মেঘের খামে উড়োচিঠি পর্ব-০৫

0
57

#মেঘের_খামে_উড়োচিঠি
লেখনীতে : তামান্না বিনতে সোবহান
পর্ব – পাঁচ

কার্টেসিসহ কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ!

কখনও ভালোবাসা নামক বিশুদ্ধ ও সুন্দর অনুভূতির সাথে সাক্ষাৎ ঘটেনি ফারশাদের। এই অনুভূতিটা কেমন, কীভাবে হয়, এসব সম্পর্কেও ধারণা নেই। তবে নিজের মন কী চায়, কেমন মেয়ে জীবনসঙ্গিনী হিসেবে সে কামনা করে, এটা খুব ভালোমতোই জানে, বুঝে। তার মা, মুনমুন হক্ব বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়ায় কোনোকালেই তিনি সাধারণ মানুষকে মানুষ হিসেবে মনে করেননি। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত প্রতিবেশীকে তিনি সবসময় তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও ছোটো করে এসেছেন। সুযোগে যে কাউকে অপমান ও কটু কথা শোনাতে ভুলে যাননি। এই কারণে ফারিশার সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি তিনি। ফয়জান মুনতাসীর মানুষকে সবসময় সম্মান দেখিয়ে চললেও নিজের সন্তানদের জীবনসঙ্গী খুঁজতে সবসময় উঁচুনিচু ভেদাভেদ মেনে চলেছেন। যার কারণে, ফারিশার প্রেমিক তাহমীদকে মেয়ের জীবনসঙ্গী হিসেবে মেনে নিতে খুবই কুণ্ঠাবোধ করেছেন তিনি। মেয়ের সামান্য এই ভুলের কারণে মেয়ের সাথে যে অবিচার এই শিক্ষিত বাবা-মা করেছেন, সেটা আজও মেনে নিতে পারছে না ফারশাদ। বাবা-মায়ের এই নাকউঁচু স্বভাবের কারণে সুখ-দুঃখের একমাত্র সঙ্গীকে হারিয়ে প্রায় দিশেহারা সে। এরূপ অবস্থায় প্রেম-ভালোবাসা, বিয়ে এসব নিয়ে ভাবার জন্য যথেষ্ট সময় সে পায়নি। খুব করে নিজের ক্যারিয়ার ও স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে সময় ব্যয় করেছে। ফলস্বরূপ দীর্ঘসময়ের দৌড়ঝাঁপ শেষে সে একজন স্বনামধন্য খেলোয়াড় হিসেবে দেশের মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করেছে।

সময় ও ক্যারিয়ার তাকে উঁচু আসনে বসালেও নিজের এই অর্জন নিয়ে কখনও, কোনোদিন গলাবাজি কিংবা বাহাদুরি সে করেনি। ডানে-বামে উঁচু বংশ ও বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত অসংখ্য নারী দেখেও মন এদিক-ওদিক হয়নি। নিজের মন ও অনুভূতিকে খুব যত্ন করে একটা সীমা-পরিসীমার মধ্যে আটকে রেখেছিল এতদিন। কখনও কোনো বাহানায়ও মনের বেহাল দশা টের পায়নি। এতদিন ধরে যত্নে আগলে রাখা মনটার হঠাৎ পরিবর্তন হলো গতকাল সন্ধ্যায় এখানে এসে পা রাখার পর। সাদামাটা সাজপোশাকের এই উজমাকে দেখে তার মন বুঝতে পেরেছিল, কেন ফারিশা চাকচিক্যময় সোনার হরিণ চায়নি। কেন সে একটা সাধারণ মানুষকে ভালোবাসতে গিয়ে আজ বাবা-মায়ের কোল ছাড়া!

ভালোবাসা এমনই একটা অনুভূতি, যে-ই অনুভূতি ধনী-গরিব বিচার করে কাউকে সেই অনুভূতির পিছনে দৌড়ায় না। এই সুন্দর ও পবিত্র অনুভূতি রূপ-লাবণ্য খুঁজে না, ধন-দৌলত খুঁজে না, খুঁজে শুধু প্রকৃত একটা মন। শেষ বিকেলের ওই মায়াময় দৃশ্য আমৃত্যু বুকের ভেতর লালন করে রাখবে সে। এমন মায়াময় একটা দৃশ্যের সাক্ষী হওয়ার পর থেকে একটু একটু নিজের মনের পরিবর্তন টের পাচ্ছিল ফারশাদ। উজমার হাসি যেন টলটলে পুকুরের মাঝখানে মৃদু বাতাসে দোল খাওয়া কোনো এক নির্মল পদ্মফুল। রিনিঝিনি শব্দ ও চেহারার ভঙ্গিমায় প্রকাশ পাচ্ছিল শিল্পীর হাতে আঁকা নিখুঁত কোনো ক্যানভাস। যে ক্যানভাসে কোনো ত্রুটি ধরা পড়ে না। তার নিটোল সুন্দর চেহারার ভাঁজে ভাঁজে কখনও হাসি, কখনও কান্না, কখনও রাগ-অভিমান কখনওবা দুঃখমিশ্রত মনমরা সুর, সবকিছুতেই যেন দিক হারানোর একটা সুক্ষ্ম টান ও মায়া লুকানো ছিল। যে মায়া সহজে সবার চোখে পড়ে না। আবার যে একবার মনের চোখ দিয়ে ওই মায়াময় চেহারার আড়ালে লুকিয়ে থাকা সমস্ত হাসি-কান্নাকে উপলব্ধি করতে পারে, সে-ই বুঝতে পারে এই নারীকে ভালোবাসা কতখানি সৌভাগ্যের। এই চেহারার মায়ায় মন ডুবিয়ে ফেললে, মুখ ফিরিয়ে নেয়া দায়। ফারশাদের অবস্থাও হয়েছে সেরকম। সাধারণ চেহারার আড়ালে লুকিয়ে থাকা এই মায়াবী নারীর মন বুঝতে গিয়ে সে একেবারে অথৈজলে হাবুডুবু খেতে শুরু করেছে। যার কারণে উজমার বিয়ে ঠিক হওয়া ও বিয়ে ভাঙা খুব দ্রুত প্রভাব ফেলেছে মনে। মুখফুটে সরাসরি বলা যাচ্ছে না আবার চেপে রাখাও যাচ্ছে না।

বাবা-মাকে খুব ভালোভাবে চিনে ফারশাদ। এইমুহূর্তে নিজের মনের কথা ও উজমার ব্যাপারটা জানানো উচিত হবে না। এতে মুনমুন হক্ব লোকেশন পেয়ে যাওয়ার পাশাপাশি উসাইদের ওপর চোটপাট করতে পারেন। তবে সময় সুযোগে নিজের বাবাকে কাজে লাগানো যায় কি-না এটাই এখন ভাবছে ফারশাদ। অনেকক্ষণ ধরে রুমে বসে নিজের মনকে বোঝানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে যেন উজমার প্রতি এই অনুভূতিটা শুধু সাময়িক আকর্ষণ ভেবে দূরে ঠেলে দেয়া যায়, কিন্তু সম্ভব হচ্ছে না। যতবার সবকিছুকে স্বাভাবিক, সাময়িক মোহ ভাবতে চাইছে ততবারই মনে হচ্ছে, মনের সাথে বেইমানী হচ্ছে। এই বেইমানীটা হতে দেয়া যাবে না। অস্থির মন নিয়েই রুমের ভেতর পায়চারী করছিল ফারশাদ। হঠাৎই উজমার গলার আওয়াজ শুনল,

-‘ভাইয়া, আমি যাচ্ছি। তুমি ভাবীকে নিয়ে বিকেলে চলে এসো ডাক্তারের চেম্বারে। সবকিছু ঠিকঠাক কি-না জেনে নিবে।’

উজমা কথা শেষ করতে পারল না, প্রায় ঝড়ের বেগে সেখানে ছুটে এলো ফারশাদ। বলল,
-‘ফাস্টএইড বক্স হবে?’

দুইবোন একসাথেই বের হচ্ছিল। আচানক ফাস্টএইড বক্সের কথা শোনে ঊষা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। উজমা জানতে চাইল,

-‘ব্যথা সারেনি?’

-‘একটুও না। ব্যথা বেড়ে গেছে। মনে হচ্ছে এই হাতটা কেটে ফেলতে হবে। এত ব্যথা…। সহ্য হচ্ছে না।’

এই করুণ স্বর ও চাহনিতে কী মেশানো ছিল কে জানে! ভয়ে কেঁপে উঠল উজমা। আতঙ্কিত কণ্ঠে বলল,
-‘কী বলছেন! এইটুকু ব্যথা থেকে হাত কাটতে হবে কেন? দেখি তো।’

-‘হুম, দেখুন। যত খুশি দেখুন। আমার কোনো তাড়া নেই।’

-‘কিন্তু, আমার যথেষ্ট তাড়া আছে।’

ফারশাদ কিছু বলল না, শুধু মনমরা ভাব বজায় রেখে সোফায় গিয়ে বসল। উজমা ফাস্টএইড বক্স সাথে এনে খানিকটা দূরত্ব মেপে বসল। হাতে প্যাঁচানো আগের গজ খুলে নিল যত্ন করে। ব্যথায় সামান্য গুঙিয়ে উঠল ফারশাদ। উজমা তাকাল। চোখ নাচাল। ফারশাদ বলল,

-‘ব্যথা তো।’

কোনো আওয়াজ করল না উজমা। গজ সরিয়ে হাতে স্যাভলন ক্রিম লাগিয়ে বলল,
-‘সেরে যাবে।’

-‘চিকিৎসা শেষ?’

-‘হ্যাঁ, সামান্যই তো।’

-‘সামান্য হলে কী হবে? ব্যথা যে অনেক।’

-‘আপনি অভিজ্ঞ মানুষ। এসব ব্যথা কতদিনে সারে জানা আছে নিশ্চয়ই। ধৈর্য্য ধরুন।’

উসাইদ বন্ধুর হাতের এই অবস্থা দেখে অবাকই হলো। জানতে চাইল,
-‘হাতে ব্যথা পেলি কী করে?’

ফারশাদের মাথাভরা দুষ্টুমি। এতক্ষণ উজমাকে একটু-আধটু জ্বালিয়ে নিজের মনকে সামলানোর চেষ্টা করছিল। কতক্ষণ এই মায়াবী মুখ দেখা হবে না তার, কে জানে! না দেখে থাকা যে কী কষ্ট, সেটা তো সে-ই বুঝতে পারছে। এই কন্যা সে খবর জানলে, তবে তো বুঝবে। বন্ধুর কথা শোনে আরেকদফা দুষ্টুমি চাপলো মাথায়। হাসি হাসি মুখ নিয়ে বলল,

-‘আর বলিস না। রাতে ছাদে হাওয়া খেতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে তো আমার মুখটা হা হয়ে গেল।’

-‘কেন?’

-‘বিশাল সাইজের একটা চোর এসেছিল। মনে হয় সোনাদানা চুরি করতে এসেছিল। আমার হাতের জোর তো জানিস। ছয়-চার পিটাতে ওস্তাদ। দিলাম হাত দিয়ে উরাধুরা কিল-ঘুষি। চোর দৌড়ে পালাল। এই কিল-ঘুষি দিতে গিয়েই না, ওইযে ছাদের একপাশে কনক্রিট রাখা ছিল, ওগুলোর ওপর পড়ে গেলাম। ব্যস, তাতেই হাত গেল কেটে।’

বন্ধুর কথা শোনে উচ্চস্বরে হেসে ফেলল উসাইদ। সে জানে, ফারশাদ বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলাতে ওস্তাদ। ক্লাসে, খেলাধুলাতে কত গল্প যে বানিয়ে বলেছে তার কোনো হিসেব নেই। সব তো বেহিসাবী গল্প। সে হাসতে হাসতে বলল,

-‘হয়েছে থাম। আর কাহিনী বানাতে হবে না। নিশ্চয়ই বেখেয়ালিতে পড়ে ব্যথা পেয়েছিস।’

-‘বিশ্বাস করলি না?’

-‘চোর ছাদে উঠবে কী করে? সিঁড়ি তো ঘরের ভেতরের দিকে। বাইরের দিকে তো আলাদা সিঁড়ি নেই।’

-‘পাইপ, পাইপ বেয়ে উঠেছে।’

-‘হ্যাঁ, উঠেছে আর তোর সাথে কুস্তি খেলেছে। তোর এই মিথ্যে গল্প অন্য কেউ বিশ্বাস করলেও আমি জীবনে বিশ্বাস করব না।’

এই কথা শোনে ফারশাদও হেসে উঠল। একটা সময় ক্লাসের সবাইকে কী বোকাটাই না বানাত সে। সবাই ফারশাদের ইমোশনাল গল্প শোনে কেঁদেকেটে অস্থির হয়ে যেত আর উসাইদ দমফাটা হাসি দিত। সে-ও পুরনো কথা মনে করে বলল,

-‘তোর মনে আছে, কতদিন ক্রিকেট খেলার জন্য ক্লাস ফাঁকি দিয়েছি, পরদিন স্কুলে গিয়ে স্যারের পানিশমেন্টের ভয়ে মিথ্যে গল্প সাজিয়েছি?’

-‘হ্যাঁ, মনে হচ্ছে। তোর সব গল্প আমি বিশ্বাস না করলেও মুনাইম স্যার কিন্তু খুব বিশ্বাস করতেন। এজন্য তোকে বকা দেয়ার বদলে উলটে চকলেট কেনার টাকা দিতেন।’

দুই বন্ধু শৈশব ও কৈশোরের কথা মনে করে একাধারে হেসেই গেল। এদিকে উজমা ফুলেফেঁপে ব্যোম হয়ে উঠল। ফারশাদ সেই দৃষ্টির দিকে একবার তাকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে চোখ সরিয়ে নিল। উজমা দাঁত কটমট করে তাকিয়ে শুধু বিড়বিড়াল,

-‘আমাকে চোর বলা না? বোঝাব। সময় আমারও আসবে।’

দেরী হওয়ার অজুহাতে উঠে দাঁড়াল উজমা। বোনকে নিয়ে চলে গেল ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। ঊষাকে ভার্সিটি নামিয়ে দিয়ে সে চলে যাবে বন্ধুদের সাথে দেখা করতে। এরপর যাবে কোর্টে।

***

বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে প্রথমে এতিমখানায় এলো উজমা। মাঝখানে দীর্ঘদিন এটা-সেটা কাজে ব্যস্ত থাকায় এখানে আসা হয়নি তার। তবে অনিক, কাইফ ও তাক্বদীম এই তিনজনের মধ্যে যে যখন সময় পেয়েছে, এখানে এসে বাচ্চাদের সাথে সময় কাটিয়ে গেছে। মূলত বিয়েশাদীর আলাপ আসার কারণে ব্যস্ততা বেশি ছিল উজমার। এজন্য দূরে দূরে থাকলেও বন্ধুদের যথাসম্ভব সাহায্য-সহযোগিতা করে পাশে থেকেছে। এই এতিমখানার দায়িত্বে যে কয়েকজন মানুষ আছে, প্রত্যেকের বেতন ও বাচ্চাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব তিন বন্ধুর হাতে হওয়াতে এখানকার বাচ্চারা যেকোনো সময় যেকোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে তুলনামূলক বেশি। এটা সরকারি আওতাভুক্ত না হওয়াতে এখানকার সব খরচ এতিমখানার মালিককেই বহন করতে হচ্ছে। এই ছোটো ছোটো বাচ্চাদের মায়াভরা নিষ্পাপ হাসিতে এই প্রাঙ্গণ মেতে থাকে সারাক্ষণ। যখনই বাচ্চাদের নিয়ে বড়োসড়ো কোনো প্রোগ্রাম করতে চায়, তখনই সবাই দলবেঁধে এখানে চলে আসে। আজও এসেছে। এতিমখানার হয়ে একটা দোয়া মাহফিলের আয়োজন করবে বলেই এখানে আসা। সিনিয়র যারা যারা আছেন, সবার সাথে আলাপ-আলোচনা করে বাকি সিদ্ধান্ত নিবে বলেই তিন বন্ধু বৈঠক ডেকেছে। পুরুষদের এই আলোচনায় মেয়েরা কেউ শরীক হয়নি, তাই তিন বান্ধবী ও মোম মিলে বাচ্চাদের সাথে ছোটাছুটি করছিল। প্রত্যেকেই যথেষ্ট আমোদে থাকলেও উজমা আজ এই মুহূর্তটা ঠিক উপভোগ করতে পারছে না। এজন্য আনমনা হয়ে হাঁটছিল। তার ভেতরে ভয় দানা বেঁধেছে। যদিও সাহস নিয়ে গতকাল রাতে অ্যাডভোকেটকে একগাদা কথা শুনিয়ে দিয়েছিল, এই কারণে তার সাথে সরাসরি আলোচনায় নামতে একটু ভয় হচ্ছে এখন। একটা মানুষের মুখোমুখি হওয়া, তার সাথে বিয়ে ভাঙার ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করা, এসব খুব বিব্রতকর একটা কাজ। কিন্তু কিছু করার নেই। যদি পিছনের ব্যক্তিটা কে জানতে চায়, তবে ওই অ্যাডভোকেটের মুখোমুখি তাকে হতেই হবে।

মনের সমস্ত ভয়কে দূরে সরিয়ে সবার খুশিতে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করল উজমা। মাইসারা ও রাইদাহ দু’জনেই সবকিছু খেয়াল করছিল। উজমার এই নীরব, শান্ত ও চিন্তিত মুখ দেখে মাইসারা বলল,

-‘তুই কি ওই অ্যাডভোকেটের প্রেমে পড়েছিস, উজমা?’

উজমা দাঁড়াল। বাচ্চাদের দৌড়ঝাঁপ ও হাসি হাসি মুখটার দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘প্রেমটাকে তোরা এত ইজি ভাবিস কী করে? চাইলেই কি প্রেমে পড়া যায়?’

-‘তা যায় না। কিন্তু তোকে ভীষণ মনমরা লাগছে, উজমা। আমরা তোকে অনেকদিন ধরে চিনি, জানি। কখনও এমন দেখিনি তো, তাই। হতেও তো পারে, তাই না?’

-‘আমি তোদের আগেই বলেছি, আমার কাছে প্রেম ও ভালোবাসার মানে কী! আবারও বলছি, ‘সম্পর্কটা যদি এমন হয়, যেখানে বন্ধুত্ব আছে, ভালোবাসা আছে, বিশ্বাস আছে, শ্রদ্ধা-সম্মান আছে, তাহলে সেখানে ম্যারেজ লাভ হোক কী অ্যারেঞ্জ, সুখ, সম্পর্ক টিকে থাকা নির্ভর করবে এসব পয়েন্টের ওপর। আমি এমন কাউকে ভালোবাসব, যার সাথে আমার সম্পর্ক হবে, ‘ফ্রেন্ডশিপ লাভ এন্ড সামথিং মোর।’ শুধু মুখে ভালোবাসি বলব, কাজে প্রমাণ দেব না, এজাতীয় লোকদেখানো ভালোবাসাতে আমি ভরসা পাব না কোনোদিন।’ (ফ্রেন্ডশিপ লাভ এর অংশ) যদি কেউ এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে আমার সাথে সম্পর্কে জড়াতে রাজি হয়, তাহলেই ভালোবাসা আমার জীবনে আসবে।’

-‘ওই অ্যাডভোকেট কি তোর বন্ধু হতে পেরেছিল?’

-‘না, পারেনি। যদি বন্ধু হতো, বিশ্বস্ত হতো, আমার সম্মানের কথা ভাবত, তবে বিয়ে ভাঙার আগে একবার আমাকে সরাসরি প্রশ্ন করত, আমি সৎ না-কি অসৎ! যে পুরুষ এই সাধারণ প্রশ্ন আমাকে জিজ্ঞেস না করে আমার গায়ে কলঙ্ক ছুঁড়তে পারে, সে আর যা-ই হোক, বিশ্বস্ত বন্ধু একেবারেই নয়। এইজন্যই তারমতো কাপুরুষকে আমি আমার জীবনে জড়ানোর চিন্তাও মাথায় আনব না।’

মাইসারা দু’হাতে আগলে ধরল উজমাকে। রাইদাহও যোগ দিল। দুই বান্ধবী উজমাকে ভরসা দিয়ে বলল,
-‘ভয় পাস না, উজমা। সবটা নিশ্চয়ই আল্লাহর ইচ্ছা।’

উজমা শুধু মাথা নাড়ল। তিন বন্ধুর আলাপ-আলোচনা শেষ হলে সবাই একসাথে জড়ো হলো। উজমা কোর্টে যেতে চায় কি-না সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে কাইফ বলল,

-‘দেখা করতে চাইছিস এখন?’

-‘হুম…।’

-‘ভয় পাবি না তো?’

-‘তোরা থাকবি না?’

ভয়ে গলা শুকিয়ে এলো উজমার। একে একে সবার দিকে তাকাল। দুম করে উচ্চহাসিতে ফেটে পড়ল কাইফ। শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে বলল,

-‘চল আয়, দেখি ব্যাটার বাহাদুরি কত। মানুষের ইজ্জতকে ফেলনা মনে হয় না-কি তার? এত দেমাগ। আজ সব দেমাগের দফারফা ঘটিয়ে দেব।’

কাইফের কথার ধরনে হাসতে বাধ্য হলো সবাই। উজমা মনে সাহস পেল। সমস্ত বিষণ্ণতা, ভয়, দুঃশ্চিন্তা দূর হয়ে গেল। হাসিমাখা স্বরে বলল,

-‘তোরা পারিসও বটে।’

এতক্ষণ বাচ্চাদের সাথে খেলছিল মোম। বিদায় নেয়ার মুহূর্তে সবাইকে ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্ছিল তার। সে কাইফের কোলে লেপটে গিয়ে বলল,

-‘ওরা সবাই অনেক ভালো, পাপা।’

-‘হ্যাঁ, একদম তোমার মতো। তুমি খুব টায়ার্ড ফিল করছ?’

-‘একটুও না। আমার খুব ভালো লাগছে।’

-‘এখন মামের সাথে বাসায় চলে যাও। পাপা একটা জরুরী কাজে যাব।’

-‘আমাকে নিয়ে যাও না, পাপা।’

-‘না, সোনা। ওখানে বাচ্চাদের থাকতে নেই। পাপা ফেরার পথে অনেককিছু নিয়ে ফিরব। তুমি জাস্ট বাড়ি গিয়ে ঘণ্টাখানেক খেলাধুলা কোরো। এরমধ্যেই পাপা চলে আসবে।’

-‘ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি এসো।’

আলগোছে কাইফের গালে চুমু খেল আদুরে বাচ্চাটা। মেয়েকে ফিরতি আদর দিল কাইফ। রাইদাহ’র কোলে দিয়ে মা ও মেয়েকে গাড়িতে উঠিয়ে বলল,

-‘সাবধানে যাস।’

এখনও সম্বোধনটা তুইতেই আটকে আছে ওদের। সম্পর্ক ও ভালোবাসার পরিণতি অনেকদূর অবধি বিস্তৃত হলেও সম্বোধনে কোনো পরিবর্তন আসেনি। তাতে অবশ্য মাথাব্যথা নেই কারও। তারা এভাবেই সুখী। উজমার এই কঠিন মুহূর্তে পাশে থাকতে পারবে না দেখে খারাপ লাগল রাইদাহ’র। সে বান্ধবীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে বলল,

-‘আমি খুব দুঃখিত, উজমা। আমার উচিত ছিল তোর পাশে থাকা। কিন্তু আমি সেটা পারছি না। মোম অনেক ছোটো। ওখানে কী না-কি কথা হবে, ঝামেলা হবে, কে জানে! আমি বা কাইফ আমরা কেউ-ই চাইছি না, কোনো ঝামেলাযুক্ত সিচুয়েশনে মোম জড়িয়ে থাকুক।’

উজমা নিজেও মোমের ব্যাপারটা ভাবছিল। যে কোনো কঠিন সিচুয়েশনে বাচ্চাদের সামনে রাখা অনেক ঝামেলার। এসব বাচ্চাদের মনে প্রভাব ফেলে বেশি। মোমের জন্মদাতা নিজেই তো আস্তো একটা ঝামেলার সম্মুখীন করেছিল একদিন। এতেই বাচ্চাটা অনেক শক খেয়েছে। এইটুকু বাচ্চাকে আর কোনো ঝামেলার মাঝখানে রাখা উচিত হবে না একদম। সে মোমের শারিরীক ও মানসিক অবস্থার কথা ভেবে বলল,

-‘আমিও চাই না, মোম এসবে থাকুক। তুই নিশ্চিন্তে বাড়ি যা। কী হয়, না হয়, সেটা আমি পরে জানাব।’

রাইদাহ নির্ভার হেসে ড্রাইভারকে তাড়া দিল। মা ও মেয়েকে বিদায় দিয়ে বাকিরা সবাই রওনা দিল কোর্টের দিকে। উজমা যত ভয় পাচ্ছিল, মাইসারা তাকে সাহস দিয়ে যাচ্ছিল। এদিকে তিন বন্ধু বিনোদন নিচ্ছে ইচ্ছেমতো। সবার ভাষ্যমতে উজমা এখন ভীতুদের পর্যায়ের একজন। তাকে মোটেও ভয় ভয় ফেইসে মানায় না। সে হবে সবসময় সাহসী, তেজী, প্রতিবাদী। কেন দুর্বলদের মতো ভয়কে মনে আঁকড়ে নিয়ে বাঁচবে? বন্ধুরা যত যাই বলুক, ভয় থেকে বের হতে পারছে না উজমা। কেমন যেন একটা অস্বস্তি হচ্ছে। কয়েক মিনিটের রাস্তা মাত্র। ওইটুকু রাস্তা খুব দ্রুতই ফুরাল। সাহস নিয়ে কোর্টে পা ফেলল উজমা। বন্ধুরা সবাই পিছন পিছন এগোলো। অনিক বলল,

-‘তুই প্রথমে স্বাভাবিকভাবে কথা এগোবি। যদি ওই অ্যাডভোকেট রুড বিহেভ করে, তাহলে আমরা অ্যাকশন নেব। ভয় পাস না। তোর থেকে মাত্র কয়েক হাত দূরে থাকব আমরা।’

অ্যাডভোকেট সাকিবের কক্ষে প্রবেশ করার আগে বন্ধুদের দিকে শেষবার সাহস নিয়ে তাকাল উজমা। বলল,
-‘যাই?’

তাক্বদীম কপালে হাত দিয়ে বলল,
-‘ঘাবড়াচ্ছিস কেন? আমরা আছি তো।’

উজমা বুকে ফুঁ দিল। মাইসারা হাতে হাত চেপে সাহস দিয়ে বলল,
-‘আমরা কোনোকিছুতে ভয় পাই না, উজমা।’

অসহায় চোখমুখ নিয়ে তাকিয়ে রইল উজমা। তার এই ভয় ভয় মুখবয়ব দেখে সবার মাথায় হাত। কাইফ বলল,
-‘আশ্চর্য! তুই কি ভেতরে যাবি না-কি ধাক্কা মারব একটা?’

-‘যাচ্ছি তো।’

দাঁতে দাঁত চেপে বলল, উজমা। দেরী না করে সাহস নিয়ে দরজায় ঠকঠক আওয়াজ তুলে বলল,
-‘ম্যে আই কাম-ইন?’

আওয়াজ শোনে অ্যাডভোকেট সাকিবের অ্যাসিস্ট্যান্ট বেরিয়ে এলো। উজমাকে দেখে বলল,
-‘আপনার পরিচয়?’

উজমা নিজের নাম বলতেই অ্যাসিস্ট্যান্ট ছুটে গেল ভেতরে। সাকিবকে খবর জানাল। অনুমতি পাওয়াতে আর দেরী করল না উজমা। দ্রুতপায়েই প্রবেশ করল কক্ষের ভেতরে। অ্যাডভোকেট সাকিব নিজের ব্যস্ততা ফেলে চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে উজমাকে স্বাগত জানিয়ে বলল,

-‘আসুন, ম্যাডাম। আমি আপনার অপেক্ষাতেই ছিলাম।’

অ্যাডভোকেট সাকিবের এই শান্তস্বরে বড্ড বিব্রতবোধ করল উজমা। সাকিব তাকে বসার জন্য চেয়ার বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

-‘কী খাবেন? চা না-কি কফি?’

-‘কিছু না।’

-‘তা বললে তো হয় না। আপনি আমার মেহমান।’

-‘আমি এখানে আপনার কাছ থেকে আতিথিয়েতা গ্রহণ করতে আসিনি। এসেছি কিছু দরকারী কথা বলতে।’

-‘ঠিক আছে। আপনি বলুন, আমি শুনছি।’

গায়ে কলঙ্ক ছুঁড়ে দিয়ে এখন ঠাণ্ডা মাথায় চা-কফি খাওয়ার ইনভাইট করছে, এসব শোনেই তো উজমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। কোনোমতে রাগ নিয়ন্ত্রণ করে শক্ত মেজাজে বসে রইল সে। তারপর বলল,

-‘যে অভিযোগ আপনি এবং আপনার পরিবারের লোকজনেরা তুলেছেন, তার সত্যতা নিশ্চিত করুন প্লিজ।’

-‘শুধু এইটুকুর জন্য এতদূর ছুটে এসেছেন?’

-‘একটা মেয়ের গায়ে কলঙ্ক লাগিয়েছেন, সেটা আপনার কাছে এইটুকু ব্যাপার হলেও আমার কাছে অনেক। কারণ একটাই, যে দোষে আমি দোষী নই, যে কলঙ্ক আমাকে ছোঁয়নি, তার দায়ভার কেন আমি নেব? কীসের ভিত্তিতে? যদি আপনি প্রমাণ দিতে না পারেন, তবে আপনার ওপর দিয়ে আজ ভয়ানক ঝড়তুফান যাবে।’

সাকিব ভ্রু বাঁকিয়ে বলল,
-‘নিজেকে খুব বেশি সুন্দরী দাবী করেন আপনি?’

-‘না। নিজেকে আমি সৎ এবং সাহসী বলেই জানি।’

-‘আপনার সাহস আমাকে মুগ্ধ করেছে। কিন্তু তবুও আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারছি না বলে দুঃখিত।’

-‘আপনাকে বিয়ে না করলে আমার খুব একটা ক্ষতি হবে না।’

-‘অথচ আমার মনে হচ্ছে একটা সরকারি চাকরিজীবী পাত্র হাতছাড়া হওয়াতে আপনার বড্ড আফসোস হচ্ছে। আমি আবারও দুঃখিত যে, আমি আপনার আফসোসের কারণ হয়ে গেলাম।’

-‘ভদ্রভাবে কথা বলুন। আর সমস্ত অপবাদের প্রমাণ দিন। প্রমাণ না দিলে আমি আপনাকে মানহানীর মামলায় ফাঁসিয়ে দেব।’

সাকিব শুধু হাসল। নিজের ড্রয়ার থেকে একটা কার্ড বের করে উজমার সামনে রেখে বলল,
-‘আগামী সপ্তাহেই বিয়ে করছি। তবে পাত্রী আপনি নোন। অন্যকেউ। সে আপনার মতো নষ্টা কিংবা চরিত্রহীন নয়।’

এতক্ষণ ভদ্রভাবে কথা বলতে গিয়ে উজমার মনে হলো, অযথাই এই অভদ্রকে সম্মান দিচ্ছে সে। সাকিবের কথা শেষ হওয়া মাত্রই ধৈর্যের সবটুকু বাঁধ ভেঙে গেল তার। রাগে হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে ফেলল উজমা। ডানহাত দিয়ে একাধারে ঠাস ঠাস করে কয়েকটা চড় বসাল সাকিবের গালে। সাকিব যে একজন সরকারি কর্মকর্তা এটা দিব্যি ভুলে গেল সে। কলার ধরে শাসিয়ে বলল,

-‘জীবনে অনেক মানুষ আমি দেখেছি, কিন্তু আপনার মতো অভদ্র, অসভ্য মানুষ একটাও দেখেনি। আমার সৌভাগ্য যে, আপনার মতো একটা নীচু মন-মানসিকতার মানুষকে জীবনে জড়াতে হচ্ছে না।’

উজমার এই আচরণে সাকিব হতভম্ব। অ্যাসিস্ট্যান্টও এই অবস্থা দেখে ছুটে এলো কাছে। হাত ছাড়িয়ে তার বসকে পানি দিল। সাকিব নিজেও পালটা আক্রমণ কর‍তে চাইল উজমার ওপর। কিন্তু পারল না। যেভাবে হাত তুলেছিল, সেভাবেই তার হাতটা মুচড়ে দিল তিন বন্ধু। মাইসারা দু’হাতে উজমাকে আগলে ধরে খানিকটা দূরে সরে গেল। সাকিব চেঁচিয়ে উঠে বলল,

-‘আমার সাথে গলাবাজি না করে নিজের চাচাতো ভাইয়ের সাথে গলাবাজি করুন, উজমা। কাজে দিবে।’

উজমা হতবাক চোখে তাকিয়ে বলল,
-‘আমার চাচাতো ভাই?’

-‘ইয়েস! আপনার চাচাতো ভাই, শামীম। সে নিজে তার বোনের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে। এ-ও বলেছে, আপনি চরিত্রহীন। খারাপ। দিনরাত পুরুষদের সাথে ফষ্টিনষ্টি করে বেড়ান। এখন তো দেখছি, শামীমের কথাই সত্যি। আপনি একটা দুশ্চরিত্রা…।’

ঘুষিটা একদম নাক বরাবর বসিয়ে দিল তাক্বদীম। সাকিব যে বন্ধুবান্ধবদের দিকটাই ইঙ্গিত করেছে, সেটা এতক্ষণে স্পষ্ট। ইচ্ছে করছিল, নাকমুখ চ্যাপ্টা করে দিবে। কিন্তু এটা কোর্ট। এখানে খুব বেশি বাড়াবাড়ি করা মানে, নিজেরাই ফেঁসে যাওয়া। সবদিক ভেবেচিন্তে বলল,

-‘আমরা বন্ধু। আমাদের সম্পর্কটা অন্যসব সম্পর্কের মতো, সৎ, বিশ্বস্ত, আপন। এই সম্পর্কে জড়িয়ে থাকা প্রত্যেকটা মানুষ নিজেদের কথা ও কাজকে সম্মান করে, শ্রদ্ধা করে, ভালোবাসে। আমরা প্রত্যেকেই নিজেদের যতটা ভালোবাসি, ততটা ভালোবাসি আমাদের সম্পর্ককে। তাই এই সম্পর্কের মাঝে আসা একফোঁটা মিথ্যে অপবাদও আমরা কেউ সহ্য করব না। নেক্সট টাইম যদি ওর দিকে সামান্য কলঙ্কও আপনি ছুঁড়ে দেয়ার চেষ্টা করেন, তাহলে আপনার এই মুখের নকশা একদম পালটে দেব। আপনি আইনের লোক, সেটাও ভুলে যাব। কথাটা মনে থাকে যেন।’

যেভাবে ঢুকেছিল ওরা, সেভাবেই বেরিয়ে এলো। উজমাকে খুব যত্নে গাড়িতে বসাল মাইসারা। সাহস দিল, ভরসা দিল। উজমা শুধু বিড়বিড়িয়ে বলল,

-‘শামীম ভাইয়া কেন এমনটা করবে?’

অ্যাডভোকেট সাকিবের অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশকে ঘটনাটা জানাতে চাইলে, সাকিব বাঁধা দিল। সে তড়িঘড়ি ফোন করল শামীমের কাছে। এখানে কে মিথ্যে, কে সত্যি জানাটা খুব দরকার তার। নয়তো একটা নির্দোষ মানুষকে দোষী সাজানোর অপরাধে বিবেকের কারাগারে সারাজীবন সে অপরাধী হয়ে থেকে যাবে।

***

চলবে…