হয়ত তোমারই জন্য পর্ব-১৩

0
698

#হয়ত_তোমারই_জন্য
ঐশিতা সেন
পর্বঃ ১৩

মেঘলাঃ শাস্তি?আর কি শাস্তি দেওয়া বাকি?
এমএসঃ এখনো অনেক কিছু বাকি।
মেঘলাঃ ও তাই নাকি?তো এবার কি শাস্তি দিতে চান?
এমএসঃ আমার কথা গুলো তোমার কাছে টু মাচ মনে হয় তাই না?আমার কাছে আসলে তুমি বিরক্ত হও তাই না?গুড।এবার আমাকেই সহ্য কর।
মেঘলাঃ সেটা তো করেই আসছি(বিড়বিড় করে)
এমএসঃ আজ সারারাত তুমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে।
মেঘলাঃ কিহহহহ
এমএসঃ আরে আস্তে।আমার কানের পর্দা ফাটানোর প্ল্যান আছে নাকি?পরে কিন্তু লোকের তোমাকেই বলবে কানে কালা এমএসের বউ।
মেঘলাঃ সে যা ইচ্ছা তাই বলুক আই ডোন্ট কেয়ার।বাট আমি এখানে সারারাত কেন দাঁড়িয়ে থাকব?
এমএসঃ বিকজ ইট’স ইওর পানিশমেন্ট।আরে পুরোটা তো বলিই নি।তোমাকে এখানে সারারাত দাঁড়িয়ে থাকতে হবে বাট নিজের পায়ের উপর ভর না দিয়ে।
মেঘলা চোখ ছোট ছোট করে এমএসের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল।
মেঘলাঃ আপনার মাথা ঠিক আছে তো?
এমএসঃ খারাপ হতে যাবে কেন?
মেঘলাঃ খারাপ না হলে এরকম অসম্ভব কথাবার্তা বলেন কি করে। কেউ নিজের পায়ের উপর ভর না দিয়ে কীভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে?
এমএসঃ এভাবে(বাঁকা হেসে)
বলেই মেঘলাকে নিজের কোলে তুলে নিল।মেঘলা হঠাৎ আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিল না।তাই পুরো ফ্রিজড হয়ে গেল।
এমএসঃ এবার বোঝলে বউ কিভাবে নিজের পায়ের উপর ভর না দিয়ে সারারাত এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে।
মেঘলাঃ আরে কি করছেনটা কি।নামান আমাকে?
এমএসঃ এই মেয়ে এত ছটপট কর কেন?শান্ত মেয়ের মতো থাকতে পারো না?শুন এটা তোমার শাস্তি সো নো মোর টক।এভাবেই থাকো সাররাত।
মেঘলা করুণ চোখে এমএসের দিকে তাকাল।এমএসের কোনো ভাবান্তর নেই।
মেঘলাঃ এই মেন্টাল লোকটা আমাকে শাস্তি দিচ্ছে নাকি নিজেকে?এভাবে সারারাত আমাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে তো উনার পায়ে+হাতে ব্যথা করবে।(মনে মনে)
এমএসঃ ডিয়ার ওয়াইফাই তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী তাই তোমার শাস্তি নিশ্চয়ই আমারও প্রাপ্য।এন্ড ডোন্ট ওয়ারি তোমার মতো শুটকিকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে আমার হাতে একটুও ব্যথা করবে না।তোমার থেকেও বোধহয় আমার ডাম্বেলের ভার বেশি।আর পায়ে ব্যথা করলে তুমি তো আছোই সারিয়ে দেওয়ার জন্য।
তুমি যে আমাকে নিয়ে এতটা ভাব সেটা জেনে খুব খুশি হলাম গো বউ।
এমএসের কথা শুনে মেঘলা হকচকিয়ে উঠল।
মেঘলাঃ আপনি আমার মনের কথা কি করে জানলেন?(অবাক হয়ে)
এমএসঃ দিল কা কানেকশন সে(মৃদু হেসে)
BTW ডিয়ার ওয়াইফাই আমার গলা জড়িয়ে ধরছ না কেন?এভাবে দাঁড়ানো যায়?
মেঘলাঃ পারব না(ভেংচি কেটে)
এমএসঃ জানো তুমি যদি আমার গলা জড়িয়ে ধর তার মানে এটা না যে তুমি আমাকে ভালোবেসে ধরেছ তার মানে এটা তুমি আমাকে বিশ্বাস কর না,আমি যেকোনো সময় তোমাকে নিচে ফেলে দিতে পারি(বাঁকা হেসে)
তৎক্ষনাৎ মেঘলা এমএসের গলা জড়িয়ে ধরল।এমএস হুহু করে হেসে দিল।
এমএসঃ বাহ আমার শেরনী ভয়ও পায়?
মেঘলাঃ ন..না ভ..য় পাই নি তো।(তুতলিয়ে)আপনাকে বিশ্বাস নেই।এমনিতেই আমার কথায় কথায় চলতে হয় এখন যদি ফেলে দিয়ে কোমর ভাঙেন তাহলে তো আমাকে সম্পূর্ণ আপনার উপর নির্ভর হতে হবে।
এমএসঃ তা আমার উপর নির্ভর হলে সমস্যা কোথায়?
মেঘলাঃ আছে অনেক সমস্যা।আপনি যখন চলে যাবেন তখন?
এমএসঃ মানে??আমি চলে যাব কেন?
মেঘলাঃ সেটা আপনিই ভালো জানেন(দীর্ঘশ্বাস ফেলে)
এমএস ভ্রূ কোঁচকে মেঘলার দিকে তাকাল।
এমএসঃ তুমি একটু বেশিই ভাবো।
মেঘলা আর কি বলল না।বাইরের দিকে মনোনিবেশ করল।
🌿
নীলার কাছে আবার ক্ষমা চাইবে ভাবতে ভাবতে আকাশ রুমে ঢুকে।কিন্তু রুমে ঢুকে দেখে নীলা রুমে নেই।
আকাশঃ নীলা কোথায়?এখনো আসে নি?একটু পর নিশ্চয়ই আসবে।
ভেবে অপেক্ষা করতে থাকে।কিন্তু অনেকটা সময় পরও যখন আসে না তখনঃ কি ব্যপার আসছে না কেন?একবার গিয়ে দেখি তো ও কোথায়।
আকাশ নীলাকে খুজতে বের হও।রান্নাঘর,ড্রইংরুম,ছাদ খুজেও যখন পায় না তখন চিন্তা হয়।
আকাশঃ গেল কোথায় মেয়েটা?
নিচে এসে আবার খুঁজতে লাগে।বৃষ্টির রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পায় বৃষ্টির রুমে কেউ আছে।
আকাশঃ বৃষ্টি তো বাড়ি নেই।তাহলে ওর রুমে কে?
রুমে ঢুকে দেখে নীলা বৃষ্টির রুমে শুয়ে আছে।
আকাশঃ আমার উপর রাগ করে এখানে এসে শুয়েছে।হয়ত কালকের ঘটনার পর আমাকে আর বিশ্বাস করতে পারছে না।(দীর্ঘশ্বাস ফেলে)কিন্তু ওকে এখানে কেউ দেখে ফেললে তো সমস্যা হবে।এবার কি করি?
আকাশ নীলার কাছে যায়।হাত বাড়িয়েও আবার সরিয়ে নেয়।নীলাকে ছুঁতেও ইতস্তত বোধ করছে।পরে অনেক ভেবে নীলাকে কোলে তুলে নিয়ে নিজের রুমে এসে বিছানায় শুইয়ে দেয়।গায়ে কাঁথা জড়িয়ে দিয়ে বারান্দায় চলে যায়।
বারান্দায় গিয়ে দেখে মেঘলার রুমের বারান্দায় এমএস আর মেঘলাকে।এমএসের কোলে মেঘলা।এটা দেখে আকাশের হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ শুরু হয়।চোখের কার্নিশ বেয়ে দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে।
আকাশঃ মেঘপাখি তুই কি সত্যিই এমএসকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিস।কিন্তু কিভাবে তুই এমএসকে ভালোবাসতে পারিস।তুই তো অন্য কাউকে ভালোবাসতিস।তোর থেকে ও দুরে চলে যাওয়ার পরও তুই আমাকে ভালোবাসতে পারিস নি।না ওকে ভুলতে পেরেছিস।১৪বছর ধরে তোর মনে জায়গা করার কম চেষ্টা করি নি।কিন্তু তুই আমাকে ভালোবাসতে পারিস নি।তাহলে দুই দিনের পরিচয়ে এমএসকে কি করে ভালোবাসতে পারিস।আমাকে নাহয় ভালোবাসতিস না কিন্তু ও তো তোর ভালোবাসা ছিল তাহলে ওকে ভুলে কি করে এমএসকে বিয়ে করতে পারলি।(বিড়বিড় করে)
তখন এমএসের ডাকে আকাশের ধ্যান ভাঙে।
এমএসঃ আরে শালাবাবু আপনি এখানে??(আকাশের দিকে তাকিয়ে)
এমএসের কথা শুনে মেঘলাও ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে আকাশের দিকে তাকায়।আকাশকে দেখে মেঘলা ভীষণ অস্বস্তিতে পড়ে যায়।কারণ ও এখন এমএসের কোলে আছে।তাই এমএসের কোল থেকে নামার চেষ্টা করে।এমএস চোখ গরম করে মেঘলার দিকে তাকায়।মেঘলা ছটফট বন্ধ করে দেয়।দাঁতে দাঁত চেপে আবার এমএসকে সহ্য করে।নইলে এমএস আবার কখন আবার ওর পরিবারের ক্ষতি করে দেবে।
আকাশঃ শালাবাবু??শালাবাবু কে??(অবাক হয়ে) বর্ষণ তো এখানে নেই।
এমএসঃ আরে আমি বর্ষণকে না আপনাকে বলেছি।
আকাশঃ আমাকে??(জোরে)
এমএসঃ উফফ ভাইবোন এক গোয়ালের গরু চিল্লিয়ে আমার কানের ১২টা বাজাবে।আপনি ছাড়া আর কে আছে যে শালাবাবু বলব।
আকাশঃ দেখুন আপনার ভুল হচ্ছে আমি আপনার শালাবাবু নই(দৃঢ় কণ্ঠে)
এমএসঃ ভুল কোথায় হচ্ছে?ঠিকই তো বলছি।আপনি আমার ওয়াইফাইয়ের একমাত্র ভাইয়ের বেস্টফ্রেন্ড তো ভাই-ই তো লাগেন ওর।ফ্রেন্ডের বোন তো বোনই হয় তাই না।সে হিসেবে আমার শালাই তো।(ঠোঁট টিপে হেসে)
এমএসের কথা শুনে মেঘলা ভ্যাবাচেকা খেয়ে ওর দিকে তাকাল আর আকাশ রেগে গেল কিছু বলতে চেয়েও না বলে হনহনিয়ে রুমে ঢুকে পড়ল।আকাশের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে এমএসের ঠোঁট প্রশস্ত হলো।
🌿
সকালে মেঘলার ঘুম ভাঙলে নিজেকে কারো বাহুডোরে আবিষ্কার করে।ভালো করে তাকিয়ে দেখে ও এমএসের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে আর এমএস ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।যেন ছেড়ে দিলে কোথাও পালিয়ে যাবে।
মেঘলাঃ কি ব্যাপার আমি তো বারান্দায় স্যারের কোলে..এখানে এলাম কবে?আমি কি স্যারের কোলেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম?ও গড(নিজের মাথায় চাপড় দিয়ে)স্যার এখানে নিয়ে এসেছেন।হবে হয়ত।
বিড়বিড় করে বলে এমএসের দিকে একবার তাকাল।তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে এমএসকে আস্তে করে ছাড়িয়ে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেল।
🌿
নীলার ঘুম ভাঙতেই নিজেকে আকাশের বিছানায় আবিষ্কার করে।আকাশের বিছানায় নিজে দেখে ধড়ফড়িয়ে উঠে।
নীলাঃ আমি এখানে??আমি তো বৃষ্টির রুমে ছিলাম।আকাশ..
ভেবে চারদিকে তাকালে সোফায় আকাশের ঘুমন্ত মুখের দিকে নজর যায়।বোঝতে বাকি থাকে না আকাশই ওকে এখানে নিয়ে এসেছে।নীলা বিছানা ছেড়ে আকাশের কাছে যায়।হাটু গেড়ে সোফার পাশে বসে আকাশের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।হাত আপনাপনি আকাশের সিল্কি চুলের উপর চলে যায়।কিছুক্ষণ আকাশের মাথায় হাত বুলিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
🌿
বর্ষণ আর বর্ষা সমুদ্রের পানিতে পা ডুবিয়ে বসে আছে।বর্ষণের কাঁধে বর্ষার মাথা, হাতে হাত। দুজনে সূর্যোদয় উপভোগ করছে।
বর্ষাঃ বর্ষণদা আমাদের এখানকার কাজ তো শেষ ঢাকা ব্যাক করব কবে?
বর্ষণঃ এত তাড়া কিসের?প্রি-ম্যারেড হানিমুন তো এখনো হলো না।কাজের কারণেই কেটে গেল এই ক’টাদিন।
বর্ষণের কথা শুনে বর্ষার মুখ লাল হয়ে গেল।
বর্ষাঃ ইশ বর্ষণদা তুমি না একটা যাচ্ছে তাই।তোমার মুখে কিছু আটকায় না, না?অসভ্য লোক একটা।
বর্ষণঃ না গো কিছু আটকায় নায়।জানিস তো গাল দুটি টসটসে লাল টমেটো হয়ে গেছে ইচ্ছে করছে..(ডেবিল চাহনিতে)
বর্ষা বর্ষণের বুকে কিল-ঘুষি দিয়েঃ অসভ্য,লুচু বান্দর পোলা।তোমার কি একটুও লজ্জা শরম নেই?
বর্ষণঃ না নেই।লজ্জা নারীর ভূষণ পুরুষের না।
বর্ষাঃ তাই বলে আমারে বারবার লজ্জায় ফেলবে?যাও তোমার সাথে আর কথা নাই।
বলে উঠে চলে গেল।বর্ষণ পিছন পিছনঃ আরে এত রেগে যাস কেন বল তো?আচ্ছা সরি আর বলব না।আমি এসব বললে তোর গাল লাল হয়ে যায়।তোকে আরও বেশি সুন্দর লাগে তাই তো বারবার এসব বলে তোকে লজ্জায় ফেলি।আর তোর লজ্জামাখা মুখশ্রী আমি উপভোগ করি।
বর্ষা উত্তর না করে নিজের মতো হাঁটতে থাকল।
বর্ষণঃ আরে দাঁড়া না।এই মেয়ে কথা শুনিস না কেন?
বলে এগিয়ে বর্ষার সামনে দাঁড়াল।
বর্ষণঃ চল আমার সাথে(বর্ষার হাত ধরে)
বর্ষাঃ কোথায়(ভ্রূ কোঁচকে)
বর্ষণঃ রেজিস্ট্রি অফিসে।আজ আমরা রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করব।
বর্ষা বর্ষণের হাত ছাড়িয়েঃ কিহহহহ।তোমার মাথা ঠিক আছে??
বর্ষণঃ হ্যাঁ মাথা ঠিকই আছে।আজ তোকে আমি বিয়ে করেই ছাড়ব।তুই সবসময় খালি আমার থেকে দুরে পালাতে চাস।একবার বিয়ে হয়ে গেলে আর পারবি না।
বর্ষাঃ এমা না না।এরকম করো না প্লিজ।আমি তোমার থেকে দুরে পালাতে চাই না বিশ্বাস করো।আচ্ছা ঠিক আছে ঢাকা ফিরে আমরা বিয়ে করব নে?
বর্ষণঃ সত্যি তো।ঢাকা ফিরেই কিন্তু।আমি আংকেল আন্টির কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাব।
বর্ষাঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
বর্ষণঃ আমরা কালই ঢাকা ফিরছি।
বর্ষাঃ এ্যাঁ।
বর্ষণঃ এ্যাঁ নয় হ্যাঁ।
বর্ষাঃ যেমনটা তুমি ভালো বোঝ।
(চলবে)