শুধু তুমি আমার পর্ব-০৮

0
493

#শুধু_তুমি_আমার
#পর্ব_৮
#Fariba_Ahmed

মেঘকে তখন পড়ে যেতে দেখে রাহুল ভয় পেয়ে সেখান থেকে তখনই চলে যায়।এসএন মেঘের দিকে তাকিয়ে দেখে ওর হাত কেটে রক্ত বের হচ্ছে।মেঘ যখন ছাদের থেকে পড়ে যাচ্ছিলো তখন পাশে থাকা একটা রড ধরে বাঁচার জন্য। কিন্তু সেটা ধারালো থাকায় মেঘ ভালো করে ধরতে পারে না উল্টো তার হাত কেটে যায়।এসএন তাড়াতাড়ি করে তার পকেট থেকে একটা রুমাল নিয়ে মেঘের হাত বেঁধে দেয়।মেঘ এসএন এর দিকে তাকায়।হঠাৎ এসএন এর চোখ এর দিকে ওর চোখ যায়।খুব চেনা চেনা লাগছে মেঘের।কেনো জানি মেঘের মনে হচ্ছে এই চোখ ও আগেও দেখেছে। ওর ভাবনার মাঝেই এসএন বলে উঠলো,

–তোমার রাহুল খানের থেকে দূরে থাকা উচিত।ওর নজর আছে তোমার উপর আমি বুঝতে পেরেছি।

–জানি আমি।ও একটা নিচু মনের মানুষ, জঘন্য।

–হুম।ওর শুধু তোমার উপর নজর নেই আরো অনেকের উপর আছে।বাট তোমার উপর বেশি।সো বি কেয়ারফুল।

–হুম।কিন্তু আপনি কে?

–আমি এসএন।

–এটা আবার কেমন নাম?

–আমার নামের সর্ট ফম।

–পুরো নাম কি আপনার?

–সময় হলে জানতে পারবে।

–আমি তো ভেবেছিলাম আজ আমি মরেই যাবো।আপনাকে অনেক ধন্যবাদ মিস্টার।আপনি না থাকলে আজকে হয়তো আমি মরেই যেতাম।

–তুমি ছাদের কিনারে চলে এসেছিলে খেয়াল করো নি?

–না,আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।তাই খেয়াল করিনি।

–এরপর থেকে একা একা কোথাও যেও না।

–হুম ঠিক আছে।তা আপনি কি করছিলেন?

— একটা কাজে ভার্সিটিতে এসেছিলাম।তাই ভাবলাম একটু ঘুরে দেখি।

–আসুন আমি আপনাকে ঘুরে দেখাই।

–এই অবস্থায় তুমি আমাকে ঘুরিয়ে দেখাবে?

–হুম।

–তোমার হাত থেকে অনেক ব্লাড পড়ছে।আগে এটা বন্ধ করতে হবে।ফার্স্ট এইড বক্স আছে?

–না

–আচ্ছা এক কাজ করো।আমার সাথে আসো।

–কোথায়?

–আমার গাড়িতে ফার্স্ট এইড বক্স আছে।তোমার ব্লাড পড়া বন্ধ করতে হবে।চলো।

–কিন্তু মিস্টার…

কথাটা বলতে গিয়ে মেঘ এসএন এর দিকে তাকায়।এসএন রাগী চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে।তা দেখে মেঘ একটা ঢোক গিলে।

–আমি এক কথা বারবার বলতে পছন্দ করি না।আর মুখের উপর না বলাও আমার পছন্দ নয়।(গম্ভীরমুখে বলে)

–ঠিক আছে চলুন।

এসএন মেঘকে নিয়ে তার গাড়ির দিকে যায়।মেঘকে পাশে থাকা একটা বেঞ্চে বসিয়ে দিয়ে গাড়ি থেকে ফার্স্ট এইড বক্স এনে মেঘের কেটে যাওয়া জায়গা ভালো করে মুছে পরিষ্কার করে মেডিসিন লাগিয়ে দেয়।

এটা দেখে এসএন এর বডিগার্ডরা খুব অবাক হয়ে যায়।যে ছেলে সবসময় মেয়েদের থেকে দূরে দূরে থাকতো,সে আজ নিজে একটা মেয়েকে টাচ করেছে।আর সবচেয়ে বড় কথা নিজে মেয়েটির কেটে যাওয়া জায়গা মুছে মেডসিন লাগিয়ে দিচ্ছে।

এসএন মেঘের কেটে যাওয়া জায়গাটা ব্যান্ডেজ করে দিলো।

–ধন্যবাদ আপনাকে মিস্টার এসএন।আপনার এই ঋণ আমি কখনো শোধ করতে পারবো না।

–তুমি বাসায় যাও।বাসায় গিয়ে রেস্ট নাও।

–আমি আপনাকে বলেছি ভার্সিটিটা ঘুরিয়ে দেখাবো।প্লিজ না করবেন না।

–ঠিক আছে কিন্তু,

–আমি আপনাকে পুরো ভার্সিটিতো ঘুরে দেখাতে পারবো না একদিনে কিন্তু একটা জায়গা আপনাকে দেখাতে পারি।আমার খুব পছন্দের একটা জায়গা।

–ঠিক আছে তুমি যখন বলছো চলো।

–আচ্ছা আসুন।

বলে এসএন সানগ্লাস পড়ে নিলো।

তারপর মেঘ এসএন কে ভার্সিটির সেই কাঠগোলাপ গাছের নিচে নিয়ে গেলো।নিচে পড়ে থাকা ফুলগুলো হাতে নিয়ে একটা ফুল কানে গুজে দিলো।এসএন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেঘের কান্ড দেখছে আর ভাবছে একটু আগে যে মেয়ে এতো ভয় পেয়েছিল,যার মন এতো খারাপ ছিল এই শুভ্র কাঠগোলাপ ফুল নিমিষেই তার মুখে হাসি ফুটিয়ে দিলো।মেঘকে দেখে এসএন এর তার মায়াবিনীর কথা মনে পড়ে গেলো।তার মায়াবিনীরও মন খারাপ হলে সে তাকে কাঠগোলাপ ফুল এনে দিলে মুহুর্তের মধ্যেই তার মন ভালো হয়ে যেতো।শুভ্র কাঠগোলাপ ফুল যে তার মায়াবিনীর অনেক পছন্দের ছিলো।শুভ্র চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে ফেললো।শুভ্রের চোখের কোণে অশ্রুরা এসে ভিড় জমিয়েছে।এই মেয়েটিকে দেখলেই যে তার মায়াবিনীর কথা আরো বেশি করে মনে পড়ে যায়।

মেঘ কাঠগোলাপ ফুলগুলো নিয়ে এসএন এর কাছে আসলো।

-+এই যে মিস্টার এসএন।কি ভাবছেন?

–নাথিং,বলো।

–আপনার কি মন খারাপ?

–না।

–এইবার কিন্তু আপনি আমাকে মিথ্যা কথা বলছেন?

–তুমি কীভাবে বুঝলে?

–আপনার পুরো মুখ না দেখলেও আপনার চোখ দুটো দেখে বুঝে গিয়েছি।কাউকে মিস করছেন বুঝি?

মেঘের কথায় অবাক হয় এসএন।তার মায়াবিনী আর তার মা বাদে কেউ কখনো বুঝতে পারতো না তার মনে কি চলছে,আর এই মেয়ে বুঝে গেলো এক নিমিষেই।

–হুম মিস করছি।খুব কাছের একজনকে।

–কাকে জানতে পারি কি?

–আমার মায়াবিনীকে।

‘মায়াবিনীকে” কথাটা শুনে মেঘের বুকটা কেঁপে উঠলো।মনে হলো এসএন যেনো তাকেই কথাটা বললো।মেঘ বললো,

–মায়াবিনী।

–হুম আমার মায়াবিনী।

মায়াবিনী কথাটা শুনার পর মেঘের মাথায় চিনচিন ব্যাথা করতে লাগলো।মেঘ আহ করে উঠলো।মেঘের চিৎকার শুনে এসএন তার দিকে তাকালো।মেঘ পড়ে যেতে নিলে এসএন তাকে ধরে নিলো।

–আর ইউ ওকে মেঘ?

–হুম আমি ঠিক আছি।

এসএন মেঘকে বসিয়ে দিলো।

–আমি তোমাকে বলেছিলাম বাসায় চলে যেতে।

–না মিস্টার।আমার এখানে এসে যতটা ভালো লাগছে বাসায় গেলে ভালো লাগতো না।

উনার মুখে মায়াবিনী নামটা শুনে কেনো আমার এরকম লাগছে।এই নামটা শুনার পর থেকেই মাথায় ব্যাথা করছে।কেন এমন হচ্ছে?(মনে মনে)

মেঘ নিজেকে সামলে নিয়ে এসএন কে জিজ্ঞাসা করলো,

–আপনার মায়াবিনী কোথায়?

–হারিয়ে গেছে।

–মানে?

–কিছু না।তুমি আমাকে এখানে কেনো নিয়ে এলে?

–আপনাকে তো আমি বললাম আমার খুব পছন্দের একটা জায়গায় নিয়ে যাবো।আর এটাই হলো সেই জায়গা।এই কাঠগোলাপ ফুলের গাছ দিয়ে ঘেরা এই জায়গাটা আমার অনেক ভালো লাগে।এখানে এলে মনে প্রশান্তি খুঁজে পাই।আমার যতই মন খারাপ থাকুক না কেন কাঠগোলাপ পেলে আমার মন ভালো হয়ে যায়।

এসএন মেঘের কথা শুনে অবাক + মুগ্ধ দুটোই হয়।মেঘের কথাগুলো চিন্তা ভাবনা আচার আচরণ সব তার মায়াবিনীর মতো।এসএন ভাবতে থাকে মেঘ ই তার মায়াবিনী নয়তো।পরে নিজেই নিজেকে বলতে থাকে,না না,মেঘ কীভাবে তার মায়াবিনী হবে।মেঘ তার মায়াবিনী হলে তার মুখে মায়াবিনী কথাটা শুনেই মেঘ বুঝে যেতো।তা চেয়ে বড় কথা তার নাম,তার নাম শুনলেই বুঝে যেতো কেননা তার এই ছদ্দনামটা যে তার মায়াবিনীরই দেওয়া।

একটা কাঠগোলাপ ফুল এসএন এর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

–এই নিন মিস্টার।

এসএন ফুলটা নিয়ে বললো,

–আমাকে কেনো দিচ্ছো?

–আমার যখন মন খারাপ হয় তখন এই শুভ্র কাঠগোলাপ পেলে মনটা মুহূর্তের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়।আপনারতো মন খারাপ।তাই আপনাকে দিলাম।দেখবেন আপনার মনও ভালো হয়ে যাবে।

আর আমি দোয়া করছি আপনি আপনার মায়াবিনীকে খুব তাড়াতাড়ি খুঁজে পেয়ে যাবেন।আমার মা বলে,যাকে আমরা মন থেকে চাই তাকে আমরা একদিন না একদিন ঠিক খুঁজে পাবো।

–তোমার কথাই যেনো সত্যি হয়।

এসএন মেঘের সাথে বসে গল্প করছিলো।গল্প করছিলো বলতে গেলে ভুল হবে।মেঘ নিজেই কথা বলছিলো আর এসএন মুগ্ধ হয়ে তার কথাগুলো শুনছিলো।এসএন এর একটুও বিরক্ত লাগছিলো না।উল্টো ভালোলাগা কাজ করছলো।

চলবে……