স্নিগ্ধ প্রেমের সম্মোহন পর্ব-০৯

0
1240

#স্নিগ্ধ_প্রেমের_সম্মোহন
–[পর্ব-০৯] {অতিরিক্ত অংশ}❤️
লেখিকাঃ #সাদিয়া_মেহরুজ_দোলা

গোধূলি বেলা! ছাদে এসে নিস্তব্ধ দৃষ্টি দিয়ে আকাশ পানে চেয়ে আছি। মনটা আজ বিষাদে ছায়া! কিছু সময় আগে মেঝ চাচি খুশিতে গদগদ হয়ে বললেন অরা আপু দেশে আসছে। অরা আপু অরিনের বড় বোন। মেজ চাচার বড় মেয়ে!

খবরটা শোনামাত্র খুশি হওয়ার সাথে সাথে মনটা অজান্তে বিষাদময় কাটায় ছেয়ে যায়! পূর্ব ভাইয়ার জন্য আমার মনের চিলকোঠে যেই অনুভূতি গুলো জন্মেছিলো তা আস্তে আস্তে দমন হয়ে আসছে। দমন করা প্রয়োজন!

অরা আপু বেশ আগে থেকেই পূর্ব ভাইয়াকে পছন্দ করেন। মাত্রাতিরিক্ত পছন্দ! যেটা আস্তে আস্তে ভালোবাসায় রূপান্তর হয়েছে তার। মায়ের পর আমার মাথা রাখার জায়গা হচ্ছে অরা আপুর কোল। অরিনের থেকেও সবচেয়ে বেশি স্নেহ সে আমায় করেছে! আমি কিভাবে তার ভালোবাসাকে কেড়ে নেই?

কথাগুলো মনে আওড়াতেই চোখের কার্নিশ বেয়ে দুঃখের অশ্রুগুলো ঝরে পড়ার আকুল মিনুতি জানায়! তবে সেই অনুমতিটা গ্রাহ্য করিনা। আমায় দূর্বল হলে চলবে না! কিন্তু পূর্ব ভাইয়া? কয়েক মাস এর ব্যাবহারে আমি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছি তিনি আমায় পছন্দ করেন। তিনি কি আমি বাদে অরা আপুকে মেনে নিবেন?
______________________________

পূর্ব ভাইয়ার রুমের সামনে এসে ঘুরঘুর করছি!
আজ তার কাছে আমায় পড়তে হবে। কড়া আদেশ তার এবং বাবাও একই নির্দেশ দিয়েছেন। দুজনের মধ্যে কারও নির্দেশই ফেলার অধিকার আমার জন্মেনি এখনো!

রুমের ভেতর যাবো কিনা তা নিয়ে দোটানায় পড়ে গিয়েছি। সেদিন ভুলবশত অনুমতি না নিয়ে রুমে গিয়ে মাথাটা ফেটে গেলো!আজ না আবার কি হয়?

ভাবনার মাঝে গম্ভীর কন্ঠস্বর কানে এসে বাড়ি খায়! পূর্ব ভাইয়া বলছেন,,,,

— বাহিরে পায়চারি করে টাইম ওয়েষ্ট না করে রুমে আয় দোল!

ফুস করে ছোট একটা শ্বাস ছেড়ে রুমের ভিতরে পা বাড়াই!
ভিতরে যেতেই লক্ষ হয় পূর্ব ভাইয়ার স্নিগ্ধ মুখশ্রী। তার চুল দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। এক গুচ্ছো চুল কপালের কাছে এসে জরো হয়ে আছে। সাওয়ার নিয়েছেন?
যাক! আজ তিনি ড্রেস পরিহিত!

টাওয়াল দিয়ে তিনি মাথা মুছতে নিবে তখনই আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকান তিনি! ইশারা করে ডেকে বলে তার কাছে যেতে।

আমি কিছুটা অবাক হয়ে বলি,,,

— কেনো?

ভাইয়া দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,,,,

— আসতে বলেছি আয়! ফাষ্ট!

আমি হাতের বইগুলো টি- টেবিলে রেখে তার দিকে এগিয়ে যাই। বুকে যেনো হাতুড়ি পেটাচ্ছ কেও! ধুকধুক আওয়াজ হচ্ছে!

পূর্ব ভাইয়ার কাছে যেতেই তিনি চট করে তার হাতে থাকা শুভ্র রঙের টাওয়াল টা আমার হাতে দেন। অতঃপর তিনি বেডে বসে আমার কোমড় চেপে ধরে তার কাছে টেনে নিয়ে আসেন!
হতভম্ব হয়ে যাই আচানক কান্ডে!

পূর্ব ভাইয়া ফিচেল কন্ঠে বললেন,,,,

— মাথা মুছে দে!

আমি কাঁপাটে ঠোঁট যুগলে প্রশ্ন করি,,,,

—আ্ আমি ক্ কেন? আপ্ নি নিজে মুছুন!

পূর্ব ভাইয়া আমার কথায় আরো শক্ত করে কোমড় চেপে ধরে! শক্ত কন্ঠে বললেন,,,,

— যা বলেছি সেটা কর।

আমি আর কথা বাড়ালাম না!
কারণ এই লোক শোনার মানুষ না। তিনি যা বলেন তাই করিয়ে ছাড়েন। জেদী লোক!

কাঁপা হাতে আলতো করে টাওয়াল মুচড়ে ধরে তার মাথা মুছে দেই! অতঃপর চট জলদি তার দুহাত আমার কোমড় থেকে সরিয়ে দুই ফিট দূরে সরে দাড়াই! নিম্নকন্ঠে বলি,,,

— হয়ে গিয়েছে পূর্ব ভাই!

পূর্ব ভাইয়া টাওয়াল আর নিজের মোবাইল টা হাতে নিয়ে বাঁকা হাসেন! সেই হাসি দেখে চট করে চোখ বন্ধ করে নেই। নাহলে আমার বেহায়া দৃষ্টি সেদিকেই আটকে থাকবে।

— ফিজিক্স ফাষ্ট পেপার বইটা বের কর! আমি একটা কল করে আসছি।
বেলকনিতে যেতে যেতে বললেন তিনি!

আমি মাথ নাড়িয়ে সোফায় গিয়ে বসে পড়ি। বড় করে দুটো শ্বাস টেনে নিজেকে স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা চালাই!

ফিজিক্স বইটা খুলতেই হুট করে আমার নজর নিবদ্ধ হয় সামনে থাকা কাগজ গুলোর প্রতি। যেই কাগজ গুলো ল্যাপটপ এর নিচে স্থান পেয়েছে! তবপ অর্ধ কাগজ বেড়িয়ে আছে সেখান থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে কোনো একজন মেয়ের মুখশ্রী! স্কেচ করা!

পূর্ব ভাইয়ার স্কেচ করা মেয়েটা কে?তা দেখার জন্য ছটফট হয় আমার মন। একবার বেলকনির দিকে তাকিয়ে কাগজ গুলো ল্যাপটপ এর নিচ থেকে বেড় করি।

স্কেচ করা মেয়েটার চেহারা দেখতেই আমার চোখ ছানাবড়া! কারন এটা আমার ছবি। আমার হাস্যজ্বল ছবি। সকালে গাড়িতে বসে হেসেছিলাম একদম সেই মূর্হতটার স্কেচ করা! কারণ আশেপাশে গাড়ির সিট,গাড়ির কাচ, সিটবেল্ট দৃশ্যমান!

স্কেচটা খুব নিখুতভাবে করা! বোঝার কায়দা নেই এটা স্কেচ। যে কেও দেখলে বলবে এটা ছবি তোলা! তবে সাদা কালো আর পেন্সিল এর দাগটার কারণে এটা স্কেচ বোঝা যাচ্ছে!

পূর্ব ভাইয়া আমার স্কেচ করেছেন?
মানে আমার ধারণা সম্পূর্ণ সঠিক! তিনি আমায়….!

আর কিছু ভাবার সময় হলো না। পূর্ব ভাইয়া আসছেন। কাগজ গুলো নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে দেই। মনের নিভৃতে শিহরণ বইছে এক অন্য রকম অনুভূতির!যেই অনুভূতি বাস্তবে রূপান্তর করা খুব কঠিন!

___________________________________

ডাইনিং টেবিলে বসে ভাত নড়াচড়া করছি। গলা দিয়ে খাবার নিচে যাচ্ছে না একদমই। ক্ষনে ক্ষনে কাওকে হারিয়ে ফেলা ভয়টা ঝাপ্টে ধরছে। কিন্তু কেনো?

আমার ঠিক পাশেই বসা পূর্ব ভাইয়া। নিঃশব্দে খাচ্ছেন! তার খাওয়ার স্টাইল টা অন্য রকম! তার পারসোনালিটি এতোটা আলাদা আর পার্ফেক্ট কিভাবে? হাউ?

খাওয়ার মাঝে বড় চাচা হটাৎ বললেন,,,

— পূর্ব তোমার আর কয়দিন ছুটি আছে?

পূর্ব ভাইয়া খাওয়া বন্ধ করে মাথা উঁচু করেন। স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললেন,,,

— ৩ মাসের ছুটিতে এসেছিলাম বাবা! অলরেডি একমাস চলে গিয়েছে।আর ২ মাস আছি!

— অহ! আমার কিছু বলার ছিলো পূর্ব!

— হ্যা বাবা বলো,

বড় চাচা গলা ঝেড়ে সটান হয়ে বসেন। একবার চাচির দিকে তাকিয়ে ইশারা করেন কিছু যা আমার বোধগম্য হয় না! চাচি ইশারা করে হ্যা বলেন!
বড় চাচু বললেন,,,,

— তা বাবা ২৯ এ তো পা দিলে, এবার বিয়েটা করে ফেলো! আমরা মেয়ে দেখেছি যদি তু…

বড় চাচুকে মাঝপথে থামিয়ে দেন পূর্ব ভাইয়া।
সবার আপাতত খাওয়া বন্ধ! উৎসুক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে পূর্ব ভাইয়ার দিকে।

পূর্ব ভাইয়া বললেন,,,

— আমার এখন বিয়ে করার মুড নেই বাবা! সো মেয়ে দেখাদেখি বাদ দাও, এনিওয়ে মেয়ে তোমাদের দেখার দরকার নাই। আমি আমার পছন্দ অনুসারে বিয়ে করবো।

বড় চাচু বিষ্ময় নিয়ে বললেন,,,,

— বিয়ে করতে আবার মুড কিসের পূর্ব? বিয়ে করতেও আবার মুড থাকা লাগে নাকি?

— হু! অফকোর্স লাগে বাবা! নাহলে বিয়ে প্রোপার্লি ইনজয় করা যায় না।জীবনে তো বিয়ে একবারই করছি, এনজয় না করলে পারলে তো লাইফ – ই বৃথা!

কেশে উঠলেন বড় চাচু!
ডাইনিং টেবিলের সবাই হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আছে পূর্ব ভাইয়ার দিকে। তার ব্যাবহার টা ঠিক হজম হচ্ছেনা কারো! এটা কি সেই গম্ভীর পূর্ব ভাই?

বড় চাচি ছলছল দৃষ্টি নিয়ে বললেন,,,,

— বাবা তুই ঠিক আছিস?আজ এতো ফ্রীলি কথা বলছিস?

— এভাবে বলছো কেনো মা? আমি তো আগে এমনই ছিলাম। জাষ্ট মাঝখানে একটা ঝড় এসে আমায় এলোমেলো করে দিলো! উন্মাদ করে দিয়ে নিজে বিন্দাস জীবন কাটাচ্ছে! তাহলে আমার এভাবে দেবদাস হয়ে চলার মানে আছে?আমার আগের রূপটাই শ্রেয়!

সবাই ফ্যালফ্যাল নয়নে চেয়ে আছে!
পূর্ব ভাইয়া আগে এমন ছিলেন না। তবে যেদিন থেকে আবরার ম্যানশনে প্রথম পা দেন! তার কিছুদিন পরই কেমন গম্ভীর আর ইন্ট্রোভার্ট স্বভাবের হয়ে যান! এটা আমি চাচির থেকে শুনেছি।

কারন পূর্ব ভাইয়াকে আমি আগে চিনতাম না। তার সাথে দেখাই হয়েছে আমার তার যখন ২১ বছর ছিলো! দিনটা এখনো আমার মনে গেঁথে আছে।
পূর্ব ভাইয়ার সাথে প্রথম দেখার মূর্হতটা ভোলা যাবেনা সহজে! ভুলতে দিবেনা অসহনীয় অতীত কাল আমায়….!

পূর্ব ভাইয়া হটাৎ পূরব ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললেন,,,

— আম্মু তুমি পূরব এর পাশে কেন দাড়িয়ে আছো?আমি কি তোমার ছেলে না?আমার পাশে দাঁড়ালে নিউটনের সূত্র কি ভুল প্রমানিত হয়ে যাবে?

পূর্ব ভাইয়ার কথায় বড় চাচি কাঁদা অবস্থায় হেসে দেন। পূর্ব ভাইয়ার পাশে দাড়িয়ে মাথা আলতো করে একটা থাপ্পড় মেরে বললেন,,,

— যাহ ফাজিল! এসব কি কথা?

পূরব ভাইয়া ছলছল দৃষ্টি নিয়ে বললেন,,,,

— তোমার ছেলে তো ফাজিলই মা!

পূরব ভাইয়া পূর্ব ভাইয়ার পাশে দাড়িয়ে মুখে ভাত পুরে দেন।

আমি এসব না দেখে পা ডুবাই অতীতে! সেই মধুর সৃতিমাখা অতীত যেই অতীতে আমার পূর্ব ভাইয়ার সাথে প্রথম দেখা হয়েছিলো…….

চলবে!

[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা মার্জনীয়! ]