুনের মা হেসে বলে, তুইও তোর মেয়ের মতোই পাগল। যা, আমার বউমাকে দেখে রাখ।
আজ মিষ্টি বায়না ধরেছে, মায়ের সাথে ঘুমাবে। কতদিন হলো মায়ের সাথে ঘুমায় নি।
রাতে ঘুমানোর সময় মিষ্টি মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।
–মিষ্টি, কি হয়েছে?
–জানিনা আম্মু, খুব কান্না পাচ্ছে।
–কিছু হয়েছে?
–না, এমনিই কাঁদছি। কেনো জানি মনটা চাইছে একটু কাঁদতে।
–তুই এখনো বাচ্চাই রয়ে গেলি, ঘুমা।
–জেঠিমা তোমায় সব বলেছে তাইনা?
–হুম।
–তুমি কি খুশি হয়েছো?
–খুব খুশি হয়েছি।
–এই বাবুটা আমরা বিয়ের পরই নিয়েছি। আমার বাবুটা দুনিয়ায় আসবে তো আম্মু?
–কি বলে মেয়েটা। আবোলতাবোল বলছিস কেনো?
–জানো আম্মু, আর ৮ ১০ টা মেয়েরা বাচ্চা নিয়ে কত খুশি থাকে। আর আমার খুশির চেয়ে যেনো চিন্তাটাই বেশি হচ্ছে। এত লুকোচুরি আমি আর পারছি না।
–কি করবি বল মা, পালিয়ে বিয়ে করে যেই ভুলটা করেছিস, এটা তারই ফল। আর তো কিছু দিন, এরপর সব ঠিক হয়ে যাবে।
–তুমি আমার বেস্ট আম্মু।
–তাই?
–হুম, আমি অন্যায় করেছি, কিন্তু তবুও তুমি আমায় সাপোর্ট করেছো, বুঝিয়েছো, বিপদ থেকে আড়ালে রেখেছো।
–কি করবো বল, তুই তো আমারই মেয়ে। আমার একমাত্র মেয়ে। তোকে যে আমি আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। তুইও তো মা হবি, এরপর বুঝবি মায়ের ভালোবাসা কেমন।
–আম্মু, আমিও তোমায় খুব ভালোবাসি, আমার খুব খুশি লাগছে জানো, সারাজীবন তোমাদের ছেড়ে আমাকে দুরে থাকতে হবে না। জেঠিমাও আমায় খুব ভালোবাসে।
–তাই যেনো হয় মা। আল্লাহ তোকে সারাজীবন সুখে রাখুক।
মিষ্টি মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।
.
পরের সপ্তাহে ছুটির দিন থাকায় বাড়ির কর্তারা সবাই বাড়িতেই থাকে।
দিনটা দুই মায়ের কাছে খুবই আতঙ্কজনক।
মিষ্টিকে তার মা সারাদিন নিজের কাছে রাখে।
সারাদিন মিষ্টিকে বাবার কাছে আসতে দেয়নি, বলাতো যায় না এই অবস্থায় কোন বিপদ ঘটে যায়।
দুপুরে মিষ্টি বাবার সাথে খেতে বসে।
বাবার সামনেই হঠ্যাৎ মিষ্টির বমি চলে আসে, দৌড়ে সে বাথরুমে চলে যায়।
মিষ্টির বাবা অবাক চোখে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকে।
–কি হয়েছে মিষ্টির? (মিষ্টির বাবা)
–সকালে কিছু খায়নি তো, তাই হয়তো বমি আসতেছে।(মিষ্টির মা)
–কেনো? ঘরে কি খাবারের অভাব? খায়নি কেনো?
–কে যেনো ওকে বলেছে ও মোটা হয়ে যাচ্ছে, তাই ডায়েট করতেছে।
–কে ওকে মোটা বলেছে?
–ওর কোন এক বান্ধবী।
–যতসব ফালতু কথা। কই দেখি মিষ্টিকে ডাকো।
বাবা মিষ্টিকে আবার ডেকে এনে বাবার পাশে বসায়।
–তোকে কে মোটা বলেছে?
মিষ্টি খুবই অবাক হয়ে যায়, কারন মামুন একবার মিষ্টিকে মোটা বলেছিলো। মিষ্টি ভয় পেয়ে যায়, বাবা জেনে যায়নিতো?
–শোন, এসব ফালতু কথা, তুই একটুও মোটা না। ওরা তোকে হিংসে করে, তাই মোটা বলেছে। এখন এসব ডায়েট করতে হবে না। সামনে না তোর বিয়ে। বেশি বেশি করে খাবি এখন। নে হা কর, আমি তোকে খাইয়ে দেই।
মিষ্টি বাবার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বাবা মিষ্টিকে খাইয়ে দিচ্ছে। আর মিষ্টির চোখ দিয়ে টুপ টুপ করে পানি পড়ছে।
–কিরে? কাঁদছিস কেনো?
–কই? কাঁদছি নাতো, চোখে কি যেনো পড়েছে।
–পাগলি মেয়ে আমার, নে হা কর।
মিষ্টি বাবার দিকে তাকিয়ে ভাবছে, কেনো আমি বাবাকে এতটা ভয় পাই? কই বাবাতো কখনো আমার গায়ে হাত তোলে নি, কখনো বকা দেয় নি, কখনো রাগ দেখায় নি। বাবা তো আমায় কত্ত ভালোবাসে, তাহলে কেনো আমি সবসময় বাবাকে এতোটা ভয় পেয়ে এসেছি?
ধূুর,আমি কত্ত বোকা। বাবা অন্যের সাথে রাগ দেখায় বলে কি আমার সাথেও রাগ দেখাবে নাকি, বাবার মাথা সবসময় গরম থাকে বলে কি আমায় বকবে নাকি? কই, কখনো তো বকে নি। আমার বাবা আমায় খুব ভালোবাসে, হয়তো বাবা কখনো তার ভালোবাসা প্রকাশ করেনি। কিন্তু আমার বাবা বেস্ট বাবা।
সেদিন রাতে খাবার টেবিলে এসে বাবার সামনেই আবারো মিষ্টি বাথরুমে দৌড় দেয়।
–কি হলো ওর আবার?(মিষ্টির বাবা)
–কি জানি।(মিষ্টির মা)
–দুপুরেই তো ওকে পেট ভরে খাইয়ে দিলাম। কোনো সমস্যা নয়তো?
–আরে না, হয়তো শরীরটা দূর্বল লাগছে।
–ডাক্তার ডাকবো?
–ধুর, কি জে বলেন না। কিচ্ছু হয়নি ওর, আপনি খান।
সেই রাতে মিষ্টির বাবা বিষয়টা এড়িয়ে গেলেন।
আর এদিকে মিষ্টির মায়ের অবস্থা খারাপ। টেনশনে ওনার প্রেশার বেড়ে যায়।
তবুও ভালোয় ভালোয় রাতটা কেটে যায়।
সকালে মিষ্টি নাস্তা বানানোর সময় মাথা ঘুরে পড়ে যায়, পড়ার সময় পাতিলের একটা মাথা মাটিতে পড়ে মোটামুটি একটু জোরেই শব্দ হয়।
মিষ্টির বাবা রান্নাঘরে এসে দেখে মেয়ে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে আছে।
উনি সাথে সাথেই ওনার এক বন্ধুকে(ডাক্তার) খবর দেন।
ডাক্তার এসে মিষ্টিকে চেকআপ করা শুরু করে।
এদিকে মিষ্টির মায়ের প্রায় যায় যায় অবস্থা।
ডাক্তার যদি এখন সত্যটা বলে দেয় তাহলে সব শেষ।
মিষ্টির বাবা তার বন্ধুর সাথে লেগেই আছে।
তিনি বেশ কিছুক্ষণ যাবত মিষ্টিকে পরিক্ষা নিরিক্ষা করেন।
–দোস্ত, আমার মেয়ের কি হয়েছে?
–তোর মেয়ের কিচ্ছু হয়নি,ও সুস্থই আছে।
–তাহলে এভাবে,,,,,,,,,
–মিষ্টির শরীর দুর্বল, তাই মাথা চক্কর দিয়ে পড়ে গেছে।
–অন্য কোনো সমস্যা নেইতো?
–না না,আর কোনো সমস্যা নেই। আমি বরং তোকে কিছু ভিটামিনের ঔষুধ লিখে দেই, এগুলো এনে মিষ্টিকে খাওয়া।
–থ্যাংকস দোস্ত, আমিতো আরো ভয় পেয়ে গেছিলাম।
–ভয় পাওয়ার কিছু নাই। ভাবি, মিষ্টির খেয়াল রাখেন। আমি গেলাম।
–আচ্ছা ভাই, আবার আসবেন কিন্তু।
–হ্যা ভাবি অবশ্যই অসবো। দোস্ত, চল আমাকে সামনে এগিয়ে দে।
–চল।
মিষ্টির বাবা তার বন্ধুকে সাথে নিয়ে বাড়ির বাহিরে আসে।
–দোস্ত, তোকে কিছু বলার ছিলো।
–হ্যা বল না।
–মিষ্টির তো কয়দিন পর বিয়ে তাই না?
–হুম, তোকে তো সেদিনই বললাম।
ডাক্তার মাথা চুলকাতে থাকে।
–কেনো?
–আমি প্রথমে ভেবেছিলাম আমার ভুল। তাই আরো দুইবার মিষ্টিকে চেকাপ করি। কিন্তু ফলাফল সেইম।
–কি ফলাফল?
–মিষ্টিতো প্রেগন্যান্ট।
–কিহ….?????
.
.
.
চলবে……….
.
লেখক :- #A_Al_Mamun