স্নিগ্ধ প্রেমের সম্মোহন পর্ব-৫০

0
1060

#স্নিগ্ধ_প্রেমের_সম্মোহন
#সাদিয়া_মেহরুজ_দোলা
#অর্ধশত_পর্ব (৫০)

-‘ হ্যাপি ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি স্নিগ্ধপরী! ‘

কর্ণকুহরে কারো ফিসফিসানো নেশালো কন্ঠস্বর ভেসে আসতেই গাঢ় ঘুম পাতলা হয়ে যায়। চোখের পাতা টেনে খুলে সামনে দৃষ্টি দিতে দৃশ্যমান হয় পূর্বের চেহারা। দুহাত পিছনে দিয়ে খানিকটা ঝুঁকে আছেন তিনি আমার দিকে! ঠোঁটের কোনায় মৃদু হাসি বহমান। ঝুঁকে থাকার কারণে তার কিছু চুল কপালের সামনে এসে রয়েছে যার কারণে তার চোখদুটো ঠিকমতো দেখতে পারছিনা।

হটাৎ খেয়াল হয় পূর্বের কিছুক্ষন আগে বলা কথাটি। লাফ দিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসি। হৃদপিণ্ড চরম ভাবে লাফাচ্ছে। আমি পূর্বের দিকে তাকিয়ে কাঁদো কন্ঠে বলি,

-‘ আজ আমাদের ম্যারেজে অ্যানিভার্সারি? ‘

পূর্ব ইশারায় ‘হ্যা ‘ বললেন। আমি গোমড়া মুখে তার দিকে তাকিয়ে আছি। পূর্ব তার ভ্রুদুটি একত্র করে বললেন,

-‘ কি হয়েছে? মন খারাপ? ‘

আমি ফিচেল কন্ঠে বলি,

-‘ আমি ভুলে গিয়েছি পূর্ব আজ আমাদের ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি! ‘

পূর্ব খানিক হাসলেন। তার হাতদুটো পিছনে বহমান রেখেই আমার পাশে এসে বসলেন! মৃদু কন্ঠে বললেন,

-‘ সো হোয়াট? আমি মনে রেখেছি না? একজন মনে রাখবে অন্যজন ভুলবে সচরাচর এটাই হয়! দেখে আসছি, এতে মন খারাপ করার কিছু নেই। এবার তুই ভুলে গিয়েছিস। সামনের বার আমি ভুলে যাবো হয়তো! ‘

আমি ঠোঁট বাকিয়ে বলি,

-‘ আপনি ভুলবেন?ইম্পসিবল! হুহ্,’

পূর্ব ফের হাসলেন। পেছনে রাখা হাতদুটো তিনি সামনে আনতেই আমার চোখ যুগল বড় বড় হয়ে যায়। পূর্বের হাতে ফুলের বুকি। ব্লাক রোজ দিয়ে তৈরি করা এটা। ফুলের বুকির মাঝখানটায় চকলেট এ ভরপুর। আমি খুশিতে গদগদ হয়ে বলি,

-‘ এটা আমার জন্য? ‘

-‘উঁহু, পাশের বাড়ির আন্টির জন্য! ‘

পূর্বের কন্ঠে রসিকতার ছাপ স্পষ্ট। আমি ফুলের বুকিটা হাতে নিয়ে চোখ পাকিয়ে বলি,

-‘ সাট আপ! ‘

স্ব-শব্দে হেঁসে দিলেন তিনি। বেড থেকে নেমে দাড়িয়ে কোলে তুলে নেন! আমি হকচকিয়ে বলি,

-‘ কি করছেন আজব? কোলে তুলছেন কেনো?’

-‘ হুশশ! চুপ থাক। ‘

পূর্ব হাঁটা ধরলেন। বেলকনিতে এসে সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিয়ে যেতে থাকলেন। পূর্বের রুমের ওপরে একটা মিনি ছাঁদ রয়েছে তারই সিঁড়ি এটা। এই ছাঁদে পূর্ব ব্যাতীত কারো প্রবেশ নিষেধ ছিলো তবে আমি আসার পর পূর্বের থেকে আমারই রাজত্ব বেশি এই ছাঁদটায়। পুরো ছাঁদে গাছ লাগিয়ে ভরে ফেলেছি। তিনি কিছু বলেননি! মামনি ছাঁদের অবস্থা দেখে মাথায় হাত দিয়ে ফেলেছিলেন চমকে! কারণ পূর্বের নাকি গাছপালা একদমই পছন্দ ছিলোনা। তবে আমার জন্য তিনি তার সব অপছন্দের জিনিস ও পছন্দের তালিকায় ফেলতে চেষ্টা করেছেন।

ছাঁদে এসে দাঁড়াতেই পূর্ব আমার দিকপ তাকায়। সেই সময়টাতে আমি তার দিকেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম। তিনি ভ্রু নাচিয়ে বললেন,

-‘ হোয়াট?এভাবে দেখছিস কেনো?আজ আমায় একটু বেশিই হ্যান্ডসাম লাগছে?’

প্রথমে কিছুটা লজ্জা অনুভূত হয় আমার। তবে পরক্ষণে আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বলি,

-‘ অযথা ফালতু কথা! এখানে কেনো এনেছেন সেটা বলুন?আমার কলেজ আছে, ‘

-‘ সামনে তাকা! ‘

চট- জলদি মাথা ঘুরিয়ে আমি সামনে তাকাই। দৃষ্টি আমার নিস্তব্ধ। চোখদুটো গোলগোল করে তাকিয়ে আছি সামনে। ছাঁদের গাছগুলোতে ফুলে ভরপুর, খরগোশ এর আনাগোনা চারদিকে। পুরো চারটা খরগোশ! একপাশে শুভ্র রঙের পর্দা দিয়ে তাঁবু আকারে এক নির্দিষ্ট জায়গা ধরে চারিপাশটা মোড়ানো। তাতে জ্বলছে লাল, নীল রঙের মরিচবাতি!

অশ্রুসিক্ত নয়নে পূর্বের দিকে দৃষ্টি দেই। আমি নরম কন্ঠে বলি,

-‘এসব আপনি করেছেন তাই না?’

-‘ হু! ‘

-‘ এগুলো তো আমার ড্রিম ছিলো। আপনি জানলেন কি করে?’

পূর্ব কিছুটা আমতা আমতা করে বললেন,

-‘ তোর ডাইরিতে পড়েছিলাম। পুরোটা পড়িনি। টপ পেজেই লিখা ছিলো। তা থেকেই এসব ডেকোরেশন নিজ হাতে করেছি! ফুলগাছ, খরগোশ এভ্রিথিং! পছন্দ হয়েছে? ‘

আমি মুচকি হাসি দিয়ে পূর্বের গালে চুমু দেই। অতঃপর উচ্ছাসিত কন্ঠে বলি,

-‘ খুব বেশি! একটু নামিয়ে দিন না। আমি খরগোশ কোলে নিবো প্লিজ, ‘

পূর্ব তৎক্ষনাৎ আমায় কোল থেকে নামিয়ে দিলেন। তার চোখমুখে বিষ্ময় ছাপটা উপচে পড়ছে। হয়তো চুমু খাওয়ার জন্য। আমি নিজের এহেন কান্ডে নিজেই তাজ্জব বনে গিয়েছি এতে তার এমন হতভম্ব হয়ে যাওয়াটা জায়েয!

কলেজে এসে আদ্রাফকে খুঁজছি চারিদিকে। তবে তার দেখা নেই! ক্লান্ত হয়ে ক্লাসরুমে যেতেই দেখি নীরবকে। বরাবরের মতো আদ্রিনার সাথে চিপকে বসে আছে। আমি নিজের সিটে বসে পড়ে নীরবকে উঁচু গলায় ডাক দিয়ে বলি,

-‘ নীরইব্বা….. এদিকে আয় তো! ‘

কথাটা বাংলায় বলেছি আমি যার কারণে সব স্টুডেন্ট গুলে আমাকে এলিয়েন এর নজরে কিছু সময় দেখে নিজেদের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন।এখানে বেশিরভাগ বাংলায় কথা বলি। এতে সবাই কিছুটা তাজ্জব বনে গিয়ে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। যা দেখে দম ফাটানো হাসি আসে শুধু!

বিরক্তি চোখে নীরব আমার দিকে একবার তাকিয়ে আদ্রিনার থেকে বিদায় নিয়ে আমার পাশপ এসে ধপ করে বসে পড়লো। কিছুটা বিরক্তি কন্ঠে বলল,

-‘ কি সমস্যা? কুত্তার মতো চেঁচাস ক্যান আজব! ‘

আমি চোখ পাকিয়ে বলি,

-‘ নিজের ট্যাগ আমাকে দিস কেন?কুত্তা তো তুই। ‘

-‘ আচ্ছা বুঝছি, যা মানলাম আমিই কুত্তা। এখন বল তো ডাকছস ক্যান?’

-‘ আদ্রাফ কই?’

নীরব কিছুটা ভাবুক হয়ে গেলো। পরিশেষে ভ্রু বাকিয়ে বলল,

-‘ বলতে পারি না। দাড়া ফোন দেই। ‘

ফোন বের করে নীরব আদ্রাফকে কল দেয় কিন্তু ও রিসিভ করলো না বরং কেটে দেয়। তা দেখে আমার সন্দেহের মাত্রাটা বৃদ্ধি পেলো!

নীরব বাজখাঁই কন্ঠে বলল,

-‘ শালার সাহস দেখছোস দোল?আমার ফোনটা কাইট্টা দেয় হারামিতে। আজ আসুক, ‘

আমি নীরবের বলা কথায় পাত্তা না দিয়ে চিন্তিত কন্ঠে বলি,

-‘ আদ্রাফের কিছু একটা হয়েছে দোস্ত, ‘

-‘ মানে? কি হইবো?’

-‘ আরেহ্, আজকাল দেখিস না কেমন টেনশনে থাকে? সারাদিন শুধু পড়তেই থাকে। খাওয়া দাওয়া নেই। ওর কিছু একটা হয়েছে। ‘

আমার চিন্তিত কন্ঠস্বর শুনে নীরবের চেহারাতেও চিন্তার ভাবটা দেখা যায়।
আদ্রাফ আজকাল উদ্ভট বিভেব করছে। প্রতিটা সময় পড়ালেখা। যেই ছেলে আগে বই ধরতো না সে একদিনে এতো চেঞ্জ? তারথেকে বড় কথা খুব বেশি টেনশনে আছে সে এটা তার চেহারা দেখলেই বোঝা যায়। সেদিন ফোনেও কারো সাথে তর্ক করতে দেখি সব মিলিয়ে সবকিছু কেমন উল্টোপাল্টা লাগছে। আসলে হয়েছেটা কি আদ্রাফের?

ক্লাস শেষ করে বের হতে দেখি শুভ্র ভাইয়াকে। হাত নাড়িয়ে ইশারা করে বলছেন তার কাছে আসতে। আমি বড় বড় পা ফেলে ভাইয়ার কাছে দাঁড়াতেই তিনি বললেন,

-‘ পূর্ব একটু বিজি ছিলো দোল, তাই আমায় বলল তোমায় বাসায় নিয়ে যেতে! চলো যাই?’

আমি কিছুক্ষন ভেবে বলি,

-‘ ভাইয়া আমি পূর্বের অফিসে যাবো! ‘

-‘ আচ্ছা গাড়িতে উঠো। ‘

গাড়িতে উঠে বসার পর আধাঘন্টা পরই পৌঁছে যাই পূর্বের অফিসে। শুভ্র ভাইয়া পূর্বের কক্ষ কত তলায় আছে?তার লোকেশন বলে দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যান। আমি লিফট দিয়ে উঠে পূর্বের কেবিনের কাছে আসতেই চোখ ছানাবড়া আমার। সাদা স্বচ্ছ কাঁচের বাহির দিয়ে স্পষ্টরূপে দেখা যাচ্ছে আদ্রাফ পূর্বের পা ধরে আকুতি মিনুতি করছে। আর পূর্ব ওকে উঠানোর চেষ্টা করছে! আদ্রাফ কি বলছে?তা শুনতে কাঁচের দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করি। তখনি ভেসে আসে আদ্রাফের করুন কন্ঠস্বর।

-‘ পূর্ব ভাই প্লিজ আমায় একটা পিয়নের চাকরি হলেও দিন। আম্মুর অপারেশন পরশু। টাকা নেই পর্যাপ্ত পরিমাণে আমার কাছে। সঠিক সময়ে টাকা সংগ্রহ করতে না পারলে আমার আম্মুর অপারেশন করাতে পারবো না। পারবো না তাকে বাঁচাতে! একটু দয়া করুন পূর্ব ভাই। ‘

আদ্রাফের কথায় স্তব্ধ আমি! পূর্বের দিকে চেয়ে দেখি তার মুখে রাগের আভাস। পূর্ব ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললেন,

-‘ এই ছেলে, পা ছেড়ে উঠো! এভাবে আকুতি মিনুতি করার কি আছে?ভাই ডাকো তাহলে এভাবে পা ধরে বসে আছো কেনো?কোনো পিয়নের চাকরি দিচ্ছি না তোমায়।নিজের স্ট্যাডি তে ফোকাস করো। তোমার মায়ের যা টাকা লাগবে অপারেশন এ সব আমি দিবো। এখন মানা করলে ঠাটিয়ে এক চড় মারবো!’

-‘ কিন্তু এভাবে টাকা নেই কি করে পূর্ব ভাই?’

-‘ ভাই ডাকো তুমি,বড় ভাই হিসেবে এতটুকু করতেই পারি। তোমার মা আমারও মায়ের মতোন!এভাবে মেয়েদের কান্না কাটি বন্ধ করো। বাসায় গিয়ে রেষ্ট নাও যাও! ‘

পূর্ব নিজের কথা শেষ করতেই আমি অস্ফুটস্বরে বলি,

-‘আ…আদ্রাফ?’

এতক্ষণ ওদের দুজনের কেও আমায় খেয়াল করেনি। আদ্রাফ হতবিহবল হয়ে চেয়ে আছে। আমি সামনে আগাই। আদ্রাফের সামনে দাঁড়িয়ে বলি,

-‘ আমাকে কি তুই কোনোদিনও নিজের ফ্রেন্ড মনে করেছিস?হয়তো না! একবার আমাকে এসে নিজের অবস্থার কথা বললে কি হতো?আমি কি তোকে হেল্প করতাম না?’

-‘দোল আসলে… ‘

হাত উঁচু করে আদ্রাফকে থামিয়ে দেই। নিম্ন কন্ঠে বলি,

-‘ চলে যা এখান থেকে! আমি তোর সাথে কথা বলতে চাইনা। ‘

আদ্রাফ কিছু বলতে চাইছিলো কিন্তু আমি হেঁটে এসে অন্যদিকে চলে যাই। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চলে যায় আদ্রাফ! চোখে পানি টলমল করছে আমার। ও কি একবার আমায় বলতে পারতো না?পিছন থেকে জরীয়ে ধরে কেও। সে যে পূর্ব তা বুঝতে বাকি নেই। ঘাড়ে থুতনি রেখে বলল,

-‘ মন খারাপ করিস না। হয়তো আদ্রাফ তোকে টেনশনে ফেলতে চাইনি দেখে বলেনি। এমনিতে ও অনেক ভেঙ্গে পড়েছে। রাগ করে না থেকে ওকে সার্পোট দে । ‘

কিছু বলিনি পূর্বের কথায়। তিনি আমায় তারদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বললেন,

-‘ হটাৎ আজ আমার অফিসে? ‘

-‘ এমনি এসেছি। ‘
উদাস কন্ঠে জবাব দিয়ে চুপ হয়ে যাই ফের। পূর্ব আমার হাত ধরে সোফায় বসিয়ে দিয়ে বললেন,

-‘ একটু বস, আমি মিটিং এটেন্ড করে নেই। ‘

-‘ দরকার কি?চলে যাই আমি!’

-‘ উঁহু! চুপচাপ বসে থাকি। নড়লে খবর আছে। ‘

গাল ফুলিয়ে বসে থাকি আমি। পূর্ব মিটিং এটেন্ড করে কিছু কথা বলে ভিডিও অফ করে দেন। তার হাতদুটো প্রসারিত করে দিয়ে বললেন,

-‘ কাছে আয় এবার, একটু জরীয়ে ধরে। কতক্ষণ তোর স্পর্শ পাইনি। ‘

আমি গুটিশুটি মেরে তাকে জরীয়ে ধরে বুকে মাথা রাখি। পূর্ব কপালে গভীর চুমু খেয়ে মিটিং এ কথা বলতে থাকেন অডিও অন করে। আমার সকল ধ্যান এখন আদ্রাফের ব্যাপারটা নিয়ে। মধ্যবিত্তদের বাস্তবতা এতোটা কঠিন হয় তা আজ নিজ চোখে দেখলাম। মধ্যবিত্তরাই পৃথিবীর আসল রূপ দেখতে পায়। হুমায়ুন আহমেদ এর এই কথাটা একদম কাটায় কাটায় সত্য! আদ্রাফ ছিলো মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন সন্তান। বাবা বেঁচে নেই! আদ্রাফই টিউশনি করিয়ে টাকা আয় করতো আর বেশিরভাগই ওর মামার ওকে দেখতো! তাছাড়া আদ্রাফের বাবার দুটো বাড়ি আছে সেখান থেকেও মোটা অংকের টাকা আসতো। কিন্তু আজ হটাৎ কি হলো?নিশ্চিত কোনো ঝামেলা হয়েছে।

বাসায় আসতেই পরিবারের সবাই আমায় এবং পূর্বকে চমকে দেয়। পুরো বাড়ি ডেকোরেশন করা। সবার মুখে হাসি! সবাই একসাথে চেঁচিয়ে বললেন,

-‘ শুভ বিবাহ বার্ষিকি। ‘

পূর্ব অবাক হয়ে বাবা(পূর্বের বাবা) কে বললেন,

-‘ এসব কখন করলে আব্বু? ‘

-‘ তোরা যখন অফিসে ছিলি। সবাই মিলে একসাথে সব করেছি। সাথে বাহির থেকে কয়েকজন লোক ও ডেকেছিলাম তারাও হেল্প করেছে! ‘

কেটে যায় অনেকটা সময় সবার সাথে। রাত একটার দিকে রুমে ঢুকতেই চক্ষু চড়কগাছে। পুরো রুমটা ফুল দিয়ে সাজানো রয়েছে। নিশ্চিত পরিবারের মধ্যে কারো কাজ এটা। পূর্ব তো আমারই সাথে অফিসে ছিলেন সন্ধ্যা অব্দি! বেডে এগিয়ে গিয়ে কিছু একটা ভেবে পূর্বের দেয়া বিয়ের দিন কালো শাড়ীটা পড়ে নেই!

কিছু সময় পর পূর্ব রুমে আসলেন। আমাকে দেখে শুকনো ঢোক গিলে বলেন,

-‘ এসব কি?’

আমি স্মিত হেসে বলি,

-‘ রুমের ব্যাপারটা জানা নেই। বাট শাড়ী পড়ার প্লানটা আমার!’

কিছুটা এগিয়ে গিয়ে পূর্বের দুই কাঁধে হাত রেখে নরম কন্ঠে বলি,

-‘ প্লিজ পূর্ব, কিছু চাই আপনার কাছে। একটা বাবু শুধু। এমন করছেন কেনো?কিছু হবেনা আমার। একদম সুস্থ থাকবো দেখবেন! আমিও মা হতে চাই পূর্ব। আপনার ইচ্ছে করেনা বাবা হতে? আমাদের বাবুকে নিয়ে স্বপ্ম দেখতে?’

পূর্ব দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। তার দুহাত আমার কোমড়ে রেখে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললেন,

-‘ যা তোর ইচ্ছে এক্সেপ্টটেড! ‘

খুশিতে গদগদ হয়ে পূর্বের গালে একটা চুমু খাই। পূর্ব আমায় নিজের সাথে নিবিড়ভাবে জরীয়ে ধরেন। ডুব দেন ভালোবাসার সাগরে!

________________________

একমাস এর টানা পরিক্ষায় নাজেহাল অবস্থা আমার। আজ শেষ হলো পরিক্ষা। আগের দিনগুলো থেকে আজ একটু বেশিই ক্লান্ত অনুভব হচ্ছে। ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে পানির ছিটা দিতেই গলা দিয়ে গলগল করে বমি বেড়িয়ে আসে। বমি করা শেষে দুহাতে মুখ ঢেকে নেই! যা ভাবছি আমি তার ৭০% পার্সেন্ট সিয়র আমি।

পুরোপুরি সিয়র হতে মেডিকেল এর একজন ডাক্তারের কাছে যাই। তিনি আমায় চেক করে মুচকি হাসি দিয়ে বললেন,

-‘ কংগ্রাচুলেশনস দোল, ইউ আর প্রেগন্যান্ট! ‘

চোখদুটো থেকে গড়িয়ে পড়ে খুশির অশ্রু। ডাক্তার চলে যায়। আমি পেটে হাত দিয়ে বিড়বিড় করে বলি,

-‘ এসে গেছে সে!এসে গেছে আমার কাঙ্খিত সেই জন। আমার এবং পূর্বের প্রণয়ের চিহ্ন❤️ ‘

চলবে………