শুধু তুমি আমার পর্ব-১২

0
520

#শুধু_তুমি_আমার
#পর্ব_১২
#Fariba_Ahmed

মুক্তা এসএন এর এমন কথার জন্য প্রস্তুত ছিলো না।এসএন এর কথা শুনে মুক্তা বুঝতে পারছে না কি বলবে।মুক্তা বলে উঠলো,

–না না আমার মনে হয় মেঘ সত্যি সত্যি ভয় থেকেই অজ্ঞান হয়েছে।

–আমি মিথ্যা কথা বলা একটুও পছন্দ করি না মুক্তা।সত্যি কথা বলো।

–মিস্টার এসএন আমি সত্যি কথাই বলছি।

–তাহলে কি ডাক্তার আমাকে মিথ্যা কথা বলেছেন?

–মানে?ডাক্তার আপনাকে কি বলেছে?

–এই যে মেঘ ভয় থেকে অজ্ঞান হয়নি।ভয় থেকে অজ্ঞান হলে পানি ছিটা দেওয়ার পরেই ওর জ্ঞান ফেরার কথা ছিলো কিন্তু তা হয়নি।ডাক্তার বলেছেন মেঘ কিছু মনে করতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে।যা ও ভুলে গিয়েছে তা মনে করার চেষ্টা করায় ওর মাথায় চাপ পড়ে।এখনও কি তুমি বলবে মেঘ ভয় থেকে অজ্ঞান হয়েছে?

–হুম মেঘ ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়নি।

তারপর মুক্তা এসএন কে সব বলে যা মেঘ বলেছিলো।সব শুনে এসএন অনেক অবাক হয়ে যায়।

–এবার তো বুঝলেন মেঘ কেনো অজ্ঞান হয়েছিলো।

–হুম

–মিস্টার এসএন আমি আসছি।আমাকে যেতে হবে।

–হুম যাও।

মুক্তা মেঘের ব্যাগটা রেখে চলে যায়। ব্যাগের ভিতর থেকে একটা কাগজ নিচে পড়ে যায় কিন্তু মুক্তা তা খেয়াল করেনি।

মুক্তা বাইরে গিয়ে দেখে ইয়ান দাঁড়িয়ে আছে গাড়িতে হেলান দিয়ে।চোখে সানগ্লাস।দেখতে অনেক কিউট আর হ্যান্ডসাম লাগছে।আরেকবার ক্রাশ খেলো মুক্তা।এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে ইয়ানের দিকে।নিজের দিকে মুক্তাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুচকি হাসলো ইয়ান।তারপর মেঘের কাছে গিয়ে বললো,

–মিস মুক্তা আমাকে কি দেখা হয়েছে?দেখা হলে কি আমরা যেতে পারি?আর না দেখা হলেও কোনো সমস্যা নেই।আমি দাঁড়িয়ে আছি তুমি আমাকে দেখো।

ইয়ানের এরকম লাগামহীন কথা শুনে মুক্তা অনেক লজ্জা পেলো।ইয়ানকে কিছু না বলে তাড়াতাড়ি গাড়িতে গিয়ে বসলো।ইয়ান আবার মুচকি হেসে গাড়িতে গিয়ে বসলো।গাড়িতে গিয়ে বসে ইয়ান মুক্তার কানের কাছে গিয়ে বললো,

–লজ্জা পেলে তোমাকে খুব সুন্দর লাগে মুক্তা।আই লাভ ইট।

এই কথা শুনে মুক্তার আরো লজ্জা পেয়ে যায়।মাথা নিচু করে বসে থাকে।ইয়ান একবার মুক্তার দিকে তাকিয়ে হেসে গাড়ি চালাতে মন দেয়।

এসএন গিয়ে মেঘের পাশে বসে।এখনো জ্ঞান ফিরেনি তার।খুব গভীরভাবে মেঘকে দেখতে থাকে এসএন।এসএন ভাবতে থাকে মেঘের সাথে তার মায়াবিনীর অনেক মিল আছে।মেঘের কাছে আসলেই তার মায়াবিনীর কথা মনে পড়ে।

এসএন বসে আছে তখনই চোখ গেলো নিচের দিকে।একটা কাগজ পড়ে আছে নিচে।এসএন উঠে গিয়ে নিচ থেকে কাগজটা তুললো।কাগজটা নিয়ে নিজের দিকে ফেরাতেই দেখলো কাগজের একটা ছবি আঁকা।তবে কাগজটা অনেক পুরনো।এসএন ছবিটা দেখে বুঝতে পারলো ছবিটা ওর ই আঁকা।এসএন যখনই ছবি আঁকে তখনই ছবির ভিতরেই ছবি আঁকার তারিখ লিখে রাখতো,এমনভাবে লিখে রাখতো মনে হতো ছবিতে আঁকা দৃশ্যের একটি অংশ।এসএন খেয়াল করে দেখলো ছবিটা অনেক আঁকা।প্রায় ১২ বছর আগের আঁকা ছবি।তারিখটা দেখে ওসএন চমকে উঠলো।কি করে সম্ভব এটা?এই আঁকা ছবি তো শুধু তার মায়াবিনীর কাছে ছিলো।সে তার মায়াবিনীর জন্য এই ছবি এঁকেছিলো।কিন্তু এই ছবি মেঘের কাছে কি করে এলো।তার মানে কি মেঘ ই আমার মায়াবিনী?সব কিছু গুলিয়ে যাচ্ছে এসএন এর।কিছুই মিলাতে পারছে না।

ছবিটা টেবিলের উপরে রেখে এসএন আবার মেঘের কাছে গিয়ে বসে রইলো।মেঘের গালে আলতো করে নিজের হাত রাখলো।হাত রেখে বলে উঠলো,

–তুমি কে মেঘ?তুমি কি মেঘালয়া ইসলাম নাকি আমার মায়াবিনী তুমি?তুমিই কি আমার মেঘরুশা মায়াবিনী?

এসএন মেঘের ঘরে এদিক থেকে ওদিক আবার ওদিক থেকে এদিকে পাইচারি করছে।অনেকক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরও মেঘের জ্ঞান ফিরছে না।একটু আগে মেঘের মা মেঘকে এসে একবার দেখে গেছে।উনি এসএন কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন মেঘের জ্ঞান কখন ফিরবে?এসএন তখন বলেছিলো একটু পর।কিন্তু মেঘের জ্ঞান এখনো ফিরছে না।একটু পর ডাক্তারকে কল দেওয়ার উদ্দেশ্যে ফোন বের করার সময় এসএন খেয়াল করলো মেঘের হাত নড়ছে।তার মানে মেঘের জ্ঞান ফিরছে।এসএন গিয়ে মেঘের মাথার কাছে বসলো।মেঘ চোখ মেলে দেখে এসএন ওর মাথার কাছে বসে আছে।এসএন কে দেখে মেঘ মৃদু হাসলো।

এসএন মেঘকে জিজ্ঞাসা করলো,

–এখন কেমন লাগছে মেঘ?মাথা ব্যাথা কি আবার করছে?

–না।আমি ঠিক আছি।মেঘ উঠে বসতে নিলে পড়ে যেতে নেয়।এসএন তা দেখে তাড়াতাড়ি করে মেঘকে ধরে ফেলে।নিজের বাহুতে নিয়ে নেয়।এসএন এর এতো কাছে এসে মেঘের হার্ট বিট বেড়ে যায়।অজানা অনুভূতিরা এসে ভিড় করে মেঘের মনের কোণে।মুখ তুলে তাকায় এসএন এর দিকে।চেয়ে থাকে একে অপরের চোখের দিকে।হালকা বাতাস এসে উড়িয়ে দেয় মেঘের চুল।চুলগুলো এসে পড়ে মেঘের মুখে।আলতো করে এসএন মেঘের মুখ থেকে চুলগুলো সরিয়ে দেয়।এসএন এর ছোঁয়ায় কেঁপে উঠে মেঘ।

এসএন মেঘকে ভালো করে বসিয়ে দিয়ে মেঘের কাছ থেকে সরে আসে।মেঘের লজ্জায় দুই গাল লাল হয়ে গেছে,এসএন সেটা ঠিকই খেয়াল করেছে,এটা দেখে এসএন মুচকি হাসে।এসএন লক্ষ্য করে মেঘ এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছু একটা খুঁজছে।তা দেখে এসএন মেঘকে বলে উঠলো,

–কিছু খুঁজছো মেঘ?লাগবে কিছু?

–হুম,পানি খাবো।

–আচ্ছা আমি নিয়ে আসছি।

তারপর এসএন পানি এনে মেঘকে দিলো।মেঘের মনে অনেক প্রশ্ন।পানি খেয়ে মেঘ এসএন কে জিজ্ঞাসা করলো,

–মিস্টার এসএন আমি এখানে এলাম কীভাবে?আমি তো ভার্সিটিতে ছিলাম।আর কি হয়েছিলো আমার?

মেঘ একনাগারে প্রশ্ন করেই যাচ্ছে।এসএন মেঘকে বললো,

–মেঘ থামো একটু।তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি।তুমি ভার্সিটিতে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলে।

হ্যাঁ আমি তো মুক্তার সাথে কথা বলছিলাম।তখন হঠাৎ করেই মাথায় প্রচুর ব্যাথা হওয়া শুরু হয়।তারপর আর আমার কিছুই মনে নেই।

–তারপর আমি তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।সেখানে ডাক্তার দেখিয়ে তোমাকে বাসায় নিয়ে আসি।আমার সাথে মুক্তা আর মিস্টার ইয়ানও ছিলো।

-ওও আচ্ছা।

তখনই মেঘের ওর মায়ের কথা মনে পড়ে।

–মিস্টার এসএন মা,মাকে কি আপনারা সব বলে দিয়েছেন?আম্মু কিন্তু অনেক চিন্তা করবে।

–ডোন্ট ওরি মেঘ,তোমার মাকে আমরা কিছুই বলিনি।প্রথমে তোমাকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখে উনি অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন,অনেক কান্না করছিলেন।পরে উনাকে বোঝানোর পর উনি শান্ত হয়েছেন।তোমার জন্য খাবার বানাতে গিয়েছেন।একটু আগে এসেছিলেন তোমাকে দেখতে,তোমার জ্ঞান ফিরেনি দেখে অনেক চিন্তা করছিলেন।

–ওও,আপনাকে অনেক ধন্যবাদ মিস্টার এসএন।

–আচ্ছা মেঘ আমাকে একটা কথা বলো।

–কি কথা?

–আজকে যে তোমার মাথার যন্ত্রণা করলো এরকম কি আগে কখনো করেছিলো?

–হ্যাঁ করেছিলো।

–কবে?

–মিস্টার আর্টিস্ট এর আঁকা একটা ছবি দেখে।

–মিস্টার আর্টিস্ট কে?

–যার আঁকা ছবি এতো সুন্দর আর জীবন্ত উনি।উনার তো কোনো নাম জানি না তাই আমি উনাকে মিস্টার আর্টিস্ট বলে ডাকি।

–সে তো রাহুল খান।

–না উনি নন।উনার মতো মানুষ এরকম ছবি আঁকতই পারে না।আমি বিশ্বাস করি উনি মিস্টার আর্টিস্ট নন।

–তুমি সত্যিই বুদ্ধিমতী মেঘ।

এসএন টেবিলে থাকা ছবিটা মেঘকে দেখিয়ে বলে,

–এটাই কি সেই ছবি?

–হ্যাঁ,আপনি কোথায় পেলেন?

–নিচে পড়ে ছিলো।আচ্ছা এই ছবি দেখলে তোমার মাথায় ব্যাথা কেনো হয়?

–তা তো আমি জানি না।তবে এই ছবিটা আমার অনেক পছন্দের একটা ছবি।এই ছবিটা দেখলে কিছু আবছা আবছা জিনিস ভেসে উঠে।তখন মাথায় খুব যন্ত্রণা হয়।

–ঠিক আছে বুঝেছি।তুমি বসো।আমি তোমার মাকে বলে আসি যে তোমার জ্ঞান ফিরেছে।

–আচ্ছা।

তারপর এসএন চলে যায়।

চলবে….