সুঁই সুতোর আসক্তি পর্ব-১৪+১৫

0
378

#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ১৪
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

কিছুক্ষণ আগে বাসায় এসে পৌঁছে কায়াসা।ফ্রেশ হয়ে এসে সে টিভি দেখতে বসে।এদিকে ফোনের স্ক্রিনে কায়াসাকে দেখছে এশান।

” সুঁই জান আমি তোমার সাহস দেখে মুগ্ধ।কত সহজে তুমি একটা ছেলের সাথে রেস্টুরেন্টে লান্ঞ করলে।তোমার মনে বিন্দু পরিমাণ ভয় ছিল না যে এই ব্যপারে আমি জানতে পারলে কি হবে।তবে আমি তোমাকে এই বারের মতো ক্ষমা করে দিলাম কারণ আজ তুমি একটা ভালো কাজ করছো।খাবার অপচয় না করে একজন পথশিশু আর তার পরিবারের মানুষের ক্ষুধা নিবারণ করেছো।তোমাকে তো ক্ষমা করে দিলাম তোমার ভালো কাজের জন্য কিন্তু তোমার সাথে যে ছিল তার তো কোন একটা ব্যবস্থা করতে হবে।”

এশান নিজের পকেট থেকে আরেকটা ফোন বের করে কিছু টাইপ করে।তারপর মোবাইলটা সাইডে রেখে দিয়ে আবারো কায়াসাকে দেখতে থাকে।

সন্ধ্যাবেলা,

হসপিটাল থেকে সবে মাত্র বাড়িতে ফিরে আদ্রিক।আদ্রিককে দেখে কুকি দৌড়ে আদ্রিকের কাছে চলে আসে।সে এতক্ষণ আদ্রিকের অপেক্ষায় সিঁড়ির মাঝে বসে ছিল।কুকিকে দেখে আদ্রিকের মন ভালো হয়ে যায়।সে কিছুক্ষন কুকির সাথে খেলে ফ্রেশ হতে চলে যায়।

ফ্রেশ হওয়ার পর আদ্রিকের নিজেকে একটু হালকা লাগছে।আদ্রিকের নিজের ফোনটা বের করে ওয়াইফাই কানেক্ট করে।ওয়াইফাই কানেক্ট হওয়ার সাথে সাথে আদ্রিকের ফোনে একটার পর একটা নোটিফিকেশন আসতে থাকে।নোটিফিকেশনের চাপে তো আদ্রিকের ফোন কিছুক্ষণের জন্য হ্যাং হয়ে গিয়েছিল।যখন নোটিফিকেশনের টুংটাং আওয়াজ বন্ধ হয় তখন আদ্রিক নিজের প্রয়োজন কাজ করতে প্রস্তুতি নেই।কিন্তু মেসেজ বক্সের মধ্যে শতশত মেসেজের মধ্যে থাকা একটা মেসেজের দিয়ে আদ্রিকের চোখ আটকে যায়।আদ্রিক ভ্রু-কুচকে মেসেজটা ওপেন করে।মেসেজ পড়ার পর আদ্রিকের কপালে ভাজ পড়ে যায়।

বাড়ির কাজ শেষ করে সবে মাত্র পড়তে বসেছে কায়াসা।কিন্তু তার আর পড়া হলোনা।পড়ার ব্যঘাত ঘটাতে তার ফোন বেজে উঠলো।কায়াসা ফোনের স্ক্রিনে উঁকি মেরে দেখে আদ্রিক ফোন দিয়েছে।এই অসময়ে আদ্রিকের ফোন দেখে কায়াসার ভ্রু-কুচকে যায়।হাজারো ভাবনা চিন্তা নিয়ে কায়াসা ফোনটা রিসিভ করে।

” হ্যালো।”

” কায়াসা?”

” হ্যাঁ মিস্টার আদ্রিক বলুন।”

” ব্যস্ত আছো?”

” না।বলুন আপনি কেন ফোন দিয়েছেন?”

” আচ্ছা সত্যি করে বলো তো তোমার কোন বয়ফ্রেন্ড আছে কিনা?”

” আরে কত বার বলবো আমার কোন বয়ফ্রেন্ড নেই।”

” আচ্ছা মানলাম তোমার কোন বয়ফ্রেন্ড নেই।কিন্তু তোমার জানা মতে এমন কেউ কি আছে যে তোমাকে ভালোবাসে।”

” না সেরকম কেউ নেই।আপনি আবারো এসব প্রশ্ন কেন জিজ্ঞেস করছেন বলুন তো?”

” আচ্ছা দাঁড়াও আমি তোমাকে মেসেজ একটা স্ক্রিনশট পাঠাচ্ছি,ওটা দেখো।তারপর না হয় বাকি কথা বলবো।”

কায়াসা মেসেজ চেক করে আদ্রিকের পাঠানো স্ক্রিনশটটা দেখতে থাকে।স্ক্রিনশটে একটা মেসেজ দেখা যাচ্ছে।

” প্রথমবারে কথা কি ভুলে গিয়েছিস?সেইদিন তোকে মারিনি,ভেবেছিলাম তুই শুধরে যাবি।কিন্তু না,তুই তো শোধরানোর পাত্র নস।তোকে আমি সেইদিই বলেছিল আমার কায়ুপাখি থেকে দূরে থাকবি কিন্তু তুই আজ কি করলি?ওর সাথে বলে একসাথে লান্ঞ করলি।হা….শোন আমি তোকে এবারের মতো ছেড়ে দিচ্ছি কারণ তুই আমার কায়ুপাখিকে অনেকবার সাহায্য করেছিস আর ও তোকে অনেকটা ভরসা করে।কিন্তু মনে রাখিস নিজের লিমিট যদি বেশি ক্রস করিস তো তোমাকে মারতে আমি দু-বার ভাববোনা।” এটাই লেখা ছিল ওই মেসেজটাই।মেসেজ পড়ে কায়াসার হাত-পা হঠাৎ হয়ে যায়।হঠাৎ করেই কায়াসার হালকা হালকা ঠান্ডা লাগতে শুরু করলো।

” কায়াসা?কায়াসা?”

ফোনের অপরপাশ থেকে আদ্রিকের কথা শুনে কায়াসা আস্তে আস্তে ফোনটা কানের কাছে নেয়।

” বলুন।”

” দেখেসো?আমি তোমাকে সেইদিনও বলেছিলাম,অজ্ঞান হওয়ার আগে আমাকে কেউ থ্রেট দিয়েছেল।কিন্তু তুমি বলেছিলে এসব আমার মনে ভুল।কিন্তু এটাও কি আমার মনে ভুল?এবার তুমি বলো এটা কে?তুমি কি কোন বিপদে আছো?কায়াসা কোন সমস্যা হলে তুমি আমাকে বলতে পারো।আমি আমার সব দিয়ে তোমাকে সাহায্য করার চেষ্টা করবো।”

আদ্রিক এটা ওটা বলে যাচ্ছে কিন্তু কায়াসার সেদিকে মন নেই।সে একদৃষ্টিতে বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।

” কায়াসা তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছে?কায়াসা?”

” আমি আপনার সাথে পরে কথা বলবো।” আদ্রিককে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কায়াসা ফোনটা কেটে দেয়।সে এখনো একদৃষ্টিতে বইয়ের তাকিয়ে আছে।

আজ সবার আগে ক্লাসে এসেছে কায়াসা।ইতি বা আরোহী কেউই এখনো আসেনি।কায়াসা নিজের মতো বই পড়ছে সময় কাটানোর জন্য।কিছুটা সময় পর আরোহী চলে আসে।

” ওহো আমাদের বিদ্যাসাগরের নাতি।”

” ও তুই এসে পড়েছিস,বস।” কায়াসা সরে আরোহীকে বসার জায়গা করে দেয়।আরোহী বসে পড়ে কিন্তু কায়াসার মনোযোগ এখনো তার বইয়ের দিকে।আরোহী বিরক্ত নিয়ে কায়াসার বইটা বন্ধ করে দেয়।

” এতো পড়তে হবেনা,বাসায় পড়িস।এখন আমার সাথে কথা বল।”

কায়াসা আরোহী থেকে বইটা নিয়ে ব্যাগের মধ্যে রাখে।তারপর শান্তদৃষ্টিতে আরোহীর দিকে তাকাই।

” কি হলো এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?”

” তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো।সত্যি সত্যি উওর দিবি তো?”

” আরে হ্যাঁ জিজ্ঞেস করবি কর।”

” তুই কাল দুপুরে কোথাই ছিলি?”

কায়াসার প্রশ্ন শুনে আরোহীর মুখটা শুঁকিয়ে যায়,যা কায়াসা খেয়াল করে।

” কি হলো বল কাল দুপুরবেলা তুই কোথাই ছিলি?”

” কোথায় আবার থাকবো?আমি তো বাসায় ছিলাম।”

” সত্যি তো?”

” হ্যাঁরে বাবা সত্যি।”

” ও তাহলে হয়তো আমিই ভুল দেখেছিলাম।”

” কি দেখেছিলি তুই?”

” আমার কেন জানিনা মনে হয়েছিল,আমি তোকে কাল একটা ছেলের সাথে দেখেছিলাম।”

কথাটা বলার পর আরোহীর চোখে-মুখে একটা চাপা ভয় খেয়াল করে কায়াসা।

” আরে না কি বলছিস তুই?আমি তো কাল বাড়িতেই ছিলাম।তুই হয়তো অন্য কাউকে দেখেছিস।”

” হুম আমিও সেটাই ভাবছি।” কায়াসা মুখে এটা বললেও তার মনের মধ্যে এখনো আরোহীকে নিয়ে সন্দেহ রয়েই গিয়েছে।

কলেজের কাছাকাছি একটা রেস্টুরেন্টে বসে কায়াসার জন্য অপেক্ষা করছে আদ্রিক।তবে তার বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি,তার আগেই কায়াসা চলে এসেছে।

” বেশিক্ষণ অপেক্ষা করাইনি তো আপনাকে?”

” না,আমিও কিছুক্ষণ আগেই এসেছি।” একদম শান্ত গলায় বলে আদ্রিক।

” আজ আবার কেন ডেকেছেন?”

” কালকের কথা মনে আছে?”

” কোন কথা?”

” কালকে যে মেসেজের কথা বলেছিলাম?”

মেসেজের কথা শুনে কায়াসার মুখ শুকিয়ে যায়।

” হুম,মনে আছে।”

” আমি সেই ব্যপারে তোমার সাথে কথা বলার জন্য তোমাকে এখানে আসতে বলেছি।এই নাও মেসেজটা তুমি আবারো দেখো।” আদ্রিক নিজের ফোনটা কায়াসার দিকে এগিয়ে দেয়।ইচ্ছে না থাকার স্বত্তেও কায়াসা আবারো মেসেজটা পড়ে।মেসেজ পড়ে কায়াসা ফোনটা আদ্রিকের দিকে বাড়িয়ে দেয়।

” আপনি তো এই নম্বরে ফোন করে তার সাথে কথা বলে দেখতে পারতেন,তাইনা?”

” তুমি বলার আগেই আমি কাজটা করেছি।কিন্তু নম্বরটা বন্ধ এবং কি নম্বরটার লোকেশন পর্যন্ত ট্রেস করা যাচ্ছে না।এগুলো একটাও সুবিধাজনক না।তাই আমি তোমাকে এখানে ডেকেছি।আমি সিউর তুমি এই বিষয়ে কিছু হলেও জানো।এবার আমাকে বলো এসব কি হচ্ছে?”

কায়াসা কিছু না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে।

” কি হলো কিছু তো বলো?”

” কি বলবো আমি?কিছু জানলে তবেই না বলবো।আমি এই বিষয়ে কিছু জানি।প্লিজ আমাকে আর এই বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবেন না।” কিছুটা চিৎকার করে বলে কায়াসা।সে এই সুতো নামক মানুষ কাজে প্রচুর বিরক্ত।

” ওকে ওকে কুল ডাউন,কুল ডাউন।আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমাকে আর কিছু জিজ্ঞেস করেবোনা।এই নাও পানিট খাও।”

কায়াসা পানি খেয়ে একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করে।কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ করে থাকে।

” চলো তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসি।”

কায়াসাও আর কোন কথা না বাড়িয়ে আদ্রিকের পেছন পেছন তার গাড়িতে উঠে বসে।এদিকে দূর থেকে কেউ তাদের দুজনের উপর যে নজর রেখে চলেছিল তা তারা দুজনের কেউ জানেনা।সে আদ্রিক আর কায়াসার কিছু ছবিও তোলে।

চলবে…..

#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ১৫
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

বাসায় এসে চুপচাপ সোফায় শুয়ে পড়ে কায়াসা।তার কিছু ভালো লাগছেনা।সে বুঝতে পারছেনা তার এখন কি করার উচিত।হাজারো চিন্তা ভাবনা নিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছে কায়াসা।অন্যকোন দিন হলে এতোক্ষণে কায়াসা ঘুমের দেশে চলে যেতে কিন্তু আজ ঘুম তার আশেপাশেও নেই।

ফোনের টুংটাং আওয়াজে কায়াসা চোখ খুলে।সে শোয়া অবস্থাতেই ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে।স্ক্রিনে তাকিয়ে কায়াসা বুঝতে পারে কেউ মেসেজ দিয়েছে।মেসেজটা ওপেন করে কায়াসা।

” আমার কথা অমান্য করে তুমি মোটেও ভালো করোনি।”

এতটুকুই লেখা আছে মেসেজটাতে।কায়াসা জানে এটা কে পাঠিয়ে।তবে এবার আর কায়াসার মাঝে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা গেলোনা।সে চুপচাপ মোবাইলটা টেবিলে রেখে আবারো চোখ বন্ধ করে থাকে।

সকালে থেকে ফোনের উপর ফোন করে যাচ্ছে ইতি আর আরোহী।কিন্তু কায়াসাতো নাছোরবান্দা,সে ফোন ধরবেনা।ফোনে না পেয়ে দুজন’ই কায়াসাকে মেসেজের উপর মেসেজ দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তাতেও তার কোন প্রতিক্রিয়া নেই।অবশেষে কায়াসা যখন বুঝতে পারলো এরা দুজন থামার নয় তখন সে ইতির ফোন রিসিভ করলো।

” কি হয়েছে?এতবার ফোন দিচ্ছিস কেন?”

” কেন মানে?তুই কি এখনো ঘুমিয়ে আছিস নাকি?”

” সকাল ৯ঃ৩০ বাজে।এতোক্ষণ কি আমি ঘুমাই?”

” ও হ্যাঁ তাও ঠিক।আচ্ছা সেসব বাদ দে কলেজ কখন আসছিস বল?”

” কলেজ কেন?আজ না কলেজ বন্ধ?”

” কিসের কলেজ বন্ধ?আজ আমাদের ওয়েলকামিং সেরেমানি আছে না?”

” সেটা বল না।কিন্তু ক্লাস তো বন্ধ না?তো?”

” তো মানে?তুই আসবি না নাকি?”

” না আসবোনা।”

” আসবিনা মানে?আমাদের নতুনদের স্বাগতম অনুষ্টান হবে আর তুই আসবিনা।”

” না আসবোনা।তোদের যেতে ইচ্ছে হলে যা।”

” এই কায়াসার বাচ্চা আয়াসা,তুই আসবিনা তোর ঘাড় আসবে।” আরোহী বলে উঠে।

” আরু তুই?”

” হ্যাঁ আমি।আমরা তো এখন কলেজেই আছি।এবার তুইও তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে কলেজে চলে যায়।”

” ইতি তুই তো জানিসই,প্লিজ তুই ওকে বোঝা।”

” আমি কিছু বোঝাতে পারবোনা।আর তুই সবসময় এরকম ঘরকুনো থাকিস কেন বলতো?একটু বাইরের লাইফটাকেও ইনজয় কর।”

” শোন কায়ু তুই ১০ঃ৩০ মধ্যে কলেজে আসবি।এটাই লাস্ট কথা।আর তুই আজ না আসলে আমি তোর সাথে আর কথা বলবোনা।”

কায়াসাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আরোহী ফোনটা কেটে দেয়।একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ফোনটা টেবিলে রেখে কায়াসা রান্না করতে চলে যায়।

কলেজের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে কায়াসা।পড়নে তার কালো রঙের একটা সাধাসিধে থ্রি-পিস।কায়াসা আশেপাশে তাকিয়ে দেখে হাতেগোনা দু-তিন জন ছাড়া সব মেয়েই আজ শাড়ি পড়েছে।কায়াসা এতো কিছুতে মনোযোগ না দিয়ে ভিতরে ঢুকে যায়।কায়াসার মোটেও এসব অনুষ্টান,লোকের ভিড় মোটেও পছন্দ না।সে সবসময় একা,খোলামেলা থাকতে চায়।ভেতরে এসে কায়াসা ইতিকে ফোন দেয়।

” ইতু কোথায় তোরা?”

” তুই এসেছিস?”

” হ্যাঁ এসেছি।গেটের কাছে যে গাছটা আছে ওখানে দাঁড়িয়ে আছি।”

” আচ্ছা তুই দাঁড়া আমরা আসছি।”

কায়াসা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আরোহী আর ইতির অপেক্ষা করছে।কায়াসা দেখতে পায় দুজন শাড়ি পড়া মেয়ে তার দিকেই আসছে।কায়াসার আর বুঝতে অসুবিধে হয়নি যে এরাই আরোহী আর ইতি।কিন্তু তাদের দুজনের অবস্থা দেখে কায়াসা হা।দুজনেই শাড়ি পড়েছে,সেই সাথে মেকাপও করেছে।এদের এতো সাজগোছ দেখে বিরক্ততে কায়াসার কপাল কুচকে যায়।

” আ……কায়ু বেপি আমি তো ভাবতেই পারেনি তুই আসবি।” খুশি হয়ে বলে ইতি।

” না এসে কি আর উপায় আছে?যে হারে তোরা ফোনের উপর ফোন দিয়ে যাচ্ছিছিল।না আসলে তো আমার ফোনটাকে তোরা মেরেই ফেলতি।”

” এসব তুই কি পড়ে এসেছিস কায়ু?” আরোহী বলে।

” কেন?দেখ পাচ্ছিস না।ড্রেস পড়েছি।”

” আরে আমি সেটা বলেলি।তুই থ্রি-পিস পড়ে এসেছিস কেন?শাড়ি কেন পড়িসনি?শাড়ি পড়তে না পারলে নিয়ে আসতি আমরা পড়িয়ে দিতাম।”

” আমি শাড়ি পড়তে জানি,আমার এসব শাড়ি-টাড়ি ভালো লাগেনা তাই পড়িনি।”

” আরে আরু ছাড় তো এসব।ও এসেছে এটাই অনেক,আমি তো ভেবেছিলাম ও আসবেই না।কলেজেও কোন ফাংশনে ও এটেন্ড করেনি।আজ আমাদের কপাল ভালো যে ও এসেছে।এবার চল গিয়ে বসি।অনুষ্টান তো কবে শুরু হয়ে গিয়েছে।”

কায়াসা,ইতি আর আরোহী যেখানে অনুষ্ঠান হচ্ছে যেখানে যায়।ইতি আর আরোহী সামনে বসলেও কায়াসা পেছনে বসে।ইতি আর আরোহীও আর কায়াসাকে জোর করেনি।

একে একে সবাই স্টেজে এসে পারফরমেন্স করছে।কায়াসার এসব মোটেও ভালো লাগছেনা।সে উঠে যেতে নেবে তখন প্রিন্সিপাল স্টেজে আসে।তাই কায়াসা আবারো বসে পড়েছে।প্রিন্সিপাল নিজের মতে বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছেন।কয়েকজন ছাড়া বাকিরা যে তার মতেই কেউ উনার কথা শুনছেন না তা কায়াসা বুঝে গিয়েছে।

এতোক্ষণ সবাই প্রিন্সিপাল কথা না শুনলেও বর্তমানে ওনার বলা কথা সবার দৃষ্টি আর্কষণ করে।এতোক্ষণ যেখানে কমবেশি সবার ফিসফিস আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল এখন সেখানে শুধু একজনেরই আওয়াজ শোনা যাচ্ছে,সেটা হচ্ছে প্রিন্সিপাল।কায়াসাও এতোক্ষণ কথা না শুনলেও এবার সেও আগ্রহ নিয়ে প্রিন্সিপালের কথা শুনতে শুরু করে।

” তোমরা হয়তো অনেকেই জানো আবার অনেকেই জানোনা।আমাদের কলেজের একজন টিচার কিছুদিন আগে একটা রোড এক্সিডেন্টে গুরুতর আহত হয়েছেন।যার কারণে বর্তমানে ওখানে কিছু মাসের জন্য ছুটি দেওয়া হয়েছে।যতদিন না উনি পুরোপুরি সুস্থ হচ্ছে ততদিন ওনার সব ক্লাস নতুন আরেকজন টিচার নেবেন।উনি মূলত গেস্ট টিচার হিসেবে জয়েন করেছেন।উনিও খুব ভালো একজন ডাক্তার।শহরের নামী একটা হসপিটালে উনি বর্তমানে কর্মরত অবস্থা আছেন।আমি আশা করি তোমরা সবাই ওখানে যথাযথ সম্মান করবে।তোমাদের নতুন টিচার হচ্ছে মিস্টার আদ্রিক আহসান।আদ্রিক তুমি স্টেজে এসে সবার উদ্দেশ্য কিছু বললে খুশি হতাম।”

কায়াসা ঘাড়টা একটু উঁচু করে সামনে তাকাই।একদম সামনের সারি থেকে একটা লোক উঠে দাঁড়ায়।লোকটাকে পেছন থেকেই দেখেই কায়াসা বুঝে গিয়েছে এটা কোন আদ্রিক।তাও সে সিউর হওয়ার জন্য স্টেজের দিকে তাকিয়ে রয়।লোকটা স্টেজের উঠে হাতে মাইক নেয় কথা বলার জন্য।হ্যাঁ না সেই রাক্ষস আদ্রিক।আদ্রিককে নতুন গেস্ট টিচার হিসেবে দেখে কায়াসার বিরক্তে কপাল কুচকে উঠে।

” দুনিয়াতে কি আর প্রফেসারের অভাব পড়েছিল নাকি মেডিকেল স্টুডেন্টের অভাব পড়েছিল যে এই আদ্রিকেই গেস্ট টিচার হিসেবে আসতে হলো?যাই হবে হোক আমাদের কোন ক্লাস না পেলেই বাঁচি।”

আদ্রিক মাইক হাতে অনেক কিছুই বলে যাচ্ছে তবে তার কিছুই কায়াসা মাথায় ঢুকছেনা।কায়াসা আর বসে থাকতে না পেরে উঠে চলে যায়।

হাঁটতে হাঁটতে কায়াসা দোতালার ওয়াশরুমে চলে আসে।এখানে এখন কেউ নেই।মাইকে কথা বলার কারণে আদ্রিকের আওয়াজ হালকা হালকা কায়াসা এখনো শুনতে পাচ্ছে।ওয়াশরুমে এসে কায়াসা মুখে পানি দেয়।যেহেতু সে কোন মেকাপ করেনি তাই তার মুখ ধুতেও কোন সমস্যা নেই।

মুখ ধুয়ে কায়াসা আবারো আস্তে আস্তে বারান্দায় দিয়ে হেঁটে সিঁড়ির কাছে যাচ্ছে।তবে সে সিঁড়ির কাছে পৌঁছাবে তার আগে কেউ তাকে টেনে একটা ক্লাস রুমে ঢুকিয়ে নেয়।

কায়াসার মুখ চেপে ধরেছে কেউ।পেছনে টেবিল থাকায় কায়াসা আর পিছিয়েও যেতে পারছেনা।অন্ধকারের কারণে মানুষটাকে দেখতে পাচ্ছে না কায়াসা।লোকটার হাত নিজের মুখ থেকে সরানোর জন্য ছটপট করছে কায়াসা।

” সু…….একদম নড়াচড়া করবেনা।” কায়াসা কানের কাছে এসে বলে কেউ।এতোক্ষণ অনুমান করে বলেছিল এটা একটা লোকটা কিন্তু এবার কায়াসা সিউর হয়ে গিয়েছে।একটা অপরিচিত লোক তাকে টেনে এনেছে ভাবতেই কায়াসার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়।সে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য আরো বেশি নড়াচড়া করতে থাকে।

” এভাবে নড়াচড়া করছো কেন?শান্ত হও সুঁই।”

” সুঁই” নামটা শুনে কায়াসার নড়াচড়া অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যায়।অন্ধকারে মধ্যে কায়াসার সুতো নামের এশানকে দেখার চেষ্টা করছে কিন্তু হায় সে ব্যর্থ।হঠাৎ করেই কায়াসার প্রচন্ড ভয় হতে থাকে এইভেবে যে একটা সাইকো টাইপের খুনি সামনে সে দাঁড়িয়ে আছে।সে মানুষকে মারতে দ্বিতীয়বার ভাবেনা।কায়াসা চাইছে চিৎকার করতে কিন্তু পারছেনা কারণ এশান তার মুখ চেপে ধরেছে।কায়াসা বুঝতে পারছেনা তার এখন কি করা উচিত।

চলবে…..