মায়ার জালে পর্ব-০৫

0
341

#গল্প::#মায়ার_জালে
#writer::#পাপন
#পর্ব::০৫

অনু বিছানা গোছাতে লাগলো। আয়ান শাওয়ার নিয়ে ওয়াশ রুম থেকে বের হলো। পরনে ফরমাল ড্রেস । চুল সিঁথি করা। দেখতে একদম পারফেক্ট লাগছে। অনু যেন চোখ সরাতেই পারছে না। অনু বুঝতে পারছে আয়ানের জন্য ধীরে ধীরে তার মায়া কাজ করছে। আয়ান অনুর দিকে তাকাতেই অনু অন্যদিকে চোখ সরিয়ে নেয় । তারপর কাপড় নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে যায় । এদিকে আয়ানেরও অনুর প্রতি ভালোবাসা জন্ম নিয়েছে । দুজনের ওয়াশ রুমে যাওয়া নিয়ে কথোপকথন মনে পড়ছে আর মনে মনে হাসছে।আয়ান তৈরি হয়ে নিচে চলে যায় ।

/

অন্যদিকে রিতু তো মনে কোনোভাবেই শান্তি পাচ্ছে না। যাকে মনে মনে এতো ভালোবাসতো , সে এখন অন্যের স্বামী । অনুকে একদমই সহ্য করতে পারে না রিতু। অনুকে মারার জন্য রিতু যেন উঠে পড়ে লেগেছে । আয়ান নিচে যাওয়ার পরেই রিতু সিড়িতে সবার চোখের আড়ালে তেল ডেলে দেয়। তেল ডেলে দরজার আড়ালে লুকিয়ে পড়ে সে।

কিছুক্ষণ পর অনু ওয়াশরুম থেকে বের হয়। তারপর হালকা সাজ গোঁজ করে নিচে নামতে যায় । সিঁড়ি দিয়ে নামবে তখন দেখলো আয়ান উপরে আসছে। অনু সিড়িতে আরেক পা দিতেই,,, তেলে পা লেগে পিছলে যায় । পড়ে যেতে নিলেই আয়ান তাড়াতাড়ি অনুকে ধরে ফেলে। সাথে সাথে ডয়িং রুমে বসে থাকা সবাই অনুর কাছে চলে আসে। রিতুও আসে তাদের কাছে।আয়ান অনুকে এখনও জড়িয়ে ধরা রয়েছে । সবার চোখ যায় সিঁড়িতে ফেলা তেলের দিকে।

আয়ানের মা— সিড়িতে তেল এলো কোথা থেকে।(অবাক হয়ে)

এবার আয়ানের মায়ের কথায় আয়ানের চোখ যায় সিঁড়িতে ফেলা তেলের দিকে ।

আয়ান— সিড়িতে তেল কে ফেলেছে মা।( খুব জোরেই বললো কথাটা)

আয়ানের মা— আমি কি করে বলবো। আর এখানে তো কাউকে দেখলাম না তেল ফেলতে। আর কেউ তেল ফেলতেই বা যাবে কেন।

রিতু— আরে ফুফি হয়তো কেউ ভুলে ফেলেছে। খেয়াল করেনি। তাছাড়া কারো তো কিছু হয়নি।(শেষের কথা বললো অনুর দিকে তাকিয়ে)

আয়ান— হয়নি মানে । হলে কি খুশি হতে।

রিতু— আমি কি সেকথা বলেছি।

আয়ানের মা— আচ্ছা বাদ দাও।( তারপর আয়ানের মা কাজের লোককে বলে জায়গাটা পরিষ্কার করে নেন।)

আয়ান অনুকে নিয়ে রুমে যায় । তারপর বিছানায় বসিয়ে দিয়ে “” দেখেশুনে চলাফেরা করবে। “” বলেই অফিসের জন্য চলে যায় ।

কিছুক্ষণ পর অনুর বাবা মাও তাদের বাসায় চলে যান। অনুর মন খারাপ হয়ে যায় । এই দুদিন তার বাবা মা ছিল। কত আনন্দ হয়েছিল । আজকে যেনো পুরো বাড়িটাই খালি খালি লাগছে। অনু বেলকনিতে একা দাঁড়িয়ে আছে। আয়ানের কথা ভাবছে সে আর হাসছে।এই কিছু দিনেই আয়ানের প্রতি ভালোলাগা কাজ করছে অনুর। কিছুক্ষণ বেলকনিতে দাড়িয়ে থেকে অনু বিছানায় এসে শুয়ে পড়ে।

/

অনুর যখন ঘুম ভাঙলো তখন দেখতে পেলো চারিদিক অন্ধকার । ফোনে দেখলো রাত সাতটা বাজে। অনু গিয়ে রুমের লাইট অন করে ফ্রেশ হতে গেলো। অন্যদিকে আয়ান অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে দেখলো এক লোক রাস্তার ধারে বসে কিছু ফুল বিক্রি করছে। আয়ান ভাবলো অনুর জন্য ফুল নিয়ে গেলে কেমন হয় । যেই ভাবা সেই কাজ। আয়ান গাড়ি থামিয়ে কিছু কাঠগোলাপ ফুল নিলো। তারপর আবার বাসার উদ্দেশে রওনা দিলো।

/

অনু আয়নার সামনে বসে চুল ঠিক করছে। তখনই আয়ান রুমে ঢুকলো। হাতে একগুচ্ছ কাঠগোলাপ আর মুখে তো হাসি লেগেই আছে। মিষ্টি কণ্ঠে বললো,,,

আয়ান— অনু।

অনু তাকালো দরজার দিকে । দেখলো হাতে ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আয়ান। অনুর মুখেও হাসির ঝিলিক ফুটলো। অনু আয়ানের সামনে গিয়ে বললো,,,

অনু— ওয়াও কাঠগোলাপ। কার জন্য এনেছেন।

আয়ান— তোমার জন্য ।

অনু— thank you ( বলে ফুল হাতে নিয়ে টেবিলের উপর রাখলো ।)তারপর বললো।

অনু— আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি খাবার নিয়ে আসছি।

আয়ান— হুম।( তারপর ফ্রেশ হতে চলে গেলো আয়ান।)

অনু নিচে খাওয়া দাওয়া শেষ করে আয়ানের জন্য খাবার নিয়ে এলো। আয়ান খাবার খেয়ে নিলো। তারপর দুজনেই শুয়ে পড়লো। একজন বিছানায় আর একজন সুফায় । কারো চোখে ঘুম নেই। দুজনে দুজনকে নিয়ে ভাবছে। অনু মনে মনে বলছে,,,, উনার প্রতি যেন দিনদিন আসক্ত হয়ে যাচ্ছি। এক অদ্ভুত ফিলিংস কাজ করে। তাহলে আমি কি উনাকে ভালোবেসে ফেলেছি। অনু আর কিছু ভাবতে পারছে না। একসময় ঘুমিয়েই পড়েছে। অন্যদিকে আয়ান ভাবছে ,,, অনু এমনই একটা মেয়ে, তাকে যত দেখি ততোই মায়া লাগে। তাকে ছাড়া যেন আমি শূন্য । কিন্তু এ সম্পর্ক তো স্থায়ী না। ভাইয়া যদি কখনও আসে তাহলে অনু আমাকে ছেড়ে তো চলেই যাবে। আয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘুমানোর চেষ্টা করে।

/

একই সাথে বসবাস করছে দুজন। একই রুমে থাকছে। অথচ দুজন দুজনকে মনের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু কোনো এক জড়তার কারনে কেউ কাউকে মনের কথাটা বলতে পারছে না। দুজন দুজনের #মায়ার_জালে জড়িয়ে পড়েছে । এ যেন ভালোবাসায় এক অপূর্ণতার ছোঁয়া রয়েছে।

সকালবেলা আয়ানের আগেই অনুর ঘুম ভেঙে যায় । অনু দেখতে পায় আয়ান সুফায় গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে। অনু গোসল করতে চলে যায় । একঘন্টা পর ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে দেখে আয়ান এখনও ঘুমোচ্ছে । আয়ান সাধারণত খুব সকাল ঘুম থেকে ওঠে অফিস থাকার কারনে।কিন্তু আজ ওঠার নামই নেই। অনু গড়িতে দেখলো নয়টা বাজে। তাই সে তাড়াতাড়ি করে গেলো আয়ানকে ডাকতে। তখন ঘটলো এক বিপত্তি। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে অনু টেবিলের সাথে ধাক্কা খেয়ে আয়ানের উপরে গিয়ে পড়লো। এমন অদ্ভুত কান্ডে আয়ানের ঘুম ভেঙে যায় । তাড়াতাড়ি উঠতে গিয়েও পারলো না। কারন তার উপরে অনু পড়েছে। অনুকে দেখে আয়ান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় । এমন কিছুর জন্য সে তৈরি ছিলো না। দুজন দুজনের দিকে যেন ঘোরলাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নিরবতা কাজ করছে দুজনের মাঝে। আয়ান নিরবতা ভেঙে বললো,,,,

আয়ান— এভাবে কেউ ঘুম ভাঙায়।

অনু যেন লজ্জা পেয়ে গেলো। লজ্জা মিশ্রিত কণ্ঠে বললো,,,

অনু— অফিস যাবেন না।

আয়ান— আজ তো শুক্রবার । ছুটির দিন।

অনু— সরি আমার খেয়াল ছিলো না। আচ্ছা আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন।

আয়ান— আগে তুমি আমার উপর থেকে ওঠো।

অনু এবার লজ্জায় মরে যাবে এমন অবস্থা । অনু তাড়াতাড়ি করে উঠে বললো,,,

অনু— সরি আপনাকে ডাকতে গিয়ে টেবিলের সাথে ধাক্কা খেয়ে আপনার উপরে পড়ে গেছি।

আয়ান— ঠিক আছে।( তারপর আয়ান ওয়াশ রুমে চলে যায়। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দুজনে নিচে গিয়ে নাস্তা করে। তারপর দুজনে উপরে আসে। রুমে ঢুকে আয়ান অনুকে বললো,,,,

আয়ান— অনু ঘুরতে যাবে ।

অনু— কোথায় ।

আয়ান—- লং ড্রাইভে যাবে,,,,,,,,

চলবে,,,,,,”””””””

Happy Reading……….