শুধু তুমি আমার পর্ব-০৪

0
581

#শুধু_তুমি_আমার
#পর্ব_৪
#Fariba_Ahmed

এসএন তার বডিগার্ডকে বললো,

–আরিফ খানের কাছে যাবো আমি,একাই যাবো।তোমরা এখানে ওয়েট করো।

–কিন্তু স্যার উনি আপনার কোনো ক্ষতি করতে চাইলে,

–ডোন্ট ওরি।সে আমার কোনো ক্ষতি করবে না।

–ঠিকাছে স্যার।

এসএন আরিফ খানের রুমে চলে গেলো।

–হ্যালো মিস্টার আরিফ খান।মে আই কাম ইন?

–ইয়েস।বসুন।কে আপনি?

–এসএন।আমার নাম এসএন।

–আপনার পরিচয়?

–আপনার ছেলে রাহুল খান যে ছবি গুলোকে তার আঁকা বলেছে সেই সব ছবি আমার আঁকা।

–হোয়াট?সেগুলো আমার ছেলের আঁকা।

–নো মিস্টার খান।আমি সত্যিটা জানি।

–কি প্রমাণ আছে যে সেগুলো আপনার আঁকা?

–আমিও তো আপনাকে জিজ্ঞাসা করতে পারি আপনার কাছে কি প্রমাণ আছে যে ছবিগুলো আপনার ছেলের আঁকা?

–প্রমাণ আছে।সবাই বিশ্বাস করেছে যে ছবিগুলো আমার ছেলেরই আঁকা।

–মিস্টার খান একটা কথা কি জানেন,পীপিলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে।

–মানে?

–কিছু না, আপনি বুঝবেন না।দুইদিন পরে একটা আর্ট কম্পিটিশন আছে।সেখানেই প্রমাণ হয়ে যাবে।দুধ আর পানি আলাদা হয়ে যাবে।আপনার ছেলেকে নিয়ে চলে আসবেন সেখানে।

এসএন এর কথা শুনে আরিফ খান ঘামতে শুরু করে।

–একি মিস্টার খান?আপনি এই শীতের মধ্যেও ঘামছেন কেন?

–না না কিছু না।

–ঠিকাছে তাহলে চলে আসবেন আপনার সো কল্ড ছেলেকে নিয়ে।আজ আমি আসি।

–হুম অবশ্যই।আসুন আপনাকে এগিয়ে দেই।

–ওকে।চলুন।
————
–মেঘু এখন কি করবি?এভাবে তো ভার্সিটি যেতে পারবি না?

–তুই ভার্সিটি চলে যা।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

–তাড়াতাড়ি আসিস কিন্তু।

–ঠিকাছে।

বাসায়…

মেঘকে কাদা মাখা অবস্থায় দেখে মেঘের মা অবাক হয়ে যায়।

–কীরে মেঘ,তোর এই অবস্থা কি করে হলো?

–একটা হনুমানের জন্য এরকম হয়েছে আম্মু।(রেগে)

–মানে,বুঝলাম না।

–এখন সময় নেই আম্মু।আমি ফ্রেশ হয়ে ভার্সিটি যাবো।এসে তোমাকে সব বলবো।

–ঠিকাছে, যা তাড়াতাড়ি কর।

–হুম।

কিছুক্ষণ পরে—

–ধুর আর ভালো লাগে না।ওই হনুমানটার জন্য আজকে আমার এতো লেট হয়ে গেলো।উনাকে সামনে পেলে আমি উগান্ডা পাঠিয়ে দিতাম।

নিচে তাকিয়ে নিজের ব্যাগ ঠিক করতে করতে ভার্সিটিতে ঢুকছিল মেঘ।আর তখনই একটা ছেলের সাথে ধাক্কা খায়।ছেলেটি মেঘের কোমড় জড়িয়ে ধরে।মেঘ ভয় পেয়ে চোখ মুখ খিচে ছেলেটির শার্ট খামছে ধরে।কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে তাকে একটি ছেলে ধরে আছে।চোখে সানগ্লাস,কপাল পর্যন্ত চুল,মুখে মাস্ক।ছেলেটি হচ্ছে এসএন।আরিফ খানের সাথে কথা বলে গেট দিয়ে বের হচ্ছিল আর তখনই মেঘের সাথে তার ধাক্কা লাগে।এই প্রথম মেঘ কোনো ছেলের এতো কাছে।ওর হার্টবিট যেনো খরগোশের গতিতে দৌঁড়াচ্ছে।এসএন ও এক পলকে তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে।ওর হার্টবিটও যেনো আজকে ওর কথা শুনছে না।মেঘের চোখ দুটো থেকে চোখ সরাতেই মন চাচ্ছে না।হারিয়ে যাচ্ছে মেঘের কাজল কালো চোখে।মনে হচ্ছে এই চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারবে।দুজনের কাছে মনে হচ্ছে সময়টা এখানেই থমকে গেলে ভালো হতো।

–মিস্টার এসএন আপনি ঠিক আছেন?এই মেঘ দেখে চলতে পারো না?

আরিফ খানের ডাকে হুশে আসে দুজন।

–আই এম ফাইন মিস্টার আরিফ খান।

–সরি স্যার।আসলে আজকে আমার দেরি হয়ে গেছে তাই তাড়াতাড়ি করে আসতে গিয়ে…

–সরি আমাকে না বলে মিস্টার এসএন কে বলো।

–সরি স্যার,প্লিজ ক্ষমা করে দিন।(এসএন কে উদ্দেশ্যে করে)

–ইটস ওকে।তুমি যাও।

–ঠিকাছে।

বলে মেঘ চলে গেলো।

–আমি আসি মিস্টার আরিফ খান।আর্ট কম্পিটিশনে দেখা হচ্ছে।(হ্যান্ডশেক করে)

–ইয়াহ সিউর।(আমতা আমতা করে)

এসএন ভার্সিটি থেকে বের হয়ে গাড়ির কাছে গেলো।গাড়ির সামনে গিয়ে আবার পিছনে তাকালো।দূর থেকে মেঘকে এক পলক দেখলো।দেখে গাড়িতে চরে বসলো।

–এই মেয়েটাকে দেখে কেনো আমার হার্টবিট এতো বেড়ে গেলো?এরকম তো আমার মায়াবিনীর কাছে গেলে হতো।আর ওই চোখ দুটো,ওই চোখ দুটোতে কেন আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলছিলাম?না না হয়তো আমি আমার মায়াবিনীর কথা অনেক ভাবছিলাম তাই হয়তো এমন মনে হচ্ছে।এই মেয়ে আমার মায়াবিনী হতে পারে না।

মনে মনে বলে নিজে নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে গাড়ি চালিয়ে চলে গেলো।

অন্যদিকে….

–এই ছেলেটার কাছে গিয়ে আমার এরকম কেনো লাগছিল।অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করছিল।খুব আপন মনে হচ্ছিল তাকে।(মেঘ)

এসব ভাবতে ভাবতে ক্লাসে চলে গেলো মেঘ।ক্লাসে বসে আছে মেঘ কিন্তু তার মন ক্লাসে নেই।মেঘকে আনমনে বসে থাকতে দেখে মুক্তা কিছুটা অবাক হলো।কারণ মেঘ কখনো ক্লাসে অমনোযোগী থাকে না।মেঘকে ধাক্কা দিয়ে মুক্তা বললো,

–মেঘু কিছু কি হয়েছে?তোকে অন্যমনস্ক লাগছে।আন্টি কি বকেছে তোকে?

–না রে।আম্মু কিছু বলেনি।

–তাহলে?

–কিছুই হয়নি।আবার গোসল করতে হয়েছে তো তাই শরীরটা ভালো লাগছে না।

–ওও,না আসলেই তো পারতি।বেশি খারাপ লাগছে?

–না,ঠিক আছি আমি।চল মাঠে গিয়ে বসে থাকি।ক্লাস করতে ভালো লাগছে না।

–ঠিকাছে চল।
—–

–ড্যাড,তুমি শুধু শুধু এতো চিন্তা করছো।ওই এসএন আমার কিছুই করতে পারবে না।ওর কাছে কোনো প্রমাণ নেই।(রাহুল)

–এসএন বলেছে এই ছবিগুলো নাকি ওর আঁকা।(আরিফ খান)

–কাম ওন ড্যাড।দেখো ড্যাড আমরা যে উদ্দেশ্যে এই ছবিগুলো আমার বলছি হতে পারে ওই এসএন ও একই উদ্দেশ্যেই বলছে ছবিগুলো ওর আঁকা।(রাহুল)

–হুম এটা হতে পারে।কিন্তু ও যদি প্রমান করে দেয় যে আমরা মিথ্যা বলছি।(আরিফ খান)

–চিন্তা করো না।বেশি বাড়াবাড়ি করলে ওকেও আমরা আমাদের দলে নিয়ে নিবো।(রাহুল)

–ঠিক আছে।আর শুনো দুইদিন পর যে আর্ট কম্পিটিশন আছে ওটা নিয়ে কিছু ভেবেছো।সবাই তোমার আর্ট দেখার জন্য আসবে।কিভাবে কি করবে?(আরিফ খান)

–এটা তুমি আমার উপর ছেড়ে দাও।আমি সামলে নিবো।(রাহুল)

–ওকে,খুব সাবধানে কাজটা করবে।(আরিফ খান)

–ওকে ড্যাড।(রাহুল)
———

ভার্সিটির মাঠে বসে আছে মেঘ।তখনই রাহুল ওখানে আসে।

–এই যে মেঘরানি।মাই সুইটহার্ট।

–আপনাকে কতবার বলেছি আমাকে এসব নামে ডাকবেন না।

–কেন বেইবি?

–উফ অসহ্য।

–এই নাও এটা তোমার জন্য।(মেঘের দিকে একটা মোড়ানো কাগজ দিয়ে)

–কি এটা?

–খুলেই দেখো।বেইবি তুমি আমাকে সেদিন বলেছিলে ছবি আঁকার জন্য। আমার হাতে ব্যাথা ছিল তাই আঁকতে পারিনি।এজন্য বাসা থেকে তোমার জন্য এঁকে এনেছি।দেখো কেমন হয়েছে?

মেঘ ছবিটা দেখে আবার রাহুলকে দিয়ে দেয়।তারপর বলে,

–আরেকজন এর আঁকা ছবি এনে আমাকে না দেখিয়ে অন্য কাউকে দেখান।হয়তো সে আপনার কথা বিশ্বাস করতে পারে।কিন্তু আমি করি না।

–মেঘ আমি তো তোমাকে প্রমাণ দিয়েছি যে আমিই তোমার মিস্টার আর্টিস্ট,তাও কেন বিশ্বাস করছো না?

–কারণ আমার মন বলছে আপনি সেই লোক না।

–ঠিক আছে।দুইদিন পর একটা আর্ট কম্পিটিশন আছে।সেখানে চলে এসো।আমি সবার সামনে আর্ট করবো।আর তখনই তুমি বুঝতে পারবে।

–হুম অবশ্যই আসবো।আর সেদিন আপনার সব মিথ্যা সবার সামনে চলে আসবে।আমার মিস্টার আর্টিস্ট সেদিন আসবে।

–হুম আমিই তো তোমার মিস্টার আর্টিস্ট।

–উহু,আপনি নন।

–ওকে তাহলে সেদিনই দেখতে পাবে।আমি তোমাকে প্রমাণ করে দেবো।বাই বেইবি।

–গো টু হেল।

–তোমার জন্য আমি হেলে যেতেও রাজি সুইটহার্ট।

রাহুলের কথা শুনে মেঘ বিরক্ত হয়ে চলে যায়।রাহুল মেঘের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিশ্রীভাবে হেসে বলে উঠে,

“মেঘরানি শুধু আর মাত্র কয়েকটা দিন।তারপর দেখবো তোমাকে আমার হাত থেকে কে বাঁচায়।”
——–
ভার্সিটি থেকে বের হয়ে মেঘ আর মুক্তা রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকে।তখন মুক্তা বলে উঠে,

–মেঘু শুনেছিস দুইদিন পরে আর্ট ক্লাবে যে আর্ট কম্পিটিশন হবে।

–হ্যাঁ শুনেছি,রাহুল বললো।

–রাহুলের সাথে তোর দেখা হলো কখন?

–একটু আগে।

তারপর মেঘ মুক্তাকে সব খুলে বললো।

–ওই ই বললো আমাকে নাকি প্রমাণ করে দেবে মুক্তা।

–ছাই করবে ও।মাঝে মাঝে মন চায় ওকে মেরে মাছেদের খেতে দেই।লুচ্চা একটা(রেগে)

–ও কিছুই প্রমাণ করতে পারবে না আমার মনে হয়।সেদিনই বুঝতে পারবো সব।

মেঘ আর মুক্তা কথা বলতে বলতে যাচ্ছিলো তখনই ওদের সামনে একটা গাড়ি এসে থামে।

চলবে……