স্বপ্নছায়া ২ পর্ব-১৪+১৫

0
278

#স্বপ্নছায়া (কপি করা নিষিদ্ধ)
#দ্বিতীয়_খন্ড
#১৪তম_পর্ব

বসার ঘরের সোফায় বসে রয়েছে জ্যানেট। বেশ আয়েশ করে সে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে বেশ উপভোগ করছে সে চা। ঐন্দ্রিলা তীর্যক দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে তার দিকে। জ্যানেটের ভাষ্যমতে সে আইসক্রিমের লোভে ওই আইসক্রিম গাড়ির পিছু নেয়। একটা সময় সে অন্য গলিতে চলে যায় সেই গাড়ির পিছু পিছু। একটা সময় পিছনে ঐন্দ্রিলাকে না দেখতে পেরে ঘাবড়ে যায় সে। শিশু মন বুঝতে পারে সে পথ হারিয়েছে। ছেলেবেলা থেকে xenophobia দিশানকে তাড়া করে বেড়ায়। ফলে মা ব্যতীত অপরিচিত স্থান তাকে হিংস্র জানোয়ারের ন্যায় গিলতে থাকে। মাম্মামের কাছে যাবার ইচ্ছে তাকে আরোও দিশেহারা করে তোলে। আশেপাশের সরু চাহনী গুলো দিশানকে আরোও দূর্বল করে তুলছিলো। একটা সময় ভীত দিশান রাস্তার এক কোনে গিয়ে লুকিয়ে থাকে। তার মনে ছেলেধরাজনিত বিশ্রী ভয় উঁকি দিতে থাকে। ফলে ভয়ে কান্না করতে থাকে সে। ঠিক সেই সময় জ্যানেটের সাথে তার দেখা হয়। ভীত সন্তস্ত্র দিশানের অবস্থা সূচনীয় দেখে জ্যানেট তাকে তার সাথে তার বাড়ি নিয়ে যায়। বহু সময় পর যখন দিশান স্বাভাবিক হয় তখন তাকে এবাড়িতে নিয়ে আসে জ্যানেট।

জ্যানেটের কথায় বিন্দুমাত্র বিশ্বাস হয় নি ঐন্দ্রিলার। তার ধারণা সবটা বানোয়াট। কিন্তু দিশানের ভাষ্যের সাথে কোনো অমিল লক্ষ্য হয় নি। অনেক চেষ্টার পর অভ্রের সাথে যোগাযোগ সম্ভব হয়। দিশানের বাড়ি ফেরার কথাটা শুনতেই সে বাড়ি ফেরার জন্য রওনা হয়। হয়তো কিছু মূহুর্তের সে পৌছে যাবে। জ্যানেটের চা খাওয়া শেষ হলে সে ভাঙ্গা বাংলায় বলে উঠে,
— “আজ তাহলে উঠি মিসেস চৌধুরী। দিশানের খেয়াল রাখিবেন। ভয় পেয়েছে সে”
— “ধন্যবাদ, মিস মার্টিন”
— “নো নো, প্লিজ। থ্যাংকু দিয়ে ছোট করিবেন না। ইট ওয়াজ মাই ডিউটি। আফটার অল হি ইজ ভ্যারি ইম্পোর্টেন্ট পারসন ফর মি। এন্ড আই নো আপনার ও একটা বাচ্চা আছে, তাই দিশানের টেক কেয়ার করাটা কতটা ডিফিকাল্ট ফর ইউ”

বিদ্রুপের স্বরে কথাটা বলে। ঐন্দ্রিলার মুখভঙ্গি বদলালো না। বেশ শান্ত চাহনীতে চেয়ে রইলো সে। জ্যানেটের চোখে প্রতীক্ষার ক্ষীণ রেখা দেখতে পেলো সে। প্রতীক্ষা ঐন্দ্রিলার প্রতিত্তরে। জ্যানেট ভেবেছিলো ঐন্দ্রিলা সংবরণ হারাবে। ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠবে। কিন্তু তেমন কোন প্রতিক্রিয়া লক্ষনীয় হলো না ঐন্দ্রিলার মাঝে। বরং বেশ ঠান্ডা কন্ঠেই বললো,
— “অদ্ভুত ব্যাপার কি জানেন জ্যানেট, বিগত পাঁচ বছরে আমার কখনোই দিশানের খেয়াল রাখতে কোনো অসুবিধা হয় নি। ঝামেলা গুলো বিগত কয়েক দিনে হচ্ছে। তাও আবার আপনার আগমনের পর থেকে। অদ্ভুত না? একটা ফোন আসা, দিশানের আইসক্রিম গাড়ির পিছু নেওয়া, তারপর পথ হারানো, আপনার সেখানে পৌছানো। অদ্ভুত তাই না?”
— “আর ইউ চার্জিং মি?”
— “না, একেবারেই না মিস মার্টিং। আমি শুধু কাকতালীয় ঘটনাগুলো মিলাচ্ছি”

এর মাঝেই অভ্রের আগমন ঘটে। অভ্র, আহাশ তড়িঘড়ি করে বাড়িতে প্রবেশ করে। বেশ এলোমেলো লাগছে অভ্রকে। সে এসেই দিশানকে জড়িয়ে ধরে। এতো সময় কাঠিন্যতা দেখালেও ছেলেকে নিজের সামনে দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে উঠে সে। হৃদয়ের প্রকোষ্ঠে দলা বাধা চিন্তা, ভয়ে, বিষাদের বন্যা বাধ ভাঙ্গে। চোখজোড়া অশ্রু মুক্তি দেয় নির্বিত্তচিত্তে। সেকারণে জ্যানেটের উপস্থিতিও তাকে বিচলিত করে না। বাবা ছেলের মিলনের পর অভ্র নিজেকে নিপুন ভাবে সামলে নিলো। মাহফুজার উদ্দেশ্যে বললো,
— “দিশানকে ওর ঘরে নিয়ে যাও”

দিশানের যাবার পর বেশ শান্ত চিত্তে জ্যানেটকে বললো,
— “ধন্যবাদ মিস জ্যানেট, আপনার কাছে আজ আমি ঋণী হয়ে গেলাম। ধন্যবাদ”
— “ওয়েলকাম, বাট শুকনো কথায় চিড়ে ভিজে না মিস্টার চৌধুরী। আপনার ওয়াইফের মতে এসব আমার সাজানো ঘটনা। আমি শুধু আপনাদের এটুকুই বলবো, যদি ঠিক ভাবে বেবির টেক কেয়ার না করতে পারেন তবে তাকে জোর করে নিজের কাছে রাখবেন না। বিকজ হি ডিজার্ভস বেটার। আমি চলি। টেক কেয়ার”

অভ্র কোনো কথা বললো না, শুধু কপালটা হালকা চুলকালো। ভেতরে ভেতরে সব কিছু লন্ডভন্ড করতে ইচ্ছে করছে তার। জ্যানেটের কটাক্ষ উক্তির উপযুক্ত উত্তর দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু প্রকাশ্যে একেবারে শান্ত সে। বরং জোর পূর্বক হাসি ঠোঁটে একে বলে,
— “চিন্তা করবেন না, দিশানের খেয়ালের কোনো কমতি থাকবে না”
— “সি ইউ এট কোর্ট”

বলেই জ্যানেট বেড়িয়ে যায়। অভ্র ক্লান্ত কন্ঠে নীলাদ্রি এবং বদরুল সাহেবকে বলে,
— “অনেক ধন্যবাদ আপনাদের, অহেতুক আপনাদের বিরক্ত করেছি”
— “আত্নীয়দের দায়িত্ব বিপদে সাথে থাকা। আর ঐন্দ্রিলার এই সময়ে ওর সাথে না থাকার প্রশ্ন ই উঠে না। তাই এটা আমাদের কথা চিন্তা করো না। আর বাসায় পিউ ও আছে। আমার মনে হয় আমাদের এখন বেড়িয়ে পড়া আসে উচিত। পরে এক সময় খাবো। তোমরা বিশ্রাম নাও”

নীলাদ্রির কথায় বদরুল সাহেব ও সম্মতি জানায়। অভ্র তখন তখন আহাশকে বলে,
— “তুই উনাদের বাড়ি দিয়ে আয়। এই রাতে গাড়ি ঘোড়া পেতে দেরি হবে”

কথাটা বলেই নিজ ঘরের দিকে পা বাড়ায় অভ্র। অভ্রের শান্ত ব্যাবহার ভেতরে ভেতরে হাজারো প্রশ্নের জন্ম দেয় ঐন্দ্রিলার মনে। সকলের আড়ালে সেও যায় অভ্রের পিছু পিছু।

রুমের ভেতর যেতেই দেখলো ঘরের সকল বাতি নিভিয়ে রাখা হয়েছে। শুধু রোডের সোড়িয়ামের আলোর এক তীক্ষ্ণ রেখা দেখা যাচ্ছে বারান্দায়। হালকা হলুদ আলোয় আলোছায়ার মিশ্রণ সৃষ্টি হয়েছে সেখানে। আলোছায়ার মিশ্রণে অভ্রের অবয়ব দেখতে পেলো ঐন্দ্রিলা। এগিয়ে গেলো সে বারান্দায়। অভ্র তখন আঙ্গুলের ফাঁকের নিকোটিনের দলায় সুখটান দিতে ব্যাস্ত। তার দৃষ্টি অন্তরীক্ষে স্থির। ঐন্দ্রিলা কাঁধে হাত রাখলো৷ কিন্তু অভ্রের ভাবমূর্তির বদল হলো না। সে তার মতোই সিগারেটে সুখটান দিতে ব্যাস্ত। অভ্রের নির্বিকার আচারণ ঐন্দ্রিলাকে খানিকটা অস্বস্তির সম্মুখীন করলো। তবুও ঈষৎ সাহস নিয়ে অভ্রের সাথে কথা বলার জন্য তৎপর হলো। কিন্তু অভ্র তার কথা শুরু হবার পুর্বেই সিগারেটটা নিভিয়ে ঘরের জন্য পা বাড়ালো। ঐন্দ্রিলা অভ্রের শীতল আচারণে অভিহত হলো। অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলো,
— “অভ্র?”
— “আমরা এ নিয়ে পড়ে কথা বলবো ঐন্দ্রি, আমি ক্লান্ত”

বলেই অভ্র ঘরের দিকে প্রস্থান করে। ঐন্দ্রিলা সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। অভ্রের এরুপ রুঢ় আচারণ তাকে ভেতর থেকে চুরমার করে দেয়। তোলপাড় করে নোনা জল এসে জড়ো হয় ঐন্দ্রিলার নয়নের। এক অদৃশ্য দেয়াল তৈরি হয়েছে তার এবং অভ্রের মাঝে। এই দেয়াল শুধু তাদের মাঝে দূরত্ব ই আনে নি, তাদের ভরসার প্রাচীর নাড়িয়ে দিয়েছে। অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে তাকে ঐন্দ্রিলা অভ্রের যাবার পানে। এতো বছরের সম্পর্কের ভিত্তি কি তবে নড়ে গেলো_________

দিশাদের বাড়ির সামনে থামলো গাড়ি। নীলাদ্রি এবং বদরুল সাহেব ভেতরে চলে গেলেন। দিশা যেতে নিলেই পিছু ডাকলো আহাশ। দিশা থেমে গেলো। তার হৃদয় ধক করে উঠলো। আহাশ ডেকে উঠবে আশা করে নি। দিশা পিছনে ফিরলে ধীর পায়ে এগিয়ে আসে আহাশ। একখানা বক্স এগিয়ে বলে,
— “হ্যাপি বার্থ ডে….

চলবে

#স্বপ্নছায়া (কপি করা নিষিদ্ধ)
#দ্বিতীয়_খন্ড
#১৫তম_পর্ব

বিমূঢ দৃষ্টিতে আহাশের দিকে তাকিয়ে আছে দিশা। লোকটি এখনো নিবৃত্তচিত্তে বক্সটি তার দিকে এগিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এক অন্যরকম চাহনী, কেমন ঘোরলাগা, আবেগঘন। যেনো একরাশ ভালোবাসার আকুলতা নিয়ে লোকটি দাঁড়িয়ে আছে। ঠোঁটে সেই পাগল করা হাসি, স্নিগ্ধ, মায়াবী। দিশা চোখ নামিয়ে নিলো। খানিকটা জড়তা নিয়ে বললো,
— “আপনি কি করে জানলেন আজ আমার জন্মদিন?”
— “অন্তরীক্ষের অজানা ঘটনাগুলো মানুষ জেনে যাচ্ছে এটা তো শুধু নিছক জন্মদিন। আর যাকে ভালোবাসি বলে দাবি করছি তার জন্মদিন জানবো না, এতোটা নিকাম্মা প্রেমিক আমি নই”
— “এক পাক্ষিক ভালোবাসা কষ্ট ব্যাতীত কিছুই দেয় না স্যার”

কড়া কন্ঠে দিশা কথাটা বলে উঠলো। ফলে আহাশের ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা হাসিটা যেনো কোথাও উধাও হয়ে গেলো। চোয়াল জোড়া শক্ত হয়ে গেলো। কিয়ৎকাল সে চুপ করে রইলো। শুধু প্রখর নজরে তাকিয়ে রইলো দিশার দিকে। তারপর রুদ্ধশ্বাস ফেলে বললো,
— “আমাকে বারবার ফিরিয়ে দেবার কারণ কি দিশা? শুধুমাত্র ঐন্দ্রিলার সাথে পাঁচ বছর পূর্বে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিলো আর আমি তাকে ভালোবাসি না বলে কাপুরুষের ন্যায় পালিয়ে গিয়ছিলাম সেটাই কারণ? কারণ এ ব্যাতীত আমি তো কোনো কারণ খুজে পাচ্ছি না”
— “যদি বলি এটাই কারণ। এটা যথেষ্ট নয় স্যার।
এবার নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলো না আহাশ। ক্ষীপ্র কন্ঠে বলে উঠলো,
— “আমি ভুল করেছি, অন্যায় করেছিলাম ঐন্দ্রিলার সাথে। মানছি, যা আরোপ দিবে আমি মাথা পেতে নিবো। কিন্তু সেই ঘটনার পাঁচ বছর হয়ে গিয়েছে দিশা। ঐন্দ্রিলা ভাইয়ের সাথে সুখে আছে। তাদের একটা পরিবার আছে। তাহলে আমি কেনো এই অন্যায়ের শাস্তি এখনো পাবো? যা হয়েছে তার কি ক্ষমা নেই?”
— “হয়তো আছে। কিন্তু সেই ক্ষমার জন্য পুনরায় ঝড়ের সূত্রপাত করতে আমি পারবো না। কেনো বুঝতে চাইছেন না। আপনাকে আমার পরিবার কখনো মেনে নিবে না। যে সম্পর্কের কোনো ভবিষ্যৎ নেই তার স্বপ্নছায়ার পেছনে ছোটা বোকামি। এ পূর্ণতা পাবার নয়।”
— “তুমি ও কি আমাকে মানতে পারছো না?”

আকুল ব্যথিত কন্ঠে আহাশ কথাটা বলে উঠে। দিশা অনুভব করলো সে আহাশের চোখে চোখ রাখতে পারছে না সে। এক অজানা যন্ত্রণা হৃদয়ের প্রকোষ্ঠে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে। কথাগুলো দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। খুব কষ্টে বললো,
— “পরিবারের সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত; উপরন্তু আমার হৃদয়ে আপনার জন্য বিন্দুমাত্র অনুভূতি নেই”

মূহুর্তেই হাতে থাকা র্যা পিং পেপারে মোড়ানো বক্সটা ছুড়ে ফেললো আহাশ। আহাশের এরুপ কাজে খানিকটা হতচকিত হয়ে গেলো দিশা, অবাক নয়নে তাকাতেই আহাশ বললো,
— “যার জন্য চুরি করেছিলাম সেই বলে চোর”

আহাশের কথার মর্মার্থ বুঝলো না দিশা। কিছু বলার পূর্বেই আহাশ গাড়িতে উঠে বসলো। তার গাড়ি হাকিয়ে পিচের রাস্তা চিরে প্রস্থান করলো সে। দিশা এখনো সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। অবহেলায় ছুড়ে দেওয়া বক্সটির দিকে কিছুসময় তাকিয়ে সেটা তুলে নিলো সে। আঘাতের কারণে ভসকে গেছে বক্সটা। হয়তো ভেতরের জিনিসটাও ভেঙ্গে গেছে। বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো দিশার। সে পা বাড়ালো বাড়ির দিকে।

বাড়িতে ঢুকতেই নীলাদ্রির প্রশ্নের সম্মুখীন হলো দিশা,
— “এতোসময় বাইরে কি করছিলি?”

অতর্কিত হামলায় বেশ এলোমেলো হয়ে যায় দিশা। আমতা আমতা করে বললো,
— “কি… কিছু না”
— “কিছু না মানে আমি দেখলাম আহাশের সাথে তুই কথা বলছিলি”

নীলাদ্রির জেরায় গলা শুকিয়ে আসে দিশার। মস্তিষ্কের নিউরনগুলোও যেনো জং ধরে গেছে। কোনো অজুহাত মাথাইয় আসছে না। ঠিক সে সময় পিউ এর শুকনো কন্ঠ শোনা গেলো,
— “নীল, একটু শোনো না”

পিউ এর কন্ঠ কানে আসতেই নীলাদ্রি প্রশ্ন বাদ দিয়ে পিউ এর কাছে চলে গেলো। দিশা যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। ফোস করে শ্বাস ফেলে বললো,
— “শুধু শুধু বলি মায়া করিস নে, বলি হলে বুঝবি কত ধানে কত চাল”

৮.
থার্টি ফার্স্ট নাইটের রাত। ছাঁদের এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে ঐন্দ্রিলা। হাতে এক কাপ গরম কফি। আজ বেশ শীত পড়েছে। সোয়েটার ও কাবু করতে পারছে না। ঐন্দ্রিলা শালটি বারো করে পেঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিকষকৃষ্ণ আকাশ পানে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগছে তার। আশেপাশের ছাঁদে নিউ ইয়ার ইভ পালন করা হচ্ছে। বারবিউ এর গন্ধ আসছে। আর কিছু ক্ষণের ব্যবধানে নতুন বছরের আগমণ ঘটবে। পুরোনো বছরটি হারিয়ে যাবে কালগহ্ববরে। ও বাড়িতে থাকলে হয়তো করা হতো। অভ্রের এই অহেতুক চেচামেচি ভালো লাগে না। তার কথা আনন্দ পালন করতে হুল্লোরের প্রয়োজনীয়তা নেই। বছর ই তো, পালনের কি আছে? বাজি ফুটালে যদি দূর্ঘটনা ঘটে কি করবে? অভ্রের কথা মনে আসতেই মন খারাপ হয়ে যায় ঐন্দ্রিলার। বিগত সাত আটদিন অভ্রের সাথে ঠিক মতো কথা হয় নি তার। সকালে অভ্র বেড়িয়ে পড়ে, রাত করে ফিরে। ঐন্দ্রিলা কথা বলতে চাইলেও অভ্র এড়িয়ে যায়। কখনো ব্যস্ততার বাহানা তো কখনো ক্লান্তির বাহানা। অভ্রের এরুপ বিরুপ আচারণ ঐন্দ্রিলাকে আহত করছে বারংবার। উপরন্তু দিশানের সকল কাজ অভ্র স্বতন্ত্র ভাবেই করছে। ঐন্দ্রিলা চাইলেও তাকে বিরত রাখছে অভ্র। এক অদৃশ্য দেয়াল তৈরি হয়েছে নিজেদের মাঝে, যা চাইলেও ভেদ করতে পারছে না সে। এখন মনোজোড় ও কোথাও উবে গেছে। ক্ষুদ্ধ হৃদয় এখন আর প্রচেষ্টা করতে চায় না। চলুক যেমনটা চলছে। তখন সজোড়ে আওয়াজ হয়। নিকষ্কৃষ্ণ অন্তরীক্ষ জ্বলজ্বল করে জ্বলে উঠে মূহুর্তের মাঝে। হাজারো রঙ্গ বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে চারিদিকে। মোবাইলের স্ক্রিনে তখন ০০ঃ০০ বেজেছে। নতুন বছর চলে এসেছে। দীর্ঘশ্বাস ফেললো ঐন্দ্রিলা। ঘরের দিকে পা বাড়াতেই থমকে যায় সে। অভ্র দাঁড়িয়ে আছে ঠিক পেছনে। ধীর গলায় সে প্রশ্ন করে,
— “ঘুমাবে না?”
— “আসছিলাম আমি, আপনি ঘুমান নি?”
— “ঘুম আসছিলো না”

ঐন্দ্রিলা কোনো কথা বললো না। কফির মগটি নিয়ে অভ্র এর পাশ কাটিয়ে চলে গেলো সে। অভ্র তাকে আটকালো না। তবে তার অশ্রুসিক্ত চোখটা নজর এড়ালো না তার। বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বের হলো অভ্রের। অন্তরীক্ষে উদাস নয়নে তাকিয়ে বললো,
— “সরি, ঐন্দ্রিলা”

অভ্র প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। মিনিট বিশেক বাদে সেও পা বাড়ালো ঘরের দিকে। ঠিক সেই সময়ে ফোনটি বেজে উঠলো অভ্রের। অভ্র ফোন রিসিভ করতেই মুখভঙ্গি বদলে গেলো। কড়া স্বরে বললো,
— “এ বড় ঘটনা ঘটে গেলো আর তুমি আমাকে এখন জানাচ্ছো? আমি আসছি…………

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি