#শুধু_তুমি_আমার
#পর্ব_৫
#Fariba_Ahmed
এসএন গাড়ি নিয়ে একটা পুরনো বাসায় ঢুকলো।বাড়িটা বাইরে থেকে দেখে মনে হচ্ছে অনেক পুরোনো। হয়তো কয়েক বছর ধরে কেউ এই বাসায় আসেনি।এসএন গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো।বাড়ির ভিতরে সব কিছু সাদা কাপড়ে মোড়ানো।এসএন বাসার ভেতরে ঢুকে সিঁড়ি বেয়ে উপরের একটা রুমে প্রবেশ করলো।সারা রুম আঁকা ছবি আর রঙ দিয়ে ভরা।দেওয়ালে একটা বড় আর্ট করা ছবি টানানো যা সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা।এসএন ছবিটার দিকে এগিয়ে গেলো।হাত দিয়ে সাদা কাপড়টা সরিয়ে দিয়ে ছবিতে থাকা মেয়েটির কপালে চুমু খেলো।ছবিটি দেওয়াল থেকে খুলে নিচে রেখে ছবির সামনে বসে পড়লো।
–কোথায় তুমি মায়াবিনী?খুব মনে পড়ে তোমাকে।জানো আজকে একটা মেয়েকে দেখেছি।তোমাকে দেখলে যেমন আমার হার্টবিট বেড়ে যেতো তাকে দেখেও আমার সেরকম ফিলিং হচ্ছিল।আর তার চোখ জোড়ার সাথে তোমার চোখ জোড়ার খুব মিল ছিলো।কেন এমন মনে হলো মায়াবিনী?বলো না তুমি।ভালোবাসি আমার মায়াবিনী,ভালোবাসি তোমাকে।
এসএন ছবিটা রেখে আরেকটা ছবির দিকে এগিয়ে গেলো।ছবিটাতে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে আছে।ছেলেটা কাঠগোলাপ ফুল হাতে নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে আছে মেয়েটির সামনে।আর মেয়েটি হাত বাড়িয়ে ফুল নিচ্ছে।
এই ছবিটি হাতে নিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো,
ঠিক সন্ধ্যে নামে যখন
নীল পথের পাড়ে
নীল কমলের সুঘ্রাণ ছড়ালে বালিকা
চলে যেতে গিয়েও থমকে দাঁড়ায় বিকেলের রঙ
আর আমার হাতের কাঠগোলাপেরা
খোঁজে ভালোবাসা।
আরো শক্ত করে ছবিটা জড়িয়ে ধরলো বুকে।তার চোখের কোণ বেয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।যত্ন করে ছবিটা পাশে থাকা একটা বক্সে রেখে দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।
—————-
মেঘ আর মুক্তার সামনে ইয়ানের গাড়ি এসে থামলো।মুক্তাকে দেখে ইয়ান গাড়ি থামায়।গাড়ি থেকে বের হয়ে আসে ইয়ান।এভাবে গাড়ি থামানোতে রেগে যায় মেঘ।
–এভাবে কেউ গাড়ি থামায়?(ইয়ানকে বলে মেঘ)
–সরি মিস।
মুক্তা ইয়ানকে দেখে অবাক হয়ে যায়।মুক্তার দিকে তাকিয়ে ইয়ান হাই বলে।মুক্তা ইয়ানকে দেখে লজ্জা মিশ্রিত একটা হাসি দেয় যা ইয়ান আর মেঘ কারোরই দৃষ্টিগোচর হয় না।
–কেমন আছো মিস?
–জ্বি ভালো,আপনি?
–এতক্ষণ ভালো ছিলাম না,আপনাকে দেখে ভালো হয়ে গেছি।(আনমনে)
–জ্বি?
–না না কিছু না।কালকে আপনাকে অনেকবার ডাকলাম কিন্তু আপনি পিছনে তাকিয়েও চলে গেলেন।
–আসলে আমার কাজ ছিল তাই।
–আচ্ছা।
ওদের কথা শুনে মেঘ বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।
–এটা কি আপনার ফ্রেন্ড? (মেঘকে ইশারা করে ইয়ান জিজ্ঞাসা করে)
–হ্যাঁ আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।
–ওও আচ্ছা।
মেঘ বলে উঠে,
–মুক্তা আজকে সূর্য কোন দিকে উঠেছে রে?
–কেন?
–না মানে যে তুই কিনা কোনো ছেলের সাথে জীবনে ভালো করে কথা বলিস সে তুই কিনা আজকে একটা ছেলের সাথে এতো ভালো করে কথা বলছিস?কুছ তো গারবার হে।
–আরে না,ওসব কিছু না।
ইয়ান মেঘকে বলে,
–হেই শালিকা,নাইস টু মিট ইউ।(বলে জিহবায় কামড় দেয় ইয়ান)
–হোয়াট শালিকা?মুক্তা তুই এত দূর এগিয়ে গেলি।বফ বানিয়ে ফেললি আর আমাকেই জানালি না?আল্লাহ আমাকে তুলে নাও।এই মুক্তা শোন,যদি ছেলেটা বউ থাকে তাহলে কি করবি?আমার তো মনে হয় না এই ছেলে সিংগেল।
মেঘের কথা শুনে ইয়ান চিল্লিয়ে বলে উঠে,
–নায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া,আমি পিউর সিংগেল।
ইয়ানের চিল্লানো কথা শুনে মেঘ আর মুক্তা দুজনেই চমকে যায়।
–ও আচ্ছা তাহলে ঠিক আছে।কিন্তু ভাইয়া থুরি জিজু আপনি এতো জোরে চিল্লালেন কেন?
–না না এমনি।
–এসব কি বলছিস মেঘু?তুই উনাকে জিজু কেন বলছিস?এরকম কিছুই নেই আমাদের মাঝে।
–তাহলে তুই উনাকে আর উনি তোকে কীভাবে চেনে?
–তোকে বলেছিলাম না কালকে দোকানে একটা ছেলের সাথে….ওই ছেলেটাই উনি।
–ওওওহ আগে বলবি তো।
ইয়ান মুক্তাকে বলে,
–ওও তার মানে তোমার নাম মুক্তা,নাইস নেম।আমি ইয়ান।একটা কথা ছিল মুক্তা।আসলে সকালে আমার কারণে তোমার আইসক্রিম পড়ে গিয়েছিল।তাই বলছিলাম যে আজকে যদি তোমরা দুজন আমার সাথে কফি খেতে তাহলে আর আমার গিলটি ফিল হতো না।
ইয়ানের কথা বলা শেষ হতেই মেঘ বলে উঠে,
–কেনো নয়?অবশ্যই যাবো জিজু।মুক্তা চল।
কথাটা বলে মেঘ মুক্তার দিকে তাকায়।মুক্তা রক্তচক্ষু নিয়ে মেঘের দিকে তাকায়।সেটা দেখে মেঘ একটা ইনোসেন্ট হাসি দিয়ে বলে,
–ইয়ে মানে জিজু,না মানে ভাইয়া চলুন যাওয়া যাক।
–থ্যাংকস বোথ অফ ইউ।চলো।
–ওয়েলকাম।
———
কফিশপে,
ইয়ান,মুক্তা আর মেঘ বসে আছে।ইয়ান আর মেঘ গল্প করছে কিন্তু মুক্তার মুখ থেকে হুম হ্যাঁ ছাড়া আর কোনো কথা বের হচ্ছে না।ইয়ান এক দৃষ্টিতে মুক্তার দিকে তাকিয়ে আছে।মুক্তা কফি খাওয়ার ফাঁকে ইয়ানকে দেখছে।মেঘ বসে বসে ওদের দুজনের কান্ড দেখছে।তখন ইয়ানের ফোন বেজে উঠে।ইয়ান ফোন হাতে নিয়ে দেখে শুভ্র কল দিয়েছে।
–ইয়ান কোথায় তুই?
–আমি কফিশপের আছি।তুই?
–আমি বাসায় যাচ্ছি।
–তাহলে কফিশপের সামনে চলে আয়।একজনের সাথে দেখা করাবো।
–কে সে?
–আয় তুই,আসলেই দেখতে পারবি।
–ঠিকাছে আসছি।আমাকে এড্রেস মেসেজ কর।
–আচ্ছা,বায়।
ইয়ান মুক্তা আর মেঘকে বলে তার একটা ফ্রেন্ড আসছে।কিছুক্ষণ পর শুভ্রও চলে আসে।মেঘ আর শুভ্র একে অপরকে দেখে অবাক হয়।পরে বুঝতে পারে মেঘ যে শুভ্র ইয়ানের বন্ধু।মেঘ শুভ্রকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মুক্তা মেঘের কানে কানে বলে,
–মেঘু তুই শুভ্রের সাথে আর ঝগড়া করিস না।কালকে ভুলটা কিন্তু তোর ছিল।উনি তোকে আরো বাঁচিয়েছেন।তোর উনাকে সরি আর ধন্যবাদ বলা উচিত।
–ঠিক আছে।
ইয়ান মুক্তা আর মেঘকে বলে,
–এই হলো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আর কাজিন শুভ্র।আর শুভ্র ও হলো মুক্তা আর মুক্তার বান্ধুবী মেঘ।
–কেমন আছো তোমরা?
–জ্বি ভালো।
ইয়ান শুভ্রকে জিজ্ঞাসা করে,
–তুই ওদেরকে চিনিস?
–হুম তোকে বললাম না একটা মেয়ে রাস্তায় বসে ফুল তুলছিল এই হলো সেই মেয়ে।
–ও বুঝেছি।বাট মেঘ আমার ফ্রেন্ডের কিন্তু দোষ ছিল না।তুমি শুধু শুধু ওর সাথে ঝগড়া করেছ।
–মিস ঝগড়ুটে তো ঝগড়া করবেই,তাও আবার একটা অচেনা ছেলের সাথে গায়ে পড়ে ঝগড়া করেছে।আচ্ছা চলো সবাই বাইরে যাই।
ইয়ান আর মুক্তা বাইরে চলে গেলো।মেঘ শুভ্রের কথা শুনে চোখ ছোট ছোট করে ওর দিকে তাকায়।
শুভ্র মেঘকে আড়চোখে দেখছে।মেঘ শুভ্রের দিকে এগোতে থাকে।মেঘকে নিজের দিকে আসতে দেখে শুভ্র ভাবে মেঘ হয়তো ওর সাথে ঝগড়া করবে।কিন্তু মেঘ শুভ্রকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে বলে,
–আই এম সরি মিস্টার শুভ্র।
শুভ্র অবাক হয় মেঘের কথা শুনে।
–আসলে আমার কাঠগোলাপ ফুল অনেক ভালো লাগে।ফুল তুলতে তুলতে কখন রাস্তায় চলে গিয়েছিলাম বুঝতে পারিনি।
–এরপর থেকে সাবধান থাকবে।
–জ্বি অবশ্যই।আর আপনার সাথে ওভাবে কথা বলার জন্য সরি।
–ইটস ওকে।
–চলুন বাইরে যাই।
–চলো।
মেঘ আর মুক্তা ইয়ানের সাথে কথা বলছে আর শুভ্র মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে।মেঘের চোখে শুভ্রের চোখ দুটো আটকে যায়। চোখের দিকে তাকিয়ে খুব ভালো করে চোখ দুটোকে পর্যবেক্ষণ করছে।মেঘের দিকে শুভ্রের এভাবে তাকানো দেখে ইয়ান কাশি দিল।কাশির শব্দ পেয়ে শুভ্র নিজেকে সামলে নিল।
হঠাৎ মেঘের মনে হলো ওর হার্টবিট যেনো বাড়ছে,মনে হচ্ছে ওর খুব কাছেই ওর কাছের একজন আছে।এই কথাটা মনে হইতেই মেঘ এদিক ওদিক তাকালো কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলো না।
মেঘের মন বলছে হয়তো কেউ একজন আছে।তখনই মেঘের মনে পড়লো ভার্সিটিতে ধাক্কা খাওয়া সেই লোকের কথা।যার সাথে ধাক্কা খাওয়ার পর মেঘের এরকম ফিলিং হয়েছিল।
চলবে…..