ব্যক্তিগত সুখ পর্ব-০৫

0
259

#ব্যক্তিগত_সুখ
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ৫

– “হুমম, বুঝলাম, কিন্তু কি করে বিশ্বাস করি স্যার আপনাকে?
– কেন?
– “আপনি বিশ্বাসযোগ্য মানুষ না।”
– “বলছিলাম, তুমি চাইলে পারো মাঝেমধ্যে এসে আমার ক্লাস করতে। আই ডোন্ট মাইন্ড।”
– “সত্যি? ”
দেখুন, আমার কিছু আপনাকে বিশ্বাস করতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন, ঝড় আসার পূর্বাভাস। একমাত্র আল্লাহ তায়ালা’ই জানেন আপনার মনের মধ্যে কি চলছে?”
– “মানে?”
– “মানে ঝড় না কি তুফান? বন্য হলে, দয়া করে আগে ভাগে জানিয়ে দেবেন আমাকে।” ইমান তার কথা শুনে, হাসতে লাগলো,সে বললো,
– “বাড়ি বয়ে গিয়ে বাবা-মাকে নালিশ করে এসেছেন ধরেননি না, আমি আমার শাস্তি মাথা পেতে নিয়েছি মন থেকে।
এখন আমাকে বলুন, সাত দিন কবে কবে? আপনি ভালো করেই জানেন এছাড়াও করার মতোন আমার আরও অনেক কাজ আছে।”
মিম তার কথা শুনে হাসতে হাসতে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে গেলো, সে বললো,
– “সরি, বিশ্বাস করতে পারলাম না আপনাকে। আপনি যে জিনিস!
মনে হ’য় না আঙ্কেল আন্টিকে নালিশ করে আমার বিশেষ লাভ হয়েছে?”
– “কেন?”
– “স্যার,
আপনার চোখ গুলো যে এখনো আমায় অন্য কথা বলছে।”
ইমান ঠায়ে দাঁড়িয়ে রইলো। সে বুঝতে পারলো না এর উওরে কি বলবে? হঠাৎ, ইস্পা এসে জড়িয়ে ধরলো ইমানকে।
মিম সে দৃশ্য থাই গ্লাসে দেখে মুচকি হেসে এগিয়ে গেলো সামনের দিকে। এদিকে ইস্পা মেলায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বায়না করতে লাগলো ইমানের কাছে
। কিন্তু, ইমান….
সে হঠাৎ ইস্পা কে ঝাড়ি মে’রে উঠলো মিম তার চোখের আড়াল হওয়ার সাথে সাথে। বেশ কিছু ক্ষণ পর, সকল শিক্ষক এবং শিক্ষিকাদের একটি মিটিং ডাকা হলো। সেখানে প্রতিটি ডিপার্টমেন্টলর সি.আর উপস্থিত আছে।
ওখানে পিঠা উৎসব নিয়ে যে যার মতো করে বক্তব্য দিতে লাগলো। মিটিং শেষ করে ইমান ইচ্ছে করে’ই মিমের হাতে নিজের আইফোন টা দিয়ে বললো ওর এবং ইস্পার কিছু ছবি তুলে দিতে।
মিম ইমানের কথা মতোন ছবি তুলে দিলো। বাড়িতে ফেরার পর, ইস্পা তৎক্ষনাৎ তাকে ফোন দেখিয়ে বললো,
– “দেখো,
তোমার ওই দুষ্ট ছাত্রী আমাদের ছবি তোলার নাম করে। নিজের সেলফি দিয়ে গ্যালারি পরিপূর্ণ করে রেখেছে….!” ইমান তার কথা শুনে আনমনে হেসে উঠলো, সে বললো,
– “ওর থেকে এটাই আশা করা যায়, তুই আর ক’ দিন’ই বা চিনিস ওকে?” ওর কথা শুনে মুখ কালো হয়ে গেলো ইস্পার।
ওদিকে ইমান খুব মনোযোগ দিয়ে মিমের ছবি গুলো দেখছে। পরেরদিন সকালে, সে ভার্সিটি পৌঁছে মিম কে ওর ডিপার্টমেন্টে গিয়ে যাচ্ছে তাই বলে অপমান করলো।
মিম চুপচাপ সব সহ্য করে গেলো দাঁতে দাঁত চেপে। পরেরদিন থেকে মিমের আর কোনো খোঁজ নেই। নিরার কাছে তার ব্যাপারে জানতে চাওয়ায় সে একটু রাগ দেখিয়ে বন্ধুর হ’য়ে প্রতিশোধ নিতে বললো,
– “স্যার, আসলে ওকে পাএ পক্ষ দেখতে এসেছে। এ বার আমার বান্ধবীর বিয়ে টা হ’য়ে যাবে বোধহ’য়।
মনে হচ্ছে এইবার ছেলেকে সে নিজেই পছন্দ করেছে
।” নিরার শেষ কথা গুলো ইমানে’র মনে হয়তো দাগ কেটে ফেললো?
সে কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে। ওদিকে, মিম তার বাবার সাথে গ্রামের বাড়ি থেকে ঘুরে এলো। এখন তার মনমেজাজ দু’টোই বেশ ভালো আছে। বিকেলে রেষা,
বোনের ঘরে চলে এলো, কথায় কথায় সে তাকে বললো,
– “তোকে আর আমাদের নুহাসকে এক সাথে বেশ মানাবে।” মিম দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বললো,
– “হুহ্, তার আগে আমার যোগ্য হয়ে উঠতে হবে আপু তোমার দেওর কে…।
দেখ, আমি জানি না তুমি কি ভাবছ? কিন্তু, আমি জীবনও জেনে-বুঝে বিয়ে করবো না ওমন একটা ছেলেকে।”
– “মেঝো?”
– “চেঁচিয়ে কোনো লাভ নেই বড় আপু।
তোমার সংসার বাঁচাতে আমি বলিদান দিতে পারবো না নিজেকে।
আমাকে কি পেয়েছ কি তোমরা? হুমম, এই বাড়ি থেকে কেউ তোমাকে বলে দেয়নি ওমন একটা ছেলে
‘র সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পরতে।
কেন ওরকম একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক করেছিলে তুমি?
জানতে না, না কি ভুলে গিয়ে ছিলে বাবা কখনো মেনে নেবে না তোমাদের সম্পর্ক টাকে। শোনো, আপু
এতোদিন যাবত ভুল করেছ তুমি। তার সকল খেসার -ত কেন আমাকে দিতে হবে? মগের মুল্লুক পেয়েছ?
আমি মাদারত তেরেসা নই,যে সকলের সেবায় উদার মনে বিলিয়ে দেবো নিজেকে।”
এতক্ষণ, যাবত। দরজায় দাঁড়িয়ে হালিমা মেঝো মেয়র কথা শুনছিলেন। তিনি ভেতরে ঢুকে বললেন,
– “মা, তুমি না হয়। একটি বারের জন্য দেখা করে নিতে ঝুমা আপা এবং নুহাসের সাথে দেখা করায় কি দোষ?
মানুষ খারাপ ভাববে তোমাকে।” মিম তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো,
– “সরি পারলাম না গো,
এতো ঠেকা পরলে নিজের ছোটো মেয়েকে বিয়ে টা
দিয়ে দাও না, মা। তাহলে হয়তো তোমার বড় মেয়ের এই ঠুনকো সংসার টা বেঁচে যাবে। হুহ্, কতই না সুখে আছেন তিনি?
এতো সুখ যখন, তখন দু’জনে মিলে এসে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করার চেষ্টা করছ কেন আমাকে? দেখ মা তুমি সারাজীবন ছোটো মেয়ে বড় মেয়ে করে যাবে তা তো হয় না।
আমি কিন্তু এইসব বাবার কানে তুলবো আজ রাতে।
তখন দেখবো তোমাদের এতো বচন কই যায়? আমি বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি দিন কে দিন তোমাদের কথায় আর কাজে।”
মেয়ের কথায় কিছুটা চিন্তিত হয়ে পরলেন হালিমা।
রেষা বোনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– “মেঝো, তুই এতো টা স্বার্থপর হলি কবে?” মিম হাসতে হাসতে বললো,
– “বড় আপু তুমি’ই বা মাদার তেরেসা ছিলে কবে? নিজে সুখে থাকবে বলে তুমি আমার ভবিষ্যৎ টা নষ্ট করতে চাইছ….।
নিজের সুখের জন্য তুমি চাও আমি যেন বিয়ে করে নেই তোমার দেওরের মতো একটা গণ্ডমূর্খ ছেলেকে। বিয়ে হওয়ার পর থেকে শুধুমাত্র যৌতুকের জন্য তুমি এ বাড়িতে পরে আছো। বলি লজ্জা নেই তোমার? একটু ও লজ্জা করেনা তোমার বাবার বাড়িতে এসে ফকিরে’র মতো হাত পাততে? আর আমার মা? কি আর বলবো?
এক মহীয়সী নারী, পারলে এখুনি তার এই অপদার্থ মেয়ের জন্য সে শূলে চড়িয়ে দিতো আমাকে তা তুমি নাকি বিয়ে করে খুব সুখী? তোমার সুখ বুঝি এখন যৌতুকের টাকা এবং আসবাব পত্রের ওপরে নির্ভর করছে?”
বোনের কথায় চোখে জল চলে এলো রেষার, হালিমা বললেন,
– “মা তোর কি একটু ও খারাপ লাগছে না? বড় আপুর সাথে এভাবে কথা বলতে?”
– “মোটেও না, ও যা ভোগ করছে তা ওর কর্মফল। দয়া করে তুমি ওর হয়ে সাফাই গাইতে এসো না আমার কাছে।
তোমার বড় মেয়ে গোল্লায় গেছে বলে আমি গোল্লায় চলে যাবো এটা তুমি ভাবলে কিভাবে? একটু আমার দিকটা ও ভেবে দেখ মা,আমি কেন যাবো জেনে-বুঝে নিজের সাজানো গোছানো ভবিষ্যৎ টা নষ্ট করতে। তোমরা আমার থেকে এতো আশা কেন রাখো মা? তোমার মতোন একজন মানুষ আমার মা, সেটা ভাব -লেও আমার গায়ে জ্বর আসে।
তোমরা যে যার মতো স্বার্থ আদায় করতে ব্যস্ত। তখন আমাকে আমার দিক টা নিজে’ই বুঝে নিতে হবে।”
তখন হঠাৎ ফাইজান সাহেব মেয়ের ঘরে চলে এলেন, তিনি একটু রেগে’ই মেয়েকে বললেন,
– “তোমাকে আমি এর আগেও বলেছি মা, যদি মা কখনো ভুল করে থাকে তাহলে তুমি বুঝিয়ে বলবে তাকে।
কিন্তু তাকে কখনো কষ্ট দিয়ে কথা বলবে না। মানুষ মাএ’ই ভুল হয়। সবাই সবকিছু বুঝতে পারেনা সমান ভাবে।” মিম রেগে গিয়ে বললো,
– “তার মানে তো এই নয় বাবা, যে সে যখন যা খুশি তা করে বেড়াবে আমার সাথে। আর হ্যাঁ, আমার মা না এতো টাও অবুঝ না তুমি দয়া করে এতোটাও সরল ভেবো না তাকে।
তিনি চাইছেন৷ ওনার বড় মেয়ের জন্য আমি আমার ভবিষ্যৎ টা নষ্ট করে দেই, কেন? তার মেয়ের সংসারে না কি অশান্তি হবে। আমি কি তোমাদের বড় মেয়ে কে বলেছিলাম বাড়ি থেকে পালিয়ে যা? বিয়ে কর? কি হলো? বলো?
এগুলো কি আমি বলেছিলাম ওকে? শোনো বাবা, ও যা ভোগ করছে তা ওর কর্মফল। আমি তুমি কেউ পারবোনা আল্লাহ তায়ালা দেওয়া শাস্তির হাত থেকে ওকে বাঁচাতে। কাজেই দয়া করে বারবার আমাকে বলির পাঠা বানানো বন্ধ করো। আর হ্যাঁ, আমি আজ থেকে এভাবেই কথা বলবো সবার সাথে তোমার বড় মেয়েকে বলে দেও, সে যেন নিজের সমস্যার সমাধান নিজেই করে।
আর কখনো’ই যেন ওর ওই ভেসে যাওয়া সংসারের গল্প না শোনাতে আসে আমাকে। আমি তোমাদের কাছে থেকে থেকে বিরক্ত,
আমার জন্য বাড়ির অন্ন ধ্বংস হয় আর তোমাদের অন্যান্য মেয়েরা খুব বংশের নাম উজ্জ্বল করছে। বাহ, ওয়াও। তোমাদের পলিসি মানতেই হচ্ছে। ভুল করবে একজন,তার মাশুল দিতে হবে অন্য কাওকে? প্রয়োজনে,
আপুর ডিভোর্স করিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসো। কারণ, ও যে মেয়ে। ও কখনো’ই মানিয়ে গুছিয়ে থাকতে পারবেনা ওদের সাথে।”
মেয়ের কথায় চোখে জল চলে এলো হালিমার, তিনি ফাইজান সাহেবকে ডেকে নিয়ে বললেন,
– “মেয়েকে নিয়ে খেতে চলে আসো৷ আমার ওপরে রাগ দেখিয়ে মেয়ে টা শেষমেশ না খেয়েই থাকবে।”

চলবে,,,