স্নিগ্ধ প্রেমের সম্মোহন পর্ব-১৫

0
1248

#স্নিগ্ধ_প্রেমের_সম্মোহন
–[পর্ব-১৫]
লেখিকাঃ #সাদিয়া_মেহরুজ_দোলা

দুই আঙ্গুল দিয়ে ফাজ সর্বপ্রথম পূর্বের ডিটেইলস এর ফাইলটা হাতে নেয়। সেখানে পূর্বের একটা হাস্যজ্বল ছবি রয়েছে। ফাইল রেখে ছবিটা দেখতে দেখতে যেইনা মুখের মাস্ক খুলতে যাবে তখনই কাচ দিয়ে আবৃত রুমটায় কেও প্রবেশ করে।

ফাজ মাস্ক খোলা বাদ দিয়ে সেদিকে তাকায়। অরণ্য আর শুভ্র দাড়িয়ে। দু’জনের মুখেই শত বিরক্তি রেশ!

অরণ্য বিরক্তি মাখা কন্ঠে বলল,,,

— কিরে শালা?এখন কি নিজেরে তুই খুন করবি?

ফাজ স্ব- শব্দে হেসে দিয়ে মাস্ক খুললো।
নিজের ছবিটা টেবিলে রেখে দিয়ে পা তুলে দেয় টেবিলের ওপর। হাস্যরত অবস্থাতেই বলল,,,

— আমি কি জানি নাকি ফুয়াদ আমারও ডিটেইলস নিয়ে আসবে?

এবার শুভ্র বলল,,,

— হ, আরো নিজের পরিচয় লুকায় রাখ। সবাই তোরে চুম্মা দিবে।

পূর্ব ফের হাসে। হাসার সময় ওর দু গালে টোল পড়ে। যা দেখতে অতীব মোহনীয়! নজরকাড়া হাসি!
শুভ্র বলল,,,

— ঐ পূর্ব হাসিস না। আমার বুকের বা পাশটায় কেমন জানি করে।

অরণ্য শব্দ করে হেসে দেয় শুভ্রের কথায়। পূর্ব হাসছে না। ও বিরক্ত! বিরক্ত সুরে বলল, ‘শালা গে একটা ‘

নিশিরাত। চারিদিকে গুমোট ভাব বিরাজমান! পড়া কমপ্লিট করে রুমের সামনের বেলকনিতে এসে দাড়িয়েছি। আজ ঘুম পরীরা আমায় ধরা দিচ্ছেনা। ঘুমের ‘ঘ’ টাও কোথাও খুজে পাচ্ছিনা!

কাল বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরিক্ষা। প্রস্তুতি শেষ! তবে ব্রেনের বিশ্রামের জন্য একটা ঘুম প্রয়োজন ছিলো যা আপাতত আসছে না। বিরক্তিকর!

চারিপাশে তাকাতে তাকাতে হটাৎ চোখ আটকে যায় মেইন দরজার দিকে। কেও খুব ধীরে সুস্থে দরজা খুলছে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করার জন্য। এতো রাতে কে গিয়েছে বাহিরে?
চোর, ডাকাত হওয়া অসম্ভব! কারণ বাড়ির চারপাশে সবসময় সিকিউরিটি গার্ড থাকে। পরিচিতদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট ছাড়া বাসার মেইন ফটক পেরোনো সম্ভব না!

ভালোভাবে খেয়াল করতেই দেখলাম পূর্ব ভাইয়ার ক্লান্ত মুখখানি! সাদা রঙের রুমালটা দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বাসায় প্রবেশ করছেন। তাকে দেখে অনেকটা ভড়কে যাই।
তিনি ফরমাল লুকে! সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট আর একহাতে কালো ব্লেজার! গা থেকে খুলে হাতে নিয়ে রেখেছে। এরকম গেটআপ তো মূলত অফিসার দের হয়! বড় কোনো পোস্টে থাকা অফিসারদের। কিন্তু তিনি এই লুকে কেনো?
আরো একবার গভীর রাতে তাকে এই গেটআপে দেখেছিলাম তবে প্রশ্ন করার সুযোগ হয়নি।

ভাবনার গহীনে থাকাকালীন কখন যে হাঁটতে হাঁটতে সিঁড়ির কাছে চলে এসেছি তার বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই আমার মাঝে। সেই সময়টায় পূর্ব ভাইয়া সিঁড়ি দিয়ে উঠছিলেন। মূর্হতেই চোখাচোখি হয়ে যায় দুজনার! থতমত খেয়ে দৃষ্টি সরিয়ে অন্যদিকে নেই।

পূর্ব ভাইয়া দ্রুত সিঁড়ি ডিঙিয়ে আমার পাশে এসে দাড়ান। এক ভ্রু উঁচু করে বললেন,,,

— এতো রাতে এখানে কি করছিস?

আমি আমতা আমতা করে বলি,,,

— ঘুম আ..আসছিলো ন…না তাই হাঁটছিলাম।

— এভাবে কাঁপছিস কেনো?

তার কথায় নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি আসলেই আমি কাঁপছি! কিন্তু কেনো?হাতদুটো বেশ কাঁপছে। তিনি দ্রুত আমার কাছে এসে দু বাহু শক্ত করে ধরে বললেন,,,

— ঠিক আছিস তুই?শরীর খারাপ লাগছে?

আমি কথা কাটানোর জন্য বলি,,,

— নাহ! হেডেক হচ্ছে একটু।

আমার জবাব পেয়ে তিনি কিছুক্ষন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে তার ব্লেজার টা আমার হাতে ছুড়ে ফেলেন। হতভম্ব হয়ে ব্লেজার টা হাতে নিতেই তিনি আমায় কোলে তুলে নেন!
আচানক এমন কান্ড হতবিহ্বল আমি! নিচু কন্ঠে বলে উঠি,,,,

— কি করছেন ভাইয়া? নিচে নামান আমায়।কোলে নিচ্ছেন কেনো?আমার মাথায় ব্যাথা পায়ে না!

পূর্ব ভাইয়া চোখ রাঙিয়ে বললেন,,,,

— সেটা আমিও জানি ষ্টুপিড!

— তাহলে কোলে কেনো নিচ্ছেন?

—‘নিশ্চুপ’

তিনি আমায় আমার রুমে নিয়ে আসলেন। ধুপাধুপ পা ফেলে বেডে এনে আধবসা হয়ে শুইয়ে দেন। অতঃপর রুম থেকে বাহিরে গিয়ে ক্ষনেই ফিরে আসেন হাতে একটা ট্রে নিয়ে!
আমার পাশে বসে ট্রে টা রেখে দিলেন!
ট্রে টায় ছিলো কিছু ফল, ঔষধ আর পানি! তা দেখে প্রশ্নসূচক চাহনি দিয়ে চেয়ে আছি তার পানে।

আমি গলা খাকাড়ি দিয়ে বলি,,,

— ভাইয়া এসব কি?কিসের ঔষধ এটা? আর খাবার?

পূর্ব ভাইয়া ছুড়ি দিয়ে খুব মনোযোগ সহকারে ফল কাটতে থাকেন। কাটা শেষ হলে একপিস আপেল আমার মুখে পুরে দিয়ে বললেন,,,,

— স্লিপিং পিল!

আমি আপেল টা গিলে নিয়ে বলি,,,

— তাহলে খাবার? খাবার কেনো খাওয়াচ্ছেন?

— চেহারা দেখেছিস নিজের? পড়তে পড়তে তো আধমরা প্রায়। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া ও করিস না। অসুস্থ হতে চাস?

আমি এবার চুপ হয়ে যাই।
আজকাল খাবার দাবারে বড্ড অনিয়ম হচ্ছে। তবে এটা তিনি খেয়াল করলেন কিভাবে?

ট্রেতে থাকা সব ফল একে একে খাইয়ে দিয়ে মেডিসিন টাও নিজ হাতে তিনি খাইয়ে দেন। আজ কিছু সময়টার জন্য অরা আপুর কথাটা আমার মাথা থেকে আউট হয়ে যায়! হৃদগহীন থেকে বলছে, ‘ সময়টা থেমে যাক এখানে! ‘

পূর্ব ভাইয়া আমায় ইশারা করলেন শুয়ে পড়তে। আমি বাধ্য মতো চুপচাপ শুয়ে পড়ি। তিনি লাইট অফ করে আমার পাশে এসে দূরত্ব বজায় রেখে বসলেন। একহাত আমার মাথায় দিয়ে আলতো করে বুলিয়ে দিতে থাকেন।
আমি তার মুখপানে দৃষ্টি দিতেই তিনি গম্ভীর কন্ঠে বললেন,,,

— ঘুমা! চোখ বন্ধ কর ফাষ্ট!

তার আদেশমতো চোখদুটো নিমিষেই বন্ধ করে নেই। খানিক মাঝে ঘুমের সাগরে পাড়িদ দেই! হটাৎ করে মনে হলো, ‘আহা জীবনটা কত সুন্দর! তবে সেটা শুধুমাত্র তিনি পাশে থাকলে। ‘

বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরিক্ষাটা অতোটা ভালো হয়নি আমার। অন্যের কাছে এইটুকু বেশ ভালো হলেও আমার কাছে এটা খারাপ! আরেকটু ভালো হতে পারতো।

পরিক্ষা খারাপ হওয়াতে আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে পরিক্ষার হল থেকে বেড় হই। মনটা বিষিয়ে আছে।

গেট দিয়ে বের হতেই খেয়াল হয় পূর্ব ভাইকে। আজ তিনি মাস্ক পড়ে আছেন। চোখে কালো রঙের সানগ্লাস। গরমের উত্তাপ তাপে ঘেমে গিয়েছেন অনেকটা। আমাকে দেখেই তিনি এগিয়ে আসেন। ভীরের মধ্য থেকে একদম একজন বডিগার্ড এর মতো সুন্দর ভাবে বের করে এনে গাড়ির কাছটায় নিয়ে যান!

পূর্ব ভাইয়া শার্টের হাতা দিয়ে কপালের ঘামটুকু মুছতে মুছতে বললেন,,,

— কি হয়েছে? ফেস রিয়াকশন এমন কেনো?

আমি বিষন্ন ভরা কন্ঠে বলি,,,,

— পরিক্ষা অতোটা ভালো হয়নি।

আমার কথ্য সম্পূর্ণ হওয়ার পর পরই পেছন থেকে অরিন কটাক্ষ করে বলল,,,,

— এ্যাহ আসছে…! পরিক্ষা অতোটা ভালো হয়নি?ভাইয়া এই মাইয়া মিথ্যা বলে, শুধুমাত্র একটা এম.সি.কিউ (M.C.Q) এর উত্তর তা মনমতো হয়নি বলে বলতেছে পরিক্ষা ভালো হয়নি। আজাইরা! আর দেখ গিয়ে কত মানুষ ফুল এন্সারই করতে পারেনি।

অরিনের কথায় তীক্ষ্ণ চোখে তাকায় পূর্ব ভাইয়া আমার দিকে। আমি আমতা আমতা করে অরিনের দিকে অগ্নি দৃষ্টি দেই। ও সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করে বলল,,,

— ভাইয়া আমি আজকেও অরণ্য ভাইয়ার সাথে যাবো। টাটা!

অরিন চলে যায়। সেদিকে তাকিয়ে আমি!
তখনই পূর্ব ভাইয়া বললেন,,,

— এতোটা লেইম কারনে বলিস যে তোর পরিক্ষা ভালো হয়নি?আবার মন খারাপ করে আছিস এই কারণে?ফাজিল!

আমি মিনমিনিয়ে বলি,,,

— একটা এম.সি.কিউ এর তো অনেক মূল তাই না ভাইয়া?

তিনি শাসানোর সুরে বললেন,,,,

— একদম আমাকে জ্ঞান দিবি না! যা সিটে বস। আর মুখ এমন বানিয়ে রাখলে থাপ্পড় একটাও মাটিতে পড়বে না দোল, মাইন্ড ইট!

কথাটি বলে তিনি গটগট করে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়েন। আমি কিছুক্ষণ হাসফাস করে নিজে গিয়েও ফ্রন্টসিটে বসে পড়ি। আড়চোখে তার দিকে তাকাতেই দেখি তিনি বেশ রেগে আছেন। আজব! এতোটা সামান্য কারণে রাগার কি হলো?অদ্ভুত লোক!

চলবে!