সম্পর্কের দেয়াল পর্ব-১৭

0
367

#সম্পর্কের__দেয়াল
#Writer_AnaHita_Ayat_SumaiYa
#পর্ব__১৭
রিমির চলে যাওয়ার পানে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর পাভেল তার মায়ের এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে মৃদু কন্ঠে বলে,

‘দেখো মা যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। এবং এখন সব অতীত। আর মানুষ কে কখনোই অতীতে মত্ত হয়ে থাকা উচিত নয়। আমার জীবন আমি জানি কে আমার ঠিক কে ঠিক না। সেখানে তুমি রিধি কে চাইছো বাট আমি তো ওর সাথে সংসার করবো তাই না? আমার কাছে মনে হয়েছে রিধি আমার উপযুক্ত নয় তাই আমি রিমি কে বেছে নিয়েছি ব্যাস এই তো কেন বার বার ওইসব তুলছো?’

‘তোর কথা শেষ হয়েছে?'(রাগী কন্ঠে)

‘নাহ। রিধি রা যদি সত্যি ই চলে গিয়ে থাকে তাহলে বলবো ভালোর জন্যই গিয়েছে!’

‘ভুল বললি!’

‘কি?’

‘ওরা ওদের ভালোর জন্য যায় নি। কেউ ই চায় না আপন শহরের মায়া মমতা ত্যাগ করে নতুনত্বে পাড়ি জমাতে বরং তোরাই ওদের বাধ্য করেছিস স্রেফ তোদের সুখ শান্তি আর আনন্দের জন্য!’

‘এমন টা না মা!’

‘আমি সব জানি এবং খুব ভালো করেই বুঝি সব। তোর আমাকে জ্ঞান দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। শুধু এই টুকু মনে রাখিস কারো মন ভাঙ্গা মসজিদ ভাঙ্গার সমান। সেখানে তুই ৩ টা মানুষ কে কষ্টের সাগরে ডুবিয়ে দিয়ে নিজেরা পৈশাচিক আনন্দে ভাসবি তা তো হবে না! একটু আগেও বলেছি এখনো বলছি তোদের দুঃখ শুরু সবে!’

‘মা তোমাকে বোঝানোর সাধ্য আমার নাই। আমি রিমি কে আটকাতে যাচ্ছি। কোনো এক্সিডেন্ট হয়ে যেতে পারে ছাড়ো আমাকে!’

‘না তুই যেতে পারবি না। ঐ মেয়ে মরে যাক!’

‘মা…(জোড়ে শব্দ করে উঠে)

‘জোড়ে গলায় কথা বলবি না আমার সাথে!’

‘ওকে ফাইন। মরলে ও একা মরবে কেন সাথে আমি ও মরবো। শুধু একটা কথা মনে রেখো মা লাশ হলে একটি নয় দুটি হবে। এতোই যদি তুমি আমার থেকে রিমি কে আলাদা করতে চাও তো তুমি তোমার ছেলে কে ও চিরতরে হারাবে বলে দিলাম..’

এই কথা টা বলে সে জোড় করে বেরিয়ে চলে যায়। ছেলের কথা শুনে মায়ের বুক কিছুটা আতংকে কেঁপে উঠলো। পাছেন থেকে ‘পা..ভেল..’ বলে ডাক দিয়ে ও কোনো লাভ হয় নি। সে যাওয়ার চলে গিয়েছে। ছেলের চাকরি চলে যাওয়ার খুশি তিনি মোটেও হন নি তবে রিধি আর তার পরিবারের কথা ভেবে তিনি চাকরি চলে যাওয়ার ব্যাপার টা ভালো হয়েছে বলে সিলেক্ট করছেন। কেননা যারা অন্যের সাথে খারাপ করে তাদের সাথে তো খারাপ ই হওয়া উচিত!

পাভেল দৌড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে। ততক্ষণে রাস্তা ফাঁকা হয়ে গেছে। কোথাও কারো ছায়া ও নেই। এই ৫ মিনিটের মধ্যে রিমি কিভাবে গায়েব হয়ে গেলো বুঝতে পারছে না। এদিক সেদিক হকচকিয়ে তাকিয়ে দেখছে সে।

দুচোখ শুধু সেই মানুষ টি কেই খুঁজছে। ইশ এই মুহূর্তে যদি চোখের সামনেই খুব কাছাকাছি পাওয়া যেতো। হঠাৎ করে চলে যাওয়ায় ও খুঁজে না পাওয়ায় চাকরি চিন্তা ভুলে যায় মানুষ টা। এই মুহূর্তে তার একমাত্র চিন্তা যাকে ঘিরে সে হচ্ছে তার ভালোবাসার মানুষ রিমি। হন্ন হয়ে খোঁজার পর ও কোথায় পেলো না সে। অবশেষে হতাশ হয়ে রাস্তার পাশে টংয়ে বসে পড়ে এদিক সেদিক ছোটাছুটি করায় কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম নিচের দিকে মাথা নামানো মাত্রই ঝড়ে পড়ছে বৃষ্টির ফোঁটার ন্যায়।

হাঁপিয়ে উঠেছেন সে জোড়ে জোড়ে বিশ্বাস নিতে ব্যাস্ত। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে তাই এক গ্লাস পানি ঢকঢক করে গিয়ে নেয় সে। দোকানদার কাকা তাকে বিমর্ষ অবস্থায় দেখে বলে উঠলো,

‘কি বাবা কাউকে খুঁজছো?’

‘হ্যাঁ মানে না কাকা!’

‘বুঝি বুঝি!’

‘আসলে কাকা বউ রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে! কই এখন কোথায় পাচ্ছি না!’

‘দেখো বাপের বাড়ি চলে গেছে মনে হয়। রাগ ভাঙ্গিয়ে নিয়ে আসো বাবা!’

‘বাপের বাড়ি নেই!'( বিড়বিড় করে বললো)

‘কিছু বললে বাবা?’

‘না কাকা তেমন কিছু না!’

‘যা বললাম তা করো দেখবা সব ঠিক হয়ে গেছে!’

‘জ্বি আচ্ছা!’

দোকানদার কাকা মৃদু স্বরে হাসলো। সাথে ঐ মানুষ টা ও হাসলো। কিন্তু তার হাসা উচিত ছিলো না মোটেও।

————————

রিমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় চলে এসেছে তাও পাভেল কে আসতে না দেখে মেজাজ খারাপের উপর খারাপ আরো ৪০ ডিগ্রি বেড়ে যায়। শাড়ি সে ভালো করেই সামলাতে পারে। বিয়ের আগে থেকেই বিভিন্ন ভাবে সে তা শিখেছে। তো যাই হোক কিন্তু আজ আচমকা অনেক্ষণ দৌড়ানোর ফলে যখন যে কারো চোখের অগোচরে চলে গিয়ে চলন্ত পা দুটি কে থামাতে নিবে ওমনি সামনে থাকা কোনো এক মানুষের সাথে ধাক্কা লেগে ধপাস করে নিচে পড়ে যেতে নেয়। অনাকাঙ্ক্ষিত ভয়ে ভীত হয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো সাথে সাথেই। কারণ এই মুহূর্তে নিচে পড়া অনেক রিক্স। এটলিস্ট হাড্ডি গুড্ডির সাথে পা দুটো ভাঙ্গবে এতে কোনো সন্দেহ নাই।

কিন্তু আশ্চর্যজনক হলো সে নিচে পড়ল কিন্তু ব্যথা পেলো না কেন মনে মনে ভাবতে লাগলো কিন্তু চোখ খোলার পর দেখলো কোনো একজন মানুষ হিরো স্টাইলে তার কোমড় জড়িয়ে ধরে রেখেছে। লোক টার চাহনি লোভালুভো।

এটা দেখে সে নিজেকে দ্রুত সেই মানুষটির থেকে দূরে সরে নিয়ে গিয়ে নিজেকে সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। লোকটির নাম লিমন। অপ্রত্যাশিত ঘটনা ক্রমে তিনি কিছু টা অবাক হন। কিন্তু আঁখি দ্বয়ের সামনে থাকা পরীর মতো সুন্দরী রমনী কে দেখে যেনো তার সময় টাই থমকে গেলো। সাথে বন্ধ হয়ে গেলো নিশ্বাস। বেড়ে গেলো হৃদস্পন্দন। মন বলছে এতো সুন্দর রূপবতী পরী আকাশে না থেকে জমিনে কি করে নেমে আসলো। ভুল ক্রমে নয়তো নাকি আঁখির ভ্রম?

একটু পর ই সব ভুল ভ্রান্তি ও ভ্রম কেটে গেলো। বুঝতে পারলো সব সত্যি। এক মিনিটের জন্য ও যেনো লিমন চোখ ফেরাতে পারছে না। এদিকে বিপরীতে থাকা মানুষ টির তো রাগ বেড়ে গেলো। ভেবেছিলো ধন্যবাদ দিবে কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কষে কয়েক টা থাপ্পড় মারা উচিত। যাতে করে ভবিষ্যতে আর কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে ভুলে ও না থাকায়। লিমন রিমির রাগী ফেইস ও রাগী লুক দেখে নিজেই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যায়। নিজ থেকেই বলতে আসলো,

‘আ’ম এক্সট্রিমলি স্যরি। আপনি ঠিক আছেন?’

‘হ্যাঁ!’

আর কিছু বললো না। উত্তর পেয়ে লিমন কি যেনো ভেবে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলো। বিপরীত মানুষ টা অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁতে দাঁত চেপে চলে গেলো নিজের অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে!

রাস্তায় আচমকা দেখা মিললো রিমির বান্ধবী দিশার সাথে। দুজন ই অবাক হয়। কারণ এতো দিন টর্চ লাইট দিয়ে খুঁজে ও দিশা রিমি কে পায় নি। যেনো হুট করে লাপাত্তা হয়ে গিয়েছিল সে। কিন্তু আজ হঠাৎ এভাবে? তার মধ্যে একজন কিছু একটা ভেবে খুশি ও হয়।

‘রিমি তুই এখানে এভাবে?’

‘হু দিশা তুই হঠাৎ?’

‘একটু শপিং করতে এসেছিলাম! কোথায় ছিলি তুই এতোদিন?’

‘অনেক কাহিনী!’

দুজন দুজন কে জড়িয়ে ধরলো। খুশি দুজন ই। জানে জিগার বান্ধবী বলে কথা। কথার পিঠে কথা উঠলো,

‘তো ওইদিকের কি খবর রে?’

‘খুব খারাপ!’

‘কিহ… কোনো সমস্যা আমাকে বল!’

‘এখানে না আমাকে তোদের বাড়ি তে কয়েক টা দিন থাকতে দিবি?’

‘ছিঃ এভাবে কেন বলছিস। আচ্ছা চল!’

দিশা রিমি কে তার বাসায় নিয়ে যায়। দিশার মায়ের সাথে ভালো মন্দ কথা বলে নিজের রুমে বান্ধবী কে নিয়ে যায় সে। তারপর পুরো ব্যাপার টা জানার জন্য জিঙ্গেস করতে চাইলো কিন্তু বাঁধা পড়লো। মানুষ টা কে অনেক টায়ার্ড ও দেখাচ্ছে এই মুহূর্তে-ই কিছু জিঙ্গেস করা উচিত হবে বলে মনে হয় না। তাই ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে দিলো।

দুজন ই যখন ফ্রেশ হয়ে যায় তখন দুঃখের কথা বলতে বসলো রিমি। প্রথম থেকেই পাভেল রিধি রিমির ব্যাপারে সব জানতো দিশা। মাঝ খান দিয়ে রিধি কে দূর করে দেওয়ার জন্য ও কিছু আইডিয়া ও দিয়েছিলো সে। রিমির কথার প্রথম প্রচ্ছদ সুন্দর ছিলো কিন্তু শেষে যখন আজকের পাভেলের মায়ের বলা পুরো ঘটনা টা বললো তখন দিশা রেগে মেগে বললো,

‘জীবন কে সুন্দর করে স্পেন্ড করার জন্য এতো কিছু করে ও যদি মাঝখানে বাঁধা পেয়ে থেমে যাস তাহলে তো হবে না। তাই তোর উচিত পথের কাটা কে উপড়ে ফেলা। তুই তাই ই কর!’

‘মানে?’

‘তোর দরকার পাভেল কে, তার মা কে নয়। তাই উনাকেই মেরে দে। তাহলে তোর চলার পথ একদম ক্লিয়ার! বাকি জীবন টা বেশ আরামসে ফুরফুরে মেজাজে স্পেন্ড করতে পারবি! হাহাহা..!’

চলবে__________________

#সম্পর্কের__দেয়াল
#Writer_AnaHita_Ayat_SumaiYa
#এক্সট্রা_পার্ট
দিশার বুদ্ধি টা ভালো ভাবেই মনে ধরে রিমির। তাই ভালো করে পুরো বিষয় টা অনুধাবন করে সে। তারপর ঠোঁটের কোন এক চিলতি হাসি ফুটিয়ে তুললো। এই হাসি ভয়ংকর! একটা জলজ্যান্ত মানুষ কে মেরের ফেলার প্রবল আক্রোশ থেকে জন্ম নেয় এই হাসি। তার হাসি দেখে অন্য মানুষ টাও বুঝতে পারলে তার আইডিয়া এবারো ও বেস্ট ছিলো। অবশ্য বেস্ট ছাড়া কোনো কথাই তো নাই তার জীবনে!

‘কিন্তু কিভাবে?’

‘আমরা মানে মানুষ রা সাধারণত অসুস্থ হলে যাই কোথায়?’

‘কেন ডাক্তার কাছে!’

‘ইয়েস রাইট।‌’

‘কিন্তু ডাক্তারের কাজ তো অসুস্থ কে সুস্থ করা কাউকে মারবে কেন?’

‘তুই একটা জিনিস ভাব একজন পেশাদার ডাক্তার যদি মৃত প্রায় রোগীর জীবন বাঁচাতে পারে তাহলে জীবন্ত কাউকে মারতে কেন পারবে না!’

‘মানে…!’

‘বুঝিয়ে বলছি!’

দিশা পুরো ব্যাপার টা বুঝিয়ে বলতে লাগলো। আর ঐ মানুষ টা ভালো করে সেটা মস্তিষ্কে ধারণ করতে ব্যস্ত। অন্যদিকে পাভেল তার প্রাণপ্রিয় সহধর্মিণী কে না পেয়ে ভাবলো ফোন দিবে পকেটে হাত দিয়ে দেখে ফোন ও সে নিয়ে আসে নি। রাগ ঘুরে ফিরে নিজের উপরেই উঠছে। এই মুহূর্তে বাড়ি চলে যাওয়া ছাড়া উপায় নাই তাই সে বাড়ির দিকে হাঁটা ধরে।

অনেক্ষণ বুঝানোর পর দিশা বললো,
‘এবার বুঝেছিস?’

‘হুম একদম।’

‘তাহলে তো হয়ে গেলো কেল্লাফতে! চিন্তা না করে জাস্ট চিল মার বনু!’

‘হু চিল..!’

দুজন সমস্বরে হাসলো। দুপুরে খাবার দিশার বাসায় খেয়ে দুজন ই রেডি হয়ে নেয়। দুজন কে দেখে দিশার মা বুঝলেন তারা কোথাও যাচ্ছে! তাই তিনি বললেন,

‘কোথায় যাওয়া হচ্ছে শুনি?’

‘আন্টি একটু জরুরি কাজ আছে আমার। ভাবলাম একা না যাই তাই দুজন ই যাচ্ছি!’

‘আচ্ছা সাবধানে যেও!’

‘জ্বি আন্টি!’

সম্মান সূচক সালাম দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয় দুজন। একটা সিএনজি নিয়ে সোজা হাসপাতালে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা না দেয়া।

পাভেল কে হতাশ মনে একা বাড়ি ফিরে আসতে দেখে মায়ের বুঝতে বাকি রইল না যে সে তার কাঙ্ক্ষিত মানুষ টা কে পায় নি। তিনি খুশি হলেন কি না তা সচরাচর বুঝা গেলো না। চোখ রাঙিয়ে বলতে লাগেন,

‘এই মেয়ে কে হাড়ে হাড়ে চিনা হয়ে গেছে আমার। মিনিট কয়েকের মধ্যেই উধাও হয়ে গেছে দেখলো?’

‘তো তোমার কি মনে হয় মা ও ছোট বাচ্চা? হাতের আঙ্গুল ধরে ধরে ওকে হাঁটাহাঁটি শিখাতে হবে?’

উনি চুপসে গেলেন। কেন জানিনা এখন নিজের ছেলে কেও সহ্য হয় না। ছেলের বউ তো দূরের ব্যাপার। পাভেল রেগে কর্কশ গলাতেই বললো,

‘আমার আর রিমির ব্যাপারে তুমি আর এসো না মা। ভালো লাগে না আমার। যদি তোমার একান্তই বেশি সমস্যা থাকে তাহলে আমাদের দু চোখে যেদিকে যায় সেদিকেই চলে যাবো!’

‘আগে ঐ মেয়ে আছে কোথায় সেটা বের করতে পারলে তবে তো?

একটু পর তার মায়ের এই তিক্ত কথা নিচে নামতে নামতে শেষ পর্যায়ে চলে যাবে তাই সে রুমে গিয়ে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে বসে থাকে। গালে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ ভাবছে ও কোথায় গেলো! অতঃপর ফোন টা হাতে নিয়ে কল দেওয়ার ট্রাই করতেই শুনা গেলো রিং যাচ্ছে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ফোনের রিংটোন টা ঘরের মধ্যেই বেজে উঠলো। সে উঠে গিয়ে ফোন টা হাতে নিয়ে গম্ভীর মুখে বসে রইল। গেছে তো গেছে এটলিস্ট ফোন টা তো নিয়ে যেতে পারতো তাও নেয় নি! এবার তার কি রিয়েকশন দেওয়া উচিত নিজেই কনফিউজড! এভাবে করে দুপুর ও গড়িয়ে যায়।

————————

সিএনজির ভাড়া চুকিয়ে দুজন হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করে। চারদিকে মানুষের কলকালি শোনা যাচ্ছে। তারা দুজন যায় একজন উন্নতমানের নয় এমন ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার তাদের দুজন কে দেখে কোমল কন্ঠে বললো,

‘বসুন!’

বসলো দুজন। এবার ডাক্তার চশমার গ্লাস দুটি নরম পাতলা কাপড় টি দিয়ে মুছে দু চোখের ঠিক মাঝখানে বসিয়ে দিয়ে বললো,

‘বলুন কার কি সমস্যা?’

ডাক্তারের কথার প্রতি উত্তরে দুজন দুজনার দিকে তাকায়। দিশা ইশারা করলো রিমি কে বলতে। যেহুতু এতো উন্নত মানের ডাক্তার ও নয় তাই সে সাহস করে বলে বসলো।

‘আসলে আমি প্যারালাইসিস সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি। কোনো এমন ঔষধ আছে কি যা খাইয়ে দিলে একটা মানুষের হাঁটা চলা ও কথা বলা বন্ধ হয়ে যাবে। আই মিন বাকরুদ্ধ হয়ে যাবে। এন্ড লাস্ট পর্যায়ে মরে যাবে এমন!’

ডাক্তারের কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো কথা টা বুঝতে। আর কয়েক মিনিট লাগলো নিজের মন মানসিকতা পেরিয়ে ক্ষুব্ধ হতে। রাগান্বিত হয়ে ঝাঝালো কন্ঠে বললো,

‘হোয়াট রাবিশ। আপনি জানেন আপনি কি বলছেন?’

‘ইয়েস আই নো!’

‘বাহ। আমার সামনে বসে অতি গর্বের সাথে জিঙ্গেস করছেন কাউকে কিভাবে মেরে ফেলা যায় হু দ্যা হেল আর ইউ!’

অবস্থা বেগতিক দেখে দিশা বললো,
‘কুল ডাউন ডক্টর। আপনি ততোটাও উন্নত নয় যে আপনাকে এই ব্যাপারে জিঙ্গেস করা যাবে না!’

‘হোয়াট ডু ইউ মিন?’

‘আই মিন টু সে দ্যাট আপনার এই রিয়েক্ট করা উচিত নয়। আমাদের কে আমাদের প্রশ্নের উত্তর টা বুঝিয়ে দিন তার বদলে আপনি কিছু টাকা কড়ি পাবেন যদি চান তো!’

‘হ্যাঁ ও ঠিক বলছে। আমাদের মধ্যে কথাবার্তা গুলো হোক গিভ এন্ড টেকনোলজি পলিসি।’

ডাক্তারের রাগ চরম শীর্ষে গিয়ে পৌঁছালো,
‘আপনাদের সাহস দেখে অবাক না হয়ে পারলাম না। আমার সামনে বসে আমাকেই টাকার গরম দেখাচ্ছেন। লিসেন, আমি ডক্টর কোনো মানুষ খুনি নই। আমার কাজ মানুষ কে সেবা দিয়ে সুস্থ করা মেরে ফেলা তো একেবারেই নয়। আপনারা এখন আসতে পারেন নয়তো আমি পুলিশ ডাকতে বাধ্য হব!’

‘তার চেয়ে বরং বলতেন আপনি জানেন ই না!’

‘এতোক্ষন ভাবছিলাম আপনারা বেয়াদব এখন তো দেখি ভারী অসভ্য ও!’

‘মাইন্ড ইউর লেংগুয়েজ ডক্টর!’

‘হাহা। হাস্যকর! বাই দ্যা ওয়ে আমি কিন্তু সত্যি ই পুলিশ ডাকবো!’

‘আচ্ছা কিসের সাপেক্ষে আমাদের পুলিশে দেবেন?’

‘কাউকে মারতে চাওয়ার অপরাধে!’

দিশা আর রিমি একে অপরের দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে উঠলো। ডাক্তারের রাগ আরো বেড়ে যায়।

‘আপনাকে বুদ্ধিমান ভেবেছিলাম বাট আপনার মাথায় তো দেখছি বুদ্ধির ছিটে ফোটা ও নেই!’

‘মানে?’

‘মানে এটাই আমাদের দুজনের মধ্যে একজন ও বলেছি যে, আমরা কাউকে মারতে চাচ্ছি? আমার তো জাস্ট জানতে চেয়েছি দ্যাট্স ইট!’

ডাক্তার বুঝলো মেয়ে দুটি ভীষণ ঘাড়ত্যাড়া। ত্যাড়ামি করেই যাবে!

‘আপনারা যাবেন কিনা?'(নিজের আসন থেকে রাগে গর্জে উঠে বললো!)

‘যাচ্ছি যাচ্ছি! অতি রাগ ভালো নয়!’

এক জোড়া চোখ আড়াল থেকে আড়ি পেতে ৩ জনার ই সব কথা শুনে নিলো। তার নাম কবির। কবিরের বউ গর্ভবতী। ডাক্তার তার অবস্থা দেখে বলে দিয়েছেন সিজার করিয়ে নিতে হবে অন্যথায় মা ও বেবি দুজন এর জীবন ই সংকটে পড়তে পারে। সিজার করানোর জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। এতো টাকা কবিরের কাছে নেই। হাজার ত্রিশ এক টাকার বিশাল ঘাটতি! কবির ঝটপট যা বুঝার বুঝে ও ফেললো। এন্ড তার মনে হলো ওই টাকার ঘাটতি পূরণের এই তো চূড়ান্ত সুযোগ! যা দিয়ে তার গর্ভবতী স্ত্রীর সিজার করিয়ে নেওয়া যাবে। ফলে ডেলিভারি সম্পূর্ন ভাবে হয়ে যাবে ওই টাকা দিয়ে। এই সুযোগ হাত ছাড়া করা কোনো বুদ্ধিমান মানুষের কাজ নয়! তাই তার মনে দুষ্টু বুদ্ধির উদয় হয়!

ডাক্তারের চেম্বার থেকে দিশা আর রিমি বের হলে কবির তাদের সামনে গিয়ে হাজির হয়। ওরা দুজন সামনে হাজির হওয়া ব্যক্তি টা কে দেখে কিছু টা অবাক হয়। ঐ ব্যক্তি সেটা বুঝতে পেরে বললো,

‘আমি আপনাদের সব কথা শুনেছি। এবং আমি ই একমাত্র আপনাদের সাহায্য করতে পারি!’

এই কথা শুনে দুজন আরো অবাক হয়। উৎফুল্ল হয়ে জিজ্ঞেস করে বসলো,

‘কিন্তু আপনি কে আর কিভাবে সাহায্য করবেন?

‘আমি কবির আপনারা?’

তাদের দুজনের মনে হলো তাদের নাম বলার কি দরকার। কিছুক্ষণ পর মত পাল্টে গেলো,

‘আমি দিশা আর ও আমার বান্ধবী রিমি! ব্যাস আপনার আর কিছু জানার দরকার নেই কিভাবে সাহায্য করতে পারবেন তা বলুন!’

কবির সব কিছু খুলে বললো কিভাবে সে সাহায্য করবে। সে অন্য এক ডাক্তারের এ্যাসিসটেন্ট তাই প্যারালাইসিস এর ব্যাপারে জেনে নেওয়া তার জন্য খুব একটা কঠিন কাজ নয়। দিশা আর রিমি সব টা বুঝতে নিলো ক্ষণিকের মধ্যে তাদের চাওয়া উপযুক্ত উত্তর এই কবির দিতে পেরেছে। কবিরের আইডিয়া টা মনে গেঁথে গেছে শক্তপোক্ত ভাবে এবং মনে হচ্ছে আর কোনো ব্যক্তি এই কঠিন কাজ এতো সহজ করে করতে পারবে না। দুজন কে চুপ থাকতে দেখে মানুষ টি বললো,

‘আপনাদের সাহায্যের জন্য আমাকে আমার তো প্রাপ্য কিছু দিতে হবে!’

‘হুম তা তো জানি। কতো দিতে হবে বলুন!’

‘ত্রিশ হাজার টাকা!’

রিমি মুখ ভার করে বললো,

‘আমার কাছে তো বিশ হাজার এর মতো আছে বাকি দশ হাজার?’

এই প্রশ্নের প্রতি উত্তরে অন্য জন বলে,

‘বিপদে বন্ধুর পরিচয় আমি আছি কি করতে রে? ঐ দশ হাজার ও ম্যানেজ হয়ে যাবে!’

তাদের দুজনের কথা শুনে তৃতীয় ব্যক্তি বললো,
‘ব্যাস তাহলে তো হয়েই গেলো!’

কবিরের কথা বার্তা বেশ বন্ধুত্ব সরূপ। দিশা আর রিমির মনে হলো এই লোক কে বিশ্বাস করা ই যায়। দুজনের মধ্যকার একজন হেসে বলে উঠলো,

‘আপনার ডাক্তার বাবু রা তো কেউই আমাদের সাহায্য করতে রাজি হতো না। আপনি কিভাবে রাজি হলেন?’

কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে সে হেসে বললো,

‘জীবনের এই দীর্ঘ পথে চলতে গেলে টাকার প্রয়োজন যা বলার বাধ্যবাধকতা রাখে না। এই টাকা প্রত্যেক মানুষের জীবনে হিরার মতোই মূল্যবান। আপনার কাছে টাকা আছে তো আপনার জীবনে সব আছে। ঠিক তেমনি আমার ও টাকা প্রয়োজন। তাই ডাক্তার সাহেব দের মতো এতো ভালো হয়ে থাকতে পারলাম। এত্তো বড় ভালো কিছুর জন্য একটু খারাপ তো হওয়া ই যায় তাই না?’

মুগ্ধ হয়ে পুরো কথা টা শুনলো দুজন। শেষে এক সঙ্গে তিন জন ই হেসে উঠলো। এই হাসার মাঝখানে দিশার ফোন বেজে উঠে। ফোনের স্ক্রীনে ভেসে আসছে রিমির স্বামী পাভেলের নাম। জিঙ্গাসুক দৃষ্টি তে বাকি দুজন ব্যক্তি তাকিয়ে আছে তার দিকে। তাই সে একজন কে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘রিমি তোর বর পাভেল ভাইয়া কল দিয়েছে!’

কবির বুঝলো পাভেল রিমির স্বামীর নাম। তার মানে রিমি বিবাহিতা। অন্যজনের ব্যাপারে বুঝলো না। কবির বললো,

‘তাহলে এই কথাই রইল। আপনারা নাহয় এক সপ্তাহ পরেই আবার আমার সাথে দেখা করুন। আপনাদের কাঙ্ক্ষিত উত্তর এবং ঔষধ পত্রের লিস্ট আপনারা পাবেন এন্ড আমি..!

তাকে বলার মধ্যে থামিয়ে দিয়ে একজন বললো,
‘আপনি পাবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত টাকা!’

কবিরের থেকে বিদায় নিয়ে দুজন হাসপাতাল থেকে বের হয়। পাভেলের ফোন বাজতে বাজতে একবার কেটে যায় দ্বিতীয় বার এর সময় রিসিভ করে দিশা। অবশ্য রিমির থেকে জেনে নিয়েই সে এটা করেছে।

————————–

পাভেল অনেক ভেবে ও কোনো কুল কিনারা নের করতে পারেনি ঠিক তবে রিমির ফোন ঘাটতে ঘাটতে দিশার নাম্বার পেয়ে যায়। এক মুহুর্তের জন্য মনে হলো একবার দিশা কে ফোন দিয়ে জিঙ্গেস করা যেতেই পারে। তাছাড়া রিমির পর কোথাও যাওয়ার ও নেই। সব পথ বন্ধ সে নিজেই করে দিয়েছে। তো সেই অনুযায়ী কল দেয়। একবার কেটে যায় পরের বার রিসিভ করা হয়। পাভেল দিশা কে কেমন আছে তা জিঙ্গেস করে গেলো গুরুত্বপূর্ণ সাবজেক্ট এ।

‘আপু আসলে রিমি রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো আপনাদের এখানে গিয়েছে কি? আসলে খুব টেনশন হচ্ছে আপু!’

পাভেল কে দুঃখ কাতর দেখাচ্ছে। অনেক্ষণ কথা বলার পর বললো যে রিমি তার সাথেই আছে এবং ঠিক আছে। পাভেল তার মায়ের হয়ে নিজেই সরি ও বললো। কথার ফাঁকে অনেক হাসাহাসি ও হলো। পাভেলের উপর থাকা রিমির রাগ ভাঙ্গলো। এবং শেষে বললো রিমি কে যথাসময়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিবে। তারপর কল কেটে দেয়। পাভেল স্বস্তি পেলো কিছু টা… তবো চাকরির চিন্তা টা মাথায় ঘুরপাক খেয়ে যাচ্ছে প্রবল বেগে!

চলবে_______________