প্রেমতরী পর্ব-০৮

0
226

#প্রেমতরী
পর্ব:- ৮
.
–মিষ্টি, তোর কাপড় দেখি রক্তে ভেজা। কি হচ্ছে এসব?
–আমি কিছু বুঝতে পারছি না। আমার ভীষন পেটে ব্যথা করছে।
–তোর পিরিয়ড শুরু হয়নিতো?
–কি বলছিস এসব? আমি প্রেগন্যান্ট। পিরিয়ড কেনো হবে? ২ মাস যাবত আমার পিরিয়ড হয়নি।
–তাহলে এটা কি?
–আমি জানি না, এটা পিরিয়ড না, পিরিয়ড হলে আমি বুঝতাম।
–দাড়া আমি আম্মুকে ডেকে আনি।
মামুন দৌড়ে গিয়ে মাকে ডেকে আনে।
মিষ্টির এমন খবর শুনে জেঠিমা দৌড়ে আসে।
–মিষ্টি, কি হয়েছে মা?
মিষ্টি দাত দিয়ে ঠোট কামড়ে বসে আছে।।
–এমন করছিস কেনো? কি হয়েছে?
–ভীষণ পেটে ব্যথা করছে, রক্ত বের হচ্ছে।
–কি হচ্ছে এসব? মামুন জলদি তোর বাবাকে বল একটা গাড়ি ডাকতে, মিষ্টিকে এক্ষুনি হাসপাতালে নিতে হবে।
খুব দ্রুত মিষ্টিকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
ততক্ষণে মিষ্টির বাবা মাও হাসপাতালে হাজির।
প্রায় আধাঘণ্টা পর ডাক্তার এসে জানায়,
–রুগির কাছের মানুষ কে আছেন?
মামুন দৌড়ে ডাক্তারের সামনে যায়।
–আমি আমি, আমি ওর স্বামী।
মামুনের এমন কথা শুনে মিষ্টির বাবা খুব অবাক হয়। তবুও তিনি বিষয়টা এড়িয়ে যান, ভাবেন কয়দিন পরতো ওদের বিয়ে, হয়তো এইজন্য এমনটা বলছে।
–ওকে, আপনি আমার চেম্বারে আসুন।
–ডাক্তার সাহেব, আমার বউ কেমন আছে?
–উনি ঠিক আছেন, ওনার কোনো সমস্যা হয়নি, আপনি একটু দয়া করে আমার সাথে আসুন।
–ঠিক আছে চলুন।
মিষ্টির বাবা দেয়ালে হেলান দিয়ে একপাশে দাড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে।
এদিকে সবাই একইভাবে কান্না করছে।
–বসুন, আপনার সাথে কিছু কথা আছে।
–কি হয়েছে ওর?
–দেখুন, সবার সামনেই বলতে পারতাম। তবে উচিত মনে করিনি বিধায় আপনাকে আলাদা ডাকলাম।
–কি হয়েছে?
–আপনারা কি জেনে শুনেই এবরশন করাচ্ছেন?
–এবরশন? কিসের এবরশন?
–মানে আপনারা কি ইচ্ছে করেই বাচ্চাটা নষ্ট করছেন?
–কি বলছে এসব? বাচ্চা কেনো নষ্ট করতে যাবো? আমার বাচ্চা ঠিক আছেতো ডাক্তার সাহেব?
–দুঃখিত, বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছে। আপনার স্ত্রী ভালো বলতে পারবেন এই ব্যাপারে।
–বাচ্চা নষ্ট হয়েছে মানে? কিসব উল্টাপাল্টা কথা বলছেন? আমার স্ত্রী ভুলেও এইকাজ করবে না।
–দেখুন ভাই, ওনার শরীরে mm-kit এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এই ঔষুধটা সাধারণত গর্ভপাত বা এবরশন করানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। উনি এই ঔষুধ খেয়েছেন কিনা এই ব্যাপারে আপনি ওনাকে জিজ্ঞেস করলে ভালো হয়।
(মামুনের শরীরটা কেপে ওঠে।)
–তবে হ্যা, আরেকটা কথা। এতে আপনার স্ত্রীর মৃত্যুর ঝুকি ছিলো, না বুঝে উনি এই ঔষুধ খেয়েছেন। আপাতত আমরা ওনাকে ঘুমের ঔষুধ দিয়ে দিয়েছে। আপনারা ওনাকে বাসায় নিয়ে যেতে পারেন। আর হ্যা, পরবর্তীতে কখনো ডাক্তারের অনুমতি ছাড়া কোনো ঔষুধ ব্যবহার করবেন না।
ডাক্তারের এমন বক্তব্য শুনে মামুন চোখে পানি নিয়ে চেম্বার থেকে বের হয়।
মামুনকে চেম্বার থেকে বের হতে দেখে মামুনের মা আর মিষ্টির মা দৌড়ে কাছে আসে।
–মামুন, কি বলেছে ডাক্তার? মিষ্টির কি হয়েছে?
–না আম্মু, কিছু হয়নি। আমরা একটু পরই মিষ্টিকে বাসায় নিয়ে যেতে পারবো।
–তাহলে এসব কি হচ্ছিলো?
–সেটা মিষ্টিই ভালো জানে, বাসায় চলো, সব জানতে পারবে।
–বুঝলাম না কিছু।
–বাসায় চলো আগে।
.
এদিকে মিষ্টির বাবা সবার থেকে একটু আলাদা হয়ে দাড়িয়ে আছে।
আর মনে মনে ভাবছে। আজ সবার সামনে তার আর মান ইজ্জত থাকবে না।
নিশ্চয় আজ ওরা বিয়েটা ভেঙে দিবে।
যদি সবাই এটা জেনে যায় যে বিয়ের আগেই মিষ্টি এই কাজ করেছে। কেউ ওকে আর বিয়ে করবে না। ডাক্তার নিশ্চয় মামুনকে সব বলে দিয়েছে।
যেইভাবে হোক মামুন আর ভাইয়ের কাছে হাত পা ধরে হলেও বিয়েটা দিবো, নাহলে আমি শেষ হয়ে যাবো। সবাই আমার মুখে থুথু দিবে।
এদিকে রাতেই মিষ্টিকে এম্বুলেন্সে করে বাড়ি নিয়ে আসা হয়। মিষ্টির এখনো জ্ঞান ফিরেনি।
সবাই যারযার রুমে চলে যায় ঘুমানোর জন্য।
আর মামুন সারারাত মিষ্টির পাশে বসে আছে। এখনো হাজারো প্রশ্ন মিষ্টিকে করা বাকি আছে।
কেনো সে এই অপরাধটা করলো? কেনো সে এত আসা দেখিয়েও বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেললো?
মামুন মিষ্টির দিকে এক নাগাড়ে চেয়ে আছে। আর মনে মনে ভাবছে, মিষ্টি কিছুতেই এই কাজটা করতে পারে না। সেতো আমায় প্রচন্ড ভালোবাসে, বাচ্চাটা তো মিষ্টি নিজেই নিতে চেয়েছে।
তাহলে কেনো?
সকালে মিষ্টির জ্ঞান ফেরে, মামুন একটা চেয়ারে বসে বসে ঘুমাচ্ছে।
ধীরেধীরে মিষ্টি উঠে দাড়ায়, নিজেরকে বোঝার চেষ্টা করে ওর কি হয়েছে।
ততক্ষণে জেঠিমা ঘর ঝাড়ু দিতে দিতে মামুনের রুমে চলে আসে।
এসে দেখে মিষ্টি দাড়িয়ে আছে।
–মিষ্টি, মা কেমন আছিস?
মায়ের কথার শব্দে মামুন ঘুম থেকে উঠে যায়।
–আমার কি হয়েছিলো জেঠিমা?
–ডাক্তার তো বললো কিছু হয়নি।
–কিছু হয়নি? তাহলে এমন হলো কেনো?
–সেটা তো আমিও বুঝতে পারছি না।
–আমি বলছি কি হয়েছে, বস এখানে।(মামুন)
–হুম,
–আমাকে ছুয়ে কথা দে, যা বলবি সব সত্য বলবি।
–মিথ্যা কেনো বলবো?
–তুই কি ইচ্ছে করেই বাচ্চাটা নষ্ট করেছিস?
মামুনের এমন কথায় মা এবং মিষ্টি দুজনই যেনো আকাশ থেকে পড়লো?
–মামুন, কি বলছিস এসব? বাচ্চা নষ্ট করেছে মানে?(মামুনের মা)
–হ্যা আম্মু, বাচ্চাটা আর নেই।
–এই, কি বলছিস তুই এসব? বাবু নেই মানে? কি হয়েছে আমার বাবুর?(মিষ্টি)
–সত্যিই কি তুই কিচ্ছু জানিস না?
–না, বল আমার বাবুর কি হয়েছে?
–বাবু নষ্ট হয়ে গেছে? তোর পেটে কোনো বাচ্চা নেই।
–বাচ্চা নেই? এই তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? কি সব বলছিস আবোলতাবোল।(কান্না করতে করতে)
–আমি ঠিকই বলছি।
–কেনো আমার বাবু নেই? কি হয়েছে?
–এবরশন হয়ে গেছে। ডাক্তার বললো তুই নিজেই করেছিস এটা।
–কি বলছিস এসব? আমি আমার বাচ্চা মেরে ফেলবো? কি করে ভাবলি এটা? যাকে নিয়ে আমি এত স্বপ্ন দেখছি, যার জন্য আমি অপেক্ষার প্রহর গুনছি, তাকে আমি মেরে ফেলবো?
–দেখ মিষ্টি, আমি জানি না এটা কিভাবে হয়েছে। তবে এটা সত্য যে তুই নিজেই এই ঔষুধটা খেয়েছিস।
–ঔষুধ খেয়েছি? কিসের ঔষুধ?
–mm-kit নামের একটা ঔধুষ।
–গত দুই বছরেও আমি কেনো ঔষুধ খাইনি। তাহলে এই ঔষুধ কোথা থেকে আসবে?
–মনে করে দেখ।
–এক মিনিট, কাল আব্বু আমাকে একটা ঔষুধ দিয়েছিলো খেতে,বলেছিল এটা ভিটামিন। তাই আমি দুপুরে একটা আর রাতে একটা খেয়েছি।
–ঔষুধটা আছে তোর কাছে?
–হ্যা, আমার টেবিলে রাখা আছে।
.
মামুন দৌড়ে গিয়ে মিষ্টির টেবিল থেকে ঔষুধটা নিয়ে আসে।
মামুনকে দেখে মিষ্টির মা ও মামুনের পিছে পিছে মিষ্টির কাছে ছুটে আসে।
–এটাই কি সেই ঔষুধ?
–হ্যা হ্যা, এটাই।
–এটা তোকে চাচা দিয়েছে?
–হ্যা, কাল দুপুরে খাবার পর দিয়েছিলো।
মামুন ঔষুধটা হাতে নিয়ে চাচাকে ডেকে নিয়ে আসে।
এদিকে সবাইকে একরুমে দেখে মিষ্টির বাবা অবাক হয়ে যায়।
–কি হয়েছে? এত সকাল সকাল কেনো ডেকেছিস?
মিষ্টি মামুনের হাত থেকে ঔষুধটা ছো মেরে নিয়ে বাবার সামনে এসে দাড়ায়।
–আব্বু, এটা কিসের ঔষুধ?
–এটা তোর পাপ মুছার ঔষুধ। যেই পাপ তুই করেছিস, আমি তা মুছার জন্যই তোকে এই ঔষুধটা দিয়েছি।
মিষ্টি ছলছল চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে।
–তুমি এটা কি করে করলে? কি করে আমার বাবুটাকে খুন করতে পারলে? তোমার বুকটা একটুও কাপলো না?
–তুই আবার মুখের ওপর কথা বলতেও শিখে গেছিস? তোর মত মেয়ে জন্ম দিয়েই ভুল করে ফেলেছি। আগে জানলে তোকে আমি তখনই গলা টিপে মেরে ফেলতাম।
–কি বলছেন আপনি এসব?(মিষ্টির মা)
–চুপ করো, তুমি কিচ্ছু জানো না তোমার মেয়ে কতটা নিচে নেমে গেছে। বিয়ের আগেই কার সাথে নষ্টামি করে বাচ্চা নিয়েছে। আবার সেই বাচ্চার জন্য আজ আমার মুখের ওপর কথা বলছে।
বাবার এমন কথা শুনে মিষ্টির চোখ দুটো আগুনের মত লাল হয়ে গেছে।
–চাচা, সব যখন জেনেই গেছেন, তখন একবার জিজ্ঞেস করারও প্রয়োজন মনে করলেন না? এভাবে বাচ্চাটাকে শেষ করে দিলেন?
–আমায় ক্ষমা করে দিস মামুন, আমার মেয়েটা এমন কাজ করবে জানলে আমি কখনোই ওকে তোর হাতে তুলে দিতে চাইতাম না। এর আগেই ওকে আমি মেরে ফেলতাম।
–ওটা আমার সন্তান ছিলো।
–মানে?
–মানে এটাই যে মিষ্টি আমার স্ত্রী, এবং আপনি যাকে খুন করেছেন সেটা আমারই বাচ্চা।
–কি বলছিস এসব তুই?
–ওরা ঠিকই বলছে, ওরা বিবাহিত। আমরা সবাই এই ব্যাপারে জানতাম। আপনি শুনলে কষ্ট পাবেন, তাই আমরা সবাই চেয়েছিলাম আপনার মতামত নিয়ে ওদের আবার বিয়ে দিতে। যেন আপনি কষ্ট না পান। কিন্তু আপনি এমন একটা কাজ করবেন এটা আমরা কেউই আসা করি নি।(মামুনের মা)
–কি বলছো তোমরা এসব?
–সবই সত্যি, হ্যা আমরা অপরাধ করেছি, আপনাকে নূ জানিয়ে বিয়ে করেছি। কিন্তু আমাদের বিয়েতে তো আপনার মত ছিলো, আপনিই আমাদের বিয়ে দিচ্ছিলেন। তাহলে কেনো এত বড় শাস্তি? আপনি যখন জেনেই গেছেন মিষ্টি প্রেগন্যান্ট, একবার তো জিজ্ঞেস করতে পারতেন বাচ্চাটা কার, বকতে পারতেন, মারতে পারতেন। আমার বাচ্চাটাকেই মেরে ফেললেন,,!(মামুন)
মামুনের এমন কথা শুনে মিষ্টির বাবার মেজাজি মনটা নিমিষেই নরম হয়ে যায়।
তিনি ধীরেধীরে মিষ্টি কাছে যান।
–মিষ্টি,
(মিষ্টি চুপ করে চোখের পানি ফেলছে)
–মিষ্টি(মিষ্টির হাত ধরে)
–ছাড়ুন, একদম আমার কাছে আসবেন না। একজন খুনির সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।
–কি বলছিস এসব?
–আমি ঠিকই বলছি, আপনি আমার সন্তানকে মেরে ফেলেছেন, আপনার সন্তানও আজ থেকে আপনার কাছে মৃত, চলে যান এখান থেকে…………
.
.
.
চলবে………..
.
লেখক:-#A_Al_Mamun