স্নিগ্ধ প্রেমের সম্মোহন পর্ব-১১

0
1279

#স্নিগ্ধ_প্রেমের_সম্মোহন
–[পর্ব-১১]
লেখিকাঃ #সাদিয়া_মেহরুজ_দোলা

বাকি অংশ!

কালো রঙের গাউনটা দুহাত দিয়ে উঁচু করে পায়ের জরতা কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যাই। যতটা সামনে আগাচ্ছি হৃদস্পন্দন স্পন্দিত করা যেনো ততটা বেড়ে যাচ্ছে! উশখুশ করছে মন! মাথা নিচু করে পূর্ব ভাইয়ার ঠিক সামনে গিয়ে দাড়াই!

সেখানে উপস্থিত হতেই অরিন পিছন থেকে কনুই দিয়ে গুঁতো দিয়ে বলল,,,

— কিরে মাথা নিচু করে আছিস কেনো?

— এমনি!

দুহাতের আঙ্গুল দিয়ে গাউনটা খিঁচে ধরে রেখেছি। অদ্ভুত! আমি এতো ঘামছি কেনো?অস্থিরতা কেনো বাড়ছে?

কিছু সময় পর বড় চাচার গলা শোনা গেলো। তিনি বললেন,,,

— প্রিন্সেস, এই হচ্ছে আমার ছোট ছেলে! পূর্ব! তোমার ভাইয়া হয়।

আমি আলতো করে মাথা উঁচু করতেই চোখে পড়লো পূর্ব ভাইয়ার স্থির, হতভম্ব দৃষ্টি! তিনি আমারই দিকে তাকিয়ে আছেন। খেয়াল করে দেখি তার হাতদুটো ধীর গতীতে কাপছে!
তা দেখে অটোমেটিকলি ভ্রু দুটো কুঁচকে যায়। ওনার হাত কাঁপছে কেনো?

আমি ফের মাথা নিচু করে বলি,,,

— আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া!

এক মিনিট যেতে ফিচেল কন্ঠে জবাবা আসে,,,

— ওয়ালাইকুমুস আসসালাম।

কন্ঠস্বরটা কানে যেতে আমি জমে যাই প্রায়! তার সৌন্দর্যের সাথে সাথে আমি তার কন্ঠস্বরের প্রতিও মুগ্ধ হই।এতো সুন্দর ভয়েজ কিভাবে হয় একজন মানুষের?
তবে এই কন্ঠস্বরে কিছু একটা ছিলো, যা আমাকে ক্রমশ অস্বস্তিতে ফেলছে!

সবাই ব্যাস্ত হয়ে পড়ে পূর্ব ভাইয়ার সাথে কথা বলায়। আমি আঁড়চোখে তার দিকে তাকাতেই হতবিহ্বল হয়ে যাই! কারণ পূর্ব ভাই আমার দিকেই সরু দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে ছিলেন।

আমি চট জলদি অন্যদিকে তাকিয়ে গ্রাউন্ড ফ্লোরের কর্ণারে চলে যাই। অদ্ভুত এক অনুভূতির সাথে আজ পরিচিত হলাম!

_________________________________

রাত প্রায় সাড়ে বারোটা বেজে যায় বাসায় আসতে আসতে। আমি বাসায় এসেই ধুপধাপ পা ফেলে নিজের রুমে চলে যাই। পিছন থেকে আম্মু কয়েকবার ডেকেছিলো খাওয়ার জন্য তবে খিদে নেই বলে কাটিয়ে দিয়েছি।

রুমে এসেই ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেই। বুকে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে সেই মূর্হতটা অনুভব করার চেষ্টা করি যখন পূর্ব ভাইয়ার মুখটা প্রথম দেখেছিলাম! মারাত্মক চাহনি ছিলো তার ঐ ক্ষনে! বুকটা এখনো যেনো কাঁপছে প্রবল ভাবে।

____________________________

সকালে যখন ঘুম থেকে উঠে পূর্ব ভাইয়াকে ঠিক নিজের দরজার সামনে দেখি তখন মূর্হতে কিছুটা ভড়কে যাই আমি! ভাইয়ার চোখদুটো অসম্ভব লাল হয়ে রয়েছে। যেনো সারারাত চোখের দু পাতা এক করেননি!

এতো ভোরবেলা পূর্ব ভাইকে আমার দরজার সামনে দেখে কিছুটা চমকে যাই। কি বলবো তার শব্দগুচ্ছ খুজে পাচ্ছিনা।

মন মাঝে যখন আমি কথা সাজাতে ব্যাস্ত তখন পূর্ব ভাইয়া বলে উঠলেন,,,

— বাসা ঘুরে দেখছিলাম! তাই তোর রুমের সামনে এসে পড়েছি। আমি জানতাম না এটা তোর রুম!

তার কথায় আমি সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে মনে মনে প্রশান্তির শ্বাস আয়েশ করে টেনে নেই। আমি ও কি না কি ভাবতে শুরু করে দিয়েছিলাম!

পূর্ব ভাইয়া বড় বড় পা ফেলে সিড়ি বেয়ে তিনতলায় চলে যান। আমি সেদিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াই! প্রচন্ড খুদায় পেট ব্যাথা করছে। কাল রাতে না খাওয়ার ফল এটা! যদিও আমি তিন চারদিন অনায়াসে না খেয়ে কাটিয়ে দিতে পারি তবে আজ হটাৎ কেনো যেনো প্রচন্ড খুদা পেটে ধরেছে।

_________________________________

সেদিনের পর সবকিছু একটু অন্য রকম হয়ে যায়। আমার জীবন হয়ে পড়ে উচ্ছন্যকর! না চাইতেও মন কোঠরে না চাইতেও যেনো একটু একটু করে পূর্ব ভাইয়ার নামটা আস্তে আস্তে ছেপে যাচ্ছে! চেষ্টা করি অনুভূতি গুলোকে একদম মুছে ফেলার কিন্তু সম্ভব হয়না। ঐ যে কলমের দাগ যখন সাদা পৃষ্ঠে লেগে যায় তখন শত চেষ্টা করেই সেই দাগ পুরোপুরি ভাবে মোছা যায়না আর না সম্ভব! তেমনটাই ঘটেছে আমার সঙ্গে!

তবে দিন যত পার হয় জীবনটা যেনো কেমন নরকে পরিণত হচ্ছে!

কারণটা পূর্ব ভাইয়া!
তিনি আমার প্রতি বাকিদের থেকে খুব রুডলি আচরণ করে। বিষয়টা কয়েকদিনেই সবার নজরে আসে। এতে বড় চাচা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলেন,,,,

— তুমি দোলের সাথে এতোটা রুডলি বিভেব কেনো করো পূর্ব? সাহস কি করে হয় তোমার ওর সাথে এমন বিভেব করার?

সেদিন পূর্ব ভাই ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলেছিলেন,,,

— আমি এমনি এমনি কারো সাথে রাফ বিভেব করিনা আব্বু! কারণ আছে বলেই করি। তোমাদের প্রিন্সেস অতিরিক্ত পরিমানে বেয়াদব! সময় থাকতে শুধরাও। বাহিরে ছেলেদের সাথে চলাফেরা করে!

পূর্ব ভাইয়ার কথায় বাকরুদ্ধ ছিলাম আমি!
বড় চাচু বেশ রেগে বললেন,,,

— ও কেমন তা আমরা জানি পূর্ব! মাঝখান থেকে তোমায় আলাদা করে বলতে হবেনা। যেই ছেলে দুজন এর সাথে প্রিন্সেস মিশে ওরা ওর ছোটবেলার বন্ধু! আদ্রাফ আর নীরব!

সেদিন পূর্ব অযাচিত কারণে আমাকে সবার সামনে খারাপ আর বেয়াদব মেয়ে বলেন।
রুমে এসে সেই রাতটা কেঁদে কাটিয়েছি। তার ঠিক পরদিনই সকালে কানাডা চলে যাবেন বলে বেড়িয়ে পড়েন। তিনি আমায় ইনসাল্ট করলেও আমার মন নিভৃতে তারই বসবাস ছিলো!
তাই তার চলে যাওয়াটা আমি নিতে পারেনি।
বাসার কেওই তার চলে যাওয়ার ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেনি।

দাদুমনি আর আমার বাবা মা ভাইয়াকে বুঝিয়েছিলেন কিন্তু তিনি শুনেননি! চলে গিয়েছিলেন সেদিন।

আমি বেশ কয়েকদিন নিজেকে বন্দী করে রেখে ছিলাম এক ঘরে! সবাই ভেবেছে হয়তো পূর্ব ভাইয়া ইনসাল্ট করাতে আমার অভিমান জন্মেছে। কিন্তু কাওকে বলতে পারিনি পূর্ব ভাই চলে যাওয়াতে আমি বিষিয়ে গিয়েছি!

তার বেশ কয়েকদিন পর নিজেকে সামলে শক্ত করে নেই। মনে মনে প্রতিঙ্গা করি পূর্ব ভাইয়াকে ভুলে যাবো। তার জন্য আমার মনে যেই অনুভূতি সমূহ থাকবে তা হচ্ছে ‘ঘৃণা আর রাগ’!

এই দুটো অনুভূতিই হয়তে ছিলো এবং আছে।
তবুও তিনি যখন আমার দিকে নরম চোখে, শান্ত চাহনি দিয়ে তাকান তখন মনে হতো সময়টা থেমে যাক, হাজার বছরের জন্য থেমে যাক!

__________________________________

বেশ কয়েক বছর এর ব্যাবধানে আমি পূর্ব ভাইয়াকে ভুলতে সক্ষম হয়েছি।

১৬ বছর এর কিশোরী বয়সে এক সম্পর্কে জরিয়েছি ভুলবশত! কোচিং এ ফাষ্ট বয় অহন আমায় প্রপোজ করাতে আমি তা এক্সেপ্ট করে নেই। আমার মনে হয়েছিলো সম্পর্কে জরালে পূর্ব ভাইয়াকে ভুলতে খুব সহজ হবে।

অহনের সাথে সম্পর্কে জরানোর পর সবকিছু ভালো থাকলেও এক মূর্হতে এসে সব স্তব্ধ হয়ে যায়। অহনের বিয়েটা যেনো আমায় ভেঙ্গে দিয়েছিলো ক্ষনেই! তবে সেই ভাঙ্গন কাটিয়ে শক্ত হয়ে দাড়াতে আমায় ফের পূর্ব ভাইয়াই সাহায্য করেছে। কি অদ্ভুত!

অহনকে যে ভালোবাসতাম না তা ওর বিয়ের কয়েকদিন যেতেই বুঝে ফেলেছি! অহন ছিলো টিনেজ এজ এর আবেগ। যাকে ক্ষনিকের জন্য ভালোবাসা মনে করে অযথা নিজের চোখের অশ্রু জরীয়েছি!

প্রবাহমান সময় আমায় আবেগ আর ভালোবাসা এর মাঝের তফাৎ বুঝিয়ে দিয়েছে!
তবে ভালোবাসা টা কি তা এখনো বুঝতে পারিনি!

________________________________

বর্তমান….!❤️

চির অপরিচিত সু- মধুর কন্ঠের ডাকে হুশ ফিরে আমার! পিছনে চেয়ে দেখি পূর্ব ভাইয়া পকেটে হাত গুজে স্টাইল মেরে দাড়িয়ে আছেন!
ভ্রু দুটো তার স্টাইলে বাঁকানো!

পূর্ব ভাইয়া বললেন,,,,

— কই থাকে তোর ধ্যান?কতক্ষণ ধরে ডাকছি! শুনিস নি?

হটাৎ করে রাগ জমলো মনে! আগের ক্ষতগুলো নাড়া দিয়ে উঠলো।
ব্যালকনির রেলিঙ থেকে হাত সরিয়ে তার দিকে এগিয়ে গেলাম। একদম তার মুখোমুখি হয়ে বলি,,,

— না শুনি নি! আমি তো বেয়াদব মেয়ে, বেয়াদব মেয়েরা তো কারো কথা শোনে না। এজ ইউ সে…!

আমার এমন কাঠ কাঠ গলায় জবাব পেয়ে পূর্ব ভাই কিছুটা চমকপ উঠলেন মনে হলো।
আমি সেদিকে পরোয়া না করে নিজের রুমে চলে যাই।
পুরোনো চেপে থাকা রাগটা আজ আবারও তাজা হয়েছে! চাইতেও দমন করতে পারছি না।

চলবে!

[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ]