হয়ত তোমারই জন্য পর্ব-১৭

0
687

#হয়ত_তোমারই_জন্য
ঐশিতা সেন
পর্বঃ ১৭

আশিসঃ হোয়াট দ্যা হেল? এসব কি?(অবাক হয়ে)
বিয়েতে উপস্থিত এক মহিলাঃ এমা এটা কি হলো?আজ না বর্ষণের সাথে বৃষ্টির আর শ্রাবণের সাথে বর্ষার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।কিন্তু বিয়ে তো বর্ষণের সাথে বর্ষার আর শ্রাবণের সাথে বৃষ্টির হয়ে গেল।

(যারা যারা ভাবছেন মেঘলা আর এমএসের ডিবোর্স হয়ে গেছে আর আকাশের সাথে মেঘলার বিয়ে হয়েছে তাদের জন্য এক বালতি সমবেদনা 😜)
এমএসঃ আরে মাসিমা কি বলছেন এসব।বর্ষণের সাথে তো বর্ষারই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল আর শ্রাবণের সাথে বৃষ্টির।
আরেক মহিলাঃ কিন্তু বিয়ের কার্ডে তো বর্ষা-শ্রাবণ আর বৃষ্টি-বর্ষণের বিয়ে লেখা ছিল।
এমএসঃ আরে কি বলছেন এসব?কার্ডে তো বর্ষা-বর্ষণ আর বৃষ্টি-শ্রাবণের বিয়ে লেখা ছিল।
আরেকজনঃ আরে না না কার্ডে বর্ষা-শ্রাবণ আর বৃষ্টি-বর্ষণের বিয়ে লেখা ছিল।এই দেখ
বলে একটা কার্ড এগিয়ে দিলেন।মেঘলা কার্ড নিয়ে দেখতে লাগল(যদিও জানে কার্ডে কি লেখা)
মেঘলাঃ ও গড।কার্ডে একটু মিস্টেক হয়ে গেছে।আসলে কি বলুন তো বৃষ্টি আর বর্ষার নাম প্রায় সেইম সেইম থাকায় হয়ত প্রিন্টিং এ উলটপালট হয়ে গেছে।কিন্তু বিয়ে দাভাইয়ের সাথে বর্ষার আর শ্রাবণদার সাথে বৃষ্টির হওয়ার কথা ছিল।আর হয়েছেও।কম সময়ের মধ্যে বিয়ের সব এরেঞ্জমেন্ট করা হয়েছে বলে আমরাও আর চেক করার টাইম পাই নি।তাই এই ভ্রান্তির জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।
দিগ্বিজয়ঃ হ্যাঁ হ্যাঁ কার্ডে ভুল ছিল।এখন এসব বাদ দিয়ে সবাই মিলে ওদের সবাইকে আশীর্বাদ করেন।
বর্ষা-বর্ষণ আর বৃষ্টি-শ্রাবণের বিয়ে হওয়ায় তারা খুব খুশি শুধু প্রকাশ করতে পারছে না।আবার অনেকে চরম মাত্রায় অসন্তুষ্ট যা বোঝানো দায়।
একে একে সবাই প্রত্যেক জুটিকে আশীর্বাদ করল।
বর্ষার মা মেঘলার কাছে এসেঃ বাহ খুব সুন্দর লাগছে আমার মামনিটাকে।
বলে কপালে আলতো করে চুমু খেলেন।আর নিজের হাত থেকে এক জোড়া বালা খুলে মেঘলার হাতে পড়িয়ে দিলেন।মেঘলা উনাকে প্রণাম করল।তারপর জড়িয়ে ধরেঃ থ্যাঙ্কু মাম্মাম।
(বর্ষার মাকে মেঘলা নিজের মায়ের চোখে দেখে।উনিও মেঘলাকে বর্ষার মতোই ভালোবাসেন।মেঘলা বর্ষার মাকে মাম্মাম আর বাবাকে পাপাই ডাকে।বর্ষণও।)
আশীর্বাদ পর্ব শেষে সব অথিতিদের খাওয়ার জায়গায় নিয়ে যাওয়া হলো।
মেঘলাঃ বস্তা থুক্কু বউদি
বর্ষা চোখ ছোট ছোট করেঃ চটকনা চিনস?ভাব মারতাছত?এক মিনিট এই জামাই বদলে তোর হাত নেই তো।
মেঘলা বাঁকা হেসেঃ যার থাকার কথা তারই আছে।তবে এটা বলতে পারি আমি কাটা দিয়ে কাটা ভালোই তুলতে পারি।
বর্ষণরা মেঘলার দিকে ভ্রু কোচকে তাকাল।
মেঘলাঃ যাই হোক তোকে যে জন্য ডেকেছি
বলে বর্ষার হাতে এক জোড়া বালা পড়াতে পড়াতেঃ এটা মা নিজের ছেলের বউয়ের জন্য রেখেছিলেন ঠাম্মা বলেছেন।মা এখানে থাকলে হয়ত মাই তোকে দিতো যেহেতু মা এখানে নেই তাই আমিই দিচ্ছি।
বর্ষণঃ বনু তোর মনে আছে(অশ্রুসিক্ত নয়নে)
মেঘলাঃ হু..

ওদিকে নীলা বৃষ্টির কানে কানেঃ কি রে এক্সপেরিয়েন্সটা কেমন ছিল?
বৃষ্টি প্রশ্নাতুর দৃষ্টিতে নীলার দিকে তাকাল।
নীলাঃ বলছিস না যে?একজনকে ভালোবেসে আরেকজনকে বিয়ে করতে যাওয়ার এক্সপেরিয়েন্সটা কেমন ছিল?খুব কষ্ট হচ্ছিল তাই না?একইভাবে তোর জন্য অন্যকারো এই কষ্টটা হচ্ছিল।নিজেকে একবার ওর জায়গায় বসিয়ে দেখিস ওর কষ্টটা উপলব্ধি করতে পারিস কি না।
তোর ভাগ্য ভালো দাভাইয়ের সাথে তোর বিয়ে হয়েছে কিন্তু যদি সত্যি সত্যি বর্ষণদার সাথে হতো?তখন কি করছিস?
যে যা করে বোধহয় তার কাছেই সেটা কোনো না কোনো ভাবে ফিরে আসে।হয়ত ক্ষণিকের জন্যই।
নীলা চলে গেল।বৃষ্টি ভাবতে লাগল নীলার বলা কথাগুলো।
বৃষ্টিঃ তবে কি নীলা সবটা জেনে গেছে?না না নীলা এটা কি করে জানবে কোনো চান্সই নেই।
🌿
একটা লোক রুমে জিনিসপত্র ভাঙচুর করছে।
লোকটিঃ না না না এটা হতে পারে না।বারবার আমার প্ল্যান কেন ফেল হয়ে যায়।আগের বার মেঘলার সাথে আকাশের বিয়ে দিতে চাইলাম সেটা হলো না।আলাশ নীলাকে বিয়ে করে আনল।আর এখন বর্ষণের সাথে বৃষ্টির বিয়েটা হলো না।বর্ষার সাথে হলো।মেঘলা আর বর্ষণের সম্পত্তি আর পাব না।সব শেষ হয়ে গেল।সব তোমার ভুলের জন্য হয়েছে।
বলে নিজের স্ত্রীর গলা চেপে ধরলেন।
লোকটিঃ তোকে বলেছিলাম কোনো ভাবে এমএসের জায়গায় আকাশকে আর আকাশের জায়গায় এমএমকে বসাতে।কিন্তু তুই কি করলি বর্ষণ আর শ্রাবণের অদলবদল করলি।জানিস সবটা কত কষ্টে ম্যানেজ করেছিলাম।কিভাবে এমএসের সাথে মেঘলার আর নীলার সাথে আকাশের ডিবোর্স করিছিলাম কিন্তু তোর একটা ভুলের জন্য ওদের আবার বিয়ে হয়ে গেল।কেন একটু খেয়াল রাখলি না।এখন তো মেঘলার সাথে সাথে বর্ষণের সম্পত্তিও হাত ছাড়া হয়ে গেল।
বলে স্ত্রীকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেললেন।
লোকটিঃ না এটা হতে দেব না।যে করেই হোক ওদের সম্পতি আমার চাই।চাই মানে চাই।এট এনি কস্ট।
লোকটির স্ত্রী কাশতে কাশতেঃএকটা উপায় আছে।
লোকটি ভ্রূ কুঁচকাল।
মহিলাটিঃ ওরা বিয়ের আগে যে ডিবোর্স পেপারে সাইন করেছে ওটা দেখিয়ে বলব এমএসের সাথে মেঘলার আর নীলার সাথে আকাশের ডিবোর্স হয়ে গেছে।আমরা ছাড়া আর কেউ তো জানবে না পেপারে যে বিয়ের আগে সাইন করেছে।একই ভাবে নাহয় বৃষ্টি-শ্রাবণ আর বর্ষা-বর্ষণের ডিবোর্স করাবো।পথের বাকি কাটা মানে এমএস,বর্ষা,নীলা আর শ্রাবণকে সরিয়ে দিয়ে মেঘলার সাথে আকাশের আর বর্ষণের সাথে বৃষ্টির বিয়ে দেব।
লোকটিঃ কাজ কিন্তু অতটাও সহজ নয়।আবারও অনেক কাঠ খড় পুড়াতে হবে।কিন্তু যাই করতে হোক না কেন করব।ওদের সম্পত্তি আমার চাই। সবার সম্পত্তি।আকাশ-বৃষ্টির আর মেঘলা-বর্ষণের সবার।দরকার পড়লে বর্ষা,নীলা আর শ্রাবণকে মেরে ওদের সম্পত্তিও হাতিয়ে নেব।
বলে পৈশাচিক হাসিতে ফেটে পড়ল।
🌿
আজ মেঘলা-এমএস,নীলাকাশ,বর্ষা-বর্ষণ আর বৃষ্টি-শ্রাবণদের ফুলসজ্জা।
বর্ষণ বাসর ঘরে ঢুকতে লেগে রিয়া-টিয়ারা আটকে দেয়।পাওনা টাকা আদায় করেই পথ ছাড়ে।রিয়ারা চলে গেলে বর্ষণ হাফ ছেড়ে বাঁচে।কিন্তু রুমে ঢুকতে গিয়ে দেখে দরজা বন্ধ।
বর্ষণঃ বর্ষু দরজা খুল।
ভিতর থেকে সাড়া নেই।বর্ষণ আরো কয়েকবার ডাকে কিন্তু সাড়া পায় না।
ওদিকে শ্রাবণের থেকে টাকা আদায় করে রিয়ারা চলে গেলে শ্রাবণ নির্বিঘ্নে রুমে যায়।কিন্তু কোথাও বৃষ্টিকে খোঁজে পায় না
শ্রাবণঃ এই মেয়েটা গেল কোথায়?
বৃষ্টিকে খুঁজতে খুঁজতে শ্রাবণ রুমে থেকে বেরিয়ে এসে দেখে বর্ষণ রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে ক্রমাগত বর্ষাকে ডেকে যাচ্ছে।
শ্রাবণঃ কি হলো এখানে দাঁড়িয়ে আছিস যে?
বর্ষণঃ আর বলিস না আমার বউ আমাকে রুমেই ঢুকতে দিচ্ছে না।
শ্রাবণঃ আর আমার বউকে খুঁজেই পাচ্ছি না(হতাশার সুরে)
বর্ষণ+শ্রাবণঃ সব তোর জন্য হয়েছে তুই কেন আমার বউকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলিস?
একসাথে বলে দুজনেই ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ে।
আবার একসাথে বলে উঠেঃ বর্ষা দরজা খুলছে না আর বৃষ্টিকে পাওয়া যাচ্ছে না তার মানে দুজনে একসাথে রুমে বসে নেই তো।(মাথায় হাত দিয়ে)
ওদিকে বর্ষা আর বৃষ্টি দরজার ভিতর থেকে বর্ষণদের সব কথা শুনছে আর খিলখিলিয়ে হেসে উঠছে।
বর্ষণ আর শ্রাবণ অনেকবার দরজা ধাক্কিয়ে ক্লান্ত হয়ে চলে গেল।
শ্রাবণঃ ভাই আয় আজ বৃষ্টির বদলে তোর সাথেই বাসর সারি?
বর্ষণঃ চুপ কর শালা আমার বউয়ের সম্পতি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করবি না বলে দিলাম ব্যাটা সমকামী।
শ্রাবণঃ ওই একদম এই অপবাদ দিবি না। তোর কি মনে হয় তোর মতো বান্দরকে আমি আমার বউয়ের অধিকার দিয়ে দেব।
এভাবে হালকা ঝগড়া করতে করতে দুজনে চলে যায়।
ওরা যেতেই বর্ষা আর বৃষ্টি হাইফাই করে।
বর্ষাঃ এভাব বোঝুক মজা।আমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করবে?
বৃষ্টিঃ বান্দরের দল এক জনকে ভালোবেসে অন্যজনকে বিয়ে করার চেষ্টা করেছে শাস্তি তো প্রাপ্যই।
বর্ষাঃ হু..একদম।
🌿
পরেরদিন সকালে
সবাই ফিরে এসেছে সেন বাড়িতে।আজকের দিনটা বর্ষা আর নীলার মা-বাবা,বৃষ্টি-শ্রাবণ সেন বাড়িতে থাকবে।
নীলা-বর্ষার মা-বাবা,আশিস বাবু,দিগ্বিজয় বাবু আর নাইয়া দেবী সোফায় বসে গল্প করছে।বর্ষণ বর্ষার আর শ্রাবণ বৃষ্টির রাগ ভাঙাতে ব্যস্ত।রিয়া টিয়া আর নীলা গল্প করছে।
শ্রাবণঃ এই বউ সরি বল্লাম তো।দেখ আমি কিন্তু মন থেকে বিয়েতে রাজি হই নি বাধ্য হয়েছিলাম।প্লিজ বোঝার চেষ্টা কর।
বৃষ্টিঃ দুরে যাও তো।তোমার সাথে কথা নাই।
শ্রাবণঃ প্লিজ বিষ্টু রাগ করো না।লক্ষ্মী বউ আমার।
বৃষ্টিঃ বল্লাম না দুরে যেতে।
শ্রাবণঃ এই বার বার দুরে যেতে বলছিস কেন?তোর কি খুব কষ্ট হচ্ছে আমার সাথে তোর বিয়ে হওয়াতে?তুই নিশ্চয়ই বর্ষণকেই বিয়ে করতে চাইছিলিস তাই না?কিন্তু আমার সাথে বিয়ে হয়ে যাওয়ায় আমাকে দুরে যেতে বলছিস।
বৃষ্টিঃ খবরদার একথা আবার বলেছ তো তোমাকে আমি পঁচা ডোবাতে ডুবাব।তুমি ভাবলে কি করে আমি বর্ষণদাকে বিয়ে করতে চাই।শুন আমি বর্ষণদা আর মেঘদাকে নিজের ভাইয়ের চোখে দেখি।
পিছন থেকে মেঘলাঃ তাই নাকি?আমি যতদুর জানি তুই তো মেঘদাকে ভালোবাসতিস।
মেঘলার কথা শুনে বৃষ্টির ঘাম ছুটে গেল।
মেঘলাঃ বৃষ্টি কি রে কিছু বলছিস না যে।তুই তো আমাকে বলেছিসিল তুই আর মেঘদা একে অপরকে ভালোবাসিস।তাহলে তুই মেঘদাকে ছেড়ে দাভাইকে বিয়ে করতে কেন রাজী হয়েছিলিস।আর এখন শ্রাবণদাকেই কেন বিয়ে করলি?
শ্রাবণ ভ্রু কোচকেঃ মেঘু এসব কি বলছিস।বৃষ্টি শুধু আমাকে ভালোবাসে মেঘকে না।
মেঘলাঃ বৃষ্টি কোনটা সত্যি?তুই মেঘদাকে ভালোবাসিস নাকি শ্রাবণদাকে?
বৃষ্টি মেঘলার প্রশ্নের কি উত্তর দেবে ওর কথা দিয়ে স্বরই বের হচ্ছে না।ঘেমে অস্থির হয়ে গেছে।
তখন কলিং বেল বাজল।রিয়া দরজা খুলে দিল।দরজা খুলার সাথে সাথে আকাশ হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকল।তারপর ঠাসসসসস
আকাশঃ তোর সাহস কি করে হয় এমনটা করার?আন্সার মি ডেম ইট।
(চলবে)