মায়ার জালে পর্ব-০৮

0
311

#গল্প::#মায়ার_জালে
#writer_পাপন
#পর্ব::০৮

আয়ান অফিসে চলে যায় । অনু তো ভীষণ খুশি। কালই তার ভালোবাসার মানুষ, নিজের স্বামীকে সে প্রপোজ করবে। ভাবতেই যেন অনু লজ্জায় কুটিকুটি হচ্ছে। বাড়ির সবাই যেন ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। ডেকোরেশনের লোকদের কাজের তদারকি করছে সবাই। অনুও সাথে আছে তদারকি করতে। অনুর মনের মতোই সাজানো হচ্ছে বাড়িটি। অনু কিছুক্ষণ বাড়িটা হেঁটে হেঁটে দেখে। কত সুন্দর করে সাজানো হচ্ছে। কিছুক্ষণ চারপাশটা ঘুরে দেখে শাওয়ার নিতে চলে যায় অনু।

/

শাওয়ার নিয়ে অনু কিছুক্ষণ বেলকনিতে দাড়িয়ে থেকে বিছানায় এসে ঘুমিয়ে পড়ে। অন্যদিকে রিতু তো মনে মনে কতো প্লান করছে। কিভাবে আয়ানকে কনভেনস্ করবে।অনু যেন তার পথের এক বিশাল কাঁটা। রিতু মনে মনে ভাবছে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

রিতু— যেভাবেই হোক অনু তোমাকে তো আমি আয়ানের থেকে সরিয়ে দিবো। আয়ান শুধুই আমার। তুমি হুট করে কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসলে অনু। যেভাবে উড়ে এসেছো সেভাবেই উড়িয়ে দিবো তোমাকে।( কথাগুলো বলছে আর হাসছে রিতু)।

অনু ঘুম থেকে উটে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলো। গিয়ে দেখলো সবাই ডয়িং রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে। অনুও সবার সাথে যোগ দিলো। ডেকোরেশনের লোকগুলো বাড়িটা পুরোপুরি সাজিয়ে ফেলেছে। রাত সাতটা হয়ে গেছে। হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজ আসলো।রিতু বললো,,,,,,,,,

রিতু— আমি দেখছি।( বলে দরজা খুললো)

দেখলো আয়ান দাড়িয়ে আছে। অনেক ক্লান্ত দেখাচ্ছে আয়ানকে।

রিতু— আয়ান তোমাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে কেন?( এমন ভাবে বলছে যেন দুজন স্বামী স্ত্রী)

আয়ান কিছু না বলে উপরে চলে গেলো। অনু আয়ানকে দেখতে পেয়ে আয়ানের পিছু পিছু সেও গেলো। রুমে ঢুকে অনু বললো ,,,,,,,,

অনু— ক্লান্ত দেখাচ্ছে কেন আপনাকে।

আয়ান— না এমনিতেই। আজকে অফিসে কাজের চাপ একটু বেশি ছিলো তাই।

অনু— ওওও। আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন। আমি খাবার দিচ্ছি ।

তারপর আয়ান ফ্রেশ হতে যায় ।আর অনু নিচে যায় আয়ানের জন্য খাবার নিয়ে আসতে। আয়ান ফ্রেশ হয়ে এসে খেতে বসেছে। হাতের কাটা টা সেরে গেছে তাই নিজের হাতেই খাচ্ছে সে। অনু পাশে বসে আছে। খাওয়া দাওয়া শেষে আয়ান সুফায় ঘুমিয়ে পড়ে। অনু খাবারের প্লেট নিচে দিয়ে এসে দেখে আয়ান সুফায় ঘুমোচ্ছে । অনু আয়ানকে কিছু একটা বলবে ভাবছে কিন্তু বলতে পারছে না। একসময় সাত-পাঁচ না ভেবে অনু বলেই দিলো,,,,,,

অনু— আপনি চাইলে বিছানায় ঘুমোতে পারেন।

আয়ান যেন এইটাই চাইছিল। অনুর বলতে সময় লেগেছে কিন্তু আয়ানের বিছানায় আসতে সময় লাগে নি। আয়ানের এভাবে তাড়াহুড়ো করে চলে আসা দেখে অনু চমকে যায় । অনু ভেবেছিল আয়ান হয়তো বলবে যে,, না থাক আমি সুফায় টিক আছি। কিন্তু ঘটলো তার উল্টো।কিন্তু মনে মনে ভীষণ খুশি হয়েছে । আয়ান বিছানায় উঠে একপাশে গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে পড়ে । অনুও ঘুমিয়ে পড়ে ।

/

সকালে পাখির মিষ্টি ডাকে ঘুম ভাঙলো অনুর। ঘুম ভাঙতে দেখলো আয়ান গুটিশুটি মেরে এখনও ঘুমিয়ে আছে। অনু কি একটা ভেবে মুচকি হেসে আয়ানের কাছে গেলো। আয়ানের কপালে আলতো ভাবে ঠোঁট স্পর্শ করলো। তারপর আয়ানের এক হাত তার কোমরে নিয়ে রাখলো।কোমরে হাত রেখে অনু শিউরে উঠলো। এ যেন এক অজানা অনুভূতি। তারপর অনু আয়ানের বুকে মাথা রেখে আবার ঘুমিয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পর আয়ানের ঘুম ভেঙে যায় । সে দেখে অনু তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। আয়ান খেয়াল করলো তার এক হাত অনুর কোমর জড়িয়ে রেখেছে। আয়ান হালকা হেসে আস্তে আস্তে করে অনুকে ছাড়িয়ে ওয়াশ রুমে যায় ফ্রেশ হতে। আয়ান ফ্রেশ হয়ে দেখে অনু উঠে গেছে। আয়ানকে বাহির হতে দেখে অনু যায় ফ্রেশ হতে। আর আয়ান লেপটপ নিয়ে বিছানায় বসে পড়ে। রাতে আয়ানের জন্মদিনের পার্টি হবে তাই আয়ান অফিস থেকে ছুটি নেয় । অনু ফ্রেশ হয়ে দেখে আয়ান বিছানায় বসে লেপটপে কি যেনো করছে। অনু আয়নার সামনে বসে সাজগোজ করছে।

/

সন্ধ্যায় বাড়িতে যেন হৈচৈ লেগে গেছে। সব গেস্ট এসে গেছেন। আয়ানের অফিসের কলিগরাও এসেছেন। আয়ান দাওয়াত দিয়েছিল। অনুর বাবা- মা আসতে পারেন নি। কিছুক্ষণ পর অনু আর আয়ান নিচে নামলো । দুজনেই ম্যাচিং করে ড্রেস পড়েছে । রিতু অনুকে দেখছে আর জ্বলছে। অনেক সুন্দর ভাবেই পার্টিটা সুসম্পূর্ণ হলো। আয়ানের মা যারা আয়ানের বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন না তাদের সাথে আয়ানের আর অনুর পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর সব গেস্ট চলে যায় । অনু একা দাঁড়িয়ে আছে। তখনই অনুকে পিছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরলো। অনুর বুঝতে বাকি নেই এটা আয়ান । তাই অনু বললো,,,,,,,

অনু—- আমি যানি এটা আপনি। এতোদিন থেকে আমি আপনার অপেক্ষায় ছিলাম যে আপনি এসে আমাকে ভালোবাসার কথা বলুন । কিন্তু আজ আমিই বলছি আমি আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি। আপনি ছাড়া যেন আমি কিছুই কল্পনা করতে পারি না। I love you very much…আমি আপনার সাথে সারাটা জীবন কাটাতে চাই।

কথাগুলো বলে অনু হাত ছাড়িয়ে পিছনে ঘুরলো। ঘুরে যা দেখলো তার জন্য অনু মোটেই প্রস্তুত ছিল না। এতক্ষণ যাকে আয়ান ভেবে কথাগুলো বলছিলো সে আয়ান নয়। সে হলো আকাশ। আকাশকে দেখা মাএই অনু ফ্রিজ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যেন কিছু বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।আকাশকে দেখে বাড়ির সবাই এক প্রকার শকের মধ্যে আছে। অনুর এই কথাগুলো বাড়ির সবাই শুনেছে। আকাশ অনুকে জড়িয়ে ধরে বললো,,,,,

আকাশ—- আমি জানতাম তুমি আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না। দেখো আমি চলে এসেছি।

অনু আয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখলো আয়ানের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে আছে। কিছুক্ষণ আগেও কতো আনন্দ করছিল সে। আয়ানের মা খুশি হবেন না দুঃখি হবেন বুঝতে পারছেন না। আকাশ বাড়ি এসেছে দেখে খুশি হবেন নাকি আয়ানের সংসার ভেঙে যেতে পারে দেখে দুঃখি হবেন। এদিকে রিতু তো মহা খুশি।

রিতু— বাহ্ মেঘ না চাইতে বৃষ্টি । এখন তো আমার কিছুই করতে হবে না। যা করার আকাশ ভাইয়া করবে। আমার পথের কাঁটা এমনিতেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।

আয়ান নিজেকে সামলাতে না পেরে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। আয়ানের মা আকাশকে বললেন,,,,

আয়ানের মা—- আকাশ তুমি এতো দিন কোথায় ছিলে।

আকাশ— মম পরে বলছি এসব কথা । আগে ফ্রেশ হয়ে নিই। ( আকাশ তার রুমে চলে যায়)

অনু ধপাস করে সুফায় বসে পড়ে। কি করবে সে বুঝতে পারছে না। একদিকে তার প্রথম ভালোবাসা অন্যদিকে তার স্বামী । অনুর পাশে বসে আছেন আয়ানের মা।

এদিকে আয়ান ফুল স্পিডে ড্রাইভ করছে আর ভাবছে। অনু কি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। কিন্তু আমি তো অনুকে ভুলতে পারবো না। কিন্তু আমিই তো বলেছি ভাইয়া ফিরলে আমি নিজে ওকে ভাইয়ার হাতে তুলে দিবো।আয়ান কিছু ভাবতে পারছে না। হঠাৎ আয়ান দেখতে পায় একটা গাড়ি আসছে তার সামনে। আয়ান কন্ট্রোল করতে না পেরে গাড়িটার সাথে ধাক্কা লেগে accident করে।

(আয়ানকে মেরে ফেলি আর আকাশের সাথে অনুর মিল করিয়ে দেই। কি বলেন আপনারা।)

কিছুক্ষণ পর একটা নাম্বার থেকে ফোন আসে আয়ানের মায়ের ফোনে। অপাশ থেকে একটা লোক বললো,,,

লোকটি—- আপনি কি আয়ান সাহেবের মা।

আয়ানের মা— হুম কেন?

লোকটি— উনি accident করেছেন। হাসপাতালের ঠিকানা হলো————-?

আয়ানের মার হাত থেকে ফোন পড়ে যায় । উনি যেন স্তব্ধ হয়ে গেছেন। অনু বললো,,,,,

অনু— কি হয়েছে ।

আয়ানের মা— আয়ান accident করেছে।( যেন বলতে পারছেন না)

কথাটা শুনা মাএ অনু অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়,,,,,,,,,,

চলবে,,,,,,,,