স্নিগ্ধ প্রেমের সম্মোহন পর্ব-০৫

0
1435

#স্নিগ্ধ_প্রেমের_সম্মোহন
–[পর্ব-০৫]
লেখিকাঃ #সাদিয়া_মেহরুজ_দোলা

ফজরের আজান কানে ভেসে আসতেই ঘুম ভেঙে যায়! বাহিরে ভোরের আলো ফুটেছে কিছুটা! পাখির কিচির মিচির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে, আমি আড়মোড়া ভেঙে বেড থেকে নামতে যাবো তখনই নজরে পড়ে পড়ার টেবিলে থাকা বক্সটার দিকে! ঐটা চকলেট এর বক্স! চিরকুট এর সাথে দেয়া ছিলো। চকলেট দেখে খেতে ইচ্ছে করলেও খাইনি! অচেনা মানুষের দেয়া খাবার কিভাবে খাই?

চুলগুলো হাতখোপা করে ওযু করে নেই! নামাজ শেষ করে চটজলদি রেডি হয়ে নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়াই! আজ কলেজ আছে।

নিচে নামতেই সবার প্রথম চোখে পড়লো পূর্ব ভাইয়াকে! ঘর্মাক্ত শরীর নিয়ে বাহির থেকে আসছেন! কালো টিশার্ট টা ভিজে প্রায়! হয়তো জগিং করতে গিয়েছিলেন! আমাদের বাসায় একমাত্র পূর্ব ভাইয়া খুব ভোরে উঠে! এটা তার অভ্যাস!

পূর্ব ভাইয়াকে দেখে ভয় হচ্ছে! কাল রাতের কথা মনে পড়তেই লজ্জা যেনো ঝাপ্টে ধরলো! হটাৎ তার দৃষ্টি আমার দিকে পড়ে। টিস্যু দিয়ে কপাল থেকে বেয়ে পড়া ঘাম মুছতে মুছতে আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকান! আমি এক পা একপা করে সিড়ি বেয়ে ওপরে উঠতেই তিনি ঝড়ের বেগে এসে আমার সামনে দাড়ান!

এতো তাড়াতাড়ি আমার সামনে আসাতে আমি ভয় পেয়ে পড়তে নিলেই তিনি আমার হাতের বাহু আঁকড়ে ধরে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরেন! ভাইয়ার দৃষ্টি বুঝতে পারছিনা! রেগে আছেন কিনা সেটা বোঝা যাচ্ছে না। আমি তার হাত ছাড়াতে নিলেই এবার তিনি আমার হাত ছেড়ে কোমড় চেপে ধরেন!

আকষ্মিক কান্ডে আমি স্তব্ধ! পুরোপুরি ভাবে স্তব্ধ! কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি! শুধুমাত্র ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছি তার দিকে। পূর্ব ভাইয়া আমার অবস্থা দেখে বাঁকা হাসি দেন! সেই হাসি দেখে শিউরে উঠি যেনো!

পূর্ব ভাইয়া আমার কানের কাছে তার ঠোঁট নিয়ে বললেন,,,

— কাল রাতে আমায় কি যেনো বলেছিলি?হুম?

—(নিশ্চুপ)

যার ভয়টা পেয়েছি তাই হলো! পূর্ব ভাইয়া রাতের কথা ধরেই জেরা করবেন এখন! আমি কাদো কাঁদো চাহনি তে তাকাতেই তিনি ফের বললেন,,

— কাল রাতে কথাগুলো অস্বীকার করে আবার আমায় ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে ছিলি! বাহ! সাহস দিনদিন বাড়ছে দেখি।

— স,রি ভা,ইয়া আর এমন হবেনা!
কাঁপা কন্ঠে কথাগুলো বলে মাথা নিচু করে নেই!

সাথে সাথে পূর্ব ভাই আমায় ধমক দেন।রাম ধমক যাকে বলে। আমার এখন হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে! আশপাশ তাকিয়ে কাওকে খোজার চেষ্টা করাতে ব্যার্থ হই! এতো সকালে কেওই উঠে না এ বাড়িতে!

পূর্ব ভাইয়া ঝাঁঝালো কন্ঠে বললেন,,,,

— আমার সামনে একদম মাথা নিচু করবিনা! মাথা তোল, ফাষ্ট!

কথ্যসমূহ কানে আসতেই ফট করে মাথা তুলে তাকাই! চোখাচোখি হয়ে যায় ভাইয়ার সাথে। তার চোখদুটো লাল! রক্তলাল বর্নের ধারণ করেছে! কি কারনে তিনি এতো রেগে?

— নেক্সট যাতে আমার সামনে মাথা নিচু করতে না দেখি!শুধু আমার সামনে কেনো কারো সামনেই মাথা নিচু করবি না! গট ইট?

–,হু!

পূর্ব ভাইয়া আমার কোমড় ছেড়ে দূরে গিয়ে দাড়ান! প্রশান্তি আসে মনে! এতক্ষণ প্রচুর আনইজি ফিল হচ্ছিলো।

সামনে তাকাতে খেয়াল করে তিনি আমারই দিকে তাকিয়ে! অপ্রস্তুত হয়ে আমি অন্যদিকে তাকাই! তখনি আমার কানে আসে পূর্ব ভাইয়ার গম্ভীর কন্ঠস্বর!

— কাল রাতে যা বলেছিস মাফ করে দিলাম! ফারদার ঐসব ওয়ার্ড মুখে আনলে ঠোঁট কেটে ফেলবো।

আমি নিশ্চুপ!
তিনি আবার বললেন,,,

— কই যাচ্ছিস এতো সকালে?

— কলেজে!

— ওয়েট কর! আমি আসছি চেঞ্জ করে। আমি পৌঁছে দেবো!

পূর্ব ভাইয়ার শেষের কথাটা কানে এসে বাড়ি খেতেই আমি উত্তেজিত হয়ে বলি,,,,

— তার একদমই দরকার নেই ভাইয়া! আমি একাই চলে যেতে পারবো!

— আমি তোকে জিজ্ঞেস করিনি, ওর্ডার করেছি! চুপচাপ এখানে দ্বারা, আমি আসছি!

পূর্ব ভাইয়া সিঁড়ি দিয়ে ওপরে চলে যান! আমি সেইদিকে তাকিয়ে আছি অসহায় চোখে। এই লোক কেনো আমার পিছু ছাড়েনা?একে কানাডা থেকে আসতে বলছে কে?
________________________

সোফায় বসে বসে ফেসবুকে নিউজফিড স্ক্রল করছি! বিরক্ত লাগছে। পুরো নিউজফিডে খেলার নিউজ দেয়া ভরা। সবাই আর্জেন্টিনা কে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে! নিউজফিড ফুটবল মাঠ লাগছে প্রায়। ফেসবুক থেকে বেড়িয়ে ফোন ব্যাগে রেখে দেই!

কারো পায়ের শব্দ শুনে সর্বপ্রথম আমি সিড়ির দিকেই তাকাই! এক মূর্হতে শ্বাস যেনো থমকে যায়! বেহায়া চোখ আঁটকে যায় পূর্ব ভাইয়ার দিকে। গাঢ় নীল রঙের শার্ট আর কালো জিন্স প্যান্ট! মারাত্মক লাগছে তাকে। সাওয়ার নেয়াতে চুলগুলো ভেজা। লেপ্টে আছে কপালের কাছটায়! ভাইয়ার চুলগুলো বেশ বড় আর কুচকুচে কালো রঙের! একবার তাকালে দৃষ্টি থমকে যায়!
পূর্ব ভাইয়াকে সুর্দশন লাগছে! এতো সুন্দর কেনো এই লোকটা?

ভাবনার গহীনে থাকাকালীন কখন যে আমার সামনে পূর্ব ভাইয়া এসে দাড়িয়েছে তার খেয়াল নেই আমার! ভ্রু নাচিয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন,,,

— এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো আমার দিকে? আই নো আ’ম হ্যান্ডসাম তাই বলে এভাবে নজর দিচ্ছিস কেনো?

ভাইয়ার কথায় থতমত খেয়ে যাই। প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলি,,,

— আপনার দিকে কেনো তাকাবো? ঐ যে আপনার পিছে তাকান, নতুন পেইন্টিং করেছে মেঝ চাচু! ইশ.. কি চমৎকার দেখতে হয়েছে! তাই না?

আমার কথায় পূর্ব ভাইয়ার চোখমুখে রাগের আভা! বিরবির করে বললেন,,,

— চাচাকে এখনি পেইন্টিং করতে হলো। ডিজগাষ্টিং!

পূর্ব ভাইয়ের কথা আমার কানে আসে! তা শুনে মুচকি হাসি দেই। পরক্ষনে না শোনার ভান করে বলি,,,

— কিছু বললেন ভাইয়া?

— হু?নাহ! এই? কথায় কথায় বারবার ভাইয়া ভাইয়া করিস কেনো? প্রতি লাইনে ভাইয়া বলা খুব বেশি জরুরি?

—হুম! অনেক বেশি জরুরি। আপনি আমার সিনিয়র। সম্মান না দিলে চলে?

পূর্ব ভাইয়া আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকান। তবে মুখে কিছু বললো না। অতঃপর পকেট থেকে ফোন বের করে কানে লাগিয়ে হেঁটে বাহিরে চলে যান!

_______________________________

গাড়ির কাছে আসতেই খেয়াল করি পূর্ব ভাইয়া আশেপাশে নেই। মাথা ঘুরিয়ে চারপাশে তাকাতে দূর দূরান্তে তাকে দেখলাম না। আজব! এতটুকু সময়ের মধ্যে কই চলে গেলো ইনি?

ব্যাগ থেকে ফোন বের করে কল করতে যাবো তখনি পূর্ব ভাইয়া এসে পড়েন! তার মুখপানে চিন্তার রেশ! তিনি বললেন,,,,

—- দাড়িয়ে আছিস কেনো?গাড়িতে বস। তোকে ড্রপ করে বাবার অফিসে যাবো!

ভ্রু কুচকে নেই! এতোই যখন ব্যাস্ততা তাহলে আমাকে একা যেতে দিচ্ছেন না কেনো?আজব মানুষ!

গাড়িতে বসার পর একটাও কথা বলিনি। সোজা জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে ছিলাম। বাহিরে তাকিয়ে থাকার পুরোটা সময় পূর্ব ভাইয়া আমার আড়চোখে দেখেছেন তা বেশ বুঝতে পেরেছি! তবে কেনো তাকাচ্ছিলেন বারবার তা আর জিজ্ঞেস করা হয়নি! আমি অহনের কথা ভাবছি। এই কয়েকদিনে ওকে একবারও মনে পড়েনি আমার! এক মূর্হতের জন্যও না! স্ট্রেন্জ! আমি তো ওকে ভালোবাসতাম। ওকে তো আমার ক্ষনে ক্ষনে মনে করে কাঁদা উচিত ছিলো! যেখানে আমি ওকে মনেই করিনা আজকাল!

যদিও মনে করার মতো সময় হয়ে উঠে না! যখন একা থাকি তখন অহনকে ভাবতে নিলে ঐ মূর্হতে কাকতালীয় ভাবে কেও না কেও উপস্থিত হয়ে যান! হয় অরিন নয়তো পূর্ব ভাই, সায়ান ভাইয়া! আর নয়তো নীরবের কল আসে! নীরব আমার বেষ্টফ্রেন্ড!

অর্পির থেকে জেনেছিলাম ওর অহনের সাথে বেশ ভালো সংসার চলছে।
এসব ভাবতে ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি! আদও কি আমি অহনকে ভালোবাসতাম?

চিন্তাধারা কাটে বিকট হর্নের শব্দে! বিরক্ত নিয়ে হর্নদাতাকে খেয়াল করতে গেলেই লক্ষ হয় হর্নটা পূর্ব ভাই দিচ্ছেন।

—হর্ন দিচ্ছেন কেনো ভাইয়া?শব্দ দূর্ষন করছেন। আপনাকে পুলিশে দেয়া উচিত!

আমার কথায় পূর্ব ভাইয়া দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,,,

— পাশে তাকা! কলেজ এসে গিয়েছে! কই থাকে মন? কতক্ষণ ধরে ডাকছি তোকে।

—সরি আসলে খেয়াল করিনি।

ভাইয়া কিছু বললেন না। আমিও আর কথা না বাড়িয়ে ব্যাগ নিয়ে বেড়োতে নিলেই তিনি ব্যাগের আংশিক অংশ টেনে ধরে বলেন,,,,

— একা বাসায় যাবিনা! আমি গার্ড পাঠিয়ে দিবো। আমার কিছু ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে নাহলে আমিই আসতাম!

মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে কলেজের ভেতর চলে যাই।

______________________________

বাম হাতের নখটা উপরে ফেলতেই চিৎকার দিয়ে ওঠে আদনাফ নামের ব্যাক্তি! এই চিৎকারে শুনে তৃপ্তিময়ী হাসি দেয় সামনে বসা পুরো কালো রঙের ড্রেসাপে আচ্ছাদিত লোকটি! পায়ের ওপর পা তুলে হাতের প্লাগটা নাড়াতে নাড়াতে বললো,,,

— সো?এখন কি সত্যি কথা বলবি নাকি আঙ্গুল গুলোও কেটে ফেলবো?

আদনাফ আর্তনাদ করে বললো,,,

— বল,,বোনা! কি,ছুতেই না!

বাঁকা হাসি দেয় সেই লোকটি! সেই হাসি দেখে আদনাফ ভয়ে কেঁপে ওঠে! তবুও যেনো সে তার সিদ্ধান্তে অটল।

লোকটি এবার একটা ধারালো ছুড়ি দিয়ে আদনাফের সব আঙ্গুল গুলো একসাথে কেটে ফেলে! সাথে হাতের বাহু থেকে হাত কেটে আলাদা করে ফেলে! আদনাফ আত্ন চিৎকার দেয়। এতে যেনো কিছু আসে যায়না তার! স্বাভাবিক ভঙ্গিতে দুহাত আলাদা করে ফেলে আদনাফের শরীর থেকে!

আদনাফের পেটে সেই ধারালো ছুড়ি ঢুকিয়ে দেয়। গলগল করে রক্তপাত শুরু হয় সেখান থেকে। আরেকবার আঘাত করতে নিলেই আদনাফ বহু কষ্টে অস্ফুটস্বরে বললো,,,

— আর মারবেন না! আমি বলছি,ই!

তিনি চেয়ারে আয়েশি ভঙ্গিতে বসে বলে,,,

— বল!

— চট্টগ্রামের ফ্রী পোর্ট এ আমাদের গোডাউন আছে। ঐখান থেকেই সারা বাংলাদেশে ড্রাগ সাপ্লাই দেই আমরা! আমাদের মূল হোতা আফজাল হোসেন। তিনিই আমাদের টাকা দেয় এরজন্য!

আগন্তুক বাঁকা হাসে! ব্যাস!এতটুকুই জানার ছিলো তার।পাশ থেকে তলোয়ার এর মতো ছুড়িটা নিয়ে শরীর থেকে মাথা আলাদা করে দেয় সে! ছটফট করতে করতে মারা যায় আদনাফ। আশপাশে সবাই ভয়ার্ত চাহনি দিয়ে চেয়ে আছে। কেও কিছু বলছে নাই। তাদের সেই সাহস বা অধিকার নেই! এই লোকটাকে ওপর থেকেই অধিকার দেয়া আছে সে দোষীকে যেমন খুশি তেমন ভাবে মারতে পারবে!
বড় পোস্টে থাকায় কেও তার করা কাজে কোনো প্রশ্ন করতে পারেনা।

তলোয়ার দিয়ে শরীর দুভাগ করার পর সে যখন টিস্যু দিয়ে হাত পরিস্কার করছিলো তখনই কেও হন্তদন্ত হয়ে প্রবেশ করে বললো,,,

— ফাজ স্যার! ম্যাডামকে যেই লোকটা সেদিন ধর্ষণ করতে চেয়েছিলো তাকে ধরে এনেছি!

ফাজ বাঁকা হাসে! আজ আরেকজনকে কঠিন মৃত্যু দিবে। তার স্নিগ্ধপরীর দিকে বাজে হাত বাড়ানোর অপরাধে!

চলবে,

_______________________________

[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন!