শুধু তুমি আমার পর্ব-১০

0
559

#শুধু_তুমি_আমার
#পর্ব_১০
#Fariba_Ahmed

এসএন রাহুলের দিকে এগিয়ে যায়।মেয়েটির সাথে কথা বলার ফাঁকে এসএন এর দিকে তাকায় রাহুল।ওর ভ্রু জোড়া কুঁচকে আসে।ভাবতে থাকে এই লোকটা কে?রাহুল মনে মনে ভয় পেতে থাকে।একটু আগে মেঘের সাথে যা হলো তার জন্য কি লোকটা ওর দিকে আসছে?মেঘ কি এই লোককে সব বলে দিয়েছে।রাহুল এসব ভাবতে থাকে।এসএন রাহুলের কাছে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,

–হ্যালো মিস্টার রাহুল খান।

পাশে থাকা মেয়েটির কোমড় থেকে হাত সরিয়ে তাকে ইশারায় চলে যেতে বলে রাহুল।রাহুলও এসএন এর দিকে হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করে।রাহুল এসএন কে জিজ্ঞাসা করে,

–কে আপনি?আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না

–আমি এসএন।আপনার বাবার কাছে নিশ্চয় আমার কথা শুনেছেন?

–হ্যাঁ ড্যাড আপনার কথা বলেছিলো।তাহলে আপনিই সেই ব্যাক্তি।ওয়েলকাম মিস্টার এসএন। আসুন বসে কথা বলি।

–ওকে।তো মিস্টার রাহুল খান আপনিই নাকি মিস্টার আর্টিস্ট?

–ইয়াহ,অবিয়াসলি,কোনো সন্দেহ আছে?

–হুম পুরো সন্দেহ আছে।ডাল মে তো কুছ কালা হে।

–কি বলতে চাইছেন আপনি?

–আপনি তো বুঝতেই পারছেন।

রাহুল বুঝেও না বোঝার ভান করে বললো,

–না আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।ড্যাড আমাকে বলেছে আপনি নাকি ড্যাডকে বলেছেন এই সব ছবি আপনার আঁকা।

–হুম এ সব ছবি আমার আঁকা।অন্য একজনের আঁকা ছবিকে নিজের বলাটা ঠিক নয় মিস্টার রাহুল খান।

–আচ্ছা তাই নাকি।তো আপনার কাছে কি প্রুভ আছে যে আপনি এই ছবির আর্টিস্ট?

— ইয়াহ।আমার কাছে প্রুভ আছে। আমার এই হাত।(ডান হাত দেখিয়ে)

–হাত তো আমারো আছে।

এসএন রাহুলের কথা শুনে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

— আমার কাছে প্রমাণ আছে নাকি নেই তা সেই আর্ট কম্পিটিশনে বোঝা যাবে।

–আপনার তো ওভার কনফিডেন্স মিস্টার এসএন।

রাহুলের কথা শুনে এসএন হাসলো।

–আপনার এই কথার জবাব আমি আর্ট কম্পিটিশনেই দিবো মিস্টার রাহুল।বি রেডি।তখনই বোঝা যাবে কার কনফিডেন্স ওভার কনফিডেন্স।আপনার নাকি আমার?(বলে বাঁকা হাসে)

এসএন এর কথা শুনে রাহুল রেগে যায়।

–আই এম ওলয়েস রেডি মিস্টার এসএন।

–ওকে নাও বায়।সে ইউ।

–বায়,বাট আমি আপনাকে দেখতে পারি?মুখে মাস্ক,চোখে সানগ্লাস তাই তো আপনাকে দেখাই হলো না।আর আপনার পরিচয় কি?

–সবুর করুন মিস্টার রাহুল।ঠিক সময় এলে আমাকেও দেখতে পাবেন আর আমার সম্পর্কেও সব জানতে পারবেন।

–ওকে,আর শুনুন মিস্টার এসএন।

–হুম বলুন মিস্টার রাহুল।

–গাড়ি দিয়ে সাবধানে যাবেন।বলা তো যায় না কখন কি হয়ে যায়?

এসএন ভ্রু কুচকে রাহুলের দিকে তাকায়।

–ইয়াহ,অবশ্যই।আপনিও সাবধানে থাকবেন।আর কালকে তো আর্ট কম্পিটিশনে দেখা হচ্ছে।তখন দুধ আর পানি আলাদা হয়ে যাবে।(বাঁকা হেসে)

–হুম ঠিক,আপনার আসল রূপ বেরিয়ে আসবে কালকেই।

–কার রূপ বের হবে সেটাতো সময় বলবে মিস্টার রাহুল।বি রেডি।

–ইয়েস।

–ওকে বায় মিস্টার রাহুল।সি ইউ।

–ইয়েস,বায়।

এসএন চলে গেলো।রাহুল এসএন এর সামনে অনেক কনফিডেন্স নিয়ে কথা বললেও ভিতরে ভিতরে ভয় পেয়ে গেছে।অনেক ঘাবড়ে গেছে সে।
________
মেঘকে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যেতে দেখে ভয় পেয়ে যায় মুক্তা।মেঘু বলে চিৎকার করে উঠে।

–এই মেঘু কি হয়েছে তোর?তাকা না মেঘু?মেঘু,দেখ তুই তাকা একদম নাটক করিস না।

মুক্তা অনেকবার ডাকার পরও মেঘ উঠছে না দেখে মুক্তা বুঝে গেলো মেঘ নাটক করছে না।এর আগে একবার মেঘ মুক্তার সামনে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার এক্টিং করে।সেজন্য মুক্তা ভেবেছে মেঘ হয়তো।নাটক করছে ওকে বোকা বানানোর জন্য।মুক্তা ওর ব্যাগ থেকে পানি বের করে মেঘের মুখে ছিটিয়ে দিলো।মেঘের মুখে পানি ছিটিয়ে দিয়ে বার বার মেঘু মেঘু বলে ডাকছে।কিন্তু মেঘের জ্ঞান ফিরছে না।ভয়ে মুক্তা কান্না করে দিয়েছে।ও বুঝতে পারছে না কি করবে।আশেপাশে কোনো ছেলে মেয়েকেও দেখছে না।মুক্তা মেঘকে ওখানে রেখে কাউকে ডাকতে যায়।

এসএন ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার আগে ভাবলো মেঘের সাথে একবার দেখা করে যাবে।তাই সে কাঠগোলাপ গাছের দিকে চলে গেলো।সেখানে গিয়ে মেঘকে সেন্সলেস অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে যায় এসএন।দৌঁড়ে মেঘের কাছে যায়।মেঘের মাথা নিজের কোলে রাখে।

–মেঘ,এই মেঘ কি হয়েছে তোমার?মেঘ চোখ খুলো।মেঘ,মেঘ,আমার কথা শুনতে পাচ্ছো?

এসএন দেখলো মেঘ তার ডাকে সারা দিচ্ছে না।এ বুঝতে পারলো মেঘ অজ্ঞান হয়ে গেছে।মেঘের মুখে পানির ছিটা দেখে বুঝলো কেউ ওর মুখে পানি দিয়েছে।কিন্তু কে দিলো তা বুঝতে পারছে।পরে এসএন ভাবলো এসব নিয়ে এখন ভাবা যাবে না।ওখানে থাকা পানির বোতল থেকে পানি নিয়ে মেঘের মুখে দিলো।কিন্তু মেঘের তাও জ্ঞান ফিরছে না।মেঘকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।মেঘকে এসএন তার কোলে তুলে নেয়।কোলে নিয়ে সেখান থেকে নিয়ে চলে যায়।

এদিকে মুক্তা কাউকে খুঁজতে থাকে।কিন্তু কাকে বলবে বুঝতে পারছে না।মুক্তা দূর থেকে দেখলো একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে,মুক্তার কাছে খুব চেনা চেনা লাগছে।মুক্তা সামনে গিয়ে দেখলো ইয়ান দাঁড়িয়ে আছে।ইয়ানকে দেখে মুক্তা দৌঁড়ে গিয়ে ইয়ানকে জড়িয়ে ধরলো।জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।আকস্মিক ঘটনায় ইয়ান কিছুই বুঝতে পারছে না।ইয়ান মেয়েটাকে সামনে এনে দেখলো মুক্তা এটা।মুক্তার চোখে পানি দেখে ইয়ানের বুকটা ধুক করে উঠলো।ইয়ান হাত দিয়ে মুক্তার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললো,

–কি হয়েছে মুক্তা?কাঁদছো কেন?

–ই য়া ন…

–বলো।

–মে ঘ,মে ঘ

অতিরিক্ততা কান্না আর ভয় পাওয়ার কারণে মুক্তা ভালো করে কথাও বলতে পারছে না।

–ই য়া ন,মে ঘ,মে ঘ…

–কি হয়েছে মেঘের?

–অজ্ঞান হয়ে গেছে।

–কোথায় মেঘ?চলো।

–চলুন।

ইয়ান আর মুক্তা মেঘের কাছে চলে গেলো।যাওয়ার সময় দেখলো কেউ একজন মেঘকে কোলে করে নিয়ে আসছে।একটা ছেলে।মুক্তা এসএন এর কাছে যায়।গিয়ে বলে,

–কে আপনি?মেঘকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?মেঘুকে নামান।

–মেঘ অজ্ঞান হয়ে গেছে।ওর জ্ঞান ফিরছে না।ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।তুমি কে হও মেঘের?

–আমি ওর ফ্রেন্ড।

— তার মানে ওখানে তুমিই মেঘের জ্ঞান ফিরানোর চেষ্টা করেছিলে?

— হ্যা

–আচ্ছা আসো আমার সাথে।দেরি করলে চলবে না।আমাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের কাছে মেঘকে নিয়ে যেতে হবে।

–আচ্ছা চলুন।

মুক্তা আর ইয়ান এসএন এর সাথে চলে গেলো।গাড়িতে এসএন মেঘকে গাড়ির পিছনের সিটে শুইয়ে দিলো।মুক্তা গিয়ে মেঘের পাশে বসলো।ইয়ান এসএন এর সাথে গাড়ির সামনের সিটে বসলো।মুক্তা অনবরত কেঁদেই যাচ্ছে।কোনোভাবেই তার কান্না থামছে না।এসএন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেলো।গাড়ি থেকে নেমে আবার মেঘকে কোলে নিয়ে ছুটে গেলো ডাক্তারের কাছে।

মেঘকে ডাক্তার দেখছে আর এসএন,মুক্তা,ইয়ান বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।মুক্তাকে কান্না করতে দেখে ইয়ান মুক্তার গাল ধরে মুক্তার চোখের পানি মুছে দিলো।মুক্তাকে বললো,

–মুক্তা এভাবে কান্না করো না?তুমি অসুস্থ হয়ে যাবে।মেঘ এর কিচ্ছু হবে না।ও একদম ঠিক হয়ে যাবে।

–মেঘের এরকম আগে কখনো হয়নি।আমার খুব ভয় করছে।

–ভয় পেয়ো না মুক্তা।মেঘ সুস্থ হয়ে যাবে।

আরো অনেক কিছু বলে ইয়ান মুক্তাকে শান্ত করে।

চলবে…