হয়ত তোমারই জন্য পর্ব-০৬

0
733

#হয়ত_তোমারই_জন্য
ঐশিতা সেন
পর্বঃ ০৬

ঝটপট চোখ খুলে দেখতে পায় বৃষ্টিকে।বৃষ্টি মেঘলাকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।
মেঘলাঃ তুই এখানে??
বৃষ্টিঃ তুই কি মনে করেছিলি কে হতে পারে??
মেঘলাঃ অত শত ভাবি নি।কিন্তু তুই হঠাৎ এখানে??ভয় পাচ্ছিস??
বৃষ্টিঃ হ্যাঁ মানে না।মানে..
মেঘলাঃ হয়েছে আর মানে মানে করতে হবে না।নিশ্চয়ই হরর মুভি দেখছিলি।
বৃষ্টিঃ হুরর গোয়েন্দার মতো এতো প্রশ্ন করছিস না তো?নিজেকে সৌভাগ্যবতী মনে কর।
মেঘলাঃ কেন(চোখ ছোট ছোট করে)
বৃষ্টিঃ বাহ রে আমার বরের অধিকার বরের আগে তোকে দিলাম।
মেঘলাঃ মানে???(ভ্রূ কোচকে)
বৃষ্টিঃ এই যে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর অধিকার আমার বরের,আমি আমার বরের আগে তোকে দিচ্ছি।শোকার গুজার কর।(ভাব নিয়ে)
বৃষ্টির কথায় মেঘলা কিছুটা বিরক্ত বোধ করল।পাশ ফিরেঃ তোর বরের অধিকার তোর বরকেই দে।আমার চাই না।(কাঠকাঠ গলায়) তোর যেখানে ইচ্ছা যেভাবে ইচ্ছা ঘুমাতে পারিস আমার সমস্যা নেই।কিন্তু দয়া করে টেপ রেকর্ডিং অফ কর।আমার ঘুম পাচ্ছে।ঘুমাতে দে কাল সকালে আবার অফিস আছে।
বৃষ্টিঃ তোর কি আমাকে বেকার মনে হয়।আমারও সকালে অনেক কাজ থাকে।আমি তোর সাথে বকবক করতে আসি নি।
বলে আবার মেঘলার উপর হাত পা তুলে চোখ বন্ধ করল।মেঘলাও মুচকি হেসে ঘুমিয়ে পড়ল।
🌿
পরেরদিন সকালে..
মেঘলাঃ মে আই কাম..
এমএসঃ ইয়েস কাম।আপনার জন্যই অপেক্ষা করছি(মৃদু হেসে)
মেঘলা রুমে ঢুকলে..
এমএসঃ বসুন।
মেঘলা বসলে এমএস কাউকে ফোন দিয়ে আসতে বলল।কিছুক্ষণ পর একটি মেয়ে এলো।
এমএসঃ রিটা উনি মেঘলা আমার পিএ।উনাকে উনার কেবিনটা দেখিয়ে দিন।
রিটাঃ ওকে স্যার।মেম আসুন।
মেঘলা উঠে দাঁড়ালে এমএসঃ মিস এই ফাইলগুলো সাথে নিয়ে যান।আধঘন্টার মধ্যে কমপ্লিট করে জমা দেবেন।
মেঘলাঃ ওকে স্যার।
বলে মেঘলা ফাইলগুলো নিয়ে রিটার সাথে চলে গেল।
কেবিনে যেতে যেতে মেঘলা পুরো অফিসটা একবার স্ক্যান করে নিল।
মেঘলাঃ হ্যালো রিটা আমরা কি পরিচিত হতে পারি।
রিটাঃ ইয়াহ শিওর মেম।আমার নাম তো জানেনই রিটা ঘোষ।
তারপর রিটা মেঘলাকে নিজের সম্পর্কে কিছু বলল আর মেঘলাও।
মেঘলাঃ রিটা আমাদের বসে পুরো নামটা কি??আই মিন এমএস এর ফুল ফর্মটা কি??
রিটাঃ মেম আমি ঠিক জানি না।
মেঘলাঃ আমার তো মনে হচ্ছে আপনি অনেক দিন ধরেই এখানে আছেন অথচ স্যারে পুরো নাম জানেন না।স্যার কি নিজের নামটাও কাউকে জানান নি।
রিটাঃ আব আসলে আমি পুরোনো স্টার্ফ হলেও স্যার নিউ।আই মিন এই কোম্পানির আগের মালিকের থেকে স্যার বোধহয় এই কোম্পানি কিনে নিয়েছেন।
মেঘলাঃ অহ।আচ্ছা স্যারের ফ্যামিলি মেম্বারদের ব্যাপারে কিছু জানেন।
রিটাঃ না মেম।স্যারের সম্পর্কে এখানের কেউই তেমন কিছু জানেন না।স্যার নিজের সম্পর্কে কাউকে কিছু জানতে দিন নি।শুধু জানি কিছুদিন আগেই স্যার দেশে ফিরেছেন।
মেঘলাঃ অহ।স্য..
রিটাঃ মেম আমি এখন আসি বরং।
মেঘলাঃ ইয়াহ শিওর।
রিটা চলে গেল।মেঘলার কপালে চিন্তার ভাঁজ।
মেঘলাঃ রিটা এক্সটা কিছুই বলতে পারল না।আমি যা জানি তাই বলল।
কেবিনে বসে মেঘলার কর্মকাণ্ড এমএস দেখছে আর বাঁকা হাসছে।
এমএসঃ মিস মেঘলা আপনি এখানে যে উদ্দেশ্যে এসেছেন সেটা আদোও পূরণ হবে কি না আমি জানি না।(শয়তানি হেসে)
আধা ঘণ্টা পর..
মেঘলাঃ মে আ..
এমএসঃ ইয়েস কাম।
মেঘলাঃ বলার আগেই(মনে মনে)স্যার ফাইলগুলো কমপ্লিট।
এমএসঃ ওকে এখানে রেখে যান।
মেঘলাঃ ওকে স্যার।
মেঘলা ফাইল রেখে চলে গেল।
🌿
বর্ষণ আর বর্ষা একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে।
বর্ষাঃ যেতেই হবে।
বর্ষণঃ ইয়াহ,ইটস আর্জেন্ট।
বর্ষাঃ বাড়িতে কি বলব?
বর্ষণঃ কি আর বলবি,বলবি হবু বরের সাথে মধুচন্দ্রিমায় যাচ্ছিস।(মিটমিটিয়ে হেসে)
বর্ষাঃ অসভ্য।তোমার মুখে কিছু আটকায় না,না।(চোখ গরম করে)
বর্ষণ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে খেতে থাকে।
বর্ষাঃ উফ একটু তো সিরিয়াস হও।
বর্ষণঃ তুই এত চিন্তা করছিস কেন।বলবি কাজ আছে।দ্যাটস ইট।আমার তো মনে হয় না তোর পরিবার তোকে কোনো কাজে বাঁধা দেবে।
বর্ষাঃ তা ঠিক।কিন্তু দাভাই..
বর্ষণঃ আমার দেরী হচ্ছে আমি যাই।
বলে বর্ষাকে বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেল।
বর্ষাঃ আমি এটা বোঝতে পারছি না বর্ষণদা দাভাইয়ের উপর তোমার এত রাগ কিসের।নামটাই যেন সহ্য করতে পারো না।অথচ আগে গলায় গলায় ভাব ছিল।(দীর্ঘশ্বাস ফেলে)আমার ভাই হয়ত তোমাদের সাথে যোগাযোগ রাখে নি কিন্তু আমার দাভাইও যে ভালো নেই।খুব কষ্টে আছে।এখনো যে তাকে ভালোবাসে।এতদিনে ভালোবাসা টুকু একটুও কমে নি।কিন্তু আফসোস সে আমার দাভাইয়ের ভালোবাসাটা বোঝে নি।তাই তো..
তখন বর্ষার ফোনে একটা কল আসল।রিসিভ করে..
বর্ষাঃ হ্যালো।
…….
বর্ষাঃ ইয়াহ।
…….
বর্ষাঃ ডোন্ট ওয়ারি,দ্যায়ার হ্যাজ নো প্রব্লেম।
…….
বর্ষাঃ হ্যাঁ আমরা আসছি।
…….
বর্ষাঃ ওকে বাই।
🌿
বৃষ্টি আর শ্রাবণ পার্কে বসে আছে।
বৃষ্টিঃ এবার তো বাড়িতে বিয়ের কথাটা বল।
শ্রাবণঃ এখন কিভাবে?আকাশের বিয়েতে কিরকম ঝামেলা হয়েছে দেখলি না।নীলা আর আকাশের বিয়েটা কেউ মন থেকে মানতে পারছেনা।এখন আমাদের বিয়ের কথা কিভাবে বলব?যদি মেনে না নেয়।ওদের রাগ আমাদের উপর ঝাড়তেই পারে।
বৃষ্টিঃ হুহ,তাই বলে এভাবে বসে থাকব।দেখনে কোনদিন ডেড আমার বিয়েটাই না অন্য কারো সাথে দিয়ে দেয় তখন বোঝবে ঠ্যালা।(মুখ বাঁকিয়ে)
শ্রাবণঃ এরকম কিছুই হবে না।যদি আংকেল তোর বিয়ে ঠিক করেন তবে আমি তোর হবু বরকে কিডন্যাপ করে বরের জায়গায় তোকে বিয়ে করে নেব।সিম্পল।
বৃষ্টিঃ হুহ সাহস কতো।দেখা যাবে।তখন না আবার আমাকে ছেড়ে অ্যালকোহলের নেশায় মত্ত হও।
শ্রাবণঃ হুঁশ..পৃথিবীতে এমন কোনো নেশা নেই যা তোর নেশা কাটাতে পারবে।
বৃষ্টিঃ তাই নাকি।সময় হলেই দেখা যাবে।যদি আমাকে রেখে অন্য কাউকে বিয়ে করো তবে তোমার বউয়ের ঘাড় মটকাব বলে দিলাম।
শ্রাবণঃ বালাই সাট।শাকচুন্নি দয়া করে আমার বউকে ছেড়ে দে।তুই আমার বউয়ের ঘাড় মটকালে আমি সংসার করব কাকে নিয়ে?
বৃষ্টিঃ খুব শখ না তোর সংসার করার দাঁড়া করাচ্ছি সংসার(রেগে)
শ্রাবণঃ হিহিহি আমি তো মজা..
বাকিটা আর বলতে পারল না তার আগেই বৃষ্টি শ্রাবণকে ধাওয়া করল আর শ্রাবণ ভো দোঁড়।
🌿
নীলা কফিশপে বসে একজন লোকের কথা বলছে।
নীলাঃ এত কম সময়ে এত কিছু কি করে ম্যানেজ করলে?
লোকটিঃ সিক্রেট(মৃদু হেসে)
নীলাঃ বাহ আমার জন্যই এতকিছু জানতে পারলে এখন আমাকেই বলবে না।
লোকটিঃ সঠিক সময়ে জানতে পারবি।
নীলাঃ নেক্সট প্ল্যান কি??
লোকটাঃ কমু না।
নীলাঃ আমাকে বললে সমস্যা কি?আর তুমি নিজের আসল পরিচয়েই বা দিচ্ছ না কেন?এত লুকিচুরির মানে কি?
লোকটিঃ এসব বলার সঠিক সময় এখনো আসে নি?এখনো অনেক ধাঁধার উত্তর পাওয়া বাকি।অনেক নাটকের পর্দা ফেলা বাকি।
নীলাঃ কি বলছ এসব?সব চাল তো আকাশের ছিল।তাহলে..
লোকটিঃ হাহাহা..আকাশ তো সামনে থেকে খেলেছিল কিন্তু ওর পিছনে আরো বড় বড় রাঘব বোয়াল আছে।যা আকাশ নিজেও জানে না।ওরা আকাশের সাথেই খেলছে আকাশেরই অগোচরে।
নীলাঃ আরে এসব কি বলছ সব আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
লোকটিঃ এত মাথা খাটাস না তোর ছোট মাথায় ঢুকবে না।(মাথায় গাট্টা মেরে)
নীলাঃ কি বললে আমার ছোট মাথায় ঢুকবে না।আমার ছোট মাথায় না ঢুকলে তুমি এখন এখানে থাকতে না।ছ্যাকা খেয়ে ব্যাকা হয়ে বসে থাকতে।
লোকটিঃ সাথে তুইও(টিটকারি মেরে)
নীলাঃ উফফ তোমার সাথে কথা বলাই বেকার।(মুখ বাঁকিয়ে)
লোকটিঃ জানিস যখন বলিস কেন?
নীলঃ ওহ গড, আ’ম সো চিন্তিত তোমার বউ তোমাকে কিকরে হ্যান্ডেল করবে!!
লোকটিঃ সেটা নিয়ে তোকে চিন্তা করতে হবে না।আমার বউ এক্সটা অর্ডিনারী।আর আমাকে একমাত্র আমার বউই হ্যান্ডেল করতে পারবে।
নীলাঃ হু।ঝাটা পিঠা করে।
লোকটিঃ তোর মতো পেলি নাকি?
নীলাঃ ও হ্যালো আমি আমার বরকে ঝাটা পিঠা করি না।বরং হ্যান্ডেল করার জন্য অন্য টিক্স এপ্লাই করি(ভাব নিয়ে)
লোকটিঃ হু..যত্তসব কুটনী বুদ্ধি।
নীলাঃ ভালো হচ্ছে না কিন্তু।(চোখ গরম করে)
লোকটিঃ তুই আমাকে চোখ দেখাচ্ছিস??
নীলাঃ হিহি এরকম কিছু না।আমি তো জাস্ট..
লোকটিঃ হয়েছে আর আমতাআমতা করতে হবে না।
নীলাঃ হু।
নীলা আর ওই ব্যক্তি নিজেদের মতো কথা বলছে।কেউ যে ওদের উপর নজর রাখছে,ওদের সব কথা শুনে নিচ্ছে তা তাদের অজানা।
আড়ালে কেউঃ বাহ আমার পিঠপিছে এত কিছু চলছে।ওকে তোমরা তোমাদের খেলা চালিয়ে যাও।আমিও দেখি তোমরা ঠিক কি কি করো।আমিও ওত পেতে আছি।সঠিক সময়ে ঠিক থাবা বসাব(বাঁকা হেসে)
🌿
সেন+সাহা বাড়িতে,
নাইয়াঃ শুনছ??
দিগ্বিজয়ঃ (একবার নাইয়ার দিকে তাকিয়ে) হেয়ালি না করে বলে ফেল(বিরক্তি নিয়ে)
নাইয়াঃ বলছিলাম যে কোনো ভাবে যদি নীলা আর আকাশের বিয়েটা ভেঙে যায় মানে ডিবোর্স হয়ে যায় বা নীলা সরে যায় তাহলে কি আকাশের সাথে মেঘলার বিয়ে দেবে?
দিগ্বিজয়ঃ কি বলছ এসব মাথা ঠিক আছে?আমি মেঘলাকে আর কখনোই আকাশের সাথে বিয়ে দেবো না।তোমার কথায় ওদের বিয়ে দিতে চাওয়াটাই ভুল ছিলো।আমি আমার মেয়েকে কোনো ডিবোর্সী ছেলের সাথে বিয়ে দেবো না।তাছাড়া আকাশ একবার মেঘলাকে বিয়ের পিড়ি পর্যন্ত এনে নীলাকে বিয়ে করেছে। ওই বিশ্বাসঘাতকের সাথে আমি আবার মেঘলার বিয়ে ঠিক করব সেটা তোমার মাথা পর্যন্ত এলো কি করে।আমার মেয়ে কোনো ফেলনা জিনিস নয়।আজ বলেছ বলেছ আর কোনো দিন এসব চিন্তা মাথায় আনলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।
বলে চলে গেলেন।
নাইয়াঃ ঢং।মেয়ের জন্য দরদ উতলে পড়ছে।সবার সামনেই শুধু নাটক করে,পিঠপিছে ঠিকই মেয়ে মেয়ে করে(মুখ বেকিয়ে)
🌿
পরেরদিন সকালে..
(চলবে)