হয়ত তোমারই জন্য পর্ব-০৪

0
769

#হয়ত_তোমারই_জন্য
ঐশিতা সেন
পর্বঃ ০৪

“I’m back.Be ready for tolerating my torture.
There is a pendant for you on the dressing table. Never keep it separate from yourself. Always keep it with you.
And don’t try in vain to find out who I am. I’ll catch you at the right time.
Ever,
Someone close to you. (Find out if you can. Open Challenge for You)”

চিরকুট পড়ে মেঘলা স্তব্ধ।ভাবতে থাকে কে এই অজ্ঞাত লোক।আর পেন্ডেন্ট..
মনে পড়তেই টেবিলের উপর রাখা পেন্ডেন্টের দিকে নজর গেল।মেঘলা পেন্ডেন্টটা হাতে নিল।পেন্ডেন্টটা খুব সুন্দর।আকর্ষণীয় কারুকার্য করা।পেন্ডেন্টে ছোট করে M লেটারটি খোদাই করা।
মেঘলাঃ এই পেন্ডেন্টটা দেওয়ার মানে কি? আর M দ্বারা কি মেঘলা বোঝায় নাকি..এই লোকটা কে?আমার খুব কাছের কেউ!কাছের কেউ দ্বারা কি বোঝাতে চাইছে?সঠিক সময়ে নিজেই ধরা দেবে??সঠিক সময়টা কবে আসবে?ও গড আমি পাগল হয়ে যাবো।আমি নিশ্চিত এই চিরকুটটা আর পেন্ডেন্ট ডান্স ফ্লোরের লোকটাই রেখেছে।এ লোকটা কোথায় গায়েব হয়ে গেল?আর নীলা..নীলা তখন ওই কথাটি বলল কেন??(ভ্রু কোচকে)
তখন ওর ফোনে একটা মেসেজ এলো।মেসেজ ওপেন করতেই তব্ধা বনে গেল।মেসেজটি ছিল..
“মিস PT আমাকে নিয়ে এতো ভাবছ কেন বল তো??তুমি আমাকে স্মরণ করায় আমার বারবার হিচকি উঠছে তো।এবার অন্তত আমার জন্য হলেও আমাকে নিয়ে ভাবা বন্ধ করো।বললাম তো সঠিক সময়ে সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে।তাই এখন এসব ভেবে নিজের রাতের ঘুম নষ্ট করো না।নইলে আবার মুখে পিম্পল দেখা দেবে।দেখো তুমি পুরোটাই আমার সম্পত্তি আর আমি নিজের সম্পত্তি কাউকে হস্তক্ষেপ করি না সো পিম্পলের হাতে যে তোমাকে হস্তক্ষেপ করব সেটা ভুলেও ভেবো না।পিম্পলের যেন এতটা সাহস না হয় যে তোমাকে স্পর্শ করে।তুমি তাকে এই সুযোগটা দেওয়ার চেষ্টাও করো না।এখন বেশি না ভেবে ঘুমাও তো।ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে নাহয় আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখ।
Good night dear PT.
Love you.
ইতি
তোমার খুব কাছের কেউ।”

মেঘলাঃ এইটা কি ছিল।এই লোকটা কি আমাকে এখন দেখতে পাচ্ছে?আমার রুমে কোনো সিসি ক্যামেরা লাগায় নি তো?
ভেবেই সারারুম তন্নতন্ন করে খোঁজতে লাগল।না পেয়ে অবশেষে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় ধপ করে বসে পড়ল।
তখন আবার মেসেজ এলো।
“একটা মেয়ের রুমে সিসি ক্যামেরা লাগাব এতটাও নিকৃষ্ট নই আমি।সো নিশ্চিত থাকো আমি সিসি ক্যামেরা লাগাই নি।আমি তোমাকে মনের চোখ দিয়ে দেখতে পারছি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে না।আর সবার জীবনে এমন কিছু মানুষ থাকে যাদের প্রতিটা পদক্ষেপ চোখ বন্ধ করেও বলে দেওয়া যায়।আর আমার জীবনে তুমি সেই রকমই একজন।যার প্রতিটা পদক্ষেপ আমি চোখ বন্ধ করেও বলে দিতে পারি।
আর বললাম না নিজের মাথাটা বেশি না খাটাতে।কেন নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো বল তো।এত পরিশ্রম করে লাভ নেই আমাকে খুঁজে পাবে না।তাই নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমাও।
গুড নাইট।
লাভ ইউ।”
মেঘলাঃ এ্যাঁ..লোকটা বলে কি?চোখ বন্ধ করে আমার প্রতিটি পদক্ষেপ বলে দিতে পারে।যতসব ফিল্মি ডায়ালগ।হাহ।কিন্তু এটাও ঠিক সিসি ক্যামেরা লাগায় নি অথচ আমি কি করছি না করছি তা জানে কি করে।এক এক মিনিট এক এক আমি এই নাম্বারে কল দিয়ে দেখি তো।
ভেবেই মেঘলা নাম্বারটাতে কল দিল।
অপর পাশ থেকে একজন ভদ্রমহিলা বলে উঠলেনঃ
“কাঙ্ক্ষিত নাম্বারটিতে এই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না।একটু পরে আবার ডায়েল করুন”
আবার ইংরেজিতেও সেইম কথাটা রিপিট করল।
মেঘলাঃ নাম্বারটা তো বন্ধ বলছে।এখন কি করি??
মেঘলা কাউকে কল করে এই নাম্বারটার ডিটেইলস বের করতে বলল।
কিছু বাদে একজন কল করে জানাল নাম্বারটি প্রাইভেট তাই কোনো ইনফরমেশন পাওয়া যায় নি।
মেঘলাঃ ধেৎ এখন কি করে এই লোকটা সম্পর্কে জানব?(বিরক্তি নিয়ে)
তখন আমার সেইম নাম্বার থেকে এসএমএস আসে।
“উফ তুমি এত অবাধ্য কেন বল তো?বললাম না শুয়ে পড়তে কথাই শুনছ না।যতদিন না আমি নিজে থেকে ধরা দেব তুমি আমাকে খুঁজে বের করতে পারবে না মিস PT.আমার কথা না শুনলে শাস্তি পাবে।তাই চুপচাপ শুয়ে পড়।
Good night. Have a sweet dream.
Love you.”
মেঘলা তৎক্ষনাৎ নাম্বারটিতে কল দিল।বাট নাম্বারটি আবারও বন্ধ বলছে।
মেঘলাঃ Have a sweet dream.. বলেই খালাস।আমার চোখের ঘুম কেড়ে নিয়ে Have a sweet dream(ব্যঙ্গ করে)তুই কে সেই চিন্তায় আমার ঘুম আসলেই হয়।নাম্বারটিও বন্ধ বলছে।
দুর আমি এসব ভেবে রাতের ঘুম নষ্ট করছি কেন?এখন আর কিছু না ভেবে ঘুমাই।মাথাটা ফ্রেস রাখতে হবে।কালকে দেখব এই ভদ্রলোকটি কে।
ভেবে চেঞ্জ করে ফ্রেস হয়ে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।আজ সারাদিন অনুষ্টানের জন্য অনেক ধকল গেছে তাই বিছানায় শুতেই ঘুম এসে যায়।

গভীর রাতে মেঘলার নিজের গলায় ঠান্ডা কিছু অনুভব করে।ঘুমটা হালকা হয়ে আসে।কিন্তু চেয়েও চোখ খুলতে পারে না।মনে হয় কেউ যেন আঠা দিয়ে চোখের পাতা জোড়া লাগিয়ে দিয়েছে।কিছুক্ষণ পর কপালে কিছুর ছোঁয়া অনুভব করে।একটু পর মনে হয় ওর মুখে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে।তাই জোর করে চোখ দুটি খুলে।ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে।কিন্তু আশেপাশে কাউকে দেখতে পায় না।মুখে হাত দিয়ে পানির ফোঁটা উপলব্ধি করে।বিছানার পাশের টেবিল ল্যাম্প অন করে।রুমে কারো উপস্থিতি লক্ষ্য গোচর হয় না।তাই বারান্দায় যায়,বাইরের দিকে তাকায়।দেখতে পায় ব্ল্যাক হুন্ডি পরা একটা লোক বাসার গেইট দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।মেঘলা তাড়াতাড়ি নিচে যায়।গেইট খুলে বাইরে বের হয়ে তাকায় কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না।
মেঘলাঃ এটা কি হলো?কোথায় গেল লোকটা?আর আমার রুমেই বা এলো কি করে?গেইট খোলা কেন?দারোয়ান আংকেল কোথায়?
এসব উত্তাল পাতাল ভাবতে ভাবতে মেঘলা রুমে যায়।বাকি রাতটুকু আর ঘুমায় নি।এই অজানা লোকটার চিন্তায় বিভোর ছিল।

পরদিন সকালে মেঘলারা সবাই নাস্তা করছে।হঠাৎ নীলাঃ আরে বাহ মেঘু তোর পেন্ডেন্টটা তো খুব সুন্দর।কবে কিনলি এটা?আগে দেখি নি তো।কালকে অনুষ্টানেও তো পড়িস নি।
নীলার কথা শুনে মেঘলা হতভম্ব করে নিজের গলায় হাত দেয়।সাথে সাথে পেন্ডেন্টটা ওর হাতে আসে।
মেঘলাঃ এটা আমার গলায় এলো কি করে?আমি তো এটা ড্রেসিং টেবিলের উপরেই রেখে দিয়েছিলাম।এক মিনিট কাল রাতে ওই লোকটা..ওহ নো ওই লোকটা পড়িয়ে দিয়ে গেছে?(মনে মনে)
নীলাঃ কি রে কথা বলছিস না যে?
মেঘলাঃ আব না মানে আমি..
বলতে বলতে একটা কল এলো।
মেঘলাঃ আমার খাওয়া শেষ আমি যাই।
বলে এক মুহূর্ত দেরী না করে ফোন হাতে নিয়ে বাইরে চলে গেল।
মাঝে আরো চারদিন কেটে গেল।এই কদিনে এমন একটা দিন যায় নি যেদিন ওই অজ্ঞাত লোকটি মেঘলা এসএমএস দেয় নি।প্রতিদিনই এসএমএস দিত।কিন্তু মেঘলা এসএমএস করলে রিপ্লাই দিত না।এমনিকি ফোন দিলেও নাম্বারটা বন্ধ দেখাত।
সবাই ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসেছে।হঠাৎ মেঘলা এমন একটা কথা বলল যা শুনে সবাই অবাক না হয়ে পারল না।
মেঘলাঃ….
(চলবে)