হতে পারি বৃষ্টি পর্ব-৪+৫

0
500

#হতে_পারি_বৃষ্টি
#মোহনা_মিম
#পর্বঃ৪

রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে একটা রিকশা ডেকে উঠে পড়ল মিমি। তার কষ্ট হচ্ছে খুব। তার বাবার দেওয়া চেইনটা সে কাইফের হাতে তুলে দিয়ে আসল। না চাইতেও চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। আজ বাবা থাকলে নিশ্চয়ই এমনটা হতো না। বাবা নেই বলেই তো সে কত অসহায়। টিউশনি করিয়ে সংসার চালাতে হয়। ছোট বোনটাও টিউশনি করিয়ে নিজের পড়ালেখার খরচ চালায়। তার বাবার হঠাৎ মৃত্যুতে সব থমকে গিয়েছিল। আত্মীয় স্বজন কেউই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় নি। মিমি নিজে সংসারের হাল ধরলো। সাথে তার বাবার রেখে যাওয়া কিছু টাকায় তারা জীবন চালিয়ে যেতে সক্ষম হলো। ভালো মানুষের মুখোশ পরা আত্মীয়দের আসল রুপ তারা দেখেছে। এখন তারা কাউকে বিশ্বাস করে না, কারোর উপর নির্ভর করে না। মিমি মনে মনে ভেবে নিল যে সে চাকরি খুঁজবে এবং সংসারের ঢাল হয়ে দাঁড়াবে। বোনকে ও সে কষ্ট থেকে মুক্ত করবে। সবে মাত্র ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে তার বোন। নিশ্চয়ই তার খুব কষ্ট হয়! মিমি আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

বাড়ির সামনে নেমে সে ভাড়া মিটিয়ে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করলো। ওড়নায় ভালো করে চোখ মুছে নিয়ে দরজায় নক করল। মিমির মা মিসেস মুক্তা দরজা খুলে দিলেন। মিমি প্রবেশ করে বলল–

— ওষুধ লাগাতে পেরেছো মা?

মিসেস মুক্তা হতাশ হয়ে বললেন–

— সে ক্ষমতা কি আমার আছে? তুই যেয়ে দেখ কিছু করতে পারিস কিনা।

মিমি ব্যাগটা সোফায় রেখে রিহার কাছে গেল। রুমে গিয়ে দেখল রিহা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।‌‌মিমি কাছে গিয়ে তাকে ডাকলো–

— রিহু!

রিহা চোখ মেলে তাকালো। মিমি ফার্স্ট এইড বক্স এনে রিহার পাশে বসে বলল–

— কীভাবে পড়ে গেলি? আর ব্যথা পেয়েছিস তো ওষুধ লাগাসনি কেন?

— আপু! ওষুধ লাগালে খুব জ্বলে।

— চুপ! ওষুধ না লাগালে ব্যথা কমবে না। আরো বাড়বে। আমি আস্তে করে লাগিয়ে দিচ্ছি।

মিমি খুব যত্ন সহকারে রিহার কাটা জায়গায় ওষুধ লাগিয়ে দিল। অতঃপর বলল–

— এবার বল কীভাবে পড়ে গেলি?

— আপু আমি রাস্তার এক পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একটা সাইকেল এসে ধাক্কা দিল। আমিও টাল সামলাতে না পেরে ধপাস করে পড়ে গেলাম।

মিমি রিহার কথা বলার ধরন দেখে হালকা হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল–

— আচ্ছা এরপর থেকে আরো সাবধানে চলাফেরা করবি। এখন বিশ্রাম কর।

— আচ্ছা।

মিমি রুম থেকে বের হয়ে মায়ের সামনে পড়লো। মিসেস মুক্তার চোখ গেল মিমির গালে। লাল হয়ে আছে। তিনি এগিয়ে এসে মিমি গালে হাত রেখে বললেন–

— এখানে কি হয়েছে? এমন লাল হয়ে আছে কেন?

মিমি হকচকিয়ে আমতা আমতা করে বলল–

— বাইরে প্রচুর রোদ মা। তাই হয়তো লাল হয়ে আছে।

মিসেস মুক্তার কথাটা বিশ্বাস যোগ্য মনে হলো না। তিনি মিমির গলার দিকে তাকিয়ে দেখলেন তার বাবার দেওয়া চেইনটা নেই। তিনি অবাক হলেন। মিমি তার বাবার দেওয়া চেইন কখনো কাছ ছাড়া করেনি। তিনি বললেন–

— মিমি! চেইনটা কই?

মায়ের কথায় মিমি পুনরায় হকচকিয়ে গেল। বলল–

— খুলে রেখেছি মা। যদি হারিয়ে যায়?

— কিন্তু তুই তো..

মিমি মিসেস মুক্তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল–

— মা আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে। তুমি খাবার রেডি করো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

মিমি নিজের রুমে চলে গেল। মিসেস মুক্তা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চলে গেলেন।
———

আজ সকালে একটু তাড়াতাড়িই ঘুম ভাঙলো মিমির। নামাজ আদায় করে ভাবলো বাইরে থেকে একটু হেঁটে আসা যাক। যে ভাবা সেই কাজ। মিমি গায়ে ওড়নাটা ভালো করে পেঁচিয়ে বের হয়ে গেল। রাস্তার এক পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে মিমি। মুগ্ধ হয়ে সে সকালের প্রকৃতি দেখছে। সকালের নিরিবিলি পরিবেশ তার খুবই ভালো লাগে। তার মতোই অনেকে হাঁটতে বের হয়েছে। তার থেকে একটু দূরে বয়স্ক একজোড়া দম্পতি হেঁটে যাচ্ছে। মিমি তাদের দেখে হাসল। দৃশ্যটা তার কাছে মনোমুগ্ধকর লাগল। কিছুক্ষণ হাঁটার পর মিমির মনে হলো কেউ তাকে ডাকছে। সে পিছু ফিরে তাকাল। সেদিনের লোকটাকে দেখে মিমি ভ্রু কুঁচকাল। পরক্ষনেই মুখ ঘুরিয়ে হাঁটা শুরু করলো। কাইফ দৌড়ে এসে মিমির সামনে এসে দাঁড়াল। মিমি বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে বলল–

— কি সমস্যা? আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন কেন?

কাইফ লম্বা শ্বাস নিয়ে বলল–

— আমি যে আপনাকে এতক্ষণ ধরে ডাকছি, শুনতে পাচ্ছেন না? কানটা কি বাড়িতে রেখে এসেছেন?

— আমি অপরিচিত লোকদের সাথে কথা বলি না। আর আমার মতো গায়ে পড়া মেয়েদের সাথে আপনারও কথা বলা উচিত নয়।

কাইফ বুজলো মেয়েটা তাকে খোঁচা দিচ্ছে। সেদিনের জন্য কাইফ অনুশোচনায় ভুগেছে। তাই অনেক দিন ধরে তাকে স্যরি বলবে বলে ঠিক করেছে। যে স্যরি শব্দ কাইফ খানের ডিকশনারিতে নেই। এমনকি মিমির সম্পর্কে জানার জন্য সে তানিয়ার সাথে যোগাযোগ করেছে। এখন মিমির কথা শুনে রাগ চটা কাইফের সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। সে ধমকে উঠে বলল–

— এই মেয়ে আজে বাজে কথা বলছেন কেন? আমি কিছু বলতে এসেছিলাম।

— কিন্তু আমি শুনতে ইচ্ছুক নই। বড়লোকের ছেলেদের সাথে আমি খুব কম কথা বলি।

বলেই মিমি হাঁটা ধরলো। কাইফের মাথা গরম হয়ে গেল। এই মেয়ে তো খুবই বেয়াদব! কীভাবে মুখের ওপর কথা বলে চলে গেল। কাইফ জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে দৌড় লাগালো। আজ জগিং করতে এসে মিমির সাথে হঠাৎ করে দেখা হয়ে যাওয়ায় সে ভেবেছিল স্যরি বলবে। কিন্তু এখন সে চিন্তা সম্পূর্ণ মাথা থেকে বাদ দিয়ে দিল। এই বেয়াদব মেয়েকে সে কখনো স্যরি বলবে না। কথাই বলবে না আর স্যরি তো দূরে থাক। সে গাড়ির কাছে গিয়ে গাড়িতে বসে বাড়ির দিকে অগ্রসর হলো। সে গাড়ি নিয়ে মিমিদের এলাকায় এসেছিল। তানিয়ার কাছ থেকে সকল তথ্য সংগ্রহ করেছে সে। আফসোস মিমিকে চেইনটা ফেরত দেওয়া হলো না।

———

— হ্যালো!

— এই মিমু স্যরি ইয়ার!

— কি আশ্চর্য! স্যরি বলছিস কেন বার বার? তুই আবার কি করলি?

— না মানে সেদিন তোকে অপমানিত হতে হলো না? সব আমার জন্য, স্যরি।

— কি আবোল তাবোল বলছিস? তোর দোষ কেন হবে? ভুল আমারই ছিল।

— না মানে আসলে!

— কি হয়েছে? ভালো করে বল তো।

— ওই লোকটা না মেঘের বড় ভাই কাইফ খান।

মিমি বিস্ফোরিত কন্ঠে বলল–

— কিহ!

— হ্যাঁ রে। বিশ্বাস কর উনি ইচ্ছে করে করেননি। রাগ চটা মানুষ তো, আগে থেকেই রেগে ছিল। সেই রাগ তোর ওপর ঝেড়ে দিয়েছে। মেঘ বলেছে তোর সাথে দেখা হলে ওর ভাইয়ের হয়ে স্যরি বলবে।

— জিজুকে স্যরি বলতে হবে না। আমি ওসব কথা ভুলে গিয়েছি।

— সত্যি তো? আমি কিন্তু আবারও স্যরি বলছি।

— এবার কিন্তু তুই মার খাবি। ফোন রাখ আর জিজুর সাথে প্রেমালাপ কর পাজি মেয়ে।

— আচ্ছা ঠিক আছে। মেঘ কিন্তু তোর সাথে আলাপ করতে চেয়েছে। খুব শীঘ্রই দেখা করিয়ে দেব।

— ওকে দিস। এখন রাখছি, বাই।

— বাই।

তানিয়া কল কেটে দিল। মিমিকে সে কাইফ সম্পর্কে কিছুই বললো না। কাইফ তার কাছ থেকে মিমির সকল তথ্য সংগ্রহ করেছে। মেঘের বড় ভাই বলে তানিয়া না বলতে পারেনি। গড়গড় করে সব বলে দিয়েছে। কাইফ তাকে এও বলেছে সে যেন মিমিকে কিচ্ছু না বলে। তানিয়া ভেবেছিল মিমি তার ওপর রাগ করে থাকবে। কিন্তু মিমির কথা শুনে সে স্বস্তি বোধ করছে।

চলবে?

#হতে_পারি_বৃষ্টি
#মোহনা_মিম
#পর্বঃ৫

ভার্সিটি শেষে মিমি আর তানিয়া দেখল মেঘ দাঁড়িয়ে আছে। সে তানিয়াকে দেখে হাত নাড়াল। তানিয়া জোর পূর্বক হেসে হাত নাড়ায়। দাঁতে দাঁত চেপে মিমির কানে কানে বলল —

— দেখেছিস? ব্যাটা কেমন আমার পেছনে পড়ে আছে? ভার্সিটিতে ও চলে এসেছে। ইচ্ছে করে ইট ছুড়ে চব্বিশ পাটি দাঁত ফেলে দেই। লুইচ্চা একটা!

মিমি তানিয়ার মাথায় চাটি মেরে বলল–

— এসব কেমন কথা বার্তা তানি? কদিন পর ওনার সাথে তোর বিয়ে আর তুই এভাবে বলছিস! আচ্ছা জিজু এখন তোর দিকে না তাকিয়ে যদি অন্য মেয়ের দিকে তাকায় তাহলে?

তানিয়া চোখ বড় বড় করে বলল–

— ব্যাটার চোখ তুলে আমি মার্বেল খেলবো। একবার তাকিয়ে দেখুক শুধু!

মিমি খিলখিল করে হেসে উঠল। তানিয়া পারেও বটে! ভাব তো এমন করে যে মেঘকে তার দু’চোখে সহ্য হয় না। অথচ অন্য মেয়েদের দিকে তাকালে তার চোখ তুলে নেবে বলছে। তানিয়া মিমির হাসি দেখে মুখ গোমড়া করে বলল–

— হাসবি না একদম! চল তো দেখি কি করতে এসেছে।

তানিয়া মিমির হাত ধরে মেঘের দিকে এগিয়ে গেল। মেঘ এক গাল হেসে বলল–

— কি কথা হচ্ছিল দুজনের? কানে কানে ফুসুর ফুসুর।

মিমি হেসে বলল–

— তেমন কিছু না জিজু! তারপর বলুন কেমন আছেন আপনি?

— তোমার বান্ধবীকে ছেড়ে আমি একদমই ভালো নেই শালিকা। যেদিন বউ করে নিজের ঘরে তুলতে পারবো সেদিন থেকেই ভালো থাকবো।

মেঘের কথা শুনে তানিয়া লজ্জায় পড়ে গেল। মিমি মিটিমিটি হেসে তানিয়াকে খোঁচা দিল। মেঘ আবারও বলল–

— তুমি কেমন আছো?

— আমি একদম ফার্স্ট ক্লাস আছি।

— সেদিন আমার ভাইয়া যা করেছে তার জন্য আমি স্যরি শালিকা! প্লিজ তুমি কিছু মনে কোরো না।

মিমি ব্যস্ত হয়ে বলল–

— আরে জিজু! স্যরি বলবেন না প্লিজ! আমি ওসব ভুলে গিয়েছি। তাছাড়া আমারই দোষ ছিল।

মেঘ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল–

— তুমি আমাকে বাঁচালে গো শালিকা। শালিকার রেগে মানে বউ ও রেগে। তুমি রেগে নেই তার মানে বউও রেগে নেই।

মিমি হাসল। নিঃসন্দেহে মেঘ একজন চমৎকার মানুষ! তানিয়া মেকি রাগ দেখিয়ে বলল–

— এতো বউ বউ করছেন কেন? বউ হইনি এখনও আপনার।

মেঘ চোখ টিপ দিয়ে বলল–

— হওনি কিন্তু হতে আর কতক্ষন? তাই আগে থেকেই বলে প্রাকটিস করছি।

তানিয়া মুখ বাঁকাল। মেঘ মিমির দিকে তাকিয়ে বলল–

— চলো তাহলে শালিকা কোথাও থেকে ঘুরে আসি।

মিমি নাকোচ করে বলল–

— স্যরি জিজু আমি যেতে পারবো না। আমাকে একটা বাচ্চাকে পড়াতে যেতে হবে। আজ থেকেই শুরু করবো। না গেলে সমস্যা হয়ে যাবে। আপনি তানিকে নিয়ে যান আমি অন্য দিন যাবো।

— ওকে! তুমি যখন যেতে পারবে না তখন আর কি করার। তানিয়া চলো তাহলে আমরা যাই?

তানিয়া মিমির দিকে তাকিয়ে বলল–

— সাবধানে যাবি কিন্তু, হ্যাঁ?

মিমি মুচকি হেসে মাথা নাড়ায়। মেঘ বিদায় নিয়ে তানিয়াকে নিয়ে গাড়িতে করে চলে যায়। মিমিও রিকশা ধরে নতুন টিউশনির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
——–

পাঁচ তলা বিল্ডিং এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে মিমি। সে ঠিকানায় আর একবার চোখ বুলিয়ে নিল। দারোয়ান মিমিকে জিজ্ঞেস করলেন–

— আপনি কার সাথে দেখা করতে এসেছেন?

দারোয়ানের কথায় মিমি চোখ তুলে তাকালো। বয়স্ক একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। মিমি বলল–

— আমি তিন তলার একটা বাচ্চাকে পড়াতে এসেছি চাচা। বাচ্চার মায়ের নাম ঈশানি।

দারোয়ান বোধ হয় চিনলেন। তিনি বললেন–

— আপনি এখানে দাঁড়ান আমি শুনে আসছি।

মিমি মাথা দোলাল। আশে পাশে দেখতে লাগলো। এই বিল্ডিং এর পাশে আরো বিল্ডিং আছে। এখানে নিশ্চই ভালো পরিবারের লোকজন থাকে! তার ভাবনার মাঝেই দারোয়ান ফিরে আসলেন। হেসে বললেন–

— ঈশানি ম্যাডাম আপনাকে ওপরে যেতে বলেছে।

মিমি মাথা নাড়িয়ে বলল–

— ধন্যবাদ চাচা।

মিমি তিন তলার দিকে চললো। সেখানে আগে থেকেই দরজা খোলা ছিল এবং ঈশানি দাঁড়িয়ে ছিল। মিমি তাকে সালাম দিল। সে হাসি মুখে সালামের জবাব দিয়ে বলল–

— এসো ভেতরে এসো।

মিমি ভেতরে প্রবেশ করলো। ফ্লাটটা খুবই সুন্দর করে সাজানো, দামি আসবাব পত্র দিয়ে। ঈশানি একটা রুম দেখিয়ে দিয়ে বলল–

— ওই যে ওটা নিশানের রুম। ও ওখানে আছে। তুমি আগে ওকে পড়িয়ে নাও তারপর নাহয় আমরা আলাপ করবো?

মিমি মুচকি হেসে বলল–

— ঠিক আছে।

মিমি নিশানের রুমের দিকে অগ্রসর হলো। রুমে প্রবেশ করে দেখল চেয়ারে পরিপাটি হয়ে বসে আছে পাঁচ থেকে ছয় বছরের একটা বাচ্চা ছেলে। সে খাতায় কিছু একটা করছে। মিমি এগিয়ে গিয়ে চেয়ারে বসলো। ছেলেটা তাকে দেখে চোখ গোল গোল করে তাকালো। মিমির হাসি পেলেও তা চেপে রাখলো। বলল–

— তোমার নাম কি?

ছেলেটা মুখ কুঁচকে বলল–

— তোমাকে বলবো কেন? বড় মামা বলেছে অপরিচিত কাউকে নাম বলা যাবে না। তুমি যদি ছেলে ধরা হও তাহলে? আমি বলবো না।

মিমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকাল। পুচকে ভালোই সেয়ানা। ভাবল কে সেই মহান বড় মামা? হাসার চেষ্টা করে বলল–

— আচ্ছা তাহলে আমরা আগে পরিচিত হয়ে নিই? আমি যদি আমার নাম বলি তাহলে তোমার নাম বলবে তো?

নিশান মাথা হেলিয়ে বলল–

— হ্যাঁ বলবো। বলো তোমার নাম কি?

— আমার নাম মারিশা আহমেদ মিমি। আমি অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ি। আর আমি তোমাকে পড়াতে এসেছি। এবার তুমি বলো?

নিশান হেলতে দুলতে বলল–

— আমার নাম নিশান চোধুরী। আমি ক্লাস ওয়ানে পড়ি। আর আমি তোমার কাছে একদম পড়বো না। তুমি চলে যাও। আমার পড়তে একদম ভালো লাগে না। পড়ালেখা পঁচা।

মিমি পড়েছে মহা জ্বালায়। এ ছেলে তো বেশ দুষ্টু! একে বাগে আনতে গেলে অনেক বেগ পেতে হবে। মিমিকে ঠান্ডা মাথায় এগিয়ে যেতে হবে। সে ফোস করে শ্বাস ফেলে বলল–

— আচ্ছা পড়তে হবে না। আমরা গল্প করবো, খেলবো, ছবি আঁকবো। ঠিক আছে?

— তাহলে তুমি থাকতে পারো। আগে যে কাকুটা আসতো সে একদম ভালো না। শুধু আমাকে পড়তে বলতো। আচ্ছা আমি তোমাকে কি বলে ডাকবো?

— তোমার যেটা ইচ্ছে সেটা বলে ডাকো। আমার কোনো সমস্যা নেই।

নিশান গভীর ভাবে কিছু ভাবার ভঙ্গি করে বলল–

— উম্ তুমি না দেখতে একদম মিষ্টির মতো। আমি তোমাকে রসমালাই বলে ডাকবো। রসমালাই আমার খুব ভালো লাগে। বড় মামা আমাকে এনে দেয় সব সময়। ছোট মামাও দেয়।

মিমির চোখ যেন বেরিয়ে আসবে! সে মিষ্টির মতো দেখতে! এই ছেলে বলে কি! জীবনে প্রথম সে এমন কথা শুনলো। মিমি নিজেকে সামলে মুচকি হেসে সম্মতি দিল। সে নিশানকে আর পড়ার কথা বললো না। বিভিন্ন গল্প বললো, খাতায় ছবি একে দিল। নিশানও খুব খুশি হলো। সময় শেষে নিশান দৌড়ে মায়ের কাছে চলে গেল। মিমিও পেছন পেছন বের হয়ে আসলো। নিশান ঈশানির কোলে উঠে বলল–

— মাম্মা রসমালাই না খুব ভালো। আমাকে গল্প বলেছে। ছবি আঁকাও শিখিয়েছে। তাকে প্রতিদিন আসতে বলবে। আমার তাকে খুব পছন্দ হয়েছে।

ঈশানি অবাক হয়ে বলল–

— রসমালাই!

— হ্যাঁ! আমি ওনার নাম রসমালাই দিয়েছি। ভালো হয়েছে না?

ঈশানি মাথা নাড়িয়ে নিশানকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে বলল–

— তুমি আর তোমার নাম! আজব নাম হয়েছে।

নিশান কিছু না বলে এক গাল হেসে দৌড়ে আবার খেলতে চলে যায়।

চলবে?
{ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। }