হতে পারি বৃষ্টি পর্ব-১৭+১৮

0
504

#হতে_পারি_বৃষ্টি
#মোহনা_মিম
#পর্বঃ১৭

— মিমি তুমি চেঞ্জ করে নাও। শাড়ি পরে ঘুমাতে তোমার সমস্যা হবে।

মিমি ইতস্তত করে বলল–

— কিন্তু আপু আমি তো কিছুই নিয়ে আসিনি।

ঈশানি তার আলমিরা থেকে একটা থ্রি পিসের সেট বের করে দিয়ে বলল–

— তুমি এটা পরতে পারো। তোমার গায়ে আশা করি ফিট হয়ে যাবে।

মিমি মাথা নাড়িয়ে কাপড় নিয়ে ওয়াশ রুমে প্রবেশ করল। শাড়িতে সত্যিই তার অস্বস্তি হচ্ছে। শাড়ি চেঞ্জ করে সে থ্রি পিস পরে নিল। ঈশানির থ্রি পিস তার গায়ে একেবারে ফিট না হলেও একটু লুজ আছে। এতে সমস্যা হবে না। শাড়ি পাল্টে যেন সে শান্তি পাচ্ছে। মিমি ফ্রেশ হয়ে ওয়াশ রুম থেকে বের হলো। বের হয়ে মিমি হকচকিয়ে গেল। একটা লোক ঈশানির কোমর জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মিমিকে দেখে লোকটা তৎক্ষণাৎ ঈশানিকে ছেড়ে দিয়ে সরে দাঁড়াল। তিন জনই বেশ লজ্জা পেয়ে গেল। ঈশানি কনুই দিয়ে লোকটার পেটে গুঁতো দিল। মিমির দিকে তাকিয়ে জোর পূর্বক হেসে বলল–

— মিমি তোমার সাথে আলাপ করিয়ে দিই। ইনি আমার হাসবেন্ড নাহিদ চৌধুরী। তোমার সাথে আগে দেখা হয়নি।

অতঃপর নাহিদের দিকে তাকিয়ে বলল–

— এই হচ্ছে তোমার ছেলের রসমালাই। তোমার ছেলে পারে না একে খেয়ে ফেলতে।

নাহিদ হেসে মিমির সাথে কুশল বিনিময় করল। মিমিও সৌজন্য মূলক হাসে। এর মধ্যে নিশান রুমে প্রবেশ করে। নাহিদ তাকে কোলে নিয়ে বলল–

— আমার বাবা টা কোথায় ছিল এতক্ষন?

— আমি নানুর কাছে ছিলাম। পাপা! আমি আজ রসমালাই এর সাথে ঘুমাই?

নাহিদ যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেল। সে বিড়বিড় করে বলল–

— তাহলে তো ভালোই হয়। ইচড়ে পাকা ছেলের জন্য বউয়ের সাথে একটু রোমান্স ও করতে পারি না। আজ তাহলে সুযোগ পাওয়া যাবে।

ঈশানি নাহিদের পাশে থাকায় সে সব শুনল। চোখ রাঙিয়ে তার দিকে তাকাল। নাহিদ তার দৃষ্টিকে পাত্তা না দিয়ে বলল–

— আচ্ছা তুমি তোমার রসমালাই এর এখানে ঘুমাও। কিন্তু রসমালাই কে একদম জ্বালাতন করবে না, ঠিক আছে?

নিশান মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়। কোল থেকে নেমে মিমির কাছে যায়। বলল–

— তুমি আমাকে গল্প বলে ঘুম পাড়িয়ে দেবে তো রসমালাই?

— হ্যাঁ দেব।

ঈশানি বলল–

— তাহলে মিমি তুমি আর নিশান এখানে ঘুমাও। আমরা অন্য রুমে যাচ্ছি।

নাহিদ মিমিকে বলল–

— তোমাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দেব!

মিমি গোল গোল চোখে তাকিয়ে বলল–

— কিন্তু কেন?

ঈশানি পুনরায় নাহিদের পেটে গুঁতো মারে। নাহিদ মুখ কুঁচকে ফেলে। ঈশানি বলল–

— আরে না। কিছু না। তোমরা ঘুমাও। আমরা চলে যাচ্ছি। চলো।

বলে সে নাহিদকে টানতে টানতে নিয়ে গেল। যেতে যেতে দাঁতে দাঁত চেপে বিড়বিড় করে বলল–

— চলো! তোমার রোমান্সের আমি বারোটা বাজাচ্ছি।

নাহিদ হতাশ শ্বাস ফেলল। বউ ক্ষেপেছে। কিন্তু সমস্যা নেই। বউয়ের রাগ কীভাবে ভাঙাতে হয় সেটা তার খুব ভালো করে জানা আছে। সে মনে মনে শয়তানি হাসল।
————

ফুরফুরে মেজাজে মেঘ রুমের দরজা ঠেলে প্রবেশ করে। আবার দরজা লক করে দেয়। তার মনে লাড্ডূ ফুটছে। জীবনের প্রথম বাসর তো! তাই সে খুবই উত্তেজিত। মনে মনে হাজার জল্পনা কল্পনা করতে করতে সে তানিয়ার দিকে এগিয়ে গেল। তানিয়া মাথায় ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। মেঘ তার সামনে বসে যেই না ঘোমটা সরাতে যাবে তখনই তানিয়া চেঁচিয়ে উঠল–

— হ্যান্ডস্ আপ!

মেঘ ধড়ফড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাত উঁচু করে নিল। তানিয়া নিজের ঘোমটা সরিয়ে ছোট ছোট চোখ করে মেঘের দিকে তাকায়। মেঘের মনে বাসনা ভেঙে চুর চুর হয়ে গেল। সে ভেবেছিল বউয়ের ঘোমটা সরিয়ে তার মুখ তুলে বলবে–

— তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে বউ। একদম আমার স্বপ্নের রানীর মতো।

মেঘ হাত উঁচু করে দাঁড়িয়ে দুঃখ বিলাসে ব্যস্ত। তানিয়া তার সামনে এসে দাঁড়ায়। বলল–

— আগে আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিবেন। তারপর আপনাকে আমার আশে পাশে আসতে দেব কিনা ভাববো।

মেঘ কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল–

— কিন্তু রাত তো শেষ হয়ে যাবে।

তানিয়া চোখ বড় বড় করে বলল–

— রাত শেষ হলে হবে। তাতে আপনার কি? আমি যা প্রশ্ন করছি তার উত্তর দিন। নাম্বার ওয়ান! আপনি কয়জনের সাথে লুতুপুতু করেছেন?

মেঘ মনে মনে নিজের কপাল চাপড়ায়। বাসরের রাতেই তার মাথায় এসব প্রশ্ন এলো! আগে এসব শুনে নিলে তার বাসরের স্বপ্ন এভাবে চুরমার হতো না। মেঘ মুখ গোমড়া করে বলল–

— আমি কারো সাথে লুতুপুতু করিনি। শুধু কয়েকজনের সাথে রিলেশন ছিল। কিন্তু বিশ্বাস করো সব গুলো টাইম পাস ছিল।

তানিয়া শুনে বলল–

— নাম্বার টু! কাউকে ভালোবেসেছেন?

মেঘ পূর্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল। বিয়ের সাজে তাকে সত্যিই অপরুপা লাগছে। সে তার চোখে চোখ রেখে বলল–

— আমার পঁচিশ বছর জীবনে আমি অনেক মেয়েদের সাথে মিশলেও আমার তেমন কোনো অনুভূতি হয়নি যেমনটা বৃষ্টির বিকেলে এক অপূর্ব রমনীকে দেখে হয়েছিল। বিকেলে হয়তো আমি যাচ্ছিলাম কারো সাথে টাইম পাস করতে কিন্তু সেই বৃষ্টি ভেজা রমনীতে আটকে গেলাম। ঝিরঝির বৃষ্টির মাঝে বাচ্চাদের সাথে আনন্দে লাফালাফি করছিল সে। তার মুখে ঠোঁটে বিন্দু বিন্দু বৃষ্টির ফোঁটা জমে ছিল ‌‌। তার খিলখিলানো হাসিতে মুগ্ধ হয়েছি আমি। সেই থেকে আমি এক নারীতে আবদ্ধ। আর কারো দিকে ফিরেও তাকাইনি। সব ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে তাকে মনের রানী করেছি। সে আমার হৃদয় খুব বাজে ভাবে দখল করে নিয়েছে। তারপর থেকে তার পিছু পিছু ঘুরেছি তাকে ফলো করেছি। তাকে পাওয়ার জন্য বেপরোয়া এই আমি বাবা ভাইয়ের সাথে অফিসে জয়েন করেছি। তার বাড়িতে প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছি। অবশেষে সে এখন আমার। সম্পূর্ণই আমার।

মেঘের কথা শুনে তানিয়া ঘোরে চলে গেল। সে অনুভব করলো তার দেহ মৃদু কাঁপছে। সে যেন জমে গিয়েছে। নিজের জায়গা থেকে নড়তে পর্যন্ত পারছে না। মেঘ তানিয়ার অবস্থা বুঝে মৃদু হাসে। অতি সন্তর্পণে তাকে কোলে তুলে নেয়। তানিয়া ঘোর থেকে বের হয়ে হতবাক হয়ে গেল। ইতোমধ্যে মেঘ তাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়েছে। তানিয়ার হৃদ স্পন্দন অসম্ভব ভাবে বেড়ে গিয়েছে। মেঘ তার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল–

— সব উত্তর পেয়ে গিয়েছ? এবার কি আমি হতে পারি বৃষ্টি? বৃষ্টির ফোঁটার মতো ছুঁয়ে দিতে পারি তোমাকে? সেদিন বৃষ্টির ওপর আমার খুব হিংসে হয়েছিল। এখন আমি তার মতোই তোমাকে ছুঁতে চাই। অনুমতি কি পেতে পারি?

তানিয়া নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তার দম যেন বন্ধ হয়ে আসছে। মেঘকে বারন করার শক্তি তার নেই। সে হাত উঁচিয়ে মেঘের গলা জড়িয়ে ধরে। মেঘ অনুমতি পেয়ে যায়। প্রশান্তির হাসি হাসে। তানিয়াকে কাছে টেনে নেয়। নিস্তব্ধ রাতে তাদের ভারী নিঃশ্বাসে রুমের দেওয়াল জুড়ে মুখরিত হয়।

সবে মাত্র ঘুমিয়ে পড়েছে নিশান। তাকে ঘুম পাড়াতে যেতে মিমিকে বেগ পেতে হয়েছে। কিন্তু মিমির ঘুম আসছে না। সে কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করে উঠে বসে ‌। ঘুম তো আসছে না, একটু বাইরে গেলে কেমন হয়? ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত একটা বাজে। মিমি ভাবে এখন সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে বাইরে যাওয়া কি ঠিক হবে? সে কিছুক্ষণ ভেবে সিদ্ধান্ত নিল বাইরে যাওয়ার। খুব সাবধানে সে নিশানের পাশ থেকে উঠে দরজা খুলে বের হয়ে গেল। এই রুমটা দোতলায়। মিমি হাঁটতে হাঁটতে ছাদে যাওয়ার সিঁড়ি দেখতে পেল। সে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে চলে গেল। ছাদে রেলিং ঘেঁষে দাঁড়াতে শীতল হাওয়া তাকে ছুঁয়ে দিল। মিমি চোখ বন্ধ করে তা উপভোগ করল। এতো রাত অথচ চারিদিকে আলো, রঙিন আলো। রঙিন আলোতে নিচের দিকটা ভালোই দেখা যাচ্ছে। নিচে কয়েকজন গার্ড পাহারা দিচ্ছে। মিমি সেদিকে ধ্যান না দিয়ে নিরিবিলি পরিবেশ উপভোগ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

চলবে?

#হতে_পারি_বৃষ্টি
#মোহনা_মিম
#পর্বঃ১৮

কাইফের মেজাজ খুবই খারাপ হয়েছে। রাগে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে ‌। রাগ ঠান্ডা করার উপায় হিসেবে সে সিগারেট খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। সিগারেটই পারে তার রাগ কমাতে। সে সিগারেটের প্যাকেট হাতে ছাদের দিকে চলল। উদ্দেশ্য শান্তিতে সিগারেট খাওয়া। ছাদে পা রাখতেই সে ভ্রু কুঁচকে ফেলল। এতো রাতে ছাদে কে? কাইফের দিকে পেছন করে দাঁড়িয়ে আছে। সে তার মুখ দেখতে পারছে না ‌‌। শুধু দেখছে হাওয়ায় দুলতে থাকা তার আঁকা বাঁকা চুল। কাইফ তার দিকে এগিয়ে গেল। কন্ঠে গম্ভীরতা এনে শুধাল–

— এই যে! এতো রাতে এখানে কি করছেন আপনি?

মিমি ধড়ফড়িয়ে পিছু ফিরে তাকাল। সে ভয় পেয়েছে। বুকের মধ্যে ঢিব ঢিব আওয়াজ হচ্ছে। কাইফ তাকে দেখে আরেক দফা অবাক হলো। বলল–

— আপনি! ছাদে কি করছেন?

মিমি আমতা আমতা করে বলল–

— ইয়ে মানে, ঘুম আসছিল না। তাই এসেছিলাম।

কাইফ কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকল। অতঃপর কিছু না বলে মিমির থেকে দূরত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরাল। কাইফ কে সিগারেট ধরাতে দেখে মিমির চোখ মুখ অসম্ভব রকমের কুঁচকে গেল। সে সিগারেট খায়! মিমি তা আগে জানত না। কাইফ সিগারেটে এক টান দিয়ে ধোয়া ছাড়তেই মিমি ওড়না নাকে চেপে ধরল। সিগারেটের গন্ধ সহ্য হয় না তার। দম বন্ধ হয়ে মরেই যাবে। সে হতবাক কন্ঠে বলল–

— আপনি সিগারেট খান?

কাইফ আকাশের দিকে তাকিয়ে জবাব দিল–

— না।

মিমি ভ্রু কুঁচকে বলল–

— তাহলে এটা কি খাচ্ছেন?

— আইসক্রিম।

মিমি ভ্যাবাচ্যাকা খেল। চোখ গোল গোল করে বলল–

— আইসক্রিম!

কাইফ কন্ঠে বিরক্তি এনে বলল–

— আপনি যখন দেখতেই পাচ্ছেন তখন জিজ্ঞেস করছেন কেন? আর নিজের রুমে যান। এতো রাতে ছাদে থাকা ঠিক নয়।

কাইফের ট্যাড়া কথায় মিমির রাগ হলো। সে মুখ ভেংচি কেটে চলে আসতে নিল। কাইফ তা দেখে তাকে থামিয়ে বলল–

— দাঁড়ান! আপনি আমাকে মুখ ভেংচি কাটলেন? আপনি নিশানকেও এসব শিখিয়েছেন। আর এমন ভাবে শিখিয়েছেন যে সে কারো সামনে ভেংচি কাটে না শুধু আমার সামনেই কাটে। এর জন্য আপনার কি হাল করতে পারি জানেন?

মিমি জমে গেল। কাইফ তাকে আবার চাকরি থেকে বের করে দেবে না তো? সে চোখ বন্ধ করে গড়গড় করে বলল–

— আমি কিছু করিনি স্যার। আমার মুখটাই এমন। নিশানকে আমি এসব বলিনি। আমাকে চাকরি থেকে বের করে দেবেন না প্লিজ। আমি নিশানকে বারন করে দেব। স্যরি স্যার।

কাইফ তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল। মিমির অবস্থা দেখে সে খুব মজা পেল। তার হাসি আসছে, কিন্তু সে হাসল না। মুখটা গম্ভীর করে রাখল। বলল–

— ঠিক আছে এই শেষ বার। আর কখনো দেখলে আপনাকে শাস্তি পেতে হবে। যান নিজের রুমে।

মিমি এক মুহূর্তও ব্যয় না করে দ্রুত পায়ে নিচে নেমে গেল। তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসে কাইফ। সে ছাদে আসার আগে প্রচুর রেগে ছিল। সিগারেট ও খেতে পারল না, তা ছাই হয়ে গিয়েছে। অথচ তার এক ফোঁটা রাগ অবশিষ্ট নেই। মিমির সাথে কথা বলে সে রাগ হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। কাইফ দূর আকাশে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। ভাবল মিমির মধ্যে কি আছে? যেটা তার ধ্বংসাত্মক রাগ গলিয়ে জল করে দিল।
————-

বৌভাতের বিরাট আয়োজন! ঝাঁকে ঝাঁকে নামি দামী লোক জন আসছে। খান বাড়ির ছোট ছেলের বৌভাত! দেখলেই বোঝা যায়। বাড়িটা আগের তুলনায় সজ্জিত হয়ে আছে। চোখ ধাঁধানো আলোক সজ্জা! সময়টা সন্ধ্যার পর, মিমি এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তার পরনে মিসেস রিতার দেওয়া একটা বেগুনী রঙের শাড়ি। মিমি নাকোচ করেছিল কিন্তু মিসেস রিতা তাকে জোর করে দিয়েছে। তানিয়া আর মেঘ স্টেজে বসে আছে। মিমি চায়লেও তানিয়ার কাছে যেতে পারছে না। লোক জন একে একে আসছে তার তাদের সাথে কুশল বিনিময় করছে। এর মধ্যে তানিয়ার বাড়ি থেকে লোকজন চলে এসেছে। তানিয়া তার মা বাবাকে দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে জড়িয়ে ধরে। রিহা মিমিকে দেখে তার পাশে এসে দাঁড়ায়। মিমি বলল–

— মাকে জানিয়ে দিয়েছিস রিহু? আমি এতো সব লোকের মধ্যে সময়ই পেলাম না। না জানি মা চিন্তা করছে কিনা।

— আমি জানিয়ে দিয়েছি আপু। মা চিন্তা করছে না।

মিমি স্বস্তি পেল। মা তাদের জন্য একটু বেশিই চিন্তা করে। আসলে সে ‘মা’ চিন্তা তো হবেই। হুট করেই মিমির নজর দূরে দাঁড়িয়ে থাকা কাইফের দিকে গেল। সে দাঁড়িয়ে কিছু লোক জনের সাথে কথা বলছে। মুখে এক ফোঁটা হাসি নেই, বরাবরের মতো গম্ভীর। মিমি নিজের অজান্তেই তাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে শুরু করল। কাইফ আজ নীল রঙের সুট পরেছে। মিমি নীলে কাইফকে আজ প্রথম দেখল। কাইফ প্রায়ই কালো সুট পরে। কালো রং কি তার বেশি পছন্দ? চুল গুলো কেমন যেন বাতাসের সাথে মৃদু মৃদু দুলে উঠছে। কিছু পড়ে আছে কপালে। চোখে বরাবরের মতো চিকন ফ্রেমের চশমা। চশমাতে তাকে যেন একটু বেশিই সুন্দর লাগছে। তাকে ফর্সা বলা চলে তবে অতিরিক্ত নয়। ছেলেদের যেমন ফর্সা হলে মানায় ঠিক তেমনটাই। খোঁচা খোঁচা দাড়িতে সজ্জিত মুখমন্ডল। মিমির কাছে কঠিন চোয়ালের কাইফকে বড়ই সুদর্শন ঠেকলো। সত্যিই কাইফ সুদর্শন পুরুষ। কিন্তু মিমি তাকে আগে কখনো এভাবে দেখেনি। রিহার কন্ঠে মিমি বাস্তব জগতে ফিরল।

— আপু! আমি তানিয়া আপুর সাথে দেখা করে আসছি।

মিমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল। রিহা স্টেজে তানিয়ার কাছে চলে গেল। মিমি সামনে তাকিয়ে দেখে কাইফ নেই, সেখানে কেউই নেই। মিমি নিজের মাথায় গাট্টা মেরে বলল–

— ছিঃ ছিঃ মিমি! তুই একটা লোকের দিকে এতক্ষণ নির্লজ্জের মতো কীভাবে তাকিয়ে থাকতে পারলি? যদি উনি দেখে ফেলতেন? তাহলে নিশ্চয়ই তোকে লুচু মেয়ে ভাবতেন। কি লজ্জা!
———-

— এই! আপনি আমাকে ধাক্কা দিলেন কেন? চোখে দেখেন না?

সিফাত অবাক হওয়ার ভান করে বলল–

— আমি! আমি তোমাকে ধাক্কা মারিনি। তুমিই আমাকে ধাক্কা দিয়েছ।

রিহা তার দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকাল। রিহা স্টেজে উঠছিল, একই সময়ে সিফাত ও উঠছিল। দু’জনেই যেন তাড়ায় ছিল। ব্যস সংঘর্ষ হয়ে গেল। রিহা আঙুল উঁচিয়ে বলল —

— আমি আপনাকে দেখে নেব।

সিফাত তার আঙুল ধরে নামিয়ে দিয়ে বলল–

— হ্যাঁ হ্যাঁ খুব ভালো ভাবে দেখে নিও। সুন্দর মানুষ তো দেখবেই তাই না?

রিহা আর কথা বাড়াল না। শুধু বিড়বিড় করে বলল–

— খাটাস কোথাকার!

মেঘ তাদের এভাবে ঝগড়া করতে দেখে বলল–

— কিরে সিফাত! তুই আমার শালিকার বোনের সাথে সাথে ঝগড়া করছিস কেন? শালিকার বোন মানে আমার আরেক শালিকা। ছোট মানুষের সাথে এভাবে ঝগড়া করতে তোর লজ্জা করে না?

সিফাত রিহার দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল–

— তোর শালিকা মানে আমার বেয়াইন। তো বেয়াইন সাহেবার সাথে একটু ঝগড়া না করলে হয় নাকি?

বলে সে রিহার দিকে চোখ টিপ দিল। রিহা চোখ বড় বড় করে তাকাল। সিফাত হালকা কেশে বলল–

— মুখ বন্ধ করুন বেয়াইন। মাছি ঢুকবে।

রিহা মুখ বন্ধ করে নিল। সে মুখ ভেংচি কেটে তানিয়ার পাশে বসে তার সাথে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। সিফাত তার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসল।
———

মিমি যখন মনে মনে নিজেকে বকতে ব্যস্ত তখন কেউ এসে তার পাশে দাঁড়াল। মিমি পাশে তাকিয়ে ভড়কে গেল। কাইফ তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মিমির দিকেই নিবদ্ধ। সে গম্ভীর কণ্ঠে বলল–

— বর্ণনা করুন।

মিমি কিছুই বুঝল না। সে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল। কাইফ গলা খাঁকারি দিয়ে বলল–

— এতক্ষণ যে আমাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিলেন আই মিন দেখছিলেন, এখন আমার চেহারার বর্ণনা দিন।

মিমি হকচকিয়ে গেল। চরম লজ্জা পেল সে। যে ভয়টা পেয়েছিল সেটাই হলো। চোরের মতো আমতা আমতা করতে লাগল। সে ঘুনাক্ষরেও টের পায়নি যে কাইফ বুঝে ফেলেছে। তাকে বাঁচানোর জন্য দেবদূতের ন্যায় হাজির হলো নিশান। মিমি তাকে দেখে যেন আশার আলো দেখতে পেল। সে তাকে বলল–

— আরে নিশান! আমি এতক্ষন তোমাকেই খুঁজছিলাম। কোথায় ছিলে তুমি?

নিশান ছোট ছোট চোখ করে তাদের দেখে চলেছে। যেন সে গভীর পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত। সে মিমির কথা শুনে বলল–

— আমি পাপার কাছে ছিলাম রসমালাই। মামা! একটা কথা বলব?

কাইফ নিশানকে কোলে তুলে নিল। আলতো করে গাল টেনে দিয়ে বলল–

— বলো সুপার হিরো।

— তোমার আর রসমালাই কে পাশা পাশি রাজা রানীর মতো লাগছে। রসমালাই আমাকে যেমনটা গল্পে বলেছিল ঠিক তেমন।

মিমি পুনরায় হকচকিয়ে গেল। কাইফ তার দিকে আড় চোখে তাকাল। মিমি ভেবেছিল অস্বস্তি থেকে বেঁচে যাবে। কিন্তু নিশান তাকে আবারও অস্বস্তিতে ফেলে দিল।

চলবে?
{ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।}