মেঘে ঢাকা তারা পর্ব-৯+১০

0
538

#মেঘে_ঢাকা_তারা
#পর্ব_০৯
#আয়াত_আফরা

এবার বাচ্চাদের মতো কাঁদতে থাকে তন্দ্রা,
“স্যার দয়া করে আমাকে পড়তে দিন।আপনি যা বলবেন আমি তাই শুনবো।আপনার সব কাজ করে দেব।শুধু পড়তে দিলেই হবে।”

আচ্ছা ফ্যাসাদে পড়া গেলোতো।

“আচ্ছা আচ্ছা পা ছাড়ো।তোমাকে পড়তে দেব।”

অবশেষে রাজি হলো নীলাদ্রি।রাজি না হয়েও উপায় কি। রাজি না হলে হয়তো সারারাত তার পা জড়িয়ে ঘ্যানঘ্যান করতো এই মেয়ে।কথাটা শুনেই কান্না বন্ধ হয়ে গেলো তন্দ্রার।সে নীলাদ্রির পা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।চোখে মুখে তার আনন্দ উপচে পড়ছে।

“কোন ভার্সিটিতে পড়ো তুমি?”

“সি এম ইউনিভার্সিটি।”

এমন ইউনিভার্সিটির নাম শুনেছে বলে মনে পড়েনা নীলাদ্রির।

“কোথায় এটা?”

“কিরণপুরের বারো নম্বর স্ট্রিটের তিন নম্বর গলি দিয়ে ঢুকে হাতের ডানপাশে গিয়ে ….”

“হয়েছে হয়েছে।”

নীলাদ্রির গলায় বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট।তন্দ্রা চুপ করে যায়।তার ইউনিভার্সিটি তেমন একটা সুবিধাজনক নয়।নাম না শোনাই স্বাভাবিক। অনেক হাতে পায়ে ধরে মামীকে রাজি করিয়ে অবশেষে এই ছোট্ট উনিভার্সিটিতে আসতে পেরেছিল সে।ক্লাসরুমে তেমন কোনো ফেসিলিটি নেই, যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নেই, ক্লাসও ঠিকমতো হয়না।তবুও তন্দ্রা ভেবেছিলো যাক এটাও মন্দ নয়!

“কোন বিষয় নিয়ে পড়ছো?”

“ক্রিমিনোলজি।”

“ডিটেক্টিভ হতে চাও?”

তন্দ্রা মাথা নিচু করে মুচকি হাসলো,
“জি স্যার।”

“তোমার এইম জিজ্ঞাসা করেছি বিয়ের কথা নয় যে লজ্জা পাচ্ছ” দাবড়ে উঠলো নীলাদ্রি।

তন্দ্রার মুখ থেকে হাসির আভা আবার মুছে গেলো।নীলাদ্রি আলমারির ড্রয়ার থেকে একটা কাগজ বের করে এনে তন্দ্রার সামনে দিয়ে বললো,

“সাইন করো।”

আবার সাইন! এটা আবার কিসের কাগজ? আগেরবার না জেনে শুনে সাইন করে যে বিপদে পড়েছে এবার কি এর চেয়ে কোনো বড় বিপদ আসছে?

“এটা কিসের কাগজ স্যার?”

“দেখো তুমি পড়ালেখা করছো।ভালো একটা ডিপার্টমেন্টে আছো। কিন্তু আমি তোমাকে পড়ালেখা করতে দেবো কোন ভরসায়?কি জানি তুমি যদি বড় চাকরি পেয়ে অনেক টাকা কামিয়ে আমার মুখের উপর টাকা ছুড়ে দিয়ে বলো এই নিন আপনার টাকা আমি আর আপনার দাসত্ব করবোনা তখন?এই কাগজে লেখা আছে তুমি যতই উপরে যাও না কেন তুমি সবসময় আমার দাসী হয়েই থাকবে।”

বুক কেঁপে উঠে তন্দ্রার।ছোটবেলা থেকে যে দাসত্বের শৃঙ্খলে সে বড় হয়েছে সেই শৃঙ্খল ভেঙে ফেলার জন্যই তো সে পড়তে চাইছে।আর নীলাদ্রি কিনা তাতেই আটকে রাখতে চাইছে তন্দ্রাকে।

“কুইক।হয় সাইন করো নয় পড়ালেখা ছাড়ো।”

তন্দ্রার চোখ আবার জলে ভরে উঠল।এখন সাইন করা ছাড়া উপায় কি।নয়তো তার পড়ালেখা চিরদিনের মতো বন্ধ হয়ে যাবে।মানুষের মন পরিবর্তনশীল।হয়তো কিছু বছর পর স্যারর মন পরিবর্তিত হয়ে গেলো।স্যার নিজেই তাকে এই দাসীর জীবন থেকে মুক্তি দিয়ে দিলেন।এখন সাইন করে দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।তন্দ্রা নীরবে সই করে দিলো কাগজটাতে।নীলাদ্রি তন্দ্রার সই করা কাগজটা স্বজত্নে ভাঁজ করে রেখে দিলো।

“এবার তুমি পড়তে পারো।আমার কোনো আপত্তি নেই।তরল পূর্ণ গ্লাসটা নীলাদ্রি এগিয়ে দিল তন্দ্রার দিকে। খাবে?”

সেকি মদ! এই শয়তানটা নিজেও মদ খাচ্ছে আর তাকেও খেতে অফার করছে।

“না ধন্যবাদ স্যার।”

“খেতে পারতে,সফট ড্রিঙ্কস ছিল” নীলাদ্রির ঠোঁটের কোণে ব্যাঙ্গের হাসি ফুটে উঠলো।

ওহ এটা তাহলে সফট ড্রিঙ্কস ! নিজের নির্বুদ্ধিতায় একটু লজ্জা পেলো তন্দ্রা। সে যাই হোক এই কুচক্রির হাত থেকে কিছু খাওয়া আর বিষ খেয়ে মরে যাওয়া সমান ।

“আমি কি যেতে পারি স্যার?”

“যাওয়ার খুব তাড়া দেখছি তোমার!”

“না মানে স্যার….”

“এ বাড়িতে সবচেয়ে কম কাজ করো তুমি।তাইনা?”

তন্দ্রা মাথা নিচু করল।এ বাড়িতে সে কোনো পার্মানেন্ট কাজ পায়নি।যে যা বলে তাই করে দেয়।তবে সেগুলো তেমন একটা বেশি কিছু নয়।বাড়িতে সব কাজের জন্য লোক আছে।তাকে আর নতুন কাজ দেবে কোথা থেকে?

“আমি তোমাকে একটা পার্মানেন্ট কাজ দিচ্ছি।আমি চাইনা তুমি শুধু বসে বসে আমার টাকা ধ্বংস করো।”

কাজের কথা শুনে তন্দ্রার মধ্যে হেলদোল দেখা গেলো।সে অতি আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে রইলো নীলাদ্রির দিকে।নীলাদ্রি সফট ড্রিঙ্কসের গ্লাসটা খালি করে খালি গ্লাসটা তন্দ্রার দিকে বাড়িয়ে দিল।তন্দ্রা সেটা নিয়ে নিজের খালি ট্রের উপর রাখলো।

“শোনো।”

আবার মনোযোগী হয়ে উঠলো তন্দ্রা।

“তুমি প্রতিদিন সকালে ভার্সিটি যাওয়ার আগে আমার লিওকে খাবার খাইয়ে যাবে।”

নীলাদ্রি ঘরের এক কোনার দিকে ইশারা করলো।সেদিকে চোখ পড়তেই আতকে উঠলো তন্দ্রা।একটা মখমলের গদির উপর নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে লিও! এটা এখানেই ছিল! কি ভয়ঙ্কর! এটাকে খাবার দিয়ে যেতে হবে! তাহলে তো আর তন্দ্রার ভার্সিটি যাওয়া হবে না।এটা হয়তো আবার হামলা করবে তন্দ্রার উপর। নীলাদ্রির সেসব ভ্রুক্ষেপ নেই।

“একটু সাবধানে আর ভালোবেসে কাজটা করো।আমার লিও কিন্তু দেখতে কুকুর হলেও ভেতর থেকে শের।সো বি কেয়াফুল।”

” স্যার আর কোনো কাজ নেই?”

নীলাদ্রি বুঝলো লিওকে খাবার দেয়ার কথায় ভয় পেয়েছে তন্দ্রা।মনে একটা অদ্ভুত প্রশান্তি অনুভব করলো নীলাদ্রি।সে তো এটাই চায়।ভয়! যত ভয় পাবে এই মানিক হালদারের মেয়ে ততই আনন্দিত হবে তার মন।

“না।অন্য কাজ তো করবেই।আর এটা হচ্ছে তোমার প্রধান কাজ।যদি ভুলে যাও তাহলে শাস্তি পাবে।মাইন্ড ইট।যাও”

“কিন্তু স্যার আমি বলছিলাম কি…..”

“আই সে গেট লস্ট।”

নীলাদ্রির গর্জনে লিও হকচকিয়ে ঘুম থেকে উঠে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো খারাপ কিছু আশঙ্কায়।তন্দ্রা পড়িমরি করে গ্লাস আর ট্রে নিয়ে ছুটে বেরিয়ে এলো নীলাদ্রির ঘর থেকে।

********
রাত তখন অনেক।নিজের ঘরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে তন্দ্রা।লিওর দেয়া গতকালের আঘাতগুলোর কথা ভোলেনি সে। আবার ওই কুকুরের সামনে যেতে হবে।এবার হয়তো এটা তাকে জীবিত ছাড়বেনা।

“এই তন্দ্রা তুই….”

বিনতি কোনো একটা দরকারে এসেছিল তন্দ্রার কাছে।কিন্তু তাকে এই অবস্থায় দেখে মুখের কথা মুখেই রয়ে গেলো বিনতির।

“সেকি তন্দ্রা! কি হয়েছে তোর? কাঁদছিস কেনো?”

“স্যার বলেছেন উনার কুকুরকে প্রতিদিন খাবার দিতে।ওই কুকুর আমাকে মেরে ফেলবে বিনতি দি।”

বিনতিকে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলো তন্দ্রা।

“আরে পাগলী কিছু হবেনা।আমরা তো আছি।লিও এমনিতে খুব শান্ত।সেদিন স্যার নিজে ওকে তোর উপর আক্রমণ করতে আদেশ দিয়েছিলেন।তাই অশান্ত হয়ে উঠেছিল।এখন আর কিছু করবেনা দেখবি।”

দুই হাতের উলটো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে তন্দ্রা। বিনতির কথা সে আশ্বস্ত হয়েছে অনেকটা।

“আচ্ছা শোন যা বলতে এসেছিলাম।তুই কিন্তু ওই পুরুষ সার্ভেন্টদের কোয়ার্টারের দিকে একদম যাবিনা।মনে থাকবে?”

মাথা হেলায় তন্দ্রা।এমনিতেই পুরুষদের থেকে একটু দূরে থাকে তন্দ্রা।ওরা কখন কি করে বলা যায়না।

“ঘুমিয়ে পড়।অনেক রাত হয়েছে।সকালে ভার্সিটি আছে তো?”

তন্দ্রাকে শুইয়ে দিয়ে বিনতি একটা কাঁথা টেনে দিলো তার গায়ে।তন্দ্রার চোখ ছলছল করে উঠলো।মায়ের আদর সে কোনোদিন পায়নি।এ বাড়িটা তার কাছে মামা বাড়ির চেয়েও ভালো লাগে।এখানে মামা বাড়ির মত রোজ কথা শুনতে হয়না উঠতে বসতে।একটু একটু কাজ করো খাও আর ঘুমাও।কেবল ওই বজ্জাত স্যারটা না থাকলে আর কোনো ভাবনাই ছিলোনা তার।একদম কিনে নিয়েছে তাকে।কি জানি কখনো মুক্তি দেবে কিনা।তার তো এখনো বিয়েই হয়নি।এ কি তাকে বিয়ে করতে দেবে? মনেহয় দেবে না।যাকগে বিয়ে নিয়ে এত উতলাও নয় তন্দ্রা।কেবল পড়তে দিলেই হবে।ভাবতে ভাবতে দুচোখ জুড়ে রাজ্যের ঘুম নেমে এলো তার।

*****

অবশেষে ভার্সিটিতে এসেছে তন্দ্রা।এতদিন পর মনে হচ্ছে যেনো খোলা হাওয়ায় নিঃশ্বাস নিচ্ছে।ও বাড়িতে যতই ভালো লাগুক হাওয়াটা কেমন যেনো গুমোট।স্বাধীনতার লেশমাত্র নেই তাতে।নীলাদ্রি স্যার কি বলবেন,নীলাদ্রি স্যার কি ভাববেন ওসব ভাবতে ভাবতেই দিন কাটে সবার।যাক অন্তত কিছু সময়ের জন্য স্যারের ভয় থেকে মুক্তি পাবে সে। সোশ্যাল পলিসি আর ক্রিমিনাল ল ক্লাস দুটো শেষ করে ভার্সিটি ভবন থেকে বেরিয়ে এলো তন্দ্রা।আজ আর কোনো ক্লাস নেই।ক্লাস শেষে স্টুডেন্টরা অবশ্য সাথে সাথেই বাড়ি চলে যায়না। লাইব্রেরিতে যায় কিংবা ক্যাম্পাসে সময় কাটায়।কিন্তু তন্দ্রার এত শত করার সময় হয়ে উঠেনি কোনোদিন। ভার্সিটি শেষ করেই সোজা বাড়ি ফিরে যেতে হতো।মামীর কড়া আদেশ ছিল।ফিরে গিয়ে রাতের খাবার রান্না করা ,দুপুরের এটো বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার করা আরো নানা কাজ করতে হতো তাকে।এখন অবশ্য এত কিছু করতে হবে না।তবে স্যারের রাতের খাবারটা বানাতে হবে।

“তন্দ্রা,তন্দ্রা!”

পেছন থেকে তাসনোভার গলা পেয়ে থেমে গেলো তন্দ্রা।তাসনোভা তার সহপাঠী আর বেস্ট ফ্রেন্ড।তারা দুজনই প্রথম বর্ষের স্টুডেন্ট।তবে তাসনোভার সাথে তন্দ্রার বন্ধুত্ব হাই-স্কুল থেকে।তাসনোভা তন্দ্রার চেয়ে পাঁচ মাসের বড়।

“হ্যাপি বার্থডে টু ইউ তন্দ্রা ডিয়ার।” তাসনোভা তন্দ্রার গাল দুটো চেপে ওকে বার্থডে উইশ করলো।

হ্যাঁ আজ তন্দ্রার বার্থডে।এতে নতুন কিছু নেই।প্রতি বছর ওর জন্মদিন আসে যায়।কেউ মনেও রাখেনা।কেবল তাসনোভা প্রতি বছর এভাবেই তাকে উইশ করে।

“থ্যাংকস ডিয়ার” তাসনোভার কথায় হেসে প্রতিউত্তর দিল তন্দ্রা।

“নে এটা ধর।”সোনালী ঝলমলে কাগজে মোড়া একটা বাক্স তন্দ্রার দিকে এগিয়ে দিল তাসনোভা।

“কি আছে এতে?”

“এটা তোর গিফট।খুলে দেখ কি আছে এতে।”সোৎসাহে বললো তাসনোভা।

তন্দ্রা বাক্সের রেপারটা খুলে দেখল এর মধ্যে আছে একটা নীল কালির বিদেশি কলম।তাসনোভা তাকে জন্মদিনে কিছু না কিছু উপহার দেয়।তাসনোভাদের আর্থিক অবস্থাও তেমন একটা স্বচ্ছল নয়।তাই খুব একটা দামী গিফট সে দিতে পারেনা।কখনো চুলের ক্লিপ,কখনো খোঁপার ফুল,কখনো ছোট্ট ডাইরি ,কলম এসবই।তবে সেটাও বা কম কি? তার জন্মদিন যে কেউ মনে রাখে এটাই তার জন্য অনেক।তার উপর গিফট।দুচোখ জলে ভরে উঠলো তন্দ্রার।

“আমার মামা ম্যাক্সিকো থাকে।সেখান থেকেই দুটো পাঠিয়েছিল।একটা তোকে দিলাম।সুন্দর না?”

“হ্যাঁ খুব খুব খুব সুন্দর রে।”

তন্দ্রা কখনোই তাসনোভার জন্মদিনে কোনো উপহার দিতে পারেনা।লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করে তার মাঝে মাঝে।

“ক্লাসে তো কথা বলার সময় পেলাম না,করে তুই এত দিন পর ভার্সিটি এলি যে? কথায় ছিলি এতদিন? আমি ভাবলাম বিয়ে টিয়ে হয়ে গেলো নাকি!” মুখ টিপে হাসলো তাসনোভা।

তাসনোভার কাছে কখনো কিছু লুকায় না তন্দ্রা।তাদের বন্ধুত্ব খুব গভীর।যেদিন মামী তাকে বিয়ের কথা বলেছিল সেদিন সে ঠিক করে নিয়েছিল বিয়ের পর যেদিন ভার্সিটি যাবে সেদিনই তাসনোভাকে সব কথা জানাবে।কত বড় ঘরে তার বিয়ে হয়েছে,কেমন করে বিয়ে হয়েছে আর সবচেয়ে বড় কথা কত্ত সুইট একটা বর পেয়েছে। কিন্তু সব পাল্টে গেছে এখন।যে বর হওয়ার কথা ছিল সে হয়ে গেছে মনিব। কাষ্ঠ হাসে তন্দ্রা,

“আরে তুই জানিস তো বাড়িতে কত কাজ।তাই আসতে পারিনি।”

“যা তোর ওই গুন্ডা মামী,আমার ধারণা হয়েছিল হয়তো বেধেই রেখে দিয়েছে তোকে।”

“ছাড়াতে তো গেলিনা।” ভ্রুযুগল একটু উপরে তুলল তন্দ্রা।

“হ্যাঁ তোমাকে ছাড়াতে যাই আর তোমার মামী আমাকেও তোমার সাথে বেধে রাখুক!”

“এই তোর বন্ধুত্ব তাহলে!”কপট রাগের ভান করে বললো তন্দ্রা।

দুই বান্ধবী মজা করতে করতে ভার্সিটির বাইরে বেরিয়ে এলো।

“এই তাসনোভা চল।”

“কোথায়?”

“চল তো।”

তাসনোভাকে নিয়ে তন্দ্রা একটা আইস ক্রীমের দোকানের সামনে দাঁড়ালো।তন্দ্রার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল তার জন্মদিনে তাসনোভাকে ট্রিট দিবে।কিন্তু টাকার জন্য কখনো হয়ে উঠেনি।আজ তার জন্মদিন জানার পর বিনতি দি হাতে একশো টাকার একটা কড়কড়ে নোট ধরিয়ে দিয়েছিল তার জন্মদিনের উপহার হিসাবে।তন্দ্রা নিষেধ করেছিল।কিন্তু বিনতি দি কি তার কথা শুনে?

“কি আইসক্রিম খাবি বলতো?”

“আরে তন্দ্রা কি করছিস বলতো? আমি কিছু খাবোনা।”

“ধেৎ,ভাইয়া কি কি আইস ক্রিম আছে?”

তন্দ্রা এগিয়ে গেলো দোকানের ভেতর। দোকানদার ছেলেটি ফ্রিজের মধ্যে থাকা আইসক্রিম গুলোর দিকে ইশারা করে বললো,

“চকবার,লেমন,কোণ,কাপ।”

“ভাইয়া কোনটার প্রাইস কেমন পড়বে?”ইতস্ততঃ করে জিজ্ঞাসা করলো তন্দ্রা।

“চকবার চল্লিশ,কাপ ত্রিশ,লেমন পঁয়তাল্লিশ।”

“আর কোণ কত?”

“কোণ ষাট।”

“কিরে তোর এতক্ষণ লাগে?”
তাসনোভার অধৈর্য গলা শোনা যায়।তাসনোভা দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল।তন্দ্রা আর দোকানদারের কথোপকন তার কানে পৌঁছালো না।

“এইতো আসছি।”

একটু ভাবলো তন্দ্রা।প্রথমবার তাসনোভাকে ট্রিট দিচ্ছে।এর আগে কিছুই দিতে পারেনি ওকে।কিন্তু টাকাও যে কম।অনেক চিন্তা করে সে বললো,

“আচ্ছা ভাইয়া কোণটাই দিন।”

তন্দ্রা কোণ নিয়ে হাসিমুখে বাড়িয়ে দিল তাসনোভার দিকে। তাসনোভা আইসক্রিমটা হাতে নিয়ে বলল,

“সে কি রে দামী আইসক্রিম কিনলি যে? টাকা কথায় পেলি?তোর মামীকে দেখে যা মনেহয় টাকা তো হাত দিয়ে গলবে না।”

কথাটা যে মিথ্যে না তা তন্দ্রা জানে।কিন্তু বিনিতির কথাটা সে জানাতে চায়না তাসনোভাকে।তাই মুখে একটু হাসি ফুটিয়ে মিথ্যে কথা বললো সে,

“আরে কি বলিস মামী মা কি অতোটাও খারাপ নাকি। মামীমাই টাকা দিয়েছে।নাহলে আমি পাবো কোথায়?”

“যাক তোর মামীর কিছুটা সুবদ্ধি আছে তাহলে।” হাসলো তাসনোভা।

“এই আমি যাই রে,আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে ” বলে তন্দ্রা বাড়ির দিকে পা বাড়াতেই তাসনোভা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,

“তুই ওদিকে কথায় যাচ্ছিস? তোর মামা বাড়ি এদিকে না?”

তাসনোভা আঙ্গুল দিয়ে দুটো রাস্তার দিকে ইশারা করলো। তন্দ্রা আমতা আমতা করে বললো,

“হ্যাঁ তো ওদিকেই তো।আসলে মামী মা কিছু জিনিস কিনে নিতে বলেছিল এদিক থেকে তাই আরকি…”

“ওহ তাই বল।আচ্ছা ঠিক আছে।আমি তাহলে বাড়ি গেলাম।তুইও সাবধানে বাড়ি যাস ঠিক আছে?”

“ঠিক আছে।” হাত নাড়িয়ে তাসনোভাকে ‘বাই’ বললো তন্দ্রা।তাসনোভা দৃষ্টির আড়াল হতেই দ্রুত চৌধুরী ম্যানশনের দিকে পা বাড়ালো তন্দ্রা।

পথে যেতে যেতে তন্দ্রার চোখ পড়ল চুড়ির পশরাওলার দিকে।একটা ঠেলাগাড়িতে হরেক রকম চুড়ি আর মেয়েদের বিভিন্ন শৌখিন সামগ্রী সাজিয়ে বসেছে। চুড়ি কেনার খুব সখ ছিল তন্দ্রার।কিন্তু টাকার জন্য হয়ে উঠেনি।আজ সাহস করে চুড়িওলার কাছে গেলো সে। ক্যানভাসার একজন বৃদ্ধ ব্যাক্তি।বয়স সত্তর হবে। তন্দ্রা পশরা হিসাবে সাজিয়ে রাখা চুড়িগুলো নেড়েচেড়ে পছন্দমতো চুড়ি খুঁজতে লাগলো।একসময় নীল এক সেট চুড়ির দিকে দৃষ্টি গেলো তার।এরকম এক সেট চুড়িই সে খুঁজছিল।মামী যে নীল শাড়িটা দিয়েছিল আসার সময় তার সাথে এ চুড়ি মানবে ভালো।

“এ চুড়ির দাম কত চাচা?”চুড়ির সেটটি হাতে নিয়ে ক্যানভাসারকে জিজ্ঞাসা করলো তন্দ্রা।

ক্যানভাসার বৃদ্ধটি চোখে কম দেখে।বয়স হয়েছে তো।সে চোখ ছোট করে তন্দ্রার হাতের চুড়ির সেটটি দেখে নিয়ে বললো,

“ষাট টাকা মা।”

ষাট টাকা!! অত তন্দ্রা পাবে কোথায়? তার কাছে তো মোটে চল্লিশটি টাকা আছে। সে নিরাশ হয়ে চুড়ির সেটটি ভ্যানের উপর রেখে দিল।বৃদ্ধ তন্দ্রার মুখ দেখে বুঝতে পারলো তার কাছে এত টাকা নেই।সে তার ফোকলা দাঁত বের করে হেসে বললো,

“ঠিক আছে মা তোমার কাছে যা আছে তাই নাহয় দাও।”

বৃদ্ধের কথায় উজ্জ্বল হয়ে উঠলো তন্দ্রার মুখ।

“আমার কাছে মোটে চল্লিশ টাকা আছে চাচা।”

“বেশ তাই দাও।”

বৃদ্ধ একটা কাগজে মুড়ে চুড়ি ধরিয়ে দিল তন্দ্রার হাতে।

“ধন্যবাদ চাচা।”

তন্দ্রা বৃদ্ধকে খুশিমনে ধন্যবাদ জানিয়ে টাকা পরিশোধ করে বাড়ির দিকে হাঁটা দিল।আজ সে ভীষণ খুশি।আজ তার তিনটে ইচ্ছা পূর্ণ হয়েছে।এক তো তাসনোভা ছাড়াও অন্য কেউ তাকে বার্থডে উইশ করেছে।তারপর সে তাসনোভা কে ট্রিটও দিতে পেরেছে আর সে কাঁচের চুড়িও কিনতে পেরেছে।আজ এমন মনে হচ্ছে যেনো সে আকাশে উড়ছে। সাই সাই উ উ উ। তন্দ্রা আনন্দে নাচতে নাচতে ফুটপাত ধরে হাঁটতে লাগলো।

একটু দূরে ফুটপাতের একটু পাশেই আসে দাড়ালো ব্রাউন রঙের একটা গাড়ি।তন্দ্রা সেটার পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই যাচ্ছিল এমন সময় গাড়িটার ফুটপাতের দিকে থাকা দরজাটা খুলে গেলো।আর সেই দরজার ধাক্কায় তন্দ্রা ছিটকে পড়ল ফুটপাতের উপর।তার হাতে থাকা কাঁচের চুড়ি গিয়ে পড়ল সোজা রাস্তার মাঝখানে।বেশ কয়েকটা গাড়ি চলে গেলো চুড়ির উপর দিয়ে। আচমকা এই পরিস্থিতির জন্য তন্দ্রা বা গাড়ির মালিক কেউ প্রস্তুত ছিলনা।তন্দ্রার পায়ে বেশ লেগেছিল।কিন্তু তার খারাপ লাগলো চুড়িগুলোর জন্য।তার এত সাধের চুড়ি।একবার পড়তেই পারলনা।ভেতর থেকে কান্না ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইলো।কিন্তু সে কাঁদলনা।এতটুকু বিষয়ের জন্য কাঁদলে রাস্তার লোকজনের কি ভাববে? যদিও রাস্তার লোকের জন্য বিষয়টা এতটুকু হলেও তার জন্য অনেক বড় বিষয়।

“আই এম সরি।আই’ম রিয়েলি ভেরি সরি।আমি আসলে আপনাকে খেয়ালই করি নি।আমি অত্যন্ত দুঃখিত।”

তন্দ্রা নিজের কনুইয়ের দিকটায় ফু দিচ্ছিল একটু ছিলে গেছে।পুরুষালি গলা পেয়ে সামনে তাকিয়ে দেখলো এক সৌম্য চেহারার পুরুষ ঝুঁকে আছে ঠিক তার মুখের উপর।হালকা বাদামি চুল,নীলচে চোখ, চাপ দাড়ি।দেহে পৌরুষ্যের ছাপ স্পষ্ট।মুখে ফুটে উঠেছে দুঃখের ভাব।তন্দ্রা প্রথমটায় একটু চমকে গিয়েছিল।সেটার স্পষ্ট আওয়াজ বেরিয়েছিল তার মুখ দিয়ে।

“আমি খুবই দুঃখিত।আপনার খুব লেগেছে তাইনা?”

পুরুষটি তন্দ্রার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল যাতে তার হাত ধরে তন্দ্রা উঠতে পারে।কিন্তু তন্দ্রা সেই হাত অগ্রাহ্য করে নিজেই উঠে দাড়ালো।

“না ঠিক আছে।ভুল আমারও ছিল।আমিও খেয়াল করিনি।”

“আমি আসলে ফোন ঘাটছিলাম আর নামছিলাম তো তাই আপনাকে খেয়াল করিনি।আমি সত্যিই অনেক দুঃখিত।আপনার কোনো জিনিস পড়ল রাস্তায়।মনেহয় ভেঙে গেছে।কি ছিল ওটাতে।”

“তেমন কিছু না।”

“আমাকে বলতে পারেন।আমি আপনাকে আবার কিনে দেবো ।আমি আসলেই অনেক লজ্জিত।”

“না ঠিক আছে।তেমন জরুরি কিছু ছিলোনা।আসি আমি।”

তন্দ্রা আর কোনো কথা শোনার অপেক্ষা না করেই ছুটে চলে এলো সেখান থেকে।চোখে তার জল টলটল করছিল।কিন্তু সে পুরুষটিকে তা দেখতে দিতে চায়না।তাই এমন করে পালিয়ে এলো।পুরুষটি আর কিছু বলার সুযোগ পেলনা।তন্দ্রা চলে গেলে সে রাস্তার উপর পড়ে থাকা ভাঙ্গা চুড়ির প্যাকেটটি হাতে তুলে নিল। প্যাকেটের ভেতরটা দেখে মুচকি হাসলো সে। নিজের অজান্তেই তার হাত চলে গেলো বুকের বাম পাশটায়।কি ব্যাপার ,হৃদয় এত দ্রুত স্পন্দিত হচ্ছে কেন? পালপিটেশন নাকি!

গাড়ি থেকে নেমে এল আরেক ব্যক্তি।হাতে ফাইল ,গায়ে লাল কালো কোট।সে গিয়ে পুরুষটির হাতে থাকা প্যাকেটটির ভেতর একবার উঁকি দিয়ে আরেকবার তাকালো সেই পুরুষটির দিকে।সে এখনো বুকে হাত দিয়ে কিছু অনুভব করার চেষ্টা করছে।লাল কালো কোট পরা লোকটি রসিকতার হাসি হেসে তার উদ্দেশ্যে বললো,

“স্যার এ কিন্তু ৫১২ নাম্বার ছিল,একে নিশ্চয় মনে ধরেছে আপনার।”

পুরুষটি বুক থেকে হাত সরিয়ে মুচকি হাসলো,

“কি যে বলো, এই ইভান খান এত সহজে কারো জালে ফাঁসে না।”

“তা বটে স্যার।”

“আ..শুনো ঠিক এই রকম এক সেট চুড়ি কিনে আনো।”

“কেন স্যার?”

“যদি আবার কোনোদিন তার সাথে দেখা হয় তবে ক্ষতিপূরণ দেবো।আমি কারো ঋন রাখিনা।”

রাস্তার অপরপাশে দাড়ানো একটা ব্ল্যাক অ্যাম্বাসেডর থেকে তাদের দুজনকে ফোকাস করছিল এক শ্যেন দৃষ্টি।দুজনের কেউই তাকে লক্ষ করলোনা।

চলবে…..

#মেঘে_ঢাকা_তারা
#পর্ব_১০
#আয়াত_আফরা

হুড়মুড় করে নিজের কেবিনে ঢুকে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো নীলাদ্রি।তুলয় তখন ঠোঁটে লিপস্টক লাগাচ্ছিল।নীলাদ্রিকে কেবিনে ঢুকতে দেখে সে সব ফেলে দ্রুত নীলাদ্রির সিডিউল নিয়ে তার কেবিনে এসে ঢুকলো।

“গুড আফটার নুন স্যার”

“হু আফটার নুন।”

“স্যার আপনার একটা মিটিং আছে পাঁচটায় আরেকটা সাতটায় আর শেষটা নয়টায়।”

“সবগুলো ক্যান্সেল করো।”

“ক্যান্সেল করবো!”

নীলাদ্রির কথায় অবাক হলো তুলয়।নীলাদ্রি তো কখনো ফিক্সড মিটিং ক্যান্সেল করেনা।আজ কি হলো!

“স্যার।”

“বল।”

“স্যার আজকের ম্যাগাজিনটা আপনি পড়েছিলেন?”

“না সকালে তাড়াহুড়ায় সময় পাইনি।কি লিখেছে?”

“স্যার আরেকটা কোম্পানি আমাদের সাথে কম্পিটিশনে চলে এসেছে।যদি আমরা এখনি কিছু না করি তাহলে ওরা আমাদেরকেও পিছনে ফেলে দেবে।”

“কোন কোম্পানি?”

“খান ইন্ডাস্ট্রিজ।ওটার সিইও ইভান খান।খুব বিচক্ষণ ব্যাক্তি।যেখানে গত বছর রাঙ্কিংয়ে সে কোম্পানির কোনো অস্তিত্ব ছিল না এক বছরে আমাদের সাথেই টক্করে চলে এসেছে।খুব দ্রুত প্রোগ্রেস করছে ওরা।”

“আমাদের প্রোডাক্টে যে নতুন ফিচারগুলো যোগ করতে বলেছিলাম করা হয়েছে?”

“কাজ চলছে স্যার।”

“হোয়াট দা কাজ চলছে?মুষ্টিবদ্ধ হাত দিয়ে টেবিলে আঘাত করলো নীলাদ্রি।আর কত বছর লাগবে কাজ শেষ হতে? গত এক মাস যাবত চলছে চলছে শুনে আসছি।এক সপ্তাহের মধ্যে ওই কাজ শেষ চাই।সামনের সপ্তাহের মধ্যে প্রোডাক্টের নতুন মডেল নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে।গেট ইট?”

“ইয়েস স্যার।”

” রাঙ্কিংয়ে টপে থাকবে কেবল এই নীলাদ্রি চৌধুরী।তাকে পেছনে ফেলার অ্যাবিলিটি যেনো করো না থাকে। ”

“ওকে স্যার।”

“শোনো ,শিশিরকে ডেকে দাও।আমার ওর সাথে জরুরি কথা আছে।”

“কোন কথা স্যার?”

“সেসব কি তোমাকে বলতে হবে?কল হিম অ্যান্ড গেট লস্ট।”

তুলয় আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ বেরিয়ে যায়।

******
স্কোয়াশ কোর্টে একা স্কোয়াশ প্র্যাকটিস করছিল ইভান খান।বলটা সামনের দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে আবার ফিরে আসছিল তার দিকে।দ্রুত আরো দ্রুত।ফিরে আসা বলটাকে সে সর্বশক্তি দিয়ে ছুড়ে দিচ্ছিলো দেয়ালের দিকে।হঠাৎ বেসামাল হয়ে হোঁচট খেয়ে পড়লো সে।বলটা মিস হয়ে গেলো তার।

“শিট!”

বিরক্তি প্রকাশ করলো ইভান।সারা শরীর বেয়ে টপ টপ করে ঘাম ঝরে পড়ছে।পেছনেই পানি নিয়ে দাড়িয়ে ছিল তার সেক্রেটারি মুন্সী।ইভানের খেলা থামতেই সে তার দিকে পানি এগিয়ে দিল।ইভান কিছুটা পানি পান করল আর কিছুটা মাথার উপর ঢেলে দিলো।মুন্সী এতক্ষণ চুপচাপ ইভানের খেলা দেখছিল।এখন সুযোগ পেয়ে বললো,

“স্যার আপনি তো খুব ভালো খেলেন।তবে একা খেলেন কেনো?কোনো পার্টনারের সাথে তো খেলতে পারেন নাকি?আপনি শুধু একবার বলুন।আমি বড় বড় কম্পিটিটর হাজির করবো আপনার সামনে।”

ইভান মুচকি হাসে,
“মুন্সী আমার কম্পিটিশন আমার নিজের সাথে।আমি হারবো নিজের কাছে আর জিতবো পুরো দুনিয়ার কাছে।”

“আপনার ভাবনার প্রশংসা করতে হয় স্যার।”

“স্কোয়াশের জন্য বলছো?”

“না স্যার,শুধু খেলার জন্য নয়।যেভাবে আপনি খান ইন্ডাস্ট্রিকে চোখের নিমিষে সাফল্যের এত কাছাকাছি নিয়ে এসেছেন সেট সত্যিই অভাবনীয়।এখন আপনার সাফল্যের সামনে কেবল একজনই আছে।নীলাদ্রি চৌধুরী।তাকে ক্রস করে যেতে পারলে আমাদের কোম্পানি দেশের টপে চলে আসবে।”

“দেখো বিজনেস রাঙ্কিং নিয়ে আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই মুন্সী।আমি কেবল দেশকে বেস্ট সার্ভিস দিতে চাই।আমাদের কোম্পানির যে নতুন ব্রাঞ্চ খোলার কথা ছিল সেগুলোর কি খবর?”

“স্যার জায়গা দেখে নিয়েছি।এখন শুধু কাগজপত্র তৈরি হবার বাকি।”

“দ্রুত সব করে নাও,আগামী দু মাসের মধ্যেই যেনো কাজ পুরোপুরি কমপ্লিট হয়ে যায়।”

“জি স্যার।”

“আর শুনো মুন্সী!”

“জি স্যার বলুন।”

“তোমাকে যে চুড়ি কিনতে বলেছিলাম কিনেছো?”

“জি স্যার।কিন্তু ওগুলো তো খুব সস্তা চুড়ি।”

“দাম কি শুধু টাকা দেখে হয় ? তার তো এই চুড়িগুলো পছন্দ।তাই আমার কাছে এগুলোই মূল্যবান।”

“স্যার চুড়ি তো কিনে রাখলাম।কিন্তু তার সাথে আপনার আবার দেখা হবে এর কি গ্যারান্টি?”

“হবে মুন্সী হবে।শহরটা এতটাও বড় নয় যে আর কোনোদিনই দেখা হবেনা।থাকে যদি বন্ধের মন ,গাঙ পেরুতে কতক্ষন?”

“স্যার আপনি যদি তখনই তার পিছু করতেন তাহলে হয়তো তার নাম পরিচয় জানতে পারতেন।”

“হয়তো।তবে লজিক্যালি ভেবে দেখো,হঠাৎ দেখা হয়েছে আর তখনই যদি তার পিছু করতাম তাহলে তো ও কিডন্যাপার ভেবে লোকজন ডেকে পুলিশে ধরিয়ে দিত।”

“তাহলে স্যার অবশেষে মনে ধরলো কাউকে। তার মানে পাঁচশো বারো হলো আপনার লাকি নম্বর।”

“নাও হতে পারে।”

“হ্যাঁ নাও হতে পারে।তবে আমার মনেহয় না এই ইভান খানকে কোনো মেয়ে রিজেক্ট করবে।”

“আজ তো প্রথম দেখা হলো,আর তুমি এত কিছু ভেবে নিলে?”

“স্যার আমি কোথায় আপনিই তো ভাবছেন।নয়তো আপনি যেখানে কাজের চাপে নাওয়া খাওয়া ভুলে যান সেখানে ওই চুড়ির কথা কি করে মনে রাখলেন?”

“ওটাতো ঋণ।আমি ওর জিনিস নষ্ট করেছি তাইনা?”

“স্যার আপনাকে দিয়ে স্বীকার করানো অনেক কঠিন।”

হাসে ইভান,চলো ফেরা যাক।রাত নামছে।

******

“হ্যাপি বার্থডে টু ইউ তন্দ্রা।” বিনতিসহ বাকি সার্ভেন্টরা উইশ করলো তন্দ্রাকে।বিনতি একটা ছোট কেক বানিয়েছে।তার পাশে একটা সাধারণ মোমবাতি জ্বালিয়েছে। কেকটা রেখেছে ডাইনিং টেবিলের উপর।তন্দ্রা এগুলো দেখে অনেক খুশি।সে কখনো ভাবেনি তার বার্থডে সেলিব্রেট করা হবে।

“থ্যাংক ইউ তোমাদের সবাইকে।আজকের দিনটা আমার বেস্ট দিন ছিল।”

“তাই বুঝি? আয় আয় কেকটা কেটে নে।”বিনতি তাড়া দিল তন্দ্রাকে।

“কিন্তু বিনতি দি সৃষ্টি দি যে এলোনা। আমি ওকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে আসি ঠিক আছে?”

“একদম না। যার আসার ইচ্ছা নেই তাকে জোরাজুরি করে আনার কোন দরকার নেই।” তন্দ্রাকে থামিয়ে দিল বিনতি।

তন্দ্রা বুঝতে পারলোনা সৃষ্টির না আসার কারণ কি।অসুস্থ নাকি?হবে হয়তো।

“নে কেক কাট জলদি।আবার কখন স্যার চলে আসবেন।”

ও হ্যাঁ স্যারের কথা তো ভুলেই গিয়েছিল তন্দ্রা।তন্দ্রা আর দাড়িয়ে থাকলোনা । মোমবাতিটা নিভিয়ে ছুরিটা তুলে নিল হাতে। ছুরিটা কেকে ছোঁয়াতেই যাবে এমন সময় কলিং বেলের কর্কশ শব্দে বুকটা কেঁপে উঠলো তার। নীলাদ্রি চলে এসেছে।

“দি স্যার চলে এসেছেন!স্যার চলে এসেছেন! এখন কি হবে ?”

হাত থেকে ছুরিটা রেখে লাফালাফি শুরু করলো তন্দ্রা। বিনতি ওকে শান্ত করলো।তন্দ্রা বিনতির পাশে গিয়ে নিজেকে যথাসম্ভব আড়াল করার চেষ্টা করতে লাগলো। দরজা খুলে যেতে প্রথমে দুলকি চলে ঘরে ঢুকে এলো নীলাদ্রি।মুখের ভাব দেখে স্পষ্ট বোঝা গেলো তার মন মেজাজ খুব একটা ভালো নেই। ঘরে ঢুকেই সোজা তার চোখ গেলো ডাইনিং টেবিলের দিকে।চোখ যেত না যদি না ওখানে এতজন মানুষ জটলা করে থাকতো।নীলাদ্রি এগিয়ে গেলো সেদিকে।টেবিলে কেক মোমবাতি দেখে বিষয়টা বুঝতে খুব একটা অসুবিধা হলনা তার।তবে সে তন্দ্রার জন্মদিনের ব্যাপারটা জানে সেটা বুঝতে না দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,

“কি হচ্ছে এখানে?”

তন্দ্রার গলা ভয়ে শুকিয়ে গিয়েছিল।চলে এসেছে রাক্ষসটা।না জানি কি করবে এখন। বিনতি সবিনয়ে জবাব দিল,

“স্যার এই মেয়েটার জন্মদিন তো তাই পালন করছিলাম।তন্দ্রার দিকে ইশারা করলো বিনতি।
বেশিক্ষণ লাগবেনা স্যার।শুধু দশ মিনিট।”

“হুঁ।”

একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তন্দ্রাকে দেখে নিল নীলাদ্রি।ভয়ে জড়সড় হয়ে দাড়িয়ে আছে।পরনে একটা নীল শাড়ি।আগেও দেখেছে এটা।এই একটাই শাড়ি আছে নাকি মেয়েটার?মানিক হালদারের একমাত্র মেয়ে তার বেশভূষা এমন কেনো?পাঁচ কোটি টাকা নিয়ে কি করেছে হালদার?না নতুন বাড়ি করলো না মেয়ের বিয়েতে কোনো জাঁকজমক।আর এই মেয়ের একাউন্টেও তো এত টাকা ট্রান্সফার করা হলো।সে টাকা কি কর্পূরের মত উবে গেলো নাকি? কিছু একটা জটিল রহস্য আছে এখানে।বাপ মেয়ে কি ষড়যন্ত্র করেছে? নাকি……

“দ্রুত এসব হাবিজাবি শেষ করে টেবিলে গুছাও।আমি ফ্রেস হয়ে ডিনার করতে আসছি।কুইক।যদি দেরি হয়….

টেবিলে রাখা ছুরিটা তুলে নিয়ে সজোরে কেকের মাঝ বরাবর প্রোথিত করলো নীলাদ্রি। কেঁপে উঠলো তন্দ্রা।নীলাদ্রি ক্রুর নজরে তাকে একবার দেখে নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল।

“নে তন্দ্রা তাড়াতাড়ি কর স্যার খেতে আসছেন।”

অত সাধের কেকটার এই অবস্থা দেখে মায়া লাগলো তন্দ্রার।সে কেকের মাঝ থেকে ছুরিটা তুলে নিয়ে সেটা সুন্দর করে কেটে সবাইকে খেতে দিলো।

“দিদি বালু জি আর তৌসিফ জি-র জন্য কেক রাখবো?”

“ওরা কি এই কেক খাবে?”

“দিয়েই দেখি না।খাবার ইচ্ছা তো উনাদের,না দিলেও তো খারাপ দেখায় তাইনা?”

“আচ্ছা ঠিক আছে তুই কেটে দে প্রিয়া গিয়ে দিয়ে আসছে।”

তন্দ্রা খুশিমনে কেক কেটে দুটো পিরিচে সাজিয়ে দিল বালু আর তৌসিফের জন্য। আর বাকি একটু কেক সে ফ্রিজে রাখলো।

“এটুকু কার জন্য রাখলি?”

“সৃষ্টি দি আর স্যারের জন্য।সৃষ্টি দির তো শরীর ভালো নেই আর স্যারের মুড ভালো নেই।তাই উনাদের দুজনকে একটু পরে দিবো।”

বিনতি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।যে দুটো মানুষ তাকে পছন্দ করেনা সে মানুষগুলোর জন্যও কেক রাখতে ভুলেনি মেয়েটা।

ঠিক পনেরো মিনিট পর ডিনার করতে এলো নীলাদ্রি।তার দুপাশে বসলো বালু আর তৌসিফ।বেশ সময় নিয়ে খায় নীলাদ্রি।তার কোনো তাড়া নেই।পাশে দাড়িয়ে সার্ভ করছে বিনতি।বাকিদের ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছে।ডিনার শেষ করে ঘরে যাওয়ার সময় নীলাদ্রি বলে গেলো,

“ওই মেয়েটাকে আমার ঘরে পাঠিয়ে দিও।”

নীলাদ্রির মনে কি চলছে সেট বুঝলোনা বিনতি।তবে তন্দ্রাকে কথাটা বলতেই তার মুখ শুকিয়ে গেলো।কি জানি আবার কেনো ডাকছে।

“শোন তন্দ্রা স্যার কেন ডাকছেন দেখে আয় এরপর আমরা একসাথে ডিনার করবো।”

তন্দ্রা জানে নীলাদ্রির রুমে একবার গেলে সে অত তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেবে না।তাই সে বিনতিকে বললো,

“আরে না না বিনতি দি।তুমি ডিনার করে নাও।আমি খেয়ে নেব পরে।”

“কিন্তু তুই একা কি করে খাবি?”

“বারে আমি কি ছোট বাচ্চা নাকি?”

“খাবার পর টেবিলও তো গুছিয়ে রাখতে হবে নাকি?”

“সে আমি ঠিক গুছিয়ে নেব।তুমি খেয়ে ঘুমিয়ে পরো যাও।তোমার উপর অনেক ধকল গেছে যাও যাও।”

বিনতিকে ঠেলে খেতে পাঠিয়ে দিল তন্দ্রা।নিজে কেকের একটা টুকরো কেটে নীলাদ্রির জন্য সেটা নিয়ে তার ঘরের দিকে এগুলো।বুকটা ধড়াস ধড়াস করছে।জঘন্য একটা অনুভুতি।কি জানি আজ কি হতে চলেছে তার সাথে। নীলাদ্রির দরজায় টোকা দিলো তন্দ্রা।

“কাম ইন।”

দরজা খুলে ভেতরে উঁকি দিল তন্দ্রা।মেঝের দিকে তাকানোটা তার একরকম অভ্যাস হয়ে গেছে।যদিও রুমের আলো এত কম যে তাতে মেঝেতে কি আছে না আছে বোঝা যায়না।তন্দ্রা গুটি গুটি পায়ে ভেতরে গেলো।চোখগুলো একটু ছোট ছোট করে দেখে নিল আশপাশটা।যাক বাবা কুকুরটা ঘুমাচ্ছে।স্যারকে রাগিয়ে কাজ নেই।যদি স্যারের গলা পেয়ে জেগে যায়!সকালে অনেক ভয়ে ভয়ে এটাকে খাবার দিয়েছে তন্দ্রা।তখন কিছু করেনি।একদম ভদ্র ছেলে হয়ে ছিল। দেখে বোঝাই যায়নি এটা সেদিনের কুকুরটা।নীলাদ্রি সোফায় বসে আগেরদিনের মত ড্রিঙ্কসের গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে।তন্দ্রা ভয়ে ভয়ে তার দিকে কেকটা এগিয়ে দিল।

“স্যার এটা আপনার জন্য এনেছিলাম।”

বাহ এত কিছুর পরেও এই মেয়ে তার জন্য কেক নিয়ে এসেছে।এই মেয়ের বিন্দুমাত্র সহবৎ যদি এর বাবা শিখে নিতো।

“রাখো।”

টি-টেবিলের দিকে ইশারা করলো নীলাদ্রি। তন্দ্রা কেকটা টেবিলের উপর রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। নীলাদ্রি হাতের খালি গ্লাসটায় আবার ড্রিঙ্কস ভর্তি করতে করতে জিজ্ঞাসা করলো,

“মিস তন্দ্রা,আপনার বাবা কি মানিক হালদার?”

হঠাৎ নীলাদ্রির করা এই প্রশ্নের মাথামুন্ডু বুঝলোনা তন্দ্রা।এই প্রশ্ন কেনো জিজ্ঞাসা করছেন স্যার?

“হেই ইউ,আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করছি।”

তন্দ্রা মাথা হেলালো,
“হ্যাঁ স্যার।”

“তোমার কোনো বোন আছে?”

তন্দ্রা ভাবলো কিছুক্ষণ। হ্যাঁ কি না বলবে বোঝার চেষ্টা করতে লাগলো। নীলাদ্রি আর তাড়া দিলোনা।চোখে চোখ রেখে দারুন মিথ্যা বলতে পারে এই মেয়ে।তন্দ্রাকে সে আর ঘাটালোনা।ওর শাস্তির ব্যাবস্থা সে করবে।আর তো মোটে এই একটা রাত।নীলাদ্রি একটা প্যাকেট ছুঁড়ে দিলো তন্দ্রার দিকে।

“কি আছে এতে স্যার?”

“খুলে দেখ।”ড্রিঙ্কসে চুমুক দেয় নীলাদ্রি।

তন্দ্রা প্যাকেট খুলে দেখে অবাক হয়ে যায়।একজোড়া সোনার চুড়ি আছে তাতে।অত দামী জিনিস স্যার তাকে কেনো দিচ্ছেন?

“স্যার আপনি এগুলো….”

“আমি চাইনা আমার দাসী রাস্তায় সামান্য দু টাকার চুড়ির জন্য কান্নাকাটি করুক।”

“স্যার আমি এগুলো নিতে পারবোনা।”

“হ্যাঁ আমি জানি।তুমি দামী জিনিস নিতে পারবেনা।রাস্তার দু টাকা দামের জিনিসগুলোই তোমার পছন্দ।অত দামি জিনিস পাঠানোর পরেও পড়ে এলে কিনা নোংরা ময়লা শাড়ি! কেনো?তোমার বাবা মার কি এতটুকু সামর্থ্য নেই যে নিজের একমাত্র মেয়েকে ভালো শাড়ি গয়না পরিয়ে শ্বশুরবাড়িতে পাঠাতে পারে?

শ্বশুরবাড়ি! শব্দটা মনে গিয়ে আঘাত করলো তন্দ্রার।কিসের শ্বশুরবাড়ি? তাকে তো মামা এখানে বিক্রি করে দিয়েছেন।সেটা তো একটা গেম ছিল যেটা নীলাদ্রি আর তার মামা মিলে তার সাথে খেলেছে।তাহলে সেই প্রসঙ্গ আবার কেনো তুলছেন স্যার?এই চুড়ির কথাটাই বা স্যার কি করে জানলেন।তার পিছু করছিলেন নাকি?

“কি লুকাচ্ছ আমার থেকে?”

নীলাদ্রির শীতল গলায় চমকে উঠলো তন্দ্রা।সে আবার কি লুকালো?

“আমি কি লুকাবো স্যার?”

নীলাদ্রি এবার উঠে দাড়ালো। এক পা দুপা করে এগিয়ে আসতে লাগলো তন্দ্রার দিকে।তন্দ্রা ধীরে ধীরে পিছুতে লাগলো।একসময় দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলো তার।তখনও এগিয়ে আসছে নীলাদ্রি।কাছে আরো কাছে।তন্দ্রার থেকে কেবল কয়েক সেন্টিমিটার ব্যাবধানে এসে থামলো নীলাদ্রি।তন্দ্রার দুপাশের দেয়ালে হাত রেখে সে হাতের মাঝখানে তাকে বন্দী করে নিল।ধীরে ধীরে নিজের ঠোঁটগুলো নামিয়ে আনলো তন্দ্রার ঠোঁট বরাবর। নীলাদ্রির দেহের পুরুষালী গন্ধটা এখন নাকে লাগছে তন্দ্রার।এসব কি করছেন স্যার! ভয়ে কুকড়ে গেল তন্দ্রা।

“তন্দ্রা ইউ আর মার্কড।খবরদার যদি তোমাকে অন্য কোনো পুরুষের সাথে দেখেছি তো।ফল কিন্তু খুব একটা ভালো হবেনা।তুমি কেবল আমার কেনা দাসী।শুধু আমার।”

তন্দ্রার চোখের দৃষ্টি উদ্ভ্রান্ত।নীলাদ্রি তার চোখে চোখ রেখে একইভাবে দাড়িয়ে আছে।তন্দ্রার চোখ জলে ভরে উঠলো এবার। নীলাদ্রির খুব হাসি পেলো।মেয়েরা বেশি কাঁদে সেটা সে জানতো।তবে এতটাও সেটা তার জানা ছিল না।এই মেয়েকে তো সিরিয়ালে নেয়া উচিত।কেঁদে কেঁদেই সিরিয়ালের টিআরপি হাই করে দেবে।নীলাদ্রি তার হাত সরিয়ে নিল।

“এবার তুমি যেতে পারো।”

তন্দ্রার যেনো ধড়ে প্রাণ ফিরে এলো।অবশেষে মুক্তি!চুড়িগুলো সেখানেই ফেলে সে এক ছুটে নীলাদ্রির ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।

সিড়ি দিয়ে নেমে আসার সময় বারবার পেছনে তাকাচ্ছিলো তন্দ্রা।বলা যায়না পিশাচটা তার ওই কুকুরকে না লেলিয়ে দেয়।ডাইনিং টেবিল অগোছালো হয়ে পড়ে আছে।তন্দ্রা আর খেলো না।ও ঘরে গিয়ে যা হলো তাতেই তার পেট ভরে গেছে।আর গলা দিয়ে কিছু নামবে না।তন্দ্রা সুন্দর করে টেবিলটা গুছালো।আজ তার রান্নাকে খারাপ বলেননি স্যার।কোনো মন্তব্যও করেন নি। রাক্ষসটার মন মর্জি বুঝা বড় মুশকিল।সব গুছিয়ে নিশ্চিন্তে তার কবুতরের খোপে চলে গেলো তন্দ্রা।

উপর থেকে তাকে লক্ষ্য করছিল নীলাদ্রি। স্ট্রেঞ্জ!মানিক হালদারের মেয়ে এত গুছালো!তার সাথে এত ভালো রান্নাও জানে! মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে বলেই কি সব শিখেছে?নাকি অন্য কিছু আছে?সো মিস্ট্রিয়াস!

চলবে……