#শুধু_তুমি_আমার
#পর্ব_৯
#Fariba_Ahmed
এসএন মেঘের সাথে বসে গল্প করছিলো।গল্প করছিলো বলতে গেলে ভুল হবে।মেঘ নিজেই কথা বলছিলো আর এসএন মুগ্ধ হয়ে তার কথাগুলো শুনছিলো।এসএন এর একটুও বিরক্ত লাগছিলো না।উল্টো ভালোলাগা কাজ করছলো।
তখনই এসএন এর ফোনে কল আসে।
–হ্যালো বলো।
ওপাশ থেকে কিছু একটা বলার পর এসএন বললো,
–ওকে আই এম কামিং।
বলে ফোন রেখে দিলো।মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো,
–আমার জরুরি কাজ আছে।আমাকে যেতে হবে।চলো আমি আমার ড্রাইভারকে বলে তোমাকে বাসায় পাঠিয়ে দিচ্ছি।
–না না, আমি এখন বাসায় যাবো না।আমার ক্লাস আছে।
–একদিন ক্লাস না করলে কিছুই হবে না।
–না মিস্টার,আমি ক্লাস করবো।আপনি চিন্তা করবেন না আমি ঠিক আছি
–এতো বড় ইন্সিডেন্ট হলো,তোমার হাত থেকে অনেক ব্লাডিং হলো,তারপর একটু আগে তুমি মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিলে,তোমার রেস্টের প্রয়োজন।
–ঠিক আছে আমি যাবো কিন্তু এখন না।একটু পর আমার বেস্টু আসবে মুক্তা, ওর সাথে লাইব্রেরিতে একটু গিয়ে তারপর বাসায় যাবো।চিন্তা করবেন না আপনি।
–ঠিক আছে,তবে হ্যাঁ এখানেই বসে থাকো।অন্য কোথাও যেও না এন্ড বি কেয়ারফুল।তোমাকে খুব সাবধানে থাকতে হবে।
–হুম আমি সাবধানেই থাকবো।আপনাকে আরেকবার অনেক ধন্যবাদ।আমি দোয়া করি আপনি আপনার মায়াবিনীকে খুব খুব খুব তাড়াতাড়ি খুঁজে পেয়ে যাবেন মিস্টার এসএন।(মুচকি হাসি দিয়ে)
–থেংক্স।তাই যেনো হয়।বাই।
–গুড বাই।
বলে এসএন চলে যায়।কিছু দূর গিয়ে আবার পিছনে ফিরে তাকায়।এক পলক দেখে আবার নিজের গন্তব্যে চলে যায়।যেতে যেতে এসএন ভাবতে থাকে,
“কেনো এরকম হচ্ছে?এই মেয়ের কাছে আসলেই আমার হার্ট বিট বেড়ে যায়,খুব আপন মনে হয়।আমার মন খারাপ নাকি মন ভালো তা শুধুমাত্র আমার চোখ দেখেই বুঝে গেলো।কেন মেয়েটার কষ্ট দেখে কষ্ট হচ্ছিলো?কেন আমি একটা মেয়েকে টাচ করে তার ক্ষত হওয়া জায়গাও মুছে দিলাম?”
এসব ভাবতে ভাবতেই এসএন চলে গেলো।
রাহুল ভয় পেয়ে দৌঁড়ে তার বাবার রুমে চলে যায়।সে নিশ্চিত যে তাকে কেউ দেখেনি।তাকে এভাবে দৌঁড়ে আসতে দেখে আরিফ খান অবাক হন।
–কি হয়েছে?এভাবে দোড়ে আসলে কেন?
–আসলে বাবা,
–আসলে নকলে না করে কি করেছ সেটা বলো।
তারপর রাহুল আরিফ খানকে সব খুলে বললো।রাহুলের কথা শুনে আরিফ খান অনেক রেগে গেলেন।
–বোকা কি তোমাকে সাধে বলি।সামনে এতো বড় একটা কাজ আর তুমি এখানে এসব করে বেড়াচ্ছো।এগুলো কি পরে করা যেতো না?
–মেঘ কোথায়?তাড়াতাড়ি চলো সেখানে।
তারপর আরিফ খান আর রাহুল সেই ছাদের ওখানে যায়।কিন্তু সেখানে নিচে মেঘকে দেখতে পায় না
তারা ভাবতে থাকে মেঘ কোথায় গেলো?কোথায় যেতে পারে সে?মেঘ যখন পড়ে গিয়েছিলো তখন কেউ ওকে দেখে নিয়ে যায় নি তো?এরকম আরো অনেক কিছুই ভাবতে থাকে তারা।মেঘের কিছু হলে অনেক বড় বিপদে পড়বে তারা।আরিফ খান ঘাবড়ে যান।আর ভাবতে থাকেন কি করবেন এখন।
–রাহুল মেঘকে খুঁজো।তাড়াতাড়ি করো।
–ঠিক আছে ড্যাড।
তারপর আরিফ খান আর রাহুল মেঘকে খুঁজতে থাকে।খুঁজতে খুঁজতে একসময় তারা কাঠগোলাপ গাছের ওখানে গিয়ে দেখে মেঘ বসে আছে।তার মানে ওর কিছুই হয়নি।এটা দেখে উনারা দুজনেই নিশ্চিন্ত হন।রাহুল মেঘের কাছে যেতে নিলে আরিফ খান বাঁধা দেন।
–এখন ওখানে যেও না রাহুল।
–কিন্তু ড্যাড ও যদি কাউকে কিছু বলে দেয়?
–সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।আমি সামলে নিবো।তুমি এখন এমনভাবে থাকবে যেনো কিছুই হয়নি।গট ইট।মনে থাকে যেনো।
–ওকে।মনে থাকবে।
–যাও এখন।চিল করো।ভয় পেয়ো না।
–আচ্ছা।
এসএন মেঘের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।মেঘ ওখানেই বসে রইলো।এদিকে মুক্তা ভার্সিটিতে এসে মেঘকে খুঁজে না পেয়ে কাঠগোলাপ গাছের ওখানে গেলো।মুক্তা জানে মেঘকে এখানেই খুঁজে পাওয়া যাবে। মুক্তা সেখানে গিয়ে দেখলো মেঘ মাটির দিকে তাকিয়ে বসে আছে।মুক্তা দৌঁড়ে সেখানে গেলো।মেঘের পাশে গিয়ে বসলো।
–কি রে মেঘ,কি করছিস?
–ভালো লাগছিলো না তাই এখানে এসে বসে আছি।
–ক্লাসে আসিস নি কেন?
–ভালো লাগছিলো না তাই।
–আজকে আমার আসতে দেরি হয়েছে।তাই আমি সোজা ক্লাসে গিয়েছিলাম।গিয়ে দেখি তুই নেই।কিছু খেয়েছিস?
–না।চল ক্যান্টিনে কিছু খেয়ে আসি।আমার অনেক খিদে পেয়েছে।
কথাটা বলে মুক্তা মেঘের হাত ধরে টান দিলো।মেঘের যে হাত কেটেছে মুক্তা সেই হাতই ধরেছে।মেঘ ব্যাথায় আহ করে উঠলো। মুক্তা মেঘের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে ব্যান্ডেজ করা।মুক্তা অবাক হয়ে যায়।মেঘের হাত ওড়না দিয়ে ঢাকা থাকায় মুক্তা খেয়াল করেনি।
–মেঘ তোর হাতে ব্যান্ডেজ কেনো?কি হয়েছে তোর?
–মুক্তা সেরকম কিছুই না।
–তুই আমাকে মিথ্যা বললি কেন?আমাকে কি সত্যিটা বলা যায় না?
–আসলে মুক্তা,
–সত্যিটা বল মেঘু।কি হয়েছে?ওই লুচ্চা রাহুলের বাচ্চা কি কিছু করেছে?
–হ্যাঁ।
তারপর মেঘ মুক্তাকে সব খুলে বলে।সব শুনে মুক্তা খুব ভয় পেয়ে যায়।
–মেঘু তুই ঠিক আছিস তো?কিছু হয়নি তো তোর?
–না আমি একদম ঠিক আছি।মিস্টার এসএন আমাকে ঠিক সময় এসে ধরে ফেলেছিলো।
–এসএন মানে,এটা আবার কে?
–আমিও সেরকম ভাবে চিনি না।সেদিন যে গায়ে কাদা লাগলো,আমি তাড়াতাড়ি করে ভার্সিটিতে ঢোকার সময় উনার সাথে ধাক্কা খাই।আমি উনার ব্যাপারে কিছুই জানি না।
–তোর কিছু হয়নি এটাই অনেক।আমি আর তোকে একা কোথাও ছাড়বো না।আর ওই রাহুলকে আমি দেখে নিবো।
–জানিস মুক্তা এসএন এর সামনে গেলে আমার হার্ট বিট বেড়ে যায়।উনার সাথে থাকতে ভালো লাগে।উনার সাথে সময় কাটাতে ভালো লাগে।জানিস আমার মনে হয় উনাকে আমি কোথাও দেখেছি।
–কোথায় দেখেছিস?
–সেটাই তো মনে পড়ছে না।পুরো মুখ তো দেখতে পারিনি।
–মানে?
–মুখে মাস্ক ছিলো।আমি শুধু চোখ দুটো দেখেছি।
–চোখ দেখেই তোর মনে হলো কোথাও দেখেছিস?
–হুম।মুক্তা আজকে উনি বললেন উনি একটা মেয়েকে অনেক ভালোবাসেন।মায়াবিনী।
–মায়াবিনী? এটা কে?
–এটা ওই মেয়েটার নাম না।তিনি তার ভালোবাসার মানুষকে ভালোবেসে মায়াবিনী বলে ডাকে।মায়াবিনী নামটা শুনার পর থেকে মাথায় অসম্ভব ব্যাথা হচ্ছে মুক্তা।কেন হচ্ছে এরকম?আমার সাথেই কেন এরকম হচ্ছে?প্রথমে মিস্টার আর্টিস্ট এর আর্ট করা ছবি,তারপর এই মায়াবিনী নাম,এই দুইটা শুনলেই মাথায় প্রচুর ব্যাথা শুরু হয়।আর ওই এসএন…
বলতে বলতে মেঘ কিছু একটা ভাবতে থাকে।
–মুক্তা এসএন নামটাও যেনো এর আগেও আমি, এএ আগেও আমি,
বলতে বলতে মেঘ মাথা ঘুরে পড়ে যায়।মুক্তা মেঘ বলে চিৎকার করে উঠে।
———
ভার্সিটিতে একটা মেয়ের কোমড় ধরে দাঁড়িয়ে আছে রাহুল।মাঝে মাঝে মেয়েটার হাতে কিস করছে,মেয়েটার গালে কিস করছে আর কথা বলছে।
দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকালো এসএন।সে এখানে এসেছিলো রাহুলের সাথে কথা বলতে।এসেই এই দৃশ্য দেখলো।রাহুলকে দেখে মনেই হচ্ছে না যে একটু আগে ওর কারণেই একটা মেয়ে মরতে বসেছিলো।এতো বড় একটা কাজ করে এসে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে,মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করে যাচ্ছে।
চলবে….