হয়ত তোমারই জন্য পর্ব-০৫

0
694

#হয়ত_তোমারই_জন্য
ঐশিতা সেন
পর্বঃ ৫(বোনাস পার্ট)

মেঘলাঃ উহু উহু(একটা কেশে)দাভাই আমি কিছু বলতে চাই।
বর্ষণঃ বল।
মেঘলাঃ বলছিলাম যে আমি না একটা চাকরি করতে চাই।আজ একটা কোম্পানিতে জবের ইন্টারভিউ আছে।
বর্ষণঃ তু
বর্ষণ কথা শেষ করার আগেই
দিগ্বিজয়ঃ এটা কি বলছ তুমি যেখানে আমার নিজের একটা কোম্পানি আছে সেখানে তুমি অন্যত্র চাকরি করবে!সেখানে আমি,তোমার দাদা প্রতিনিয়তই কাউকে না কাউকে চাকরী দিই,কারো না কারো ইন্টারভিউ নিই সেখানে তুমি অন্যের অধীনে চাকরী করবে,অন্যের কাছে জব ইন্টারভিউ দিবে?তোমার কিসের অভাব যে চাকরি করার দরকার পড়েছে?আমি কি তোমার খাওয়া পড়ার কোনো কমতি রেখেছি?তোমার হিসাবে আমি নাহয় রাখতেই পারি কিন্তু তোমার দাদা নিশ্চয়ই রাখবে না।তাহলে কেন চাকরি করবে?তুমি আমাদের অফিসেও তো জয়েন করতে পারো।তাতে অন্তত কারো অধীনে কাজ করতে হবে না।
নাইয়াঃ একেকদিন একেক ঢং(মুখ বাঁকিয়ে)
আকাশঃ মেঘলা আমাদের কোম্পানি তো অনেক বড় তুই চাইলেই যেকোনো উচ্চপদে কাজ করতে পারিস।তুই সেই যোগ্যতাও রাখিস।তাহলে অন্যকোথাও কেন চাকরি করবি?
মেঘলাঃ সেটা তো তোমাদের বলা যাবে না আকাশদা।অন্য কোথাও চাকরী করার কারণ তো আছেই।অবশ্য কারণ জানলে হয়ত বাধা দিতে না(মনে মনে)
বৃষ্টিঃ মেঘু দাভাই কিন্তু ঠিক বলছে তোর অন্য কোথাও চাকরী করার কি দরকার তুই আমাদের কোম্পানিতে বসতে পারিস।
নীলাঃ মেঘু কোন কোম্পানিতে ইন্টারভিউ আছে??
মেঘলাঃ সানফ্লাওয়ার ইন্ডাস্ট্রিজ।
দিগ্বিজয়ঃ সে যেই কোম্পানি হোক না কেন তোমাকে অন্যত্র চাকরি করতে হবে না।আর লোকে যদি জানতে পারে আমার মেয়ে হয়ে তুমি অন্যত্র কোথাও চাকরী করছ তখন আমার সম্মানটা কোথায় থাকবে বলতে পারো?দেখ আমার সম্মান নিয়ে ছেলেখেলা করো না।সমাজে আমার একটা নাম আছে তোমার জন্য সেটা নষ্ট হোক তা আমি চাই না।
মেঘলাঃ তো এই হলো আসল কথা।আপনার সমস্যার কারণ এটা।ওকে নো প্রব্লেম আমি সলভ করে দিচ্ছি।আপনাকে তো কেউ বলে নি আমাকে নিজের মেয়ে বলে পরিচয় দিতে।এমনিতেও কজন জানে আমি আপনার মেয়ে।সো টেনশন নেওয়ার দরকার নেই।আমার মান সম্মান নষ্ট হবে না।আমিও কাউকে বলব না আপনি যে আমার বাবা।যদিও কাগজে কলমে আমার পিতার স্থানে আপনার নাম(তাচ্ছিল্যের সুরে)
দিগ্বিজয়ঃ মেঘলা…
আশিসঃ আহা দিগ্বিজয় মেয়েটা যদি অন্য কোথাও চাকরী করতে চায় করুক না।এক্সপেরিয়েন্স বাড়বে।পরে না হয় আমাদের কোম্পানিতে জয়েন করবে।
বর্ষণঃ অন্য কোথাও চাকরী করতে যদি তোর সমস্যা না হয় তবে যেখানে খুশি সেখানে করতে পারিস আমার কোনো সমস্যা নেই।(হাসি মুখে)আর এজন্য অন্য কাউকে তোর জবাবদিহি করতে হবে না।আফটার অল বর্তমানে তোর অভিভাবক তো আমিই।অবশ্য বিয়ের পর অন্য কেউ হবে।
—‘বিয়ের পর অন্য কেউ হবে’
কথাটা আকাশের কানে বারবার বাড়ি খায়।সব ঠিক থাকলে হয়ত আজ আকাশই মেঘলার অভিভাবক হতো।
ভেবে আকাশ দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
দিগ্বিজয়ঃ তুমি কি বলতে চাইছ বর্ষণ আমি কিন্তু এখনো বেঁচে আছি।
বর্ষণঃ সো হুয়াট।(নির্লিপ্ত ভাবে)
দিগ্বিজয়ঃ ব..
মেঘলাঃ আমার লেট হয়ে যাচ্ছে।আমি যাই।
বলে মেঘলা চলে গেল।
বর্ষণঃ আমারও শেষ।
আকাশঃ বর্ষণ..
নীলাঃ আকাশ আমাকে একটু হসপিটালে ড্রপ করে দিবে।
আকাশ একবার সবার দিকে তাকাল।তারপর আকাশঃ চল।
বৃষ্টিঃ এতদিন তো একাই যেতো।এখন দাভাইয়ের সাথে যেতে হবে নাকি?সবসময় চিপকে থাকে।অসহ্য(বিড়বিড় করে)
🍀
মেঘলাঃ মে আই কাম স্যার??
অফিসের বসঃ ইয়া শিওর।
মেঘলা রুমে ঢুকল।
বসঃ প্লিজ সিট।
মেঘলাঃ থ্যাংকস (বসতে বসতে)
বসঃ আপনার নাম??
মেঘলাঃ মেঘলা সেন।
বসঃ ইন্ডাস্ট্রিয়াল দিগ্বিজয় সেনের মেয়ে।
মেঘলা একটু চমকে উঠল।ভ্রূ কোচকে সামনের ব্যক্তির দিকে তাকাল।
বসঃ এখন এটা ভাবছেন তো আমি কি করে জানি??আমি আপনার ব্যাপারে অনেক কিছুই জানি যা হয়ত আপনি নিজেও জানেন না।(বাঁকা হেসে)
মেঘলাঃ মানে??
বসঃ এই MS এর পক্ষে কারো ব্যাপারে কোনো কিছুই জানা অসম্ভব নয়।যদি সেই ব্যক্তি তারই অফিসের কোনো স্টাফ হয়।
মেঘলাঃ কিন্তু আমি তো আপনার অফিসের স্টাফ নই।
এমএসঃ হতে কতক্ষণ??
মেঘলাঃ সে হতেই পারি কিন্তু হওয়ার আগে আমার সম্পর্কে জানার ইন্টারেস্ট জাগল কিভাবে সেটাই বোঝতে পারছি না।
এমএমঃ এমএস এর কোম্পানিতে যাকে তাকে নিশ্চয়ই নেওয়া হবে না।যাকে নেওয়া হবে তার সম্পর্কে আগে থেকে জেনেই নিশ্চয়ই নেওয়া হবে।তাই আমি আপনার এপ্লিকেশন পাওয়ার সাথে সাথেই বায়োডাটা চেক করেছি।
মেঘলাঃ কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে না আমার বায়োডাটা থেকে আপনি আমার সম্পর্কে জেনেছেন(মনে মনে)
এমএসঃ সেটা আপনার মনে হতেই পারে।
মেঘলাঃ আজ্ঞে..(চমকে উঠে)
এমএসঃ আব..না কিছু না।বলছিলাম যে আপনার বাবার তো অনেক বড় আর বিখ্যাত কোম্পানি আছে।তা সত্ত্বেও আপনি আমার কোম্পানিতে কেন কাজ করতে চাইছেন??
মেঘলাঃ একটু আগেই তো বললেন আমার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানেন যা হয়ত আমি নিজেও জানি না।তা এই তথ্যটা কি জানেন না??
এমএসঃ গুড কুয়েশ্চন।আপনার স্পিরিট আছে বলতে হবে।এমএসের পিএর তো একটু আধটু স্পিরিট থাকতেই হয়।পাল্টা প্রশ্ন করার ক্ষমতা থাকতেই হয়।
মেঘলাঃ সামান্য পিএ নির্বাচনে এতকিছু দেখেন বউ নির্বাচনে কি করবেন??
এমএসঃ কিছু বললেন??
মেঘলাঃ আব..না আপনাকে কিছু জিগ্যেস করেছিলাম??
এমএসঃ আমি বলেছি আপনার ব্যাপারে অনেক কিছুই জানি সবকিছুই জানি বলি নি।
মেঘলাঃ ওহ ইয়াহ রাইট।
এমএসঃ তো এবার বলুন এখানে কাজ করতে চাওয়ার কারণ??
মেঘলাঃ পার্সনাল কারণ।না বললে কি চাকরিটা হবে না।
এমএসঃ (মুচকি হেসে) না তেমন কোনো কথা নেই।আচ্ছা আপনি আসতে পারেন।আপনার জবটা কনর্ফামড।
মেঘলাঃ ইন্টারভিউ না নিয়েই??
এমএসঃ নেওয়া হয়ে গেছে।(বাঁকা হেসে) ইউ ক্যান গো নাও।কালকে যথাসময়ে চলে আসবেন।আর হ্যাঁ এসেই আমার সাথে দেখা করবেন।
মেঘলাঃ শিওর স্যার।
মেঘলা চলে গেল।মেঘলার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে এমএস ডেবিলমার্কা হাসি দিল।
🍀
রাতে মেঘলার ফোনে মেসেজ এলো..
“বাহ নতুন অফিস জয়েন করছ।ভালোই,স্বাবলম্বী হওয়াটাই ভালো।অন্তত আমি তো চাইই আমার PT স্বাবলম্বী হউক।
তবে ছেলে কলিগদের থেকে দুরে থাকবে।কোনো ছেলে কলিগদের সাথে যেন বেশি হাসাহাসি করতে না দেখি।আর তোমার বসের থেকে যতটুকু পারো দুরত্ব রেখে চলবে।ওই MS এর চোখ দেখলেই বোঝা যায় কতবড় লুচু।তাই সাবধানে থাকবে।”
মেসেজটা পড়েই মেঘলার মাথা গরম হয়ে গেল।রিপ্লাই দিল..
“আমার যা ইচ্ছা তাই করব।আপনি কে হ্যাঁ আমাকে অর্ডার করার সামনে আসার তো সাহস নেই আড়ালে থেকে অর্ডার করেন।ভীতু চাঁদ কোথাকার।
আমি একশ বার ছেলে কলিগদের সাথে হাসাহাসি করব।গল্পগুজব করব।আর আমার বসের থেকে দুরত্ব বজায় রেখে চলব না আরো চিপকে থাকব।দরকার পড়লে এই এমএসকেই বিয়ে করব।দেখি আপনি কি করতে পারেন”
রিপ্লাই দিয়েই ফোন বিছানায় ছুড়ে ফেলে গটগটিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে মাথায় পানি দিল।
কিছুবাদে মাথা মুছতে মুছতে বাইরে এসে বিছানায় বসল।তখন আবার মেসেজের টুংটাং শব্দে ফোন হাতে নিয়ে দেখে রিপ্লাই এসেছে।
মেঘলাঃ বাব্বা আজ প্রথমবার মনে হয় রিপ্লাই এলো।এতদিন তো শুধু নিজেই মেসেজ করত কোনো রিপ্লাই করত না।দেখি তো কি দিল…
“কাম ডাউন ডিয়ার।এত রাগ ভালো না।ক্রোধ মন্যুষের সর্বঘাতক শত্রু।অবশ্য রাগলে তোমাকে খুব সুন্দর লাগে মিস লাল মিরচি।
রাগের মাথায় যা বলেছ বলেছ।কিন্তু ভুলেও তা করার চেষ্টা করবে না।নইলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।অবশ্য আমি জানি তুমি ছেলেদের থেকে যথেষ্ট দুরত্ব বজায় রেখে চল।অবশ্য আকাশ আর শ্রাবণের ব্যাপার আলাদা।যাই হোক তুমি আমার কথা না শুনলে কি হবে তা বলব না।কিন্তু যা করব তার জন্য তুমি দায়ি থাকবে আমাকে দোষ দিতে পারবে না।
গুড নাইট লাল মিরচি।হ্যাভ আ সুইট ড্রিম।
লাভ ইউ।”
মেসেজটা পড়ে মেঘলা রাগে ফোনটাই বন্ধ করে ফেলে।তারপর কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে।
গভীর রাতে মেঘলা অনুভব করে কেউ ওকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।মেঘলা ঘুমটা হালকা হয়ে আসে।ওই ব্যক্তি আরো টাইট করে মেঘলাকে ধরে।এতে মেঘলা ঘুম ছুটে যায়।ঝটপট চোখ খুলে দেখতে পায়…
(চলবে)