হতে পারি বৃষ্টি পর্ব-৬+৭

0
520

#হতে_পারি_বৃষ্টি
#মোহনা_মিম
#পর্বঃ৬

ঈশানি মিমিকে সোফায় বসতে বলে নিজেও বসে। চায়ের কাপ এগিয়ে দেয়। মিমি বলল–

— এসবের কি দরকার ছিল আপু?

— আরে নাও তো। এতক্ষণ ওকে সামলালে এখন কিছু মুখে দাও। আর তোমাকে তুমি করে বলছি বলে আবার কিছু মনে করো না যেন।

— আরে না না ‌‌আপু। আমি কিছু মনে করছি না

মিমি চায়ের কাপ হাতে নিয়ে তাতে চুমুক দিল। ঈশানি বলল–

— তোমাকে খুব জ্বালিয়েছে তাই না? আসলে ও খুব দুষ্টু। তার ওপর বাবা আর মামাদের আদর পেয়ে আরো দুষ্টু হচ্ছে। মামারা তাকে মাথায় করে রাখে। দেখো না তোমাকে কেমন রসমালাই বানিয়ে দিল।

মিমি হেসে বলল–

— থাক না আপু। বাচ্চারা একটু দুষ্টু হবেই তাছাড়া এই প্রথম আমাকে কেউ নিক নেইম দিল। আমার খুব পছন্দ হয়েছে নাম টা। ইউনিক নেইম!

— নিশানের ফ্রেন্ডের মায়ের কাছ থেকে আমি তোমার খোঁজ পেয়েছি। তিনি বলেছিলেন তুমি বাচ্চাদের খুব ভালো ভাবে হ্যান্ডেল করতে পারো। এখন নিজের চোখে দেখে নিলাম। আগে দুই তিনটা টিচার পাল্টানো হয়ে গিয়েছে। কেউই তাকে পড়াতে পারে না। তুমি পেরেছো এখন আমি চিন্তা মুক্ত হলাম।

মিমি মৃদু হাসে। এখানে আসার পর থেকে সে আর কাউকে দেখতে পায়নি। এখানে কি আর কেউ থাকে না? মিমি কৌতুহল দমাতে না পেরে বলল–

— আচ্ছা আপু এখানে আপনারা একা থাকেন?

— হ্যাঁ আমরা তিনজন থাকি। আমি, নিশান ও আমার হাসবেন্ড। আর আমার শশুর শাশুড়ি সবাই গ্রামে থাকেন। তারা মাঝে মধ্যে এসে ঘুরে যান। আমরাও গ্রামে যাই মাঝে মাঝে।

— আচ্ছা আপু আমি তাহলে রোজ বিকেলে এসে নিশানকে পড়িয়ে যাবো। আজ আসি তাহলে?

— ঠিক আছে। কিন্তু তুমি তো কিছুই খেলে না।

— চা খেয়েছি তো আপু। পরে একদিন খাবো। আসি।

মিমি বিদায় নিয়ে বের হয়ে গেল।‌‌ আরো একটা টিউশনি পেয়ে মিমির বড় উপকার হলো। নিজের পড়ালেখা সহ সে বোনকেও কিছু দিতে পারবে। আর খুব শীঘ্রই একটা চাকরির খোঁজ করতে হবে। তাহলে আর কোনো চিন্তা থাকবে না।
———–

রাতে খাবার টেবিলে সকলে বসে আছে। সার্ভেন্ট এসে টেবিলে খাবার সাজিয়ে রাখছে। আজমল খান মুখের সামনে খবরের কাগজ ধরে রেখেছেন। তিনি গভীর মনোযোগ দিয়ে খবরের কাগজ পড়ছেন। তার মনোযোগে বিঘ্ন ঘটিয়ে মিসেস রিতা তার সামনে থেকে খবরের কাগজ কেড়ে নিলেন। আজমল খান চেঁচিয়ে উঠলেন–

— আরে! কাগজটা নিয়ে নিলে কেন? কত গুরুত্বপূর্ণ একটা খবর পড়ছিলাম জানো? তাড়াতাড়ি দাও।

মিসেস রিতা মাথা দুপাশে নাড়িয়ে বললেন–

— একদমই না। এখন খাবার সময় তোমার খবরের কাগজ পড়ার সময় নয়। তাছাড়া এই খবরের কাগজ তুমি সকালে একবার পড়েছো। এক কাগজ কয়বার পড়া লাগে বলো তো? মুখস্থ করে পরীক্ষা দেবে নাকি? খবরের কাগজ যে এতো পড়ো জীবনে স্কুল কলেজের বই এতো পড়েছ বলে মনে হয় না।

আজমল খান মুখ গোমড়া করে বললেন–

— তুমি আর কি বুঝবা খবরের কাগজ পড়ার মজা। আর স্কুল কলেজে আমি টপার ছিলাম।

মিসেস রিতা মুখ বাঁকিয়ে বললেন–

— আমার বোঝারও দরকার নেই। কেমন টপার ছিলে তা তোমার সার্টিফিকেট দেখে আমার জানা হয়ে গিয়েছে। সব তো টেনে টুনে পাস। এখন চুপচাপ খাবে নইলে এই খবরের কাগজ কীভাবে গায়েব করতে হয় তা আমার খুব ভালো ভাবে জানা আছে।

আজমল খান দমে গেলেন। মিসেস রিতা যখন বলেছে তখন তার কথা না শুনলে ঠিকই খবরের কাগজ হাওয়া করে দেবেন। আর তিনি খবরের কাগজ না পড়ে থাকতে পারবেন না। এটা তার এক ধরনের নেশা বলা চলে। তিনি বললেন–

— তোমার কথা মেনে নিলাম। তবে সময় আমারও আসবে।

মিসেস রিতা স্বামীর কথায় পাত্তা দিলেন না। মেঘ মিটিমিটি হেসে বলল–

— আমিও তোমার সাথে আছি চাচ্চু। তোমার সময় একদিন ঠিকই আসবে।

আজমল খান স্ত্রীর দিকে ইশারা দিয়ে বোঝালেন যে তিনি একা নন তার সাথে মেঘও আছে ‌। তিনি বেশ একটা ভাব নিলেন। মিসেস রিতা মিষ্টি সুরে মেঘকে বললেন–

— বাবা মেঘ! কদিন পর বিয়ে করছিস না? তোর বউ থাকবে আমার দলে তখন কি হবে?

মুহূর্তেই মেঘের মুখ চুপসে গেল। তার বউ নিয়ে টানাটানি সে মোটেও সহ্য করবে না। ধুর কোথাকার কোন চাচ্চু? তার বউ আগে। মেঘ মেকি হেসে বলল–

— আমার সুইট ছোট মা! আমি তো সব সময় তোমারই দলে। চাচ্চু তুমি যাও তো। আমি তোমার কোনো কাজে তোমার সাথে নেই।

আজমল খান হতভম্ব হয়ে গেলেন। এই ছেলে যেই বউয়ের কথা শুনলো ওমনি পল্টি খেল? আজমল খান অবাক কন্ঠে বললেন–

— মেঘ! তুই এখন থেকেই বউয়ের কথা শুনে আমাকে একা ছেড়ে দিচ্ছিস। বউ এলে তো বলবি “আপনি কে? আমি তো আপনাকে চিনি না।” শত্রু! সবাই আমার শত্রু।

মিসেস রিতা ও মেঘ মুখ চেপে হাসল। পাশ থেকে আফজাল খান মুচকি হাসেন। তার হাসি খুশি পরিবার দেখে তিনি স্বস্তি পান। তার স্ত্রী বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই খুব খুশি হতো। সব ঠিক থাকলেও তার বড় ছেলে রাগ চটা এবং গম্ভীর। বড় ছেলেকে নিয়ে তার চিন্তা হয়। বিয়ের বয়স হয়ে গেলে কিন্তু বিয়েতে তার কোনো আগ্রহই নেই। অথচ তার ছোট ছেলে বিয়ে করে নিচ্ছে। তাছাড়া কে-ই বা পারবে ওমন রাগী ছেলেকে সামলাতে? ভেবেই তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।
এরই মাঝে কাইফ বাড়িতে প্রবেশ করলো। মেঘ তাকে দেখে বলে উঠল–

— ওই তো ভাইয়া এসে গিয়েছে।

সবাই এক পলক সেদিকে তাকালো।‌‌মিসেস রিতা বললেন–

— কাইফ তাড়াতাড়ি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। আমি খাবার বাড়ছি।

কাইফ মাথা নাড়িয়ে লম্বা লম্বা পা ফেলে সিড়ি বেয়ে উঠে গেল।‌‌কিছুক্ষণ পর নেমে আসলো। চেয়ার টেনে টেবিলে বসে পড়লো। মিসেস রিতা তাকে খাবার সার্ভ করে দিলেন। আজমল খান খেতে বললেন–

— টানা কাজ করলে তো অসুস্থ হয়ে পড়বি। কিছুদিন বিশ্রাম কর। আমরা তো আছিই। তাছাড়া মেঘের বিয়ে ওকে একটু সময় দে।

কাইফ খেতে খেতেই জবাব দিলো–

— আমি ঠিক আছি চাচ্চু। মেঘ বাচ্চা ছেলে না যে ওকে সময় দিতে হবে। আর কাজে অবহেলা আমি পছন্দ করি না।

সকলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তারা জানে কাইফকে বুঝিয়ে কোনো লাভ নেই। মিসেস রিতা আমতা আমতা করে বললেন–

— মেঘ তোর আগে বিয়ে করে নিচ্ছে। এবার অন্তত তুই বিয়ে নিয়ে ভাব।

— ভাববো ছোট মা। আমার সময় হলে তোমাদের জানাবো এবং বিয়েও করবো। চিন্তা করো না। এখন মেঘের বিয়ে টা হোক।

মেঘ মজা করে বলল–

— ভাইয়া আমার যদি কোনো শালিকা থাকতো তাহলে তার সাথে তোমার বিয়ে দিয়ে দিতাম। তারপর আমরা হতাম এক বাড়ির জামাই। আহা! কি ভালোটাই না হতো। কিন্তু আফসোস আমার বউয়ের কোনো বোন নেই।

অতঃপর এমন একটা ভাব করলো যেন এর থেকে দুঃখজনক বিষয় পৃথিবীতে আর একটাও নেই। কাইফ বিরক্ত হয়ে বলল–

— তোর শালিকা আমার লাগবে না। আমি ঠিকই কাউকে খুঁজে নিতে পারবো। আর মানুষ যে এতো বিয়ে পাগল হয় তোকে না দেখতে জানতেই পারতাম না।

কাইফের কথার বিপরীতে মেঘ দাঁত কেলিয়ে হাসল। আফজাল খান কাইফকে বললেন–

— বিয়ের দিন এগিয়ে আসছে। ডেকোরেশানের লোকদের খবর দিও। তাছাড়া আরও অনেক কাজ আছে।

কাইফ শান্ত স্বরে বলল–

— আমি সব কিছু দেখে নেবো বাবা। কোনো ঘাটতি থাকবে না।

— হ্যাঁ তুমি আছো বলেই তো আমরা নিশ্চিন্তে থাকতে পারি। আর কেনাকাটার ও কিছু বিষয় আছে। সময় করে মেঘ আর তোমার ছোট মাকে নিয়ে যেও।

— আচ্ছা বাবা।

বলেই কাইফ উঠে গেল। তার খাওয়া শেষ। এক এক করে সকলে উঠে নিজ নিজ রুমে চলে গেল। মিসেস রিতা সার্ভেন্টকে টেবিল গুছিয়ে রাখতে বলে নিজেও প্রস্থান করলেন।

চলবে?

#হতে_পারি_বৃষ্টি
#মোহনা_মিম
#পর্বঃ৭

— মামা জানো? রসমালাই খুব ভালো।

কাইফ চোখ তুলে নিশানের দিকে তাকালো। তাকে পাশ থেকে উঠিয়ে কোলের ওপর রেখে বলল–

— জানি তো সুপার হিরো। তুমি রসমালাই খেতে খুব ভালোবাস। আমি তো আজ নিয়ে আসিনি আগামীকাল নিয়ে আসবো কেমন?

নিশান ঘন ঘন মাথা নাড়িয়ে বলল–

— না মামা এ রসমালাই না। তুমি দেখি কিছুই বোঝো না।

কাইফ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল–

— তাহলে?

— আজ আসবে তো। তখন তোমার সাথে আলাপ করিয়ে দেবো। তোমার খুব ভালো লাগবে দেখো। সে খুব কিউট।

কাইফ কিছু বললো না। রসমালাই কি কোনো মানুষ? কোনো মানুষের নাম যে রসমালাই হতে পারে তা কাইফ আগে কখনো শোনেনি। আজ সে নিশান দের বাড়িতে এসেছে নিশানকে দেখতে। মাঝে মাঝেই সে আসে। ঈশানি তার চাচ্চুর একমাত্র মেয়ে, তারই ছেলে নিশান তাদের সকলের নয়নের মণি। নিশানও তেমন মামা বলতে পাগল। কাইফ লাঞ্চ টাইমে অফিস থেকে চলে এসেছে। আজ বাকিটুকু সময় সে নিশানের সাথে কাটাবে বলে ঠিক করেছে। সাথে অবশ্য ল্যাপটপ এনেছে। নিশানকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে বলল–

— তুমি তাহলে খেলো সুপার হিরো? আমি এখন একটু কাজ করবো।

— আচ্ছা।

নিশান খেলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। কাইফ ল্যাপটপ চালু করে কাজ করতে লাগলো।
———

আজ মিমির দেরি হয়ে গিয়েছে। সে কলিং বেল চেপে দাঁড়িয়ে আছে। ঈশানি এসে দরজা খুলে দিল।‌‌মিমিকে দেখে সে এক গাল হাসলো। মিমি হালকা হেসে ভেতরে প্রবেশ করে বলল–

— স্যরি আপু! আজ একটু দেরি হয়ে গেল।

— আরে কোনো ব্যাপার না। যাও নিশান রুমে আছে। সে তো রসমালাই বলতে পাগল। রসমালাই কখন আসবে, রসমালাই কখন আসবে জিজ্ঞেস করতে করতে আমাকে পাগল করে ছেড়েছে। যাও।

মিমি মুচকি হেসে দ্রুত পা চালিয়ে অগ্রসর হয়। দরজায় হাত দিয়ে ঠেলার আগেই তা খুলে গেল। মিমি যে এত দ্রুত ছিল যে টাল সামলাতে পারলো না। হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল। মাথা শক্ত কোনো জায়গায় এসে ঠেকলো। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব কাইফ! সে রুম থেকে বের হচ্ছিল এমন সময় তার ওপর আক্রমণ হলো। মিমি মাথা তুলে পিটপিট করে তাকালো। কাইফকে দেখে তার চোখ কপালে! সে চোখ বন্ধ করে আবার তাকালো তাও কাইফকেই দেখতে পেল। কাইফও চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। নিশান তাদের এভাবে দেখে দৌড়ে তাদের কাছে এসে বলল–

— মামা তোমরা এটা কি খেলছো? আমিও খেলবো।

নিশানের কথায় হুঁশ ফিরল তাদের। মিমি তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়ালো। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। কারো বুক বুঝি এতো শক্ত হয়? মাথা মনে হয় ফেটেই গেল। কাইফ উঠে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে বলল–

— আপনি!

মিমি মুখ কুঁচকে বলল–

— হ্যাঁ আমি। আর আপনি!

নিশান কাইফের হাত ঝাঁকিয়ে বলল–

— মামা মামা! তোমাকে রসমালাই এর কথা বলেছিলাম না? এই হচ্ছে আমার রসমালাই। খুব ভালো জানো? আমাকে একটুও পড়তে বলে না। আর রসমালাই এ হচ্ছে আমার বড় মামা ‌‌।

কাইফ এক পলক মিমির দিকে তাকালো, সে বুঝলো মিমিই নিশানকে পড়াতে আসে। কিন্তু মিমিকে ঠিক কোন দিক দিয়ে রসমালাই এর মতো লাগে সেটা কাইফ বুঝলো না। সে মিমিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল। ছিমছাম গড়নের, একেবারে রোগা পাতলা নয়। গায়ে থ্রি পিস জড়িয়ে রেখেছে। গাল দুটো একটু ফোলা ফোলা, আবার কেমন যেন লাল হয়ে আছে। চোখের দিকে তাকাতেই কাইফের দম বন্ধ অনুভূতি হলো। সে চোখের বর্ণনা করতে পারল না। হুট করে মিমি তাকাতেই চোখাচোখি হলো। কাইফ লজ্জায় পড়ে চোখ সরিয়ে নিল। এতোক্ষণ মিমিকে কীভাবে পর্যবেক্ষণ করছিল ভাবতেই নিজেকে ধিক্কার জানাল। সে নিজেকে সামলে নিশানকে বলল বলল–

— তুমি তাহলে তোমার রসমালাই এর সাথে খেলো আমি বাইরে যাচ্ছি।

তারপর মিমিকে গম্ভীর কণ্ঠে বলল–

— এই যে রসমালাই!

মিমি কোনা চোখে তাকালো। কাইফ হকচকিয়ে গিয়ে গলা খাঁকারি দিল। আশ্চর্য! তার কেমন যেন সব গুলিয়ে যাচ্ছে। মিমির চোখের দিকে তাকানোর পর থেকে তার ভীষণ অস্থির অস্থির লাগছে। সে বলল–

— মানে নিশানের রসমালাই। ওকে আজে বাজে কিছু শেখাবেন না। ভালো করে পড়ালেখা করাবেন।

বলেই কাইফ চলে গেল। মনে হলো যেন পালিয়ে গেল। মিমি মুখ ভেংচি কাটলো। এই তাহলে সেই মহান বড় মামা! নিশান তা দেখে বলল —

— রসমালাই! তুমি ওটা কি করলে? আমাকে শেখাবে? আমিও ওমন করবো।

মিমি মনে মনে ভাবে লে হালুয়া! এখন একে মুখ ভেংচি কাটাও শেখাতে হবে! সবই কপাল। সে হেসে বলল–

— শেখাবো তো। যদি তুমি আজ একটু পড়ালেখা করো তাহলেই শেখাবো।

নিশান গালে হাত দিয়ে কিছু ভাবলো। অতঃপর বলল–

— আচ্ছা। আমি পড়বো।

মিমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিশানকে পড়ালো শুরু করলো। পড়ানো শেষে মিমি বলল–

— আচ্ছা নিশান? তোমার মামা কি কুস্তি খেলে?

নিশান চোখ গোল গোল করে বলল–

— কুস্তি কি রসমালাই?

মিমির ইচ্ছে করছে দেওয়ালে মাথা ঠুকে পটল তুলতে। সে মেকি হেসে বলল–

— তোমার মামাকে জিজ্ঞেস করবে। সে জানে। ঠিক আছে?

নিশান মাথা নাড়ায়। মিমি ব্যগ নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। ড্রয়িং রুমে ঈশানি চা নাস্তা নিয়ে বসে আছে। কাইফও আছে। ঈশানি মিমিকে দেখে বলল–

— আরে মিমি বসো। নাস্তা করো।

মিমি নাকোচ করে বলল–

— আজ না আপু আমাকে একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে। আসছি।

আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মিমি বের হয়ে গেল। কাইফ আড়চোখে সেদিকে একবার তাকাল। এরই মধ্যে নিশান কাইফের সামনে এসে ডাকলো–

— মামা!

কাইফ ল্যাপটপ পাশে রেখে বলল–

— বলো সুপার হিরো।

নিশান এক নাগাড়ে মুখ ভেংচি কাটছে। কাইফ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে থাকলো। ঈশানি বলল–

— নিশান! তুমি মামাকে মুখ ভেংচি কাটছো কেন?

নিশান আরো একবার মুখ ভেংচি কেটে বলল–

— আমি এটা নতুন শিখেছি। রসমালাই শিখিয়েছে। আর বলেছে এটা বড় মামার সামনে করতে হবে। তাহলে একটা ম্যাজিক হবে।

— তো কোনো ম্যাজিক হলো?

— হ্যাঁ হয়েছে তো। বড় মামার চোখ রসগোল্লার মতো বড় বড় হয়ে গিয়েছে।

বলেই আবারও মুখ ভেংচি কাটলো। সে এটাতে খুব মজা পাচ্ছে। ঈশানি হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। কাইফ ভ্রু কুঁচকে মুখ গম্ভীর করে তাকিয়ে আছে। মনে মনে মিমিকে দেখে নেবে বলে প্রতিজ্ঞা করে নিল। নিশান আবার বলল–

— আচ্ছা মামা তুমি কি কুস্তি খেলো? কুস্তি কি?

ঈশানি আবারও হেসে ফেললো। এদিকে কাইফ হতভম্ব! সে কিনা কুস্তি খেলে! সিরিয়াসলি! ঈশানি নিশানকে কোলে তুলে বলল–

— এটাও তোমাকে রসমালাই বলেছে?

— বলেছে তো। বলেছে মামা কুস্তি খেলে বলেই মামার বুক শক্ত তাই রসমালাই এর মাথা ব্যথা করছে।

নিশান ঈশানির সামনে বেফাঁস অনেক কথা বলে দিচ্ছে। আর ঈশানি হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। ঈশানি নিশানকে কোল থেকে নামিয়ে দিল। নিশান খেলতে চলে গেল। ঈশানি কাইফের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাড়িয়ে বলল–

— কাহিনী কি ভাইয়া?

কাইফ এদিক ওদিক তাকিয়ে ঈশানিকে মেকি ধমক দিয়ে বলল–

— এসব টিউটর কোথা থেকে ধরে নিয়ে আসিস? বাচ্চাকে এসব শেখাচ্ছে।

ঈশানি কাইফের পাশে বসে ভ্রু নাচিয়ে বলল–

— ওসব কথা পরে ভাইয়া। তার আগে বলো তো তোমার বুক শক্ত সেটা মিমি কীভাবে জানলো? হুম হুম?

কাইফ গলা খাঁকারি দিয়ে বলল–

— জাস্ট এ্যান এক্সিডেন্ট। তেমন কিছু নয়। আর ওনাকে বারন করে দিবি। নিশানকে এসব উল্টা পাল্টা কাজ যেন না শেখায়।

বলেই কাইফ রাগে গজগজ করতে করতে নিশানের রুমে চলে গেল। রাগে কাইফের মাথা ফেটে যাচ্ছে। সে জিম করে, জগিং করে নিজেকে ফিট রেখেছে। ওই মেয়ে বলে কিনা সে কুস্তি খেলে! সাহস তো কম না। নিশানকে দিয়ে তাকে হেনস্থা করালো। একবার শুধু হাতের মুঠোয় পেলে উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়বে।

চলবে?
{ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। }