শুধু তুমি আমার পর্ব-১৪

0
468

#শুধু_তুমি_আমার
#পর্ব_১৪
#Fariba_Ahmed

মেঘ আর শুভ্র শুভ্রের গাড়ির উপর বসে গল্প করতে লাগলো।একসময় গল্প করতে করতে মেঘ শুভ্রের কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে যায়।শুভ্র মেঘের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।জাগায় না আর মেঘকে।

কিছুক্ষণ পর শুভ্রের ফোনে কল আসে।অনেকক্ষণ কথা বলার পর শুভ্রের মুখে যেনো রাজ্যের হাসি ফুটে উঠে।শুভ্র ফোনের ওপাশের লোকটিকে বলে,

–সব ডিটেইলস আমার ফোনে পাঠিয়ে দাও এখনি।

একটু পর শুভ্রের ফোনে মেসেজ আসার শব্দ হয়।মেসেজগুলো দেখে শুভ্র অবাক হয়ে যায়।

মেঘের এক গালে হাত রেখে মেঘের কপালে চুমু খায় সময় নিয়ে।একহাতে মেঘকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে।শুভ্র হয়তো আকাশের চাঁদ পেয়ে গেছে।শুভ্রের ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা এখনো দেখা যাচ্ছে।এক হাতে মেঘকে জড়িয়ে ধরায় মেঘ ঘুমের ঘোরে নড়ে উঠে।মাথার অবস্থান পরিবর্তন করে শুভ্রের কাধ থেকে মাথা সরিয়ে শুভ্রের বুকে রাখে।শুভ্র অবাক হয়ে যায়।শুভ্রের হৃদয়ের স্পন্দন যেনো ট্রেনের গতিতে ছুটছে।শরীর জুড়ে অজানা অনুভূতিরা এসে ভিড় জমালো।নিজের ভালোবাসার মানুষকে এতো কাছে পেয়ে তার পুরো শরীর জুড়ে শিহরণ বয়ে গেলো।শুভ্র মেঘের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় সেও ঘুমিয়ে যায়।

কিছুক্ষণ পর একটা গাড়ি এসে থামে মেঘের বাসার সামনে।গাড়ি থেকে বের হয়ে আসে রাহুল।সে মেঘের বাসায় এসেছে মেঘকে সাবধান করতে যাতে তার কথা কাউকে না বলে।মেঘের বাসায় ঢুকার সময় ওর চোখ যায় মেঘের বাসায় পাশে একটা গাড়ির দিকে,গাড়ির উপরে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে বসে ঘুমিয়ে আছে।রাহুলের কৌতুহল জাগে।রাহুল এগিয়ে যায় সেদিকে।গিয়ে মেঘ আর শুভ্রকে দেখে অনেক অবাক হয়ে যায়।মনে মনে বলে উঠে,

–বাহ বাহ মেঘরানি,আমি তোমার হাত ধরলে তোমার কাছে আসলে ঘেন্না লাগে তোমার।আর এই দিকে এই ছেলেটার বুকে মাথা রেখে তো দিব্যি ঘুমিয়ে আছো।ইশ এখানে না আসলে কত বড় একটা সিন মিস করতাম।এখন শুধু তোমরা এই রাহুল খানের খেল দেখবে।তোমরা ভাবতেও পারবে আমি কি করবো এবার।

তারপর রাহুল কিছু একটা ভেবে হেসে উঠে।পকেট থেকে ফোন বের করে শুভ্র আর মেঘের কিছু ছবি তুলে নেয়।খুব বড় একটা খেলা খেলতে চলেছে রাহুল।ছবি তুলে ওদের দিকে তাকিয়ে বিশ্রীভাবে হেসে উঠে।তারপর সেখান থেকে চলে যায় রাহুল।

পাখির কিচিরমিচির আওয়াজে মেঘের ঘুম ভেঙে যায়।মেঘ আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখে চারদিকে পাখির ডাক আর আকাশটাও লালচে রঙ ধারণ করেছে।কিন্তু সে কোথায় আছে তাই বুঝতে পারছে না।নড়েচড়ে বসার চেষ্টা করতে গেলে দেখতে পেলো সে নড়তেই পারছে না ভালো করে। কারো বাহুতে আবদ্ধ হয়ে আছে।মাথা তুলে তাকিয়ে দেখলো শুভ্রের বাহুতে সে।মুহূর্তের মধ্যেই এক ঝাক লজ্জা এসে ভিড় করলো।নিজেকে আস্তে করে শুভ্রের বাহু থেকে সরিয়ে নিলো।শুভ্রের মাথা আস্তে করে নিজের কাধে রাখলো।বুঝতে পারলো কাল গল্প করতে করতে এখানেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো।কিন্তু শুভ্র কেনো তাকে ডাক দিলো না?মেঘের এখন ভয় করছে।কেউ যদি ওদের দুইজনকে দেখে ফেলে তখন কি হবে।

মেঘ আস্তে করে শুভ্রকে ডাক দিলো।কিন্তু শুভ্রের কোনো হেলদুল নেই।আবার ডাক দিতে শুভ্র নড়ে উঠলো।মেঘ ভাবলো শুভ্র হয়তো জেগে গেছে।কিন্তু মেঘের ভাবনায় শুভ্র এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে মেঘের এক হাত জড়িয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লো শুভ্র।মেঘ বুঝতে পারছে না কি করবে।অগত্যা বসে রইলো।শুভ্রের দিকে তাকালো।ভালো করে দেখতে লাগলো তাকে।শুভ্রকে এতো কাছ থেকে দেখে মেঘের অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে।মাঝে মাঝে একটা মানুষের সাথে শুভ্রকে গুলিয়ে ফেলে মেঘ।কারণ দুজনের কথা বলার স্টাইল,হাঁটাচলা সব এক।শুধু কন্ঠটা একটু ভিন্ন লাগে মেঘের কাছে।ওভাবেই বসে আছে মেঘ।একটু পর দেখলো মেঘের পাশের বাসার একটা মহিলা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে।মেঘ অনেক ঘাবড়ে যায়।কি করবে কিছুই বুঝছে না।মহিলাটি মেঘের অনেক কাছাকাছি চলে এসেছে।এদিকে শুভ্রও ঘুম থেকে উঠছে না।মেঘ তাড়াতাড়ি করে কোনো মতে শুভ্রের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিজের ওরনা দিয়ে শুভ্রের নাক মুখ ঢেকে দিলো।চুলগুলো কপালে এলিয়ে দিলো।তারপর বাসার ভেতরে ঢুকে লুকিয়ে পরলো।এদিকে মহিলাটি গাড়ির কাছে এসে দেখলো সেখানে একটি ছেলে শুয়ে আছে।কিন্তু মেয়েটা কোথায় গেলো।মহিলাটি তার বাসার জানালা দিয়ে দেখেছে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে মেঘেদের বাসার সামনে গাড়ির উপর শুয়ে আছে,তা দেখেই মহিলাটি আসে।ভেবেছিলো হয়তো মেঘ হবে মেয়েটি।কিন্তু এসে কোনো মেয়েকে না দেখে অবাক হলো।তারপর চলে গেলো।মহিলাটি চলে যেতেই মেঘ বাসা থেকে বেরিয়ে এলো।শুভ্রের কাছে চলে গেলো,ওকে তাড়াতাড়ি করে উঠাতে হবে।মেঘ শুভ্রের কাছে গিয়ে অবাক হয়ে গেলো।মেঘ তাড়াহুড়ো করে শুভ্রের মুখে যেভাবে ওরনা দিয়ে ঢেকে দিয়েছলো তাতে শুধু শুভ্রের চোখ দুইটা দেখা যাচ্ছে।এখন শুভ্রকে দেখতে পুরো এসএন এর মতো লাগছে।মেঘ অনেক অবাক হয়।আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় শুভ্রের দিকে।অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে আর ভাবতে থাকে।শুভ্রের ঘুম ভেঙে যায়।শুভ্র চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে তার সামনে মেঘ দাঁড়িয়ে আছে।তার মুখে কিছু একটা আছে ভেবে মুখের কাপড়টা সরিয়ে ফেলে দেখে একটা ওড়না।শুভ্র ভ্রু কুচকে মেঘের দিকে তাকায়।

–মেঘ কি হয়েছে?

–কে আপনি?

–মানে?কি বলছো এসব মেঘ?

–না মানে বলছিলাম এটা কি আপনি নাকি আপনার ভূত?
(উনাকে এই ব্যাপারে আমি কিছুই জিজ্ঞাসা করতে পারবো না।আমাকে আগে আরো সিউর হতে হবে।এমনও তো হতে পারে আমার ধারণা ভুল–মনে মনে)

–কেন?

–সেই কখন থেকে আপনাকে ডাকছিলাম কিন্তু আপনার উঠার কোনো নাম গন্ধ নেই।

–আসলে তুমি ঘুমিয়ে যাওয়ার পর আমার চোখটা লেগে গিয়েছিল।কখন ঘুমিয়ে গিয়েছি নিজেও বুঝতে পারিনি।এই ওড়না কি তোমার?

–হুম।

–কিন্তু আমার মুখে এটা কীভাবে এলো?

তারপর মেঘ শুভ্রকে সব খুলে বললো।সব শুনে শুভ্র বললো,

–আই এম সরি মেঘ।আমার জন্য তোমাকে অনেক বড় বিপদে পড়তে হতো।

–ইটস ওকে।আপনার কোনো দোষ নেই।ওই মহিলাটাই খুব খারাপ।

–বাই দা ওয়ে,তুমি খুব বুদ্ধিমতী মেঘ।মেঘ তুমি এখন বাসায় যাও।সকাল হয়ে আসছে।আজকে ভার্সিটি যেও না,রেস্ট নাও।

–ঠিক আছে।কিন্তু এতক্ষণ যখন ছিলেন আরেকটু থেকে যান।

–কেউ যদি দেখে ফেলে?

–না দেখবে না।

–ইয়াহ থাকতে পারি।কিন্তু কোনো কি কারণ আছে?

–হুম,আপনাকে একটা জায়গায় নিয়ে যাবো।দেখবেন আপনার খুব ভালো লাগবে।

–ঠিক আছে।চলো।

তারপর মেঘ শুভ্রকে নিয়ে ওদের বাসার পিছনে একটা বিলের কাছে নিয়ে যায়।বিলে অনেক পদ্ম ফুল ফুটে আছে।এখনো ভালো করে সকাল হয়নি।সূর্য মামা এখনো দেখা দেয়নি।তবে লাল আভা দেখা যাচ্ছে।কিছুক্ষণের মধ্যেই সূর্য মামার দেখা পাওয়া যাবে।মেঘ শুভ্রকে বললো,

–এখানে একটু দাঁড়ান।সকালের সূর্যোদয় দেখে যান।খুব সুন্দর লাগে এখান থেকে দেখতে।একটু পরেই সূর্যের আলোয় এই পদ্ম বিল খুব সুন্দর হয়ে উঠবে।আমি মাঝে মাঝেই আসি এখানে।প্রকৃতির এই অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য দেখতে খুব ভালো লাগে।হারিয়ে যাই কোনো এক অজানা রাজ্যে।দেখবেন আপনারও খুব ভালো লাগবে।

মেঘের কথা শুনে শুভ্রও রাজি হয়ে গেলো।যতই হোক ভালোবাসার মানুষের কথা ফেলতে পারবে না।কিছুক্ষণ পরেই সূর্য মামার দেখা পাওয়া গেলো।শুভ্রেরও এই দৃশ্যটা দেখতে খুব ভালো লাগছে।আস্তে আস্তে পুরো পদ্ম বিল সূর্যের আলোতে আলোকিত হয়ে গেলো।

চলবে….