#শুধু_তুমি_আমার
#পর্ব_৬
#Fariba_Ahmed
মেঘ আর মুক্তা শুভ্র ইয়ানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।ওরা চলে যেতেই শুভ্র ইয়ানকে বললো,
–তুমি তলে তলে টেম্পো চালাও তাই না ইয়ান।
–আরে দোস্ত তা না।তোকে আমি বলেছিলাম না যে এদেশের মেয়েরা আলাদা।কারণ কালকে একটা মেয়ের সাথে আমার দোকানে দেখা হয়েছিল।মুক্তা নাম ওর।আমি দোকানে ঢুকার সময় মুক্তার সাথে ধাক্কা লাগে।দোস্ত এর আগে অনেক মেয়ের সাথে কথা বলেছি,ফ্লার্ট করেছি কিন্তু কখনো এরকম কোনো ফিলিং আসেনি যেটা মুক্তাকে দেখলে আসে।খুব ভালো লাগে ওকে।
–হয়তো তোর ভালোবাসার ঘন্টা বাজছে।
–হুম রে হতে পারে।
–বেস্ট অফ লাক ইয়ান।তবে একটা কথা মনে রাখিস।ভালোবাসার মানুষকে আগলে রাখিস।হারাতে দিস না কখনো।
–অবশ্যই শুভ্র।এবার বল,তুই যে কাজটা করতে গিয়েছিলি সেটার কি খবর?
–কাজটা হয়েছে।এবার আসল খেলা দেখার বাকি।
তারপর শুভ্র ইয়ানকে কিছু বললো।দুজনের ঠোঁটেই বাঁকা হাসি।
______
পূর্ণিমা রাত।চারপাশ চাঁদের আলোয় ঝলমল করছে।নীল আকাশের দূরের ওই চাঁদটার চারপাশে শুভ্র মেঘগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে।অনেকক্ষণ ধরে বারান্দায় বসে আকাশের দূরের ওই চাঁদটাকে দেখছে মেঘ।চাঁদের দিকে তাকিয়ে মেঘ তার মিস্টার আর্টিস্ট এর কথা ভাবছে।মেঘ গেয়ে উঠে,
🎵আনদেখা আনজানাছা পাগলাছা দিওয়ানাছা
জানে ও কেছা হোগা রে
চোরিছে চুপকে চুপকে
বেঠা হে দিলমে ঘুছকে
জানে ও কেছা হোগা রে
গানটা গেয়ে মুচকি হাসে মেঘ।আজকের ঘটা সব কিছু ভাবতে থাকে।এসএন এর কথা ভাবতে থাকে।এই প্রথম কোনো ছেলের এতো কাছে ছিল মেঘ।মেঘ বুঝতে পারছে না লোকটাকে দেখে কেনো মেঘের অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিল।কেন তাকে খুব আপন মনে হচ্ছিল।
অন্যদিকে……..
শুভ্র ছাদে বসে আছে।সেও তাকিয়ে আছে দূর আকাশের ওই চাঁদের দিকে।চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে।শুভ্রের সাথে ইয়ানও বসে ছিল।ইয়ান শুভ্রের কাধে হাত রাখে।তারপর বলে,
–কি হয়েছে শুভ্র?
–আমার সাথেই কেন এরকম হলো ইয়ান?কেন?কেন পাচ্ছি না তাকে?
–অবশ্যই পাবি তুই।এভাবে ভেঙে পড়িস না।
–হুম।
–ঘরে চল রাত তো অনেক হলো।
–ঠিকাছে চল।কালকে থেকে পাপার অফিসেও যেতে হবে।
–আচ্ছা চল
———-
মুক্তা আর মেঘ ভার্সিটি থেকে বের হবে তখন ওদের সামনে এসে ইয়ান দাঁড়ায়।
–হাই মুক্তা।
–হাই।
–কেমন আছো?
–ভালো,আপনি কেমন আছেন?
–হুম আমিও ভালো আছি।তুমি কি ফ্রি?
–কেন?
–আসলে তুমি যদি ফ্রি থাকতে তাহলে একটু আমার সাথে হাঁটতে তাহলে ভালো লাগতো।
–কিন্তু……
ওদের কথার মাঝে মেঘ বলে উঠে,
–আরে যা না মুক্তা।
–কিন্তু মেঘ তুই একা বাসায় যাবি?
–হুম আমি যেতে পারবো।চিন্তা করিস না।
–কিন্তু,
–কোনো কিন্তু নয়।ভাইয়া থুরি জিজু আপনারা যান।আমি যেতে পারবো।
–ওকে শালিকা।তুমিও চাইলে যেতে পারো
–আমি কাবাব মে হাড্ডি হতে চাই না জিজু।
–ঠিক আছে।ভালোভাবে যেও।
ওদের দুজনের কথা শুনে মুক্তা বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।মুক্তা আর ইয়ান চলে গেলো।মেঘ মুচকি হেসে নিজের গন্তব্যে পা বাড়ালো।মেঘ হেঁটে যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে তখন ওর সামনে একটা গাড়ি এসে থামে।মেঘ তাকিয়ে দেখে রাহুলের গাড়ি।রাহুল গাড়ি থেকে বের হয়ে মেঘের সামনে এসে দাঁড়ালো।মেঘ বিরক্তিকর চাহনি দিয়ে রাহুলের দিকে তাকালো।
–হেই মেঘ সুইটহার্ট,কেমন আছো?
–আপনি এখানে কেন?
–এই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিলাম তখন তোমাকে দেখলাম।ভাবলাম তোমাকে লিফট দিয়ে দেই।তুমি এভাবে হেঁটে বাসায় যাবে তোমার তো কষ্ট হবে।
–আমি কি আপনাকে একবারো বলেছি আমার কষ্ট হচ্ছে,আমাকে লিফট দিন?
–তা বলোনি,কিন্তু ভালোবাসিতো তোমাকে,তাই তোমার মনের কথা বুঝে যাই আমি।
মেঘ বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো,
–পথ ছাড়ুন,যেতে দিন।
মেঘ চলে যেতে নিলে রাহুল মেঘের হাত ধরে বলে,
–চলো আমি তোমাকে বাড়িতে দিয়ে আসি।
–দরকার নেই।আমার হাত ছাড়ুন।
–না ছাড়বো না।
–ছাড়ুন বলছি।(চিৎকার করে)
মেঘের হাত ছেড়ে দিয়ে রাহুল বললো,
–কুল বেবি।ছেড়ে দিয়েছি।এখন আমি ছেড়ে দিচ্ছি কিন্তু পরে এসে তুমি নিজে আমার হাত ধরবে।
–আপনার সে গুড়ে বালি।
–ঠিকাছে আমিও দেখবো।
–অসভ্য লোক।
–কি বললে তুমি?
–যা শুনেছেন তাই।
মেঘের কথা শুনে রাহুল মেঘের হাত শক্ত করে ধরলো।মেঘ অনেকবার ছাড়তে বলছে বাট রাহুল ওর কথা শুনছে না।একটু সামনেই শুভ্রের গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল।শুভ্র দূর থেকে দেখে একটা ছেলে একটা মেয়ের হাত জোর করে ধরে রেখেছে।এটা দেখে শুভ্র এগিতে আসে।কাছে এসে দেখে মেয়েটা আর কেউ নয় মেঘ।শুভ্র কাছে এসে বলে,
–হ্যালো মেঘ কেমন আছো?
মেঘ অসহায় চোখে শুভ্রের দিকে তাকায়।মেঘের তাকানো দেখে শুভ্রের বুকে গিয়ে বিঁধে।শুভ্র মেঘের ওই হাতের দিকে তাকায় যে হাত রাহুল ধরে আছে।হাত এতো জোরে ধরেছে যে হাতে লাল হয়ে গেছে।শুভ্র রাহুলের থেকে মেঘের হাত সরিয়ে রাহুলকে বললো,
–তোমার সমস্যা কি?রাস্তায় একটা মেয়ের হাত ধরে টানাটানি করছো কেন?
–আমি আমার গার্লফ্রেন্ড এর হাত ধরেছি তাতে তোমার সমস্যা কি?
–ও আচ্ছা।
শুভ্র মেঘের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
–এই ছেলেটা কি তোমার বিএফ?মেঘ মাথা নেড়ে না করলো।
শুভ্র রাহুলের দিকে তাকিয়ে বললো,
–এভাবে কোনো মেয়ের হাত ধরে টানাটানি করা ঠিক না ব্রো।
–তুমি কি আমাকে শিখাবে কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল?
–দরকার হলে শিখাবো।
–আমি আবার মেঘের হাত ধরবো,দেখি তুমি কি করতে পারো
রাহুল হাত বাড়িয়ে যখন মেঘের হাত ধরতে যায় তখন শুভ্র রাহুলের নাকে জোরে ঘুসি দেয়।রাহুল ব্যাথায় আহ করে উঠে।সবাই অবাক হয়ে যায়।শুভ্র যে এরকম করবে তাও কেউ বুঝতে পারেনি।রাহুল শুভ্রের দিকে তেড়ে গেলে রাহুলের বন্ধুরা ওকে বাধা দেয়।ওকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।যাওয়ার আগে রাহুক শুভ্রকে বলে,
–তোকে আমি দেখে নিবো।তুই জানিস না তুই কার গায়ে হাত দিয়েছিস।
বলে চলে যায়।ওরা যেতেই মেঘ শুভ্রকে বলে,
–আপনি কাজটা ঠিক করেননি।ওরা অনেক খারাপ।আপনার ক্ষতি করে দেবে।
–চিন্তা করো না তুমি।আমার কিছুই করতে পারবে না।ও জানে না আমি কে।তুমি একা একা কোথায় যাচ্ছো?
–বাসায়।
–তোমার ফ্রেন্ড কি যেনো নাম…হ্যাঁ মুক্তা,সে কোথায়?
–ও তো জিজুর সাথে গেছে।
–জিজু কে?তোমার ফ্রেন্ড ম্যারিড?
–আপনার বন্ধু।
–ইয়ানের সাথে?
–হ্যাঁ।
–ওও এবার বুঝেছি।তোমার একা যাওয়া ঠিক হবে না।চলো আমি তোমাকে এগিয়ে দেই।
–না আমি একাই যেতে পারবো।
–সাট আপ।রাস্তায় ওরা তোমাকে আবার দেখলে আবার ঝামেলা করবে।
–কিন্তু?
–মেঘ।
–জ্বি বলুন।
–বিশ্বাস করতে পারো আমায়।চলো আমার সাথে(মেঘের চোখে চোখ রেখে বললো)
শুভ্রের কথায় মেঘ জেনো ভরসা খুঁজে পেলো।সে শুভ্রকে বললো,
–ঠিক আছে।
মেঘ গিয়ে শুভ্রের গাড়িতে বসলো।শুভ্র গিয়েও বসলো।শুভ্র গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার আগে দেখলো মেঘ সিট বেল্ট বাঁধেনি।শুভ্র মেঘক্র বললো,
–সিট বেল্ট টা বেঁধে নাও।
শুভ্রের কথায় মেঘ সিট বেল্ট বাঁধার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না।শুভ্র দেখলো মেঘ বারবার সিট বেল্ট বাঁধার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।শুভ্র মেঘের সামনে ঝুঁকে মেঘের হাত থেকে সিট বেল্টটা নিয়ে বেঁধে দেয়।শুভ্র আর মেঘ দুজনেই খুব কাছাকাছি।মেঘের আবারো সেরকম ফিলিং হতে শুরু করলো।মেঘের এতো কাছে এসে শুভ্রেরও হার্ট বিট বেড়ে যাচ্ছে।তখনই মেঘ শুভ্রকে বলে উঠলো,
চলবে…..