শুধু তুমি আমার পর্ব-১৩

0
480

#শুধু_তুমি_আমার
#পর্ব_১৩
#Fariba_Ahmed

এসএন নিচে গিয়ে দেখলো মেঘের মা রান্নাঘরে।এসএন রান্নাঘরে গিয়ে মেঘের মা কে বলল মেঘের জ্ঞান ফিরেছে।মেঘের মা ছুটে মেঘের কাছে গেলেন।এসএনও মেঘের মায়ের সাথে মেঘের কাছে গেলো।মেঘকে বসে থাকতে দেখে মেঘের মা মেঘকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।

–মেঘ কেমন লাগছে তোর?খারাপ লাগলে বল আমাকে?

–আমি ঠিক আছি আম্মু।তুমি কান্না করছো কেন?দেখো আমার কিছুই হয়নি।

–আমার কথাতো একটুও শুনিস না তুই।কতবার বললাম খেয়ে যা।খেয়ে গেলে তো আর এরকম হতো না।অসুস্থ হয়ে পড়তি না।আমি যখন থাকবো না তখন তুই বুঝবি।

–আম্মু কি বলছো তুমি?তুমি জানো না এসব কথা আমার একটুও ভালো লাগে না।আমি তো এখন একদম ঠিক আছি।(কাঁদো কাঁদো গলায়)

–আচ্ছা বলবো না।তুই বস।আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসছি।

–ঠিক আছে।

মেঘের মা চলে যায়।এসএন মেঘকে বলে উঠে,

–খুব ভালোবাসো তোমার আম্মুকে?

–হুম।

–আচ্ছা তোমার বাবা কোথায়?

–আমার বাবা নেই।ছোটোবেলায় বাবা দূর আকাশের ওই তারা হয়ে গেছে।

–আই এম সো সরি মেঘ।আমি বুঝতে পারিনি।

–ইটস ওকে।আপনি বসুন।

–আমি বসবো না।আমার কাজ আছে।আমাকে যেতে হবে।

–আপনি চলে গেলে আম্মু মন খারাপ করবে।আপনি খেয়ে যান প্লিজ।আম্মু খুব ভালো রান্না করে।

–ওকে।

মেঘের খুব ইচ্ছে করছে এসএন এর মুখটা একবার দেখার।কিন্তু এসএন তো সবসময় মুখ ঢেকে থাকে।উনাকে বললে যদি উনি কিছু মনে করেন।নিজের মন আর মস্তিষ্কের সাথে যুদ্ধ করে মেঘ সাহস করে এসএন কে বলে,

–আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো?

–সিউর,কি কথা?বলো।

–আপনার চেহারাটা দেখতে পারি।

–না।

–কেন?

–এখন নয়।সময় হলে দেখতে পাবে।সবাই দেখতে পাবে।

–সবাই মানে?

–কিছু না।

–তার মানে আপনার চেহারা এখন পর্যন্ত কেউ দেখেনি?

–হুম

–আরেকটা কথা জিজ্ঞাসা করবো?

–বলো।

–আপনি আপনার চেহারা ঢেকে রাখেন কেনো ?

–একটা কারণ আছে তাই।তবে এই মাস্ক দিয়ে চেহারা ঢেকে রাখার প্রয়োজনীয়তা খুব তাড়াতাড়ি শেষ হতে চলেছে।

–মানে?

–তুমি বুঝবে না।

ওদের কথার মাঝেই মেঘের মা চলে আসে।সাথে খাবার নিয়ে আসে।এসএন কে খেতে দেয়।এসএন প্রথমে মানা করলেও পরে ঠিকই খেয়ে নেয়।মেঘের মা মেঘকে খাইয়ে দেয়।

খাবার খেয়ে মেঘের মা কে আর মেঘকে বিদায় বিদায় জানিয়ে চলে যায়।গাড়িতে গিয়ে বসে।মেঘ বারান্দায় চলে যায় এসএন কে এক পলক দেখতে।বারান্দা দিয়ে এসএন কে একবার দেখে মেঘ।এসএন গাড়ি চালিয়ে চলে যায়।মেঘ ঘরে এসে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দেয়।রাজ্যের ঘুম নেমে আসে মেঘের চোখে।ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দেয় মেঘ।

গাড়ি চালিয়ে বাসায় ফিরে এসএন।পুরনো সেই বাসাটাতেই এসেছে সে।কিন্তু এই বাসা আর আগের মতো নেই।খুব সুন্দর করে সাজানো।বাসায় ঢুকে প্রথমে সেই ঘরটিতে যায় এসএন যেখানে তার আঁকা ছবি রয়েছে।সেখানে গিয়ে সেই ছবিটা দেখে যেখানে একটা ছেলে একটা মেয়েকে একগুচ্ছ কাঠগোলাপ ফুল দিচ্ছে আর মেয়েটি হাত বাড়িয়ে নিচ্ছে।নিজের মাস্ক আর সান গ্লাস খুলে ফেলে।ছবিটা হাতে নিয়ে বলে উঠে,

–মায়াবিনী বড্ড মনে পড়ছে তোমার কথা।মেঘের কাছে গেলেই কেনো তোমার কথা এতো মনে পড়ে?আমি কিছুই মেলাতে পারছি না মায়াবিনী।বারবার কেনো মনে হচ্ছে যে মেঘই আমার মায়াবিনী।কোনো হিসাবই মিলছে না।মায়াবিনী আমি তোমাকে খুব তাড়াতাড়ি খুঁজে পাবো।তোমার মিস্টার আর্টিস্ট খুব তাড়াতাড়ি তোমার কাছে আসবে।সব হিসাব আমি মেলাবো।

কথাটা বলে ছবিতে থাকা মেয়েটির কপালে চুমু দিয়ে ছবিটা সেখানে রেখে চলে যায় এসএন নিজের রুমে।রুমে গিয়ে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে ভাবনায় পড়ে যায়।কিছুক্ষণ পরে উঠে ফ্রেশ হওয়ার জন্য।নিজের প্যান্ট এর পকেটে হাত দিতে একটা কাগজ পায় এসএন।কাগজটা খুলে দেখে প্রেসক্রিপশন। ভালো করে দেখে বুঝে এটাতে মেঘের জন্য মেডিসিন লেখা।তার নিজের উপরই রাগ হতে থাকে।সে মেঘের মেডিসিন এর কথা ভুলেই গিয়েছিল। সে বলে উঠে,

শিট,একদম ভুলে গিয়েছিলাম।

তারপর কপালে হাত দিয়ে কিছু একটা ভাবে।কাগজটা বিছানার উপরে রেখে আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে,গলায় একটা তোয়ালে ঝুলিয়ে বাথরুমে চলে যায় এসএন।
______
সময়টা মাঝ রাত।চাঁদের আলোয় চারদিক আলোকিত হয়ে আছে।মেঘ বারান্দায় বসে নীল আকাশের দূরের ওই চাঁদটাকে দেখছে।এটা মেঘের নিত্যদিনের কাজ।মেঘ যখন নীল আকাশের দূরের ওই মেঘঘেরা চাঁদ দেখতে ব্যস্ত তখন সেখানে আগমন ঘটে শুভ্রের।গাড়ি থেকে বের হয়ে শুভ্রের নজর যায় মেঘের বারান্দার দিকে।একটা মেয়ে বসে নীল আকাশের দূরের ওই চাঁদকে দেখছে।হালকা বাতাস মেয়েটার চুল উড়িয়ে দিচ্ছে।মেয়েটাকে দেখতে খুব মায়াবী লাগছে।এই মেয়েটার দিকে তাকিয়েই সে যেনো সারাটা জীবন পার করে দিতে পারবে।শুভ্র দূর থেকে দেখেই বুঝতে পারে মেয়েটি মেঘ।

দূর থেকে দাঁড়িয়েই শুভ্র তার মেঘকে দেখে যাচ্ছে।চাঁদের আলোতে মেঘকে যেনো কোনো পরী লাগছে শুভ্রের কাছে।শুভ্র মনে মনে বলছে,

–আর দেরি করবো না মেঘ,খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে নিজের করে নিবো।বড্ড ভালোবাসি যে তোমাকে।

মেঘ হঠাৎ করে খেয়াল করে তার বাসার নিচে কেউ দাঁড়িয়ে আছে আর তার দিকেই তাকিয়ে আছে।কে দাঁড়িয়ে আছে তা দেখার জন্য বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। আরেকটু সামনে এগিয়ে যায়।তখন ভালো করে তাকিয়ে দেখে শুভ্র দাঁড়িয়ে আছে।ফরমাল ড্রেসে এসেছে শুভ্র।এতো রাতে শুভ্রকে দেখে অনেক অবাক হয় মেঘ।

মেঘকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে শুভ্র হাত নেড়ে হাই দেয়।মেঘও শুভ্রের দেখাদেখি হাই দেয়।মেঘ ইশারায় জিজ্ঞাসা করে,

–আপনি এতো রাতে এখানে কি করেন?

শুভ্রও ইশারায় বলে,

–তোমাকে দেখতে এসছি?

–মানে?

–ইয়ানের কাছ থেকে সব শুনেছি।

–ওওও,আপনি দাঁড়ান আমি আসছি।

মেঘ বারান্দা থেকে ঘরে গেলো।বিছানায় মেঘের মা ঘুমিয়ে আছে।মেঘ তার মা কে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলো জেগে আছে কিনা।মেঘ বুঝতে পারলো তার মা জেগে নেই।সে আস্তে করে দরজা খুলে গুটিগুটি পায়ে বাইরে চলে গেলো।মেঘকে দেখে এগিয়ে এলো শুভ্র।

–কেমন আছো মেঘ?

–আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন?

–তোমাকে দেখার পর থেকে ভালো আছি।আজকে ইয়ানের কাছ থেকে সব শুনলাম।অনেক বড় একটা বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছো।

–হুম,মিস্টার এসএন না থাকলে কি যে হতো।উনি আমার অনেক বড় সাহায্য করেছেন।আপনি এতো রাতে কেনো আসতে গেলেন?

–কি করবো বলো?ইয়ানের কাছ থেকে এসব শুনার পর বাসায় একটুও মন বসছিলো না।তাই চলে এলাম তোমাকে দেখতে।

–মানে???(অবাক হয়ে)

–না মানে তোমার উপর দিয়ে এতো বড় বিপদ গেলো তাই ভাবলাম যে একবার দেখেই আসি।আজকে অফিসে অনেক কাজ থাকায় আমি অনেক বিজি ছিলাম।মেঘ রাহুলের কাছ থেকে দূরে থেকো।একা একা কোথাও যাবে না।

–হুম ঠিক আছে।তা আপনি এখন এতো রাতে না আসলেও পারতেন।

–আমার আসাটা কি তোমার ভালো লাগছে না।তুমি বললে চলে যাবো।

–না না তা নয়।

–আচ্ছা চলো এখানে বসি।

–ঠিক আছে।

–বারান্দায় বসে কি করছিলে এতো রাতে?

–আমার আকাশের চাঁদ দেখতে খুব ভালো লাগে।ঘুম ভেঙে যাওয়ায় বারান্দায় বসে চাঁদ দেখছিলাম।

–আমি তো ভেবেছি হয়তো তোমার সাথে আমার দেখা হবে না।বাট এসে দেখলাম যার জন্য এসেছি সে আমার চোখের সামনে।

চলবে…