হয়ত তোমারই জন্য পর্ব-১৫+১৬

0
650

#হয়ত_তোমারই_জন্য
ঐশিতা সেন
পর্বঃ ১৫+১৬

মেহেদি পড়ানোর লোক এসেছে।যেহেতু সময় কম তাই মেহেদীর অনুষ্ঠান হচ্ছে না।
তিনজন মেয়ে নীলা,বর্ষা আর বৃষ্টির হাতে মেহেদী পড়িয়ে দিচ্ছে।এমএস বলেছে ও মেঘলার হাতে মেহেদী পড়িয়ে দেবে।তাই মেঘলাকে এমএস মেহেদি পড়িয়ে দিচ্ছে।
একজন মেয়েঃ আপনার হাতে কার নাম লেখব।
বর্ষাঃ বর্ষণ (আনমনে)
(বর্ষার এদিকে ধ্যান নেই ও বারবার বর্ষণের কথা ভাবছে।তাই যখন এই মেয়ে নাম জিজ্ঞেস করল তখন বর্ষণের নাম বলে দিল)
বৃষ্টিও আনমনে বর্ষণের নামের জায়গায় শ্রাবণের নাম বলে দিল।
সেটা বাকি কেউ খেয়াল না করেলেও মেঘলা ঠিক শুনেছে।মেঘলার ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটে উঠল।
নীলাকে জিজ্ঞেস করলে নীলা আকাশের নামই বলে।
মেঘলাঃএই যে মি. স্যার একটু জায়গা খালি রাখুন পরে আমি আমার বরের নাম লিখে নিব নে।
এমএসঃ কেন মেম আমিই লিখি না।
মেঘলাঃ আপনি জায়গা খালি রাখুন তো।আমি লেখব সঠিক সময়ে(রহস্যময় হাসি দিয়ে)
এমএস ভ্রূ কোঁচকে মেঘলার দিকে তাকিয়ে নামের জন্য একটু জায়গা খালি রাখে।
🌿
মেঘলা,বর্ষা,বৃষ্টি আর নীলা কলাপাতা রঙের শাড়ি পড়ে চারটা আলাদা রুমে বসে আছে।কিছুক্ষণ আগেই পার্লারের লোকেরা সাজিয়ে রেখে গেছে।অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার সময় টিয়া আর রিয়া নিয়ে যাবে।
মেঘলা রুমে বসে ফোন স্ক্রল করছিল।হঠাৎ পেটে ঠান্ডা কিছুর ছোঁয়া পেয়ে হকচকিয়ে উঠল।পিছনে তাকিয়ে দেখে এমএস।
মেঘলাঃ আপনি??
এমএসঃ আমার বউকে সবার আগে হলুদ লাগাতে চলে এলাম।
বলে বিছনা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সাথে মেঘলাকেও দাঁড় করাল।কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেঘলাকে ভালো করে দেখে কয়েকটা হার্টবিট মিস হয়ে গেল।
মুখ দিয়ে বের হলোঃ অপূর্ব।
মেঘলা সত্যিই অপূর্ব লাগছে।কলাপাতা রঙের শাড়িতে বেশ মানিয়েছে।সাথে মুখে হালকা মেকাপ,ঠোঁটে লাল লিপস্টিক,কপালে লাল টিপ,গলায় হাতে কাঁচাফুলের গয়নাতে এক কথায় অসাধারণ লাগছে।(বাকিদেরও সেইম সাজ শুধু ওদের চোখে কাজল দেওয়া)
এমএসকে নিজের দিকে এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেঘলা একটু লজ্জা পেল।
মেঘলাঃ কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?
এমএসঃ (ধ্যান ভাঙল) তোমার সমস্যা কি?আমি আমার ডিয়ার ওয়াইফাইকে দেখছি।তোমার হিংসে হচ্ছে নাকি?
এমএসের কথা শুনে মেঘলা কেবলা বনে গেল।
মেঘলাঃ আমি নিজে নিজেকে হিংসা করব কীভাবে??
এমএসঃ সেটা তুমিই ভালো জানো।(ঠোঁট বাকিয়ে)
মেঘলাঃ জাস্ট ইমপসিবল।কুছ বিইই।আপনি যান তো এখন যেকেউ চলে আসতে হবে।
এমএসঃ হাহ যাবো তো।আগে যে জন্য এসেছি তা সেড়ে নেই।
হাত মেঘলার সামনে বের করল।
মেঘলাঃ কি(ভ্রূ কোঁচকে)হলুদ???
এমএসঃ হু..আমাকে সবার আগে তুমি হলুদ লাগিয়ে দাও।
মেঘলাঃ কেন?
এমএসঃ আমি বলছি তাই।
মেঘলাঃ পারব না।
এমএস চোখ গরম করে মেঘলার দিকে তাকাল।
মেঘলাঃ সবসময় শুধু ব্ল্যাকমেইল করে(বিড়বিড় করে)দিচ্ছি তো।এভাবে তাকান কেন?
বলে এমএসের হাত থেকে হলুদ নিয়ে এমএসের গালে হলুদ লাগিয়ে দিল।
মেঘলাঃ হয়েছে?এভাব যান।
এমএসঃ উহু না।
বলে মেঘলাকে একটানে নিজের কাছে আনল তারপর মেঘলার গালে নিজের গাল ঘঁষে দিল।কিছুক্ষণের জন্য মেঘলা ফ্রিজড হয়ে গেল।বাস্তবতা উপলব্ধির সাথে সাথে এমএসকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নেন।জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতেঃ কি করছেনটা কি।যান এখান থেকে কেউ চলে আসবে।
এমএসঃ হু আরেকটা কাজ বাকি।
বলে ড্রেসিং টেবিল থেকে কাজল আনল।
এমএসঃ তোমার সাজ ইনকমপ্লিট।কাজল দাও নি।আমি দিয়ে দিচ্ছি।
মেঘলাঃ না।আমি কাজল পড়ি না।
এমএসঃ জানি তো তাই আমি পড়িয়ে দিচ্ছি।
মেঘলাঃ না..
এমএসঃ এই মেয়ে বেশি নাচানাচি করিস কেন?সোজা হয়ে দাঁড়া নইলে সারামুখে কাজল মেখে দেব।
মেঘলা আর কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।এমএস সুন্দর করে ওকে কাজল পড়িয়ে দিল।এমএসের এতটা কাছাকাছি আসায় মেঘলার কেমন যেন করতে লাগল।কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেল।
এমএসঃ উফ এত কাঁপা-কাঁপি করো কেন।
হুম এখন একদম ঠিক আছে।
মেঘলাঃ হয়েছে?এবার তো যান।(অন্যদিকে তাকিয়ে)
এমএসঃ (মুচকি হেসে) ওকে জান।
যেতে যেতেঃ লাল টমেটো দেখলে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে তাই নিজেকে কন্ট্রোল করার জন্য চলে যাচ্ছি(বাঁকা হেসে)
এমএসের কথা কর্ণগোচর হতেই মেঘলার ইচ্ছে করে মাটি ফাঁক করে পাতালে চলে গেলে।কি নির্লজ্জ লোক রে বাবা।
মেঘলা শাড়ি দিয়ে পেট ভালো করে ঢেকে রাখে যাতে কেউ হলুদ দেখতে না পায়।
🌿
বর্ষা উদাস মনে ঘরে বসে আছে।কয়েক ঘন্টা পরেই ও অন্য কারো হয়ে যাবে।সিঁথিতে অন্য কারো নামের সিঁদুর থাকবে।নিজের ভালোবাসার মানুষটির উপর আর কোনো অধিকার থাকবে না।ভাবতেই গলা ভারী হয়ে আসল।চোখের কোণে অশ্রুকণা জমল।
কাঁধে কারো স্পর্শে পিছন ফিরে বর্ষণকে দেখতে পায়।বর্ষা মুখ ফিরিয়ে নেয়।বর্ষণ এসে বর্ষার সামনে দাঁড়ায়।বর্ষার গালে হলুদ লাগাতে লাগাতেঃ জানি তোর উপর আমার আর কোনো অধিকার নেই।তাই শেষ বারের মতো একটু অধিকার খাটাচ্ছি।কাল থেকে তো অন্য কারো হয়ে যাবি।
বর্ষা দেখল বর্ষণের চোখেও অশ্রুকণা চিকচিক করছে।
বর্ষণঃ শেষ বারের মতো কি তোকে একটু জড়িয়ে ধরতে পারি।বেশি সময় নেব না।কিছুক্ষণের জন্য মাত্র।ধরে নে এটাই তোর কাছে আমার শেষ চাওয়া।
বর্ষা কিছুই বলতে পারল না।কেউ যেন ওর গলা চেপে ধরেছে।অনেক কিছু বলতে চায় বর্ষণকে কিন্তু গলা দিয়ে স্বর বের হচ্ছে না।বর্ষণ আর কোনোকিছুই না ভেবে বর্ষাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।বর্ষা অনুভব করল ওর কাঁধে তরল কিছু গড়িয়ে পড়ছে।বেশ বোঝতে পারল বর্ষণ কাঁদছে।যে ছেলে নিজের মায়ের মৃত্যুর পর একদম শক্ত হয়ে গেছিল।বাবার হাজার অবহেলাও যার চোখে একফোঁটা পানি আনতে পারে নি সে আজ প্রেয়সীকে হারানোর ব্যথায় কাঁদছে।বর্ষার হাত অজান্তের বর্ষণের পিঠে চলে গেল।শক্ত করে বর্ষণকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল।এতক্ষণ যে কষ্টটা নিজের মধ্যে ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিল এখন বর্ষণকে দেখে তা প্রকাশিত হলো।
কিছুক্ষণ পর বর্ষণ বর্ষাকে ছেড়ে দিল।কপালে অধর ছুঁইয়েঃ ভালো থাকিস।আমি চাই তুই সবসময় সুখী হো।পারলে আমাকে ভুলে যাস।
বলে আর এক সেকেন্ডও না দাঁড়িয়ে চলে গেল।
বর্ষা ওখানেই ধপ করে বসে পড়ল।বিড়বিড়িয়েঃ আমার ভালো থাকা তো আমার কাছেই বর্ষণদা।আমি যে তোমার সাথেই সুখের স্বপ্ন দেখেছি।কি করে তোমাকে ছাড়া সুখী থাকব।আমি যে একটা মুহূর্তও তোমাকে ছাড়া ভাবতে পারি না।কি করে তোমাকে ছাড়া থাকব।(বলে ডুকরে কেঁদে উঠল)
🌿
আকাশঃ তুই এখানে?
নীলাঃ তুমি কি মন থেকে এই বিয়ে করছ?
আকাশঃ হুম।
নীলাঃ কিন্তু তুমি তো এই বিয়েতে..
আকাশঃ নিজের অজান্তে তোর সাথে একটা অন্যায় করে ফেলেছি।তার প্রায়শ্চিত্ত করতেই করছি।হয়ত তোকে সুখী করতে পারব না।কিন্তু আমার কারণে কেউ তোর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলবে না।যতদিন বেঁচে আছি তোকে আগলে রাখব।নিজের স্ত্রীর মর্যাদা দেব।
নীলাঃ কথা দিচ্ছো তো??যতদিন বেঁচে আছো আছো আমাকে নিজের স্ত্রীর মর্যাদা দেবে।
আকাশঃ হুম কথা দিচ্ছি।
আকাশের অগোচরে নীলা বাঁকা হাসল।
নীলাঃ আরে আকাশদা তোমার গালে ওটা কি?
আকাশঃ কই?কি?(নিজের গালে তার দিয়ে)
নীলাঃ আরে ওখানে না।দাঁড়াও আমি দেখছি।
বলে নীলা আকাশের গালে হাত ঘঁষে কিছু মুছার ভান করল।
নীলাঃ হুম এখন ঠিক আছে(মুছকি হেসে) আহ..(চোখে হাত দিয়ে)
আকাশঃ কি হয়েছে?
নীলাঃ চোখে যেন কি একটা পড়ল।
আকাশঃ আরে দাঁড়া আমি দেখছি।
বলে নীলার চোখের দিকে হাত বাড়ায়।নীলা আকাশের একহাত ধরে ফেলে।
নীলাঃ না না লাগবে না।এমনিতেই বেরিয়ে যাবে।
আকাশঃ চুপ কর তো।
বলে নীলার হাত ছাড়িয়ে এক গাল দিয়ে নীলার গালে ধরল অন্য হাত চোখের কাছে নিয়ে ফু দিতে লাগল।আকাশ খুব যত্ন সহকারে নীলার চোখ দেখছে।আর নীলা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে আকাশকে।
কিছুক্ষণ পর আকাশঃ এখন ঠিক আছে।
নীলার ধ্যান ভাঙ্গলো।
নীলাঃ হুম।
আকাশ নীলার থেকে সরে আসল।কিন্তু নীলার দিকে তাকিয়ে অবাক।কারণ নীলার গালের যে জায়গায় ধরেছিল ওখানে হলুদ লাগানো।
আকাশঃ আরে..
নীলাঃ আমি যাই আমাকে আবার খুঁজবে।
বলে আকাশকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেল।আকাশ নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখল হাতে হলুদ লাগানো।নীলার পুরো পরিকল্পনা বোঝতে পেরে রিয়েকশন দিতে ভুলে গেছে।
🌿
পাশাপাশি চারটা স্টেজে বসানো হয়েছে মেঘলা,বর্ষা,বৃষ্টি আর নীলাকে।ঠিক তাদের সামনে পুরুষমণ্ডলী।মেঘলা ঠিক সামনে এমএস,বর্ষার সামনে শ্রাবণ,বৃষ্টির সামনে বর্ষণ আর নীলার সামনে আকাশ।
একে একে সবাই হলুদ লাগালো।প্রায় ৫ঘন্টা পর শেষ হলো হুলুদের অনুষ্ঠান।
তারপর বর কনেকে আদ্রি স্নান করানো হলো।সব নিয়মাবলি শেষে বড়রা ক্লান্ত হয়ে রুমে চলে গেছে।বর কনে রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে ড্রেস চেঞ্জ করার পর ছোটরা মানে টিয়া-রিয়া আর মেঘলা,বর্ষা,বৃষ্টি,নীলার কিছু কাজিন সবাইকে নিয়ে ছাদে গেল।
মেঘলাঃ কি ব্যাপার এখন এখানে নিয়ে এলে কেন।অনেক রাত হয়েছে ঘুমাবো তো।
রিয়াঃ দিভাই একদিন না ঘুমালে কিচ্ছু হবে না।আজ একটু মজা করি না।দেখে মেহেদির অনুষ্ঠানও হলো না।তাই আমরা ভাবলাম ছোট খাটো একটা পার্টি করি।
বর্ষণঃ কিসের পার্টি যা ঘরে যা।ঘুমা অনেক রাত হয়েছে।এখন কোনো পার্টি হবে না।
নীলয়ঃ(নীলার কাজিন)একটা দিনই তো বর্ষণদা একটু মজা করি না।সবার বিয়ে একদিনেই এর পর কত বছরে যে বিয়ে খাবো তার ঠিক নেই।(দুঃখী ভাবে)
এমএসঃ আরে শালাবাবু মেনেই নাও।ছোটরা একটু মজাই তো করতে চাইছে।বেশিক্ষণ তো না একটু নাচ-গান হবে দ্যাটস ইট।
বর্ষণ রাগী চোখে এমএসের দিকে তাকল।
এমএসঃ এই ভাইবোন দুজনের সমস্যাটা কি যখন যার ইচ্ছা আমাকে চোখ দেখায়।দাঁড়াও আগে যে কাজে এসেছি সেই কাজটা হয়ে যাক তারপর তোমাদের চোখ দেখাচ্ছি।(বিড়বিড় করে)
রিয়া-টিয়াঃ পিলিজ দাভাই(বাচ্চা ফেস বানিয়ে)
বোনেদের মুখ দেখে বর্ষণ আর মানা করতে পারল না।বাকিরাও কিছু বলল না।
ছোট্ট খাটো পার্টি শুরু হলো।ছোটরা পুরোটা এঞ্জয় করছে।কেউ নাচ করছে কেউ গান।বিচিন্ন রকম এক্টিভিটি করছে।
আকাশ,বর্ষণ,শ্রাবণ,বৃষ্টি,বর্ষা মনের কষ্ট চেপে রেখে সবার সামনে মিথ্যা হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে।এমএস আর নীলা খুব খুশি।মেঘলার মনোভাব বোঝা দায়।
রিয়াঃ এখন বরেদের মধ্যে থেকে কেউ গান গাও।
টিয়াঃ হ্যাঁ তোমরা শুধু দেখেই যাচ্ছো।এখন কি করো।
এমএসঃ ওকে লিটল প্রিন্সেসরা।আমি গান..না না দেখই কি করি।
বলে একটানে মেঘলাকে বসা থেকে উঠিয়ে নেয়।মেঘলা ভ্রু কোচকে এমএসের দিকে তাকায়।এমএস ভিলেনমার্কা হাসি ফুটিয়ে মেঘলাকে নিয়ে ছাদের মাঝখানে যায়।তারপর
এমএসঃ
“তুমি আমার কাছে ফুটফুটে ওই রাতের শুকতারা
তাই রাত জাগিয়া মনের সুখে দেই যে পাহারা।”
(গান গাইতে গাইতে মেঘলাকে নিয়ে কাপল ডান্স শুরু করে।)
তুমি আমার কাছে শিশির ভেজা সোনালী সকাল
তোমায় এক নজর দেখিয়া আমি হয়ে যাই মাতাল।(মাতাল চোখে মেঘলার দিকে তাকিয়ে)
তুমি আমার কাছে যুদ্ধে জয়ী সাত রাজার ধন
শত বাঁধা ডিঙাই পাইছি তোমায় মনের মতো মন।(মেঘলা ঘুরিয়ে)
আমার মনের জোসনা আমি কাউকে দেব না
তোমায় গাঁইথা রাখছি মনের মাঝে নিজেও জানো না।
যতই করো বাহানা তোমায় যেতে দেব না
আমি পাগল হয়ে ঘুরব তবুও পিছু ছাড়ব না।”
…(Music)…
এসব দেখে আকাশের অসহ্য লাগছিল।তাই নীলাকে টেনে উঠিয়ে মেঘলাদের কাছে চলে যায়।
আকাশঃ
“তোমার মিষ্টি ওই চুলের সুভাষ ভালো লাগে খুব
বড় ইচ্ছা করে তোমার মাঝে হারাই দি এক ঘুম।(নীলাকে ঘুরিয়ে নাচ্ছে কিন্তু নজর মেঘলার দিকে)
আমার মন যে মানে না আর দুরে থেকো না(২)
আমার পরাণপাখি তুমি বিনা থাকে আনমনা।
(আকাশের দৃষ্টি পর্যবেক্ষণ করে এমএস মেঘলার আরো কাছাকাছি চলে যায়।
এমএসঃ
“আমার মনের জোসনা আমি কাউকে দেব না
তোমায় গাঁইথা রাখছি মনের মাঝে নিজেও জানো না।
যতই করো বাহানা তোমায় যেতে দেব না
আমি পাগল হয়ে ঘুরব তবুও পিছু ছাড়ব না। ”
…(Music)…
(বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নেবেন)
সবাই হাত তালি দেয়।
টিয়াঃ বাহ জিজু বাহ হুয়াট আ ডান্স।দিল খুশ কার দিত্তা।তোমাকে আর দিভাইকে একসাথে খুউউব মানিয়েছে।
টিয়াঃ হু।ইট সিমস ইউ আর মেইড ফর ঈচ আদার।
নিলয়ঃ আমার দি আর জিজুকে কম মানিয়েছে নাকি।ওদের ডান্সও খুব সুন্দর ছিল।
ঈশানঃ(বর্ষার কাজিন) এখন তোমরাও কিছু করো।
ঈশিতাঃ তোমরাও গান গেয়ে কাপল ডান্স করো।
বর্ষণ+শ্রাবণঃ নাহহ।
ইমনঃ বললেই হলো করতে হবে।
সবার জোড়াজুড়িতে বর্ষণ বৃষ্টিকে নিয়ে আর শ্রাবণ বর্ষাকে নিয়ে ডান্স করতে লাগল।

বর্ষণঃ
“Tuhi to jannat meri tuhi mera junun
Tuhi to mannat meri tuhi rukha sakun.” (বর্ষার দিকে তাকিয়ে)
শ্রাবণঃ
“Tuhi akhi o ki thandak
Tuhi dil ki e dastak”. (বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে)
Or kuch na janu me bas itna hi janu
Tujh main rab dikhta hai iyara main kiya karu
Tujh main rab dikhta hai iyara main kiya karu
Sajdi sar jukhta hai iyara main kiya karu
Tujh main rab dikhta hai iyara main kiya karu.
….(Music)…
তারপর দুজনেই হঠাৎ করে পার্টনার চেঞ্জ করে।বর্ষণের কাছে বর্ষা আর শ্রাবণের কাছে বৃষ্টি চলে আসে।
বর্ষণঃ
Kesi hai e duri
Kesi majburi
Main ne jajra se tujhe chu লিয়া
শ্রাবণঃ
Kabhi teri khushboo
Kabhi teri bate
Bin mange e jaha pa liya.
বর্ষণঃ
Tuhi dil ki e rounak
Tuhi janm ki doutat
Or kuch na janu main bas itna hi janu
Tujh main rab dikhta hai iyara main kiya karu
Tujh main rab dikhta hai iyara main kiya karu
Sajdi sar jukhta hai iyara main kiya karu
Tujh main rab dikhta hai iyara main kiya karu.
….(Music)….
সবাই আবারও হাত তালি দিতে লাগল।
মেঘলাঃ অনেক পার্টি হয়েছে।এবার ঘুমাতে যাও।
রিয়াঃ না দিভাই আরেকটু।তোমরা তো কিছুই করলে না।বাকি সবাই কিছু না কিছু করেছে কিন্তু তুমি,নীলাদি,বৃষ্টিদি আর বর্ষাদি তো কিছুই করলে না।
মেঘলাঃ হুশ..এখন আর কোনো কিছু হবে না।সবাই ঘুমাবে।কাল আবার তাড়াতাড়ি উঠতে হবে।
টিয়াঃ দি..
বর্ষণঃ মেঘু কি বলল শুনতে পাও নি।যাও ঘুমাতে যাও(ধমক দিয়ে)
মেঘকা আর বর্ষণের ধমক খেয়ে সবকটা গুটি গুটি পায়ে চলে গেল।
🌿
আজ মেঘলাদের বিয়ে।বিয়ের দিনটা সবার কাছে আনন্দের থাকে। কিন্তু আজ অনেকের কাছে দিনটা দুঃস্বপ্নের ন্যায়।কখন ঘুম ভেঙে সব মিথ্যা দেখবে তার প্রতীক্ষায় আছে।
মেয়েরা চারজনই একই রকম লাল-নীল কম্বিনেশন বেনারসি পড়েছে।সাজ সজ্জাও একই রকম।হালকা মেকাপ,ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক,কপালে লাল টিপ,নাকে নথ,কপালে টিকলি,কোমড়ে কোমরবন্দনী,হাতে শাখা পলার সাথে সোনার বালা,কানে গলায় স্বর্ণের অলংকার।চুল খোপা করা।কানে দুপাশে এক গোছা করে চুল বের করে রাখা। মাথায় লাল ওড়নার ঘোমটা।ঘোমটা দিয়ে মুখ ঢাকা।
বরদেরও একই রকম ড্রেস আপ।ঘি রাঙা পাঞ্জাবি,লাল ধুতি,মাথায় টোপর,মুখ ফুলের ঝালর দিয়ে ঢাকা।

মেঘলা নিজের রুমে বসে আছে।এতক্ষণ রিয়ারা ছিল।একই রিসোর্টে বিয়ে হলেও শালীরা কি নিজেদের অধিকার ছাড়ে।বরসহ তাদের কয়েকজন কাজিনকে বাইরে পাঠিয়ে গেট ধরেছে।টাকা আদায় করেই ভিতরে ঢুকতে দিয়েছে।
দিগ্বিজয় বাবু মেঘলার আছে এলেন।মেঘলা ভ্রু কোচকে উনার দিকে তাকাল।
দিগ্বিজয়ঃ অফিসের কিছু ডকুমেন্টসে তোমার সিগনেচার লাগবে।
মেঘলাঃ কিসের ডকুমেন্টস??
দিগ্বিজয়ঃ দেখেই নাও
বলে কিছু পেপার মেঘলাকে দিলেন।মেঘলা কয়েকটা চেক করে দেখল দরকারী কাজ। তখন রিয়ারা এলো বউ দিয়ে যেতে।ওরা তাড়া দিচ্ছিল তাই পুরোটা না দেখেই সাইন করে দিল।
একইভাবে নাইয়া আকাশের থেকে আর আশিসবাবু নীলার থেকে সাইন নিলেন।নাইয়া দেবী রিয়া-টিয়াকে পাঠিয়ে এমএসের থেকেও কিছু পেপারে সাইন নিলেন।
🌿
বিয়ের মণ্ডপে সবাইকে নিয়ে যাওয়া হলো।চারটা মন্ডপে চার জুটির বিয়ে।
বর্ষার মাঃ একি সবার মুখ ডাকা কেন।এখনকার যুগে এরকম বিয়ে হয় নাকি?বর-বউ সবার মুখ ঢাকা।আমি খুলে দিচ্ছি।
নাইয়াঃ না না দিদি এভাবেই বিয়ে হোক।বিয়ের শেষে গুরুজনরা মুখ দেখে আশীর্বাদ করবে।
নীলার মাঃ এটা আবার কেমন নিয়ম?
নাইয়াঃ আমার বাপের দেশের নিয়ম গো দিদি।ভেবেছিলাম আমার মেয়েদের বিয়েতে এইরকম নিয়ম পালন করব কিন্তু ওদের বিয়ের তো ঢের দেরি।আর মেঘলামা আর বর্ষণ বাবাও তো আমারই ছেলেমেয়ে তাই ওদের বিয়েতেই এই নিয়ম পালন করতে চাইছি।আশা করি কারো কোনো আপত্তি নেই।
বাকিরাঃ না।
যথারীতিতে বিয়ে সম্পন্ন হলো।এবার মুখ দেখার পালা।বর কনের জুটিকে একত্রে রেখে চার জুটিকে আলাদা আলাদা চেয়ারে বসিয়ে মুখ দেখা হলো।ঘোমটা আর ঝালর সরিয়ে মুখগুলো দেখার সাথে সাথে সবাই বিস্মিত।

(চলবে)