হয়ত তোমারই জন্য পর্ব-০৯

0
691

#হয়ত_তোমারই_জন্য
ঐশিতা সেন
পর্বঃ ০৯(বিয়ের ফুল+ধামাকা)

কারণ মেঘলা আড়াল থেকে দেখল এমএস একটা লোকের মাথায় গান তাক করে প্রপার্টির পেপার নিজের নামে করে নিচ্ছে।
এমএসঃ এই কে আছিস একে ভিতরে নিয়ে যা।
সাথে সাথে কিছু মাস্কপড়া গার্ডস লোকটিকে ভেতরে নিয়ে যায়।
এমএসঃ নিয়ান কালকের মধ্যে মিজান চৌধুরী আর রিমন ঘোষকে আমার চাই।এট এনি কস্ট।ওরা বেশি বাড়াবাড়ি করছে।সোজা কথায় ওরা প্রপার্টি দেবে না।তুলে আনো।
নিয়ানঃ ওকে বস।
এমএসঃ আর ঐ অর্পানেজ খালি হয়েছে।
নিয়ানঃ না বস।অর্পানেজের মালিক কিছুতেই রাজী হচ্ছে না।
এমএসঃ নো প্রব্লেম।আজ রাতের মধ্যেই অর্পানেজের মালিককে গুম করে দাও আর বাচ্চাদের পাচার করে দাও।তারপর অর্পানেজের জায়গা কি করে দখল করবে তা নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না(ডেবিলমার্কা স্মাইল দিয়ে)
নিয়ানঃ কাজ হয়ে যাবে বস।
আরে কে ওখানে(নিয়ানের চোখ মেঘলার দিকে যেতেই)
এমএস পিছু ফিরে তাকাল।
এমএসঃ মিস মেঘলা..আপনি চলে এসেছেন আমার পিছু করতে করতে।
মেঘলাঃ হ্যাঁ স্যার এসেই পড়েছি।হয়ত আপনি আমাকে দেখে বেশি খুশি হোন নি।আর আমি যে আপনার সব কথা রেকর্ড করে নিয়েছি সেটা শুনে তো আরো না।তাই না(বাঁকা হেসে ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে)
নিয়ান গার্ডদের ইশারা করার সাথে সাথে গার্ডরা মেঘলাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে।আর একজন মেঘলার মাথায় বন্দুক ঠেকায়।
মেঘলা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে এমএসের দিকে শ্যেনদৃষ্টিতে তাকায়।এমএস মুচকি হাসে।
মেঘলা একবার চোখ বুলিয়ে গার্ডদের পজিশন মেপে নেয়।তারপর যার হাতে গান ছিল তার হাতে একটা লাথি দেয়।সাথে সাথে গানটা দুরে ছিটকে পড়ে যায়।গার্ডটি মেঘলার দিকে তেড়ে আসলে মেঘলা নাক বরাবর একটা ঘুষি দেয় সাথে সাথে লোকটি মেঝেতে পড়ে যায় আর নাক দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হয়।বাকিরা এ্যাটাক করতে আসলে তাদেরও উত্তম-মধ্যম দেয়।
এমএস মেঘলার ফাইটিং স্কিল দেখে জোরে জোরে হান্ড ক্লাপিং করতে থাকে।
এমএসঃ বাহ মিস মেঘলা দারুণ।আ’ম ইমপ্রেসড।হোয়াট আ ফাইটিং স্কিল।(মুচকি হেসে)তবে কোনো লাভ হবে না।বড়জোর আমার লোকেদের দু চার ঘা দিতে পারবেন কিন্তু আমার কিচ্ছু বিগড়াতে পারবেন না।(শয়তানি হেসে)
মেঘলাঃ তাই নাকি(ভ্রু কোচকে) আপনার এখনো তা মনে হয়?
এমএসঃ আমার মনে হয় না, আ’ম ডেম শিওর।(কনফিডেন্সের সাথে)
ওদিকে দেখুন।
বলে লেপটপে কয়েকটি ছবি দেখাল যা দেখে মেঘলা আঁতকে উঠল।
মেঘলাঃ এ..স..ব
এমএসঃ এখনও বলবেন আপনি আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবেন!
মেঘলা একদৃষ্টিতে লেপটপের স্কিনের দিকে তাকিয়ে আছে।স্কিনে স্পষ্ট দিগ্বিজয় সেন,আশিস সাহা,নীলাকাশ,বৃষ্টি-শ্রাবণ,টিয়া-রিয়া যে যেখানে আছে তার থেকে কিছুটা দুরে আড়ালে দাঁড়িয়ে এমএসের গার্ডরা ওদের দিকে বন্দুক তাক করে রেখেছে।এমনকি চট্টগ্রামে অবস্থানরত বর্ষা আর বর্ষণের দিকেও।যা তারা কেউই বোঝতে পারছে না নিজের কাজেই ব্যস্ত।
এমএসঃ আমার একটা ইশারা ব্যস আপনার পরিবার আর আপনজনেরা ফিনিশ।
বলে হাসিতে ফেটে পড়ল।
এমএসঃ সো এবার কি করবেন?(চোখে মুখে কাঠিন্য এনে)
মেঘলা করুণ চোখে এমএসের দিকে তাকাল।
এমএসঃ এখন আমি যা বলব আপনি তাই করবেন নয়ত আপনার আপনজন..
বলে ডান হাতের বুড়ো আঙুল গলার কাছে নিয়ে সোজা টান দিল।সাথে মুখে তো লেগেই আছে শয়তানি হাসি।
এমএসঃ এবার আপনি কি করতে চান?আমার কথা শুনতে নাকি প্রিয়জনদের অন্তেষ্টিক্রিয়ার ব্যবস্থা করতে।
মেঘলাঃ (দীর্ঘশ্বাস ফেলে)আ.পনি যা বলবেন যা করব।দয়া করে ওদের কোনো ক্ষতি করবেন না।
এমএসঃ দ্যাটস লাইক আ গুড গার্ল।এবার এই পেপারটাতে সাইন করুন তো।
একটা পেপার এগিয়ে।
মেঘলাঃ এটা কি..
এমএসঃ হুঁশ..নো সাউন্ড।ঝটপট সাইন করুন নয়তো আমি আমার গার্ডদের একটা কল করব আর সব শেষষষষষ।(টেনে)
মেঘলা আর কিছু না বলে ঝটপট সাইন করে দিল।
এমএসঃ এক্সিলেন্ট।এবার চলুন আমার সাথে।
মেঘলা দ্বিরুক্তি না করে এমএসের পিছন পিছন গেল।
গাড়িতে বসে..
মেঘলাঃ আপনার গার্ডরা এত তাড়াতাড়ি আমার পরিবারের..
এমএসঃ লোকেদের কাছে কি করে পৌঁছাল তাই তো??
মেঘলা মাথা নাড়াল।
এমএসঃ বলেছিলাম না আমি আপনার ব্যাপারে অনেক কিছুই জানি।সো আপনার ফ্যামিলির কে কোথায় কি করছে সবই আমার জানা।আমি প্রথম দিন থেকেই আপনার ফ্যামিলির পিছনে গার্ডস লাগিয়ে রেখেছিলাম।আর তার ফলাফল আপনি আমার হাতের মুঠোয় বন্ধী।
মেঘলা ঘৃণার দৃষ্টিতে এমএসের দিকে তাকাল।
এমএস মৃদু হেসে ড্রাইভ করতে লাগল।
মেঘলাঃ একি মন্দিরে কেন এলেন??
এমএসঃ বেশি প্রশ্ন আমি পছন্দ করি না।গাড়ি থেকে নামুন।
মেঘলা আর এমএস গাড়ি থেকে নামল।সাথে সাথে কয়েকজন গার্ডস মেঘলাদের কাছে এলো।যাদের মধ্যে কিছু মেয়ে গার্ডসও আছে।
এমএস মেয়ে গার্ডদের কিছু ইশারা করল।ওরা মেঘলাকে নিয়ে পাশের বিউটি পার্লারে গেল।
মেঘলা প্রশ্ন করতে চেয়েও করে নি।
কিছুক্ষণ পর ওরা মেঘলাকে লাল বেনারসি পড়িয়ে লাল টুকটুকে বউ সাজিয়ে নিয়ে এল।
মেঘলা এমএসের কাছে এসে দেখে এমএসের পরনে ধুতি-পাঞ্জাবী।
মেঘলাকে এমএসের কাছে এনে দাঁড় করাল।
মেঘলাঃ এসব কি হচ্ছে?
এমএস মেঘলার হাত ধরে ভিতরের দিকে যেতে যেতেঃ যা হচ্ছে হতে দাও।চুপচাপ মেনে নাও।কোনো কথা বললে বা মাঝখানে বিঘ্ন ঘটালে জানোই তো কি হবে।
মেঘলা আর কিছু বলল না।
মন্দিরের ভিতর প্রবেশ করে দেখে বিয়ের সব ব্যবস্থা আগে থেকেই করা পুরোহিতও তৈরি।
তারপর আর কি হবে এমএস মেঘলাকে নিয়ে অগ্নিসাক্ষী করে সাতপাকে ঘুরে সিঁদুরদানের মাধ্যমে বিয়ে করে।পুরোটা সময় মেঘলা নিরব ভূমিকা পালন করে।
এমএসঃ তো মিসেস এমএস আজ থেকে আপনি সরি তুমি আমার স্ত্রী আর আমি তোমার স্বামী।তুমি মানো আর নাই মানো আমি তোমাকে দেবীমার সামনে অগ্নিসাক্ষী করে তোমাকে বিয়ে করেছি।কথাটা মনে থাকে যেন My dear WiFi.(মৃদু হেসে)
আবার মেঘলার হাত ধরে বাইরে এসে গাড়িতে বসে।
মেঘলাঃ আমাকে বিগে করার কারণ জানতে পারি।
এমএসঃ হ্যাঁ অবশ্যই।
প্রথমত বাঙালি নারীরা আর যাই করুক না কেন কখনো নিজের স্বামীর ক্ষতি চায় না।আফটার অল পতিকে পরমেশ্বর জ্ঞান করে।স্বামীর বিরুদ্ধে যায় না।স্বামীর আদেশ মেনে চলে।
তাই তুমিও নিশ্চয়ই আমার ক্ষতি চাইবে না।কারণ আমার ক্ষতি মানে আমার অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে তোমার ক্ষতি।তাই ফ্যাক্টরির ব্যাপারে যে আর কাউকে কিচ্ছু বলবে না সেটা আমি জানি।
এবং দ্বিতীয়ত তোমাকে বিয়ে করেছি মানে এখন থেকে তুমি আমার সামনেই থাকবে।তোমাকে আমি নজরবন্দী করে রাখব যাতে তুমি চাইলেও কাউকে কিচ্ছু জানাতে না পারো।
বিয়ে ছাড়া তোমাকে আটকাবার আর কোনো ভালো উপায় আছে??আর তাই বলে ভেব না তোমার পরিবার নিরাপদ।
🌿
সেন+সাহা বাড়ি,
সন্ধ্যার পর দিগ্বিজয় সেন,আশিস সাহা আর নাইয়া দেবী ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছেন।আকাশ নিজের রুমের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।নীলা রুমে ফোন নিয়ে ব্যস্ত।টিয়া-রিয়াও নিজেদের রুমে বসে পড়ছে।
হঠাৎ আকাশ হন্তদন্ত হয়ে বেলকনি থেকে বেরিয়ে নিচের দিকে ছুটল।তা দেখে নীলা ভ্রু কোচকে আকাশের পিছন পিছন গেল।
নীলা আর আকাশ নিচে যেতে না যেতে কলিং বেল বাজল।আকাশ দৌঁড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিল।দরজা খুলে স্তব্ধ হয়ে গেল।
কিছুক্ষণ আগে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দেখতে পেল
বাড়ির সামনে একটা গাড়ি থেমেছে।গাড়ি থেকে সদ্য বিয়ে করা এক জোড়া দম্পতি বের হয়েছে।বউকে দেখতে মেঘলার মতো দেখাচ্ছে তাই দেরী না করে নিচে আসে।দরজা খুলে দেখে সত্যি বউবেশে মেঘলা দাঁড়িয়ে পাশে বরবেশে এমএস।
আকাশঃ ম…মেঘলা ত..উ..ই বিয়ে..
আর বলতে পারল না।আকাশকে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নীলা দরজার কাছে এগিয়ে এলো।সামনে মেঘলা আর এমএসকে বরবউ বেশে দেখে হা করে তাকিয়ে রইল।হাতে আস্তে করে চিমটি কাটল।তাই ব্যথায় কুঁকিয়ে উঠল।বোঝতে পারল যা দেখছে তা সত্যি।
নীলাঃ মেঘলায়ায়ায়া তুই বিয়ে করেছিসসস(উত্তেজিত হয়ে চেঁচিয়ে)
নীলার মুখের এই হেন কথা শুনে দিগ্বিজয়,আশিস আর নাইয়াও দরজার কাছে চলে এলো।তিনজনই অবাক হয়ে গেল।দিগ্বিজয় রাগে রি রি করে কাঁপতে লাগলেন।

(চলবে)