হয়ত তোমারই জন্য পর্ব-০৭

0
712

#হয়ত_তোমারই_জন্য
ঐশিতা সেন
পর্বঃ ০৭

পরের দিন সকালে এমএস আর মেঘলা একসাথে বসে কাজ করছে এমএসের কেবিনে বসে।তাদের সামনে ধোঁয়া উড়া দুটি কফির মগ।একটু বাদে বাদে যাতে চুমুক দিচ্ছে।এমএস কাজের ফাঁকে ফাঁকে আড়চোখে মেঘলার দিকে তাকাচ্ছে যা মেঘলার নজর এড়ালো না।
একসময় এমএস নিজের কফি না নিয়ে মেঘলার কফির মগটা হাতে তুলে নিয়ে চুমুক দিল।
মেঘলাঃ (ভ্যাবাচেকা খেয়ে) স্যার এটা তো আমার কফি ছিল।
এমএসঃ সেই জন্যই তো আগেরটা থেকে বেশি মিষ্টি লাগছে(মনে মনে) আপনার কফি(ভ্রূ কোচকে)আপনি বলতে চাইছেন আমি নিজের কফি না খেয়ে আপনারটা খেয়েছি।
মেঘলা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোধক উত্তর করল।
এমএসঃ আমার কি মাথা খারাপ হয়েছে যে নিজেরটা রেখে আপনারটা খাব।এক মিনিট আপনি সরাসরি আমাকে চোর উপাধি দিলেন।
মেঘলাঃ আমি আবার..
মেঘলাকে শেষ করতে না দিয়েঃ ও গড শেষ পর্যন্ত কফি চোর(বিস্ফোরিত নয়নে)
মেঘলাঃ আরে স্যার আমি..
এমএসঃ ছিঃ ছিঃ মিস মেঘলা শেষপর্যন্ত কফি চোর,আপনি আমাকে এতটা নিচু ভাবেন(দুঃখী ভাবে)
মেঘলাঃ স্যার আপনার মনে হচ্ছে না আপনি একটু বেশিই রিয়েক্ট করছেন।আমি আপনাকে একবারও চোর বলি নি।আপনি ভুল করেও তো আমার কফিটা খেতে পারেন।চোরের মনেই পুলিশ পুলিশ(শেষের কথাটা বিড়বিড় করে)
এমএসঃ দেখুন মিস এমএস কখনো ভুল করে না।
মেঘলাঃ তাই নাকি(সন্দেহের চোখে)
এমএসঃ (একটু চুপ থেকে)হু..আমি আমারটাই খেয়েছি আপনারটা না।এখন এ নিয়ে আর কিছু শুনতে চাই না।আপনি আবার কাজে ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে এইসব ফালতু কথা বলছেন না তো।
মেঘলাঃ আমি কারো মতো ফাঁকি দিতে শিখি নি(কাঠকাঠ গলায়)
মেঘলার কথা শুনে এমএস নিচের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল।
এমএস পিয়নকে কল করে বলল আরেকটা কফি আনতে।
🌿
আকাশঃ নীলা আমার রিপোর্টটা কি সঠিক??
নীলাঃ হঠাৎ এই প্রশ্ন?
আকাশঃ সিন্ড্রোম তো দেখা যাচ্ছে না।
নীলাঃ অনেক ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হয়।
আকাশঃ রিপোর্টটা ভুল নয় তো??
নীলাঃ হতেই পারে।তবে তোমাকে ভুল রিপোর্ট দিয়ে আমার লাভ কি??
আকাশঃ সেটাই এখানে তোর কোনো লাভ তো দেখতে পারছি না।এর পরবর্তী পদক্ষেপ কি??
নীলাঃ আপাতত চালিয়ে যাও।বাকিটা পরে দেখা যাবে।
আকাশঃ কিন্তু বেশি দেরী হলে তো তোর জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে।
নীলাঃ ডু ইউ রিয়েলি থিংক দ্যাট।ডোন্ট ওয়ারি আকাশদা সব ঠিকই হবে।কোনো ভুল না।সব পারফেক্ট হবে।
আকাশঃ হুম।
নীলাঃ হ্যাঁ আকাশদা এখন আর কোনো ভুল হবে না।সব ঠিক হবে।পুরোনো সব ভুলও ঠিক হয়ে যাবে।তোমার সব ভুল আমি শোধরে দেব।আফটার অল একজন স্বামীর সব ভুল শোধরানোর দায়িত্ব তো তার স্ত্রীরই।আর আমি নিজের সব দায়িত্ব পালন করব।একজন স্ত্রীর দায়িত্ব সাথে একটা বেস্টফ্রেন্ডের দায়িত্ব।মেঘলার সাথে আর কোনো অন্যায় হবে না।(মনে মনে)
🌿
এমএস এর একটা কল এলো।
এমএসঃ এক্সকিউজ মি।
মেঘলাঃ ইটস ওকে।
এমএস ফোন রিসিভ করতে করতে কেবিনের দরজা খুলল একই সময় পিয়ন কফি নিয়ে রুমে ঢুকে যার ফলে কিছুটা কফি এমএসের গায়ে পড়ে যায়।
এমএসঃ আহহ(চোখ মুখ কোচকে)
এমএসের আর্তনাদ শুনে মেঘলা।পিছন ঘুরে তাকায়।তারপর তাড়াতাড়ি কাছে এসেঃ কি হয়েছে স্যার?আর ইউ ওকে?
এমএসঃ ইয়াহ(মুখে মিথ্যা হাসি ঝুলিয়ে)
পিয়নঃ স..সরি স..স্যার আমি বুঝতে পারি নি(তুতলিয়ে)
এমএসঃ ইটস ওকে।ভুল হতেই পারে।
বলতে বলতে গায়ের কোটটা খুলে চেয়ারে রাখে।তারপর বাতাস লাগাতে শার্টের বোতাম খুলে।তখন মেঘলা দেখতে পায় ধবধবে ফর্সা বুক লাল হয়ে গেছে।
মেঘলাঃ ইশশ..আপনার বুকে তো লাল দাগ পড়েছে।রাজুদা একটু বরফ নিয়ে আসো না।
রাজুঃ এক্ষুনি আনছি মেডাম।
বলে পিয়ন চলে গেলেন বরফ আনতে।পিয়ন যাওয়ার পর মেঘলা এমএসের কাছে এগিয়ে এসে ওর বুকে ফু দিতে থাকে।
কিছুক্ষণ বাদে পিয়ন বরফ এনে মেঘলার হাতে দিলেন।মেঘলা এমএসের বুকে বরফ ঢলে দিতে লাগল।এমএস এক ধ্যানে মেঘলার দিকে তাকিয়ে আছে।মেঘলার উন্মুক্ত কেশ বাতাসের তাড়নায় এমএসের মুখে পড়ছে।এমএস এতে বিন্দুমাত্র বিরক্ত হচ্ছে না।বরং মুহূর্তটাকে উপভোগ করছে।
মেঘলা বরফ ঢলে বার্নিং ক্রিম লাগিয়ে দিল।
মেঘলাঃ স্যার এখন কিছুটা ভালো লাগছে।
মেঘলার কথা এমএসের কর্ণগোচর হচ্ছে না।ওর সম্পূর্ণ মনযোগ মেঘলার দিকে।
মেঘলাঃ স্যার (ঝাকি দিয়ে)
এমএসঃ হু..হুম বলুন।
মেঘলাঃ আব না মানে এখন ঠিক লাগছে?
এমএসঃ যতক্ষণ তুমি ক্ষতস্থান ছুঁয়ে দিচ্ছিলে ততক্ষণ ঠিক লাগছিল।সব জ্বালা যন্ত্রণা উধাও হয়ে গিয়েছিল।এখন যখন তুমি হাতটা সরিয়ে দিলে আবার জ্বলুনি হচ্ছে।(বিড়বিড় করে)
মেঘলাঃ স্যার কি বিড়বিড় করছেন?(ভ্রু কোচকে)
এমএসঃ কই না তো।বিড়বিড় করছি না।আমি ঠিক আছি।আপনি বরং কাজ গুলো কমপ্লিট করুন।
মেঘলাঃ ওকে স্যার।
🌿
শ্রাবণঃ বিষ্টু আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে আকাশ আর নীলু কি লুকাচ্ছে??
বৃষ্টিঃ মানে??
শ্রাবণঃ আকাশ আর নীলুর হাবভাব ভালো ঠেকছে না।হঠাৎ করে দুজনে বিয়ে করে নিল।ব্যাপারটা কেমন ঘোলাটে লাগছে।
বৃষ্টিঃ ঘোলাটে লাগবে কেন?ওরা ভালোবেসে একে অপরকে বিয়ে করেছে।
শ্রাবণঃ কিন্তু ওদের দেখে কখনো মনে হয় নি একে অপরকে ভালোবাসে।
বৃষ্টিঃ আমাদের দেখে কি মনে হয় আমরা একে অপরকে ভালোবাসি।আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের কেউ তো জানেও না।নীলা তোমার বোন হওয়ার সুবাধে জেনে গেছে।
শ্রাবণঃ সেটাই তো,তুইও তো আকাশের বোন,ওরা একে অপরকে ভালোবাসলে তুই কি জানতি না??
বৃষ্টিঃ তাই তো আমি তো ছোটবেলা থেকেই জানি দাভাই মেঘুকে ভালোবাসে,নীলাকে ভালোবাসলে আমি কি জানতাম না?আসলেই হঠাৎ করে দাভাইয়ের আর নীলার বিয়ে করার পেছনে কোনো রহস্য লুকিয়ে নেই তো??(মনে মনে)
🌿
মেঘলা নিজের কেবিনের দিকে যাচ্ছে।হঠাৎ কেউ এক ঝটকায় ওর হাত টান দিয়ে একটা অন্ধকার রুমে নিয়ে গেল।বিষয়টা বোঝতে মেঘলা ১মিনিট সময় লাগল।সাথে সাথে মেঘলা কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তার আগেই ওই ব্যক্তিটি মেঘলায় মুখ চেপে ধরে।কানে কাছে মুখ নিয়ে হিসহিসিয়েঃ ডিয়ার PT তোমাকে না বলেছিলাম তোমার বসের থেকে দুরে থাকতে তাহলে আজ এতটা কাছাকাছি কেন এলে?তোমার বস কেন তোমার খাওয়া কফি খেল, তোমার মুখের এঁটো কফি খাওয়ার অধিকার শুধু যে আমার সেটা তাকে বলো নি?তুমি কেন এত যত্ন করে তার বুকে বরফ ঢলে দিলে,কেন ঔষধ লাগিয়ে দিলে?তোমাকে এখনো না পাওয়ায় যে আমার বুকে কতটা জ্বালা হচ্ছে সেটা বোঝতে পারছ না?তাহলে কেন যত্ন করে আমার জ্বালাটা কমাও না।বাইরের জ্বালা দেখতে পাও প্রেমের অনলে দাহিত হওয়ার জ্বালা দেখতে পাও না?তোমার কি একটুও ইচ্ছা করে না আমার হৃদয়ের জ্বালা কমাতে?আমাকে একটু শান্তি দিতে?
লোকটার শীতল কণ্ঠে আর গরম নিঃশ্বাসে মেঘলার বুকের ভিতরে তোলপাড় শুরু হলো।ক্ষণিকেরই জন্য কেঁপে উঠল।
লোকটি আবার বললঃ শেষ বারের মতো ওয়ার্ন করছি এমএসের থেকে দুরে থাকবে।যতটা পারা যায় দুরে।আমি তোমার পাশে অন্য কাউকে সহ্য করব না।আজ এখানে এসেছি।পরের বার আমার কথার নড়চড় হলে তুলে নিয়ে যাব।এখনো আমার খারাপ রূপটি দেখ নি।খারাপ আমিটাকে জাগিও না।প্রয়োজনে এই আমিটা সাইকো হতে পারি।তখন কিন্তু তোমারই সমস্যা হবে।কথাটা মাথায় রেখ।
বলে মেঘলার কপালে আলতো করে অধর ছোঁয়াল।তারপর কানের কাছে গিয়ে আবার বললঃ Love you PT more than myself.
বলে মেঘলাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই হাওয়া হয়ে গেল।
লোকটি চলে যাওয়ার পর মেঘলা বাঁকা হাসল।যাতে হাজারো রহস্য লুকিয়ে আছে।
🌿
রাত আনুমানিক ১০টা।অফিস বন্ধ হওয়ার সময় হয়ে গেছে।এমএস একটা ফাইল নিতে স্টোররুমে ঢুকল।ঘুটঘুটে অন্ধকার রুমে কিছুর খসখস আওয়াজ আসছে।লাইটের সুইচ অন করে।কিন্তু দুর্ভাগ্য লাইট অন হয় না।বোঝতে পারে লোডশেডিং হয়েছে।
পিছু ফিরে যেতে নেয় কিন্তু আবার খসখসে আওয়াজে থেমে যায়।ভালো করে আশপাশ তাকিয়ে দেখতে পায় ফাইলের সেল্ফের পিছনে মিটিমিটি আলো দেখা যাচ্ছে।তাই সামনে এগিয়ে যায়।সেল্ফের পিছনে গিয়ে দেখে মেঘলা ফোনের ফ্লাশ জ্বালিয়ে একটা ফাইল চেক করছে।
কারো উপস্থিতি টের পেয়ে মেঘলা মুখ তুলে সামনে থাকায়।সাথে সাথে হাত থেকে ফোনটা পড়ে গিয়ে অফ হয়ে যায়।
সেল্ফের পিছনটাও ঘুটঘুটে অন্ধকারে ছেয়ে যায়।
এমএসঃ আপনি এখানে?
মেঘলাঃ আব..একটা ফাইল..ফাইল নিতে এসেছিলাম।
এমএসঃ ফাইল??আপনি..
মেঘলাঃ আসলে আপনি যে ফাইলগুলো দিয়েছিলেন তার মধ্যে একটা রাজুদা ভুল করে এখানে রেখে দিয়েছিলেন।উনার হাতে আরো অনেক কাজ ছিল তাই আমিই চলে আসি ফাইল নিতে।
এমএসঃ অহহ।
কথাটা অবিশ্বাস্য মনে হলেও এমএস আর কিছু বলে না।এরইমধ্যে বিদ্যুৎ চলে আসে।
এমএসঃ আপনি ফাইল খুঁজুন আমি যাই।
বলে দরজার দিকে এগিয়ে গেল।দরজা খুলতে চেয়েঃ ও শিট।
মেঘলাঃ কি হয়েছে স্যার??
(সেল্ফের পিছন থেকে সামনে এসে)
এমএসঃ কেউ দরজাটা বাইরে থেকে আটকে দিয়েছে।
মেঘলাঃ ও গড।এবার??আমি রাজুদাকে কল করে বলছি খুলে দিতে।
ও শিট আমার ফোন তো অফ হয়ে গেছে।আপনি বরং..
এমএসঃ ও শিট।(পকেটে হাত দিয়ে)আমার ফোনটা তো কেবিনেই রেখে এসেছি।
রাজুদা রাজুদায়ায়া(জোরে) মি. মল্লিক, মি. দিয়ান,মি. চৌধুরী,মিস রিটা।অফিসে কি কেউ নেই??ও গড সবাই বোধহয় চলে গেছে।
মেঘলাঃ তাহলে এবার কি হবে??
এমএসঃ কি আর হবে,আজকের রাতটা এখানেই পার করতে হবে।
মেঘলাঃ কিহহহহহহ
এমএসঃ আস্তে(এক হাত উচিয়ে)আর কি কোনো উপায় আছে?
মেঘলা হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে।
এমএসঃ ফাইল খুঁজেই রাতটুকু কাভার করুন।
বলে হাই তুলে জানালার পাশে যায়।
মেঘলা কিছু না বলে আবার সেল্ফের কাছে আসে।একটা একটা করে কয়েকটি ফাইল উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখে।
তখন শুনতে পায়
‘কি ফাইল পাচ্ছেন না??একটা ফাইল খুঁজতে কতক্ষণ লাগে?’
মেঘলাঃ মনে হয় ফাইল এখানে নেই।রাজুদা হয়ত ভুলে বলেছেন এখানে আছে।
এমএসঃ হবে হয়ত(তাচ্ছিল্যের সুরে)
কিছু বাদে
এমএসঃ আচ্ছা একটা বদ্ধ কামরায় একটা ছেলে আর একটা মেয়ে থাকলে কি হয়?
মেঘলাঃ মানে??(ভ্রু কোচকে)
এমএসঃ এখন এই রুমে আপনি একা একটা অবলা মেয়ে একজন পুরুষের সাথে আছেন।এখন আপনার সাথে ঠিক কি কি হতে পারে ভাবতে পারছেন।অনেক কিছুই হতে পারে(টেডি স্মাইল দিয়ে)আপনার কি ভয় হচ্ছে না?আমি চাইলে এখন…
(চলবে)