স্বামী পর্ব-০৩

0
157

#স্বামী
পর্ব : ০৩
#মেঘা_মেহেরাব

-আল্লাহ গো তুমি সব দেখতাছো , আমার এই বিপদের সময়ে তুমি আমারে আর বিপদ দিও না গো আল্লাহ..

জলিল মিয়া ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে। তার অনেক দিনের শখ এবার পূর্ণ করা যেতে পারে ভেবে মনে মনে এক তৃপ্তিকর হাসি দিল।

রাত নয়টার সময় জলিল মিয়া আসে নুরাইসা দের বাড়ির ভেতরে। সবে মাত্র খাবার খেয়ে শেষ করলো তারা, নুরাইসাকে জোর করিয়ে কয়েক লোকমা খায়িয়েছে বেগম। সন্ধ্যায় রাসেল হাওলাদার একবার এসে খবর নিয়ে গেছে তাদের, তবে যাবার সময় বলে গিয়েছিল সে রাতে আরেকবার আসবে নুরাইসা ঠিকমতন খাওয়া-দাওয়া করছে কিনা সেটা দেখতে। নুরাইসা ইতিমধ্য রাসেল হাওলাদার কে দেখে ভয়ে সিঁটিয়ে যেতে শুরু করে। রাসেল হাওলাদার যদি এসে জানতে পারে যে নুরাইসা খাবার খায় নি তাহলে সে নিজে তার খাওয়ার ব্যবস্থা করবে বলে শাসিয়ে গেছে যাওয়ার সময়। সেই ভয়ে নুরাইসা মায়ের হাতে কয়েক লোকমা ভাত খেয়ে পাশেই একটা খেজুরের পাতায় বোনা পাটি বিছিয়ে হাতের উপর মাথা রেখে ছোট বাতির দিকে তাকিয়ে আছে। বেগম খাবারের বাসনগুলো নিয়ে রান্না ঘরে রেখে আসতেই উঠানে চোখ পড়ে জলিল মিয়ার দিকে । জলিল মিয়া হালকা হেসে এগিয়ে আসে। নুরাইসার বাবা জলিল মিয়া কে দেখে কাঁধে রাখা গামছায় হাত মুছে একটা ছোট কাঠের তৈরি ফিড়ে এগিয়ে দেয় জলিল মিয়াকে বসতে।

– আসেন ভাই সাহেব বসেন।

– ছি ছি, ভাই সাহেব ডাইকা লজ্জা দিয়েন না।(কিছুটা লজ্জা পেতে পেতে বলল)

বেগম জলিল মিয়ার এমন কথাই নিজের দুই ভ্রু ভাজ করে নিল ‌। রান্নাঘর থেকে দ্রুত এসে নুরাইসা কে ঘরের ভিতরে যেতে বলল।নুরাইসা কোন বাক্য ব্যয় না করে সোজা উঠে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো। জলিল মিয়া এখানে এসে বসায় বা তার কথায় নুরাইসার কোন হেলদোল হলো না।নুরাইসার যাওয়ার পানে জলিল মিয়া তাকিয়ে দেখতে থাকলো। নুরাইসা চোখের আড়াল হতেই জলিল মিয়ার মুখে ভঙ্গিমা পুরো পাল্টে গেল । এই ষোল বছরের সদ্য যৌবনে পা রাখা নুরাইসাকে যখন আঁকাবাঁকা পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতে দেখে তখন জলিল মিয়ার মনে হয় নুরাইসার ঐ চরণ টা মাটিতে নয় তার বুকে রাখুক যাতে নুরাইসার শরীরের সমস্ত ভর সে নিতে পারে। যখন দুপুরের কড়া রোদে স্কুলের পথ থেকে আসার সময় নুরাইসার মুখ ঘেমে একাকার হয় জলিল মিয়ার মনে হয় পাকা আমের মতন নুরাইসার মুখটা টসটস করছে , তখনই টুপ করে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে জলিল মিয়ার। নুরাইসা যখন পুকুর পাড় থেকে ভেজা শরীরে হেঁটে আসে জলিল মিয়া ওই ভেজা কাপড়ের মাঝেও নুরাইসার শরীরের ভাজের হিসেব করতে বসে পরে তখনই জলিল মিয়ার পুরুষত্ত্ব জেগে ওঠে। ঘরে দুই টা বৌ থাকা সত্ত্বেও যেন নুরাইসার তৃষ্ণা সেই দুই বৌ কোন ভাবেই মিটাতে পারেনা। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট টা ভিজিয়ে নেয় জলিল মিয়া। এটা দেখে বেগম বলে উঠলো

– এই সময় আপনি এখানে? কোন কাম ছিল ভাই সাহেব?

জিবভা কাটে জলিল মিয়া। লজ্জায় যেন ঘ্যাড় টা শরিরের ভেতর ঢুকিয়ে নিতে চাই। তার পর ঠোঁট টিপে কিছু টা লজ্জা লাগার ভঙ্গিমা নিয়ে বলল

-এভাবে বারবার ভাইসাহেব বলে আমাকে লজ্জা দিবেন না। আমিতো আপনাদের ছেলের মতন।

– কি বলতে চান আপনি? ( কিছুটা কড়া গলায় বলল বেগম)

-আপনার মতলব তো ঠিক ভালো ঠেকছে না..(নুরাইসার বাবা বলল)

থতমত খেয়ে যায় জলিল মিয়া। তবুও যে কথা সে বলতে এসেছে সেই কথা যেভাবেই হোক আজ ই বলতে হবে এবং কালকের ভিতরে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করতে হবে নয়তো মাতব্বর সাহেব এই মেয়ে টার জীবন ছারখার করে দিবে। যেভাবেই হোক এমন সর্বনাশ হওয়া থেকে নুরাইসাকে সে বাঁচাবে।

– ইয়ে মানে, আপনারা এইভাবে বলছেন কেন ?আমি তো আপনাদের ভালোর জন্যই এই বিপদের সময় এগিয়ে আসতে চাইছি।

– মানে কি কইতে চান আপনে?( নুরাইসার বাবা বলল )

জলিল মিয়া খুব দ্রুত নুরাইসার বাবার দুই হাত নিজের হাতের মুষ্টি বদ্ধে নিয়ে বলল_

– আমি নুরাইসা কে বিয়ে করতে চাই। ওকে আমি অনেক সুখে রাখবো আপনাদের কাছে যত টা না ভালো আছে তার থেকে অনেক সুখে রাখবো। হাট থেইকা আলতা, সুনো, পাউডার, নিপিষ্টিক, তেল, সাবান, শ্যাম্পু সব সব কিনা দিবো।রহিমা( ১ম বৌ) ছালে ( ২য় বৌ) ওগোর থাইকা সব থেকে বেশি দিবো নুরাইসাকে। দরকার হলে ওকে আমি স্কুলে ভর্তি করাবো..

– কি কইতেছেন আপনি এইসব ..( রেগে গিয়ে নুরাইসার মা বেগম বললো)

– আপনে আর অমত কইরেন না আম্মা। আমি নুরাইসাকে বহুত ভালোবাসি। বিশ্বাস করেন ।নুরাইসা কে পাওয়ার জন্যে আমি সব করতে রাজি,আ..

এমন সময় রাসেল হাওলাদার এর আগমন ঘটে। জলিল মিয়ার এমন আকুতি রাসেলের চোখের আড়াল হয়নি। রাগে ক্রোধে শরীর ফেটে যাচ্ছে রাসেল হাওলাদার এর । প্রায় পঁয়তাল্লিশের কাছাকাছি তার বয়স নুরাইসার থেকে তিন বছরের বড় একটা মেয়ে আছে তার। দুই বৌ এর মোট তিন সন্তান। দুই ছেলে এক মেয়ে। যেই হালে তাদের দিন চলে, শুধু মাত্র বাচ্চা তিন টার মুখের দিকে তাকিয়ে মাতব্বর সাহেব তাকে নিজের বাগানের দেখা শোনা করতে দিয়েছে। জলিল মিয়া মাঝে মাঝে তো গাছের ফল পেরে আলাদা চুরি করে বিক্রি করে। অজানা নয় রাসেলের তবু ও কিছু বলে না। জুয়া থেকে শুরু করে দাবা বলো আর লুডু খেললেও বাজি তে খেলে হেরে যায় তবু ও আহুশ মেটে না। এখন আবার নিজের মেয়ের থেকে ও ছোট একটা মেয়ে কে বিয়ে করতে চাইছে।

রাসেল হাওলাদার কে এ এভাবে রাগে ফুঁসতে দেখে জলিল মিয়া দ্রুত জায়গা ত্যাগ করেন। তবে যাওয়ার আগে বলে যায় বিষয় টা একবার ভেবে দেখবেন। জলিল মিয়া চলে যাওয়ার সাথে সাথে নুরাইসার বাবা যেটা তে বসতে দিয়েছিল সেই কাঠের তৈরি ফিড়ে টা ছুড়ে মারে জলিল মিয়ার যাওয়ার দিকে রাসেল। রাসেল হাওলাদার সেখান থেকে সোজা আসে তার বাবার কাছে। জলিল মিয়ার এমন প্রস্তাব করার বিষয়ে খুলে বলে রাসেল। নুরাইসার উপর এমনিতেই তীব্র রাগ মাতব্বর সাহেবের তার উপর ছেলে তারই ওকালতি করতে এসেছে তার ই কাছে ছেলে কে ” আমি দেখছি বিষয়টা” বলে বিদায় করে মাতব্বর সাহেব।

রাত দুইটার পর নুরাইসাদের বাড়িতে দাও দাও করে আ’গুন জ্বলতে দেখা যায়। আগুন আর কেউ নয় সয়ন মাতব্বর সাহেবের পরিকল্পনা তেই দেওয়া হয়েছে। নুরাইসার বাবা আগুন নেভানোর জন্য কল চেপে পানি আনেন আর তা আ’গুনের দিকে ছুড়ে মারেন। বেগমের মেয়ে কে বাঁচাতে গিয়ে নিজের শরীরের অনেক জায়গাই আগুনে পুড়ে ঝলসে যায় তবু ও থেমে থাকে না। আশেপাশের লোকজন যে যার মত বালতি হাড়ি পাতিল নিয়ে ছুটে আসে আগুন নেভাতে। একে একে সবাই আগুন নেভাতে সাহায্য করে।নুরাইসার ঘরের বেড়া কেটে জলিল মিয়া তাকে আগুন লাগানোর আগেই বের করে আনে পাশের একটা গেরোস্ত বাড়ির খালি পরে থাকা ধানের গোলার ভেতরে। তবে নুরাইসার মুখ বেধে রাখাই সে টু শব্দ করতে পারেনি।

রাসেল হাওলাদার এর কানে নুরাইসা দের বাড়ি তে আগুন লাগার খবর টা পৌঁছানোর সাথে সাথে দ্রুত্ মোটরসাইকেল নিয়ে সেখানে হাজির হয় । মোটরসাইকেল ফেলে সেও লেগে পরে আগুন নোভানো কাজে। নুরাইসার বাবা এতক্ষণ পর খেয়াল করল তার মেয়ে এবং তার স্ত্রীর কোন উদিস নেই। তিনি চিৎকার করে মেয়ে আর বৌকে ডাকতে শুরু করে ‌ কিন্তু কোথাও তাদের অস্তিত্ব খুঁজে পায়না।

জলিল মিয়া নুরাইসার পায়ের বাঁধন খুলে দিতেই নুরাইসা ছিটকে সরে যায় কয়েক হাত দূরে কিন্তু খুব একটা দূরে যেতে পারে না কারন পায়ের বাধন খোলা থাকলেও হাত পিছন থেকে বাধা আর মুখের গায়ের ওড়না দিয়ে মুখ বাঁধা যাতে চিৎকার না করতে পারে। পানের ছিপ ফেলে দিয়ে জলিল মিয়া বলল

– তোর ম’রনের সব ব্যবস্থা মাতব্বর সাহেব করে ফেলেছে। তোর বাড়িত আগুন লাগানোর একটাই উদ্দেশ্য তোদের চিহ্ন গ্ৰাম থেকে মুছে ফেলা। কারণ তোর প্রতি একটু বেশি আকুবাকু করতাছে ঐ মাতব্বরের ছোট বেডা। তুই এমনিতেও মরবি ওমনিতেও মরবি। মরার আগে আমার খয়েশ টা মিটাইতে দে। তোর এই শরীরের প্রতি আমার খুব লোভ রে।

নুরাইসার মুখ বাঁধা থাকলেও চোখ দেখে বুঝা যাচ্ছিল সে কতটা ভয় পাচ্ছে।এই প্রথম এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলো সে । কান্না করছে তবুও শব্দ করতে পারছে না। মাথা দিয়ে বার বার বোঝাচ্ছে তার দিকে না আসতে কিন্তু জলিল মিয়া এক পৈশাচিক আনন্দে একটু একটু এগিয়ে যায় নুরাইসার দিকে।

রাসেল হাওলাদার উঠানের এক কোনায় গোবরের লাকড়িতে পেচানো ছালার বস্তা দেখে তা এক টানে নিয়ে নিজেকে ঢেকে নুরাইসার ঘরের ভেতরে যায় যেয়ে দেখে নুরাইসার মা বেগম নিচে পরে আছে তার পরনের শাড়ি পুড়ে তার শরীরের সাথে লেপ্টে যাচ্ছে। চারিদিকে সব কিছু পুড়ে যাচ্ছে কারণ নুরাইসার ঘরের পেছন পাশটায় খড়ির ঘর ছিল, যেখানে খড়ির কোন অভাব নেই। রাসেল নিজের শরীর থেকে ছালার বস্তা সরিয়ে বেগমের গায়ে পেঁচিয়ে তাকে বের করার চেষ্টা করে । যদিও রাসেলের বুঝতে বাকি নেই তিনি আর বেঁচে নেই। বস্তা টা ও পুড়তে শুরু হয় রাসেল দুই হাতে নিজেকে রক্ষা করে বাইরে বেরিয়ে আসে বেগম কে না নিয়ে। আরো বস্তা প্রয়োজন। চিৎকার করে রাসেল হাওলাদার ছালার বস্তা চাই। যে যার মত যেমন বস্তা পেয়েছে নিয়ে এসেছে।

নুরাইসার হাতের বাঁধন খুলে দেয় জলিল মিয়া। তার পর থেকে নুরাইসা নিজেকে বাঁচাতে কত শত বার খামচে আচড় কেটেছে জলিল মিয়ার চোখে মুখে তবুও নিজেকে রক্ষা করতে পারছে না নুরাইসা। মুখ থেকে ওড়না সরিয়ে চিৎকার করতে গেলে ই জলিল মিয়া মুখ চেপে ধরে রাখছে। যতটুকু আওয়াজ বাইরে যাচ্ছে তাতেও কাজ হচ্ছে না কারণ সবাই তখন নুরাইসার বাড়িতে আগুন নেভাতে ব্যস্ত। জলিল মিয়া নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে…

#চলবে..