#শুধু_তুমি_আমার
#পর্ব_১১
#Fariba_Ahmed
মুক্তাকে শান্ত করে ইয়ান একটা পানির বোতল আনতে গেলো।পানির বোতল নিয়ে এসে মুক্তাকে পানি খাইয়ে দিলো।এসএন ওখানেই বসে ছিল।মুক্তা এসএন এর সামনে গেলো।গিয়ে বললো,
–মিস্টার এসএন,শুনুন।
মুক্তার গলা শুনে মুক্তার দিকে তাকায় এসএন।
–হুম বলো।
–আপনিই তাহলে সেই ব্যাক্তি যে মেঘকে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচিয়েছেন?
–হ্যাঁ আমিই ওকে বাঁচিয়েছি।রাহুল খান আবার ওর ক্ষতি করতে পারে।এতো বড় একটা কাজ করার পরও ওর মাঝে কোনো অনুতপ্ত নেই।ও দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে।
–ওকে আমি একদমই ছাড়বো না।মেঘুর সাথসবসময় ও উল্টা পাল্টা কাজ করতে চায়।খুবই জঘন্য ওই লুচ্চাটা।
মুক্তার কথা শুনে এসএন বললো,
–তুমি রাহুলকে কিছু বলতে যেও না।ও তোমার ক্ষতি করতে একবারো ভাববে না।বিষয়টা আমি দেখে নিবো।
–আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনি না থাকলে যে আজ কি হতো মেঘুর?
ওদের কথার মাঝেই ইয়ান মুক্তাকে বলে,
–কিন্তু মেঘ অজ্ঞান হলো কীভাবে?
মুক্তা আমতা আমতা করে বললো,
–হয়তো এতো উঁচু থেকে পড়েছে,ভয় পেয়ে গেছে অনেক।আবার হাত কেটে অনেক রক্ত বের হয়েছে হয়তো এই কারণেই।
–হুম ঠিক বলেছো।তুমি টেনশন করো না মুক্তা।চলো বসবে।
–হুম।
মুক্তার কথা শুনে এসএন ভ্রু কুচকে মুক্তার দিকে তাকায়।এসএন এর মনে হচ্ছে মুক্তা কিছু একটা লুকাচ্ছে।কিন্তু কি লুকাচ্ছে আর কেনোই বা লুকাচ্ছে?এসব ভাবনার মাঝে ডাক্তার এসে উপস্থিত হন।ডাক্তারকে দেখে সবাই ডাক্তারের কাছে যায়।এসএন ডাক্তারকে বলে,
–ডক্টর মেঘ কেমন আছে?ও ঠিক আছে তো।
–হুম সি ইজ ফাইন।
মুক্তা বললো,
–আর কোনো বিপদ নেই তো ওর?
–নো।উনাকে আমি ইঞ্জেকশন দিয়েছি।কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরে আসবে।
ডাক্তারের কথা শুনে মুক্তা একটা স্বস্তির নিশ্বাস নিলো।
ডাক্তার আবার বললেন,
–একজন আসুন আমার সাথে মেডিসিন লিখে দেবো।
এসএন বলে উঠলো,
–আমি যাচ্ছি,চলুন ডাক্তার।
এসএন ডাক্তারের সাথে যাওয়ার পর সে ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করলো,
–মেঘের কি হয়েছিলো ডাক্তার?সামান্য ভয় থেকে অজ্ঞান হলেও এতো বার পানি দেওয়ার পর জ্ঞান ফেরার কথা।
–দেখুন উনি এখন ঠিক আছেন তবে আমার ধারণা উনি ভয় থেকে অজ্ঞান হননি।উনার মাথার উপর চাপ পড়ার কারণে এরকম হয়েছে।
–মাথার উপর চাপ পড়ার কারণে মানে?
–হয়তো উনি কিছু মনে করার চেষ্টা করেছিলেন যা উনি ভুলে গিয়েছেন,ভুলে যাওয়া কোনো কথা শুনার পর তা মনে করতে গিয়ে উনার মাথায় অনেক চাপ পড়ে।আর সেই থেকেই উনি অজ্ঞান হয়ে যান।
–ওওহ,বুঝতে পেরেছি।
–এই নিন,এই মেডিসিন গুলো খাওয়াবেন।
–ওকে কি এখন দেখতে পারি?
–ইয়েস।
–ওকে কি বাসায় নিয়ে যেতে পারি ডাক্তার?
–হ্যাঁ নিয়ে যান।
–থেংক্স ডাক্তার।
–মোস্ট ওয়েলকাম।
ডাক্তার চলে যায়।ডাক্তার চলে যাওয়ার পর এসএন ডাক্তারের বলা কথাগুলো ভাবতে থাকে।কি এমন কথা মেঘ ভুলে গেছে যে তা মনে করতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলো।এটা ভাবতে ভাবতে মেঘের রুমের দিকে চলে গেলো যেখানে ওকে রাখা হয়েছে।
বাইরে থেকে মেঘকে একবার দেখে মুক্তা আর ইয়ানের কাছে চলে গেলো।ওদেরকে বললো,
–চিন্তার কোনো কারণ নেই।ওকে দেখতে পারো।
ইয়ান আর মুক্তাও মেঘকে গিয়ে দেখে আসলো।এসএন ইয়ান আর মুক্তাকে বললো গাড়িতে গিয়ে বসতে।
এসএন মেঘকে আনতে গেলো।রুমের ভিতরে ঢুকে মেঘের দিকে ভালো করে তাকালো।মেঘের মুখে আলাদা একটা মায়া আছে।ঘুমিয়ে থাকলে কতো সুন্দর লাগে দেখতে।এসএন মেঘকে কোলে তুলে নিলো।কোলে নিয়ে ওকে বাইরে গাড়িতে নিয়ে গেলো।হাসপাতালের লোকেরা অনেক কিছু বলাবলি করছে এটা নিয়ে।একটা বৃদ্ধ মহিলা মেঘ আর এসএন এর সামনে এসে বললো,
–তোমার বউ অনেক ভাগ্যবতী যে তোমার মতো সোয়ামি পাইছে।তুমি তো তোমার বউরে অনেক ভালোবাসো।
তুমি তোমার বউরে নিয়া যেমনে ছুইটা আইছো আমার তো তাই মনে হইলো।খুব সুখী হইবা তোমরা।
এসএন মহিলাটির কথা শুনে অবাক হলো।সত্যি কি সে মেঘের জন্য এতো টেনশন করছিলো?কিন্তু কেন?মেঘের সাথে তার মায়াবিনীর মিল আছে তাই নাকি অন্য কিছু।এসএন এসব ভাবতে লাগলো।এসব কথা ভাবা বাদ দিয়ে মেঘকে নিয়ে গাড়ির দিকে চলে গেলো।পিছনের সিটে মুক্তার সাথে মেঘকে বসিয়ে দিয়ে এসএন গাড়ি ড্রাইভ করে নিয়ে গেলো।হাসপাতাল থেকে মেঘের বাড়ি দূরে না হওয়ায় অনেক তাড়াতাড়ি তারা মেঘের বাসায় পৌঁছে গেলো।
বাসার সামনে গিয়ে কলিং বেল বাজাতেই মেঘের মা দরজা খুলে দিলো।দরজা খুলে মেঘকে এসএন কোলে অজ্ঞান অবস্থায় দেখে ঘাবড়ে গেলেন উনি।ভয় পেয়ে গেলেন।
মেঘের কাছে ছুটে গেলেন।
–মেঘ এই মেঘ কি হয়েছে মা তোর? কথা বল।মায়ের সাথে রাগ করেছিস তাই না।কথা বল মা।(কান্না করে)
মুক্তার দিকে তাকিয়ে বললো,
–মুক্তা মেঘের কি হয়েছে?ও কথা বলছে না কেন?আমার সাথে রাগ করেছে তাই না?
মুক্তা মেঘের মা কে বললো,
–আন্টি তুমি চিন্তা করো না।মেঘ একদম ঠিক আছে।অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো তাই।
–কি বলছিস তুই?কীভাবে অজ্ঞান হলো?ওও,বুঝেছি আমি বুঝতে পেরেছি।
মেঘের মায়ের কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে যায়।মেঘের মা কি তাহলে সত্যিটা জানে?কিন্তু কীভাবে সম্ভব।আসার আগে এসএন সবাইকে বলে দিয়েছে মেঘের মা কে কিছু না জানাতে।
মুক্তা মেঘের মা কে জিজ্ঞাসা করলো,
–কি বুঝেছো তুমি আন্টি?
–জানিস সকালবেলা মেঘকে আমি বার বার করে বললাম খেয়ে যেতে,ক্যান্টিনে কি না কি খাবে।ও আমার কথা না শুনেই চলে গেলো।সকালে খেয়ে গেলে তো এসব কিছুই হতো না।
উনার কথা শুনে সবাই উনার সাথে তাল মেলালো।
এসএন বলে উঠলো,
–আন্টি মেঘকে ঘরে নিয়ে যাওয়া উচিত।
–হ্যাঁ হ্যাঁ আসো।
ওরা সবাই ভিতরে চলে গেলো।মুক্তা এসএন কে মেঘের ঘর দেখিয়ে দিলো।এসএন মুক্তাকে নিয়ে ওর ঘরে শুইয়ে দিলো।এসএন মেঘের মা কে বললো,
–আপনি চিন্তা করবেন না।মেঘ একদম ঠিক আছে।একটু পরেই ওর জ্ঞান ফিরে আসবে।
–ঠিক আছে।কিন্তু তুমি কে বাবা?তোমাকে তো চিনলাম না।
–আমি মেঘের ফ্রেন্ড। ওকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখে ওকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম।
মুক্তাও বলে উঠলো,
–হুম আন্টি,উনিই মেঘকে নিয়ে এলেন।
–তোমাকে অনেক ধন্যবাদ বাবা।তুমি না থাকলে যে কি হতো।
–কিচ্ছু হতো না।আপনি আর কান্না করবেন না।আপনি বরং মেঘের জন্য কিছু বানিয়ে আনুন।
মেঘের মা চোখ মুছে বললো,
–ঠিক বলেছো।সেই সকাল থেকে না খেয়ে আছে।আমি কিছু বানিয়ে আনি।তুমিও বসো বাবা।যেও না কিন্তু।
–ঠিক আছে,আপনি যান।
মেঘের মা চলে গেলেন।মেঘের মা চলে যাওয়ার পর ইয়ান বলে উঠলো,
–আমি আজকে আসি।আমার একটা কাজ আছে।
মুক্তাও বলে উঠলো,
–আমাকেও যেতে হবে।আমি আবার একটু পরে এসে মেঘুকে দেখে যাবো।
–ঠিক আছে মুক্তা,তাহলে তুমি আমার সাথে চলো।আমি তোমাকে নামিয়ে দেবো।
–কিন্তু
–কোনো কিন্তু নয়।
–ঠিক আছে।
–আচ্ছা আমি নিচে যাচ্ছি তুমি আসো।
ইয়ান চলে যেতেই মুক্তা একবার মেঘকে দেখে মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যেতে নিলে এসএন এর ডাকে ফিরে তাকায়।
–মুক্তা,
–জ্বি বলুন।
–আমি জানি মেঘ ভয় থেকে অজ্ঞান হয়নি।অন্য কারণে অজ্ঞান হয়ে গেছে।আমি জানতে চাই তুমি যখন ওর সাথে ছিলে তখন কি হয়েছিলো?
মুক্তা এসএন এর এমন কথার জন্য প্রস্তুত ছিলো না।এসএন এর কথা শুনে মুক্তা বুঝতে পারছে না কি বলবে।মুক্তা বলে উঠলো,
চলবে,