হয়ত তোমারই জন্য পর্ব-১১+১২

0
673

#হয়ত_তোমারই_জন্য
ঐশিতা সেন
পর্বঃ ১১+১২

মেঘলা কাঁপা কাঁপা স্বরেঃ ক..কি ব..বোজাবেন?
মেঘলার গালে হাত বোলাতে বোলাতেঃ রোমান্সসসস।
এই একটা শব্দই যথেষ্ট ছিল মেঘলার মতো মেয়ের মনে আলোড়ন তৈরি করতে।
মেঘলা এমএসের থেকে নিজেকে চট করে ছাড়িয়ে নিয়েঃ আ..আমি বৃষ্টির কাছে যাচ্ছি।কাজ আছে।অপেক্ষা করুন।
বলে যেতে নিলে এমএস একটানে মেঘলাকে নিজের কাছে আনল।মেঘলার পিঠ এমএসের বুকে ঠেকল।
এমএসঃ হুঁশ।ডোন্ট টেল আ লাই।বৃষ্টি বাড়িতে নেই ও কাছে কিভাবে যাবে।
মেঘলাঃ আপনি কি করে জানলেন?
এমএসঃ সেটা তুমি জিজ্ঞেস করছ বউটু।
মেঘলা আর কিছু বলল না।
এমএসঃ আমাকে মিথ্যা বলার শাস্তি হিসেবে কি পেতে চাও?(মেঘলাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে)
মেঘলাঃ আ..সলে আ..মি ভু..লে গেছিল..
মেঘলার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে এমএসঃ নো মোর এক্সকিউজ।বি রেডি ফর পানিশমেন্ট।
মেঘলা ঢোক গিলল।
এমএসঃ তো শাস্তি কোনটা চাও? আমি তোমাকে এত্ত এত্ত আদর করব নাকি তুমি আমাকে এত্ত এত্ত আদর করবে(বাঁকা হেসে)
মেঘলা এমএসের থেকে সরে এসেঃ থাপ্পড় সে ডর নেহি লাগতা ভাই পার পিয়ার সে লাগতা।দু..রে যান।
এমএস মেঘলার দিকে এগুতে এগুতেঃ আরে কেমন বউ তুমি বরকে কেউ ভাই বলে?ভেবেছিলাম শাস্তি দেব না কিন্তু আমাকে ভাই বলার অপরাধে শাস্তি তো তোমায় পেতেই হবে মাই ডিয়ার ওয়াইফাই(বাঁকা হেসে)
মেঘলাঃ বরের গুষ্ঠির ষষ্ঠী (বিড়বিড় করে) প্লিজ না।আমি তো কথায় কথায় বলে ফেলেছি আপনাকে ভাই ডাকি নি।আরে এগুচ্ছেন কেন?দুরে যান।(পিছুতে পিছুতে)
এমএসঃ তুমি এমন কেন বল তো।বউ তুমি আমার।কোথায় বলছে কাছে এসো কাছে এসো তা না বলছ দূরে যাও।(মুখ বেকিয়ে)
মেঘলাঃ আমি কি এখন ক্লোজ আপের এড দেব?
এমএসঃ না আমার আরো ক্লোজ হবে।
মেঘলাঃ অসভ্য
বলে পিছতে পিছতে একসময় মেঘলা ধপ করে বিছানায় পরে যায়।
মেঘলা পড়ে যাওয়ার পরে এমএস মেঘলার উপর চড়ে।
মেঘলাঃ কি করছেন সরুন।
এমএসঃ শুউউউউউ।নো মোর ওয়ার্ড।
বলে নেশাভরা চাহনিতে মেঘলার দিকে তাকাল।মেঘলার বাদামী চোখ জোড়ায় যেন মাদকতা আছে।চোখ সরাতে ইচ্ছা করতে না।এমএস মেঘলার মুখের কাছে মুখ নিল।হাত দিয়ে আলতো করে মেঘলার কপালে লেপ্টে থাকা চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিল।মেঘলা কেঁপে উঠে আবেশে চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেলে।এমএস মুচকি হেসে মেঘলার কপালে আলতো করে অধর ছোঁয়াল।
তারপর মেঘলাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গলায় মুখ গুজে শুয়ে পড়ল।
এমএসঃ গুড নাইট ডিয়ার ওয়াইফাই।হ্যাভ আ সুইট ড্রিম এবাউট ইউ এন্ড মি।
এমএসের এভাবে শুয়ায় মেঘলার যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে।বারবার এমএসকে সরানোর চেষ্টা করছে।
মেঘলাঃ ককি করছেনটা কি।ছাড়ুন বলছি।
এমএসঃ উহ..বেশি কথা বল না তো।আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।কতদিন পর শান্তিতে ঘুমাব বল তো।
মেঘলাঃ ঘুম পাচ্ছে তো ঘুমান না আমাকে ছাড়ছেন না কেন?
এমএসঃ প্লিজ ডিয়ার ওয়াইফাই ঘুমাতে দাও।কথা বল না।নইলে কিন্তু শশুরজিকে নাতি নাতনির মুখ দেখানোর ব্যবস্থা করব।
এমএসের কথা শুনে মেঘলার কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হতে লাগল।এমএস ভয়ানক কিছু করতে পারে ভেবে আর না বলে নড়াচড়া বন্ধ করে শুয়ে থাকে।শুয়ে শুয়ে এক ধ্যানে এমএসের দিকে তাকিয়ে আছে।এমএস শুয়া থেকেই বলেঃ এভাবে তাকিও না বউ আমার লজ্জা করে(ঠোঁট টিপে হেসে)
মেঘলা চরম অসস্তিতে পড়ে যায়।এমএসের দিকে আর না তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
🌿
রাত ২ঃ১৫ আকাশ এখনো বাড়ি ফিরে নি।এদিকে নীলা টেনশন করে অস্থির হচ্ছে।বার বার আকাশের ফোনে কল করছে কিন্তু আকাশ ফোন তুলছে না।কলিংবেলের শব্দ পেয়ে দৌড়ে দরজা খুলে দিল।দরজা খুলে অবাক।আকাশ দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ঢুলছে।আর ওর মুখ থেকে একটা বিশ্রি উদ্ভট গন্ধ আসছে।
আকাশ ঢুলে পড়েই যাচ্ছিল তখন নীলা ধরে ফেলে।
নীলাঃ আকাশদা তুমি ড্রিংক করেছ(অবাক হয়ে)
আকাশঃ আমার মেঘপাখি।
নীলা আর কিছু না বলে আকাশকে রুমে নিয়ে যায়।আকাশও এলোমেলো পায়ে নীলার কাঁধে ভর দিয়ে রুমে যায়।নীলা আকাশকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে চলে আসতে চায় কিন্তু আকাশ নীলাকে একটানে নিজের উপর ফেলে নীলার বাহু জোরে চেপে ধরেঃ এই মেঘপাখি এরকম কেন করলি হ্যাঁ।আমি তোকে কত্তো ভালোবাসি আর তুই ওই এমএসকে বিয়ে করে নিলি।কেন রে?
নীলা ব্যথায় কুঁকিয়ে উঠল।চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেলল।
নীলাঃ আকাশদা আ..মি মেঘু নই।আমি নীলা দেখ ভালো করে। ছাড় আমাকে।
নীলার কথা যেন আকাশের বোধগম্য হলো না।আকাশ নীলাকে আরো শক্ত করে চেপে ধরেঃ না ছাড়ব না।তোকে কখনো নিজের থেকে আলাদা করব না।তুই শুধু আমার মেঘপাখি আর কারো না।তোকে অন্য কারো হতে দেব না।তুই শুধু আমার।তোকে আমি নিজের করেই ছাড়ব(মাতাল কণ্ঠে)
বলে নীলার চোখ মুখে পাগলের মতো কিস করতে থাকে।
নীলা আকাশকে বারবার ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু পারছে না আকাশের শক্তি যেন ৩গুণ বেড়ে গেছে।
নীলাঃ প্লিজ আকাশদা ছেড়ে দাও।আমি মেঘলা নই নীলা।তুমি এখন হুঁশে নেই আকাশ।প্লিজ এরকম করো না।ভালো করে চেয়ে দেখ।আকাশ পরে কিন্তু পস্তাবে।
কিন্তু আকাশ নীলার কোনো কথা শুনল না।জোর করে নিজের করে নিল।
🌿
সকালে সূর্যের আলো চোখে পড়তেই মেঘলার ঘুম ভেঙে যায়।চোখ বন্ধ রেখেই উঠতে গিয়েও উঠতে পারে না।অনুভব করে কেউ ওকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে।চট করে চোখ খুলে পাশে এমএসকে দেখতে পায়।মুহূর্তে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।
মেঘলাঃ স্যা..এ এক..খানে(অবাক হয়ে)
পরক্ষণেই কালকের সব কথা মনে পড়ে যায়।আবার এমএসের দিকে তাকায়।এমএস বাচ্চাদের মতো গুটিশুটি মেরে মেঘলার বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে।মুখের মধ্যে স্নিগ্ধতার ছোঁয়া।মেঘলা কিছুক্ষণ এমএসের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিল।বিড়বিড় করেঃ এখন দেখে মনে হচ্ছে কিউটের ডিব্বা বাট সত্যিকার অর্থে তো আস্তো হিটলার।
বলে এমএসের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে উঠার চেষ্টা করল।কিন্তু এমএস আরো শক্ত করে ধরল।
এমএসঃ গুড মরনিং ডিয়ার ওয়াইফাই।(ঘুমো ঘুমু কণ্ঠে)
মেঘলাঃ বেড মরনিং।সকাল হয়ে গেছে এখন উঠুন আর আমাকেও উঠতে দিন।
এমএসঃ না আলেকতু দুমাই।পিলিজ।(বাচ্চা কণ্ঠে)
এমএসের কথা শুনে মেঘলা টাস্কি গেল।হা হয়ে এমএসের দিকে তাকিয়ে রইল।
এমএসঃ জানি আমি খুব হ্যান্ডসাম তাই বলে এভাবে তাকিয়ে থেক না নজর লেগে যাবে।
মেঘলা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল।
আমতা-আমতা করেঃ হ্যান্ডসাম না ছাই আস্তো কয়লার ড্রাম।হু(মুখ বাঁকিয়ে)
এমএস চট করে চোখ খুলেঃ এই মেয়ে তোমার মাথা ঠিক আছে তো।আমাকে কোন আকৃতিতে কয়লায় ড্রাম মনে হয়।তুমি জানো আমার পিছনে কত শত মেয়ের লাইন লাগানো।আর তুমি বলছ কিনা কয়লার ড্রাম।
মেঘলাঃ ও মা তাই নাকি?কিন্তু আমি তো আজ পর্যন্ত কোন লাইন দেখলাম না।আর যদি তাই হতো তাহলে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করতেন না।আসলে আপনিও বোঝতে পেরেছেন আপনার মতো হিটলারকে কেউ বিয়ে করবে না তাই আমাকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছেন।
এমএসঃ বাহ তুমি যে এর বুদ্ধিমতী আগে জানতাম না তো।(পিনচ মেরে)
মেঘলা চোখ ছোট ছোট করে এমএসের দিকে তাকাল।
এমএসঃ শুন মেয়ে তুমি চাও বা না চাও তুমি শুধু আমার।মানো আর নাই মানো তুমি আমার ডিয়ার ওয়াইফাই।সো এসব বলে উস্কিয়ে আমার থেকে মুক্তি পাবে এমনটা ভুলেও ভেব না।কারণ শুধু এই জন্মে না আগামী সাত জন্মেও তোমার আমার থেকে মুক্তি নেই।(মেঘলার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে)
এমএসের শীতল কণ্ঠে মেঘলার হৃদয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হলো।কোনোরকমে নিজেকে সামলিয়েঃ আপনি ঘুমান আমাকে যেতে দিন প্লিজ।
এমএসঃ একটু আগেই তো বললে হিটলার,হিটলাররা কি শিকার এত সহজে ছেড়ে দেয়।নো সুইটহার্ট।তুমি চলে গেলে আমি ঘুমাব কি করে।সো ডোন্ট ডেয়ার টু ডু ইট।চুপচাপ শুয়ে থাক আর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দাও।
বলে মেঘলার হাত নিজের মাথায় রাখল।মেঘলা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাই করল।
🌿
আকাশের ঘুম ভাঙলে মাথাটা ভার ভার অনুভব করে।কোনোক্রমে মাথায় হাত দিয়ে উঠে বসে।তারপর নিজের অবস্থা দেখে চমকে যায়।শ্বাস আটকে আসে।মাথায় জোর প্রয়োগ করলে রাতের সব ঘটনা মনে পড়ে যায়।
আকাশঃ ওহ নো এটা আমি কি করলাম।নীলার সাথে..ছিঃ ছিঃ এটা একদম ঠিক করি নি।
আকাশ সারারুমে একবার চোখ বুলায়।কিন্তু নীলাকে দেখতে পায় না।তা বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে যায়।শাওয়ার নিয়ে চুল মুছতে মুছতে বারান্দায় যায়।নীলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় জল পড়ছে।এমনটা নয় নীলা আকাশকে ভালোবাসে না।খুব ভালোবাসে।নীলার উপর আকাশের পুরো অধিকার আছে।কিন্তু আকাশ নীলাকে মেঘলা ভেবে..নীলা এটা চায় নি।
আকাশের উপস্থিতি টের পেয়ে নীলা চোখ মুছে ফেলে।আকাশের দিকে না তাকিয়েই চলে যেতে নেয়।কিন্তু তার আগেই আকাশ ওকে আটকে ফেলে।মাথা নিচু করেঃ সরি।
নীলা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাচ্ছিল্যের সুরেঃ সরি বললেই সব ঠিক হয়ে যাবে?
আকাশঃ আমি জানি কাল রাতে আমি তোর সাথে ঠিক করি নি।কিন্তু বিশ্বাস কর আমি ইচ্ছে করে..
নীলাঃ থাক না আকাশ এসব নিয়ে আলোচনার করার কোনো ইচ্ছাই আমার নেই।
আকাশঃ ঠিক আছে।আর কিছু বলছিনা।এটা ধর।
নীলাঃ কি।
আকাশ নীলাকে একটা পিল দিল।পিলটা হাতে নিয়ে নীলার বোঝতে বাকি রইল না এটা কিসের পিল।রাগী দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়েঃ তুমি একটা..নিজের দোষ ঢাকতে এটা দিচ্ছো?কাল রাতে জোর করে..আর এখন এটা দিয়ে সমাধান দিচ্ছো।ইউ জাস্ট..সর আমার সামনে থেকে।
বলে নীলা চলে গেল।
🌿
ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে আছে নীলা তার ঠিক সামনে আকাশ।কেউ কারো দিকে মুখ তুলে তাকানোর ভুল করছে না।নীলার পাশেই মেঘলা আর মেঘলার পাশে এমএস।আকাশের একপাশে রিয়া অপরপাশে টিয়া।নাইয়া দেবী মুখে মিথ্যে হাসি ঝুলিয়ে সবাইকে সার্ভ করছেন।করছেন বললে ভুল হবে।করতে বাধ্য হচ্ছেন এমএস বলেছে যে।এমএসের কথায় যে মহিলার ৮টার আগে ঘুম ভাঙে না তিনি সকাল ৬টায় উঠে রান্নাঘরে কাজে লেগে পড়েন।
মেঘলা খেতেই যাবে তার আগে এমএস মেঘলার মুখে খাবার তুলে দেয়।মেঘলার বিস্ময়ের সহিত এমএসের দিকে তাকায়।
মেঘলাঃ আরে কি করছেন সবার সামনে..(ফিসফিস করে)
এমএসঃ আই ডোন্ট কেয়ার।তবে তুমি কবে থেকে এসব কেয়ার করা শুরু করলে।বাই দ্যা রোড এখন আমাকে খাইয়ে দাও তো।(ফিসফিসিয়ে)
মেঘলাঃ পারব না।
এমএসঃ বেশি কথা না বলে আমাকে খাইয়ে দাও নয়ত..
বলে বাঁকা হাসল।
মেঘলা দাঁতে দাঁত চেপে এমএসের মুখে খাবার দিল।আকাশ এসব দেখতে আর রাগে ফুঁসছে।
মেঘলাঃ আপনি সবসময় আমাকে ব্ল্যাকমেইল করেন কেন।(ফিসফিস করে)
এমএসঃ কারণ তুমি সোজা কথার মানুষ না।(ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)
মেঘলাঃ অসহ্য(বিরক্তি নিয়ে)
রিয়াঃ দিভাই জিজু তোমরা এত ফিসফিস করছ কেন?জোর বললে কি হবে?
টিয়াঃ আরে গাধী বুঝিস না আমাদের সামনে কি আর জোরে জোরে প্রেমালাপ করা যায়(ঠোঁট টিপে হেসে)
মেঘলাঃ চুউউউউপ।আর একটা কথাও বলবে না।বেশি পেকে গেছ না।চুপচাপ খেয়ে স্কুলে যাও।
মেঘলার ধমক খেয়ে টিয়া-রিয়া চুপচাপ নাকে মুখে খেতে লাগল।
এমএসঃ আহা ডিয়ার ওয়াইফাই আমার হাফ ওয়াইফদের এভাবে বকছ কেন?ওরা কত্তো কিউট।
মেঘলা রাগে কটমট করে এমএসের দিকে তাকাল।
রিয়াঃ Last question জিজু তুমি দিভাইকে ওয়াইফাই ডাকো কেন?
এমএসঃ সিম্পল।ওয়াইফাই ছাড়া যেমন ফোন অচল তেমনি তোমার কিউট রসগোল্লার মতো দিভাইকে ছাড়া আমি অচল।তাই তোমার দিভাই আমার ওয়াইফাই।
টিয়াঃ জিজুউউ তুমি কতো রোমান্টিক।তুম..
মেঘলা চোখ পাকিয়ে টিয়ার দিকে তাকাতেই টিয়া চুপ হয়ে গেল।
🌿
মেঘলা ছাদে দাঁড়িয়ে আছে।পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে আকাশকে।কিছু না বলে আবার বাইরের দিকে দৃষ্টি স্থির করে।আকাশ মেঘলাকে একটানে নিজের দিকে তাকায়।দুবাহু চেপে বলেঃ মেঘপাখি তুই কেন এমএসকে বিয়ে করলি?কেন করলি বল?তুই আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে কি করে..বল না মেঘপাখি এসব মিথ্যা।তুই এমএসকে বিয়ে করিস নি?তুই এখনো আমারই আছিস।আকাশের।
মেঘলা আকাশের থেকে নিজেক ছাড়িয়ে নেয়।
মেঘলাঃ আকাশদা হোয়াট’স রং উইথ ইউ?এরকম ব্যবহার কেন করছ?আর আমি কেন তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব না?
আকাশঃ কারণ তুই আমাকে ভালোবাসিস।
মেঘলাঃ এটা তুমিও ভালো করে জানো মেঘলা কখনো আকাশকে ভালোবাসে নি।(তাচ্ছিল্যের সুরে) আর কি যেন বলছিলে আমি তোমারই আছি।হাহা হাসালে মেঘলা কখনো আকাশের ছিলই না।
আর মেঘলাকাশ কারো কাম্য নয় নীলাকাশ কাম্য।তাই আকাশ কখনো মেঘলা হবে না সবসময় নীলই থাকবে।(মুচকি হেসে)
আকাশঃ না মেঘপাখি।আমি মেঘলাকাশই পছন্দ করি নীলাকাশ নয়।আমার কখনোই নীলাকাশ কাম্য ছিল না।মেঘলাকাশই কাম্য ছিল।
মেঘলাঃ তুমি নিজেই নীলাকাশ বেছে নিয়েছ।
আকাশঃ বাধ্য হয়েছি।আমি তোকে ভালোবাসি মেঘপাখি।
মেঘলাঃ কিন্তু তুমি তো বলেছিলে তুমি নীলাকে ভালোবাসো।
আকাশঃ (নিশ্চুপ)
মেঘলাঃ প্লিজ আকাশদা আমাকে আর মেঘপাখি ডেক না।আমি বিবাহিত এমনকি তুমিও তাই তোমার মুখে এই নামটি মানায় না তোমার মুখে নীলপাখি নামটাই মানায়।
আকাশঃ প্লিজ মেঘপাখি আমার থেকে তোকে মেঘপাখি ডাকার অধিকারটা কেড়ে নিস না।আমি তোকে সত্যি খুব খুব খুব ভালোবাসি।
মেঘলাঃ কেন এমন করছ আকাশদা।নীলাকে বিয়ে করে কেন ওকে ভালো না বেসে আমাকে ভালোবাসছ?এটা ঠিক না।নীলা তোমার বিবাহিত স্ত্রী।তুমি ওকে ঠকাতে পারো না।কোন পরনারীকে ভালোবাসতে পারো না।
আর তুমি যদি আমাকে ভালোবেসেই থাকো তাহলে বিয়ের দিন কেন সবার সামনে আমাকে অপমানিত করলে?যেদিন তোমার এই কথা মনে ছিল না।সেদিন কেন এমন করেছিলে?
আকাশঃ #হয়ত_তোমারই_জন্য
বলে আর একমুহূর্তও না দাঁড়িয়ে চলে গেল।
মেঘলাঃ আমার জন্য আমাকেই প্রণয়ের দহনে পোড়ালে।এ কেমন ভালোবাসা তোমার।যেখানে দিনের পর দিন আমি যে কষ্ট পাচ্ছিলাম আর তুমি বোঝতে পারলে না।আদোও বোঝতে পারো নি নাকি বোঝেও অবোঝ হয়েছ।১৪টা বছর কম না আকাশদা।তোমার জন্য আমি ১৪টা বছর প্রণয়ের দহনে পোড়েছি।
তখন পিছন থেকে এমএসঃ পোড়ালে যেমন করে খাঁটি সোনা পাওয়া যায়। তেমনিই প্রণয়ের দহনে দগ্ধ করেই একজন খাঁটি প্রেমী পাওয়া যায়।যার ভালোবাসা খাঁটি নয়।তাতে কোন ভেজাল থাকে না।
মেঘলা একবার এমএসের দিকে তাকিয়ে নিচে চলে যায়।
এমএসঃ (আকাশের দিকে তাকিয়ে)ডিয়ার ওয়াইফাই একদম ঠিক বলেছ “আকাশ আর মেঘলা হবে না” আমি হতেও দেব না।মেঘলাকাশের থেকে নীলাকাশই বেটার।
🌿
রাতের চাঁদের আলোয় বারান্দা আলোকিত।সেই আলোকিত বারান্দায় দাঁড়িয়ে এক রমনী গভীর চিন্তায় মগ্ন।সামনে রেলিঙে থাকে ধোঁয়া উড়া কফির দিকে কোনো মনযোগ নেই।
তখন পিছন থেকে একজোড়া বলিষ্ঠ হাত ওকে জড়িয়ে ধরে।রমনীর ধ্যান ভাঙে।পিছনে না তাকিয়েই বোঝতে পারে কে সেই লোক।
মেঘলাঃ আপনি??
মেঘলার কাঁধে মুখ গুজে এমএসঃ আমার বউ কিসের চিন্তায় মগ্ন।এক মিনিট তুমি আবার তোমার চিঠিওয়ালা প্রেমিকের চিন্তা করছ না তো(ভ্রূ কোচকে)
মেঘলা এমএসের দিকে তাকাল।
এমএসঃ চিন্তা হতেই পারে দুদিন ধরে তো তার কোনো খবরই পাচ্ছো না।না কোনো চিঠি না এমএমএস।ইশ আমার বউ অন্য কারো চিন্তা করছে নো নো নো এটা মানা সম্ভব নাকি??আমার বউ সবসময় আমার চিন্তা করবে নিজের চিঠিওয়ালা প্রেমিকের না।আচ্ছা তোমার নিশ্চয়ই চিঠিওয়ালা প্রেমিক কোথায় জানতে ইচ্ছা করছে তাই না?
মেঘলা উৎসুক দৃষ্টিতে এমএসের দিকে তাকাল।
এমএসঃ আমার ডিয়ার ওয়াইফাইকে অন্য কেউ প্রেমপত্র দেবে তা আমি কি করে মেনে নিতে পারি বল তো।তাই আমি ওওএ সরিয়ে দিয়েছি।ও আর কখনো তোমাকে চিঠি দেবে না আর না তো এসএমএস।কি হলো দুঃখ হচ্ছে।
মুখ দিয়ে ‘চুচু’ আওয়াজ করল।
এমএসঃ বাট আফসোস তোমার দুঃখ প্রকাশেও কোনো লাভ হবে না।আমি মহান নই যে বউয়ের কষ্ট দেখে বউয়ের প্রেমিককে ছেড়ে দেব।আমি ওকে এমন শাস্তি দেব যে কখনো কারো বউয়ের দিকে নজর দেবে না।আচ্ছাচিন্তা করো না আমি নাহয় তোমার সাথে প্রেমালাপ করব দেখতে তোমার চিঠিওয়ালা প্রেমিকের কথা ভুলে যাবে।
বলে মেঘলাকে ছেড়ে রেলিঙ থেকে কফির মগটা নিয়ে এক চুমুক দিল।
এমএসঃ আহ..প্রাণ জুড়িয়ে গেল।আচ্ছা ওয়াইফাই তোমার মুখের কফি এত সুস্বাদু হয় কেন?মুখ মিষ্টতায় ছেয়ে গেছে।এখন থেকে তুমি রোজ আমার জন্য কফি করবে আর আমাকে দেওয়ার আগে নিজে একবার খাবে কেমন।আমি রোজ রোজ তোমার ঠোঁটের মিষ্টি ছোঁয়ার কফি খাবো।
মেঘলাঃ কোনো দরকার নেই।বেশি মিষ্টি খেলে ডায়াবেটিস বেড়ে যাবে।
এমএসঃ নো প্রব্লেম আমার ইনসুলিন তো আমার কাছেই আছে।
মেঘলা ভ্রূ কোঁচকে এমএসের দিকে তাকাল।
এমএসঃ আমার সকল রোগের ঔষধ তো তুমিই ডিয়ার ওয়াইফাই।সাধে কি তোমায় ওয়াইফাই ডাকি।
মেঘলাঃ জাস্ট টু মাচ।(বিরক্তি নিয়ে)
এমএস মেঘলাকে একটানে নিজের কাছে এনে কোমড় জড়িয়েঃ কি বললে(চোখ গরম করে)তুমি একটু বেশিই কথা বল।এর শাস্তি তোমায় পেতেই হবে(বাঁকা হেসে)
(চলবে)