হয়ত তোমারই জন্য পর্ব-০৩

0
752

#হয়ত_তোমারই_জন্য
ঐশিতা সেন
পর্বঃ ০৩

তখন আকাশঃ টিয়া একটু সালাদের প্লেটটা এগিয়ে দে না বোন।
টিয়াঃ কেন??তোমার হাত নেই??যে হাত দিয়ে নীলাদির গলায় মালা দিতে পারো,সিঁথিতে সিঁদুর দিতে পারো সেই হাত দিয়ে সালাদের প্লেট নিতে পারো না??এগিয়ে দেওয়া লাগে??আমি দিতে পারব না।লজ্জা করে না আমার দিভাইকে ঠকিয়ে দুজনে গোগ্রাসে গিলতে??
মেঘলাঃ আহ টিয়ু এসব কি হচ্ছে(চোখ গরম করে) বড়দের সাথে বুঝি এভাবে কথা বলতে হয়।
রিয়াঃ ও ভুল কি বলেছে??ঠিকই তো বলেছে।
মেঘলাঃ সাট আপ রিয়ু।তোমরা দুজন অভদ্রের মতো কথা বলছ কেন?তোমাদের আমি এই শিক্ষা দিয়েছি?বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় ভুলে গেল।
বর্ষণঃ বড়রা যদি নিজেদের মর্যদা রাখতে না পারে তবে ছোটরা কি করবে??
মেঘলাঃ দাভাই প্লিজ..তুই ওদের আর উস্কাস না।আকাশদা নীলু সরি,প্লিজ ওদের কথায় কিছু মনে করো না।ওরা ছোট মানুষ ভুলে বলে ফেলেছে।
নীলাঃ ইটস ওকে মেঘু।আমরা কিছু মনে করি নি।
আকাশঃ ওরা ছোট হলেও ভুল কিছু বলে নি।(মলিন হেসে)
তারপর খাবার ছেড়ে উঠে পরে।চলে যেতে চাইলে মেঘলা হাত ধরে আটকায় আর টিয়া রিয়ার দিকে চোখ গরম করে তাকায়।
টিয়া-রিয়াঃ সরি দিভাই(মাথা নিচু করে)
মেঘলাঃ আমাকে না যাকে কটু কথা শুনিয়েছিস তাকে বল।
রিয়া-টিয়াঃ সরি আকাশ ভাই।
আকাশঃ ইটস ওকে।আমি কিছু মনে করি নি।
মেঘলাঃ তাহলে চুপচাপ বসে খাও(আদেশের সুরে)
আকাশ আর কিছু না বলে খেতে বসে পড়ল।মেঘলা সালাদ এগিয়ে দিল।
বর্ষণঃ মেঘু শ্রাবণ আর বর্ষুকে এত সকাল সকাল কেন ডাকলি??
মেঘলাঃ কাল বাদ পরশু আকাশদা আর নীলুর বউভাত এত্ত এত্ত কাজ যে পরে আছে তা কে করবে শুনি??ওদের হেল্প লাগবে না বুঝি?বউভাতের আগে ওদের আর ছাড়ছি না।
মেঘলার কথা শুনে আকাশের গলায় খাবার আটকে গেল।করুণ চোখে মেঘলার দিকে তাকাল।
বৃষ্টি+টিয়া+রিয়াঃ ওদের বৌভাত!!হবে??
মেঘলাঃ এত অবাক হচ্ছো কেন?নিয়ম অনুসারে তো পরশুই হওয়ার কথা।
বর্ষণঃ তোর কি মনে হয় মি.সেন আর আংকেল মেনে নেবেন?
রিয়াঃ আর গন্ডগোল লাগানোর জন্য তো মাই মাতাজি আছেনই।
মেঘলাঃ আমি বললে আংকেল ঠিকই মেনে নেবেন।আর আংকেলের ছেলের বউভাতের অনুষ্ঠান,এখানে মি. সেন আর মিসেস. সেনের কিছু বলার আছে বলে তো আমার মনে হচ্ছে না।
আকাশঃ পরশু কোনো বউভাতের অনুষ্ঠান হবে না।
মেঘলাঃ তুমি কবে করতে চাও?
আকাশঃ দেখ মেঘপ..মেঘলা আমি চাই না বউভাতের অনুষ্ঠান নিয়ে আবার কোনো ঝামেলা হউক।এসব রিচুয়াল-টিচুয়াল আমার ভালো লাগছে না।আর কোনো অনুষ্ঠান হবে না।
মেঘলাঃ হাহ..বললেই হলো।লুকিয়ে বিয়ে করেছ এখন বউভাতও করতে চাইছ না মামু বাড়ির আবদার যেন।পরশু বউভাত হচ্ছে, দ্যাটস ফাইনাল।আমি আর কিচ্ছু শুনতে চাই না।দাভাই,শ্রাবণদা তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া সেড়ে কাজে লেগে পড়।আর আলু আই মিন নীলু,বস্তা,বিষ্টা,রিয়ু-টিয়ু খেয়ে রেডি থেকো শপিংয়ে যাব।
নীলা,বর্ষা আর বৃষ্টি রাগী দৃষ্টিতে মেঘলার দিকে তাকাল।মেঘলা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে খাওয়া শেষ করে রুমে গেল।
নীলা+বৃষ্টি+বর্ষাঃ এ কাবি নেহি শোধরেগা।
তিনজনই একসাথে বলে উঠল।
.
🌿
মেঘলা,বর্ষা,বৃষ্টি,নীলা আর টিয়া-রিয়া শপিংয়ে গিয়ে নীলার জন্য বেনারসিসহ বাকি সব প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে আনল।
🌿
আজ নীলাকাশের বউভাত।পার্লারের লোক এসে নীলাকে সাজিয়ে দিয়ে গেছে।সাথে বৃষ্টি,বর্ষা,রিয়া আর টিয়াও সেজেছে।মেঘলা পার্লারের লোকের কাছে সাজে নি।
নীলা একটা লাল পাড়ের নীল বেনারসি পড়েছে,মাথায় লাল-নীল মিশ্রিত ওড়না,সাথে ম্যাচিং টিপ আর অর্নামেন্টস।হার্ড মেকাপ,ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক।সবমিলিয়ে বউ বউ লাগছে।
আকাশ আজ নীল পাঞ্জাবী পড়েছে উপরে লাল কটি।নীলার সাথে ম্যাচ করে।আকাশকে আজ হিরো হিরো লাগছে।
মেঘলা মিষ্টি কালারে লেহেঙ্গা পড়েছে,হাতে ম্যাচিং চুড়ি,কানে আর গলায় ম্যাচিং অর্নামেন্টস।কপালে ম্যাচিং টিপ,ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক,মুখে হালকা মেকাপ।সবমিলিয়ে মেঘলাকে খুব সুন্দর লাগছে।
বৃষ্টি সবুজ,বর্ষা কালো,রিয়া-টিয়া কফি কালারের লেহেঙ্গা পড়েছে।ওদেরও সুন্দর লাগছে।
বর্ষণ কালো আর শ্রাবণ সবুজ রঙের পাঞ্জাবি পড়েছে।ওদেরও হিরো অপেক্ষা কম লাগছে না।
আকাশ আর নীলাকে পাশাপাশি দুটো চেয়ারে বসিয়ে দেওয়া হয়।কিছু বাদে বাদে অতিথিরা এসে ওদের গিফট দিয়ে আশীর্বাদ করে যাচ্ছে।আর সমবয়সীরা ছবি তুলছে।আকাশের মুখে বিরক্তির ভাব।
মেঘলা,বর্ষা,বৃষ্টি গল্প করছে।তখন শুনতে পায়..
—ওই দেখ আকাশের এই মেয়েটার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।
—ও মা তাই নাকি।কিন্তু এই মেয়ে দেখি আকাশের বউভাতের অনুষ্ঠানে এসেছে।মেয়ের কি লজ্জা শরম কিছু নেই নাকি।যার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল তার বিয়েতেই হাসাহাসি করছে।নিলর্জ্জ মেয়ে মানুষ।
—শুধু নির্লজ্জ নাকি,অপয়া বল অপয়া।জন্মের পরপর নাকি মাকে খেয়েছে।এখন আবার লগ্নভ্রষ্টা হয়েছে তাও দেখ দিব্যি আছে।
এসব কথা বর্ষণের কানে যেতেই বর্ষণ রেগে যায়।বর্ষণ হাত মুষ্টিবদ্ধ করে এগিয়ে যায় উনাদের কিছু বলার জন্য তখন মেঘলা আটকায়।
বর্ষণঃ মেঘু ছাড় আমাকে।
মেঘলাঃ প্লিজ দাভাই কোনো সিনক্রিয়েট করো না।
বর্ষণঃ ওরা তোকে কি বলছে শুনতে পারছিস।আকাশ যে এতবড় একটা কাণ্ড ঘটাল, কই ওকে তো কেউ কিছু বলছে না। তোর দোষ কোথায়? তোকে কেন কথা শুনাচ্ছে?
মেঘলাঃ দাভাই সমাজে চলতে হলে এরকম অনেক কথা শুনতে হবে।এসব গায়ে মাখালে চলবে না।এগুলো এক কান দিয়ে ঢোকাও আরেক কান দিয়ে বের করো।এসব কথায় আমার কিছু যায় আসে না।সো প্লিজ শান্ত হও।ওরা এসব বলে নিজেদের মুখে ব্যথা তুলছে আমাদের কি?তুমি অনুষ্ঠান উপভোগ কর।
বর্ষণঃ আর অনুষ্ঠান।শুধুমাত্র তোর জন্য এটেন্ট করছি নইলে এই বিশ্বাস ঘাতকের বিয়ের অনুষ্ঠানে কখনো আসতাম না।
বলে অন্যদিকে চলে গেল।
মেঘলা দীর্ঘশ্বাস ফেলেঃ এই সহজ ব্যপারটাকে সবাই কেন যে এত জটিল করছে।যার সাথে যার জুট বাঁধা বিয়ে তো তার সাথেই হবে।

বিয়েতে আকাশদের আরো কিছু ভালো বন্ধু এসেছে।ওরা আকাশ আর নীলার সাথে কথা বলছে আর মাঝে নীলাকে লজ্জায় ফেলছে।নীলা শুধু মুচকি হাসছে।এইসব কিছুই আকাশের বিরক্ত লাগছে কিন্তু কিচ্ছু বলতে পারছে না।
বিহানঃ(আকাশের ফ্রেন্ড) আরে অনুষ্ঠান কেমন যেন পানসে পানসে লাগছে।
হৃদয়ঃ হ্যাঁ রে কোনো মজাই আসছে না।
আকাশঃ মজা আসছে না তো এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন খেয়ে দেয়ে বাড়ি যা।(দাঁতে দাঁত চেপে)
কিশোরঃ আরে ভাই রাগ করছিস কেন?আমরা তো মজা করছি।(দাঁত কেলিয়ে)
হৃদয়ঃ এক কাজ করলে কেমন হয়।
বিহানঃ কি কাজ।
হৃদয়ঃ এখন যদি কাপল ডান্স হয় তবেই তো পার্টিতে মজা আসবে।
আকাশঃ একদম না।কোনো কাপল ডান্স হবে না।
মেঘলাঃ কেন হবে না(আকাশদের দিকে আসছে আসছে)সত্যিই তো কাপল ডান্স হলে মন্দ হয় না কি বলিস তোরা (বর্ষা আর বৃষ্টিকে)
দুজনে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে মেঘলার দিকে তাকাল।
মেঘলাঃ ভাইয়া আপনা বরং ডান্সের এনাউন্স করুন।প্রথমে আকাশদা আর নীলা ডান্স করবে।
বিহানঃ না এভাবে না।ডান্স ফ্লোরে একসাথে কয়েক কাপল ডান্স করবে।দুইটা Bowl এ কিছু সংখ্যাযুক্ত টোকন থাকবে।একটা ছেলেদের জন্য আরেকটা মেয়েদের।দুইদলের প্রত্যেকে একটা করে টোকন উঠাবে।যার সাথে যার নাম্বার মিলে যাবে তারাই কাপল।আর হ্যাঁ সবার মুখে মাস্ক থাকবে যাতে কেউ কাউকে না চিনে।
মেঘলাঃ ওকে যেমনটা আপনাদের ভালো মনে হয়।
বিহানরা সব রেডি করল।একে একে অনেকেই টোকন উঠাল।মেঘলা জোর করায় আকাশ আর নীলাও দুইটা টোকন উঠায়।
মেঘলাঃ তোরা দাঁড়িয়ে আছিস কেন?যা টোকন উঠা।
বৃষ্টিঃ এই ঢং ভালো লাগছে না।তোর ইচ্ছা থাকলে তুই যা।
যে বিয়েটাই মানতে পারলাম না সে বিয়েতে ডান্স করব।হাহ(বিড়বিড় করে)
বর্ষাঃ তোর কথায় শুধু অনুষ্ঠানে পার্টিসিপ্যান্ট করছি এখন ডান্স টান্স পারব না।
মেঘলাঃ ওকে এজ ইউ উইস।আমি ভেবেছিলাম তোরা ডান্স করলে আমি করব।কিন্তু তোরা যখন করতে চাস না তখন আমিও করব না।আমার কত দিনের আশা ছিল নীলার বিয়েতে নেচে স্টেজ ভাঙব বাট তোরা(দুঃখী ফেস বানিয়ে)
বৃষ্টিঃ হয়েছে আর ইমোশনাল ড্রামা করত হবে না।আমরা ডান্স করব।
বর্ষাঃ তুই আর স্টেজ ভাঙবি।হাহ ওজনই তো মনে হয় ৪০হবে না।
মেঘলাঃ ফালতু বকিস না তো।তোকে কেউ জিজ্ঞেস করে নি আমার ওজন কত।আর আমার ওজন ৪০+ হবে আমি তোর মতো শুটকি নাকি।
বর্ষাঃ মেঘুউ…
বৃষ্টিঃ দুজন অফ যা।এখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঝগড়া করবি নাকি।
মেঘলাঃ আবে রায়বাঘিনী ননদিনী বলে কথা বউদিকে একটু জ্বালাবো না।তুই যা তোর বউদিকে জ্বালা।
বর্ষাঃ তুই যদি আমার দাভাইকে ভালোবাসতি তবে আজ হয়ত তুই আমার বউদি হতি।(বিড়বিড় করে)
মেঘলাঃ কি বিড়বিড় করছিস।
বর্ষাঃ আব ক..কিছু না।চল টোকন উঠাই।
তিনজনই টোকন উঠাল।
একটু পর ডান্স শুরু হয়ে গেল।আকাশের সাথে নীলার,বর্ষার সাথে বর্ষণের,শ্রাবণের সাথে বৃষ্টির জুটি হয়েছে।আর মেঘলার সাথে এক অজ্ঞাত পুরুষের।সবার মুখে মাস্ক থাকায় কেউ কাউকে চিনতে পারছে না।
মিউজিক অন হলো…

Saso ko jineka isara mil geya..
Duba me tuj me to kinara mil geya…
Tu har lamhaaaa.. khamosiya..
Tu dil tuhi jan meri….
Na tenu samjau akhi…
Na tere bin lagda ji..
Na tenu samjau aki..
Na tere bin lag da ji…
Tu ki jane piyarrrr mera..
Me koru intejarrrr tera..
Tu dil tuhi jan meri..
…………
Husdin to cupcap rehe..
Tuje Jis din kuch na kehe..
Na sune me hu bancuka jine ki ek baja..
Is bat ko kudse tu na cupaaa…
Khamosiyaaa teri meri khamusiya….
Khamusiyaaaa lepti huyi khamusiya…
…………………….
…………………….
(বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নেবেন😅)
পুরো গানটাই কেউ ড্রান্সের প্রতিটি স্টেপের সাথে সাথে মেঘলার কানে রিপিট করল।লোকটির কণ্ঠে গানটা শুনে মেঘলার হৃদয়ে প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেল।
মেঘলার পার্টনারকে মেঘলার খুব পরিচিত লাগল।মনে হচ্ছিস খুব কাছের কেউ।কিন্তু কে সেটা বুঝতে পারছিল না।মুখে মাস্ক থাকায় লোকটার চেহারাও দেখতে পারছিল না।
গান শেষে স্টেজ থেকে নেমে মেঘলা চারপাশে লোকটিকে খুঁজল কিন্তু পেল না।
বৃষ্টিঃ কাকে খুঁজছিস??
মেঘলাঃ কা..কাউকে না।
বর্ষাঃ তাহলে এদিক ওদিক তাকাচ্ছিস কেন?
নীলাঃ হয়ত খুব কাছের কাউকে খুঁজছে।
মেঘলা অবাক হয়ে নীলার দিকে তাকাল।
বৃষ্টিঃ প্লিজ তুই মাঝখানে কথা বলিস না।তোকে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করছে না(বিরক্তি নিয়ে)
মেঘলা কিছু না বলে নিজের রুমে গেল।ধপ করে বিছানায় বসল।
মেঘলাঃ আমার কেন লোকটাকে এত চেনা চেনা মনে হচ্ছিল?কে এই লোক?আর এত তাড়াতাড়ি চলে গেল কোথায়?উফ কিচ্ছু বোঝতে পারছি না(হাত দিয়ে মাথা চেপে)
তখন মেঘলার নজর গেল ড্রেসিং টেবিলের সাথে আটকানো একটা চিরকুটের উপর।মেঘলা তাড়াতাড়ি ড্রেসিং টেবিলের কাছে গিয়ে চিরকুটটি নিল।চিরকুটটি খুলে পড়তে লাগল।চিরকুটের লেখা পড়ে মেঘলা হতবাক হয়ে গেল।কারণ চিরকুটটিতে ছিল..
(চলবে)