#শুধু_তুমি_আমার
#পর্ব_৭
#Fariba_Ahmed
মেঘ আনমনে শুভ্রকে বলে উঠলো,
–কে আপনি?কেনো আপনার কাছে গেলে আমার হার্ট বিট বেড়ে যায়?
শুভ্র অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
–মানে?
শুভ্রের গলা শুনে মেঘ বাস্তবে ফিরে আসে।
–না না কিছু না।
শুভ্র মেঘের থেকে সরে আসে।সরে আসার সময় শুভ্র মেঘের গলায় একটা চেইন দেখতে পায়।সেটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।শুভ্রকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেঘ কাশি দেয়,মেঘের কাশির শব্দ শুনে শুভ্র নিজের সিটে এসে বসে।মেঘের লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেছে।শুভ্রের দিকে তাকাতেও পারছে না।শুভ্র এক নজর মেঘের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।তারপর গাড়ি স্টার্ট দিলো।আর চেইনটার কথা ভাবতে থাকলো।
———-
মুক্তা আর ইয়ান রাস্তায় হাঁটছে।কারো মুখে কোনো কথা নেই।নিরবতা ভেঙে ইয়ান মুক্তাকে জিজ্ঞাসা করলো,
–তোমার কি বিএফ আছে?
মুক্তা উত্তর দিলো,
–না।
মেঘের উত্তর শুনে ইয়ান মুচকি হাসলো।
–কাউকে ভালোবাসো?
–না।এরকম কেউ আমার লাইফে এখনো আসেনি।
–কাউকে কি ভালো লাগে না?
এই প্রশ্নটা শুনে মুক্তা ইয়ানের দিকে তাকালো।মুক্তা কি বলবে ও নিজেও বুঝতে পারছে না।একজন আছে যাকে মুক্তার ভালো লাগে আর সে হলো ইয়ান।মুক্তা কীভাবে তার সামনে বলবে তাকেই তার ভালো লাগে।মুক্তা যদি বলে হ্যাঁ কাউকে তার ভালো লাগে।তখন তো ইয়ান অন্য কিছু ভাববে।নিজের মন আর মস্তিষ্কের সাথে লড়াই করে মুক্তা বললো,
–জানি না।
ইয়ানও একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো এটা ভেবে যে হয়তো মুক্তা কাউকেই পছন্দ করে না,নয়তো মুক্তা তাকে পছন্দ করে।
মুক্তা ইয়ানকে জিজ্ঞাসা করলো,
–আপনি কি কাউকে ভালোবাসেন?
–ভালোবাসি কিনা জানি না,তবে তাকে দেখলে আমার বুকটা ধুকধুক করতে থাকে,তার সাথে কথা বলতে ভালো লাগে,তাকে দেখতে ভালো লাগে।
–ওওহ।
ইয়ানের কথা শুনে মুক্তার মুখ অমাবস্যার চাঁদের মতো হয়ে গেলো।ইয়ান আবার মুক্তার দিকে তাকিয়ে বললো,
–সে আমার আশে পাশেই আছে হয়তো মুক্তা।
এই কথাটা মুক্তার বুকে যেনো তীরের মতো বিঁধলো।মুক্তার কেনো জানি মনে হলো ইয়ান কথাটা তাকেই উদ্দেশ্য করে বললো।
তারপর আবার দুজনের মাঝেই নিরবতা বিরাজ করলো।ইয়ান আর মুক্তা হাঁটতে হাঁটতে মুক্তার বাড়ির দিকে যেতে লাগলো।কিছুক্ষণ পর মুক্তার বাসার সামনে চলে আসে দুজন।
–আমি যাই মিস্টার ইয়ান।সাবধানে যাবেন।
–ঠিক আছে।বাই।
–বিদায়।
বলে মুক্তা বাসার দিকে যায়।বাসায় ঢুকার আগে মুক্তা একবার পিছনে ফিরে ইয়ানের দিকে তাকায়।সে তাকিয়ে দেখে ইয়ান তার দিকেই তাকিয়ে আছে।সামনে ঘুরে বাসার ভেতরে চলে যায়।ইয়ান মুক্তাকে তার দিকে তাকাতে দেখে মুচকি হাসে।তারপর ইয়ানও চলে যায়।
শুভ্রের গাড়ি মেঘের বাসায় সামনে এসে থামে।মেঘ গাড়ি থেকে নেমে বাসায় দিকে পা বাড়ায়।আবার থেমে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে বলে,
–ধন্যবাদ আপনাকে।
–ওয়েলকাম মিস মেঘ।
–বাই।সাবধানে থাকবেন।
–তোমার সাবধানে থাকা উচিত মিস।বাই।
মেঘ চলে যায়।শুভ্র মেঘের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে আর কিছু একটা ভাবতে থাকে।মেঘ ঘরে গিয়ে বারান্দা দিয়ে শুভ্রকে দেখতে থাকে।মেঘ চলে যাওয়ার পর শুভ্রও তার বাসার দিকে রওনা দেয়।শুভ্র চলে যাওয়ার পর মেঘ ঘরে চলে আসে।
এদিকে রান্নাঘরের জানালা দিয়ে মেঘকে একটা ছেলের গাড়ি থেকে বের হতে দেখে মেঘের মা।রান্নাঘর থেকে বের হয়ে সে মেঘের ঘরের দিকে যায়।গিয়ে মেঘকে জিজ্ঞাসা করে,
–মেঘ ছেলেটা কে?
–আম্মু আমার ফ্রেন্ড বলতে পারো।উনি আমার অনেক সাহায্য করেছে।একা একা বাসায় আসছিলাম তাই আমাকে এগিয়ে দিয়ে গেলো।
–ফ্রেন্ড নাকি অন্য কিছু মেঘ?
–না আম্মু।
–ঠিক আছে,সাবধানে চলাফেরা করবে।
–আচ্ছা আম্মু।
–মেঘ তোর ভার্সিটির ওই ছেলেটা রাহুল তোকে কি আর ডিস্টার্ব করে?
–না আম্মু।
–সাবধানে থাকিস মা।তোর জন্য অনেক চিন্তা হয়
–চিন্তা করো না আম্মু।
–আচ্ছা,যা ফ্রেশ হয়ে নে। আর হ্যাঁ ছেলেদের সাথে কম মেলামেশা করিস মেঘ।
–ঠিক আছে আম্মু।
বলে মেঘের মা চলে গেলো।মেঘ ইচ্ছে করেই তার মাকে কিছু বলেনি রাহুলের ব্যাপারে।নয়তো তার মা অনেক চিন্তা করবে।একদিন রাহুল মেঘের বাসায় এসে ওর মাকে বলে মেঘকে বিয়ে দিতে চায়।কিন্তু মেঘের মা রাজি হয় না।তখন অনেক ঝামেলা করে।এক পর্যায়ে মেঘকে তুলে নিয়ে যেতেও চাইছিল।তখন মেঘের মা মেঘের চিন্তায় অসুস্থ হয়ে যায়। রাহুলের বাবা এসে পরিস্থিতি সামলে নেয়।আর তারপর থেকেই রাহুল মেঘের পিছনে পড়ে আছে।এখন মেঘের মা যদি জানে রাহুল তার সাথে আজকে কি করেছে তাহলে অনেক চিন্তা করবে আর অসুস্থ হয়ে যাবে।
———
ভার্সিটির ছাদে দাঁড়িয়ে আছে মেঘ।আর তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রাহুল।মেঘকে ছাদের দিকে আসতে দেখে সে মেঘের পিছু নেয়।মেঘ ছাদে আসতেই রাহুল ছাদের দরজা বন্ধ করে দেয়।দরজা বন্ধের শব্দ পেয়ে মেঘ পিছনে ফিরে দেখে রাহুল দাঁড়িয়ে আছে।মেঘ অনেক ভয় পেয়ে যায়।ভয়ার্ত চোখে রাহুলের দিকে তাকিয়ে আছে।
–কি ব্যাপার মেঘ রানি,মাই বেবি,ভয় পাচ্ছ বুঝি?
–তুমি এখানে কেন?আর ছাদের দরজা বন্ধ করেছ কেন?(চিল্লিয়ে বলে উঠে)
–আরে মেঘ আস্তে কথা বলো।কালকে তো তোমার আশিক এসে তোমাকে বাঁচিয়ে নিয়েছিলো।আজকে কে বাঁচাবে তোমাকে?(বলে মেঘের দিকে এগুতে থাকে)
–দেখুন একদম আমার কাছে আসবেন না বলে দিলাম(বলে মেঘ পিছাতে থাকে।)
মেঘ পেছাতে পেছাতে একদম ছাদের কিনারে এসে পড়ে।মেঘ নিজেও তা খেয়াল করেনি।মেঘ আরো পেছাতে গিয়ে ছাদ থেকে নিচে পড়ে যেতে লাগে।চিৎকার করে উঠে মেঘ।মেঘকে এভাবে পড়ে যেতে দেখে অবাক হয়ে যায় রাহুল।সেও ভাবেনি এরকম কিছু হবে।
এদিকে কারো চিৎকার শুনে ছাদের দিকে এগুতে থাকে এসএন।রাহুল খানের সাথে দেখা করতে ভার্সিটিতে এসেছিল সে।ঘুরতে ঘরতে ছাদের দিকে এসে পড়ে।ওদিকে গিয়ে দেখে মেঘ ছাদ থেকে পড়ে যাচ্ছে।সে দৌঁড়ে গিয়ে মেঘকে ধরে ফেলে।এসএন ছাদের দিকে তাকিয়ে দেখে রাহুল সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।মেঘ গিয়ে এসএন এর কোলে গিয়ে পড়ে।মেঘ চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেলে।এসএন এর শার্ট খামচে ধরে।কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত হয়ে যায়।মেঘ বুঝতে পারে সে মাটিতে নয় বরং কারো কোলে পড়েছে।মেঘ চোখ খুলে দেখে সে কারো কোলে।ভালো করে তাকিয়ে দেখে এ হলো সেদিনের সেই লোকটা।এসএন,যার সাথে ধাক্কা খেয়েছিলো।এসএন সেদিনের মতোই এসেছে।মুখে মাস্ক,কপাল পর্যন্ত চুল,শুধু চোখে চশমা নেই।চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে।দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।কিছুর শব্দে হুশ ফিরে দুজনের।এসএন মেঘকে কোল থেকে নামিয়ে দেয়।
–আর ইউ ওকে?
–হুম।ধন্যবাদ আপনাকে।
–ছাদে কি করছিলে?পড়লে কিভাবে?(রেগে বলে)
–আসলে আমি,মানে,আসলে
মেঘ আমতা আমতা করতে থাকে।মেঘের আমতা আমতা করা দেখে এসএন আরো রেগে যায়।
–সাট আপ।মিথ্যা বলার চেষ্টা করো না।সত্যি কথা বলো।(ধমক দিয়ে)
মেঘ এসএন এর ধমক শুনে ভয় পেয়ে যায়।এই প্রথম কেউ ওকে এভাবে ধমক দিলো।মেঘের চোখে অশ্রু কণারা ভিড় জমিয়েছে।এসএন এর ধমক খেয়ে মেঘ গড়গড় করে সব কথা বলে দিলো।সব কথা শুনে এসএন এর রাগ আরো বেড়ে গেলো।কিন্তু এখন রাগ দেখালে চলবে না।সুযোগের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
চলবে…..