প্রেমতরী পর্ব-০৭

0
235

#প্রেমতরী
পর্ব :- ৭
.
–আমি প্রথমে ভেবেছিলাম আমার ভুল। তাই আরো দুইবার মিষ্টিকে চেকাপ করি। কিন্তু ফলাফল সেইম।
–কি ফলাফল?
–মিষ্টিতো প্রেগন্যান্ট।
–কিহ….?????
–হুম আমি সত্যি বলছি। এজন্যই ভাবির সামনে একথা বলিনি।
–দোস্ত, তোর কোথায়ও ভুল হচ্ছে। আমার মেয়ে এমন না। ও কোনো ছেলের সাথেই মেশে না, এমনকি ওর কোনো ছেলে বন্ধুও নেই। তুই হয়তো ভুল করছিস।
–নারে দোস্ত, আমি ১০০% সিউর।
–আর কয়দিন পরই মামুনের সাথে ওর বিয়ে। এখন ওরা যদি এটা জানতে পারে তাহলে আমার মান ইজ্জত কিচ্ছু থাকবে না।
–শোন, ও এখনো বাচ্চা, হয়তো একটা ভুল করে ফেলেছে। তুই বরং মামুনের বাবার সাথে বিষয়টা শেয়ার কর, দেখ ওরা মিষ্টিকে বাচ্চা সহ মেনে নেয় কিনা।
–তুই কি পাগল হয়ে গেলি? কার পাপের বোঝা ওরা মাথায় নিবে? এখন আমি কি করবো? আমার যে মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিছে।
–তা না হলে কেউ কিছু জানার আগেই দ্রুত ওর বিয়ে দিয়ে দে।
–পরে যদি ওরা জানতে পারে, তাহলে আরো বড় সমস্যা হয়ে যাবে।
–একটা কাজ করতে পারিস, বিয়েটা আরো কিছুদিন পিছিয়ে নে, এর মধ্যে মিষ্টির বাচ্চাটাকে নষ্ট করে ফেল।
–কি বলছিস এসব?
–তো কি করবি? তুই নানা হবি? যেই বাচ্চার বাবার পরিচয় ই তুই জানিস না। মিষ্টি যে প্রেগন্যান্ট হয়তো সে এখনো টের পায়নি। বাচ্চার বয়স প্রায় ২ মাস হবে হয়তো। যা করার এখনই করতে হবে। নাহলে বাচ্চা বড় হয়ে গেলে আর কিছু করতে পারবি না।
–আমাকে একটু ভাবতে দে।
.
বন্ধুকে বিদায় দিয়ে মিষ্টির বাবা ঘরে ফিরে আসে।
মিষ্টি বিছায়নায় হেলান দিয়ে বসে আছে, আর তার পাশে মা বসে আছে।
–এখন কেমন লাগছে মা?(মিষ্টির বাবা)
–ভালো লাগছে এখন।
–শোনো, তুমি একটু অন্য রুমে যাও। মিষ্টির সাথে আমার কিছু কথা আছে।(মিষ্টির মাকে উদ্দেশ্য করে)
মিষ্টি মা সোজা বাহিরে চলে যায়।
–আব্বু, কিছু হয়েছে?
–নাতো, কি হবে?
–আম্মুকে বাহিরে পাঠিয়ে দিলে যে।
–তোকে কিছু কথা বলতাম।
–হ্যা বলো না।
–তুই তোর বাবা আর মাকে কতটা ভালোবাসিস?
–কি বলো আব্বু, এটা কোনো প্রশ্ন হলো? অনেক ভালোবাসি তোমাদের।
–তোর সাথে মামুনের বিয়ে ঠিক করেছি তোর মতামত না নিয়েই, তুই কি এই বিয়েতে রাজি? মানে তুই কি বাহিরে কাউকে পছন্দ করিস?
–কি বলো আব্বু, তুমিতো জানোই আমি কোনো ছেলের সাথে মিশি নি, কোনো ছেলের সাথে কথাও বলি না। পছন্দ তো দুরের কথা। মামুনের সাথে বিয়েতে আমার কোনো অমত নেই। আমি রাজি এই বিয়েতে।
–মানে তোর সাথে কারো কোনো সম্পর্ক নেই?
–না আব্বু।
বাবা মিষ্টির দিকে চেয়ে আছে। কি নিশ্পাপ লাগছে মিষ্টিকে।
আনমনেই বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে মিষ্টির সামনে থেকে উঠে চলে আসে মিষ্টির বাবা।
আর মনে মনে খুব বড় একটা আঘাত পায়।
মেয়ে প্রেগন্যান্ট হয়ে বসে আছে, আর মুখের সামনেই বলে দিলো কারো সাথে কোনো রকম সম্পর্ক নেই।
এভাবে এত বড় মিথ্যা বলতে পারলো?
এখন কি জবাব দিবো নিজের বড় ভাইকে? কি জবাব দিবো মামুনকে?
সবাই কত বড় বড় করে বলছিলো আমার মেয়ে একটা লক্ষ্মী মেয়ে। তার মতো মেয়ে হয় না। এখন যদি তারা এটা জানতে পারে, তাহলে তারাও এই বিয়েটা ভেঙে দেবে। এই সমাজে আর কাউকে মুখ দেখানো যাবে না।
এসব আনমনে ভাবতে ভাবতে মিষ্টির বাবা কাজে বেরিয়ে পড়ে।
মিষ্টি রুমের এক কোনায় বসে আছে। তখনই মামুন কোথায় থেকে যেনো দৌড়ে আসে।
–মিষ্টি, কি হয়েছে তোর?
–তুই এখানে? আব্বু আছে, যা ঘরে যা। আমি আসতেছি।
–চাচা নেই। আসার সময় দেখলাম কাজে যাচ্ছে।
–তুই কোথায় থেকে আসলি?
মামুন মিষ্টির পাশে এসে ওকে আগলে ধরে বসে।
–আম্মু ফোন করে বললো তুই নাকি মাথা ঘুরে পড়ে গেছিস?
–মাথাটা কেমন যেনো চক্কর দিয়ে উঠছিলো, বুঝতেই পারিনি কখন পড়ে গেছি।
–চাচি তোর সাথে ছিলো না?
–আম্মু তো রুমে আছিলো, আমি নাস্তা বানাচ্ছিলাম। তখনই এমন হয়েছে।
–কেনো এতে পাকনামি করতে যাস?
–আরে কিছু হয়নি তো, ডাক্তার আঙ্কেল বললো শরীরটা দূর্বল, তাই এমন হইছে।
–শোন, কাজ কাম একটু কমিয়ে দে। আমার বাবুটাকে একটু দেখে শুনে রাখ। ওর যেনো কেনো ক্ষতি না হয়।
–কেনো হবে? এটা কি তোর একার? আমারও তো বাবু। আমি আমার বাবুর অনেক খেয়াল রাখবো।
–হয়েছে, আর ডং করার দরকার নাই। দেখতেই তো পাচ্ছি কেমন খেয়াল রাখতেছেন।
–এই শয়তান ছেলে, তোর বউ পড়ে গেছে। কোথায়ও ব্যথা পেয়েছে কিনা একবারও জিজ্ঞেস করছিস? খালি বাবু বাবু করতেছিস। আমি তোর বউ লাগি, এটা কি ভুলে গেছিস?
–বউকে দেখে রাখার তো মানুষের অভাব নাই, কিন্তু আমার বাবুটাকে দেখে রাখার মানুষতো শুধু তুই।
–বাব্বাহ, এতো ভালোবাসা আমার বাবুটার প্রতি?
–কেনো? ভালোবাসা যায় না?
–অনাগত সন্তানের জন্য তোর যেই ভালোবাসা, এতো ভালোবাসা আমার জন্য যদি দেখাতি, তোর জন্য জীবনটাই দিয়ে দিতাম। আমিই শুধু তোকে ভালোবেসে গেলাম।
–হয়েছে, বকবক করিস না। নাস্তা করছিস?
–করিনি, করিয়ে দিবি?
–আমাকে কেনো করাতে হবে?
–এতোদুর থেকে ছুটে আসলি আমার জন্য, খাওয়াই দিতে পারবি না?
–ছাগল কোথাকার, বস এখানে। চাচি কোথায়?
–রান্না ঘরে।
–চাচি, ওওওও চাচি…..
মামুন নাস্তা আনতে চাচিকে ডাকতে ডাকতে রান্না ঘরে চলে যায়।
মিষ্টি পেছন থেকে মুচকি মুচকি হাসে।
.
আজ হঠ্যাৎ দুপুরে মিষ্টির বাবা বাড়ি চলে আসে।
–কিগো? আপনি আজ হঠ্যাৎ দুপুরে চলে আসলেন? শরীর খারাপ করছে?
–হ্যা, হালকা।
–কি হয়েছে আপনার?
–তেমন কিছু না। শরীরটা ক্লান্ত লাগছিলো,তাই দোকান বন্ধ করে চলে আসছি।
–ভালো করেছেন, বিশ্রাম নিন কিছুক্ষণ।
–মিষ্টি কই?
–গোসল করতে গেছে, এক্ষুনি খেতে চলে আসবে। আপনিও হাত মুখ ধুয়ে নিন, একসাথে খাবো।
–আচ্ছা।
বাবা খাবার নিয়ে বসে আছে, একটু পর মিষ্টি খেতে আসে।
–আব্বু, আজ তাড়াতাড়ি চলে এসেছো?
–হুম, তোদের সাথে খাবো, তাই চলে এলাম। আয় বস এখানে।
–হুম।
–খাবার নেওয়া লাগবে না। আমি তোকে খাইয়ে দিচ্ছি।
–ওমা, তুমি খাবে না?
–আমি খেয়ে নেবো, আগে তুই খেয়ে নে, ডাক্তার না বললো যে তোর শরীর দূর্বল। খাবারটা খেয়ে এই যে ঔষুধটা নিয়ে আসছি, এটা খেয়ে নে।
–এটা কিসের ঔষুধ?
–ভিটামিন ঔষধ।
–এখন বুঝি আমাকে ভিটামিন ও খেতে হবে?
–হ্যা, নে হা কর।
মিষ্টি নিজেকে খুব ভাগ্যবতী ভাবে। কাল থেকে এখন পর্যন্ত সে নিজের হাতে কোনো খাবার খায়নি। বাবা আর নিজের স্বামী নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছে।
–আব্বু, বিয়ের পরেও কিন্তু আমাকে এভাবে খাইয়ে দিবে। নাহলে কিন্তু আমি এই ঘরে আসবো না।
–পাগলি মেয়ে, যা ঔষুধ টা খেয়ে নে।
–আচ্ছা,
মিষ্টি ঔষুধ খেয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
আর বাবা যায় মামুনের মায়ের কাছে।
–ভাবি, তোমাকে কিছু কথা বলার ছিলো।
–হ্যা বলেন না।
–বলছিলাম কি, হঠ্যাৎই আমার শরীরটা একটু ক্লান্ত ক্লান্ত লাগছে, হাতেও অনেক কাজ পড়ে আছে। বিয়েটা কিছু দিন পিছিয়ে দিলে কেমন হয়?
–কি যে বলি, আচ্ছা রাতে আপনার ভাই আসলে আমি ওনাকে বলবো। এরপর উনি আপনাকে জানাবেন।
–আচ্ছা ভাবি, মনে করে ভাইয়াকে জানাইয়েন।
বিয়ে পিছানোর কথা বলায় মামুনের মা একটু চিন্তিত হয়ে পড়েন।
কেননা যত দিন যাবে তত মিষ্টির জন্য সামনের দিনগুলে কঠিন হয়ে পড়বে।
সবাই চাচ্ছিলো বিয়েটা তাড়াতাড়ি হয়ে যাক, কিন্তু মিষ্টির বাবা এখন বিয়েটা পেছাতে চাইছে।
খুবই চিন্তার বিষয়।
রাতে মামুনের বাবা বাসায় এলে এই নিয়ে তাদের কথা হয়।
বিয়েটা ১ সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়া হয়।
সর্বমোট প্রায় আরো ১৫ দিন পর বিয়ে।
–মিষ্টি, এখানে কি করছিস?
–কেনো? এটা তো আমার নিজের ঘর, নিজের ঘরে আসতে পারি না।
–চাচা খুজবে তোকে।
–খুজবে না, আব্বু ঘুমিয়ে গেছে, আজ নাকি শরীরটা খারাপ লাগছে, তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেছে।
–তা আমার কাছে কেনো?
–খুব বেশি মিস করছিলাম, তাই চলে আসছি।
–তাই?
–তাই কি? তুই এতো খারাপ কেনো রে? আমায় এটুও ভালোবাসিস না, একটুও মিস করিস না।
–জানি না রে, আমি আমার ভালো লাগা, ভালোবাসা, অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে পারি না, বুঝাতে পারি না। জানি না কেনো আমি এমন।
–থাক, বুঝানো লাগবে না, আমিই বুঝে নেবো।
–গুড,আমার বাবুটা কেমন আছে?
–খুব জ্বালাচ্ছে আমাকে, সন্ধ্যা থেকেই ব্যথা দিচ্ছে।
–বাব্বাহ, এই কয়দিনেই জ্বালাতে শুরু করছে? বাকি দিনতো এখনো পড়েই আছে।
–ওকে বল যে আম্মুকে যেনো ব্যথা না দেয়।
–আচ্ছা বলছি,
–এই না না, থাক।
–কি?
–ব্যথা দিক, ও ব্যথা দিলে আমি ওর উপস্থিতি টের পাই। মনের শান্তি লাগে।
–বাব্বাহ, একটু কথা বলি আমার বাবুর সাথে?
–বল।
মামুন মিষ্টির পেটে কান লাগিয়ে দুষ্টুমি করে বাবুর সাথে কথা বলতে থাকে, আর মিষ্টি মামুনের এমন কান্ডে হাসতে থাকে।
–এই আস্তে, ব্যথা করছে।
–সরি সরি,
–পেটের ভেতর কেমন যেনো করছে। বুঝতে পারছি না।
–এটা কি???, রক্ত আসলো কোথায় থেকে?
–রক্ত? কিসের রক্ত?
–এই যে বিছানায় রক্ত।
–বুঝতে পারছি না তো।
–মিষ্টি, তোর কাপড় দেখি রক্তে ভেজা। কি হচ্ছে এসব?
–আমি কিছু বুঝতে পারছি না। আমার ভীষন পেটে ব্যথা করছে।
–তোর পিরিয়ড শুরু হয়নিতো?
.
.
.
চলবে……….
.
.
লেখক:- #A_Al_Mamun