#গল্প::#মায়ার_জালে
#writer_পাপন
#পর্ব::০৭
অনু বসে বসে নানা কথা ভাবতে থাকে। অনুর একা একা আর ভালো লাগছে না। তাই নিচে গেলো সে। নিচে গিয়ে দেখলো সবাই ড্রয়িং রুমে বসে টিবি দেখছে। শুধু আয়ানের মা নেই এখানে।
অনু— রিতু আন্টি কোথায়?(সুফায় বসতে বসতে কথাটা বললো অনু।)
রিতু— ফুফি তো আকাশ ভাইয়ার রুমে গেছেন।
আকাশ নাম শুনতেই অনুর মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায় । এই আকাশের জন্য অনু কতো পাগল ছিলো। আকাশ ছাড়া কিছুই বুঝতো না। হয়তো বিধাতা তাদের জুড়ি লিখে দেন নি। যাকে দেবর মানার কথা সেই স্বামী হয়ে গেলো ।
/
আকাশের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে নিঃশ্বব্দে কাঁদছেন আয়ান আর আকাশের মা। যতোই হোক মায়ের মন। ছেলেকে হারানোর কষ্ট একমাত্র মায়েরাই জানে কতটুকু । আকাশের গায়েব হওয়ার কারন সবারই অজানা । হুট করে কি থেকে কি হয়ে গেলো। আয়ানের মা মনে মনে বলছেন,,,,,,,,,
আয়ানের মা— জানি না তুই কোথায় আছিস কেমন আছিস। বিয়ের দিন কতো হাসিখুশি ছিলি তুই। কিন্তু হঠাৎ করে তর হারিয়ে যাওয়া আমি মেনে নিতে পারছি না বাবা। তুই আমার বুকে ফিরে আয় বাবা।
কথাগুলো বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। কতো সুন্দর ছিল তাদের পরিবার । দুই ছেলেকে নিয়ে কতো হেপি ছিলো তারা। কিন্তু হঠাৎ করে একটা ছেলেকে হারিয়ে ফেলা এ যেনো মৃত্যুযন্ত্রণা থেকে কম নয়। আকাশের ছবির নিচে বসেই কাঁদছেন তিনি।
অনু এখনো নিশ্চুপ । মনকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছে না সে। এদিকে রিতু তো পটর পটর করেই চলেছে। একটা কথা অনুর কানে ঢুকছে না। কিছুক্ষণ পর আয়ানের মা আকাশের রুম থেকে বের হয়ে বললেন,,,,,
আয়ানের মা— শুনো সবাই । একটা গুড নিউজ আছে।
রিতু— কি গুড নিউজ ফুফি।( উত্তেজিত হয়ে)
আয়ানের মা— আগামীকাল থেকে ডেকোরেশনের লোক আসবে বাড়ি সাজাতে।
অনু— বাড়ি সাজাবে কেন?
আয়ানের মা— কারন দুদিন পর আয়ানের জন্মদিন। আর আয়ানের জন্মদিন ধুমধাম করেই পালন করবো।
মুহূর্তের মধ্যে অনুর মুখের ফ্যাকাশে আভা সরে হাসির ঝলক দেখা দিলো। অনু তাড়াতাড়ি করে উপরে চলে গেলো। অনু একবার বেলকনিতে যাচ্ছে আর একবার বিছানায় যাচ্ছে। মনে মনে অনেক কিছু ভাবছে সে। আর বলছে,,,,,,,
অনু— মি: আয়ান। আপনার জন্মদিনেই আমি আপনাকে প্রপোজ করবো। আপনার প্রতি আমি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছি। আপনার কেয়ারিং , আপনার সাথে ওয়াশ রুমে যাওয়া নিয়ে ঝগড়া , নিজের অজান্তেই আমাকে কিস করা সবকিছু আমাকে পাগল করে দিয়েছে। (মনে মনে বলছে কথাগুলো)
মুখে হাসি তো লেগেই আছে । সময় যেন কাটছেই না। কখন আয়ান অফিস থেকে আসবে। ভাবতে ভাবতে অনু ঘুমিয়ে যায় ।
/
অন্যদিকে রিতু করছে বিভিন্ন পরিকল্পনা। আয়ানের জন্মদিনে আয়ানকে কি গিফ্ট করবে। আর মনে মনে বলছে,,,,,
রিতু— অনু থেকে ভালো কিছু দিতে হবে আমার । আর এই অনুকে তো আমি আয়ানের থেকে সরিয়েই ছাড়বো। আয়ানের পাশে একদম সহ্য করতে পারি না কাউকে। আর অনু সেখানে স্ত্রীর ভাগ বসিয়ে দিলো। ওকে তো আমি সরাবই সরাবো ।
অনুর ঘুম ভাঙতেই মোবাইলে দেখলো সাতটা বাজে। অনু তাড়াতাড়ি করে ওঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলো। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে দেখলো আয়ান আসছে। অনুর মুখখানা হাসিতে ভরে গেলো। কিন্তু এই হাসিটা মুহুর্তেই চলে গেলো আয়ানের ডান হাতের দিকে তাকিয়ে । কারন আয়ানের ডান হাতে ব্যান্ডেজ করা। আয়ানের মা,অনু আর রিতু সাথে সাথে গেলেন আয়ানের কাছে,,,,
আয়ানের মা— হাতে কি হয়েছে বাবা(চিন্তিত সুরে)
রিতু— আয়ান তোমার হাতে ব্যান্ডেজ কেন?
অনুর মুখ দিয়ে যেনো কিছুই বের হচ্ছে না। কান্না করে দিবে এমন অবস্থা ।
আয়ান— আরে না কিছু হয়নি। অফিসের বাথরুমে ঢুকতে গিয়ে পা পিছলে হাতটা একটু কেটে গেছে।
আয়ানের মা— সাবধানে চলবি তো বাবা। ঔষধ লাগিয়েছিস ।
আয়ান— হ্যাঁ ।
তারপর আয়ান উপরে চলে যায় । অনুও পেছন পেছন যায় রুমে । অনু আয়ানের টাই , কোট খোলে দেয়।আয়ান ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশ রুমের দিকে যায় ।
অনু— একা একা ফ্রেশ হতে পারবেন।
আয়ান— কেন তুমি ফ্রেশ করিয়ে দিবে নাকি( চোখ টিপ মেরে)
অনু লজ্জা পেয়ে যায় । আমতা আমতা করে বলে,,,
অনু— আমি just বললাম । পারবেন কি না।
আয়ান— হুম পারবো।(হেসে)
তারপর আয়ান ওয়াশ রুমে চলে যায় । অনু নিচে যায় আয়ানের জন্য খাবার আনতে। আয়ান কোনমতে ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসে। অনুও খাওয়া দাওয়া শেষ করে আয়ানের জন্য খাবার নিয়ে রুমে আসে। তারপর বলে,,,,
অনু— খেয়ে নিন।
আয়ান— কি করে খাবো। (আয়ান টেবিলে বসতে বসতে হাত দেখিয়ে বললো কথাটা)
অনু আর কিছুই বললো না। আয়ানকে খাওয়াতে শুরু করলো। আয়ান ও খাচ্ছে আর মাঝে মাঝে অনুর হাতে কামড় দিচ্ছে । অনু তো লজ্জায় শেষ । অনু আমতা আমতা করে বললো,,,,
অনু— আপনি আমার হাতে কামড় দিচ্ছেন কেন।
আয়ান— কই আমি তো কামড় দেই নি।( হেসে বললো)
অনু— খাওয়াটাও ভালো করে শিখলেন না।
আয়ান— আমি এভাবেই খাই। হাতে কামড় না দিলে আমার পেটই ভরে না।
এভাবে খুনশুটিতেই আয়ানের খাওয়া শেষ হলো।তারপর আয়ান সুফায় ঘুমিয়ে পড়লো। অনু খাবারের প্লেট নিচে রেখে এসে দেখলো আয়ান সুফায় ঘুমোচ্ছে । অনু একবার ভাবলো আয়ানকে বিছানায় ঘুমোতে বলবে, কিন্তু কি একটা ভেবে আর বললো না। অনু গিয়ে বিছানায় ঘুমিয়ে পড়ে ।
সকালবেলা ঘুম ভাঙে অনুর । ঘুম ভাঙতেই বাইরে হৈচৈ শুনতে পায়।অনু ওয়াশ রুমে যায় ফ্রেশ হতে। অনু ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে আয়ান ঘুম থেকে উঠে গেছে। অনু সবকিছু ঠিক করে নিচে যায় । নিচে গিয়ে দেখতে পায় ডেকোরেশনের লোক এসেছে। আয়ানও ফ্রেশ হয়ে নিচে নামে । ডেকোরেশনের লোকদের বাড়ি সাজাতে দেখে আয়ান তার মাকে বলে,,,,,,
আয়ান—- মা বাড়ি সাজানো হচ্ছে কেন।
আয়ানের মা— কাল তর জন্মদিন বাবা।
আয়ান— ও মা আমি তো ভুলেই গিয়ে ছিলাম ।
আয়ানের মা— আমি কি ভুলতে পারি বাবা।
আয়ান তার মাকে জড়িয়ে ধরে।তারপর বলে,,,,,,
আয়ান—- আচ্ছা মা আমি অফিস যাচ্ছি ।
আয়ানের মা— আচ্ছা সাবধানে যাস।
তারপর আয়ান অফিসে চলে যায় । অনু তো অনেক খুশি ,,,,,,,,,,,,,,
চলবে,,,,,