হতে পারি বৃষ্টি পর্ব-১৯ এবং বোনাস পর্ব

0
482

#হতে_পারি_বৃষ্টি
#মোহনা_মিম
#পর্বঃ১৯

বর্তমানে মিমি লজ্জায় জড়সড় হয়ে আছে। তার গাল দুটো জ্বলছে। সে হাত মোচড়া মুচড়ি করেই যাচ্ছে। কি একটা অবস্থা! নিশান চলে আসায় সে ভেবেছিল কাইফের থেকে বেঁচে যাবে কিন্তু নিশান উল্টে আরেক সমস্যায় ফেলে দিল। এদিকে কাইফ মিমির অস্বস্তিকে খুব উপভোগ করছে। ঠোঁট ভেঙে হাসি আসছে তার তবে সে যথাসম্ভব মুখটা গম্ভীর করে রেখেছে। সে মিমিকে আর একটু অস্বস্তিতে ফেলতে বলল —

— তুমি কি শিওর সুপার হিরো? আমাদের রাজা রানীর মতো লাগছে?

— একশো পার্সেন্ট! নিশানের কথা কখনও ভুল হতেই পারে না। আচ্ছা মামা? তুমি কি রসমালাই কে বিয়ে করে নেবে? আর সত্যি সত্যি রাজা রানীর মতো হয়ে যাবে?

মিমির মাথায় যেন বাজ পড়ল। সে বিস্ফোরিত চোখে তাকাল। বলল–

— এসব তুমি কি বলছ নিশান? এসব কথা বলতে নেই। তুমি না ভালো ছেলে?

— আমি ঠিক বলছি রসমালাই। তুমি মামার কাছে জিজ্ঞেস করো। মামা আমি কি ভুল বলেছি?

কাইফ কোণা চোখে মিমির দিকে তাকিয়ে বলল–

— একদম না। আমার সুপার হিরো কখনও ভুল বলতে পারে না।

মামা ভাগ্নের কথার মধ্যে মিমি চাপা পড়ে যাচ্ছে। সে তোতলাতে তোতলাতে বলল–

— ত তানি আম আমাকে ডাকছে। আ আমি যাই। আসছি তানি।

বলে সে দ্রুত পায়ে চলে গেল। যেন পালিয়ে গেল। কাইফ হালকা হাসে। নিশান কিছুই বোঝে না। সে বলল–

— রসমালাই এভাবে চলে গেল কেন?

কাইফ তার গাল টেনে দিয়ে বলল–

— তুমি বুঝবে না সুপার হিরো।

কাইফের ফোন বেজে ওঠে। সে নিশানকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে বলল–

— তুমি তোমার মাম্মার কাছে যাও। আমার কল এসেছে।

নিশান চলে গেল। কাইফ ফোন কানে দিয়ে নিরিবিলি জায়গায় উদ্দেশ্যে পা বাড়াল।
———–

মিমি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে জোরে জোরে শ্বাস ফেলল। নিশানের কথা এখনো তার কানে বাজছে। কি একটা বাজে পরিস্থিতিতেই না পড়তে হয়েছিল তাকে। হঠাৎ মিমির মনে হলো তা গা ঘেঁষে কেউ দাঁড়িয়েছে। সে তাকিয়ে দেখল এক অজ্ঞাত পুরুষ। মিমি সরে গিয়ে অন্য পাশে দাঁড়াল। কিন্তু লোকটা তার পিছু পিছু গিয়ে পুনরায় তার পাশে দাঁড়াল। মিমির যেমন অস্বস্তি হচ্ছে তেমনই রাগ হচ্ছে। মিমির মনে হচ্ছে লোকটা তার দিকে বাজে এবং খুবই বাজে দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। মধ্য বয়সী লোক তার বাবার বয়সী হবে, পোশাক দেখে মনে হচ্ছে নামি দামী কেউ। মিমি তার দিকে তাকিয়ে সৌজন্য হেসে বলল–

— কিছু বলবেন আঙ্কেল?

সে মিমির শরীরে খুব বাজে ভাবে চোখ বুলিয়ে বলল–

— এক রাতের রে/ট কত?

ঘৃণায় মিমি গা গুলিয়ে উঠল। কান দুটো ঝাঁ ঝাঁ করে উঠল। রাগে শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগল। চোখ মুখ শক্ত করে সে বলল–

— কি বলতে চায়ছেন আপনি? আপনি যেমন ভাবছেন আমি তেমন ধরনের মেয়ে নই।

— আহা সুন্দরী রাগ করলে নাকি? তো কেবল ধরনের মেয়ে তুমি? এক রাতের রে/ট কত? যা রে/ট তার থেকে বেশি দেব। এক বার রাজি হয়ে যাও সুন্দরী!

বলে সে মিমির বাহুতে বাজে ভাবে স্পর্শ করল। মিমির ধৈর্য ভেঙে গেল। সে তৎক্ষণাৎ লোকটিকে কষিয়ে থাপ্পড় মারল। পরিবেশ স্থির হয়ে গেল। সকলে তাদের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। লোকটির নাম মোবারক তালুকদার। খানদের মতোই নাম করা ব্যক্তি সে। অথচ তার চরিত্রের দোষ! মেঘের ফুপি মিসেস ঝর্না! যে ব্যস্ত ছিল তানিয়ার খুট ধরতে। সে এগিয়ে এসে বললেন–

— কি হয়েছে এখানে? এই মেয়ে তুমি তালুকদার সাহেবকে চড় মারলে কেন?

মিমি কিছু বলার আগেই ফোড়ন কেটে মোবারক তালুকদার বললেন–

— আমি বেখেয়ালি ভাবে হাঁটতে যেয়ে এর সাথে একটু ধাক্কা লেগেছে। তাই এই মেয়ে আমাকে চড় মেরেছে।

মিসেস ঝর্না ক্ষেপে গেলেন। শহরের বিখ্যাত ব্যবসায়ী তাদের বাড়িতে এসে অপমানিত হবে, এটা নিশ্চয় দৃষ্টি কটু। তিনি মিমিকে পাল্টা থাপ্পড় দিলেন। মিমি হতভম্ব হয়ে গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে রাখল। মিসেস ঝর্না চেঁচিয়ে বললেন–

— লজ্জা করে না একটা বাবার বয়সী লোকের গায়ে হাত তুলতে? বাবা মা কি এই শিক্ষা দিয়েছে? এক্ষুনি ক্ষমা চাও তার কাছে।

তানিয়া স্টেজ থেকে নেমে আসল। মেঘ তাকে আটকাল না। তানিয়ার বিশ্বাস কিছু একটা হয়েছে, নাহলে মিমি এমন মেয়ে না যে বাবার বয়সী লোকের গায়ে হাত তুলবে। সে মিমির পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল–

— কি হয়েছে মিমু?

মিমি মাথা নিচু করেই আছে। কিছু বললে কেউ বিশ্বাস করবে না, উল্টে তানিয়া অপমানিত হবে। আর মিমি তা চায় না। মিমি ভেজা গলায় বলল–

— আমাকে মাফ করে দিস তানি! আমার জন্য তোর বৌভাতের অনুষ্ঠানে এমন বাঁধা আসল। স্যরি রে।

মিমি এক মুহূর্তও দাঁড়াল না। দৌড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। তানিয়া পেছনে চেঁচিয়ে ডাকল–

— মিমু! শোন আমার কথা। মিমু!

মিমি শুনল না। মেঘ এসে তানিয়াকে ধরল। তানিয়া ভেজা কন্ঠে বলল–

— বিশ্বাস করুন মেঘ! মিমু কিচ্ছু করেনি। ওকে আমি ছোট থেকে চিনি। ও এমন মেয়েই নয় যে বিনা কারনে কারো গায়ে হাত তুলবে।

মিসেস ঝর্না মুখ বাঁকিয়ে বললেন–

— হ্যাঁ তার বান্ধবী যেন ধোঁয়া তুলসী পাতা। ন্যাকামো দেখে গা জ্বলে যায়।

কাইফ ফোনে কথা বলা শেষ করে এসে মিমিকে দৌড়ে বের হতে দেখল। অতঃপর সকলের কথা বার্তা শুনে তার মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে উঠল। সে রিহার সামনে গিয়ে বলল —

— আমার সাথে চলো।

রিহা এক পাশে দাঁড়িয়ে নিরবে চোখের জল ফেলছিল। মিমি বের হয়ে যাওয়ার সময় রিহা ওয়াশ রুমে ছিল। এসে লোক জনের মুখে শুনেছে ব্যাপার টা। সে কাইফের পিছু পিছু চলল। কাইফ গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দিল, রিহা তার পাশে এসে বসল। কিছুদূর গিয়ে তারা মিমির দেখা পেল। সে হেঁটে চলেছে রাস্তার মাঝ দিয়ে। রিহা গলা উঁচিয়ে তাকে ডাকল কিন্তু মিমি শুনল না। কাইফ গাড়ি থামিয়ে তার দিকে এগিয়ে গেল। গলায় জোর এনে বলল–

— স্টপ মিমি!

মিমি থামে না। কাইফ হাত ধরে তাকে থামাল। মিমি কাইফের দিকে তাকাল। চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে তার। কাজল লেপ্টে আছে। কাইফের বুকের মধ্যে যেন চিনচিন করে ব্যথা করে উঠল। সে নিরবে মিমির হাত ধরে টেনে গাড়িতে বসাল। ইতোমধ্যে রিহা গাড়ির পেছনে যেয়ে বসেছে। বোনের অবস্থা দেখে তার খুব কষ্ট হচ্ছে। কাইফ মিমির দিকে পানির বোতল এগিয়ে দিল। মিমি তা নিয়ে কিছু পানি পান করল। কাইফ জিজ্ঞেস করল–

— কি হয়েছিল?

মিমি নিরব। কাইফ পুনরায় জিজ্ঞেস করল। মিমি তবুও মুখ খুলল না। কাইফ রেগে গেল। গাড়ির সামনে থাবা মেরে চেঁচিয়ে উঠল–

— আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি, ড্যাম ইট! বলুন কি হয়েছিল?

মিমি কেঁপে উঠল সাথে রিহাও। মিমি ভয়ে গড় গড় করে সব বলে দিল। কাইফ চোখ বন্ধ করে শান্ত হয়ে শুনল। মিমি কাইফের অভিব্যক্তি বুঝল না। কাইফ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে এগিয়ে চলল। রিহার কাছ থেকে রাস্তা দেখে তাদের বাড়ির সামনে নামিয়ে দিল। বিনা বাক্যে প্রস্থান করল। সে মিমির দিকে একবারও তাকাল না। রিহা তাকে ধন্যবাদ দেওয়ার সুযোগও পেল না। আফসোস করে বলল–

— ইশ্! ভাইয়া টাকে থ্যাঙ্কিউ দিতে পারলাম না।

মিমি গম্ভীর কণ্ঠে বলল–

— মা যেন কিছু জানতে না পারে।

বলে সে ভেতরের দিকে অগ্রসর হলো। রিহা তার পিছু পিছু গেল।
————

কাইফ বাড়িতে এসে সিসি ক্যামেরা চেক করল। ইতোমধ্যে বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষ। মেহমানরা সবাই চলে গিয়েছে। মেঘ আর তানিয়া, তানিয়ার বাড়িতে গিয়েছে। কাইফ দেখতে পেল মোবারক তালুকদার কীভাবে মিমিকে ছোঁয়ার চেষ্টা করেছে। কাইফ অসম্ভব রেগে গেলেও মাথা ঠান্ডা রাখলো। সকলকে ড্রয়িং রুমে ডেকে উপস্থিত করল। অতঃপর সিসি টিভির ফুটেজ দেখাল। সেটা দেখে আফজাল খান, আজমল খান এবং মিসেস রিতার খুব খারাপ লাগল। তারা ভেবেছিল মিমি এমন কাজ করতে পারে না বিনা কারনে। কিন্তু তারা জোর করে কিছু বলতে পারেননি। তাদের এখন খুব খারাপ লাগছে। কাইফ মিসেস ঝর্নার দিকে তাকিয়ে বলল–

— দেখলে তো ফুপি? সে কেন মি. মোবারক তালুকদারকে চড় মেরেছিল? তুমি বিনা যাচাই করে নিরপরাধ একটা মেয়েকে এভাবে অপমান করলে?

মিসেস ঝর্না আফসোস করলেন না। এসব দেখে তার মধ্যে কোনো রকম অনুশোচনা কাজ করছে না। একটা ছোট ঘরের মেয়ের গায়ে হাত তুলে তিনি মোটেও ভুল করেনি। তিনি বললেন–

— এভাবে শরীর দেখিয়ে চললে এমনই হয়। তালুকদার সাহেবের কি দোষ?

উপস্থিত সকলে মিসেস ঝর্নার কথায় হতবাক। তারা তো দেখেছেন মিমি শালীন এবং মার্জিত ভাবে চলছিল কিন্তু মিসেস ঝর্না তাকে খুব সহজভাবে এমন কথা বলে ফেললেন। আফজাল খান বোনকে ধমকে উঠে বললেন–

— ছিঃ ঝর্না! নিজে একটা মেয়ে হয়ে অন্য মেয়েকে এই ধরনের কথা কীভাবে বলতে পারিস তুই?

— আমি ঠিকই বলছি। ছোট ঘরের মেয়ে ছেলেরা এমনই হয়।

তিনি মুখ বাঁকিয়ে প্রস্থান করলেন। সকলে দীর্ঘশ্বাস ফেললেও কাইফের চোয়াল শক্ত। মিসেস রিতা তাকে বললেন–

— রুমে গিয়ে শুয়ে পড় বাবা। তোর ফুপিকে হাজার বুঝিয়েও লাভ নেই। সে বুঝবে না।

সকলে একে একে নিজের রুমে চলে গেলেন। কাইফ কিছুক্ষণ ঠাই বসে রইল। এই মুহূর্তে কেউ তার চোখের দিকে তাকালে বোধ হয় ভয়েই মরে যেত।

চলবে?

#হতে_পারি_বৃষ্টি
#মোহনা_মিম
#বোনাস_৩

নিস্তব্ধ পরিবেশ! এমন পরিবেশে ছোট খাটো কোনো শব্দ বড়ই ভয়ংকর মনে হবে। এমনই এক গা ছমছমে পরিবেশ। কোনো এক পরিত্যক্ত গোডাউনে একটা চেয়ারে কারোর হাত,পা এবং চোখ মুখ বেঁধে ফেলে রাখা হয়েছে। লোকটি গোঙাচ্ছে, সে চেঁচানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু তা স্পষ্ট নয়। কেউ তা শুনছে না। এমন গা ছমছমে পরিবেশে কেউ আসে না, কে তার আওয়াজ শুনবে? সে আপ্রাণ চেষ্টা করছে নিজেকে ছাড়ানোর কিন্তু পারছে না। এক সময় সে হাল ছেড়ে দিল। লোকটি মোবারক তালুকদার! বয়স পঞ্চাশ হলেও দেখতে চল্লিশ লাগে। বিয়ে করেছিলেন ঠিকই কিন্তু মেয়েদের নেশা কাটাতে পারেননি। বউ তার বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে মরেছে। এতে তিনি একটুও দুঃখ বোধ করেননি বরং খুশি হয়েছিলেন। বউ নেই মানে তার পাপ কর্মে বাঁধা দেওয়ার কেউ নেই। তিনি আরাম করে মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করে বেড়াতে পারবেন। ছেলেটা কোনো রকম বড় হয়েছে বাড়ির কাজের লোকদের কাছে , হয়েছে তার মতোই চরিত্রহীন, মেয়ে বাজ এবং সকল অন্যায় কর্মে জড়িত।

রোজকার মতন তিনি হোটেলে যাচ্ছিলেন মেয়ে নিয়ে সময় কাটাতে। রোজ রোজ নতুন মেয়ে না হলে তার ঠিক জমে না। হঠাৎ করেই একটা গাড়ি তার গাাড়ির পথ আগলে দাাঁড়াল। তার মধ্যে থেকে মুখে মাস্ক পরা পালোয়ানের মতো শরীর ওয়ালা দুটো লোক বের হয়ে আসলো। একজন তার ড্রাইভারকে অজ্ঞান করল আর একজন তাকে চেপে ধরে মুখে রুমাল চেপে ধরল। তারপর থেকে তিনি আর কিছু বলতে পারেন না। এখন দিন না রাত তিনি জানেন না, চোখ তো বাঁধা। গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে। হঠাৎ করেই তিনি দরজা খোলার আওয়াজ পেলেন। কেউ আসছে, সে কি চায়? টাকা পয়সা? সম্পত্তি? যা চায়বে তিনি তাই দিয়ে দেবেন। তিনি মুক্ত হতে চান। নড়তে না পারলেও নড়ে চড়ে বসার চেষ্টা করলেন। তার চোখ মুখ খুলে দেওয়া হলো। তিনি জোরে শ্বাস ফেললেন। পিটপিট করে চোখ খুললেন, খুবই সামান্য আলো ঘরের মধ্যে। মাথার ওপরে একটা কম দামি হলুদ বাল্ব জ্বলছে। তালুকদার সামনে তাকিয়ে দেখলেন সেই পালোয়ানের মতো লোক দুটো দাাঁড়িয়ে আছে, মুখ বরাবরের মতোই ঢাকা। তাদের মধ্যে একজন একটা চেয়ার এনে তার সামনে রাখল। তালুকদার বুঝলেন যে তাকে কিডন্যাপ করেছে এটা তার জন্য।

তার ভাবনার মাঝেই ঠক ঠক আওয়াজে এগিয়ে আসলো কেউ। রাজ ভঙ্গিতে নিজের আসন গ্রহণ করে নিল ব্যক্তিটি। ফেস মাস্ক দিয়ে ব্যক্তির সম্পূর্ণ মুখ ঢেকে রাখা। যেমনটা বাচ্চারা বিভিন্ন মুখোশ পরে বাঘ, ভাল্লুক সাজে এটা তেমনই সম্পূর্ণ মুখ ঢাকার কাজ করে। তবে তা বাচ্চাদের মতো রঙিন নয়, এটা কালো। এবং তা মোটেও মজাদার নয়। মাস্কটির মতো ব্যক্তিটির পুরো শরীর কালোতে আবৃত। সে নিজের পায়ের ওপর পা তুলে শাহী ভঙ্গিতে বসল। তালুকদার মুখ খুললেন দূর্বল কন্ঠে বললেন —

— পানি। আমাকে একটু পানি দাও।

মুখোশ পরা লোকটি তার লোকদের কিছু একটা ইশারা করল, সাথে সাথেই তালুকদারের মুখে পানি ছুড়ে মারা হলো। তালুকদারকে পানি পান করতে দেওয়া হলো না। তালুকদার কোনো মতে দম নিয়ে বললেন–

— কি চাস তোরা? কত টাকা চাস? যা চায়বি দেব। আমাকে ছেড়ে দে।

পুনরায় তালুকদারের মুখে পানি ছোড়া হলো এবং তা অনবরত। তালুকদার নিঃশ্বাস নিতে পারেন না। কিছুক্ষণ পর তারা পানি ছোড়া বন্ধ করে। তালুকদার জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে বিশ্রী গা/লি দিয়ে বললেন–

— জা/নো/য়া/রে/র বা/চ্চা কে তুই? কেন আমাকে ধরে নিয়ে এসেছিস? ছেড়ে দে বলছি নইলে কাউকে ছেড়ে দেব না আমি। আমাকে তোরা কেউ চিনিস না।

মুখোশ আবৃত লোকটি তীক্ষ্ণ হাসে যা তার চোখ দেখে তালুকদার বুঝলেন। লোকটি হাড় হিম করা কন্ঠে বলল–

— তালুকদার! মেয়েদের দেখলে খুব কা/ম/না জাগে তাই না? আজ তোর কামনা শেষ করব আমি।

সে নিজের আসন ছেড়ে তালুকদারের মুখ তিন আঙুলে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে হিসহিসিয়ে বলল–

— তোর কাছে মেয়েরা কা/ম/না/র বস্তু তাই না? আজ তোর এমন হাল করব যে মেয়েদের দেখলে মা বোন ব্যতিত আর কোনো দৃষ্টিতে দেখবি না। বা/স্টা/র্ড!

এতো জোরে মুখ চেপে ধরেছে তালুকদারের মুখের হাড় যেন মড়মড় করছে। তিনি কোনো রকম ঠোঁট নাড়িয়ে বললেন–

— ক কে তুই?

লোকটি তার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল–

— কিং!

মুহূর্তেই তালুকদারের শরীরে ভয়ে কাঁপুনির সৃষ্টি হলো। সে চেনে, কিং! যে মাফিয়া ওয়ার্ল্ডের রাজা। মাফিয়া নামে পরিচিত হলেও সকল অন্যায়কারী দের শাস্তি দেওয়া কিং এর প্রধান কাজ। সে কোনো খারাপ কাজের সাথে জড়িত নয়। এক কথায় কিং নামে সকলের হাঁটু কাঁপে। ভয়ংকর মানুষ কিং। সে সহজে কারো সামনে আসে না। আড়ালে থেকে নিজের লোকদের দিয়ে কাজ করায়। লোক মুখে শোনা যায় অতি নিষ্ঠুর এই কিং! অন্যায়কারী দের ছাড় দেয় কিন্তু ছেড়ে দেয় না। তালুকদার কিং কে আগে কখনো দেখেনি। তাকে কেউই দেখেনি, সে সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকে। তালুকদার আজ তার খপ্পরে পড়েছে, তার আর নিস্তার নেই। তালুকদার এতো দিন হয়তো ছাড় পেয়েছিল, তবে কি তার পাপের ঘড়া পূর্ণ হলো? ইতোমধ্যে সে ঘামে ভিজে গিয়েছে। তিনি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললেন–

— আ আমাকে ছেড়ে দে কিং! যত টাকা চায়বি দেব। ছেড়ে দে আমাকে।

কিং ঘর কাঁপিয়ে হো হো করে হেঁসে উঠল, যেন তালুকদার বড় মজার কথা শুনিয়েছে। তার হাসিতে তালুকদারের শুকনো গলা দ্বিগুণ শুকিয়ে কাঠ। কি ভয়ংকর সেই হাসি! কিং পুনরায় তালুকদারের মুখ চেপে ধরে বলল–

— তুই কি ভেবেছিস? কিং এতোই সস্তা যে তোর টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যাবে? তাহলে তুই ভুল ভেবেছিস। মেয়েদের তুলে নিয়ে এসে যখন রে/প করতি তখন তারাও তোর মতো হাতে পায়ে ধরত। নিজেদের ইজ্জত ভিক্ষা চায়ত। ছেড়ে দিয়েছিলি কাউকে? বল ছেড়ে দিয়েছিলি? তোর মেয়ের বয়সী মেয়েদের তুই রে/প করেছিস। তোর হৃদয় একটুও কাঁপেনি। তোর মনে হয়নি আজ তোর মেয়ে থাকলে নিশ্চয়ই ওই মেয়েদের মতো হতো। কত মেয়ের সর্বনাশ করেছিস তার হিসেব আছে তোর কাছে? বল আছে? আর আজ বলছিস তোকে ছেড়ে দেব? এই বা/স্টা/র্ড বল তোকে ছেড়ে দেব?

একটু থেমে আবার বলল–

— নিজের ছেলেকেও মানুষ করতে পারিসনি। নিজের মতো জা/নো/য়া/র বানিয়েছিস। তাকেও আমি দেখে নেব। আগে তোর মেয়ের নেশা কাটাই। কিং ছাড় দেয় কিন্তু ছেড়ে দেয় না।

রুমে উপস্থিত পালোয়ানের ন্যায় লোক দুজনের উদ্দেশ্যে কিং বলে উঠল–

— ঘড়িতে সময় দেখে এক ঘন্টা পেটাবে। তারপর গরম পানিতে লবন মরিচ গুঁড়া মিশিয়ে গায়ে ঢালবে। একটু থামবে আবার শুরু করবে। এভাবে তিনবার ট্রিট করে হাসপাতালের সামনে ফেলে আসবে।

বলে সে পুনরায় ঠক ঠক আওয়াজ তুলে লম্বা লম্বা পায়ে প্রস্থান করল। তালুকদার অনেক আকুতি মিনতি করেও নিষ্ঠুর কিং এর দয়া পেল না। তার ওপর শুরু হলো কিং এর কথানুযায়ী অত্যাচার। চিৎকার করলেও তা কেউ শুনল না, কেউ না। আঘাতের ওপর লবন মরিচ গোলা গরম পানির ছোঁয়ায় তালুকদারের যেন জান বের হয়ে আসবে। সে চিৎকার করে আকুতি করতে লাগল। কিন্তু তারা অনুগত রোবটের ন্যায় তাদের কাজ করে যাচ্ছে। তারাও যে কিং এর মতোই দয়া মায়া হীন নিষ্ঠুর। এমনিতেও এমন পাপীদের জন্য মনে কোনো দয়া মায়া কাজ করে না। এক সময়ে এতো অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে তালুকদার জ্ঞান হারালেন।

কিং এর কথা অনুযায়ী লোক দুটো তালুকদারকে গাড়িতে করে হাসপাতালের সামনে ফেলে দিয়ে এলো। সময়টা রাত একটা কি দুটো হবে, হাসপাতাল একেবারে নিরিবিলি নয়, দু এক জনের আনাগোনা চলছে। হাসপাতালের সামনে দু একজন লোক যাতায়াত করছে। হয়তো কোনো রোগীর বাড়ির লোকজন। তালুকদারকে পড়ে থাকতে দেখে তারা এগিয়ে গেল। বিধ্বস্ত অবস্থায় একটা লোককে এভাবে মরার মতো পড়ে থাকতে দেখে তারা প্রচন্ড রকমের অবাক হলো। খুব শীঘ্রই অবাকতার রেশ কাটিয়ে তারা ধরাধরি করে তালুকদারকে হাসপাতালের মধ্যে নিয়ে গেল। কিন্তু কেউ দেখল না তালুকদার কীভাবে আসলো। কারা তাকে পশুর ন্যায় মেরে ফেলে রেখে গেল। গাড়ি যেমন বাতাসের ন্যায় এসেছিল তেমন বাতাসের ন্যায় চলে গেল। কেউ ঘুনাক্ষরেও টের পেল না তালুকদারের এমন হাল কে করেছে।

চলবে?
{ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন, ধন্যবাদ।}