স্নিগ্ধ প্রেমের সম্মোহন পর্ব-২+৩

0
1819

#স্নিগ্ধ_প্রেমের_সম্মোহন
–[পর্ব – ০২ + ০৩]
লেখিকাঃ #সাদিয়া_মেহরুজ_দোলা

পূর্ব ভাইয়ের রুমে যেতেই আমি বাকরুদ্ধ! পুরো রুমে তার পোশাক এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে! বড় দুটো লাগেজ থেকে জামা অর্ধেক মাটিতে আর বাকি অর্ধেক এলোমেলো হয়ে লাগেজের ভেতরেই পড়ে আছে।

আমার অবাক হওয়ার কারনটা ছিলো পূর্ব ভাই খুব পরিপাটি একজন মানুষ! অগোছালো কিছুই পছন্দ করেন না। আর তার রুমই কিনা এভাবে লন্ডভন্ড হয়ে আছে?

ভাবনার মাঝেই কারো গম্ভীর কন্ঠ শুনতে পেলাম। শিউরে উঠে কাঁপুনি দিলো শরীর! ভয়ে নাকি অন্য কোনো কারনে জানিনা! ভয়েজটা পূর্ব ভাইয়ের। বেলকনি থেকে আসছে! সাদা পর্দা ভেদ করে তার সুঠাম দেহের ছায়া দেখা যাচ্ছে! তা দেখেই পা দুটো কাঁপতে শুরু করলো কেনো জানি?

কিছু সময় পর পূর্ব ভাই রুমে আসেন। কানে এখনো ফোন বহমান। খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে কথা বলছেন তিনি! আমার দিকে চোখ পড়তেই এক প্রকার থমকে গেলেন। তার চোখে খেয়াল করলাম আলাদা কিছু! একদম আলাদা!

হটাৎ আমার নজরে পড়ে পূর্ব ভাই শার্টলেস! শুধু মাত্র কালো একটা টাওয়াল পড়নে! ভেজা চুল দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে বুকের ওপর! এই দৃশ্য দেখে আমার কি হলো জানিনা। জোরে একটা চিৎকার দিয়ে হাত দিয়ে চোখ ঢেকে নেই। টেনে টেনে শ্বাস নিয়ে পিছু দিকে যেতে থাকি! তখনি গম্ভীর কন্ঠে কেও বলল,,,

— একদম রুমের বাহিরে যাবিনা! রুমের বাহিরে পা ফেললে তোকে মেরে ফেলবো!

হুমকিস্বরুপ এমন কথাটা শুনে কাঁপা কাপিঁ বেড়ে যায়। আমি কম্পিত কন্ঠে বলি,,,

— কে,,নো?

— অনুমতি ছাড়া রুমে প্রবেশ করেছিস, শাস্তি ছাড়া কিভাবে যেতে দেই?

‘শাস্তি ‘ শব্দটা শুনে মাথা চক্কর দিয়ে উঠে। এই লোকের শাস্তিগুলো খুব মারাত্মক হয়! এমনিতে অসুস্থ তার ওপর পূর্ব ভাইয়ের শাস্তি হজম হবে তো?

পূর্ব ভাই ভরাট কন্ঠে বলল,,,

— পিছে ফিরে আছিস কেনো?আমার দিকে তাকা..!

—ছিহঃ! আপনি শার্টলেস পূর্ব ভাই! এভাবে আমাকে আপনার দিকে তাকাতে বলছেন আপনার লজ্জা নেই?

পূর্ব ভাই রাগান্বিত কন্ঠে বললেন,,,

— থাপ্পড় খেতে যদি না চাস তাহলে জলদি আমার দিকে তাকা! চোখ খুলে।

ধমক শুনে আমি চোখ থেকে হাত সরিয়ে তার দিকে তাকাই। পূর্ব ভাইকে দেখে হতভম্ব আমি!এতটুকু সময়ের মধ্যেই টি শার্ট আর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পড়ে ফেললেন? আসলেই তিনি একজন মারাত্মক ব্যাক্তি। তার পারসোনালিটি অদ্ভুত অসাধারণ! দাদি ঠিকই বলেন।

আমি কাঁপা কন্ঠে বলি,,,,

— ড্রেস কখন পড়,,লেন?

পূর্ব ভাই পকেটে হাত গুজে স্টাইল মেরে দাড়িয়ে বললেন,,,

— যখন তুই পিছু ফিরে ছিলি! এনিওয়ে আমার রুমে কি? তাও নক ছাড়া এসেছিস? কমনসেন্স নেই?

পূর্ব ভাইয়ের অপমান সূচক কথাগুলো গায়ে কাঁটার মতো বিধলো! একেই অহন আর রাস্তায় সেই ঘটে যাওয়া ঘটনাতে আমি চিন্তায় চিন্তায় মারা যাচ্ছি! তার ওপর পূর্ব ভাইয়ের উপদ্রব!

পূর্ব ভাই আমার ভাবনায় ফোঁড়ন কেটে বললেন,,,

— কথার মাঝে কই হারিয়ে যাস? ফাজিল! ওয়েট… তোর শাস্তিটা দিয়ে নেই!

কথাটা বলেই তিনি আমার কাছে এগোতে লাগলেন! আমি পিছে যেতে নিলেই পায়ের সাথে শাড়ী বেঁধে একদম ফ্লোরে পড়ে যাই। মাথাটা ফ্লোরে লাগতেই খুব জোরে একটা শব্দ হয়! ব্যাথায় আস্তে করে একটা চিৎকার দেই!

আমার পড়ে যাওয়াতে পূর্ব ভাইয়ের চেহারায় অস্থিরতার ছাপ দেখতে পেলাম! কেমন হুট করে বিচলিত হয়ে পড়লেন তিনি। জলদি করে আমার পাশে হাঁটু ভেঙ্গে বসে পড়ে আমার মাথা তার কোলে নিয়ে নেন! উত্তেজিত হয়ে বললেন,,,

— দোল আর ইউ ওকে?চোখ কই থাকে তোর?দেখে চলতে পারিস না? ইশ..রক্ত পড়ছে!

আমি ব্যাথা ভুলে অবাক চাহনি দিয়ে তার পানে চেয়ে আছি! তার চোখমুখে একরাশ ভয় লক্ষ করলাম। কিন্তু কেনো? পূর্ব ভাই তো সবসময় আমাকে কষ্ট দেয়ার তালে থাকতো তাহলে আজ ব্যাথা পাওয়াতে তার চোখমুখে এতো ভয়ের ছাপ কেনো?

পূর্ব ভাইয়া আমার ক্ষত জায়গা তার হাত দিয়ে চেপে ধরেন। এক সময় আমাকে কোলে তুলে নিয়ে তার বেডে শুইয়ে দেন! আমি ব্যাথায় কথা বলতে ভুলে গেছি। চোখদুটো বন্ধ হওয়ার আগে খেয়াল করলাম পূর্ব ভাই কাওকে ফোন করছেন। এক প্রকার পাগলের মতো আচরণ করছেন! আর কিছু দেখার সময় হলো। চোখদুটো একসময় বন্ধ হয়ে যায়। এক সময় শুনতে পেলাম পূর্ব ভাই আমার নাম ধরে ডেকে চোখ বন্ধ মানা করছেন বারংবার!
__________________________

মাথায় তীব্র ব্যাথা নিয়ে চোখ খুলতেই খেয়াল করি পুরো আবরার ম্যানশন এর সবাই আমার চারিপাশে! প্রথম প্রথম হকচকিয়ে গেলেও পরবর্তীতে নিজেকে সামলে নেই। আমার চোখ খোলা দেখে মেঝ চাচুর মেয়ে অরিন চেচিয়ে উঠে বললো,,,

— ছোট চাচি দোলার জ্ঞান ফিরেছে!

এবার সবার চোখজোড়া নিবদ্ধ আমাতে। উদ্বিগ্ন দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছেন। তবে আমার বেহায়া চোখ বারবার পূর্ব ভাইয়াকে খুজছে! তিনি কোথায়?সেন্সলেস হওয়ার আগে তো কতো উতলা ছিলেন এখন কই গেলেন?

আম্মু আমার হাত ধরে বলল,,,

— কি হয়েছে তোর বলতো?আজ একটার পর একটা বিপদ তোর ওপর দিয়ে যাচ্ছে। এখন কেমন লাগছে মা? মাথা ব্যাথা করে?

আমি আম্মুকে উত্তর দিতে যাবো তার আগেই বাবা মা কে প্রশ্ন করে,,,

— একটার পর একটা বিপদ মানে?আগে কি হয়েছিলো?

— রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলো শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়াতে। পূর্ব পেয়ে বাসায় নিয়ে এসেছে। (মা)

আম্মুর কথায় আব্বুর চোখমুখে আতংকের ছাপ!তিনি বললেন,,,

— দেখেশুনে চলাফেরা করো মা! কতোবার বলেছিলাম একজন গার্ড দেই তোমার সাথে তুমি কথাই শুনোনা।

আমি ব্যাথা দমন করে বলি,,,

— গার্ড লাগবেনা আব্বু! ওসব প্যারা, আমি ঠিক আছি!

আব্বু আমাকে আর কিছু জিজ্ঞেস করতে নিবে তখনই বড় চাচা বললেন,,,

— পরে কথা জিজ্ঞেস করিস জোহান (দোলার বাবার নাম) এখন ওকে রেষ্ট নিতে দে!ক্লান্ত দেখাচ্ছে ওকে।

সবাই বড় চাচার কথায় সায় দেন! একা করে চলে যায়। অরিন থাকতে চেয়েছিলো কিন্তু বড় চাচি ইশারায় কিছু বলাতে ও মুচকি হেসে বেড়িয়ে যায়। এটা বেশ খটকা লাগে আমার!

সবাই চলে যেতেই আমি আধশোয়া হয়ে বসি। আমি এখন পূর্ব ভাইয়ার রুমে! অস্বস্তি কাজ করছে। ভাইয়া এতোদিন পর দেশে আসলেন। নিজের রুমে এসে দু মিনিট রেষ্টও করতে পারলেন না! সব দোষ আমার! অনুশোচনায় ভুগছি প্রচন্ড!

দরজা খোলার শব্দে সেদিকে তাকাতেই খেয়াল করি পূর্ব ভাইকে! তাকে দেখে নড়েচড়ে বসি। হটাৎ করেই লজ্জা কাজ করছে। মাথা নিচু করে হাতের আঙ্গুল নাড়াচাড়া করার সময় পূর্ব ভাইয়ের গম্ভীর কন্ঠস্বর কানে এসে বাড়ি খায়! তিনি বলছেন,,,

— এভাবে আঙ্গুল নাড়াচাড়া না করে শুয়ে থাক! ডক্টর রেষ্ট নিতে বলেছে। ঘুমা!

আমি ইতস্তত বোধ করে বলি,,,

— ঘুম আসছে না ভাইয়া। আপনি একটু আম্মুকে ডেকে দিন না!

পূর্ব ভাই তার একটা ভ্রু উঁচু করে বললেন,,,

—- ছোট চাচি কে দিয়ে তোর কি কাজ?

— মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে বলবো। যদি ঘুম আসে।

আমার উত্তর শুনে পূর্ব ভাই ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসেন। এই হাসির অর্থ জানা নেই! তিনি আমার কাছে এগিয়ে আমার দুই বাহু ধরে একটানে বালিশে শুইয়ে দেন। হুট করে ঘটনায় আমি হতবিহ্বল! তিনি বললেন,,,

— আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি ঘুমা!

তার বলতে দেরী নেই কিন্তু মাথায় হাত দিয়ে দেয় চটপট! অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছে! অনুভূতিটা অস্বস্তিকর, অপরাধমূলক! আমি ঠোটযুগল প্রসারিত করে কিছু বলতে যাবো তার আগেই তিনি তার মাথাটা নিচু করে আমার কপালে চুমু খান! পরক্ষণে শক্ত কন্ঠে বললেন,,,

— ডোন্ট টক! জলদি ঘুমা!

চলবে,
_________________________

[গল্প দিতে না দিতেই কপি হয়ে গেলো! আমার মাথা পুরো নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এতো কষ্ট করে সময়, শ্রম, মেধা খাঁটিয়ে লিখি কি গল্প কপি করার জন্য? এসব দেখলে আর লিখতে ইচ্ছে করেনা। একবার ভেবেছিলাম গল্পের দ্বিতীয় পর্ব আর দিবোনা। তবুও কয়েকজন এর অনুরোধে আবার লিখছি। ]

#স্নিগ্ধ_প্রেমের_সম্মোহন
–[পর্ব – ০৩]
লেখিকাঃ #সাদিয়া_মেহরুজ_দোলা

বিকেলের দিকে ঘুম ভাঙ্গে আমার। মাথার সেই তীব্র ব্যাথাটা আর নেই! স্বস্তির শ্বাস ফেলে পাশে তাকাতেই আমি হতভম্ব! পূর্ব ভাই আমার একহাত আঁকড়ে ধরে ঘুমিয়ে আছেন। তিনি ফ্লোরে বসা! তার গরম নিঃশ্বাস আমার হাতে আছড়ে পড়ছে! ঘুম থেকে উঠে এমন দৃশ্য দেখবো তা আশা করেনি!

আমি হাত একটু টান দিতেই তিনি চট করে মাথা তুলে আমার দিকে তাকান! আমার সন্নিকটে এসে উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন,,,

— কি হয়েছে? মাথা ব্যাথা করছে?কিছু লাগবে?

পূর্ব ভাইয়ার আচরণ টা ঠিক হজম হচ্ছেনা। যেই লোক আমায় প্রতি মূর্হতে কষ্ট দেয়ার তালে থাকতো সে আজ আমার কেয়ার করছে?কানাডায় গিয়ে কি তার সৃতিশক্তি চলে গেলো নাকি?

আমি একহাত উঠিয়ে পূর্ব ভাইয়ার কপাল স্পর্শ করি! জ্বর আছে কিনা দেখতে! কারন তার জ্বর হলে তিনি উদ্ভট ব্যাবহার করেন। নিজের মাঝে থাকেন না।
আমার কপালে হাত দেয়া দেখে ভ্রু কুচকায় পূর্ব ভাই! তা দেখে হাসি পায় আমার! যদিও তাকে খুব কিউট লাগছে!

পূর্ব ভাই আমার হাত সরিয়ে জিজ্ঞেস করেন,,,,

— কি হয়েছে তোর?কপালে হাত দিচ্ছিস কেনো?

— দেখছি আপনার জ্বর আছে কিনা! জ্বর থাকলেই তো আপনি এমন অদ্ভুত বিভেব করেন!

আমার কথা শুনে তার কুচকায়িত ভ্রু যুগল আরো কুঁচকে গেলো! ফিচেল কন্ঠে তিনি বললেন,,,

— হোয়াট ডু ইউ মিন?আমার বিভেব কি নরমাল না?

— উঁহু! একদমই না! আপনি যেখানে আমায় সবসময় শাস্তি দেয়ার পায়তারা করতেন আর আজ কিনা কেয়ার করছেন?

আমার কথা শুনে তার মাঝে কোনো ভাবান্তর দেখা গেলো না। আমি ভেবেছিলাম তিনি হতভম্ব হয়ে যাবেন আমার প্রশ্নে, কিন্তু না! আমি তো ভুলেই গেছি ইনি অন্য কেও নন ইনি ফায়াজ আবরার পূর্ব!

পূর্ব ভাইয়া উঠে দাড়ালেন! তিন ফুট পিছে সরে গিয়ে প্যান্টের পকেটে হাত গুজে নেয়! গম্ভীর কন্ঠে বলল,,,

— তুই অসুস্থ দেখে কেয়ার করছি। নাথিং ইলস্! উল্টো পাল্টা ভাবা বন্ধ কর।

কথাটা বলার সাথে সাথেই তিনি অন্যদিকে মুখ ঘুড়িয়ে নেন। যেনো আমার দিকে আর কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলে তার মহা ভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে! হুহ বদ লোক!

আমি বিছানা ছেড়ে উঠে যাই। রুমে যেতে হবে আমায়! কয়েকদিন পর এইচএসসি পরিক্ষা, এখনো বই রিভিশন দেয়া হয়নি!
বিছানা ছেড়ে নামতেই মাথায় চক্কর দেয়। যার ফলস্বরূপ ফের ফ্লোরে পড়তে নেই। কিন্তু অবাক কান্ড আমি শূন্যে ভাসছি! পাশে তাকাতেই দেখি পূর্ব ভাই তার একহাত দিয়ে আমাকে তার বুকের সাথে চেপে ধরে আছেন! চেহারায় সেই ভীত ছাপটা যেনো আবারও ফুটে উঠলো! তার রক্তিম ঠোঁটযুগল কাঁপছে অনবরত!

পূর্ব ভাইয়ার অবস্থা দেখে আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে যাই! ক্ষীণ স্বরে জিজ্ঞেস করি,,,

— পূর্ব ভাইয়া? আপনি ঠিক আছেন?

আমার কথাটি তিনি শ্রবন করার পর এক কিলার লুক দেন তিনি! আমি ভড়কে যাই আরো একটু! কটমট দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছেন। অদ্ভুত! আমি কি করলাম?

— ডাফার গার্ল! এখনি তো ফ্লোরে মাথাটা আবার বাড়ি খেতো। দেখেশুনে চলতে পারিস না?চোখ থাকে কই তোর?চোখের নির্দিষ্ট ব্যাবহার না করলে দান করে দে! অন্তত পক্ষে অন্য একটা মানুষ শান্তিতে বাঁচুক!

কথ্যগুলো কানে আসতে আমি হা করে তাকিয়ে আছি! মানে এটা কি সেই ইন্ট্রোভার্ট পূর্ব ভাই? যার থেকে একটা কথা বের করতে কত কষ্ট করতে হতো?

— হা করে তাকিয়ে আছিস কেনো?আমাকে খেয়ে ফেলবি?ইডিয়ট! (পূর্ব)

— আ,,মাকে ছাড়ুন! রুমে যাবো।

পূর্ব ভাই আমায় ছাড়লেন না! বরং এক টানে কোলে তুলে নেন। শত বার বলেও নামাতে পারছি না। যতবার তাকে নামাতে বলি ততবার তিনি রক্তচক্ষু দৃষ্টি আমার দিকে ছুড়ে মেরেছেন!

একরাশ লজ্জা আর অস্বস্তি একদম ঘিরে ধরেছে আমায়! পূর্ব ভাইয়ার স্পর্শে কেমন কাঁপুনি দেয় শরীর!

রুমে এসে তিনি আমায় বেডে হেলান দিয়ে বসিয়ে দেন। পিঠের পিছনে বালিশ দিয়ে! অতঃপর আমার দিকে কড়া দৃষ্টি দিয়ে বললেন,,,

— একদম বেড থেকে নামবিনা! আমি অরিনকে পাঠাচ্ছি! যা লাগবে ওকে বলবি।

মাথা নাড়িয়ে আমি সম্মতি জানাই! পূর্ব ভাই মাথা নিচু করে আমার মুখোমুখি হন! ভড়কে যাই আমি! তিনি আমার সামনে আসা একগোছা চুলগুলো কে পিছে ঠেলে দেন! এহেন কান্ডে আমি থ! বাকরুদ্ধ বলা চলে।

আমি কিছু বলতে নিবো তার আগেই তিনি ঝড়ের বেগে বের হয়ে যান রুম থেকে। আমি সেদিকে তাকিয়ে এখনো! পূর্ব ভাইয়ার ব্যাবহার স্বাভাবিক না! তিনি নিশ্চিত পাগল হয়ে গিয়েছেন! এমন অদ্ভুত আচরণ তো তিনি আগে করেননি।

একটা বালিশ কোলে নিয়ে বসবো তখনি হুড়মুড়িয়ে প্রবেশ করে অরিন! আমার দিকে তাকিয়ে এক দৌড়ে আমার পাশে বসে হাঁপাতে থাকে! ভ্রু কুচকে আসে আমার। সন্দিহান কন্ঠে বলি,,,

— কুকুর দৌড়ানি দিলো নাকি অরি?

অরিন আমার প্রশ্ন শুনে রাগী দৃষ্টি দেয়! তা দেখে হেসে দেই!

— কুকুর না তোর জামাই দৌড়ানি দিসে! (অরিন)

অরিনের উত্তরে ভ্যাবাচেকা খেয়ে হাসি থামিয়ে দেই।

— মানে কি?কি বলিস এসব?

অরিন থতমত খেয়ে বললো,,,

— আরে ধুর.. ভুল বলছি! তোর জামাই না পূর্ব ভাই তাড়া দিসে!

— কেনো?

— বললো তুই রুমে একা! কিছু লাগতে পারে তাই জলদি আসতে বললো।

আমি বেডে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে বলি, ‘ওহ ‘

পরক্ষণেই কিছু একটা মনে আসতে ধপ করে উঠে বসি! তা দেখে অরিন ভ্রু কুচকায়! ইশারায় ভ্রু বাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘কি?’

আমি সটান হয়ে বসে সিরিয়াস হয়ে বলি,,,

— অরি? তোর মনে হয়না? পূর্ব ভাইয়ার বিভেব চেঞ্জ হয়েছে? কানাডা থেকে আসার পরই কেমন উদ্ভট ব্যাবহার করছে!

অরিন ধপ করে বেডে শুয়ে পড়ে! তারপর শান্ত কন্ঠে বলল,,,

— বিভেব চেঞ্জ হয়নি, প্রেমে পড়ছে ভাইয়া!

— উল্টো পাল্টা কথা কম বল অরি! পূর্ব ভাই প্রেমে পড়বে সিরিয়াসলি? আচ্ছা যা…, ধরে নিলাম প্রেমে পড়েছে তাহলে তিনি আমার প্রতি এমন স্ট্রেঞ্জ বিভেব কেনো করে? যেই পূর্ব ভাই এক মূর্হতও আমাকে সহ্য করতে পারতো না! শুধু শাস্তি আর ধমক দিতো সে আমার কেয়ার করছে? (আমি)

আমার কথা শুনে অরিন হাসে! শ’খানেক রহস্যে ঘেরা হাসি। বিড়বিড় করে কিছু বলে উঠে বসে আমার সোজাসুজি হয়!
অতঃপর গলা ঝেড়ে বলল,,,

— দেখ এটা আমি জানিনা! হয়তো কাজিন বলে কেয়ার দেখাচ্ছে! তাছাড়া তুই তো এখন সিক। তাই হয়তো…! যাইহোক আজ সন্ধ্যায় ফিজিক্স কোচিং আছে, ভাইয়া আজ থেকে রাতে পড়াবে! তুই যাবি আজ?

— হ্যা যাবোনা কেনো? এপ্রিলে পরিক্ষা! এখন ফাকি দেই কিভাবে? তুই যাবিনা?

অরিন একটু ইতস্তত বোধ করে বলল,,,

— নারে! আজ রোহানের সাথে মিট করবো। অনেকদিন দেখা করিনা। তুই আমাকে নোট দিস পরে নিবোনে সায়ান ভাইয়ার থেকে! তোর ভাই তো ফিজিক্স এর টিচার!

আমাদের কথার মাঝেই অরিনের ফোন বেজে উঠলো! ফোন স্ক্রিনে তাকাতেই সে লজ্জায় চুপসে যায়! নিশ্চিত রোহান ভাইয়া ফোন দিয়েছে। অরিনের বয়ফ্রেন্ড রোহান। একে অপরকে প্রচন্ড ভালোবাসে!
অরিন চলে যায় বেলকনিতে।
_______________________________

সন্ধ্যা নামতেই চট জলদি নামাজ পড়ে রেডি হয়ে নিচে চলে আসি! মাথার ব্যাথাটা হাওয়াই মিঠাই এর মতো গায়েভ হয়ে গিয়েছে প্রায়!

নিচে আসতেই খেয়াল হলো পূর্ব ভাইয়াকে। তিনি অরন্য, শুভ্র আর আয়াফ ভাইয়াদের সাথে কথা বলছেন! সম্পর্কে তারা রক্তের সম্পর্কহীন ভাই! বেষ্ট ব্রাদার এভার বলা চলে! তাদের গলায় গলায় ভাব সেই ছোট থেকে।

আমহ নিচে যেতেই অরণ্য ভাইয়া আমায় ইশারায় ডাকলেন! এনাদের সাথে আমার বেশ ভালো সম্পর্ক! সায়ান ভাইয়ার মতো তারাও আমার বড় ভাই। আমি মিষ্টি হেসে কাছে যেতেই অরণ্য ভাই বললেন,,,

— কি গো প্রিন্সেস? মাথার ব্যাথা কমেছে?

আমি উত্তর দিবো তার আগেই শুভ্র ভাই বললেন,,,

— দেখেশুনে চলতে পারো না পুচকু? দেখেছো কতখানি ব্যাথা পেলে? তোমার ব্যাথায় তো একজন আবার ব্যাথায় মৃত্যপ্রায়!

শুভ্র ভাই কথাটা বলে হেসে উঠলেন! বাকিরাও হাসতে নিলে পূর্ব ভাই চোখ রাঙান! এতক্ষণ তিনি আমার দিকেই চেয়ে ছিলেন ভ্রু কুচকে! জানা নেই কেনো?
পূর্ব ভাইয়ার চোখ রাঙানিতে সবাই চুপ হয়ে গেলেও আমার শুভ্র ভাইয়ার কথাটাও কেমন খটকা লাগলো! তবে দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করার সুযোগ হলে না। দেরী হয়ে যাচ্ছে।

আমি তাড়া দিয়ে বলল,,,

— নেক্সট টাইম সাবধানে চলবো প্রমিসইইই…! এখন টাটা!

আমার বাচ্চামো দেখে সবাই হেসে দেয়! পূর্ব ভাই হাসেননি! ব্যাটা আস্ত একটা এলিয়েন!

আমি সামনের দিকে এগোবো তার আগেই পূর্ব ভাই গম্ভীর কন্ঠে বললেন,,,

— কই যাচ্ছিস?

— ভাইয়া কোচিং এ! আর একমাস পর তো পরিক্ষা!

আমার কথায় পূর্ব ভাই উঠে দাড়ালেন! টি টেবিল থেকে নিজের ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে বললেন,,,

— চল ড্রপ করে দেই!

— না ভাইয়া লাগবেনা। আমি একা যেতে পারবো! (আমি)

আমার কথায় পূর্ব ভাই রুদ্ধ কন্ঠে বললেন,,,

— আমি বলেছি আমি ড্রপ করে দিবো, ইট’স ফাইনাল! গট ইট?

আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলি! কান্না আসছে। এই লোকের থেকে যত দূরে ভাগি ততই পিছু আসে। খেয়াল করলাম শুভ্র ভাইয়ারা হাসছেন! স্ট্রেন্জ!এদের কি হলো?
__________________________

গাড়িতে বসতেই আরেক ঝামেলা পোহাতে হয়! সিটবেল্ট লাগাতে পারছিনা! কয়েকবার ট্রাই করার পর যখন হাঁপিয়ে উঠলাম! তখন দেখি পূর্ব ভাই আমার দিকে এগিয়ে আসছেন। থতমত খেয়ে দূরে যেতে নিলেই তিনি একহাতে আমার বাহু আঁকড়ে ধরেন! অন্য হাত দিয়ে সিটবেল্ট লাগিয়ে বললেন,,,,

—- দূরে সরছিস কেনো? আরেকটু হলেই তো সেকেন্ডবার মাথায় আঘাত পেতি ইডিয়ট!

আমি মাথা নুইয়ে নেই! তার ভারী নিঃশ্বাস এখনো আমার গালে আছড়ে পড়ছে! অস্বস্তি নিয়ে বলি,,,

— সরি ভাইয়া!

পূর্ব ভাইয়া আমার বাহু ছেড়ে দিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দেন! স্বস্তির শ্বাস ফেলি আমি। উফ.. কি মারাত্মক অনুভূতি!আচ্ছা এই অনুভূতির নাম কি?

চলবে,

_____________________________,

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন!