বেনে বৌ পর্ব-০১

0
204

#বেনে_বৌ
পর্ব-১

নিজ ভাসুরের সাথে বিয়েটা মেনে নিতে পারছিল না কবিতা।স্বামী গত হলো মাত্র ছয় মাস। ছয় মাসে জীবনে নানান পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে তাকে। বয়স আঠারোতে বিয়ে বিশে বৈধব্য মেনে নিয়ে শ্বশুরকূলে থাকাটা ভীষণ যন্ত্রণার।ভালোবেসে ক্লাসমেটের হাত ধরে বাবার সংসার ছেড়েছিল। শ্বাশুড়ি মেনে না নিলেও ফেলে দেয়নি।কড়া শাসনেও রাখেনি তবে নিষেধ ছিল সন্তান যেন না আসে গর্ভে। ছয় মাস আগে হুট করেই শাফিনের ডেঙ্গু হলো।কত চিকিৎসা কত কান্নাকাটি কিন্তু কিছুই ফেরালো না শাফিনকে।মৃত্যুর শেষ সময়ে কেবল মায়ের হাত ধরে বলেছিল
“মা আমার আমানত রেখে গেলাম আপনার কাছে। যদি শেষ বিচারের দিন সুযোগ হয়, তবে আমি আমার আমানতের দাবী করবো।”

শাফিনের মা ছেলের হাত ধরে বলেছিলেন সে তার আমানত রক্ষা করবে কিন্তু রক্ষাটা এভাবে করবে জানা ছিল না।আজ কবিতার মনে হয় একটা বাচ্চা থাকলে তাকে অন্তত বুকে নিয়ে রাত পার করা যেত। বুকের যে অংশটা খালি হয়ে আছে সেটা এতোটা খালি খালি লাগতো না। কবিতার বাপ-ভাইয়েরা এসেছিল।তারা কবিতাকে নিজেদের কাছে নিয়ে যেতে চায়। এখন ভালো ছেলে দেখে বিয়ে শাদীর ব্যবস্থা করার কথা বলতেও আপত্তি করেন না তারা। প্রথম দিকে শাফিনের মায়ের আপত্তি ছিল কিন্ত চোখের সামনে যুবতী পুত্রবধূ চোখ মুখে যন্ত্রনা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এটাও তার সহ্য হয়নি। কবিতাকে তার বাবা ভাই নিয়ে যাওয়ার তিন দিনের দিন সকালে কবিতাদের বাড়িতে উপস্থিত হন তিনি। কবিতার মায়ের হাত ধরে খুব কান্নাকাটি করেন।।জোয়ান পূত্র হারানোর শোকে তার শরীর স্বাস্থ্য অনেক ঘেটেছে,সুশ্রী চেহারায় জুটেছে কালিমা। তার কান্নায় আশেপাশের দুই চার বাড়ির মহিলারা এলেন।সবাই মিলে স্বান্তনা দিচ্ছিলেন।পরিস্থিতি সামলে গেলে ভদ্রমহিলা নিজ বড় ছেলের জন্য চাইলেন কবিতাকে।কবিতা আপত্তি জানালো, এ কি করে হয়? শাফিনের জায়গা কাউকে দেওয়ার নয়।স্পষ্ট ভাষায় সেই কথা বাবা ভাইকেও বলেছে।অথচ শাফিনের মা নাছোড়বান্দা। কবিতার হাত ধরে বললেন,

” মারে!আমি তোর বয়সের ছিলাম যখন প্রথম সন্তান জন্মের সময় মারা যায়। সন্তান শোকের থেকেও নিজের মা হওয়ার ক্ষমতা নিয়ে পড়ে যাই দুশ্চিন্তায়। এরপর অনেক চিকিৎসার পর আমার আবিদ জন্ম নিলো। আবিদের দুই বছর পর জন্মালো শাফিন। শাফিনের পর আমার জরায়ু কেটে ফেলতে হয়েছিল।আর সন্তান জন্ম দিতে পারিনি।তাই আমি চেয়েছিলাম তোমার বয়সটা একটু হোক তারপর বাচ্চা নিলে তোমার ও ক্ষতি হবে না, আমাদেরও সব ইচ্ছে পূর্ণ হবে।অন্তত একটা মেয়ের ইচ্ছে।কিন্তু যদি আমি জানতাম আমার শাফিন………

শাফিনের মা কথা বলতে পারলেন না। কবিতা তার দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে ছিল।তার কোনো অনুভূতি হয় না কিন্তু কেবল মনে হতে থাকে এই শরীরে অন্য কাউকে স্পর্শ করতে দিতে পারবে না সে। তার স্পষ্ট মতামত জানিয়ে দিলেও কেউ গ্রহণ করলো না। বিয়ের দিন তারিখ পাকা করার পূর্বে প্রথম বারের মতোন কথা হলো আবিদের সাথে কবিতার।ভাইয়ের অনেক কথাই শুনেছিলো সাফিনের মুখ থেকে। লেখাপড়ার সুবাদে জাপানে অবস্থান করছে আবিদ।শাফিনের থেকে মাত্র বছর দুয়ের বড়,কথা ছিল লেখাপড়া শেষে শাফিন ও চলে যাবে ভাইয়ের কাছে। কিন্তু বিধাতার পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন। কবিতার সাথে কথা বলতে তার যে বেশ জড়তা কাজ করছে বুঝতে বাকী রইল না তার৷

“বিয়েতে আপনার মত নেই কবিতা?”
“একজন বিধবাকে বিয়ে করতে মত আপনি দিলেন কি করে? উপরন্ত সে আপনার ভাইয়ের স্ত্রী।”
“আমার সাথে বিয়ে না হলেও তো অন্য কাউকে করতে হবে।”
“আমি শাফিনের জায়গা কাউকে দিতে পারবো না।”
“আমরা কেউ কারোর জায়গা নিতে পারবো না, কেবল নতুন করে সবটা শুরু হয়।”
“আপনি আমাকে বিয়ে করলে পস্তাবেন।আমি আপনাকে শারীরিক……
” কবিতা, আমার কথা শুনুন।আমি বিয়েটা কেবল মায়ের কথা চিন্তা করে রাজি হয়েছি।আপনিও তো আমার ভাই শাফিনকে ভালোবাসেন। তাহলে শাফিনের মায়ের প্রতি আপনার কিছু দায়িত্ব থাকে।আমরা নিজেদের মধ্যে বিষয়টা ডিল করে নিতে পারি।”
“এ কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ?”
“আপনি বেশ বুদ্ধিমতি কবিতা।”
“বেশ আমার আপত্তি নেই।”
“পেপার’স পাঠিয়ে দিবো আমি মেইল করে।আপনি সাইন করে দিবেন। আপনার কোনো শর্ত?”

“আমি কখনো আপনার সন্তান গর্ভে ধারণ করবো না।”
“সন্তান ধারণের কথা তখন আসবে যখন আপনি আমার সাথ্ব ফিজিক্যালি থাকবেন।আপনি কি এতে রাজি আছেন?”

“আমি কখন বলেছি? ”
“তাহলে কথা কেন উঠছে?
” আমি আমার শর্ত জানিয়েছি।”
“বেশ।তবে কথাটা আমার আপনার মাঝেই থাকবে আশা করছি।”
“আপনি চাইলে দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারেন বা প্রেমিকা পালতে পারেন।”
“আপনি একটু বেশি কথা বলেন।”

আবিদ কিছুটা বিরক্ত নিয়ে কল কেটেছিল। অপর দিকে কবিতার মুখে ছিল মৃদু প্রশান্তির হাসি।বেশ তবে নামে থাকুক আবিদ তার স্বামী, শাফিন জড়িয়ে থাকবে তার পুরো কল্পনায়।

চলবে