মায়ার জালে পর্ব-০৪

0
346

#গল্প::#মায়ার_জালে
#লেখক #পাপন
#পর্ব::০৪

অনু আয়ানের পিছু পিছু উপরে যায়। আয়ান ব্যাগ সুফায় ফেলে দিয়ে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশ রুমে যায়। অনু আয়ানের ব্যাগটা সুফা থেকে তুলে টেবিলে সুন্দর করে গুছিয়ে রাখে। তারপর বিছানায় বসে পড়ে। আয়ান শাওয়ার নেওয়ার পর হঠাৎ তার মাথায় এলো কাপড় নিতেই ভুলে গেছে। তাড়াহুড়ো করে কাপড় টাই আনা হয় নি।তার পরনে শুধু টাওয়াল । আয়ান ওয়াশ রুমের দরজা একটু ফাঁক করে দেখলো ভিতরে কেউ আছে কিনা। রুমে তাকাতেই অনুকে বিছানায় বসা দেখলো।আয়ান অনুনয়ের সুরে বললো,,,,,,

আয়ান— অনু, আমার কাপড় গুলো একটু দিবা। আসলে তাড়াহুড়ো করে আনতেই ভুলে গেছি।

অনু— আমি দিচ্ছি এক মিনিট ।

অনু কাপড় নিয়ে আয়ানের হাতে দিবে তখনই ঘটলো আরেক বিপত্তি । অনু স্লিপ খেয়ে একেবারে আয়ানের উপরে গিয়ে পড়লো। আয়ান তাল সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে যায় । এমন বেসামাল ভাবেই পড়ে যে অনুর ঠোঁট আয়ানের ঠোঁটকে স্পর্শ করে। এক মিনিটের জন্য দুজনেই হতবিম্ব হয়ে পড়ে। অনু আয়ানকে কোনোমতে সরি বলে কাপড় ঝেড়ে বেরিয়ে আসে। আয়ান এখনও ঘোর লাগা ভাবেই ওয়াশ রুমে শুয়ে আছে। তার যেনো বুদগম্যই হচ্ছে না বিষয়টা। কিছুক্ষণ পর আয়ান ওয়াশ রুম থেকে বের হয় । রুমে অনুকে দেখতে পায় না। অনু নিচে চলে গেছে। আয়ানও নিচে যায় । নিচে নামতে নামতে অনুর সাথে একবার চোখাচোখি হয়। চোখাচোখি হতেই দুজনে লজ্জায় মিয়িয়ে যায় । একটু আগের ঘটনার জন্য কেউ কারো দিকে তাকাতেই পারছে না।

/

খাবার টেবিলে আয়ানের সামনের চেয়ারে অনু বসেছে। অনুর পাশে বসেছে রিতু। আয়ান আর অনু একজন আরেকজনের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে । চোখাচোখি হলেই দুজনে লজ্জায় নেতিয়ে পড়ছে। রিতু এসব কাহিনী দেখছে আর লুচির মতো ফুলছে । একসময় সহ্য করতে না পেরে বলেই দেয়,,,,,,

রিতু— খাবার সময় এতো না তাকালেই চলবে।

রিতুর কথা শুনে দুজনেই বিষম খায়। আয়ানের মা রিতুকে বললেন।

আয়ানের মা— কি বললে মামনি।

রিতু— না ফুফি কিছু না।

আয়ানের মা— খাও খাও। খাবার সময় বেশি কথা বলতে নেই।

রিতু— আর বেশি তাকাতে নেই। তাই না ফুফি।(আয়ান আর অনু লজ্জায় খাবার নাড়াচাড়া করছে)

আয়ানের মা— ওমা না তাকালে খাবে কি করে।

আয়ান হেসে দেয়। আয়ানের হাসির দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে অনু। কি সুন্দর হাসি। রিতু অনুর দিকে তাকিয়ে বললো।

রিতু— আমি আশেপাশে তাকাতে নেই বলেছি ফুফি।( অনু সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নেয়)

আয়ানের মা— ও আচ্ছা খাও খাও। ( উনি মাথার মুন্ডু কিছুই বুঝেন নি)

খাওয়া দাওয়া শেষে আয়ান রুমে চলে যায় । অনু রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। ভিতরে ঢুকবে কি ঢুকবে না চিন্তা করছে। ওয়াশ রুমের কথা মনে পড়লেই সে লজ্জা পাচ্ছে । আস্তে আস্তে করে রুমের ভিতর ঢুকে পড়লো। ভিতরে ঢুকে দেখলো আয়ান সুফায় শুয়ে আছে। অনু গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। “””””””””””

ভোরবেলা পাখির কিচির মিচির কলরবে ঘুম ভাঙে আয়ানের। সূর্য পূর্ব দিগন্তে উঁকি দিয়েছে মাএ। আয়ান জানালার পর্দা সরাতেই এক মুঠো রোদ্দুর অনুর চোখে মুখে গিয়ে পড়ে। এই রোদ্দুর অনুকে ঘুমন্ত অবস্থায় আরো অপরূপ মায়াবী করে তোলে। আয়ান যেন চোখ সরাতেই পারছে না। মনের মাঝে অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে অনুর জন্য । (কিছুক্ষণের জন্য আয়ান ভুলেই গেছে যে অনু আকাশকে ভালোবাসে। আকাশ যদি কখনও ফিরে তাহলে অনুর সাথে তার এই সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।) আয়ান একটু হেসে ওয়াশ রুমে চলে যায় ।

/

ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে অনু এখনও ঘুমোচ্ছে । তাই সে অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হয় । তারপর নিচে নেমে নাস্তা করে অফিসে চলে যায় ।

অনুর মাএ ঘুম ভাঙলো । সে ঘুম থেকে উঠে আয়ানকে দেখতে না পেয়ে বিছানা গোছিয়ে ওয়াশরুমে যায় । ফ্রেশ হয়ে নিচে যায় নাস্তা করতে। নাস্তা করে সবাই মিলে ডয়িং রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে । রিতু অনুর দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে। আর মনে মনে বলছে,,,,,

রিতু—- বেয়াদব মাইয়া। আকাশকে ধরে রাখতে পারে না। আর আমার ভালোবাসায় ভাগ বসিয়েছে। তকে তো আমি দেখে নেবো।(মনে মনে)

অনুর খেয়াল হলো রিতু তার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে।

অনু— আসার পর থেকে ও এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে কেন। আমি কি করলাম ওর সাথে।(মনে মনে)

হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো । অনু গিয়ে দরজা খুলে। দরজার সামনে থাকা মানুষকে দেখে অনুর চোখ খুশিতে ঝলমল করে উঠে। কারন দরজার সামনে অনুর বাবা মা দাঁড়িয়ে । অনু তার মাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে।

অনু— মা বাবা তোমরা।

অনুর মা— হ্যাঁ! তকে দেখতে এলাম।

অনু— আসো আসো ভিতরে আসো।( চোখে মুখে খুশির ঝলক)

অনুর বাবা মাকে দেখে আয়ানের বাবা মা এসে তাদের সাথে কুশল বিনিময় করলেন। তারপর শুরু হলো বেহাই- বেহাইনের আড্ডা । অনু গিয়ে সবার জন্য নাস্তা বানিয়ে আনলো । সবাই একসাথে বসে গল্প করছে। এভাবে তাদের আনন্দঘন মুহুর্তে কেটে গেলো সারাদিন ।অনু উপরে চলে যায় । গিয়ে বিছানায় বসে ফোন টিপছে ।কিছুক্ষণ পর অনুর মা রুমে ঢুকলেন।

অনু— আরে মা আসো । বসো।

অনুর মা— আয়ান কে তো দেখছি না।( বসতে বসতে বললেন।)

অনু— উনি অফিসে । একটু পরেই চলে আসবেন ।

অনুর মা— একটা কথা বলি মা।

অনু— হ্যাঁ মা বলো।

অনুর মা— আমি জানি তুই আকাশকে ভীষণ ভালোবাসিস । আকাশও তকে ভালোবাসতো । কিন্তু কেন এমন করলো তা আমাদের অজানা। আয়ান ছেলেটাও অনেক ভালো। আর এখন সে তর স্বামী । তুই ওকে মেনে নে।হয়তো বিধাতা এটাই চেয়েছিলেন আয়ানের সাথে তর বিয়ে হোক। দেখবি দুজনেই ভালো থাকবি। আমার কথাটা চিন্তা করে দেখিস মা।

অনু— আমি চেষ্টা করবো মা।( আস্তে করে বললো)

উনি মেয়ের মাথায় হাত বোলাতে লাগলেন। আয়ান রুমে ঢুকে অনুর মাকে দেখে সালাম করলো।

অনুর মা— কেমন আছো বাবা।

আয়ান— ভালো । আপনারা কখন আসলেন।

অনুর মা— সেই দুপুরে এসেছি।

আয়ান— আচ্ছা আপনি গল্প করুন আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।( আয়ান ওয়াশ রুমে গেলো ফ্রেশ হতে।অনুর বাবার সাথে ডয়িং রুমেই কথা বলে এসেছে)

অনু আর অনুর মা নিচে চলে যান। সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করে।অনু আয়ানের জন্য খাবার নিয়ে উপরে আসে।আয়ানও ফ্রেশ হয়ে টেবিলে বসে পড়ে। অনু আয়ানকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে ।

আয়ান— তুমি খেয়েছ ।

অনু— হুম । ডাল দেই,,

আয়ান— হুম অল্প ।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে আয়ান ঘুমিয়ে যায় । অনুও সবকিছু গোছিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে । পরদিন সকালে আয়ান আর অনুর একসাথেই ঘুম ভেঙে যায় ।এবার ঘটলো আরেক বিপত্তি । ওয়াশরুমে কে প্রথম যাবে ,,,,,

অনু— আমি যাই। আপনি পরে যাবেন।

আয়ান— না আমি যাবো। আমার অফিস আছে।

অনু— আমি।

আয়ান— না আমি।

অনু—- না আমি যাবো।

আয়ান— আচ্ছা তুমিই যাও।

অনু— না তাহলে আপনি যান। আপনার অফিস আছে।

আয়ান— না এখন তোমাকে যেতেই হবে।

অনু+আয়ান—- আচ্ছা ঠিক আছে দুজনেই একসা,,,,,( বলে দুজনেই জ্বিবে কামড় দেয়।)

আয়ান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাড়াতাড়ি ওয়াশ রুমে ঢুকে পড়ে। অনু বাইরে দাঁড়িয়ে হেসে দেয়। হঠাৎ অনু কি একটা ভাবে,, তার হাসি মুখখানা মলিন হয়ে যায় । তারপর অনু বিছানা গোছাতে লাগে,,,,,,,,,,

চলবে,,,,,,,