ভরৌদ্র দ্বীপের রুদ্রাণী পর্ব-৭+৮+৯

0
453

#রৌদ্র_দ্বীপের_রুদ্রাণী
#পর্বঃ৭
#Saiyara_Hossain_Kayanat

“আদ্রলিকা চিঠি”

আরশি কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না। আগের মতো টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে। ধ্রুব আবারও চেচিয়ে বলল-

“আদ্রলিকা তোর চিঠি এসেছে।”

ধ্রুবর আকর্ষণ কাড়া কাণ্ঠে লাইব্রেরিতে থাকা তিনজন বয়ষ্ক লোক কৌতুহলী চোখে তার দিকে তাকালো। আরশি খানিকটা বিরক্তি প্রকাশ করে বলল-

“উফঃ ধ্রুব ডিস্টার্ব করছিস কেন সবাইকে!”

ধ্রুব হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে। তার মধ্যে থাকা সকল উত্তেজনা মনের মধ্যেই চাপা দিয়ে মাথা নিচু করে বইটা হাতে নিয়ে আরশির দিকে এগিয়ে আসলো। চেয়ারে বসে চাপা কন্ঠে বলল-

“আদ্রলিকা আমি মজা করছি না, এই যে দেখ চিঠি।”

ধ্রুব বই থেকে চিঠি বের করে আরশির দিকে এগিয়ে দিল। আরশি নির্লিপ্ত চোখে চিঠি দিয়ে তাকালো। চোখে মুখে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ করেই আরশি মাথা উঁচু করে ধ্রুবর হাত থেকে চিঠিটা ছিনিয়ে নেয়। হাতের মুঠোয় নিয়ে মুচড়ে নিচে ফেলে দিলো। গম্ভীর গলায় বলল-

“এতদিন অপেক্ষা করার পর চিঠি পাওয়ার ইচ্ছে মরে গেছে। বাদ দে এসব।”

আরশি কথা গুলো বলেই আবারও মাথা নিচে করে টেবিলে ঠেকিয়ে চুপচাপ বসে রইলো। ধ্রুব হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে আরশির দিকে। যে চিঠিএ জন্য এতদিন ধরে অপেক্ষা করে আসছে, আর আজ সেই চিঠি হাতের কাছে পেয়েও এভাবে মুচড়ে ফেলে দিলো! তাহলে কি আরশি অপেক্ষার প্রহর গোনা থামিয়ে দিয়েছে! তবে কি আরশির ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছে! ধ্রুব দীর্ঘশ্বাস ফেলে। খানিকটা ঝুঁকে মেঝে থেকে চিঠিটা উঠিয়ে আবারও ভাজ করলো। আরশির মাথায় হাত রেখে শান্ত গলায় বলল-

“আদ্রলিকা তুই রেগে আছিস কেন!”

আরশি মাথা তুলে কঠিন গলায় বলল-

“দেখ ধ্রুব আমাকে বার বার আদ্রলিকা ডাকবি না। আমি তোর বিড়াল না যে তুই আমাকে আদ্রলিকা ডাকবি।”

ধ্রুব অবাক হলো। ধ্রুবর কুচকুচে কালো ভ্রু জোড়া ঈষৎ কুচকে গেল। ছোট বেলায় ধ্রুবর সাদা রঙের একটা বিড়াল ছিল। নাম আদ্রলিকা। ধ্রুবর মা রেখেছিল এই নাম। যখন ধ্রুব বয়স চার তখন হঠাৎ করেই বিড়ালটা মারা যায়। ধ্রুব সারাক্ষণ কান্নাকাটি করতো বিড়ালটার জন্য। তার কিছুদিন পরেই আদিব হাসান পুরো পরিবার নিয়ে ধ্রুবদের পাশের বাসায় শিফট করে। আরশির বয়স ছিল তখন একবছর। ফর্সা, তুলতুলে নরম এই বাচ্চা আরশিকে দেখেই ধ্রুব সেই বিড়ালটার নাম আরশিকে দিয়েছিল। তারপর থেকে আরশি বেশিরভাগ সময় ধ্রুব কাছেই ছিল। ধ্রুব একটা সময় আরশির প্রতি আসক্ত হয়ে যায়। আরশিকে ছাড়া যেন একমুহূর্তও তার চলে না। যখন আরশি বড় হয় তখন শাকিল বলেছিল আদ্রলিকা ধ্রুবর বিড়ালের নাম। আরশি প্রথম প্রথম রাগ করলেও পরে সেটা ধ্রুবর ভালোবাসা ডাক বলেই মেনে নিয়েছে। আরশিকে এই নামে ধ্রুব ছাড়া কেউ ডাকে না। আজ এত বছর পর আরশি এই নামটার প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করেছে। এতে ধ্রুব মনে মনে কিছুটা কষ্ট পেলেও তা প্রকাশ করলো না। মুচকি হেসে আরশির নাকে হাল্কা টান দিয়ে বলল-

“তুই আমার বিড়াল সেটা কে বলেছে! তুই তো আমার জান। তাই তো তোকে আদ্রলিকা বলে ডাকি।”

আরশি ধ্রুবর দিকে শীতল চাহনিতে তাকালো। ধ্রুব শান্ত শীতল চেহারা নিমিষেই আরশির রাগ উবে গেল। এই একটা মানুষ যে কি-না আরশির ভালো খারাপ প্রতিটা মুহুর্তে তার পাশে ছিল। আরশির মলিন হাসি বলল-

“হয়েছে বুঝেছি। দে এবার অচেনা লোকের চিঠি পড়ি।”

ধ্রুব আরশির দিকে চিঠিটা দিলো। আরশি ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে চিঠি খুলে পড়তে লাগলো-

প্রিয় রুদ্রাণী,

দূর দ্বীপবাসিনী,
দূর দ্বীপবাসিনী, চিনি তোমারে চিনি
দারুচিনিরও দেশে, তুমি বিদেশিনী গো
সুমন্দ ভাষিনী দূর দ্বীপবাসিনী……

এই গানটাই তুমি গেয়েছিলে। পূর্নিমার রাতে সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে ছিলে। তোমার সাথে কারা ছিলো তাদের কথা খেয়াল নেই। কোনো একজনের ‘আদ্রলিকা’ ডাকে তুমি সাড়া দিয়েছিলে এটা বুঝতে পেরেছিলাম। যদিওবা আমি তোমার চেহারাও দেখিনি। শুধু তোমার কন্ঠে গান শুনেছিলাম।
যাই হোক দুঃখিত তোমাকে ভুল বোঝার জন্য। তোমার সাথে এতটা কাকতালীয় ভাবে কথা হবে সেটা আমার কল্পনার মধ্যেও ছিল না। তাই তোমার কথা বিশ্বাস করতে একটু কষ্ট হচ্ছিলো। আবারও দুঃখ প্রকাশ করছি।

লাস্ট চিঠিটা রেখে যাওয়ার পর বেশকিছুদিন ধরে লাইব্রেরি বন্ধ দেখেছি। প্রায় তিনমাস পর তোমার চিঠি পেয়েছিলাম বইয়ের মাঝে। কিন্তু চিঠি পড়ার আগ মুহুর্তেই গ্রাম থেকে কল আসে আমার দাদু মারা গেছেন। সেই খবর শোনার পর তোমার চিঠি পড়ার সুযোগ হয়নি। তাড়াহুড়ো করে চিঠি বাসায় রেখেই গ্রামে চলে গিয়েছিলাম। একটা সময় মাথা থেকে চিঠির বিষয়টা বেরিয়ে যায়। আজ সকালে হঠাৎ করেই আমার পড়ার টেবিলের ডয়ারে তোমার চিঠিটা দেখতে পাই। তবে চিঠিটা পড়ে যে এত বড়সড় একটা সারপ্রাইজ পাবো সেটা জানতাম না। জানি না এতদিন পর চিঠি উত্তর দেওয়ায় আদ্রলিকার কাছে চিঠি পৌঁছাবে কি-না। আদোও কি আদ্রলিকা চিঠির অপেক্ষা করছে কি না সেটাও জানি না।

বিঃদ্রঃ রাতের নির্জন দ্বীপ। আকাশে জ্বলজ্বল করে ওঠা পুর্নিমার চাঁদ। আশেপাশে শীতল হওয়া বইছিলো। এমন একটা মুগ্ধকর পরিবেশে হঠাৎ করেই মিষ্টি কন্ঠে তোলা গানের সুর কানে ভেসে এসেছিল। গানের প্রতিটা লাইনের মাঝেই খিলখিল করে হাসির শব্দ শুনে কৌতূহলবশতই সেই দিকটায় এগিয়ে গয়েছিলাম। তখনই তোমার দেখা। তোমার ছবি তুলেছি কি মনে করে সেটা আমি নিজেও জানি না। আর কেন সেই ছবিটা এতটা গুরুত্ব দিচ্ছি সেটা না হয় অন্য কোনো একদিন বলবো। যদি আদ্রলিকা এই চিঠিটা পায় তাহলে অনুরোধ রইলো খুব তাড়াতাড়ি চিঠির উত্তর দেওয়ার।

(রৌদ্র দ্বীপের রুদ্রাণী)

ইতি,
রৌদ্র

পুনশ্চঃ তোমার কন্ঠ শুনে তোমাকে ছোট্ট কিশোরী মেয়ে মনে হয়েছে। তুমি আমার থেকে খুব ছোট হবে। তাই তোমাকে তুমি সম্মোধন করে চিঠি লিখেছি।

আরশি চিঠিটা পড়ে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ধ্রুবর দিকে। চোখ দুটো গোলাকৃতি হয়ে আছে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি টুপ করে বেরিয়ে আসবে। ধ্রুব থতমত খেয়ে বসে আছে। দু’জনই চিঠি পড়ে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। খানিকটা সময় পর ধ্রুব নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলল-

“এই মানুষটা আমার দেওয়া নাম ধরে তোকে ডাকছে। আমার এটা সহ্য হচ্ছে না আদ্রলিকা।”

আরশি ভাবলেশহীন ভাবে চিঠিটার দিকে তাকিয়ে রইলো। কেমন রিয়েক্ট করবে! কি বলবে! চিঠির প্রতিত্তোরে কি লিখবে কিছুই মাথায় আসছে না। জ্ঞানশূন্য মানুষের মতো বসে আছে আরশি। হঠাৎ করেই আরশির ফোন ভেজে উঠলো। ফোনের শব্দে আরশির হুশ ফিরে। ধ্রুব নিজের পকেট থেকে আরশির ফোন বের করে দেখলো আদ্রাফের বাসা থেকে কল এসেছে। ধ্রুব আরশির দিকে ফোন এগিয়ে দিয়ে বলল-

“দোস্ত আদ্রাফের বাসা থেকে কল এসেছে। ধরে দেখ কি বলে।”

আদ্রাফের নাম শুনেই আরশির চোখেমুখে চিন্তার ছাপ পরে গেল। ফোন রিসিভ করতেই আদ্রাফের মা’র উত্তেজিত কন্ঠ শুনতে পেল।

“আদ্রাফ কোথায় আরশি! দুপুরে এসে বলল মাথা ব্যথা করছে ঘুমাবে। তারপর দরজা আটকে ঘুমিয়ে ছিল কয়েক ঘন্টা। কিন্তু হঠাৎ করেই বিকেলে কিছু না বলে কোথায় যেন চলে গেল। এখনো আসছে না। ফোনটাও বাসায় রেখে গেছে। আদ্রাফ কি তোদের সাথে মা!”

“আন্টি তুমি চিন্তা করো না। আমি আর ধ্রুব খুজে দেখছি আদ্রাফ কোথায়। হয়তো কলেজের ফ্রেন্ডদের সাথে কোথায় আড্ডা দিচ্ছে। তুমি চিন্তা না করে শান্ত হয়ে বস। আমি দেখছি।”

আরশি ফোন রেখে দিলো। ফোনের স্কিনে বড় বড় করে লেখা 08ঃ25pm. আরশি ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে বলল-

“ভার্সিটিতে যেতে হবে এখন। আদ্রাফ বিকেল থেকে বাসায় নেই। ফোনও বাসায় রেখে গেছে।”

চলবে…

(#রৌদ্র_দ্বীপের_রুদ্রাণী
#পর্বঃ৮
#Saiyara_Hossain_Kayanat

“তুই এখানে বসে আছিস কেন আদ্রাফ?”

ভার্সিটির কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বেঞ্চিতে মাথা নিচু করে বসে আছে আদ্রাফ। আরশির কথায় আদ্রাফ মাথা তুলে তাকালো কিন্তু কিছু বলল না। আদ্রাফের ফ্যাকাসে মুখ শুকিয়ে গেছে। চোখ দুটো লাল বর্নের হয়ে আছে। সব সময় যে চুলগুলো বিভিন্ন স্টাইলে থাকে আজ সেই চুল গুলো অগোছালো হয়ে আছে। গায়ে এখনো দুপুরের সেই পাঞ্জাবিটাই জড়ানো। আরশি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আদ্রাফের পাশে বসলো। ধ্রুব বসলো আদ্রাফের অন্য পাশে। আরশি আদ্রাফের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলল-

“আন্টি তোর জন্য চিন্তা করছে। এখানে এভাবে একা একা বসে থাকিস না। বাসায় চল।”

আদ্রাফ খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে থমথমে গলায় নিম্নস্বরে বলল-

“জানিস আশু! কাসফি আমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করেছে এতে আমার কষ্ট হচ্ছে না। একদমই না। কারণ আমি জানি কাসফি আমাকে ধোঁকা দেয়নি ও সত্যি সত্যিই আমাকে ভালোবেসেছিল। আমার কষ্ট লাগছে আমার বোকামির জন্য। আমার পাগলামির জন্যই কাসফি আমার সাথে সম্পর্কে জড়াতে রাজি হয়েছিল। আমি ওকে সত্যিই ভালোবাসতাম। কিন্তু কখনো এটা ভেবে দেখিনি আমাদের ভবিষ্যৎ কি হবে! আমরা দুজনেই একই বয়সের। অনার্সে ভর্তি হয়েছি কিছুদিন হলো। আমার বাবা নেই। মা ছোটখাটো ব্যবসা দিয়ে সংসার চালায়। তার চেয়েও বড় কথা আমি বেকার একটা ছেলে। ভালোবাসার আবেগে ভেসে আমি এসব কিছু একবারও চিন্তা করিনি। আমার এই বোকামির জন্যই আজ কাসফিকে এতটা কষ্ট পেতে হচ্ছে। আমি যদি ভালোবেসে এতটা পাগলামি না করতাম তাহলে হয়তো কাসফির জীবনটা আজ এমন বিষাদময় হতো না।”

আদ্রাফ উঠে দাঁড়ালো৷ অন্যদিকে মুখ করে কয়েক পা সামনে গিয়ে স্থির হয়ে দাঁড়ালো। হয়তো চোখের পানি লুকানোর চেষ্টা করছে। আরশি দাঁড়িয়ে উদাস গলায় বলল-

“তুই এভাবে ভেঙে পরছিস কেন আদ্রাফ! তোদের কারোই তো কোনো দোষ নেই তাহলে তুই নিজেকেই বা কেন দোষী ভাবছিস! এটাই হয়তো তোদের দুজনের ভাগ্যে ছিল।”

আদ্রাফ আরশির দিকে তাকিয়ে নির্মল হাসলো৷ তাচ্ছিল্যের সাথে বলল-

“আমার এই অবস্থা দেখে এমন করছিস তাহলে ভাবতে পারছিস এই মুহুর্তে কাসফি কতটা কষ্টে আছে! যে মেয়েটা কয়দিন আগেও আমাকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছে আর আজ কি-না অন্য একটা মানুষকে আপন করে নিতে হবে। প্রতিদিন সবার সামনে ভালো থাকার অভিনয় করতে হবে। আমি তো নিজের কষ্টটা প্রকাশ করতে পারবো কিন্তু কাসফি! ও কিভাবে নিজেকে সামলে নিবে!”

আরশি চুপ করে রইলো। আদ্রাফকে কিছু বলার মতো কথা তার মস্তিষ্ক তৈরি করতে পারছে। ধ্রুব চুপচাপ করে বসে বসে আদ্রাফের কথা শুনছে। কারও মুখেই কোনো কথা নেই আদ্রাফকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো।

“আমি চাইলেই আংকেলের সাথে কথা বলতে পারতাম কিন্তু আমি বলিনি। এমনটা না যে ওনার সাথে কথা বলার সাহস আমার নেই। কাসফির কাছে বিয়ের কথা শুনে আমি সারারাত ভেবেছি৷ কিন্তু মনের কোণে একটুখানিও আশার আলো দেখতে পেইনি। সব দিক থেকেই ছিলো বাধা। আংকেলের শরীর ভালো না সেটা আমরা সবাই জানি। কয়েকমাস আগে যখন স্ট্রোক করেছিল তখন তো আমরা সবাই মিলেই ওনাকে হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিল। দেখেছিলি তো তখন আংকেলের অবস্থা দেখে কাসফি আর আন্টির কি অবস্থা হয়েছিল! এখন যদি বিয়ের একদিন আগে যেয়ে আমি এসব বলি তখন কি হতো ভাবতে পারছিস!”

ধ্রুব উঠে এসে আদ্রাফের কাধে হাত রেখে বলল-

“আমরা বুঝতে পারছি আদ্রাফ। কিন্তু তুমি এভাবে ভেঙে পরলে আন্টির কি হবে! উনি তোমার জন্য চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠেছেন। ওনার কথাও তো তোমাকেই ভাবতে আদ্রাফ।”

আদ্রাফ মাথা নাড়লো। আরশি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রাফ আর কাসফিয়ার কথা ভেবে যেন তার নিজেরই বুক ফেটে কান্না আসছে। তার সব থেকে হাস্যজ্বল দুই বন্ধুকে এভাবে তার চোখের সামনে এই বিশাল কষ্টের নিচে চাপা পরতে দেখবে সেটা কখনই আরশি ভাবেনি। আরশি কোনো রকম নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে জড়ানো কন্ঠে বলল-

“বাসায় চল আদ্রাফ। আন্টি অপেক্ষা করছে তোর জন্য।”

আদ্রাফ চুপচাপ গম্ভীর পায়ে হাঁটা শুরু করলো। ভালোবাসা হারিয়ে ফেলার তীব্র কষ্টের ভারে বুকে অসহ্য ব্যথা অনুভব করছে তার। মাথায় শুধু একটাই চিন্তা। সেটা হলো কাসফি। কেউ জানে তাদের এই ভালোবাসা হারানোর হাহাকার কবে শেষ হবে।

————————

সকাক ন’টা। ফাঁকা লাইব্রেরিতে আরশি আর ধ্রুব বসে আছে চুপচাপ। এই মাত্রই লাইব্রেরি খুলেছে। আর সাথে সাথেই আরশি এসে হাজির। অচেনা মানুষটার চিঠির উত্তরে কি লিখবে সেটা নিয়েই আরশির মনে যুদ্ধ চলছে একমুহূর্তে। এতদিন পর চিঠি লিখবে ভেবেই তার হাত অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপছে। কলম হাতে নিয়ে বসে আছে কিন্তু লেখার সাহস পাচ্ছে না৷

“উফফঃ আরু তাড়াতাড়ি কর তো। এতো নার্ভাস হওয়ার কি আছে আজব!”

ভয়ংকর রকমের বিরক্তি নিয়ে কথা গুলো বলল ধ্রুব। আরশি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ক্ষিপ্ত হয়ে বলল-

“আরে অনেক দিন পর চিঠি লিখবো তাই ভেবে পাচ্ছি না কি লিখবো।”

“আরে ভাই আমার!! যা মনে আসে লিখ কিন্তু তাড়াতাড়ি কর। তুই না পারলে বল আমি লিখে দেই।”

ধ্রুবর কথায় আরশি চোখমুখ কুচকে চিঠি লেখা শুরু করলো।

প্রিয় অচেনা একজন,

জানেন তো কিশোরী মেয়েদের মন বড্ড বেশি অদ্ভুত হয়। এই সময়টায় মেয়েদের মনে নানানরকম অদ্ভুত অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি হয়। সামান্য তুচ্ছতম জিনিসকেও তারা খুব গুরুত্ব দেয় এই সময়টায়। একটা মেয়ের জীবনে সব থেকে রঙিন সময় হলো কিশোরকাল। তখন তাদের আলাদাই একটা কল্পনার জগৎ থাকে। আমারও ছিল কল্পনার জগৎ। আমিও ছিলাম হাস্যজ্বল এক কিশোরী মেয়ে। হঠাৎ করেই বইয়ের মাঝে আমার ছবি পেলাম। জীবনের প্রথম চিঠি পেলাম। কোনো একজন অচেনা ব্যক্তি আমার সামান্য একটা ছবিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এসব দেখে আমার কিশোরী মনেও অদ্ভুত অনুভূতির ছড়াছড়ি খেলা হয়েছিল। হঠাৎ করেই আবার বন্ধ হয়ে গেল চিঠি পাওয়া। আমার কিশোরী মন না চাইতেও চিঠির জন্য অপেক্ষা করেছে। প্রতিদিন অপেক্ষা করেছে। নানানরকম জল্পনাকল্পনা করেছে চিঠি নিয়ে। অপেক্ষা করতে করতেই কিশোরী মেয়েটা এখন তার রঙিন সময়টাকে পাড় করে ফেলেছে। আমার কিশোরী মন অপেক্ষা করেছিলো অচেনা একজনের চিঠির উত্তর পাওয়ার আশায়।

যাইহোক আপনার দাদা মারা গেছে শুনে খুব খারাপ লাগেছে। কাছের মানুষকে হারিয়ে আপনি হয়তো খুব কঠিন পরিস্থিতি পাড় করেছেন। আশাকরি এখন সব কিছু ঠিকঠাক আছে।

বিঃদ্রঃ ওইদিনের প্রতিটা মুহুর্তেকে এতটা নিখুঁতভাবে মনে রাখার কারণ জানার ভয়ংকর কৌতুহল জন্মেছে আমার মনে। সত্যি বলতে আমি নিজেও সেদিনের কথা গুলো তেমন একটা মনে রাখিনি। আচ্ছা যাইহোক ‘রৌদ্র দ্বীপের রুদ্রাণী’ কথাটার মানে কি! কেনই বা আমাকে রুদ্রাণী বলে সম্মোধন করছেন!

ইতি,
আদ্রলিকা

আরশি গাড় লাল রঙের কাগজে চিঠিটা লিখে বইয়ের মাঝে রেখে দিল। ধ্রুবর কাছে বইটা দিয়ে বলল-

“যা বইটা আগের জায়াগায় রেখে আয়।”

ধ্রুব চোখ ছোট ছোট করে আরশির দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকে। বইটা হাতে নিয়ে রেখে আসলো আগের জায়গায়। চেয়ারে বসে সন্দিহান কন্ঠে বলল-

“আচ্ছা আরু তুই যে চিঠি লিখে ওনার সাথে কথা বলছিস এসবের কারণ কি! আর কি মনে করেই বা একটা অচেনা মানুষের সাথে কথা বলছিস! এসব করা কি ঠিক হচ্ছে!”

আরশি ঘাড় বাকিয়ে ধ্রুবর দিকে তাকালো। সহজ গলায় জবাব দিল-

“কিছু কাজ বিনাকারণেই করতে ভালো লাগে। কিছু কিছু জিনিসের ঠিকবেঠিক, অথবা কারণ খুঁজতে হয়না।”

ধ্রুব কিছু বলল না। তার চোখেমুখে কৌতুহল আর চিন্তার ছাপ। আরশি কি করছে! কার সাথেই বা চিঠি আদান-প্রদান করছে! কি কারণেই বা এসব হচ্ছে? এরকম আরও অনেক প্রশ্ন ধ্রুবর মনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। কোন প্রশ্নেরই জবাব তার কাছে নেই। আরশি উঠে দাঁড়ালো। সাইড ব্যাগটা কাধে নিয়ে উদাস গলায় বলল-

“চল দেরি হয়ে যাচ্ছে। কাসফি হয়তো শ্বশুর বাড়ি থেকে এসে পড়েছে।”

ধ্রুব ছোট্ট করে শ্বাস ফেলে বলল-

“হুম চল। কিন্তু আদ্রাফ যাবে?”

“নাহ আমি আদ্রাফকে কল করেছিলাম। আদ্রাফ চায় না কাসফি আদ্রাফকে দেখে ভেঙে পড়ুক। তাই আদ্রাফ যাবে না। ও বলেছে আমরা যেন আংকেলকে কিছু একটা বুঝিয়ে বলি।”

“আচ্ছা তাহলে চল।”

ধ্রুব আর আরশি দু’জন রওনা হলো কাসফিয়াদের বাসার উদ্দেশ্যে।

চলবে…

(#রৌদ্র_দ্বীপের_রুদ্রাণী
#পর্বঃ৯
#Saiyara_Hossain_Kayanat

ছাদের এক কোণে নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কাসফিয়া। দৃষ্টি রৌদ্রজ্জ্বল আকাশের দিকে। চোখ দুটো পানিতে ছলছল করছে। আরশি ছাদে এসে কাসফিয়াকে এভাবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। নিশ্চুপে কাসফিয়ার পাশে এসে রেলিঙে হাত রেখে দাঁড়ালো। নিম্ন স্বরে বলল-

“তুই ঠিক আছিস তো কাসফি!”

কাসফিয়া তাকালো না। আগের মতোই নির্লিপ্ততার সঙ্গে আকাশের দিকে চেয়ে আছে। আরশি কাসফিয়াফ কাঁধে হাত রেখে বলল-

“চুপ করে থাকিস না কাসফি। কিছু বলতে চাইলে আমাকে বল।”

কাসফিয়া দৃষ্টি নামিয়ে কিছুক্ষন আরশির দিকে চেয়ে হুট করেই জড়িয়ে ধরলো। চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বলতে লাগলো-

“ভালোবাসার এমন পরিনতি আমি চাইনি আশু। তাহলে এমন হলো কেন আমাদের সাথে?”

আরশি কাসফিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে শান্ত গলায় বলল-

“এটাই হয়তো তোদের নিয়তি ছিল কাসফি। ভাগ্যকে মেনে নে। নিজেকে শক্ত কর। তোকে কষ্টে দেখলে আদ্রাফ আরও বেশি কষ্ট পাবে। তুই যেন ওকে দেখে ভেঙে না পরিস এই জন্যই কিন্তু আজ আদ্রাফ এখানে আসেনি।”

কাসফিয়া কিছু বলল না। নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছে। পেছন থেকে নীলা আর সুপ্তি এগিয়ে এসে মলিন কন্ঠে বলল-

“কাসফি আংকেল তোকে ডাকছে।”

কাসফিয়া আরশিকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে মলিন হেসে বলল-

“তোরাও নিচে চল।”

সবাই আহত দৃষ্টিতে কাসফিয়ার দিকে তাকালো। কাসফিয়া হাল্কা হেসে চুপচাপ ছাদ থেকে নেমে গেল।

—————————

সময় প্রায় বারোটার কাছাকাছি। মাথার উপর উত্তপ্ত রোদ। চোখে মুখে আকাশসম বিরক্তি। অডিটোরিয়ামের দিক থেকে হেঁটে ভার্সিটির অন্য পাশে যাচ্ছে আরশি। তিনদিন পরেই তাদের অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের সকল আয়োজন করার জন্যই আজ তাদের ক্লাস হচ্ছে না। অডিটোরিয়ামের সকলের চিল্লাচিল্লিতে বিরক্ত হয়ে আরশি বেরিয়ে এসেছে সেখান থেকে। নীল, নীলা আর সুপ্তি অডিটোরিয়ামে অন্যদের নাচ, গান দেখছে। ধ্রুব এখনো তার নিজের ক্লাসেই। কাসফিয়া নিজের নতুন সংসার নিয়ে ব্যস্ত তাই ভার্সিটিতে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। আর আদ্রাফ! সে তো সারাক্ষণ নিজের রুমের বন্দী থাকে। কলেজে আসাও বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের ফ্রেন্ড সার্কেলটা কেমন য্যেন ছন্নছাড়া হয়ে গেছে। কাসফিয়ার বিয়েতে শুধু তাদের ভালোবাসার সমাপ্তি হয়নি। সেই সাথে তাদের বন্ধুত্বের মাঝ থেকেও যেন হাসিঠাট্টার প্রান হারিয়ে গেছে।

“এই যে খুকুমনি এদিকে আসুন”

আরশি বিস্মিত হয়ে ঘাড় বাকিয়ে ডান পাশে তাকালো। রৌদ্র বেশ আরাম করে বেঞ্চিতে বসে আছে। ফোন কানে কাছে ধরে রাখা, হয়তো কারও সাথে কথা বলছে। তার মাথার উপর বিশাল কৃষ্ণচূড়া গাছ। গাছে লাল রঙের নতুন ফুল ফুটেছে। রোদের আলোয় ফুল গুলো ঝকঝক করছে। ঢালের ফাঁকা জায়গা দিয়ে সূর্যের তির্যক রশ্মি রৌদ্রর উপর এসে পরেছে। আরশি ভ্রু জোড়া কুচকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো। পরক্ষণেই তার পেছনে আর আশে দেখতে লাগলো কেউ আছে কি না।

“আমি আপনাকেই ডাকছি মিস আরু। এদিকে আসুন।”

আরশি ধীর পায়ে এগিয়ে আসলো রৌদ্রর কাছে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো রৌদ্র দিকে। রৌদ্র ফোন কান থেকে নামিয়ে শান্ত গলায় বলল-

“ক্লাস না করে বাহিরে কি করছেন আপনি?”

“আপনি আমাকে খুকুমণি বলে ডেকেছেন কেন?”

রৌদ্রর প্রশ্নের জবাবে পালটা প্রশ্ন করলো আরশি। রৌদ্রর গম্ভীরমুখে বলল-

“প্রশ্নের জবাবে উল্টো প্রশ্ন করা যে বোকা মানুষের পরিচয় সেটা জানেন!”

আরশির চোখে মুখে কঠোরতা ফুটে উঠলো। দু’হাত ভাজ করে শক্ত গলায় বলল-

“খুকুমণি কেন ডেকেছেন সেটা আগে বলুন। এসব পরেও জানা যাবে।”

রৌদ্র হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে শান্ত গলায় বলল-

“আপনি আমাকে সিনিয়র সিটিজেন বলেছেন। সেই হিসেবেই আমিও আপনাকে খুকুমণি বলেছি। হিসাব বরাবর।”

রৌদ্র বাঁকা হেসে আবারও বলল- “এবার বলুন ক্লাস না করে এখানে কি করছেন?

আরশি থতমত চেহারায় রৌদ্রর দিকে চেয়ে আছে। মানুষটা যে এখনো সেই দিনের কথা মনে রেখেছে সেটা আরশির ভাবনায় ছিল না। আরশি নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলল-

“ক্লাস হচ্ছে না। সবাই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠানের জন্য প্রেক্টিস করছে।”

রৌদ্র উঠে দাঁড়ালো। পকেটে ফোন রেখে বরাবরের মতোই শান্ত গলায় বলল-

“তাহলে আপনি ওখানে না গিয়ে হাঁটাহাঁটি করছেন কেন?”

“অতিরিক্ত চেচামেচি হচ্ছে তাই বাহিরে দাঁড়িয়ে ফ্রেন্ডদের জন্য অপেক্ষা করছি।”

রৌদ্র কিছু বলার আগেই নির্বানের আকর্ষণ কাড়া ডাক শোনা গেল। নির্বান বাইক নিয়ে গেইটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে রৌদ্রর জন্য। রৌদ্র নির্বানকে হাত দিয়ে ইশারা করে আরশিকে বলল-

“আমি যাচ্ছি। আর হ্যাঁ বাচ্চা মানুষ এভাবে একা একা বাহিরে না ঘুরে বন্ধুদের কাছে যান।”

কথা বলার সাথে সাথেই রৌদ্র হনহনিয়ে চলে গেল নির্বানের কাছে। বাইকে উঠার সাথে সাথেই মুহুর্তের মাঝে গায়েব হয়ে গেল। আরশি হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। অবাক চোখে গাইটের দিকে তাকিয়ে আছে। রৌদ্র কথা গুলো মনে পরতেই বিরবির করে বলল-

“অসভ্য লোক। লজ্জা করে না সব সময় জুনিয়রদের সাথে লেগে থাকতে! আজে বাজে কথা ছাড়া যেন মুখ দিয়ে ভালো কিছুই বের হয় না। অসহ্যকর!”

——————————

প্রিয় রুদ্রাণী,

আগামী শুক্রবার সকাল আটটায় লাইব্রেরির পাশের রেস্টুরেন্টে অপেক্ষা করবো তোমার জন্য৷ মুখোমুখি বসেই তোমার সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে চাই। আশাকরি আমার সাথে দেখা করার মতো বিশ্বাস আর অনুভূতি তোমার মনে তৈরি হয়েছে।

বিঃদ্রঃ তোমার অপেক্ষার কারণ হতে পেরে নিজেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ মানুষ মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে।

রৌদ্র দ্বীপের রুদ্রাণী
ইতি
রৌদ্র

আরশি চিঠি পড়ে চিন্তিত চোখে ধ্রুবর দিকে তাকালো। থমথমে গলায় বলল-

“কিরে এই লোক তো দেখা করার কথা বলছে। এখন কি করবো! দেখা করা কি ঠিক হবে?”

ধ্রুব চিঠিটা নিজের হাতে নিয়ে গভীর ভাবনার সাথে বলল-

“দেখা করা ঠিক হবে কি-না জানি না। তবে এই মানুষটা দেখার খুব ইচ্ছে হচ্ছে আমার।”

“কিন্তু শুক্রবার তো আমাদের ভার্সিটিতে অনুষ্ঠান। ওখানে তো উপস্থিত হতে হবে। তাহলে দেখা করবো কিভাবে?”

ধ্রুব চোখে মুখে বিরক্তির রেশ টেনে বলল-

“উফফ তুই এমন বলদ কেন আরু? অনুষ্ঠান সকাল দশটায় আর উনি দেখা করতে বলেছেন সকাল আটটায়। ওনার সাথে দেখা করে তুই নিশ্চিন্তে বাসায় যেয়ে রেডি হতে পারবি অনুষ্ঠানের জন্য। তাহলে এত চিন্তা কিসের!”

“অহহ তাই তো। আমি এতকিছু ভেবে দেখিনি।”

আরশি কথাগুলো বলেই একটা বোকা হাসি দিলো। ধ্রুব সরু চোখে আরশির দিকে চেয়ে বলল-

“বাসায় চল। দেরি হচ্ছে।”

——————————

“শাকিল আদ্রলিকা কোথায় রে? দু’দিন ধরে যে ওকে দেখছি না! ছাদেও তো আসে না।”

ধ্রুব ড্রয়িংরুমে এসেই শাকিলের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলো। শাকিল সোফায় গাঁ এলিয়ে দিয়ে বলল-

“তুই গিয়েই দেখ তোর বিল্লির কি হয়েছে। সারাদিন রুমে চুপচাপ বসে থাকে।”

ধ্রুব ভ্রু কুচকে সন্দিহান কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো-

“রুমে বসে থাকে কেন? কিছু হয়েছে? ছোট মা বকাবকি করেছে না-কি!”

“কিছুই তো হয়নি। আশু হয়তো ভালো মানুষের খাতায় নিজের নাম লেখাতে চাচ্ছে তাই ঝগড়াঝাটি না করে সারাদিন রুমে বসে থাকে।”

শাকিল খানিকটা উচ্চস্বরেই কথাটা বলল। আরশি রুম থেকে শাকিলের কথা শুনে ড্রয়িংরুমে এসে দাঁড়ালো। ধ্রুবর দিকে একঝলক তাকয়ে শাকিলের এসে চুল টেনে ধরে বলল-

“দুইটা দিন তোকে একটু শান্তি দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুই তো সেটার যোগ্য না।”

শাকিল আরশির হাত চেপে ধরে চুল ছাড়িয়ে নিয়ে বলল-

“দেখলি তো ধ্রুব কুত্তার লেজ কোনোদিনও সোজা হয় না। এই পেত্নিও কোনোদিন মানুষ হবে না”

ধ্রুব আর শাকিল ঝংকার তুলে হেসে উঠলো। আরশি নাক ফুলিয়ে তাদের দুজনের তাকিয়ে রইলো। শাকিল আর ধ্রুবর হাসি থামার কোনো লক্ষন না দেখে আরশি ছোট করে একটা শ্বাস ফেলে থমথমে পায়ে রুমে চলে গেল। ধ্রুব কিছুক্ষন শাকিলের সাথে আড্ডা দিয়ে আরশির রুমে চলে গেল। ধ্রুব আরশির রুমে এসে দেখল আরশি স্টেডি টেবিলে চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে। ধ্রুব শব্দহীন পায়ে আরশির পেছনে এসে দাঁড়ালো। টেবিলের উপর অচেনা মানুষের চিঠি গুলো পরে আছে। ধ্রুব চিঠি দিকে কিছুক্ষন চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল-

“চিঠির মানুষটার সাথে দেখা করবি এইজন্য অস্বস্তিবোধ করছিস তাই না আদ্রলিকা!”

আরশি মাথা তুলে নির্বিকার ভঙ্গিতে ধ্রুবর দিকে তাকালো। ধ্রুব বিছানায় পা তুলে বসে বলল-

“তুই যেভাবে নার্ভাস হচ্ছিস মনে হচ্ছে তোর বিয়ে হবে লোকটার সাথে।”

ধ্রুবর কথায় আরশি ক্ষিপ্ত হয়ে টেবিলের উপর থেকে একটা কলম নিয়ে ধ্রুবর দিকে ছুড়ে দিলো। বিরক্তির সুরে বলল-

“আজেবাজে কথা বলবি না ধ্রুব। ভালো লাগে না এসব।”

ধ্রুব কলমটা হাতে নিয়ে গম্ভীরমুখে বলল-

“তাহলে সারাক্ষণ রুমে এভাবে একা একা বসে থাকিস কেন?”

“দেখতে দেখতেই দু’দিন চলে গেল। কালকে লোকটার সাথে দেখা করবো ভেবেই কেমন যেন অদ্ভুত রকমের অনুভূতি হচ্ছে। ভয় লাগছে খুব।”

আরশি মলিন মুখে কথা গুলো বলেই মাথা নিচু করে হাত কচলাতে লাগলো। ধ্রুব আরশির হাতের দিকে এক নজর তাকিয়ে সহজ গলায় বললো-

“এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই আমি তো থাকবোই তোর সাথে। আমি তো আর তোকে একা ছেড়ে দিচ্ছি না তাই না! এখন এসব বাদ দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে আচরণ কর। তা-না হলে ছোট মা, শাকিল ওরা চিন্তা করবে তোকে নিয়ে।”

চলবে..