মেঘে ঢাকা তারা পর্ব-১৪

0
472

#মেঘে_ঢাকা_তারা
#পর্ব_১৪
#আয়াত_আফরা

পরদিন তন্দ্রা গতকালের ঘটনার কথা বেমালুম ভুলে গেলো।নীলাদ্রি নেই তাই তাকে বাধা দেয়ার মতও কেউ নেই।সে ঘাসফড়িংয়ের মত নেচে বেড়াতে লাগল সারা বাড়িতে। সকালের খাবার রান্না করলো, নীলাদ্রির ঘর গুছালো, আসবাবপত্র মুছে নীলাদ্রির বিছানা চাদর আর বাসি কাপড় বুকের সাথে চেপে ধরে সে নিচে নেমে এলো।সেগুলো ওয়াশিং মেশিনে দিতেই কিচেন থেকে পুষ্পার গলা পেলো সে,

“এই তন্দ্রা একটু দেখতো ‘অন্যরকম প্রেম’ সিরিয়ালটা শুরু হয়েছে কিনা।আমি এই রান্নাটা শেষ করে আসছি।তুই টিভির সাউন্ড একটু বাড়িয়ে দে।যাতে এখান থেকে শোনা যায়।”

তন্দ্রা হাসলো।এরকম সেরিয়ালখোর মানুষ সে জীবনে দেখেনি।এক দিনের মধ্যেই বেশ ভাব জমে গেছে তন্দ্রা আর পুষ্পার।সম্পর্কটা তুমি থেকে তুই তে নেমেছে।ওয়াশিং মশিনটা অন করে সে ড্রইংরুমের বিশাল টিভিটা চালু করলো। চ্যানেল চেঞ্জ করতে করতে একটা নিউজে চোখ আটকে গেলো তার।গতকালের ভয়টা আবার একটু একটু করে তার মধ্যে জমাট বাঁধতে লাগলো। নিউজে বড় বড় করে লেখা,

“খুন হয়েছেন বিশিষ্ট শিল্পপতি ধনঞ্জয় পাল।”

ধনঞ্জয় কে, তা হয়তো তন্দ্রা চিনতো না যদি না সেখানে বড় করে তার একটা ছবির দেয়া থাকতো।এটাতো সেই লোক যাকে কাল নীলাদ্রিরা তুলে নিয়ে গিয়েছিল! তারা লোকটাকে খুন করে ফেললো!নীলাদ্রি একটা খুনি!এত নীচ সে, এত নীচ!না আর চুপ থাকলে চলবে না।এবার পুলিশকে সবকিছু খুলে বলার সময় এসেছে।নীলাদ্রি একটা খুনি।ও একটা নির্দোষ মানুষকে মেরে ফেলেছে।দ্রুত তন্দ্রা রিমোট ফেলে নিজের ঘরে গিয়ে জামা চেঞ্জ করে কাঁধে তার পাটের ব্যাগটা ঝুলিয়ে নিল।এক্ষুনি তাকে থানায় যেতে হবে।

“এটা কি তন্দ্রা ম্যাডামের বাড়ি?”

বাড়ির প্রধান দরজায় দাড়িয়ে আছে সাদা ফরমাল কাপড় আর ক্যাপ পড়া এক ব্যাক্তি। বিনতি কাছেই ছিল।সে এগিয়ে এসে বললো,

“হ্যাঁ তন্দ্রা এখানেই থাকে।কিন্তু আপনি কে?”

“আজ্ঞে আমি ড্রাইভার।ম্যাডামের জন্য গাড়ি পাঠানো হয়েছে।”

“গাড়ি পাঠানো হয়েছে!”

অবাক হলো বিনতি।তন্দ্রার জন্য কে গাড়ি পাঠাবে।তেমন কোনো বড়লোক বন্ধু বা আত্মীয়ের কথা তো তাকে জানায়নি তন্দ্রা।

“কে গাড়ি পাঠিয়েছে?”

“আজ্ঞে আমার স্যার,ইভান খান।”

“ইভান খান!”

বিনতির পেছনে কখন যে পুষ্পা এসে উদয় হয়েছে সেটা টেরও পায়নি বিনতি। পুষ্পা উত্তেজিত হয়ে বললো,

“সত্যি ইভান খান গাড়ি পাঠিয়েছে!”

“জি।”

“ওই ইভান খান না যার অনেকগুলো বাংলো আছে, জুনিয়র বিজনেস ম্যান অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ,ওই ইভান খান না?”

“জি ম্যাডাম।”

তখন কাকতালীয়ভাবে টিভিতে চলতে থাকা একটা বিজনেস নিউজে ইভানকে নিয়ে কি একটা সংবাদ দেখনো হচ্ছিল। পুষ্পা ড্রাইভারকে টেনে টিভির সামনে নিয়ে এসে নিউজে দেখনো ইভানের ছবিটার দিকে ইশারা করে বললো,

“এই ইভান খান,এই ইভান খান?”

“আজ্ঞে হ্যাঁ ম্যাডাম ইনিই আমার স্যার ইভান খান।”

“হায় রাম!ইভান খান তন্দ্রার জন্য গাড়ি পাঠিয়েছে!দাদা এখানেই দাঁড়ান। কোথাও যাবেন না।আমি পাঁচ মিনিটে তন্দ্রাকে নিয়ে আসছি।”

পুষ্পা খুশিতে লাফাতে লাফাতে তন্দ্রার ঘরে গেলো।

তন্দ্রা তখন ব্যাস্ত হয়ে ফোনে তাসনোভার নম্বর ডায়াল করছিল। তাসনোভা যদি তার সাথে থানায় যেতে রাজি হয় তাহলে মনেও একটু সাহস পাওয়া যাবে।

“আরে ফোন কেনো তুলছেনা মেয়েটা!”

বেশ কয়েকবার রিং হয় তাসনোভার ফোন।তন্দ্রার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে ভয়ে আর উত্তেজনায়।

“হ্যাঁ তন্দ্রা বল।” ওপাশ থেকে তাসনোভার গলা পাওয়া গেলো এতক্ষনে।

“হ্যাঁ তাসনোভা ফোন কেনো তুলছিলিস না? আমি কখন থেকে ফোন করছি।আচ্ছা আমার কথা শোন….”

তন্দ্রার কথা শেষ হবার আগেই ঘরে ঢুকলো পুষ্পা।

“তন্দ্রা কি করছিস তুই ,তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে।”

“তৈরি হবো কেনো?”

“আরে তোর জন্য ইভান খান গাড়ি পাঠিয়েছে!”

“কি!”

চমকে উঠলো তন্দ্রা।কালকে নিষেধ করার পরও ইভান গাড়ি পাঠিয়েছে!আসলে চাইছেটা কি সে?

“দেখো পুষ্পা দি আমি উনার সাথে দেখা করতে চাইনা।আমার অন্য জরুরি কাজ আছে আমাকে বেরুতে হবে।”

“আরে মাথামোটা অন্য কাজ করার অনেক সময় পাবি,কিন্তু এমন সুযোগ হাতছাড়া হলে সেটা আর ফিরে আসবেনা।”

ফোনের ওপার থেকে তাসনোভার উত্তেজিত গলা শোনা গেলো,
“ইভান খান তোর জন্য গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে! ডেটে যাওয়ার জন্য সোজা গাড়ি! হাউ রোমান্টিক!”

তন্দ্রা ফোনটা আবার কানে ধরে বললো,
“দেখ তাসনোভা আমার তোর সাথে অন্য জরুরি কথা আছে।”

“তোর সব কথা পড়ে শুনবো।আগে ইভানের সাথে দেখা করে আয়।পরে এসে আমাকে বলিস কি কি হলো।বাই ,বাই বাই।” কল কেটে দিলো তাসনোভা।

“আরে তাসনোভা আমার কথা শোন,আরে….”

“হয়ে গেছে কথা বলা?এখন তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে,ড্রাইভার সাহেব দাড়িয়ে আছে তো।চল চল চল।”

“পুষ্পা দি আমার কথাটা একটু শোনো।”

পুষ্পা তন্দ্রার কোনো কথায় কান না দিয়ে তাকে সুন্দর করে সাজিয়ে নিয়ে আসে।

“চল চল বাইরে,দেখ কেমন গাড়ি এসেছে।”

“পুষ্পা দি আমি উনার সাথে দেখা করতে চাই না।বাড়িতে কত কাজ পড়ে আছে।নীলাদ্রি স্যার যদি জানতে পারেন কাজে ফাঁকি দিচ্ছি তাহলে ঠেঙ্গাবে।”

“আরে পাগল, স্যার এখন বাড়িতে আছেন নাকি?স্যারের ফিরতে এখনো দু দিন দেরি আছে।চল চল।”

গেটের সামনে এসে তন্দ্রা দেখলো গেটের বাইরে একটা বড় ছাই রাঙা অ্যাম্বাসেডর দাড়িয়ে আছে।তার পাশে দাড়িয়ে আছে ড্রাইভার। তন্দ্রা ড্রাইভারকে বললো,

“প্লীজ ভাইয়া আপনার স্যারকে গিয়ে বলে দিন আমি উনার সাথে দেখা করতে চাই না।”

তন্দ্রার কথায় বাধা দিল পুষ্পা,
“আরে না না না,ও এক্ষুনি যাবে।”

জোর করে তন্দ্রাকে গাড়িতে তুলে দিলো পুষ্পা। তন্দ্রাকে নিয়ে গাড়ি কোথায় চললো তন্দ্রা নিজেও তা জানেনা। গাড়িটা বেরিয়ে যেতেই পুষ্পা দুই হাত গালে দিয়ে বললো,

“আই লা একদম সিরিয়ালের মত!”

********

তন্দ্রার মনে প্রচন্ড অস্বস্তি হচ্ছিলো।তার থানায় যাবার কথা ছিল।সব পরিকল্পনা নষ্ট করে দিলো এই ইভান খান।কি জানি কোথায় নিয়ে যেতে বলেছে।বিকাল ঘনিয়ে এসেছে।কিছুটা মেঘও জমেছে আকাশে। আকাশের দিকে জানালা দিয়ে মুখ বাড়ালো তন্দ্রা।খন্ড খন্ড মেঘ দলা হয়ে আছে আকাশে। হঠাৎ ভেজা ঠান্ডা হাওয়া তন্দ্রার চুল ছুঁয়ে বেরিয়ে গেল। শিরশির করে কেঁপে উঠলো সে।

একটা বড় সেতুর পাশে থামলো গাড়িটা।ড্রাইভার সামনের দিকে ইশারা করে বললো,

“ম্যাডাম স্যার সামনেই আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন।”

তন্দ্রা বেশ বিরক্ত ছিল।সে দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে সেতুর উপর দিয়ে এগিয়ে গেলো।

শান্ত নির্জন এলাকা।এলাকার নৈসর্গিক দৃশ্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর।দূরে বিশাল বিশাল পাহাড় প্রহরীর মত দাড়িয়ে জায়গাটাকে পাহারা দিচ্ছে।কোনো একটা পাহাড়ের বুক চিড়ে হয়তো তৈরি হয়েছে পাহাড়ি ঝর্না।তার প্রবাহমান জল স্রোতধারা হয়ে বয়ে চলেছে সেতুর নীচ দিয়ে একটা সবুজ নদী হয়ে।একটু এগিয়ে ইভানকে দেখতে পেলো তন্দ্রা।সে তন্দ্রার থেকে পেছন ফিরে দাড়িয়ে আছে।তন্দ্রা তার কাছে গিয়ে একটু ঝাঁঝের সাথে বললো,

“আমি আপনাকে বলেছিলাম না আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই না।তাহলে কেনো গাড়ি পাঠিয়েছেন?”

ইভান এবার খেয়াল করলো তন্দ্রাকে।মুচকি হাসলো সে,
“কেনো মিস তন্দ্রা,আমি কি এতটাই খারাপ যে আপনি আমার সাথে দেখা করতে চান না?”

“দেখুন মিস্টার ইভান কথাটা ভালো খারাপের না।আপনার সাথে আমার যায়না।”

“কেনো?আপনিও মানুষ আমিও মানুষ।”

“আপনি কেনো বুঝতে পারছেন না আপনার আর আমার স্ট্যাটাস আলাদা।”

“আমার সে নিয়ে মাথাব্যথা নেই।”

“কিন্তু আমার আছে মিস্টার ইভান।আমি আপনাকে নিয়ে ইন্টারেস্টেড নই।”

“কিন্তু আমি তো ইন্টারেস্টেড।”

তন্দ্রা চুপ করে রইলো।সে কি করে ইভান কে বলবে সে কেবল সামান্য একজন চাকরানী। সন্ধ্যা নেমেছে।আকাশ মেঘে ঢাকা বলে অন্ধকারটা একটু বেশিই মনে হচ্ছে।সেতুর উপর একটা দুটো করে বাতি জ্বলে উঠেছে।হঠাৎ পরিবেশটা একটু বেশিই আলোকিত মনে হলো তন্দ্রার।সে তাকালো নদীর দিকে।নদীতে ভেসে চলেছে হাজার হাজার ছোট্ট ছোট্ট আলোর বাতি।কারা জ্বালালো এগুলো! তন্দ্রা ইভানের কথা ভুলে গিয়ে মুগ্ধ হয়ে সেগুলো দেখতে লাগলো।স্রোতের সাথে তাল মিলিয়ে বাতিগুলো ভেসে চলেছে অজানার পথে। কোথায় তার গন্তব্য? কোথায় নদীর শেষ? দূর থেকে সম্মিলিত কোলাহল ধ্বনি ভেসে আসছে।হয়তো সার দেয়া পাহাড়ের মাঝে কোথাও বাস করে কোনো আদিবাসী সম্প্রদায়।তাদেরই মৃত আত্মীয়দের উদ্দেশ্যে ভাসানো হয়েছে এই বাতিগুলো।

তন্দ্রার ভাবনায় ছেদ পড়ল একটা গানের সুরে।তাকিয়ে দেখলো ইভান গিটার হাতে গান গাইছে,

“দেহলিজ পে মেরে দিল কি যো রাখে হে তুনে কদম,
তেরে নাম পে মেরি জিন্দেগি লিখ দি মেরে হামদম।”

হঠাৎই পরিবেশটা যেনো নস্টালজিক হয়ে উঠেছে।ইভান এক গুচ্ছ গোলাপ নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসলো তন্দ্রার সামনে।

“আই লাভ ইউ তন্দ্রা।উইল ইউ বি মাই লাইফ পার্টনার?”

ইভানের মুখ থেকে কথাগুলো বেরুতেই আকাশের দিকে উড়ে গেলো অসংখ্য আলোর লন্ঠন।রাতের আধার হাজার আলোয় ম্লান হয়ে উঠলো।লন্ঠনগুলো অন্ধকারকে বিদ্রূপ করতে করতে উড়ে যেতে থাকলো উচুঁতে আরো উচুঁতে।

তন্দ্রা কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে কিছুক্ষন দাড়িয়ে রইলো।সম্বিত ফিরতেই সে বললো,

“দেখুন এটা সম্ভব নয়।”

“কিন্তু কেনো নয় তন্দ্রা?”

“আপনি আমার অতীত সম্পর্কে কি জানেন?”

“জানতে চাইও না।আমি শুধু আপনার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ নিয়ে থাকতে চাই।”

“আমার সম্পর্কে সত্যিটা জেনে আপনি খুব একটা খুশি হবেন না।”

“আমি আপনাকে নিয়েই খুশি হতে চাই।”

“আপনি ভুল করছেন।”

“যদি এটা ভুল হয় তবে আমি চাই এ ভুল যাতে বারবার হয় আমার।”

তন্দ্রা বুঝলো একে বুঝানো কোনোভাবে সম্ভব নয়।তাই সে ফেরার পথে পা বাড়ালো।তখনই পেছন থেকে ইভান বললো,

“তন্দ্রা আপনি নীলাদ্রির বাড়িতে কাজ করেন এটুকুই তো আপনার সমস্যা?”

তন্দ্রা থমকে দাড়ালো।ইভান ব্যাপারটা জানে! কিন্তু এটুকুই যে শেষ নয়। তন্দ্রা যে নীলাদ্রির কাছে নিজেকে বিক্রি করে দিয়েছে।তন্দ্রা পেছন ঘুরে বললো,

“ইভান আমার জীবনের অন্য সত্য আছে।তাই ভালো এটাই হবে আপনি আমাকে ভুলে যান।”

তন্দ্রা দ্রুত চলে এলো সেখান থেকে।ইভান বললো,

“সেটা তো কখনোই সম্ভব নয় তন্দ্রা।আমার যে আপনাকেই চাই!”

********

ইভানের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে তন্দ্রা দ্রুত এসে ঢুকলো পুলিশ স্টেশনে। ইন্সপেক্টর প্রণবেন্দ্র তখন ধনঞ্জয়ের কেসটা নিয়ে বেশ বিপাকে ছিলেন।লাশটা তালতলার নির্জন রাস্তার পাশে ঝোপে পাওয়া গেছে।তাই কেসটা গছিয়ে দেয়া হয়েছে তাকে।সকালে লাশটা পাওয়ার পর থেকে কোনো কূল কিনারা করতে পারছিলেন না।এমন সময় তন্দ্রাকে দেখে তিনি যেনো একটু আশার আলো দেখতে পেলেন।

“আরে ম্যাডাম আপনি!ভালই হয়েছে আপনি নিজ থেকে এসেছেন।নয়তো আমাদেরই আপনাকে খুঁজতে বেরুতে হতো।”

“কেনো বলুন তো?”

প্রণবেন্দ্র ধনঞ্জয়ের ছবিটা তন্দ্রাকে দেখিয়ে বললো,
“দেখুন তো ম্যাডাম কাল কি আপনি এই লোকটাকে তুলে নিতে দেখেছিলেন?”

তন্দ্রা ঘাড় হেলিয়ে বললো,
“হ্যাঁ।”

“কারা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো আপনি কি তাদের চিনেন?”

“হ্যাঁ আমি চিনি তাদের!” উত্তেজিত হয়ে বললো তন্দ্রা।

“তাই নাকি! কে ছিল তারা ম্যাডাম?”

“নীলাদ্রি চৌধুরী।”

” নীলাদ্রি চৌধুরী! বিখ্যাত বিজনেস ম্যান নীলাদ্রি চৌধুরী?”

“হ্যাঁ উনি ছিলেন।আমি নিজের চোখে দেখেছি।”

“এসব আপনি কি বলছেন ম্যাডাম।উনি কেনো কাউকে কিডন্যাপ করতে যাবেন?”

“সে আমি জানিনা।কিন্তু আমি দেখেছি উনিই ছিলেন।”

“কিন্তু…….
দাঁত দিয়ে নিজের ঠোঁট চেপে ধরলো ইন্সপেক্টর প্রণবেন্দ্র।

“ম্যাডাম আমাদের কাছে যতটুকু খবর আছে উনি তো এখন শহরেই নেই।”

“বাহ আপনারা পুলিশরা তাহলে সবার শহরে থাকা বেরুনোর খবর রাখেন?”

“সবার কেনো রাখবো ম্যাডাম।সেটা আমাদের দায়িত্ব নয়।তবে বিশেষ ব্যাক্তিদের খবর তো অবশ্যই রাখি।আপনি তো কেসটা সহজ করে দেবার বদলে আরো জটিল করে তুললেন।”

“আমি যা দেখেছি তাই বলেছি।”

“আপনি কি কিডন্যাপারের মুখ দেখেছেন? আপনি কি নিশ্চিত উনি নীলাদ্রি চৌধুরীই ছিলেন?”

তন্দ্রা একটু ভাবলো।সে নীলাদ্রির মুখটা পরিষ্কার দেখেনি।কিন্তু বালু আর তৌসিফকে তো দেখেছিল।

“না আমি উনার মুখটা পরিষ্কার দেখিনি।”

“হুঁ তবে আপনি কিসের ভিত্তিতে বলতে পারেন ওটা নীলাদ্রি ছিলেন?”

“আমি উনার হাবভাবে বুঝেছি।আমি উনাকে ভালো করে চিনি।”

“আপনি উনার কে হন?”

“আমি উনার বাড়িতে কাজ করি।” ইতঃস্তত করে বললো তন্দ্রা।

“ওহ আপনি উনার বাড়িতে কাজ করেন আর উনার সম্পর্কেই নালিশ থাকতে এসেছেন? আরে ম্যাডাম স্ত্রীরাও তাদের স্বামীদের চিনতে মাঝে মধ্যে ভুল করে।আর আপনি উনার চাকরানী হয়ে উনার মুখ না দেখেই চিনে গেছেন!যত্তসব।যান তো।আমাদের অনেক কাজ আছে।”

একরকম জোর করেই তন্দ্রাকে তাড়িয়ে দিল ইন্সপেক্টর প্রণবেন্দ্র।তন্দ্রা মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে চলে এলো বাড়িতে।সে এর শেষ দেখে ছাড়বে।প্রমাণ করেই ছাড়বে নীলাদ্রি একজন খুনি।

এদিকে তন্দ্রা বেরিয়ে যেতেই প্রণবেন্দ্র ফোন করলো নীলাদ্রিকে।

“হ্যালো স্যার,আমি রাজনগর থানার ইন্সপেক্টর প্রণবেন্দ্র বলছি।”

“কি ব্যাপার হঠাৎ আমাকে মনে পড়লো যে?”

“স্যার আপনি তো শহরের বাইরে আছেন তাইনা?”

“হুঁ।”

“আর বলবেন না স্যার একটু আগে আপনার বাড়ির এক পাগল চাকরানী এসে নালিশ করলো আপনি নাকি ধনঞ্জয়ের খুন করেছেন।”

“ইন্টারেস্টিং! দেখতে কেমন ছিল মেয়েটা?”

“উজ্জ্বল ফর্সা রং,কোমর অবধি লম্বা চুল, ছিপছাপ সুন্দর গড়ন…”

” বুঝেছি।তো আপনি কি কেস নিয়েছেন নাকি?”

“আরে না না স্যার।আমরা কি প্রমাণ ছাড়া কিছু বিশ্বাস করি নাকি?”

“গুড।আর খুনের ব্যাপারে কোনো আপডেট পেলে আমাকে জানাবেন।”

“ওকে স্যার।”

ফোন কেটে দিলো নীলাদ্রি।মুচকি হাসলো সে।

“তন্দ্রা তোমার উপর থেকে আমার নজর সরিয়ে নিতেই তুমি আমার উপর নজরদারি শুরু করেছ!এ পারফেক্ট রিভেঞ্জ হ্যাঁ?”

চলবে………..